প্রেমহিল্লোল পর্ব-২৯+৩০

0
122

#প্রেমহিল্লোল||২৯||
#তাসনীম_তামান্না

ভূপৃষ্ঠের একাংশে রোদের দেখা মিলেছে। কুয়াশার ঘুম ভেঙে পিটপিট করে চোখ খুলে তুষারের মুখশ্রী দেখল। তুষার তখন ঘুমিয়ে আছে। ও শুয়ে শুয়ে কতখন অধাঙ্গনের দিকে তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ কি আদুরে বাচ্চার মতো লাগছে। তারপর ভাবলো উহুম এটা বাচ্চা নয় বুড়া শয়তান পেটে পেটে উহুম শিরায় শিরায় না না প্রতিটা রক্তের কণায় কণায় শয়তানিতে ভরা নিজে নিজে কথাগুলো একলা একলা হাসল ঘড়ির দিকে তাকাতেই খেয়াল হলো ৭ বেশি বেজে গেছে ও উঠে ফ্রেস হয়ে এসে দেখলো দরজায় কেউ নক করছে তুষার তখনও বেঘোরে ঘুমাছে ওর মায়া লাগল ও গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে রিমাকে দেখে কিছু না বলে আবার মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে দিলো। কুয়াশার এমন কাজে রিমার মুখটা অপমানে থমথমে হয়ে গেলো।

কুয়াশা বিড়বিড় করে বলে উঠল “সকাল হতে না হতেই সাতচুন্নি এসে হাজির শালীকে দেখে মুডটাই খারাপ হয়ে গেলো সব এই বুইড়া ব্যাডার দোষ শালারে মন চাই খুন…”

বলতে বলতে থেমে গেলো চট করে মাথাই একটা বুদ্ধি আসে গেছে। এমন বুদ্ধিতে ওর নিজেই হেসে ফেললো। রিমা দরজার ওপরে রাগে কিড়মিড় করে বলল “খুব সাহস বেড়েছে মেয়ের। একবার সুযোগ আসুক তোকে শুধু এই ঘর থেকে নয় পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতেও ভাববো না।”

রাগে জেদে আবারও দরজা ধাক্কা দিলো। কুয়াশার হাসি মুখে রাগ এসে ভড় করলো দাঁতে দাঁত চেপে বলল “তুই যদি আর একবারও দরজায় শব্দ করিস তোর কী হাল করবো তুই জানিস না আমি যা বলি তাই করি আমাকে চিনিস না। তোকে সিঁড়ি থেকে এক ধাক্কায় ফেলে দিবো, সাতচুন্নি।”

রিমার রাগে জেদে কান্না পেলো। আর ঝামেলা বাড়ালো না কেউ দেখলে ওকেই দোষারোপ করবে। বাড়ি থেকেও বের করে দিতে পারে সেটা ও চাই না ওর প্লান ফুলফিল হতে হবে আগে তারপর এই কুয়াশা-ফুয়াশার অস্তিত্ব থাকবে না।

কুয়াশা রাগে ফুঁসে তুষারের দিকে তাকিয়ে দেখলো ব্যাটা এখনো নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে আরামের ঘুম দেখে ওর সহ্য হলো না। ও এদিকে ওদিকে তাকিয়ে জিনিসটি খুজলো তুষারের রুমের জিনিস পত্র কোথায় কি আছে ওর জানা নেই। তাই কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি খুঁজতে লেগে পরলো বেশি কষ্ট করে খোঁজাও লাগল না পেয়ে গেলো সেটা হাতে নিয়ে ঘুমান্ত তুষারের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো। সেটা ‘কাঁচি’! বেডের পাশে এগিয়ে গিয়ে তুষারের সুন্দর সুন্দর চুলগুলাতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “খুব ঢং তোর! শয়তান আরও বিয়ে করবি? বেশিভাব দেখাস শরম করে না? এবার দেখবো এতো ঢং কই থেকে পাস।”

কথাগুলো বলতে বলতে তুষারের চুলগুলো খামচি দিয়ে ধরে গোড়া থেকে ক্যাউ ক্যাউ কুচুৎ কুচুৎ কাউচির শব্দ তুলে খাপছাড়া ভাবে কেটে ফেলে বিশ্ব জয়ের একটা হাসি দিলো। যেভাবে কেটেছে পুরা মাথার চুল আর্মিকার্ট না বেল টাক কাট না দিলে লোকে ওকে হ্যান্সাম না পাগল বলবে। নিজের প্ল্যান মতো কাজ করে কুয়াশা খুশি মনে নিজে চলে গেলো গুনগুন করে নিজে বানানো গান গেয়ে উঠলো “ঘুমন্ত পেয়ারা সোয়ামি তুম বহাত খুব সুরাত হো ও হো ও।”

নিচে এসে দেখলো কালকে প্রায় সব আত্মীয় স্বজনরা চলে গেছে শুধু আত্মীয় বলতো রিমাই আছে। তুষারের বাবাও কাল ফিরে প্রোগ্রামে এটেন্ড করেছে ছেলের বউকে অনেক উপহারও দিয়েছেন। রান্নাঘরে শাশুড়ি আর সার্ভেন্ট মিলে সকালের ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে ও রিমাকে না দেখার মতো করে চলে গেলো। রিমা নিচে এসে নিজেকে নিজে বুঝিয়ে শান্ত করেছিলো। কিন্তু কুয়াশাকে দেখে সেটা আবার জ্বলে উঠলো।

কুয়াশা কিচেনে গিয়ে শাশুড়ির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল “গুড মর্নিং! কী করছো?”

–গুড মর্নিং! এইতো কাজ করছি তোর এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো?

–হুম হুম দাও আমিও করি। তুমি প্রতিদিন কাজ করো তোমার কষ্ট হয় না?

কথা বলতে বলতে হাত থেকে বেলন নিয়ে নিজেই রুটি বেলতে শুরু করলো। তিশা বেগম বাঁধা দিলেও কিন্তু কাজ হলো না।

–কী করছিস তুই? খুব বড় হয়ে গেছিস? হাতে ব্যান্ডেজ ব্যাথা পাবি তো!

ও ব্যাথা পাওয়া হাতে ব্যাথা পেলেও নিজের শখ মেটাতে রুটি বেলার চেষ্টা করলো
–তুমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো। আমার হাত ঠিক হয়ে গেছে না হলে রুমে গিয়ে রেস্ট করো আমি এসে গেছি আমি করছি।

হালিমা খালা পান খাওয়া লাল দাঁতে হেসে বলল “ছোট আম্মায় মেলা লক্ষ্মী দেখছনি এহনকার দিনে এমন মাইয়া খুঁইজা পাওন যায় না।”

ওর চোখমুখ খুশিতে চকচক হয়ে উঠলো বলল
–ধন্যবাদ খালা।

তিশা বেগম ধমকে বলল “চুপ কর। যা গিয়ে বসে থাক বেশি পাকামি। নিজের বাড়িতে একটাও কাজ কখনো করেছিস? আর এটা কী রুটি কোন দেশের মানচিত্র বানিয়েছিস দেখেছিস?

কুয়াশা চুমসে গিয়ে বলল “একটুই তো বেঁকে গেছে। বলো খালা” কথা বলতে বলতে হাতের আঙুল দিয়ে উঠিয়ে দেখাতে নিলে সেটা ছিঁড়ে আর্ধেক ফ্লোরে পড়লো। তিশা বেগম আর হালিমা খালা সশব্দে হেসে উঠলো। ও বোকা বোকা চোখেমুখে তাকিয়ে রইল।

তিশা বেগম ওর মাথায় হাত দিয়ে ঠুসি মেরে বলল “থাক মা আমার অনেক উপকার করেছেন। এবার গিয়ে শশুড়কে চা দিয়ে আসেন। তিনি সকালে কম করে তিন কাপ চা খান। এক কাপ খেয়েছে এখনো দুই কাপ বাকি। নিয়ে যান।”

ও দুঃখী দুঃখী মুখ করে টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে কাপে চা ঢেলতে লাগলো বলল “কষ্ট পেলাম শাশুমা সাহায্য করতে এসে অপমানিত হলাম। শশুআব্বাকে সব বলে দিমু”

–থাক হয়েছে…

তিশা বেগম কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই তুষারের হিংস্র রাগী কণ্ঠ ভেসে এলো অনবরত “কুয়াশা, কুয়াশা” বলে ডেকে চলেছে। কুয়াশা ভয়ে লাফিয়ে উঠতে কাপের গরম চা হাতে পড়লো ব্যাথাতুর শব্দ করেও ব্যথাকে পাত্তা না দিয়ে শাশুড়ির পিছনে গিয়ে লুকিয়ে গেলো।

–আমি কিছু করি নি শাশুমা তোমার হর্ল্লাদ ছেলের হাত থেকে বাঁচাও।

–কী করেছিস?

কুয়াশাকে ডেকে না পেয়ে ধুপধাপ পায়ে নিচে চলে এলো। রিমা রুমে চলে গেছিলো কুয়াশাকে সহ্য করতে না পেরে কিন্তু তুষারের এমন ডাকে ও রুম থেকে বের হয়ে আসলো। তুষারের বাবাও ছেলের ডাকে চলে এলেন। ও রীতি মতো রাগে ফোঁস ফোঁস করছে চুলগুলো ওর খুব শখের সেই চুলগুলোই তারই শখের বউ কেটে দিলো এ মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। তিশা ও হালিমা খালাও কিচেন থেকে বের হলো কুয়াশা বের হলো না। ও কিচেনের এ কোনে লুকিয়ে গেলো।

সবাই তুষারকে দেখে হেসে ফেললো। তিশা বেগম বলল “এ কী হাল তোর?”

–তোমাদের গুনধর বউমা করেছে তাকে কিছু না বলে বলে অনেক সাহস বেড়ে গেছে কই সে তাকে ডাকো। ব্যবস্থা করছি

রিমা তুষারের রাগ দেখে খুশি হয়ে তাতে ঘি ঢালতে বলল “বিয়ের দু’দিনে বুঝে গেলে। ঐ মেয়ে কি জিনিস? তাহলে বুঝো”

ওর কথায় কেউ পাত্তা দিলো না শুনেও না শোনার ভান করে রইলো। কিচেন থেকে কুয়াশা সবটা কান পেতে শুনছে। ওর কথা শুনে ভেংচি কাটলো।

তুষারের বাবা বলল “ভালোই তো করছে রাক্ষসের জঙ্গলির মতো রাখো কখনোতো কাটতে দেখি না। কুশু মা একটা ভালো কাজ করছে। এই কাজের জন্য সে পুরুস্কার পাবে।”

কুয়াশা ফিক করে হেসে ফেললো মুখ চেপে। তুষার অভিমানে মায়ের কাছে নালিশের সুরে বলল “মাহ দেখছ তোমার জামাই কী বলছে সব জেনেও চুপ থাকবে?”

তিশা বেগম হাসি আঁটকে বলল “কী আর বলবো বল। চুলতো আর এখনই পাবি না আবার উঠে যাবে মন খারাপ করিস না যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।”

মায়ের কথা যৌক্তিক কিন্তু মন মানতে নারাজ এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বিয়াদপ বউকে খুঁজলো কিন্তু ফলাফল শূন্য পেলো না। হতাশ হয়ে উপরে চলে গেলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#প্রেমহিল্লোল||৩০||
#তাসনীম_তামান্না

গোধূলিলগ্নে কারোর নীড়ে ফেরার তাড়া কেউ বা প্রকৃতি উপভোগ করতে ব্যস্ত। তার মধ্যে ঢাকার এক রেস্টুরেন্টের রুফটপে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের ব্যান্ডেজ নিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষায় বসে আছে রাজ। জানে না কার জন্য অপেক্ষা করছে শুধু জানে এক রমণী কে সে? কোথায় থাকে? নাম কী? এ-সব কিছু জানা নেই। শুধু জানে তার শুভাকাঙ্ক্ষী। এই তো কাল সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে জানালো তার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে তারই মতো ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টে ভুগছে যদি একই সাথে কাজ করতে চাই তবে যেনো এখানে আসে। ও প্রথমে ভেবেছিল আসবে না কে না কে যেতে বলেছে তার ফোনে চলে যেতে হবে? রাজকে অর্ডার করে। এমন মেয়েকে দেখতে নিজেকে দমাতে পারে নি চলে এসেছে। এসে মনে হচ্ছে ভুল করেছে কেউ তাকে বোকা বানিয়ে ফোন দিয়েছে। এসির ঠান্ডাতেও বিরক্তিতে ঘামছে সে কোল্ড চকলেট মিল্কসেককে সুড়ুৎ সুড়ুৎ শব্দ করে শেষ করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো এটা খাওয়া শেষ হলেই মাথা ঠান্ডা করে চলে যাবে। সাথে করে কোনো গার্ডস ও আনে নি। খাওয়ার মাঝে টেবিলের কাছে এসে কেউ দাঁড়ালো ও ভ্রু কুঁচকে মাথা উঁচু করে তাকালো। একজন ওয়েস্টার্ন পড়া সুন্দরী লেডি। মুখের কৃত্রিমত্তা সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে চোখ ঝলছে যাওয়ার মতো। ওট ভ্রু যুগল শিথিল হলো। প্রশ্ন করলো “কিছু বলবেন?”

রিমা চোখমুখে কঠোরতার ঢেলে বলল “বাচ্চা নাকি আপনি? গেস্ট রেখে খেয়ে ফেলছেন? হাউ ম্যানরলেস!”

রাজ অপ্রস্তুত হয়ে গেলো বুঝতে অসুবিধা হলো না এই মেয়েই তাকে অর্ডার করে আসতে বলেছে অপ্রস্তুত ভাব ঢাকতে কুঠিল হেসে উল্টো ওকে অপ্রস্তুত করতে বলল “ওওহো আপনি! আমি তো ভাবলাম আপনি আসবেন না। নিজেই ডেকে এনে নিজেই দেরি করে আসেন। এটা কেমন ম্যানার? আপনি যখন আমাকে আগে থেকে চিনতেন এটাও জানেন আমি অসুস্থ…”

রিমা বিরক্ত হয়ে চেয়ারে বসে ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলল “হেই, জাস্ট শাট আপ! বাংলাদেশে যেই জ্যাম আগে জানলে এখানে আপনার মুখো দর্শন করতে আসতাম না।”

রাজ রেগে গেলো ওকে শাট আপ বলে ধমক দেয়? মেয়েটার কী তাকে দেখে ভয় লাগছে না? তার হিস্ট্রি জেনেই এসেছে যতদূর জানা তাহলে তাকে ভয় পাচ্ছে না কেনো? আবার ও ধমক হজম করলো? নো নেভার!

–এমন ভাব দেখাচ্ছেন। আপনার জন্ম বিদেশে!

–রাইট!

রাজের সামনে বসে থাকা মেয়ের ওপরে রাগ, বিরক্তি হচ্ছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। আবার কৌতূহল হচ্ছে। বলল “নাম কী? কে আপনি?”

–বলার প্রয়োজন মনে করছি না। বাই দ্যা ওয়ে কাজের কথায় আসুন…

রাজের রাগ তিরতির করে বাড়ছে। মেয়েটার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছে না। মুখের ওপরে একের পর এক অপমান করে যাচ্ছে।

–কীসের কাজ?

–ব্রেনলেস নাকি? এখানে কীসের জন্য এসেছেন? কী কাজে ডেকেছি?

রাজ অপমানে থমথমে হয়ে গেলো। রিমা নিজেই বলল “এই ব্রেন নিয়ে চলেন বলেই আজ আপনার এই হাল মার খেয়ে লটকে আছেন। যাই হোক নিজের ভালোবাসা কুয়াশাকে নিজের করে পেতে এসেছেন। আর আমি আমার ভালোবাসা তুষারকে নিজের করতে এসেছি।”

–আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন!

–ওয়াও দ্যাটস গ্রেট এটা বুঝতে পারলেন কীভাবে? ব্রেন তাহলে একটু আধটু আছে তাহলে?

রাজ আর বসে থাকতে পারলো না এতো অপমানিত হয়ে বসে থাকার কোনো মানেই হয় না। মেয়েটা প্রতিটা কথায় তাকে অপমান করছে, ব্রেনলেস বলেছে। এমন মেনে বসে থাকলে ও নিজেই নিজের কাছে ব্রেনলেস প্রমাণিত হবে। ওকে উঠে দাঁড়াতে দেখে রিমা ভ্রু কুঁচকে বলল “মি. ব্রেনলেসমশায় এ্যানি প্রবলেম? মার খেয়ে কী বেশিক্ষণ বসতে প্রবলেম হয়? প্রপার টিটমেন্ট নেন নাই নাকি?”

রাজ ধপ করে আবার বসে পড়লো মেয়েটা তাকে একচুল অপমান করতে ছাড়ছে না। মেজাজ দেখিয়ে ধমকে বলল “জাস্ট সাট আপ। আপনার সাথে আমার কোনো প্রকাশ কথা হবে না। আপনি আপনার মতো আপনার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে নিন। আমি আমারটা বুঝে নিবো।”

রিমা নিজেও বুঝতে পারলো বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। তাই বুদ্ধি করে বলল “আমি আপনাকে হেল্প না করলে আপনি পারবেন না। এতোদিন যেমন পারেন নি এবারও পারবেন না। ঠিকাছে যান আপনি।”

রাজ গেলো না। বসে থেকে রিমার দিকে তাকিয়ে রইল। ওকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিমা কঠিন স্বরে বলল “দূর হচ্ছেন না কেনো এখনো?”

–আপনাকে দেখতে ভালো লাগছে।

রিমা তেতে উঠে বলল “কী?”

ও থতমত খেয়ে বলল “কী কী? কী বলবেন বলুন শুনছি।”

–এতোক্ষণ ঢং করে টাইম ওয়েস্ট করলেন কেনো তাহলে?

রাজ গা ছাড়া ভাবে বলল “দেখছিলাম আপনি কী বলেন! কী করেন!”

————–

তুষার সারাদিন পর সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরলো টাক মাথায় ক্যাপ ছাড়া চলতে পারছে না। যেই দেখছে সেই জিজ্ঞেসা করছে ক্যাপ খুলছে না কেনো? বন্ধুরা ক্যাপ খুলেই টাক দেখেই মজা নিতে ছাড়ে নি। ফ্রেশ হয়ে নিবরে কুয়াশাকে খুঁজলো কিন্তু সাতচুন্নি বউয়ের টিকিটার খোঁজ পেলো না। ও কুয়াশাকে দেখতে না পেয়ে তিশাকে জিজ্ঞেসা করলো “মা, কুয়াশা কই?”

ওনি হেসে বলল “তোর ভয়ে তুতুলের রুমে দরজা আটকে বসে আছে। থাক ওকে বকিস না। বাচ্চা মেয়ে!”

–ও এতোটাও বাচ্চা নয়। বাচ্চা মানুষ করার বয়স হয়েছে। এখন এসব না দমালে এমন বাচ্চামি করতে করতে একদিন বড় অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।

কুয়াশা তুতুলের রুমের দরজায় কান পেতে তুষারের কথা শুনে চুপসে গেলো। ছেলের এমন কথায় তিশা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলল
–এসব কী বলছিস তুষার? মেয়েটার মানসিক অবস্থা ঠিক নেই। ঠিক থাকলে কখনো এমন করতো বলে তোর মনে হয়? এই মেয়েটাকে বিয়ে করলি বড় শখ করে এখনই শখ মিটে গেছে?

–মা তুমি উল্টো বুঝতেছ। আমি সেভাবে বলি নি। আমার কখনো ওর ওপরে বিরক্ত আসে নি। সকালে সাময়িক রাগ হয়েছিল ঠিকি কিন্তু এখন আর সেটা নেই।

–তুষার তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি। কুয়াশার ওপরে কখনো অবহেলা দেখলে তুমি আমার ছেলে বলে পার পাবে না।

–মা তুমি ভুল বুঝতেছ

তিশা বেগম শুনলেন না চলে গেলেন। তুষার কী করবে বুঝতে পারলো না। সে রাতে তুষার খেলো না রুমে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো মা-ও ছেলেকে ডাকলো না। শাশুড়ি বউমাকে ডাকলো কুয়াশা সাড়া দিলো না ঘুমিয়ে পড়ছে ভেবে ওনি চলে গেলে। তিশা খাবে না ভেবেছিলো কিন্তু তুহিন তার বউকে না খেয়ে শুতে দিলো না নিজেই বউকে যত্ন করে খাইয়ে দিলো।

সকলে তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। বাসার লাইট অফ অল্প আলোর লাইট জ্বলছে। কুয়াশা চোখ-মুখ ফুলিয়ে তুতুলের রুম থেকে বের হয়ে তুষারের রুমে আসলো। তুষার পুরো বিছানা জুড়ে উবুড় হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো মেয়েলি সুবাস পেয়ে চোখ খুললো ড্রিমলাইটের আলোয় মেয়েলি অবয়ব দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা কুয়াশা। তবুও ওভাবে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে রইলো। কুয়াশার নাক টানার আওয়াজ আসলো। কুয়াশা লাইট জ্বালিয়ে এসে ডাকলো “এই এই শুনেন শুনেনন না এই?”

ও তেজ দেখিয়ে বলল “কী সমস্যা?”

কাঁচি এগিয়ে দিয়ে বলল “আমি আপনার চুল কেটে দিয়েছি আপনি আমার চুল কেটে দিন। তাহলে বরাবর হয়ে যাবে। নিন শোধ তুলুন”

তুষার স্বাভাবিক কাঁচি নিলো ও পিছনে ফিরে কান্না চেপে দাড়িয়ে রইলো। নিজের চুলগুলো তারও প্রিয়। তুষার কাচিটা নিঃশব্দে রেখে কুয়াশার পেট কোমড় পেচিয়ে বিছানায় ফেলে লাইট অফ করে ওর গলায় মুখ গুঁজে দিলো। ও তখনো ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।

–কী সমস্যা ঘুমাচ্ছ না কেনো?

–আমি খারাপ তাই!

–আমি জানি সেটা ঘুমাও। বউ ছাড়া কতগুলো ঘন্টা থেকেছি বলো তো! চোখের তৃষ্ণা, কানের তৃষ্ণা, মুখের তৃষ্ণা…

–চুপ করুন। আমাকে আপনার ভালো লাগে না। শুধু শুধু মিথ্যা বলছেন কেনো?

–কে বললো?

–নিজের কানে শুনেছি। সব জানি আমি।

–ঘোড়ার ডিম জানো। আর একটা আওয়াজ পেলে হাত পা মুখ বেঁধে রাখব

ও তুষারের কথায় ভয় পেয়ে কান্নার গতি বাড়লো। তুষার কিছু বলল না। একটা সময় ওর কান্না থেমে গেলো ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লো। ও ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল “আমার সাতচুন্নি বউ! আমার শখের বউ! পেত্নী বউ! কাঁদুনি বউ! অভিমানি বউ! পাগলি বউ! ভালোবাসি বউ!”

চলবে ইনশাআল্লাহ