প্রেমহিল্লোল পর্ব-৯+১০

0
25

#প্রেমহিল্লোল (০৯+১০)
#তাসনীম_তামান্না

বিকালের আকাশ মেঘলা ঝড়ো হাওয়া বয়ছে পরিবেশ ঠান্ডা। মেঘার বিয়ের ঝামেলা শেষ হয়েছে আজ তিনদিন হলো সকল আত্মীয় স্বজনরা চলে গেছে। বাড়ির লোকজন সকলে ছাদে এসেছে সময় কাটাতে এমন সময় ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নামলো বড়রা সকলো বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাউনির নিচে গেলো। কিন্তু মেঘ, কুশান, কুশ, শান, কুয়াশা গেলো না টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটায় ভিজে চুপেচুপে হয়ে গেলো। কুশ, শান নিজেদের মতো মজা করছে পাখি কয়েকবার ছেলেদের ডাকলেও ওরা মায়ের কথায় কান দিলো না। কুয়াশা অন্যমনস্ক হয়ে এদিক ওদিক হাঁটা হাঁটি করছে সেদিন রাতের পর তুষারের টিকিটির দেখা মেলে নি। তুষারের বলা কথাগুলো কুয়াশাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। খুব অপরাধবোধে ভোগে। কাউকে কিছু জিজ্ঞেসাও করতে পারে না।

ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিলো। কুশান এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল “কী হয়েছে তোর? আজকাল কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেছিস”

কুয়াশা চমকে উঠে বলল “কই না তো”

–এই যে এখনো অন্যমনস্ক। বল ভাইয়াকে কী হয়েছে।

কুয়াশা হেসে ভাইয়ের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে বলল “কিছু হয় নি। মেঘার জন্য মন খারাপ হয় তাছাড়া আর কিছু না।”

কুশান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল “মন খারাপ করলে ওর সাথে দেখা করে আয়। এভাবে থাকিস না। বাবা-মা তোর জন্য টেনশন করে।”

বৃষ্টি থেমে গেছে প্রকৃতি ধুয়ে মুছে স্নিগ্ধ সুষমায় রূপ ধারণ করেছে। মেঘেরা আকাশে বিচরণ করতে করতে কোথায় যেনো চলে যাচ্ছে। হয়তো অন্য প্রকৃতির স্নিগ্ধ রূপ দিতে যাচ্ছে। ওরা সকলে নিচে যার যার রুমে চলে গেলো। কুয়াশা ফ্রেশ হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নম্বর থেকে অনেকগুলো কল এসেছে। দরকার ভেবে নিজে দুবার ফোন ব্যাক করেছে। কিন্তু ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলো না। কফি কিংবা চায়ের উদ্দেশ্য নিচে রওনা হলো পথিমধ্যে বাবা-মা’য়ের রুম ক্রস করার সময় তাদের কথায় নিজের নাম শুনে থেমে গেলো।

–তোমার ছাড়া কী পৃথিবীতে আর কারোর মেয়ে নেই? তারা তাদের মেয়েকে ভালোবাসে না শুধু তুমিই বাসো? তারা তাদের মেয়েকে বিয়ে দেয় না। সংসার করছে না।

–কখন বললাম বিয়ে দিব না?সময় হোক ভালো পাত্র পাই তারপর বিয়ের চিন্তাভাবনা করা যাবে।

–পাত্র খুজতে না নামলে ভালো পাত্র পাবে কোথায়? সবাই বলাবলি করছিল মেঘার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশাকে কেনো বিয়ে দিচ্ছি না কোনো সমস্যা কিনা!

–অন্যর কথা শুনে জেদ ধরবে না কেয়া। মেয়ে আমার কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে না সময় হোক বিয়ে দিবো। আমার মেয়েকে বিয়ে দিবো কী দিবো না সেটা আমার ব্যপার।

–আমি কারোর কথায় কান দিচ্ছি না আমাদের বয়স হয়েছে কখন কী হয়ে যায়। তখন আমার মেয়েটার কী হবে? জানি কুশান বোনকে ফেলে দিতে পারবে না। কিন্তু মানুষের মন ঘুরতে সময় লাগে না।

–হ্যাঁ সেটা আমিও বুঝতে পারছি রায়হান বন্ধুর ছেলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। রাহুল ছেলেটার সম্পর্কে খোঁজ নি। তারপর ধীরে সুস্থে আগানো যাবে।

–ছেলেটাকে দেখে তো ভালো মনে হয়।

–উপরে উপরে সবাই ভালো ভিতরের খবর জানতে হবে। আমার মেয়ে কোনো ফেলনা নয় তাকে ভালো সুপাত্রের হস্তে তুলে না দেওয়া পর্যন্ত মরেও শান্তি পাবো না।

–তুষার কিন্তু ভালো ছিল।

–হ্যাঁ শুধু দোষ একটাই ও আমার মেয়েকে অনেকটা দূরে নিয়ে যাবে। যেখানে যখন-তখন চাইলে আমি যেতে পারব না।

কুয়াশা আর কিছু শুনলো না নিঃশব্দে জায়গা থেকে প্রস্থান করলো। মা-বাবার তাকে নিয়ে এমন দুশ্চিন্তা ওর মন খারাপ করে দিলো। কফি বানাতে গিয়ে হাতে কয়েকবার ছ্যাঁকা খেলো। কফি নিয়ে বারান্দায় বসে কাটিয়ে দিলো অনেকটা সময় কী ভাবছে, কী করছে মস্তিষ্কে উল্টোপাল্টা হয়ে আছে। ডিনারের জন্য কুশ, শান ডাকতে এলে তখন হুঁশ ফিরলো। দেখলো কফিটাও পুরো খাওয়া হয় নি। ডিনারটাও ঠিক মতো খেতে পারলো না।

বাবা-মা’র কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো ঘুমুঘুমু কণ্ঠে ‘হ্যালো’ বলল ওপাশ থেকে উত্তর এলো না। শুধু দীর্ঘ শ্বাস শোনা গেলো। কুয়াশা নম্বরটা দেখলো এটা থেকেই ফোন এসেছিলো। ও কিছু না ভেবে সেভ করে হোয়াটসঅ্যাপ চেক করলো। তুষারের ছবি ভেসে উঠলো। ও ঘুম পুরোপুরি কেটে গেছে। ওপাশ থেকে বা কুয়াশা কেউই ফোন কাটে নি। ছবি দেখে ও হুরমুর করে উঠে বসলো। শুকনো ঢোক গিলে বলল ‘তু-ষা-র’!

তুষার একটু অবাক হলো কুয়াশা কীভাবে চিনলো? বলল “কীভাবে বুঝলে?”

–আপনার হোয়াটসঅ্যাপে ছবি দেখে।

তুষার শ্বাস ছেড়ে বলল “ওহ!”

কুয়াশা আমতা আমতা করে বলল
–আ’ম সরি আমার আপনার সম্পর্কে ওভাবে ওমন কথা বলা উচিৎ হয় নি। আমার শুধু আপনার প্রতি ক্ষোভ থেকে ওমনটা মনে হয়েছে তাই কিছু না ভেবে আমি বলে দিয়েছি।

– স্বীকার করে নিচ্ছো আমি ভালো?

–আমি জানি না আপনি কেমন? কিন্তু আমার মনে হয়েছে আপনার সম্পর্কে ওভাবে বলা ঠিক হয় নি। অন্যায় করে ফেলেছি।

–গুড। আমি ফোন দিলাম রাগ করলে না যে প্রেমে পড়ে গেলে না-কি?

–প্রেমে পড়া কী এতো সহজ?

–হুম, প্রেমে পড়া সহজ। কিন্তু মায়ায় জড়িয়ে আটকে পড়ে ফেরার পথ না পাওয়াকে ভালোবাসা বলে।

–প্রেম বা ভালোবাসা কোনোটাতেই পড়ি নি তাই অনুভূতি সম্পর্কে অবগত নই।

–একটা জিনিস খেয়াল করেছো। এই প্রথম তুমি আমার সাথে সুস্থ এবং সুন্দর ভয়-ভীতি ছাড়া কথা বলছ।

কুয়াশাও অবাক হয়ে গেলো ওর কথা সত্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবলো। বলল
–প্রথম ফোনে কথা বলছি সে জন্য হয়তো

–ওকে সামনা-সামনি ও ফোনে কথা বলব তাহলে এমন সুন্দর কথা বের হবে তোমার মুখ থেকে নাহলে তো কাটা বের হয়।

কুয়াশা রাগ করলো না ভাবলো লোকটা মনে হয় সবসময় এমনই করে সবাইকে রাগিয়ে দেয়। তাই সম্মতি জানিয়ে বলল
–জি জি ঠিক আছে। বলছি আমার সাথে বিয়ে হচ্ছে না বলে কত রাগারাগি করলেন আমি চাইছি আপনার একটা গতি করে দিতে।

তুষারের ভ্রু কুঁচকে গেলো বলল
–গতি? কীসের গতি করতে চাইছো?

–আমার অনেক চেনাজানা ভালো সুন্দরী মেয়ে আছে। আপনি চাইলে আমি আপনাকে তাদের ছবি পাঠাতে পারি আপনি পছন্দ করে জানাবেন তার সাথে আপনাকে সেট করে দিবো।

তুষারের ফুরফুরে মেজাজটা মুহূর্তে গরম হয়ে গেলো দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–ঘটকালি করতে নেমেছ?

–শুধু আপনার জন্য। আর কারোর জন্য না।

–মেজাজ গরম করবে না। তোমাকে বলেছি আমার গতি করে দিতে? এতো উপকার তোমার কে করতে বলেছে?

–আপনার জন্য মেয়ে খুঁজে আপনার উপকার করতে চাইছি

তুষার ঠাস করে ফোন কেটে দিলো। কুয়াশা বোকা বোকা হয়ে তাকিয়ে বলল
–যাহ বাবা আজকাল যেচে উপকার করতে গেলেও মানুষ রেগে যায়।

তুষারের আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিয়ে কুয়াশা কয়েকটা মেয়ের ছবি সেন্ট করে ম্যাসেজে লিখলো “আরে লজ্জা পাবেন না। কোন মেয়ে পছন্দ নির্দিধায় আমাকে জানাবেন। নো লজ্জা ওকে?”

চলবে ইনশাআল্লাহ

#প্রেমহিল্লোল||১০||
#তাসনীম_তামান্না

কুয়াশাকে নিয়ে ওর বাবা-মা’র চিন্তার শেষ নেই। ও সেটা হারে হারে টের পাচ্ছে। মায়ের সারাক্ষণ এমন দুঃশ্চিন্তা ওকে অপরাধী করে তুলে। কুয়াশার এখন আর কিছু ভালো লাগে না। আগের চঞ্চলতা কমিয়ে দিয়েছে। বিসিএস প্রিপারেশনে মনযোগ দিয়েছে নিজেকে সব কিছু থেকে লুকিয়ে রাখার প্রায়শ চালাচ্ছে। পড়ার মধ্যে ফোন হাতে নিয়ে তুষারের ম্যাসেজ এসেছে কীনা চেক করলো। লোকটা ফোন দিয়ে সেদিন কথা বলল তারপর আর পাত্তা নেই একেবারে লাপাত্তা হয়ে গেছে। ম্যাসেজ দিলে সিন হয় কিন্তু রিপ্লাই আসে না হয়তো রিপ্লাই দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করে না। তবে কুয়াশার মনটা ছটফট করে অজানা কারণে বার বার তুষারের এক্টিভিটি চেক করে। ও নিজেও জানে না কেনো এমনটা করে। কিন্তু ভালো লাগে আবার রাগও লাগে।

কুয়াশা দুপুরে শুয়ে ফোন চাপছিলো এমন সময় পাখি আর তুতুল এলো।
–বাবা, তোমরা দু’জন দল বেঁধে কী ব্যাপার?

পাখি হেঁসে বললো “ব্যাপার খুবই সিরিয়াস। আবার খুশির।”

কুয়াশা কৌতুহলে উঠে বসে বলল “ ওহ তাই না-কি? তা কী ব্যাপারখানা শুনি।”

তুতুল বলল “তোমাকে দেখতে আসছে। বড়বাবার বন্ধুর ছেলে ওদের নিজেদের ব্যবসা আছে। ছেলের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছে ছেলে ভালো। আজ তারা সন্ধ্যায় তোমাকে দেখতে আসবে।”

এমন কথা শুনে কুয়াশা কিছু সময় থ হয়ে বসে রইলো। তুতুল, পাখি আরো কী কী বলল তা ওর কান অবধি পৌঁছালেও মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারলো না। তুতুল ওকে মৃদু ধাক্কা দিতে ওর হুঁশ ফিরলো।

–কী হলো কোথায় হারালে? এখনই কী হবু বরকে নিয়ে স্বপ্নের রাজ্যে বেড়াতে গেলে?

পাখি হেসে বলল “উঠে যা ফ্রেশ হয়ে আয়। তোকে রেডি করে। ওদিকে মা, ছোটমা কাজ করছে ওদেরকেও হেল্প করতে হবে। পরেও স্বপ্নের রাজ্যে ঘুরতে পারবি।”

কুয়াশা আকাশ কুসুম ভাবতে ভাবতে অনুভূতিশূন্য হয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। ওকে সাজাতে সাজাতে তুতুল পাখি নানান কথা বলল। তার কিছুই কুয়াশা শুনলো বলে মনে হলো না। হঠাৎ ওরা ওর অন্যমনস্ক দেখে পাখি বলল “তুই কী বিয়েতে রাজি নস? কী হয়েছে তোর? তুই কী কাউকে ভালোবাসিস?”

কুয়াশা চমকে উঠে বলল “কই না তো! হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলে কেনো?”

–বিয়ের কথা শুনলে তোর মুখটা শুকিয়ে যায় তাই। তুই কাউকে ভালোবেসে থাকলে বলতে পারিস ছেলে ভালো হলে বাসার কেউ অমত করবে না।

–তেমন কিছু না ভাবিপু। তোমাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমার এমন কেউ থাকলে অবশ্যই জানাতাম।

–দেখো কুয়াশা আমি, পাখি ভাবিপু, মা, বড়মা সবাই পরিবার আপনজন ছেড়ে শশুড়বাড়িতে অচেনা অজানা মানুষজনকে আপন করে নিয়েছি। এটাই সামাজিক, ধর্মীয় নিয়ম। আমরা না চাইলেও এটা করতে হবে। সুতরাং, মন খারাপ না করে সবটা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করো।

কুয়াশা কিছু বলল না চুপচাপ বসে রইলো। পাখি, তুতুল ওকে রেডি করে নিচে চলে গেলো শাশুড়িদের কাজ করে দিতে। কুয়াশা সোনালী রংয়ের শাড়ি পড়েছে। সাথে হালকা সাজ নিজের দিকে অপলক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো বোঝার চেষ্টা করলো তার মধ্যে কী এমন আছে যার জন্য অপরিচিত একটা ছেলে তাকে বিয়ে করে নিবে। সে কী আদেও সে কী কারোর ভালোবাসার যোগ্য? সে কী ভালো স্ত্রী হতে পারবে?

———–

তুষার ড্রইংরুমের সোফায় বসে ফোন টিপছিলো সামনে টিভিতে খেলা হচ্ছে সেটাও দেখছে। তিশা ছেলের জন্য কফি ও তার আর স্বামীর জন্য চা বানিয়ে এনে বলল “এভাবে আর কতদিন চলবে? আমি আর কতদিন এভাবে চা কফি বানাবো?”

তুষার মায়ের দিকে না তাকিয়ে বলল “তোমাকে কাজ করতে বলেছে কে? কাজের লোককে বললে করে দিতো!”

–আমি কী বোঝাচ্ছি বুঝেও না বোঝাও ভান করছিস? কাজের লোক দিয়ে সব হলে তোকে বিয়ের কথা বলতাম না। একা একা আমার ভালো লাগে না বাপ ছেলে সারাক্ষণ কাজে থাকিস আমার একটা সঙ্গী হলে একা লাগত না।

তুষার এবার উঠে বসে বলল “তোমাকে একটা বুদ্ধি দি। তোমার একা একা বোরিং লাগে। তুমি বাবাকে বিয়ে দিয়ে সতীন আনতে পারো। তারপর সারাদিন দুই সতীন মিলে সংসার, গল্প, ঝগড়াঝাটি, চুলোচুলি করবা। তোমার বোরিংনেস কেটে যাবে। বাবা তুমি রাজি থাকলে কাজী ডাকি?”

তিয়াস আহমেদ খেলায় মনোযোগ মা-ছেলের কোনো কথায় তার কানে ডুকে নি। কোনো উওর ও করলেন না। তুষার বলল “নিরবতা সম্মতির লক্ষ্মণ তাই তো চুপ করে আছে।”

তুষার বাবাকে ফাঁসিয়ে কফির কাপটা নিয়ে উঠে গেলো তিশা আহমেদ ফোঁস ফোঁস করে স্বামী উপরে চড়াও হলো। তুষার ওর রুম থেকে বাবা-মা’র ঝগড়াঝাটি শুনতে পাচ্ছে। মিটমিট করে হেসে হোয়াটসঅ্যাপে কাঙ্ক্ষিত মানুষের ম্যাসেজ করতে ডুকলো। রাগ, অভিমান থাকলেও সেটা মনের ছটফটানির কাছে ভাঁটা পড়লো।

কুয়াশার ভাবনার মাঝে ফোনে টুং-টাং আওয়াজ হলো হাতে নিয়ে দেখলো তুষারের ম্যাসেজ ওপেন করে দেখলো “ওসব মেয়ের ছবি আমি ওপেন করেও দেখি নি। তুমি রাজি থাকলে বলো আমার আর কাউকে লাগবে না।”

কুয়াশা থম মেরে বসে রইলো। তুষার কুয়াশাকে আবার প্রস্তাব দিলো। ম্যাসেজের রিপ্লাই করতে পারলো না তার আগে তুতুল এসে তাড়াহুড়া লাগিয়ে দিলো। ছেলেপক্ষরা চলে এসেছে। কুয়াশার ভয়ে দুরুদুরু বুক কাঁপছে তুষার মুখশ্রী ভেসে উঠছে। চোখ জ্বালা করে পানি আসতে চাইছে। ওদের সামনে গিয়ে সালাম জানালো। ওরা এটা-সেটা জিজ্ঞেসা করছে কুয়াশা ভয় জড়তা নিয়ে সবটার উত্তর দিলো। ওদের কথা শুনে বুঝলো পাত্র উপস্থিত নেই সে কিছু কাজের জন্য হঠাৎ করে আঁটকে গেছে কিছুতেই আসতে পারছে না। কুশান বলল “বিয়েটা যাদের সংসার করবে যারা তারাই যদি নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া না করে ন্যায় তাহলে কীভাবে হবে?”

পাত্রপক্ষ থেকে একজন বলল “ওরা না হয় কাল কোথাও দেখা করে নিবে সেটাই ভালো হবে। কুয়াশা তোমার নম্বর দিও। কি বলেন ভাই?”

কৌশল অমতের কিছু দেখলো না সম্মতি জানালো। কুয়াশা পুরোটা সময় কাঠের পুতুলের মতো বসে রইলো। পাত্রপক্ষ চলে যেতে কেয়া মেয়ের পাশে বসে বলল “কী রে মা, এভাবে বসে আছিস কেনো? ওদেরকে পছন্দ হয়েছে? তোর বাবা-ভাই তোর জন্য সবসময় বেস্টটাই নিবে। তাই তুই কোনো টেনশন করিস না।”

কুয়াশা হাসার চেষ্টা করে বলল “আমি জানি তারা আমার খারাপ হতে দিবে না।”

পাখি বলল “হ্যাঁ, কাল তোমরা দেখা করে নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিও। পরিবার ভালো মনে হয়েছে মানে ছেলেও ভালোই হবে।”

কেয়া দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল “তাই জেনো হয়।”

রাতে কুয়াশা অল্প খেলো। চোখ বন্ধ করতে চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরতে কেনো? এর উত্তর ওর কাছে নেই। তুষার তার পেরেও ম্যাসেজ করেছে “তুমি কী রাগ করলে?, আমি তো মজা করলাম। ডোন্ট বি সিরিয়াস!” কুয়াশা সেগুলো দেখেও রিপ্লাই করে নি। শুধু দীর্ঘ শ্বাস ফেলেছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ