প্রেমে পরা বারণ পর্ব-৩২

0
135

#প্রেমে_পরা_বারণ
#Nosrat_Monisha
পর্ব- ৩২

অতিরিক্ত রাগে নিজের চুল দু’হাতে টেনে ধরে রুহান। গতরাতে ক্লাবের এক ডান্সার তার ড্রিংকে ড্রাগস মিশিয়ে তার সাথে ইন্টিমেট হতে চেয়েছিলো। ঐ গ্লাসটা খালি করার পর ডান্সার মেয়েটার স্পর্শকাতর ছোঁয়া তার উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করে। মেয়েটাকে ছুঁড়ে ফেলে বাড়ি ফিরে ভেবেছিলো ঝামেলা শেষ কিন্তু সে বুঝতে পারে নি ড্রাগসের আসল প্রভাব বাড়ি আসার পর শুরু হয়েছে৷ সেজন্যই আরশির জায়গায় সে নির্জনাকে কল্পনা করে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সকালে আরশির বিধ্বস্ত চেহারা দেখে একটা অদ্ভুত অপরাধ বোধও কাজ করে তার মধ্যে কিন্তু পরক্ষণেই অর্ক কথা আর ডায়েরির লেখাগুলো মনে পরতেই সে আবার জ্বলে উঠে।

অপরদিকে বাথটবের ডুবে চোখ বন্ধ করতে মাহেরের চেহারা ভেসে উঠে। সাথে সাথে চোখ মেলে মুখাবয়ব শক্ত করে বলে,
–You are a married woman Arsi.. তোর জন্য অন্য পুরুষের প্রেমে পরা বারণ।
আরশি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই রুহান তাকে দেয়ালে চেপে ধরে বলে,
– What did you say?নেক্সট টাইম তোমার কাছাকাছি গেলে যেন তোমাকে তোমার নাম ধরে ডাকি। তাই তো? লিসেন, আজ থেকে তুমি নির্জনার সাবস্টিটিউট। তোমাকে যতবার টাচ করবো ততবার নির্জনা বলে ডাকবো। আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে তাই-না? বেশ তাহলে এখন থেকে প্রতিদিন সেই ইচ্ছের দাম দাও।
এরপর সে আরশিকে ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
–আজ থেকে প্রতিটারাত তোমাকে এতো যন্ত্রণা দেবো যে তুমি সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করবে যে তুমি কেন বেঁচে আছো।



–রুহান তোমার সব কথা কেন বিশ্বাস করলো?
নির্জনার প্রশ্নের উত্তর অর্ক মলিন হেসে বলে,
–রুহান সাইকোপ্যাথ। ওর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কোন কাজ হলে তার মস্তিষ্ক সেটা সত্য বলে মেনে নেয়।
–কি এর প্রভাব যদি আরশির উপর পরে?
–যদি পরে না পরবেই।আরশি বিয়েটা বাঁচাতে চাইছে, নিজের সম্পর্ককে একটা সুযোগ দিতে চাইছে কিন্তু রুহানের ক্যারেক্টরের কারণে সেটা কোনদিনই হবে না।
–কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে? রুহান যদি আপুকে মেনে নেয়, তবে তুমি কি করবে?
–নির্জনা আমি বোধহয় পৃথিবীর একমাত্র ভাই যে চায় না তার বোন নিজের স্বামীর সংসার করুক। কারণ রুহানকে আমি যতটা চিনেছি তাতে এটুকু বুঝতে পেরেছি সে কখনোই তোমাকে নিজের জীবন থেকে মুছে দিতে পারবে না। আমি চাই না আরশি সারাজীবন স্বামীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত থাকুক।


তমিজউদদীন খন্দকার আর অর্ক মুখোমুখি বসে আছে। তমিজউদদীন খন্দকার ভেবেছিলো অর্ক এসেছে নিজের বোনের ব্যাপারে কথা বলতে। কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে অর্ক নির্জনা সম্পর্কে বলে। সে সাফ জানায় রুহানে বিয়ে হয়ে গেছে তাই এখন থেকে সে যেন আর অন্য কারও বউয়ের পিছনে না পরে থেকে এখন থেকে নিজের বউকে নিয়ে ভাবে
–তোমার নিজের বোনের জন্য টেনশন হচ্ছে না?
ভ্রু কুঁচকে অর্ক বলে-
–কিসের টেনশন?
–এই যে সে সবার অমতে রুহানকে বিয়ে করলো।
–আঙ্কেল আরশি এডাল্ট। নিজের ভালোমন্দ বোঝার ক্ষমতা তার আছে। আমি আপাতত নিজের বউকে নিয়ে টেনশনে আছি। আপনার আধপাগল ছেলেকে বলবেন যাতে আমার বউকে আর বিরক্ত না করে। আর যদি বিরক্ত করে তবে আপনার কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫৫টাকা থেকে ৫টাকায় নামিয়ে দিতে আমার ৫মিনিট লাগবে না।
ব্যবসা নিয়ে কথা বলায় রেগে যায় তমিজউদদীন খন্দকার।
–আমাকে হুমকি দেওয়ার সাহস তোমার কি করে হয়?
কিছু কাগজ টেবিলে রেখে অর্ক তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
–আপনার কোম্পানির ১৩%শেয়ারের কাগজ যেগুলো আপনার ছেলেই আমাকে কিনতে সাহায্য করেছিলো অস্ট্রেলিয়ার মেন্টাল এসাইলামে বসে। আই মাস্ট সে হি ইজ এ্যা বিজনেস জিনিয়াস। আমি তার কাছ থেকেই শিখেছি, ইচ্ছে করলে কিভাবে এই ১৩%শেয়ার ব্যবহার করে পুরো কোম্পানি ধ্বংস করা যাবে।

অর্ক বেরিয়ে যেতেই কাগজগু বারবার পরীক্ষা করতে থাকে
তমিজউদদীন খন্দকার। হ্যাঁ কাগজগুলোতে কেন ফাঁক-ফোকর নেই, তাছাড়া সে ফোনেও বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে, সত্যি তার কোম্পানির ১৩% শেয়ারের মালিক অর্ক৷ এখন সে চাইলে কোম্পানির বারটা বাজিয়ে দিতে পারবে।
তমিজউদদীন খন্দকার এবার চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হলো রুহানের উপর।



আরশিকে নির্জনার পরিবর্তে ব্যবহার করবে বললেও সে রাতের পর রুহান কখনোই আরশিকে স্পর্শ করে নি। তবে তাকে জহুরা মঞ্জিলে ফিরে যেতেও বলে নি। আরশি যেন রুহানের আলিশান মহলের একটা জড়বস্তু যা থাকলো কি না-থাকলো তাতে রুহানের কিছুই যায় আসে না। অন্যদিকে দেয়ালে টানানো নির্জনার ছবিগুলো জড়বস্তু হয়েও জীবন্ত, যাদের সাথে প্রতিনিয়ত ঘন্টার পর পর কথা বলে রুহান। কারণ নির্জনার ছবির সাথে কথা বলা ছাড়া সে এখন কোন কিছুই করতে পারছে না অর্ক রীতিমতো তার হাত-পা বেঁধে দিয়েছে।
নিজের বাবার হুঁশিয়ারি বাণীতে বেশ গুটিয়ে গেছে রুহান। অতীতে করা একটা ভুলের কারণে আজ সে অর্ককে শায়েস্তা করতে পারছে না, উল্টো নিজে অর্কর চালে মাত খেয়ে যাচ্ছে। তবে আর বেশিদিন না এসব সমাধানের একটা উপায় রুহান ইতিমধ্যে পেয়ে গেছে।

–চলবে?