প্রেমে ডুবি পর্ব-১১

0
51

#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১১( ধামাকা )

দেখতে দেখতে দুইটা দিন কেটে যায়। সবাই সবার মতো চলছে। ডিসেম্বর মাস প্রায় শেষ হতে চলল। সিফাত আসার পর থেকে চাচা চাচি অন্য রকম হয়ে গেছে। কেউ দেখলেই ভাববে তাদের মতো পৃথিবীতে আর ভালো মানুষ কেউ নেই। মাঝে মাঝে শায়রা খুব অবাক হয় এদের আচার ব্যবহার দেখে। শায়রা আর নিধি দুজনে সোফায় বসে চিপস খাচ্ছে আর টিভিতে কাটুন দেখছে। নিধি কিছুতেই কাটুন দেখবে না। শায়রা কাটুন দেখবে বলে জেদ ধরে বসে আছে । শায়রা’র হাতে রিমোট বিধায় কিছু করতে পারছে না। নিধি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। নিধিকে দেখে শায়রা মিটিমিটি হাসছে। শায়রা’র হাসি দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে নিধি। চেচিয়ে বলে ওঠে শায়রা কাজটা কিন্তু ভালো হচ্ছে না। শায়রা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে ওঠে। শায়রা একটা হাসি দিয়ে দরজা খুলতে চলে যায়। দরজা খুলে শায়রা অবাক তাকায়। দরজার সামনে থাকা মানুষ টাও শায়রা’র দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে। একে অপরের দিকে বিস্মিিত হয়ে চেয়ে থাকে।

সিফাত দুজনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেও অবাক হয়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, সেহরিশ কি হলো তোদের। সিফাতের কথায় সেহরিশের মনে পরে যায় কিছুক্ষণ আগের কথা। যখন তিন বন্ধু মিলে বাইরে বেড়িয়েছিল। তখন হঠাৎ করে সিফাত বলে, আমার সাথে যাবি এক জায়গায়।

রাফি বলে, হঠাৎ করে কোথায় নিয়ে যাবি আমাদের। সিফাত মুচকি হেসে বলে, সারপ্রাইজ। যেখানে নিয়ে যাব তোরা সেখানেই যাবি। বাট কোনো প্রশ্ন করবি না।

রাফি আর সেহরিশ মাথা নেড়ে সায় দেয়। সিফাতের কথা অনুযায়ী চলে আসে এখানে। এটা যে সিফাতের বাসা সেটা কেউই জানতো না সেহরিশ । সিফাতের কথায় ভাবনার ছেদ ঘটে।

” সেহরিশ আর ইউ ওকে?

” হু। সিফাত এটা কি তোদের বাড়ি। সিফাত মাথা ঝাঁকিয়ে মুচকি হেসে হ্যাঁ বলে। সেহরিশ যেন আকাশ থেকে পরে। একটু জোরেই বলে ফেলে,

” হোয়াটট…?

সেহরিশের কথায় আশ্চর্য হয়ে যায় সিফাত। সাথে রাফিও। বাইরে এত শব্দ শুনে জেসমিন বেগম ও চলে আসেন। শায়রা’র দেড়ি হচ্ছে দেখে নিধিও আসে।

জেসমিন বেগম দরজার সামনে সেহরিশ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাসি মুখে বলে, আরে বাবা তুমি? নিশ্চয় আবার সেজন্য এসেছো? চাচি’র কথা মাথার উপর দিয়ে যায় সিফাতের। কি যা তা বলছে। জেসমিন বেগমের কথায় বিবৃতিকর পরিস্থিতি তে পরে যায় সেহেরিশ।

জেসমিন বেগম আবারও বলে, কি হলো বাবা, তুমি চুপ করে আছো কেন? আমি ঠিক বলছিনে বলো?

সিফাত বলে, জাস্ট শাট আপ চাচি। আপনি কি বলছেন এসব। আর সেহরিশ কি আপনাদের চেনে হ্যা। আন্দাজে কোনো কথা না বলায় ভালো। আর সেহরিশ তুই কি আগে আমাদের বাড়ি আসছিস?

সেহরিশ চুপ করে আছে। শায়রা আর নিধি একপাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিধি তো ভয়ে কাপতে শুরু করেছে। শায়রা স্ট্যাচু হয়ে গেছে। যার জন্য এতোদিন বোরকা পড়ে চলাচল করছে। যে পরিস্থিতিতে পড়বে না বলে সতর্ক হয়ে চলছে। এখন সেই পরিস্থিতি কিভাবে সামলাবে সে।

***

সেহরিশ এখনো গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিফাত এসব আর সহ্য করতে পারছে না। আসার পর থেকে এক রেখে এক লেগেই আছে। সিফাত সেহরিশ কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,

” সেহরিশ সত্যি করে বল কি হয়েছে? তুই কি আমার চাচি কে আগে থেকে চিনিস।

সেহরিশ এবার মুখ খোলে। কতক্ষণ চুপ করে থাকবে সে। সবটা তো সামনে আসবেই। সত্য কখনো চাপা থাকে না। আর সে যদি চুপ করে থাকে তাহলে সমস্যা টা বাড়বে বই কমবে না। সেহরিশ বলে,

” হ্যা এনাদের সবাইকেই আমি খুব ভালো করেই চিনি। সিফাত অবাক হয়ে বলে,

” কি বলছিস এসব তুই? কিন্তু কিভাবে?

সেহরিশ সেদিনের ঘটনা খুলে বলে সিফাত কে। সব শুনে সিফাত রাগি দৃষ্টিতে জেসমিন বেগমের দিকে তাকায়। জেসমিন বেগম শুকনো ঢোক গিলেন। আমতাআমতা করে বলেন,

” তুই যা ভাবছিস তা নয় সেহরিশ। এখানে অনেক কাহিনি আছে। সিফাত হাত উচিয়ে থামিয়ে দেয়। বলে আর একটা কথাও না চাচি। যা হয়েছে সব ভুলে যাও। সেহরিশ আর রাফি আমার বন্ধু। তাদের যেন আপ্যায়নের কোনো ত্রুটি না হয়। আমি ওদের কে নিয়ে আমার রুমে যাচ্ছি।

সিফাত শায়রা’র দিকে তাকিয়ে বলে, বনু আমার রুমে দু কাপ চা দিয়ে যাস। শায়রা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বলে। সিফাত নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরে। সিফাতের পিছন পিছন রাফি আর সেহরিশ ও যায়। সেহরিশ যাওয়ার পথে একবার শায়রা’র দিকে তাকায়। শায়রা সেহরিশের দিকেই তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ সেহরিশের তাকানোই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। শায়রা দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়।

****

সিফাতের রুমে তিন বন্ধু আড্ডা দিচ্ছে। সেহরিশ একটু কম কথা বলছে। রাফি একটু বেশিই কথা বলছে। রাফি অনেক চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে। হাসি ঠাট্টা করতে খুব পছন্দ করে।

শায়রা ট্রে তো করে চা বিস্কুট নিয়ে আসে। দরজার সামনে যেতে ইতস্তত বোধ করে। শায়রা এক হাত দিয়ে দরজা নক করে।

” ভাইয়া আসব?

” হ্যা বনু আয়।

শায়রা মাথায় ঘোমটা দিয়ে পা টিপে টিপে এগিয়ে যায় রুমের ভিতর। টেবিলের উপর ট্রে রেখে বলে, ভাইয়া রেখে গেলাম। খেয়ে নিও তোমরা। শায়রা দ্রুত বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। রুম থেকে বেড়িয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। আজ আর রুম থেকে বের হবে না ভাবে। এরা যাবার পরই আর বাইরে আসবে।

সিফাত সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে রাতের ডিনার না করিয়ে যেতে দেবে না। সেহরিশের ইচ্ছা না থাকা স্বত্তেও থেকে যেতে হচ্ছে। বন্ধু র কথা ফেলে দেবে কি করে।

******

জেসমিন বেগম বকতে বকতে রান্না করছেন। যা মুখে আসছে তাই বলছেন তিনি। একা একা সব করছেন বলে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাঁর। সেজন্য শায়রা কেও বলতে বাদ দিচ্ছেন না। তিনি বকতে বকতে রান্না শেষ করেন।

রাতের ডিনার করে সেহরিশ আর রাফি দু’জনে চলে যায়। সন্ধ্যায় আতিয়ার রহমান বাসায় এসে সেহরিশ কে দেখে চমকে যান। কিছু বলতে গেলে জেসমিন বেগম ইশারায় থামিয়ে দেন। সেজন্য তিনি কিছু বলেন না। হাসি মুখে দুজনের খাতির যত্ন করতে বলেন স্ত্রী কে। আতিয়ার রহমান মনে মনে ছক কোসেন।

চলবে ইনশা আল্লাহ

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]