প্রেমহিল্লোল পর্ব-২১+২২

0
25

#প্রেমহিল্লোল||২১||
#তাসনীম_তামান্না

বিয়ের বর-কণেকে সাদা রঙের কাপল উয়েন্ডিং ড্রেসে রূপকথার রাজা-রানির মতো লাগছে। কেউ যেনো চোখ ফেরাতে পারছে না। সবাই একে একে খাওয়া দাওয়া পাঠ চুকিয়েছে কেবলমাত্র। তখনই রাজ হিংস্র মনোভাব নিয়ে সাথে কালো ড্রেস পড়া অস্ত্র হাতে গার্ড নিয়ে বাড়িতে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করলো। সকলে ভীতিগ্রস্ত হয়ে সিটিয়ে গেলো। কুশান এগিয়ে গিয়ে বলল “এটা কোন ধরনের অসভ্যতা রাজ? এভাবে লোকজন নিয়ে বাড়িতে ডুকেছ কেনো?”

রাজ রাগে চোখ-মুখ শক্ত করে বলল “ অসভ্যতার এখনো কিছুই করি নি। কিন্তু এখন করবো।”

কুশান শান্ত কণ্ঠে বলল “দেখো, কোনো তামাশা করো না। আত্মীয় স্বজনরা আছে শান্তি সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান শেষ করতে চাই কোনো ঝামেলা চাইছি না। চুপচাপ চলে যাও নাহলে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।”

রাজ কুশানের কোনো কথায় কান দিলো না কুয়াশার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে এগিয়ে গেলো। কুয়াশা ভয় পেয়ে তুষারের বাহু খামচে ওর পিছনে লুকিয়ে গেলো। রাজ শব্দ করে হেসে উঠলো ওর হাসি দিকে সকলে তাকিয়ে রইল পাগল যেভাবে হাসে ঠিক সেভাবে হাসছে ও। হাসতে হাসতে রাজ কুয়াশা হাত খপ করে ধরে ফেলে নিজের কাছে টানতে চাইলো। তুষার সেটা হতে দিলো না কুয়াশাকে আগলে নিয়ে বলল “ওর হাতটা ছাড়! আমার স্ত্রীর হাত ধরার পারমিশন আমি ছাড়া কারোর নেই! সে অধিকার কারোর নেই কারোর দিবোও না।”

কথাটা বলে রাজের হাতে স্বজোরে আঘাত করলো ও ব্যাথাতুর শব্দ করে কুয়াশার হাত ছেড়ে দিলো। রাজ বলল “দেখ আমার সাথে অযথা লাগতে আসিস না। ব্যাপারটা কুয়াশার সাথে ওর সাথেই বোঝাপড়া হবে মাঝখানে তুই ঢুকিস না। জান নিয়ে পালাতে পারবি না।”

–কুয়াশা আমার স্ত্রী বললাম না? ও আর আমার বলতে আলাদা কিছু নেই। যা কিছু সব আমাদের। আমার জানা মতে ও কারোর ক্ষতি করি নাই।

–কীসের স্ত্রী? কীসের বিয়ে? এ বিয়ের কোনো মানে নেই। এ বিয়ে আমি মানি না।

–তোমার মানা না মানা নিয়ে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমাদের বিয়েটা হয়েছে, আমরা স্বামী-স্ত্রী, সংসার করবো। সেটা আমরা মানলেই হবে। থার্ডে পার্টির কথা না শুনবো, না মানবো। তুমি এখন আসতে পারো দরজাটা ঐ দিকে।

–দেখ ওরা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো কুয়াশার সাথে আমার বিয়ে হবে। তুই এসে সবটা শেষ করে দিলি। এ বিয়ের কোনো মানে হয় না। কুয়াশা আমার সাথে যাবে। আমার আর ওর বিয়ে হবে।

–প্রমাণ আছে কোনো?

রাজ তুষারের কথা বুঝতে না পেরে বলল
–কীসের প্রমাণ?

–কে তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো কুয়াশার সাথে তোমার বিয়ে হবে? কোনো প্রুভ নেই। কুয়াশা আমাকে স্বজ্ঞানে, স্বইচ্ছায় বিয়ে করেছে। এখন তুমি যা পারো করে না-ও। তবে সেটা দূরে থেকে। একটা আঁচড় আসলে তোমাকে ছেড়ে দিবো ভাবলে ভুল করবে।

রাজ তেড়ে গিয়ে তুষারের কলোয়ার ধরে বলল “কী বলতে চাইছিস তুই? আমাকে হুমকি দিচ্ছিস? তোর হুমকিতে আমি ভয় পাবো ভেবেছিস?”

–তুই কী ভেবেছিস আমার সামনে স্ত্রী’কে নিয়ে টানাটানি করবি আমি মেনে নিবো? আমাকে চুপ করে থাকতে বলবি আমি ভয় পেয়ে চুপ করে থাকবো? নেভার।

ওদের দুজনের মধ্যে হাতাহাতি লেগে গেলো সকলে আঁতকে উঠল। গার্ডগুলোও এসে তুষারকে মারতে লাগলো। কুয়াশা তুষারকে বার বার প্রটেক্ট করতে চাইছে। তুষার ওকে সরিয়ে দিচ্ছে। গার্ডগুলো এমনভাবে তুষারকে ধরেছে ও নড়তে পারছে না। সকলকে গার্ডরা মাথায় বন্দুক চেপে আটকে রেখেছে। একজন গার্ড ছুরি দিয়ে তুষারের পেটে আঘাত করতে চাইলে কুয়াশা ছুটে গিয়ে দুহাতে ছুরি চেপে ধরলো। মূহুর্তেই ধারালো ছুরির আঘাতে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত দিয়ে শুভ্র ফ্লোর লাল রক্তাক্ত হয়ে গেলো। তুষার মার খেয়ে আহত দুর্বল শরীরে আঁতকে উঠে বলল “কুয়াশা, এটা কী করছো? তোমার হাত! ব্যথা পাচ্ছো তো! ছুরি ছেড়ে দাও।”

কুশান, মেঘ সহ সকলে আতঙ্কে চিৎকার চেচামেচি করছে। কুয়াশা ছাড়লো না। কী করছে না করছে ওর হুঁশ নেই। এতো ব্যথাও তার কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছে। ছুরি ছেড়ে দিলে তুষারকে আঘাত করবে সেটা ও চাই না। এরইমধ্যে পুলিশের গাড়ির শব্দ শোনা গেলো। গার্ডগুলো ছুটোছুটি করতে লাগলো। কুয়াশা ছুরি ছেড়ে দিলো গার্ডটা অসাবধানতাবসত কুয়াশার বাহুতে আঘাত করে বসলো সাদা লেগেঙ্গা ছিঁড়ে চামড়া আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে গেলো। পুলিশ এসে সকলকে এরেস্ট করলো।

কুয়াশার এসব দিকে হুঁশ নেই ও ওর রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে ওখানেই বসে পড়লো। পুলিশ আসার সাথে সাথে কুয়াশার কাছে সকলে ছুটে এলো। কুয়াশার রক্তাক্ত অবস্থা দেখে সকলে কান্না কাটি জুড়ে দিলো। কুশান বোনকে আগলে নিয়ে বলল “বেশি কষ্ট হচ্ছে? একটু অপেক্ষা কর এখনি ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

কুয়াশা ঠোঁট ফুলিয়ে ভেউভেউ করে কেঁদে উঠলো। তুষার অস্থির হয়ে গেলো বলল “এতো পাকনামি করতে কে বলেছে? এখন তো তুমি কষ্ট পায়ে কাঁদছো। একটু অপেক্ষা করো সব ঠিক হয়ে যাবে।”

কুশান বলল “কাঁদিস না বাবুইপাখি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

কুয়াশা ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলল “শয়তানগুলো আমার বিয়ের এতো সুন্দর ড্রেসটা নষ্ট করে দিলো। আমার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। এই ড্রেসটা কী আর ঠিক করা যাবে না?”

কুয়াশার কথা শুনে সকলে হা করে তাকিয়ে রইলো। এতো আঘাত পেয়েও আঘাতের কষ্টে না কেঁদে ড্রেসের চিন্তা করে কাঁদছে।

তুষার দাঁতে দাঁত চেপে বলল “ফাইজলামি করছ তুমি? নিজের এই অবস্থা করে এখন এই ড্রেসের চিন্তা করছো? সুস্থ হলে এমন ড্রেস হাজারটা পাবে।”

–না না আমার এই ড্রেস টাই লাগবে। এই ড্রেসটা পড়ে আমি কবুল বলেছি বিয়ে করেছি। আমার এইটাই লাগবে। আমার এটাই চাই।

সকলে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। কুয়াশাকে মাঝে মাঝে সুস্থ স্বাভাবিক লাগে আবার মাঝে মাঝে এমন পাগলামি করে যা কেউ বুঝতে পারে না। কুয়াশার কথার মাঝে তুষার ওকে কোলে তুলে নিয়ে বাইরে গাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলো সকলে ওদের পিছনে পিছনে গেলো। কুয়াশা বলতেই আছে

–আমাকে কিন্তু এই ড্রেসটা ঠিক করে দিবেন। এই ড্রেসটা পরিষ্কার করলে ঠিক হয়ে যাবে তাই না? আমি বাসায় ফিরে পরিষ্কার করে দিবো কেউ হাত দিবানা না।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#প্রেমহিল্লোল||২২||
#তাসনীম_তামান্না

ভূপৃষ্ঠের একাংশে দিনের আলো শেষে আধাঁরের আগমন ঘটেছে। সময়ের সাথে আধাঁর গভীর থেকে গভীরতম হচ্ছে। শহরের ব্যস্ততা দিনের চেয়ে অনেকাংশে কমেছে। তুষার সকলকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। অতিরিক্ত রক্তপাতে কুয়াশা দুর্বল হয়ে পড়েছে। ও ঘুমিয়ে আছে, সেলাইন চলছে। তুষারের মা আসতে চাইলেও তুষার নিষেধ করে দিয়েছে। আশ্বাসবাণী দিয়ে আত্মীয় স্বজনদের দেখা শোনা করতে বলেছে। তুতুলও মায়ের অবস্থা বুঝতে পেরে মায়ের কাছে চলে গেছে।

কুয়াশার কেবিনে দুইটা বেড। তুষার সকল কার্যক্রম শেষ করে কেবিনে আসলো তখনো কুয়াশা ঘুমাচ্ছে। তুষার নিজেও আহত হয়েছে কিন্তু নিজের প্রতি যত্ন নিচ্ছে না। ও কেবিনে এসে কুয়াশার ঘুমন্ত মলিন মুখটা দেখে ওর পাশে বসে দু’হাতটা আলতো করে ছুঁয়ে নিজের হাতে তুলে নিয়ে ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিলো। কুয়াশা পিটপিট করে নিভুনিভু চোখে তাকালো। তুষার ওর হাত রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ললাটে ওষ্ঠ চেপে ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল “এমনটা কেউ করে? কতো ব্যাথা পেয়েছ। কত কষ্ট হচ্ছে দেখেছো?”

ও ঘুমুঘুমু কণ্ঠে বলল “কী করেছি?”

–ছুরি চেপে ধরে হাত ক্ষত-বিক্ষত করেছ। কষ্ট পাচ্ছো।

–ওটা না করলে ওরা আপনার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিতো।

–আমার কিছু হলে তোমার কী তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।

কুয়াশা উত্তর না দিয়ে তাকিয়ে রইল। তুষার হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল “তো ম্যাডাম স্যালাইন শেষ হয়ে এসেছে প্রায়ই কী খেতে চান বলুন।”

কুয়াশা এদিকে ওদিকে তাকিয়ে নিজের দিকেও তাকালো। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে বলল “বিয়ের ড্রেস কই? ওটা রেখে দিতে বলেছিলাম না? ওটা ফেলে দিয়েছেন? এমনটা কীভাবে করতে পারলেন?” কথাগুলো বলতে বলতে কুয়াশা কেঁদেই দিলো।

তুষার ওকে শান্ত করতে বলল “এমন করো না রিল্যাক্স হও। ড্রেস আছে। বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এই দেখো। আমার গায়েরও ড্রে চেঞ্জ। এতোক্ষণ পড়ে থাকলে তো নষ্ট হয়ে যাবে।”

কুয়াশার চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। বলল “মিথ্যা বলছেন। আপনি খুব খারাপ।”

–না না সত্যি বলছি। কী করলে বিশ্বাস করবে বলো?

–ড্রেস এনে দেখান।

–সেটা তো বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন অনেক রাত সবাই রেষ্ট নিচ্ছে সারাদিন সবার ওপরে অনেক ধকল গিয়েছে। এখন কী ডিস্টার্ব করা উচিৎ তুমিই বলো?

কুয়াশা শান্ত হয়ে দু পাশে মাথা নাড়ালো। তুষার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “কাল দেখাবো প্রমিজ। এখন লক্ষী বাচ্চার মতো শুয়ে রেস্ট করো। আর বলো কী খাবে?”

–আপনি খেয়েছেন?

তুষার হেসে বলল “তোমার সাথে খাবো বলে অপেক্ষা করছি।”

–তাহলে আপনি যা খাবেন তাই আনুন আমার মাথায় কিছু আসছে না।

–আচ্ছা, তুমি থাকো। আমি নার্সকে ডেকে দিচ্ছি। স্যালাইন খুলে দিবে।

তুষার নার্সকে ডেকে দিয়ে। হসপিটালের ক্যান্টিনে চলে গেলো। ঝটপট যা সামনে পেলো সহজে নুডুলস পেলো তাই নিয়ে এলো।

হসপিটালের ফিনাইলের গন্ধে কুয়াশা বারংবার চোখ-মুখ কুঁচাচ্ছে। কুয়াশা নার্সকে বলল “কী ফিনাইল দিয়ে হসপিটাল পরিষ্কার করেন? গন্ধে বমি পাচ্ছে।”

নার্সটা সেলাইন খুলে দিয়ে বলল “তাহলে যে ফিনাইলে গন্ধ নাই সে ফিনাইল আমাদের জন্য কিনে দিয়ে যেয়েন।”

কুয়াশা তেতে উঠে বলল “কেনো? কেনো? এতো মানুষ চিকিৎসা নিতে এসে এতো টাকা দেয়। সে-সব কী করেন? খেয়ে ফেলেন না-কি? কম দামের ক্ষতিকারক ফিনাইল দিয়ে মানুষ মারার ধান্দা তাই না? সব বুঝি।”

নার্সটা বিরক্ত হয়ে গেলো বলল “আপনার বুঝ আপনার কাছে রাখুন আর তো কারোর সমস্যা হচ্ছে না আপনার এতো সমস্যা হলে আপনি এখানে আছেন কেনো? চলে যান।”

–আপনার কথায় চলে যাবো নাকি আপনি চলে যেতে বলার কে? টাকা দিয়ে থাকছি, আপনার টাকায় থাকছি না-কি?

কুয়াশা আর নার্সটা তর্কাতর্কি একের পর এক চলতেই আছে। তুষার এসে দেখলো কুয়াশা ফুল অন ঝগড়ার মুডে আছে। ও খাবারটা রেখে কুয়াশার মুখ চেপে ধরে বলল “আপনার ব্যবহার এতো জঘন্য! প্রেসেন্টের সাথে কীভাবে বিহেভিয়ার করতে হয় এই ম্যানাস টুকু জানেন না? আপনার নামে কমপ্লেইন্ট করবো আজই।”

নার্সটা নরম হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলল “সরি স্যার এমন হবে না। ওনি উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করে মাথা খাচ্ছিলো তাই রাগের মাথায় বলে ফেলেছি। আমার নামে কমপ্লেইন্ট করবেন না আমাকে সাসপেন্স করে দিবে। আমার সংসার চলবে কীভাবে স্যার একটু বুঝুন।”

তুষার দেখলো নার্সটা অনুতাপত হয়ে ক্ষমা চাইছে। ও বলল “ঠিক আছে পরের বার থেকে খেয়াল রাখবেন। আমি ছেড়ে দিচ্ছি মানে সবাই ছেড়ে দিবে না।”

নার্সটা ‘থ্যাংকিউ স্যার’ বলে চলে গেলো। তুষার কুয়াশার মুখ ছেড়ে দিয়ে খাবার নিয়ে ওর সামনে বসলো। ও তখনো রাগে ফোসফাস করছে। নুডলস ওর সামনে ধরতেই ও মুখ সরিয়ে নিয়ে বলল “নার্সটাকে এভাবে ছেড়ে দিলেন কেনো? আমার মুখ চেপে ধরেছিলেন কেনো? আমাকে কেনো কিছু বলতে দেন নি? ও বলে কীনা এতোই যখন অসুবিধা হচ্ছে এখানে এসেছি কেনে? কেন রে মানুষ শখ করে আনন্দ করতে হসপিটালে আসে? আর আপনি কী করলেন? ছেড়ে দিলেন?”

–আচ্ছা এবার আসুক। বেঁধে লকাপে দিয়ে দিবো। ওকে?

–তাহলে ছেড়ে দিলেন কেনো? ওয়েট ওর মেয়ের সাথে কথা বলেছেন? ওর দিকে তাকিয়েছেন? ও দোষ করেছে জেনেও ছেড়ে দিলেন? ওকে কী আপনার পছন্দ হয়ে গেছে? ও কী আমার থেকে বেশি সুন্দরী?

কুয়াশা কথাগুলো বলতে বলতে চোখ ছোট ছোট করে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তুষার পড়লো মহড়া জ্বালায় কী উত্তর দিবে খুঁজতে গিয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেললো তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল
–তুমি কথার ডাবলমিনিং বের করছ কেনো?

–আর আপনি কথা ঘুরিয়ে যাচ্ছেন কেনো?

–কুয়াশা তুমি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছো।

–হ্যাঁ, জানি তো। এখন আর আমাকে ভালো লাগবে না। নতুন একজনকে পছন্দ হয়ে গেছে না?

তুষার দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল “কুশু, এগুলো খেয়ে নাও। আমি খুব টায়ার্ড। খুদাও লেগেছে ঝগড়াঝাটি কাল এনার্জি নিয়ে করবো ঠিক আছে? প্লিজ আজ আর না। আমি পারছি না। রেস্টের খুবই প্রয়োজন।”

কুয়াশা এবার তুষারের দিকে খেয়াল করলো মুখে ক্লান্তিতে মলিনতায় ছেয়ে গেছে। ও চুপচাপ খেয়ে নিলো। তুষার ও ওকে খাওয়ানোর মাঝে নিজেও খেয়ে নিলো। ওকে খাইয়ে শুইয়ে দিলো। নিজেও পাশের বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো। দুজনের মধ্যে আর একটা কথাও বিনিময় হলো না। কুয়াশা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো। শুয়ে কয়েক হাত দূরত্বের বেডে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা পুরুষটার দিকে তাকিয়ে রইল। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো ও নিজেও টের পেলো না। ও ঘুমিয়ে পড়তেই তুষার চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল ‘পাগলি একটা!’

চলবে ইনশাআল্লাহ