প্রেমে পরা বারণ পর্ব-১০

0
42

#প্রেমে_পরা_বারণ
পর্ব -১০
#Nosrat_Monisha

নারী হৃদয় কোমল হয়। সামন্য আঘাতে ভেঙে যায় আর সামান্য ভালোবাসায় গলে যায়। নির্জনাকে অর্ক পরম আবেশে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলে,
–তুমি ঠিক আছো?
এই মুহূর্তে অর্ক সুস্থ না অসুস্থ সেটা বিচার করতে পারছে না নির্জনা। তার অবচেতন মস্তিষ্ক হয়তো সেটা করতে চাইছে না।
–আপনি এসেছেন দস্যি ছেলে?৷
হঠাৎ বেলকনি দিয়ে একটা দমকা হাওয়া এসে নির্জনার সামনের অবাধ্য চুলগুলো তার চোখের উপর এসে পরে। অর্ক এক হাত দিয়ে নির্জনার কোমড় জড়িয়ে আছে আর অন্য হাত দিয়ে আলতো করে সেই চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে। অর্কর স্পর্শে নির্জনার সকল ইন্দ্রিয় কাজ করা বন্ধ করে দেয়। লজ্জা নামক এক অনুভূতি তাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে। সে একটু একটু করে সোজা হয়ে দাড়িয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,
–আমাকে ছাড়ুন ।
এরপর নির্জনা নড়চড় শুরু করলে সে আর অর্ক দুজনেরই পরে যাবার উপক্রম হয়। তখন অর্ক সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তাকে হেঁচকা টান দেয় এতে নির্জনা সরাসরি তার বুকে আছড়ে পরে। অর্ক নির্জনাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে কিন্তু তার হৃদয় মস্তিষ্কের কাছে পরাজিত হয়। অর্ক নির্জনাকে ছেড়ে তো দেয়ই না বরং দু’হাতে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। অর্কর এমন কার্যে নির্জনার বোঝা উচিত ছিলো এরূপ আলিঙ্গন কোন বালক মস্তিষ্কের পুরুষের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু ঐ যে বলে না, নারী নিজের বরাদ্দকৃত পুরুষ ছাড়া পৃথিবীর সবার জন্য বুদ্ধিমতী। তাইতো নির্জনা অর্কের এমন কার্যে প্রশ্ন তো দূর সন্দেহও প্রকাশ করতে পারছে না। বরং নিজের অজান্তে সেও অর্ককে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। অর্কের বুকে মাথা রেখে নির্জনা বহুদিন পর নিরাপদ অনুভব করে, শান্তি খুঁজে পায়।
অন্যদিকে অর্ক নিজের নিঃশ্বাসের সাথে নির্জনার চুলের ঘ্রাণ অনুভব করতে পারছে। আর তার চারিপাশে আবদ্ধ করা নির্জনার দুটো তুলতুলে নরম হাতের স্পর্শকে সে চাইলেও দূরে সরিয়ে দিতে পারছে না। এককথায় নির্জনার সঙ্গ তাকে উন্মাদ করে তুলছে। সে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলেছে,
–আমি তো শুধু ওকে এক বার দেখতে এসেছিলাম। না না না! অর্ক সিদ্দিকী তুমি এভাবে নিজের উপর এভাবে কন্ট্রোল হারাতে পারো না। মানছি তোমার বউয়ের চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ আর তার শরীররে স্নিগ্ধতা তোমাকে পাগল করে দিচ্ছে। তবুও তোমার এখন যেভাবেই হোক নিজেকে সামলাতে হবে নাহলে তুমি তার কাছে ধরা পরে যাবে।

কিন্তু অর্ক যতই নির্জনা থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে কোন এক অদৃশ্য চুম্বক তাকে ততই নির্জনার আরও কাছে টেনে নিচ্ছে । ধীরে ধীরে অর্ক নিজের সুপ্ত অনুভূতির কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। নিজের কাছেই পরাজিত হয়ে নির্জনাকে আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে নেয়।
কিন্তু তাদের এই সুন্দর মুহূর্তে বাধা পরে রেহানার কন্ঠে।
–বৌমা খাবারটা খেয়ে নাও আমি কিন্তু তোমার কোন কথা শু..(তার নজর বেলকনিতে আলিঙ্গনরত নির্জনা আর অর্কের উপর পরে) ওহ! আমি কিছু দেখি নি।
বলে তিনি অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে যায়। এক মুহূর্তের জন্য তিনিও ভুলে গেছেন অর্ক মানসিক ভারসাম্যহীন।
রেহানার আওয়াজে অর্ক অবশেষে নিজের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সে নির্জনাকে ছেড়ে দেয়। যদিও এতক্ষণ যাবত সে এটাই চাইছিলো কিন্তু এখন সে বিন্দুমাত্র আনন্দিত হতে পারছে না। রেহানাকে ধন্যবাদ দেওয়ার বদলে তার উপর বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলে,
–এদের জন্য বউয়ের সাথে একটু একা সময়ও কাটানো যায় না।
আর নির্জনা সে-তো মরমে মরে যাচ্ছে। তার একবারে জন্যও মনে হচ্ছে না তার স্বামী পাগল।
নির্জনার লাজে রাঙা মুখ দেখে অর্ক মনে মনে বলে,
–যদি তোমাকে ভালবাসতে পারতাম তবে তোমার এই লাজুক চেহারা প্রতিদিন দেখতে পেতাম কিন্তু তুমি আমার ভাগ্যে নেই।
এদিকে রেহানার এতক্ষণে অর্কের মানসিক অবস্থার কথা খেয়াল হতেই সে অর্কর দিকে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে,
–স্যার আপনি এখানে কি করে এলেন।
সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেছে যে অর্ক বেলকনিতে কি করে সেই প্রশ্ন মাত্র নির্জনার মাথায় এলো। সেও রেহানার মতো প্রশ্ন করে,
–সত্যিইতো আপনি তো দরজা দিয়ে আসেন নি। তবে?
এবার কিছুক্ষণ আগে করা নিজের আচারণ লুকানোর যথাযথ রাস্তা খুঁজে পায় অর্ক। সে আবার তার নিখুঁত অভিনয় শুরু করে। মুখ ভার করে বলে,
–গাছে চড়ে।
–কি?
রেহানা আর নির্জনা একত্রে বলে উঠে।
নির্জনা তো আঁতকে বলে,
–এভাবে কেন এসেছেন? যদি পরে ব্যাথা পেতেন?
–আমার গাছে চড়া অভ্যাস আছে। এভাবে না কিভাবে আসবো? তোমার ঘরে তো আমার আসা নিষেধ।
ভ্রুকুটি করে নির্জনা বলে,
–কিন্তু কেন?
অর্ক চুপ হয়ে যায়। তখন রেহানা বলে,
–বড় স্যার না করেছে।
অর্ক মন খারাপ করে বলে,
–আমার জন্য তুমি ব্যাথা পেলে সবাই এত্তো বকা দিয়েছে। প্রীতিকেও ভাইয়া বকেছে। তাই সরি বলতে এসেছি।

ডা. প্রীতির সাথে অর্কর বন্ধনটা নির্জনা লক্ষ্য করেছে। অন্য সময় হলে সে কিছু মনে করতো না কিন্তু এখন কেন সে নিজেও জানে না তার হিংসা হচ্ছে ।
তাই খানিকটা রাগ দেখিয়ে বলে ,
–ওহ তার মানে ভাইয়া ডা. প্রীতিকে বকছে বলে আমাকে সরি বলতে এসেছেন।

অর্ক বুঝতে পারে নির্জনার ডা. প্রীতিকে হিংসা করছে তাই সে মনে মনে খুশি হয়। কিন্তু নিজের বউয়ের রাগ ভাঙানোর জন্য বলে,
–নাহ! আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমার জন্য ব্যাথা পেয়েছো। তাই সরি বলতে এসেছি। আমি প্রমিস করছি তোমাকে আর জ্বালাবো না। তোমাকে আর ব্যাথা দিবো না।
–ইটস ওকে। আপনার এতে কোন দোষ ছিলো না ওটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলো।
অর্ক তাকে আর জ্বালাবে না ভাবতেই নির্জনার কেমন খালি খালি অনুভব করলো। মনে মনে বললো,
–আপনি দুষ্টুমি করেন বলেই তো আমি আমার সব কষ্ট ভুলে হাসি, আপনার পিছনে ছুটে বেড়াই। কিন্তু এখন যদি আপনি দুষ্টুমি না করেন তবে তো আমি আবারও হাসতে ভুলে যাবো।
কিন্তু তার ভাবনায় ছেদ পরে অর্কর ডাকে। সে তাকিয়ে দেখে অর্ক তার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,
–তুমি কি আমার বন্ধু হবে?
নির্জনা খুশি মনে তার হাত ধরে।


–স্যার একজন বডিগার্ড পাওয়া গেছে। এক্স আর্মি পারসন। এজেন্সি বলেছে সে বেস্ট হবে কিন্তু
জাফর সিদ্দিকী নিজের পি.এস এর দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুঞ্চন করে বলে,
–বেস্ট হলে কিন্তুর কি আছে।

–তার স্যালারি ডিমান্ড হাই অন্যান্যদের তুলনায় চারগুণ তাছাড়া তার ছয়মাসের টাকা এডভান্স লাগবে।

–এত টাকা একটা সামান্য মিলিটারির জন্য?

–স্যার ছেলেটা মোটেও সামান্য না। সে তার ব্যাচের বেস্ট ক্যডেট, ট্রেনিংয়ে অলমোস্ট সব টাস্কে রেকর্ড ব্রেকার। ফরেন থেকে কয়েকটা স্পেশাল কমান্ডো ট্রেনিং নিয়েছে।
পারসনাল প্রবলেমেের কারণে ভলান্টিয়ারি রিটায়ার নিয়েছে।
এতদিন ছোট একটা ফাস্টফুডের দোকান চালাতো কিন্তু ছোট বোনের ক্যান্সার ধরা পরায় তার চিকিৎসার টাকার জন্য কাজ খুঁজছে।

–হুম, আজ থেকেই এপোয়েন্ট করে দাও।

–স্যার, আজ থেকে হবে না আমার কেন জানি মনে হয়েছিলো আপনি রাজি হবেন তাই আগেই কথা বলেছি কিন্তু সে বলেছে এডভান্স করার দু’দিন পর জয়েন হবে।

–নিজেকে কি জেমস বন্ড ভাবে এই ছেলে? আমি মিনিস্টার তার কথায় নাচবো? বাদ দিয়ে দাও।

–স্যার আমি তাকে এমন করে কিছু বলেছিলাম কিন্তু সে বললো চারগুণ বেশি স্যালারি কাজের না তার অনেস্টির।
ভেবে দেখুন সে কিন্তু বেস্ট আর অনেস্ট। এখনকার দিনে অনেস্ট মানুষ পাওয়াই যায় না। একটু ভেবে দেখুন অন্য কাউকে নিলেন আর সে বেশি টাকায় বিক্রি হয়ে গেলো। তখন?

জাফর সিদ্দিকী রেগে গিয়ে বলেন,
–আজকালের ছেলে-পেলে নিজেদের যে কি মনে করে । আর বেছে বেছে সব কয়টা ঘাড়ত্যাড়া আমার কপালের জুটে । ঠিক আছে মেনে নাও।


সকালে মায়ের সাথে কথা বলে নির্জনার মন খারাপ হয়ে গেছে কারণ তার চাচারা আবার জমি-জায়গা নিয়ে তার মাকে চাপ দিচ্ছে। কারণ না জানলেও নির্জনার মন খারাপ দেখে অর্ক বায়না ধরেছে ঘুরতে যাবে। কিন্তু আরশি আর প্রীতি বাইরে গেছে। জাফর সিদ্দিকী বা অর্ণব বাড়ি নেই। তাই রেহানা বাধ্য হয়ে নির্জনাকে বলে। নির্জনা প্রথমে রাজি না হলেও অর্কর নাছোড়বান্দা স্বভাবের জন্য রাজি হয়ে যায়।
পার্কে বেড়ানোর সময় একটা গাড়ি নির্জনা আর অর্ক সামনে থামে। তারা কিছু বোঝার আগেই একদল মুখোশধারী লোক দুজনকে গাড়িতে তুলে নেয়।


–সুইটহার্ট!
রুহান শব্দটা উচ্চারণের সাথে সাথে ঠাস করে তার গালে থাপ্পড় দেয় নির্জনা।তার শরীর রাগে অসম্ভব কাঁপছে। একটু দূরেই চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে অর্ক তার সম্পূর্ণ মুখে কালো কাপড় দিয়ে আবৃত। জ্ঞান আছে কি নেই বুঝা যাচ্ছে না।
–একটা মানুষ এতোটা অমানবিক কি করে হতে পারে?
আমার হাসবেন্ডের যদি কিছু হয় তোকে আমি নিজে হাতে খুন করবো।
রুহান বাঁকা হেসে বলে,
–বিয়ে করে সাহস বেড়ে তোমার সুইটহার্ট।
রুহানের যে গজদন্তের হাসিতে সবাই মুগ্ধ সেই হাসি নির্জনার কাছে এখন সবচেয়ে বেশি কুৎসিত মনে হচ্ছে।
–সাহসের কি দেখেছিস তুই আমার স্বামীর গায়ে একটা ফুলের টোকা দিয়ে দেখ আমি তোকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো।
–এতো ভালোবাসা তো তোমার এক্স বিহানের জন্যও ছিলো না।
–ছিলো এখনো আছে কিন্তু তখন আমার সাহস ছিলো না। এখন হয়েছে কারণ আমি জেনে গেছি তুই আমাকে কিছু করবি না।

নির্জনার দিকে তাকিয়ে চোখমুখ শক্ত করে রুহান বলে,
–তোমার ভুল ধারণা তুমি নিজেও জানো না তোমাকে পাওয়ার নেশা আমাকে কতটা ভয়ংকর করে তুলেছে। এখন (অর্কর দিকে ইশারা করে) একে মেরে তোমাকে আমার কাছে চিরদিনের মতো বন্দী করে ফেলবো।
বলেই সে অর্কর দিকে বন্দুক তাক করে। নির্জনার সামনে বিহানের মৃত্যুর দৃশ্য ভেসে উঠে হঠাৎ তার মনে হয় রুহান এক্ষুনি অর্ককে মেরে ফেলবে দুর্বলতা আর অতিরিক্ত মানসিক চাপে সে জ্ঞান হারায়।
–সুইটহার্ট বলে রুহান নির্জনাকে ধরে ফেলে। এবং তার লোকদের ইশারা করে অর্ককে তার কাছে নিয়ে আসতে।।
অর্কর মুখের উপর থেকে কালো কাপড়টা সরাতেই সে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে রুহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
–হাউ আর ইউ মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড?

–চলবে