প্রেমে পরা বারণ পর্ব-১৪+১৫

0
41

#প্রেমে_পরা_বারণ
#Nosrat_Monisha
পর্ব-১৪

–আমার বাপে আমার জীবনটা তামা তামা করে দিছে। বিয়ে করিয়ে এমন এক মেয়েকে আনছে যার জীবনে তার নিজের হাসবেন্ড মানে আমি ছাড়া সবাই হ্যান্ডসাম।
অর্কর এই কথা শুনে ডা.প্রীতির মুখটা বিরক্তিতে ভরে যায়। তবুও সে নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
–এমন কিছুই না তুমিও যথেষ্ট হ্যান্ডসাম।
–হ্যান্ডসাম না ছাই। আমি যদি হ্যান্ডসাম হতাম তবে কি আমার বউ আমাকে তার ছোট ভাইয়ের সাথে তুলনা করে? তার উপর মেন্টাল প্রবলেম আছে বলে আমার বাপ আমাকে দাঁড়িটাও রাখতে দেয় না। আমার চেহারায় ম্যানলি ভাব আসবে কি করে?

ডা.প্রীতি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে বলে,
–তুমি কিডন্যাপ হয়েছিলে, তোমাকে পিটিয়ে আধমরা করে দিয়েছিলো আই এ্যাম ড্যাম সিউর তোমার শরীরে এখনো প্রচুর ব্যাথা। তার মধ্যে তুমি এটা নিয়ে টেনশন করছো যে, তোমার বউয়ের জীবনে তুমি ছাড়া সবাই সুদর্শন? আর তোমার বাপ তোমাকে দাঁড়ি রাখতে দেয় না?

–তুমি আমার কষ্টটা বুঝবে না।

–আমার বোঝার দরকার নেই। এখন বলো তো ওরা কারা ছিলো? আঙ্কেল তো বললো, বিরোধী দলের লোক সত্যি কি তাই?

এ দফায় অর্ক চুপ থাকে কারণ রুহানের কথা প্রীতিকে বলে দিলে সে তার বাবাকে খারাপ ভাববে। তাই সে নিজের বাবার বলা কথায় নীরব সম্মতি জানায়।
–হ্যাঁ।
ডা.প্রীতি বুঝতে পারে অর্ক এবারও কিছু লুকাচ্ছে। তাই সে প্রসঙ্গ পাল্টে অর্ককে বলে,
– নিজের বউয়ের জীবনে সুদর্শন পুরুষের ভীড়ে হারিয়ে যেতে না চাইলে এবার এই পাগলের খোলশ ছেড়ে বের হয়ে এসো।

অর্ক সায় দিয়ে বলে,
–আমিও তাই ভাবছি এবার এ নাটকের শেষ করতে হবে। নাহলে আবার যদি কারও এন্ট্রি হয়?
অর্কর কথা শুনে ডা. প্রীতি উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলে,
–সত্যি তুমি সবাইকে জানাবে তুমি মেন্টালি সিক না।

অর্ক মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিয়ে জানায়
–হুম। কিন্তু তার আগে আমার নির্জনার মুখে হাসি ফুটাতে হবে। গতকাল একটা কথা স্পষ্ট আমি বুঝতে পেরেছি নির্জনা এখনও বিহানকে ভালোবাসে। এতে আমার সমস্যা নেই কিন্তু যে মানুষটা নেই তাকে ভালোবেসে জীবন নষ্ট করার কোন মানে হয় না। তাছাড়া..
–তাছাড়া কি?
–আমাকে নির্জনার যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। প্রীতি আমি স্টাডি কমপ্লিট করতে চাই যাতে আমার নামে যে বিজনেসটা আছে তার হাল ধরতে পারি। তুমি ব্যবস্থা করো।
–সবাইকে সত্যিটা জানিয়েওতো স্টাডি কমপ্লিট করতে পারো।
–তা তো যায়-ই কিন্তু এতে আমার ওয়াইফ সবার কাছে ততদিন ছোট হবে না? তাছাড়া আমার মাস্টার্স পাশ বউয়ের আমি মেট্রিক ফেল হাসবেন্ড। ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় না? এটলিস্ট গ্রেজুয়েশনে ভর্তি হয়ে তারপর সবাইকে বলি।

–মিনিমাম তিন বছর লাগবে

–না আমি অস্ট্রেলিয়াতে টুয়েলভথ ক্লাসের এক্সাম দিবো। আমার ওখানকার ফুল সিলেবাস কম্লিট আছে, মেন্টাল হসপিটালে আমি আর আমার এক ফ্রেন্ড(রুহান) মিলে করেছিলাম। তুমি বাবাকে কিছু একটা বলে ম্যানেজ করো। তাছাড়া বিয়ে হলো অনেকদিন হানিমুনেও তো যেতে হবে। বিয়ের পর পর হানিমুনে না গেলে বউ সারাজীবন খোঁটা দিবে।

এই প্রথম অর্কর কথায় ডা. প্রীতি কি প্রতিক্রিয়া জানাবে তা বুঝতে পারাছে না। তবে তার চিকিৎসাকালীন সময়ে এই প্রথম অর্ক সবার সামনে নিজের সত্যিটা প্রকাশ করতে রাজি হয়েছে এতেই সে অনেক খুশি। তাই সে অর্কর কথায় রাজি হয়ে বলে,
–আমি দেখছি কি করা যায়।

তমিজউদদীন খন্দকার আর রুহান মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। নিজের ছেলের চোখ-মুখ দেখে আজ কোন কিছুই বুঝতে পারছেন না তমিজউদদীন খন্দকার। তবে তিনি এটা বেশ বুঝতে পারছেন আবারও বড় কোন ঝড় তাদের জীবনে আসতে চলেছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন,
–তোমার কি সিদ্ধান্ত?
রুহান স্পষ্ট গলায় বলে,
–আমি ওয়াদা ভঙ্গ করি না।
–তারমানে তুমি..
–বাবা এনগেজমেন্টের ব্যবস্থা করো।
–মেয়েটাকে দেখবে না?
–প্রয়োজন নেই। তুমি আর মা দেখেছো এটাই যথেষ্ট।
খানিকটা দ্বিধা নিয়ে তমিজউদদীন খন্দকার বলে,
–পরে পিছু হটবে না তো?
ঠোঁটের কোণে এক চিলতে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে রুহান বলে,
–আগেই বলেছি চিন্তা করো না। আমি কথা দিচ্ছি তোমাদের পছন্দ করা মেয়ের সাথেই আমি আংটি বদল করবো।
–আমি জানি না তোমার মাথায় কি চলছে কিন্তু মেয়েটা মধ্যবিত্ত পরিবারের। তাই শেষ পর্যায়ে এসে যদি তুমি পিছু হটে যাও তবে আমার মানসম্মানের পাশাপাশি ঐ মেয়েটারও লাইফ নষ্ট হবে৷

সেই একই রহস্যময় হাসি দিয়ে রুহান বলে,
–ডোন্ট ওয়ারি এমন কিছুই হবে না।


অনেক দিন পর ডা. প্রীতি একটু শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছিলো কারণ অবশেষে তার পেশেন্ট সুস্থ হতে শুরু করেছে । কিন্তু তার সেই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটালো আরশি। তাকে ডেকে তুলে বলে,
–প্রীতি আই এম ইন লাভ। হি ইজ টল, ডার্ক, হ্যান্ডসাম। টোটালি মাই টাইপ।
আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে ডা. প্রীতি বলে,
–অভাগাটা কে?
লাজুক চেহারা করে আরশি বলে,
–মাহের হুদা।
সাথে সাথে ডা.প্রীতির ঘুম উবে যায়।
–নির্জনার বডিগার্ড?
খুশিতে গদগদ হয়ে আরশি বলে,
–হুম।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ডা. প্রীতি। কেননা সে জানে যদি কখনো এই সম্পর্কটা হয় তার কোন ভবিষ্যৎ নেই। কারণ একজন বডিগার্ডের সাথে অর্ণব সিদ্দিকী কিংবা জাফর সিদ্দিকী কিছুতেই আরশির বিয়ে মেনে নেবে না।
–আরশি ভেবে-চিন্তে ডিসিশন নাও। ছেলেটাকে দেখে মনে হলো মিডল ক্লাস। তার কিন্তু তোমাদের সাথে যায় না। তোমার বাবা আর ভাইয়া মেনে নেবে না
একরাশ হতাশা নিয়ে আরশি বলে,
–ডা.প্রীতি তুমি কোন যুগে পরে আছো? ক্লাস দেখে সম্পর্ক হয় না। রইলো বাাকি ভাইয়া আর বাবা সে তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও। একবার যদি মাহের রাজি হয়ে যায় তাহলে প্রয়োজনে পালিয়ে বিয়ে করবো।
ডাক্তার প্রীতি আর কথা বাড়ায় না কারণ সে জানে এরা ভাই-বোন এক একটা বদের হাড্ডি, যা বলে তাই করে। তার তো মায়া হচ্ছে মাহেরের উপর। বেচারা আরশির ভালবাসা আর পাগলামির খেসারত যে কতভাবে দিবে কে জানে?


নতুন ফুল ফুটলে যেমন তার আশপাশে যেমন মৌমাছি ঘুর ঘুর করে ঠিক তেমন আরশি মাহেরের আশপাশে আর অর্ক নির্জনার আশপাশে ঘুর ঘুর করছে।
দুই ভাই বোনের এই নব-প্রেমে সবচেয়ে বেশি জ্বালায় পড়েছে ডা. প্রীতি।
আজকাল তা নিজেকে মানসিক ডাক্তারের চেয়ে বেশি প্রেমরোগ বিশেষজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে আরশির দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না মাহের। নানা বাহানায় যখন তখন আর সে মাহেরের রুমে চলে যাচ্ছে, তার সামনে আসছে কিন্তু মাহের তার সামনে মাথার নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
অন্যদিকে অর্কর অবস্থা আরো শোচনীয়। রুহানের ঘটনার পর নির্জনা নিজেকে আরও গুটিয়ে নিয়েছে। সে প্রায় রুম থেকেই বের হয় না। আর যথাসম্ভব অর্ক থেকে নিজে দূরে রাখে কারণ তার মনে হচ্ছে সে কাছে গেলেই রুহান অর্ক ক্ষতি করে ফেলবে।


অর্ণব তার দলের কয়েকজন ছেলের সাথে নিজের ঘরে মিটিং করছিল তখনই ডা.প্রীতি দরজা ঠেলে ঝড়ের মতো ভেতরে এলে অর্ণব কিছুটা প্রস্তুত হয়ে বলে,
–একি কি আপনি এখানে? দরজা নক করার ম্যানার্স জানেন না?
ডা.প্রীতি চিৎকার করে বলে,
–হাউ ডেয়ার ইউ?আমার চিকিৎসায় ইন্টারফেয়ার করার সাহস আপনার কি করে হয়? আমাকে ম্যানার্স শেখাচ্ছেন? আপনার নিজেরইতো কোন ম্যানার্স নেই। আপনি আঙ্কেলকে বলেছেন অস্ট্রেলিয়া ট্রিপ ক্যানসেল করতে? আপনার কোন আইডিয়া আছে অর্কর মেন্টাল হেলথের জন্য এখন বাইরে ঘুরতে যাওয়াটা কতটা জরুরী?
অর্ণবের চেলা-পেলাদের মুখ হাঁ হয়ে গেছে। কোন মেয়ে যে বাংলার আদর্শ যুবনেতা ইফতেখার অর্ণব সিদ্দিকীর সাথে এভাবে কথা বলতে পারে তা তাদের ধারনার বাইরে।
অর্ণব নিজের মুখটা গম্ভীর করে বলে,
–ডা.প্রীতি বিহেভ। আমি যা করেছি ভেবে-চিন্তে করেছি। তাছাড়া সামনে ইলেকশন, অপজিশন যেকোন চাল চালতে পারে। আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না।
ডা. প্রীতি বুঝতে পারে এই গোঁয়ার-গোবিন্দ লোকের সাথে তর্ক করে লাভ নেই। কিন্তু এটাকে ছেড়ে দেয়া যায় না তাই সেন্টার টেবিলে রাখা পানি ভর্তি জগটা তুলে জগের ঢাকনা খুলে সম্পূর্ণ পানি অর্ণবের উপর ছুড়ে চিৎকার করে বলে,
–টু হেল উইথ ইউর ম্যানার্স, টু হেল উইথ ইউর ইলেকশন।
এরপর যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই ঝড়ের গতিতে বের হয়ে যায়।
অর্ণব এতোটা হতভম্ব হয় যে প্রতিক্রিয়া করতে ভুলে যায়।

–ভাই মেয়েটা মনে হয় আপনাকে ভালবাসে।
মিরাজ নামে দলের এক ছেলের কথায় হুঁশ ফেরে অর্ণবের। মুখ মুছে সাদা পাঞ্জাবি থেকে পানি ঝেড়ে মিরাজকে ধমকে উঠে সে,
–কি যা তা বলছিস?
কিন্তু মিরাজও দমে যাওয়ার পাত্র নয়। সে তার অকাট্য যুক্তি প্রদান করে,
–না ভাই আমি সত্যি বলছি। এখানে আপনার জন্য হাজার হাজার সুন্দরী মেয়ে পাগল সেখানে এই মেয়ে আপনার সাথে ঝগড়া করছে। আমি একশো ভাগ নিশ্চিত সে আপনার সাথে এসব করছে শুধুমাত্র আপনার এটেনশন পাওয়ার জন্য। তাইতো নানা বাহানায় কেমন বারবার আপনার সামনে চলে আসছে।
গলার স্বর জোরালো করে অর্ণব বলে,
–আরে না ডা. প্রীতি আমাকে পছন্দ করে না

মিরাজও তার স্বর পাল্টা জোরালো করে,
–ভাই মেয়েরা বাইরে এক ভিতরে আরেক। মুখে বলছে আপনাকে সহ্য হয় না বকা-ঝকা করছে। আসলে আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।

দলের আরেক ছেলেও মিরাজের কথায় তাল মিলায়।
–মিরাজের কথায় আমি সহমত ভাই। নাটক সিনেমায় দেখেন না নায়ক নায়িকা একজন আরেকজনকে দেখতে পারে না সারাদিন ঝগড়া করে। কিন্তু আসলে মনে মনে একজন আরেকজনকে ভালবাসে। আমার আম্মা-ও আমার আব্বারে সারাদিন বকে। কিন্তু আমার আম্মা আমার আব্বাকে হেব্বি ভালোবাসে। আমার মনে হয় এই ডাক্তার ম্যাডামও আপনারে ভালোবাসে। না হলে শুধু শুধু আপনারে বকাঝকা করবো কেন?

নিজের চ্যালার এই কথাটা ফেলে দিতে পারল না অর্ণব
কোথাও না কোথাও তারও কথাগুলো সত্যি মনে হলো।

এদিকে মিরাজ নিজের যুক্তি চালিয়ে যায়,
–তবে ভাই যাই বলেন এসব সব মেয়েরা খুব সংসারী হয় ফ্যামিলি জুড়ে রাখে। ইনি যদি আমাদের ভাবি হয় তবে কিন্তু ভালই হবে। তাছাড়া ভাই আপনার এখন বিয়ে করা নেওয়া উচিত তাহলে ঐসব ফালতু মেয়েরা আর আপনাকে এত জ্বালাবে না।
অর্ণব নিশ্চুপ হয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে।


গভীর রাতে অর্কর ঘুম ভেঙে যায় কান্নার শব্দে। ডিম লাইটের নীল আলোতে সে দেখতে পায় তার প্রেয়সীর বিমর্ষ বিধ্বস্ত রূপ।
নির্জনা রুমে রাখা ডিভাইনে বসে গলার লকেটটটা আঁকড়ে ধরে কাঁদছে। আর হিচকি তুলে বলছে,
–আমার জন্য সব হয়েছে। প্লিজ মাফ করে দাও।
অর্ক ধীর পায়ে নির্জনার পাশে গিয়ে বসে তার কাঁধে হাত রাখে।
অর্কর উপস্থিতি টের পেয়ে নির্জনা কান্না বন্ধ করে বলে,
–সরি। আমি তোমার ঘুম ভাঙাতে চাই নি। আসলে হঠাৎ বিহানের কথা মনে পরে গেছে তাই
অর্ক মুচকি হেসে বাচ্চাদের মতো করেই বলে,
–ইটস ওকে। সরি বলতে হবে না। তোমার তার জন্য খারাপ লেগেছে তাই তুমি কান্না করেছো। যেমন আমার মায়ের জন্য খারাপ লাগলে আমি কান্না করি ঠিক তেমনই । এখন আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তো।
বলে সে নির্জনার কোলে মাথা রাখে।

মৃদু হেসে নির্জনা অর্কর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
–কত কঠিন একটা জিনিস কতো সহজে তুমি বুঝে গেলে। মাঝেমধ্যে ভাবি আমি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করতাম তবে সে কি বিহানের ব্যাপারটা এতোটা নরমালি নিতো যতটা তুমি নিয়েছো। তোমার মেন্টাল এইজ এগারো হওয়াতে ভালই হয়েছে তুমি বিহানকে হিংসা করো না।

চোখ বন্ধ করে অর্ক মনে মনে বলে,
–তুমি যদি জানতে বউ, তোমার পুরানো প্রেমিকের জন্য হিংসায় আমার পেটটা ফেটে যাচ্ছে। তবে আজকেই শেষ কাল থেকে তুমি আমার এমন রূপ দেখবে যে কনফিউসড হয়ে যাবে আমি সুস্থ না অসুস্থ। তোমাকে এতো জ্বালাবো যে বিহানের কথা মনেই পরবে না। (ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে) সরি বিহান তুমি বেঁচে থাকলে আমি নির্জনা আর তোমার মিল করাতাম কিন্তু এখন তুমি নেই তাই আমাদের মাঝখান থেকে তোমাকে সরে যেতেই হবে। কেননা আমার বউয়ের অন্য পুরুষের প্রেমে পরা বারণ।


–আরশি আমি বলছি সহজ কিছু করো ভালো হবে। তোমার এইসব ইংরেজী রান্না আমি রান্না করতে পারবো না। কি যেন নাম লাফাঙ্গা না বেলাঙ্গা আমি তো উচ্চারণও করতে পারছি না আমার দাঁত ভেঙে যাচ্ছে।
ডা.প্রীতি আরশিকে রান্নায় সাহায্য করার সময় কথাগুলো বলছিলো।
কিন্তু আরশি পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে,
–আহা প্রীতি এতোটাও কঠিন না। ‘লাসাগনে আলা বোলোগনিজ’, এটা ইতালিয়ান রেসিপি কিন্তু আমি একটু ঝাল দিবো। মাহেরের মতো রাফ এন্ড টাফ ছেলেরা একটু ঝাল পছন্দ করে।

–তাহলে শুটকি ভর্তা করে দাও এসব লাফাঙ্গা বানানোর কি দরকার ?

মুখভার করে আরশি বলে,
–হবু হাসবেন্ডের জন্য প্রথম কিছু বানাবো একটু ইউনিক আর স্পেশাল না-হলে চলে?

অন্যদিকে ফিরে ডা.প্রীতি বিড়বিড় করে বলে,
–তোমার ইউনিকের চক্করে না বেচারা আবার অল্প বয়সে পটল তোলে।
তখনই একটা মেইড এসে বলে,
–ডা. ম্যাম আপনাকে অর্ণব স্যার ডাকছেন।
ডা.প্রীতি ভ্রু কুচকে মনে মনে বলে,
–ঐ বজ্জাতটা আবার আমায় কেন ডাকছে? মতলব কি? নিশ্চয়ই আবার কোন ম্যানার্স শিখাবে।

এরপর আরশিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–আমি সব কেটেকুটে রেডি করে দিয়েছি তুমি রান্নাটা করে ফেলো। কাপড়ে মরিচ আর তেল পরেছে এটা পাল্টে তোমার ভাইয়ের সাথে দেখা করেই আসছি। আর একটা কথা, ডোন্ট বার্ণ দ্যা কিচেন।
আরশি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।
ডা. প্রীতি বের হওয়ার সময় মাহেরকে দেখতে পায়।সে মাহেরকে উদ্দেশ্য করে বলে ,
–মিস্টার মাহের আপনার কি এখন কোন কাজ আছে?
মাহের মাথা নাড়িয়ে না করে তখন ডা.প্রীতি বলে,
–যাক বাঁচা গেলো। আপনার কাছে একটা অনুরোধ ছিল।
–বলুন।
–সিদ্দিক বাড়ির প্রিন্সেস রান্নাঘরে ঢুকেছে। রান্নাঘর জ্বলে যাক, ধ্বংস হয়ে যাক তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সে যাতে রান্না করতে গিয়ে নিজের কোন ক্ষতি না করে সেটা একটু দেখতে পারবেন। প্লিজ না করবেন না। কিছু সময়ের ব্যাপার আমি কাজটা শেষ করেই আবার চলে আসবো । প্লিজ।
মাহের সম্মতি দিয়ে বলে,
–আপনার এতবার প্লিজ বলতে হবে না। যেহেতু আমার হাতে আপাতত কোন কাজ নেই আমি সেখানে যাচ্ছি। আপনি নিশ্চিত হয়ে কাজ শেষ করুন।
ডাক্তার প্রীতি এবার নিশ্চিন্ত হয়ে নিজের ঘরে যায়।

অন্যদিকে মাহের কিচেনে প্রবেশ করে। মাহেরকে দেখে আরশি লাজুক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– আপনি এখানে আপনার কিছু লাগবে?
–না ম্যাম আমার কিছু লাগবে না। ডা.প্রীতি আমাকে এখানে থাকতে বললেন।
আর সে ভাবলো প্রীতি মাহেরের সাথে তাকে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে। তাই সে মনে মনে প্রীতিকে ধন্যবাদ দিল কিন্তু মাহির সামনে মুখ ভার করে বলল,
–আপনাকে আর কতবার বলবো, আমাকে ম্যাম বলে না ডেকে আমাকে নাম ধরে ডাকুন?
–আমিও তো আপনাকে বলেছি ম্যাম, আপনি আমার বসের মেয়ে আপনাকে নাম ধরে ডাকা আমার এখতিয়ারের বাইরে।
মাহেরের কথা শুনে আরশি মন খারাপ করে অন্যমনস্ক হয়ে যায়।
আরশি একটু মন খারাপ করে একটা উঁচু টুলের উপর দাঁড়িয়ে কেবিনেটে কোন একটা মসলা খুঁজতে থাকে।
মাহের সেটা দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
– ম্যাম, আপনি পরে যাবেন। নেমে আসুন। আপনি বলেন কি লাগবে, আমি নামিয়ে দিচ্ছি।
আরশি একই প্রকার মুখ ভার করে মাহেরের দিকে তাকিয়ে খানিকটা রেগে বলে,
–প্রয়োজন নেই, আমি আমার নিজের কাজ নিজে করতে পারি। (টুলটা কাঁপছে)তাছাড়া আপনি বডিগার্ড আমাকে হেল্প করা আপনার এখতিয়ারের বাইরে। হুহ
এরপর সে যেই নিজের মুখটা কেবিনেটের দিকে ঘুরিয়ে নিচে নামবে তখনই টুলটা নড়বড় আরও নড়বড়ে হয়ে যায়।
–আ..আআ..আ
করে চিৎকার করে আরশি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিচে পরে যাবে সেই ভয়ে সে চোখ জোড়া জোরে বন্ধ করে।
কিন্তু মেঝেতে পরে গিয়ে কোমড় ভেঙে ব্যাথা পাওয়ার বদলে আরশি শূন্যে ভাসতে থাকে। নিজের চোখ খুলে দেখে মাহের তাকে ধরে আছে । আরশি বেশ কয়েকবার চোখের পলক ফেলে এবং সে বুঝতে পারে তার মুখটা মাহেরের মুখের একদম কাছাকাছি। তার নিঃশ্বাস বন্ধের উপক্রম হয় যখন সে মাহেরের চোখর দিকে তাকায় যেগুলো তাকে এক নজরে বহু কথা বলছে।

মাহের ধীরে ধীরে আরশিকে দাঁড় করিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
–আজকে তো আমি আপনাকে ধরে ফেলেছি নেক্সট টাইম সাবধানে থাকবেন।
আরশি মনে করে সে মোটা বলে মাহের এভাবে বলছে। তাই তার মনটা খারাপ হয়ে যায়।


– আপনি আমাকে ডেকেছেন?
ডা.প্রীতির প্রশ্নে অর্ণব মুচকি হেসে সম্মতি দিয়ে বলে,
–হুম। আপনাকে একটা কথা বলার জন্য ডেকেছি।
–বলুন।
–আই এ্যম সরি আমার চোখ খুলে গেছে।

ডা.প্রীতি পানি ছুঁড়ার পর অর্ণবের মুখোমুখি হয় নি। সে ভেবেছিলো অর্ণব তাকে আবার কথা শুনানোর জন্য ডেকেছে তাই সে ঝগড়ার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলো। কিন্তু অর্ণবের মুখে সরি শুনে সে অবাক হয়ে বলে,
–জ্বি! কি বললেন আপনি?

অর্ণব মুচকি হেসে ডা.প্রীতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,
–আমি দু’দিন অনেক ভেবেছি। আজ বুঝতে পারছি আপনি কেন আমার সাথে এতো রিএক্ট করেন। তাই আজ আপনি রেগে গেলেও আমি আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না। এতে কিন্তু আমার কোন দোষ নেই। আপনি শুরু থেকে ক্লিয়ার করে দিলেই আমাদের মধ্যে কোন ভুলবোঝাবুঝি হতো না।

–মি. অর্ণব আপনার কথার মাথামুণ্ডু আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

অর্ণব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
–আমি জানি আপনি রেগে আছেন। কিন্তু কি করবো বলুন আমার পিছনে মেয়েরা এমনি পরে থাকে। প্লিজ এ নিয়ে আর রেগে থাকবেন না।

ভ্রু কুঁচকে ডা.প্রীতি বলে,
–আপনার পিছনে মেয়েরা পরে থাকুক চাই ছেলেরা পরে থাকুক তাতে আমার কি? আমি কেন রাগ করবো?

অর্ণব এখনো আগের মতো মুচকি হেসেই বলে,
–ঠিক আছে আমি হার স্বীকার করছি। আপনার মা-বাবাকে আমার বাবার সাথে কথা বলতে বলুন।

নাক-মুখ বিকৃত করে ডা.প্রীতি বলে,
–আমার মা-বাবা আপনার বাবার সাথে কেন কথা বলবে?

নিজের মুচকি হাসিটা প্রসারিত করে অর্ণব গর্বিত ভংগিমায় বলে,
–আর লুকিয়ে লাভ নেই আমি সব বুঝতে পেরেছি। আমি জানি, আপনি আমাকে ভালবাসেন, আমাকে বিয়ে করতে চান। আর আমি তাতে সম্মতি দিয়েছি। তাই আপনার মা-বাবাকে আসতে বলুন। আমাদের বাড়িতে প্রথম বিয়ের প্রস্তাব মেয়েদের বাড়ি থেকেই আসে। শুধু অর্করটা ডিফারেন্ট।

ডা.প্রীতির মনে হচ্ছে কেউ তাকে চারশো চল্লিশ ভোল্টের ইলেকট্রিক শক দিয়েছে। সে নিজেকে যথাসম্ভব স্বভাবিক রেখে বলে,
–আপনারা কেন মনে হলো, আপনার মতো সেফল অবসেসড, রুড,শর্ট টেম্পার্ড, ব্রয়লার মুরগিকে আমি ভালোবাসি আর বিয়ে করতে চাই ?


এদিকে রান্না ঘরে আরশির অবস্থা কাহিল। বহু কষ্টে নিজের স্পেশাল আর ইউনিক রেসিপি দিয়ে রান্না শেষ করে।

–আপনি কি একটু টেস্ট করে দেখবেন কেমন হয়েছে?
কথাটা বলে আরশি মাহেরের দিকে একটা পিরিচে সামান্য খাবার এগিয়ে দেয়।
–হুম।
বলে মাহের এক চামচ খায়।
–কেমন হয়েছে?
উৎসুক আরশির দিকে তাকিয়ে মাহের একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
–খুব টেস্টি হয়েছে ম্যাম। আপনি কিছু মনে না করলে পুরো খাবারটা আমি নিয়ে যাই?
আরশি মাহেরকে না করবে? হতেই পারে না। তাই নিজের রান্না করা খাবার বাড়ির অন্য কাউকে খাওয়াতে পারবে না আর নিজে খেতে পারবে না সেই দুঃখ বুকে চেপে রেখে বিনা বাক্যে খাবারগুলো মাহেরের হাতে দেয়।
ঘরে ফিরে মাহের খাবারগুলোকে গুনে গুনে পাঁচটা পলিথিনে বেঁধে ট্রেসবিনে ফেলে এক বোতল পানি খেয়ে বলে,
–আমি হানড্রেড পার্সেন্ট শিউর বিষ খেতেও এর চেয়ে ভালো হবে। এই পলিথিন ছিঁড়ে যদি বাই এনি চান্স কোন কুকুর বিড়াল এগুলো খায় তবে নির্ঘাত আমাকে অভিশাপ দিবে। এতো লবণ আর ঝাল রান্নায় কে দেয়? আর মাংস! একটুও সিদ্ধ হয় নি। এই টেস্ট যতদিন মনে থাকবে আমি আর মাংস খাবো না।

–চলবে?

#প্রেমে_পরা_বারণ
#Nosrat_Monisha
পর্ব-১৫

–তুমি তো আমার বউ আর বাড়ির বউরা কি সালোয়ার কামিজ পরে না-কি? তুমি আজ থেকে শুধু শাড়ি পরবে কেমন?
অর্ক এতটাই ভোলাভালা চেহারা নিয়ে আবদারটা করলো যে নির্জনার না-বলার কোন রাস্তা খোলা থাকলো না। তাছাড়া ডা.প্রীতি নির্জনাকে বলে দিয়েছে অর্ক কোন কিছু বললে নির্জনা যেন বারণ না করে এতে অর্কর মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। অর্কর হাতে মুখে থাকা ব্যান্ডেজগুলি নির্জনাকে বারবার মনে করিয়ে দেয় সে যদি অর্কর জীবনে না থাকতো তবে রুহান তার এই অবস্থা করতো না।
তাই অর্কর আবদারে নিরব সম্মতি দিয়ে কাভার্ড থেকে একটা সুতি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় নির্জনা।
এদিকে অর্কর অপেক্ষার পালা যেন শেষই হয় না। কিন্তু যখন নির্জনা ভেজা চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে বের হলো অর্কর মনে হলো তার এই জীবনে এর চেয়ে অপূর্ব দৃশ্য আর দেখতে পাবে না। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে সে বিড়বিড় করে বলে,
–বাংলা শব্দভান্ডার এতো সমৃদ্ধ তাও তোমার সৌন্দর্য আর স্নিগ্ধতা বর্ণনা করতে পারে এমন উপমা খুঁজে পাচ্ছি না।
নির্জনও বরাবরের মতোই ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে মাথা থেকে তো অনেক খুলে চুলগুলো ঝাড়তে থাকে। এদিক ওদিক করে চুলগুলো ঝারার মধ্য দিয়ে কোমড় থেকে শাড়ির কিছু অংশ সরে যায়।
অর্কর গলা শুকিয়ে আসে।
সে মনে মনে বলে,
–আমি মনে হয় মরে গেছি, কারণ এমন দৃশ্যতো দুনিয়ায় দেখা যায় না। এর জন্য বেহেশতে যেতে হয়।
এদিকে নির্জনার বার বার মনে হচ্ছে কেউ তাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু এই রুমে তো অর্ক ছাড়া আর কেউ নেই তাই সে এক পলক তাকিয়ে দেখে অর্ক নিজের মতো ভিডিও গেম খেলছে। যা দেখে সে একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। সে বের হয়ে যেতেই ট্যাবটা ছুঁড়ে ফেলে বুকে থুথু দিয়ে অর্ক বলে ওঠে,
–আরেকটু হলে ধরা পড়ে যেতাম। নাহ নিজের বউ এভাবে চোরের মতো লুকিয়ে দেখতে আর ভালো লাগছে না।
এরপর বিছানায় হেলান দিয়ে বাঁহাতের আঙুল দিয়ে কপালের উপরে পরে থাকা চুলগুলো পিছনে নিয়ে ঠোঁটের কোন একটা শয়তানি হাসি ফুটিয়ে বলে,
–কিন্তু যেটুকু দেখেছি সেটুকু তো একবার ছুঁয়ে অনুভব না করলে তো রাতে ঘুম হবে না।


–ভাই আমরা কি ব্রয়লার মুরগির মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে পরবর্তী আন্দোলন করবো না-কি ?
মিরাজের কথায় সায় দিয়ে আরেকটা ছেলে বলে,
–১৫০ টাকার মুরগি এখন ২৪০ টাকা ভাই। এটা কিন্তু ভালোই হবে। সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পাওয়া যাবে।
ডা.প্রীতির কাছ থেকে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজেভাবে প্রত্যাখ্যান পেয়েও অর্ণবের এতো মন- মেজাজ খারাপ হয় নি যতটা ডা.প্রীতি তাকে ব্রয়লার মুরগি উপাধি দেওয়াতে হয়েছে। সেই রাগ ঠান্ডা করতে সে পার্টি অফিসে এসেছিলো। কিন্তু এখানেও ছেলেগুলো বারংবার ব্রয়লার মুরগি শব্দটা উচ্চারণ করে তার মেজাজ আরও বিগড়ে দিচ্ছে।
তাই সে জোর ধমক দিয়ে উঠে,
–শাট আপ! কখন থেকে ব্রয়লার মুরগি, ব্রয়লার মুরগি করে মাথা খেয়ে যাচ্ছিস দুনিয়াতে আর কোন ইস্যু নেই?
অর্ণবকে কোন মেয়ে প্রত্যাখ্যান করবে সেটাইতো তার ধারণার বাইরে, তার উপর অপমান। এখন আবার নিজের দলের ছেলেগুলো। নাহ এর একটা বিহিত করতেই হবে। এই ভাবনা নিয়ে সে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়।


অন্তিম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে আরশির। আজকে সে মাহেরকে প্রপোজ করবেই। সে মেইডকে সেই মতোই নিদের্শনা দিচ্ছে ।
–আমার কথা ক্লিয়ারলি বুঝতে পেরেছো? আমি ফ্লাওয়ার বাজটা ক্রস করতেই তুমি এই সুইচটা অন করে দিবে। ওকে?
মেইডটা মাথা নাড়িয়ে বলে,
–ইয়েস ম্যাম আমি বুঝতে পেরেছি।
এদিকে ডাক্তার প্রীতি তিন ভাইবোন এর উপরে চরম বিরক্ত। এরা শুরুটা করেছে কি?
সে আরশিকে বুঝানোর চেষ্টা করছে,
–লিসেন আরশি এতোটা বাড়াবাড়ি না করে আগে মি.হুদাকে একবার জিজ্ঞেস করলে হতো না? তুমি বললে আমি কথা বলি?
ডা.প্রীতির কথা সম্পূর্ণ নাকচ করে আরশি বলে,
–তুমি কেন কথা বলবে? প্রেম করবো আমি, তাই প্রপোজও আমি করবো, তাও আবার ফিল্মি স্টাইলে।
–বেশ! যা খুশি করো।


অর্ক কয়েকটা মার্বেল কিচন থেকে একটু দূরে ঘরে আসার রাস্তায় ছড়িয়ে একটু দূরে এক কোণায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।
–আমার বউ এগুলোতে পা দেওয়া মাত্রই ডিরেক্ট আমার বুকে। জীবনে প্রথম বউকে আপন ভেবে জড়িয়ে ধরবো। আহা! ভাবতেই শরীরে-মনে কেমন কেমন জানি লাগছে।
অর্ক মনে মনে এই কথাগুলো ভাবছিলো তখনই নির্জনা কিচেন থেকে বের হয়।
এদিকে মাহেরও তখনই সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে।

মাহেরকে দেখে আনন্দিত হওয়ার পর মুহূর্তেই নির্জনাকে দেখে আরশির মুখটা অন্ধকার হয়ে যায়। সে ডা.প্রীতিকে অনুরোধ করে বলে,
– প্লিজ প্লিজ একটু যাও না। ভাবিকে আটকাও। এখন যাতে সে এদিকে না আসে।
–আমি পারবো না।
–প্লিজ যাও। আমার রেড লিপস্টিকের একটা শেড তোমার পছন্দ হয়েছিল না? ওটা তোমাকে দিয়ে দেবো তাও যাও না প্লিজ।
চুড়ি আর লিপিস্টিক দুটোই হলো প্রীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। আর সেখানেই আরশি আঘাত করেছে। সে আরশির দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলে,
– সত্যি দিবে?
–প্রমিস দিবো এখন যাও।
অগত্যা লিপস্টিকের লোভে ডা. প্রীতি নির্জনাকে আটকাতে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলো।

অর্ক এক প্রকার নিশ্চিত মনে নিজের প্রেয়সীকে বুকে টেনে নেওয়ার অপেক্ষা করছে আর আরশি মাহেরকে প্রপোজ করার জন্য ধীর পায়ে মাহেরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু কথায় আছে, পাগলের সুখ মনে মনে।

ডা. প্রীতি নির্জনার দিকে এগিয়ে যেতেই তার পদযুগল মার্বেলের উপর পরে সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে আর পদস্খলন হয়ে সরাসরি অর্ণবের বুকে আছড়ে পরে। ডা.প্রীতি হঠাৎ অর্ণবের উপর আছড়ে পরায় তাল সামলাতে অর্ণব তার কোমড় জড়িয়ে ধরে।
হ্যাঁ, অর্ণব মাহের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই তাকে পাশ কাটিয়ে অর্ণব তার আগে ভেতরে চলে আসে এবং ডা.প্রীতিকে দেখে তার দিকে এগিয়ে যেতেই এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি ঘটে যায়।

এদিকে ততক্ষণে আরশি ফুলদানিটি পেরিয়ে যাওয়ার ফলে সেই মেইডটা সুইচ চালু করে দেয়। তাতে একগাদা লাল গোলাপের পাঁপড়ি অর্ণব আর ডা.প্রীতির উপ বৃষ্টির মতো ঝররতে থাকে এবং স্পিকারে বাজতে শুরু করে,

নিশিদিন প্রতিদিন স্বপ্ন দেখি আমি,
নিশিদিন প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি,
চোখ মেলে যারে পেয়েছি তারে ভালোবেসেছি,
স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি,
আমি জানি শুধু জানি আমি
স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি,
স্বপ্নের নায়ক সেই তুমি।

দৃশ্যটা দেখে অর্ক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে,
–প্ল্যান করলো ছোট ভাই আর ফিল নিচ্ছে বড় ভাই।

আর আরশি মনে মনে বিরক্ত হয়ে বলে,
–কত কষ্ট করে ফুল আর মিউজিক সেট করেছিলাম সব নষ্ট। ভাইয়ারও এখনই কেন আসতে হলো? অন্যদিন তো মাঝরাতের আগে বাড়ি আসে না।

এদিকে অর্ণবের পৃথিবী যেন প্রীতির চশমা পরা গোল গোল দুটি চোখেই আটকে গেছে। অদৃশ্য এক আকর্ষণে সে এখনও ডা.প্রীতির কোমড় থেকে হাত সরাতে পারছে না। সে কি বলবে, কি করবে, কিছুই তার মাথায় আসছে না । কিন্তু স্পিকারে বাজা গানটা শুনেই তার মাথায় একটা প্রশ্ন এলো। তাই সে কোন ভাবনা চিন্তার না করে নির্দ্বিধায় ডা. প্রীতির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
–আমি যদি আপনার স্বপ্নের নায়কই হই তাহলে গতকাল কেনো আমাকে ব্রয়লার মুরগি বলেছিলেন ?

––চলবে?