#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকা: সুলতানা জেবা
#পর্ব_____৪৫
নিশাত বসার ঘরে পায়চারি করছে ক্রমাগত। রোকেয়া বার বার করে কড়া সুরে বলছেন এক জায়গায় স্থির হতে। কিন্তু মেয়েটার তাতে হেলদোল নেই। তার মন যে আসন্ন বিপদের চিন্তায় ভীষণ বাজেভাবে উতলা হয়ে পড়েছে। কী দরকার ছিল প্রহরের গ্রামে সালিশ বসানোর! সে ভাবল পাগলপ্রায় হয়ে সব ছেড়েছুঁড়ে বুঝি তাকে দেখার জন্য মহানন্দ গ্রামে ছুটে এসেছে, কিন্তু কাহিনি ঘটল অন্য কিছু। সে এসেছে সালিশের জন্য। ওকে দেখার জন্য আসে নি। রাগে-অভিমানে, ক্ষোভে মনের আকাশে বিষন্নতার কৃষ্ণাভ মেঘ ছড়িয়ে গেল। টেনেহিঁচড়ে পুরোনো দগ্ধ তাজা করে কি লাভ? এতে আব্বার সাথে প্রহরের সম্পর্ক শিথিল হবার বদলে আরো কাঠিন্য হয়ে যাবে। কোনো কিছুই ঠিক হবে না।অমতে বিয়ের জন্য তার সাথে কথা বলে না রফিক আজম। নিশাতের কষ্ট হয়,ভারী যন্ত্রণা হয় বুকটায়। এই আব্বার রুক্ষ হাত ধরেই আদরের জোয়ারে ভাসতে ভাসতে এসেছে সতেরোর কোঠায়। তাঁর মনমর্জির বিরোধিতা করে ভালোবাসার মানুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে সে যে খুব সুখে আছে তেমনটা নয়। উল্টো সবই ফাঁকা ফাঁকা লাগে। প্রহর ভাইকে স্বামী রূপে পেয়েও আব্বার টেনে দেওয়া দেয়ালের জন্য সে চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে দেখতে পারে না শ্যাম বর্ণের সুদর্শন লোকটাকে,না পারে আলতো ছুঁয়ে দিয়ে লাজুকলতার ন্যায় নুইয়ে পড়তে। প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে বেতের মোড়ায় বসে পড়ল। না জানি এই পারিবারিক দ্ব-ন্দ্বের অবসান হবে কবে! মায়ের দিকে চেয়ে ভয়মিশ্রিত গলায় প্রশ্ন করল,” উনাকে তুমি কিছু বললে না কেন আম্মা? আব্বা বাধ্য হয়ে সালিশে গেলেন মুখে দেখেই বুঝা গেছে। কি জানি হয় ওইখানে! ভয় লাগতেছে। ”
” চিন্তা করিস না। প্রহর আর রবিন যা করতেছে খুব ভালা করতেছে। তোর আব্বা যা অন্যায় করছে,তা এখনই শোধরানোর সময়। নিরু নিষ্পাপ হয়েও আর কত দুশ্চ-রিত্রা হয়ে থাকবে মানুষের স্মরণে? রবিন আর ওর দুজনের দোষ থাকা সত্ত্বেও একা সব দোষ নিয়া বি-ষ খেয়ে আত্ম–হত্যা করল। মানুষজন জীবনভর জানল সে পাপিষ্ঠা। প্রহরের কেমন লাগে নিজের ফুফুর নামে এমন মিথ্যা অপবাদ শুনলে? আমি তো বলব সে ন্যায় কাজ করছে। তুই পরীক্ষার পড়া পড়। ”
ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি রয়ে গেছে নিশাতের। প্র্যাক্টিক্যাল খাতা রেডি করা আছে আগে থেকেই। গতকাল প্রহর ওদের বাড়িতে এসে খেয়েই বিকেলে বেরিয়ে যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে। ওর সাথে দেখা অব্ধি করে যায় নি। কেন যেন নিশাতের মনে হচ্ছে প্রহর ভাই ইচ্ছেকৃত দূরত্ব বজায় রাখছে ওর সাথে। এই দূরত্বের কারণ বুঝতে পারছে না সে। লোকটা কি উপলব্ধি করতে পারছে না তার সান্নিধ্য পাওয়ার কাতরতায় কতটা ব্যাকুল হয়ে পড়ছে তৃষ্ণার্ত হৃদয়? একবার ভেবেছে সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করবে, প্রহর ইচ্ছে করে দূরে দূরে কেন থাকছে,কী সমস্যা? আবার মন বলছে তার যা মুখ,তড়াক করে ওকে লজ্জার সমুদ্র ডুবিয়ে মা–রবে।
সৌরভ তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যাচ্ছিল সদর দরজা দিয়ে নিশাত তাকে পিছু ডেকে ওঠে,” ভাইয়া। ”
” বল। ” ব্যতিব্যস্ত গলায় বলল সৌরভ।
নিশাত মোড়া ছেড়ে ওঠে এসে বলল,” সালিশে যাচ্ছো?”
” হ্যাঁ, সেখানেই যাচ্ছি। তোর বর আস্ত ভেজাল পাকানো মানুষ রে। আব্বা আর ওকে দুই দেশের রাজা মনে হয় আমার। মনে হয় একে অন্যের দেশ ছিনিয়ে নিয়ে নিজের রাজত্ব ছড়ানোর চেষ্টায় মত্ত। তোর বিবাহ জীবন এই যুদ্ধ দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। আচ্ছা শোন,শিমুলের সাথে কথা হয়েছে তোর কাল থেকে? ”
সৌরভের মুখে শিমুলের নাম শুনে ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকালো নিশাত। ভাইয়ের মুখে শিমুলের নাম শুনতে পাওয়া আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো মনে হয় তার। ভাইয়া শিমুলকে দু চক্ষে দেখতে পারে না বলেই জানে সে। কিন্তু ইদানীং শিমুলের প্রতি ভাইয়ার ব্যবহার, চাহনি, কথা সবকিছু কেমন যেন শান্ত ও নরম। সন্দেহ লুকিয়ে মাথা নেড়ে বলল,” হয় নি। পরীক্ষার জন্য কথা হয় না তেমন। কেন বলো তো?”
সৌরভ নিজের বিচলিত কণ্ঠ দমিয়ে নিল। আপাতত বোনের সামনে মোটেও ধরা পড়া যাবে না। শব্দহীন সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস নাসারন্ধ্র পথে মুক্ত করে দিয়ে বলল, ” আমার কাছে ওর ফাইলটা রয়ে গেছে। বসার ঘরে পেয়েছিলাম কাল। কেমন মেয়ে ও পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, এডমিট এসব কাগজ ফেলে যায়,খবরও থাকে না। ”
” তুমি আমার কাছে দাও ভাইয়া। টনক নড়লে ঠিকি কল দিয়ে খুঁজবে। ”
” ঠিক আছে। আমার ঘরে ড্রয়ারে রাখা,নিয়ে নিস। ”
মনের কথা বাচ্চা মেয়েটাকে প্রকাশ করার পর একটুও শান্তি মিলছে না সৌরভের। মনটা আনচান করছে প্রতি মুহূর্তে মেয়েটাকে দেখার জন্য। অথচ মেয়েটা নির্বিকার। গতরাত থেকে মোবাইল বন্ধ, কোনো খোঁজখবর নেই। সে ভেবেছিল হাঁটুর বয়সী হলেও শিমুল বয়সের তুলনায় অত্যধিক বুঝদার কিন্তু এখন ভুল মনে হচ্ছে। বুঝদার মেয়েদের কাজকর্ম এমন অবহেলিত হবে কেন! মোবাইল বন্ধ করে বাড়িতে ঘাপটি মেরে আছে। রাগে মেজাজ তপ্ত হয়ে উঠছে তার। ভাবছে সন্ধ্যার পর স্মরণিকা নিবাসের সামনে যেয়ে একটু উঁকিঝুঁকি মেরে জেনে আসবে মেয়েটার অকস্মাৎ আবার কী হলো।
উজ্জ্বল সাহেব বহু বহু বছর পর রফিক আজমের মুখোমুখি বসলেন। গ্রামের চেয়ারম্যান হিসেবে সালিশের প্রধান বিচারক তিনি। বন্ধুর দিকে এক নজর চেয়ে মৃদু হাসলেন। রফিক আজমকে তিনি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতেন। কখনো ভাবেন নি এই মানুষটা মনে এত হিং–স্রতা পুষে রেখেছিলেন। যেই হিং–স্রতার কবলে ধ্বংস হয়ে গেল তিনটে জীবন,ছিন্ন হলো কতগুলো সম্পর্ক, নানার বাড়ির আদর থেকে বঞ্চিত হলো প্রহর,প্রত্যয়, শিমুল। কাবিননামার কাগজটা মাতব্বর সাহেব হাতে নিয়ে বলে উঠলেন,
” তো বিয়ে হইছিল নিরু আর রবিনের? মেয়েডা তইলে নির্দোষ আছিল? তা সেদিন কইল না ক্যান? আর রবিন চুপ আছিল কী রে? লুকাইয়া বিয়ে কইরাও পা**প করছে দুইজনে। তবে সত্যডা ওইদিন কইলে মাইয়াডা হয়ত আত্মহ–ত্যা করত না শরমে। ”
প্রহর পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে জ্বলন্ত চোখে তাকাল মাতব্বর সাহেবের দিকে। চোয়াল শক্ত করে বলল,” আপনাকে এত ইতিহাস বলতে বলা হয় নি। যা হয়েছে তা বাদ,সত্য খোলাসা করুন কেবল। ”
মাতব্বর সাহেব চুপসে গেলেন। মনে মনে আওড়ালেন ‘ বেয়াদব।’ ছোট থেকেই ঘাড়ত্যাড়া, এমপি হবার পর তো বেয়াদবের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে মনে হয়। উনার মুখে কালো ছায়া নেমে আসতে দেখে প্রহর ঠোঁট বাকিয়ে হাসল। এ গ্রামের মানুষগুলো কথা বানাতে পটু। যে কথা দুই কথায় সাড়া যাবে,সেটাকে তিন চার লাইন বাড়িয়ে চড়িয়ে ইতিহাস রচনা করে ফেলে। উজ্জ্বল সাহেব উঁচু স্বরে রবিনের উদ্দেশ্যে বলল, ” তোমরা বিবাহিত সেটা নিরু মারা যাওয়ার আগে বলো নি কেন?”
রবিন নিশ্চুপ। বড়ো ভাইয়ের দিকে একবার তাকাল,সালিশে উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে মাথা সোজা করে নির্ভয় কণ্ঠে বলল,” আমি আমার পরিবারের সম্মানের ভয়ে বলতে পারি নি। ভয় হচ্ছিল। নিরু ও তার পেটে থাকা সন্তানের মৃ**ত্যুর জন্য আমি দায়ী। কিন্তু সত্য এটাই নিরু ও আমার বিয়ে হয়েছিল। সে একা কোনো দোষ করে নি। ”
রফিক আজম মাথা ঘুরিয়ে ভাইয়ের দিকে চাইলেন। অবাক হলেন। ভেবেছিলেন কয়েক বছর আগে তাকে বলতে নিষিদ্ধ করেছিলেন তিনি, সেটা ভরা সালিশে বলে দেবে রবিন। উজ্জ্বল সাহেবের শরীর রাগে কেঁপে উঠল। রবিন এখনও নিজের ভাইয়ের কুকর্মটা বলল না প্রকাশ্যে। প্রহরের কাছ থেকে রফিক আজমের করা প্রতিটা অন্যায় কর্মকাণ্ডের কথা জেনেছেন সে। রাগান্বিত সুরে বললেন,” এখন আর এসব বলে কী লাভ হবে? চলে যাওয়া মানুষ আর ফিরে আসবে না। আমার বোনকে তুমি নিরপরাধ প্রমাণ না করলেও চলত। সে তো চলেই গেছে, এখন আর এসব সালিশ,বিচার দিয়ে তার কিছু হবে না। ”
রবিন জানে রফিক আজম কখনোই স্বীকারোক্তি দেবে না নিজের অহংকার ভেঙে। মুখোশের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসবে না কভু। অশান্তি আর চায় না সে। পুরোপুরি না হোক অনেকাংশে সে নিজেও দায়ী নিরুর মৃ**ত্যুর পেছনে। গোপনে ভালোবেসে লোকসমাজে ভালোবাসা স্বীকৃতি না দেওয়া পুরুষ হলো কাপুরুষ। নিঃসন্দেহে সে একজন কাপুরুষ ও হ***ত্যাকারী। সকল শাস্তি তার নামেই লেখা হোক। পৃথিবী তাকে ঘৃণায় জর্জরিত করে বাধ্য করুক সকল মায়া ছেড়ে চিরতরে চলে যেতে। প্রহর এতটা সময় চুপ থাকলেও গাঢ় চোখে চেয়ে রফিক আজমকে জিজ্ঞেস করে,” আপনি কিছু বলবেন না মামুজান?”
থতমত খেয়ে গেলেন রফিক আজম। গতকালের হুম-কিটা মনে পড়ে গেল তাঁর। চেয়ারম্যান ইলেকশনের সময় বেআইনিভাবে জিততে চেয়েছিলেন উনি। কিছু লোককে টাকা দিয়েছেন ভোট কেনার জন্য। সবকিছুর প্রমাণ আছে প্রহরের কাছে। এসব অনৈতিক কাজের প্রমাণ পেলে উনার জেল পর্যন্ত হতে পারে। প্রহর সেটারই সুযোগ লুফে নিচ্ছে। উনি শুধু ক্ষমতা,প্রতিপত্তি চেয়েছিলেন স্মরণিকা নিবাসের প্রতিটি মানুষকে নিচু করে রাখার জন্য। হিতে বিপরীত হলো এখন। প্রহর ও সবার দৃষ্টি উনার দিকেই তাক করা। মাতব্বর সাহেব কাচুমাচু কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন,” রফিক কী কইব?”
প্রহর পুনরায় ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলল,” হাতে সময় কম। সময় খুবই মূল্যবান, নষ্ট না করে বলে ফেলুন প্রাণপ্রিয় মামুজান। রবিন মামা একা দোষ নিজের ঘাড়ে নিচ্ছে,এটা একেবারে অনুচিত। আপনার দোষগুলো গ্রামের মানুষের জানা প্রয়োজন। ”
রফিক আজম দাঁত কিড়মিড় করে রক্তাভ চোখে প্রহরের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করলেন,” কীসের দোষ? সম্মান বাঁচানো দোষ? সম্মান বাঁচাতে রবিনকে আমি সেদিন সত্য বলতে দেই নাই,এটা দোষের হইব কেন? আমার কাছে আমার বাড়ির সম্মান আগে। তোমার ফুফু আর রবিন দুইজনে অন্যায় করছে। ”
সালিশে উপস্থিত সবাই হতবাক। বিস্ময়ের স্বরে একেকজন ধিক্কার জানাতে লাগল রফিক আজমকে। ভর্ৎসনা করতে লাগল এই বলে, কমবয়সী পোলাডারে ডর দেখাইয়া সত্য কইতে আঁটকায় রাইখা সম্মান বাঁচায়! নিজের ঘরের কলঙ্ক লুকাইয়া মাইডারে নষ্টা কইয়া মাইরা ফেলল,আবার গলা বড়ো। নানান রকম কথায় ছেয়ে গেল চারপাশ, মুহূর্তে ঝড়ো হাওয়ার মতো ছড়িয়ে গেল সমস্ত আলাপন,দোষ, গুণ সমগ্র গ্রামে,হাট বাজারে। একেকজনের ধিক্কারে নুইয়ে গেল রফিক আজমের মাথা। সৌরভের ঈষৎ রাগ হলো প্রহরের ওপর আব্বার নত মাথা দেখে। কিন্তু আব্বা যে দোষী তা একেবারেই ফালানোর মতো কথা নয়। প্রহরও কেবল প্রতি**শোধ নিয়েছে নিজের ফুপুর মিথ্যা অপবাদ নিয়ে ম**রে যাওয়ার। চোখে-মুখে হাসি নিয়ে সালিশ থেকে বেরিয়ে গেল প্রহর, ভীষণ শান্তি পাচ্ছে সে। এই দিনটার,এই সময়টার অপেক্ষা করেছে সে কতকাল। মামার বাড়িকে,মামাকে ভালোবাসে সে, কিন্তু দম্ভে জিতে যাওয়ার জন্য নিজের ফুপিকে বলিদান দেওয়া সে কোনোকালেই মেনে নিতে পারে নি। ক্ষণে ক্ষণে সময় গুণেছে সত্য উন্মোচন হবার সকলের সম্মুখে।
সবেই তো প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের আগমন, কিন্তু কালবৈশাখীর যেন তর সইছে না। ঝুপ করে নেমে এসে কখন শুষ্ক ধরাধামকে ভিজিয়ে শীতল করতে পারবে সেই অপেক্ষায় বিচলিত হয়ে আছে বোধহয়। ঊষা কয়েকজনকে ফ্রেন্ডকে সাথে নিয়ে নিউমার্কেটে এসেছিল কেনাকাটা করতে। অজস্র টাকা থাকলেও নামি-দামি মার্কেটে শপিং করতে হবে এরকম চিন্তাভাবনা নেই তার। সাদামাটা জীবনকেই ভারি ভালোবাসে সে। মধ্যবিত্ত পরিবারের বান্ধবীরা যখন এখান থেকেই কেনাকাটা করে, তাই সবার সাথে তাল মিলিয়ে সে এখানেই এলো। বাবা ও প্রত্যয়ের প্রতি অভিমান কমলেও বাড়িতে ফিরে যায় নি এখনো। হলে থেকেই পড়ালেখা বেশ ভালো হচ্ছে। তবুও বাবার জোরাজুরিতে এ মাস শেষে হল ছেড়ে দেবে বলে কথা দিয়েছে। সবার থেকে আলাদা হয়ে সে একটা কুর্তি দেখার সময় ঘাড়ের পেছনের দিকে গরম নিঃশ্বাস টের পেল। চেনা পারফিউমের ঘ্রাণ এসে ঠেকল নাকে। ঘুরে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা স্বরে সমুখের ব্যক্তিকে প্রশ্ন করল,” প্রত্যয় এহসান এখানে কী করছে? ওহ মাই গড, উনার পায়ের ধুলো কি-না নিউ মার্কেটে পড়েছে! এত নামি-দামি, নাক ছিটকানো মানুষের এখানে আসাটা স্বাভাবিক লাগছে না। ”
প্রত্যয় ওর বাম হাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে একটুখানি কাছে নিয়ে বলল,” কী করব আর? বউ যেখানে আমিও সেখানে। ”
ঊষা সন্দিগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলল,” বউ পাগল হয়ে যাচ্ছো?”
পূর্বের হাসি ওষ্ঠে রেখেই প্রত্যয় জবাব দিল,” অলমোস্ট হয়ে গেছি। যেদিন সঠিক ভালোবাসা বুঝেছি, সেদিন থেকেই সর্বদা স্পন্দিত হৃদয় তোর নামে লিখে দিয়েছি। ”
ঊষা অধোবদনে ফিসফিস করে বলল,” এটা মার্কেট। মানুষ শুনবে। ”
” এটা মার্কেট আমি দেখতে পাচ্ছি। চল অন্য কোথাও গিয়ে প্রেমের কথা বলি। ”
তার মতোই ফিসফিস করে হাসিমুখে বলল প্রত্যয়। ঊষা চমকিত বদনে শুধায়,” প্রেম?”
প্রত্যয় নির্বিকার স্বভাবে বলে ওঠে,” প্রেম করব না? আমার কাছে লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কিন্তু আমি ভালো ছেলে সেজে আছি। তোর বর কতটা অনেস্ট ছেলে বুঝতে পারছিস? এমন বরকে তোর আদরে মাথায় তুলে রাখার কথা। প্রেমিক যুগলের মতো সামান্য প্রেম করার আবদার করছে তাতেও তোর বিস্ময়। ”
ঊষা দোকানদারের শোনে ফেলার ভয়ে লজ্জায় প্রত্যয়ের হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে এলো। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বলল,” তুমি কীভাবে জানলে আমি এখানে?”
” তোর এক বান্ধবীর কাছ থেকে। ”
” তুমি ওদেরকে লাগিয়ে রেখেছ আমার পেছনে? তাই তো বলি আমার সকল খবরাখবর তুমি পাও কেমনে। বাসায় যাও,আমি ওদের সাথে শপিংয়ে এসেছি। এখন প্রেম করতে পারব না। ”
বলে ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল ঊষা। প্রত্যয় পেছন থেকে ওর হাত টেনে ধরল,” প্রেম না করলে আজ এক চুলও নড়ব না,তোর হাতও ছাড়ব না। তোকে আজ চাই আমার ভোরের পাখি। ”
শেষের কথায় গলা শুকিয়ে খরখরে মরুভূমি হয়ে গেল ঊষার। আকস্মিক বুকে মাতাল বাতাস বইতে আরম্ভ করল জোরালোভাবে। ভয়ার্ত ও লজ্জামিশ্রিত চোখজোড়া প্রত্যয়ের চেহারায় মেলে ধীর স্বরে প্রশ্ন করল,” আমাকে চাও মানে?”
ঊষার সন্দিহান, ফ্যাকাসে মুখশ্রী দেখে বেশ মজা পেল প্রত্যয়। হাতটা ধীরে ধীরে কাছে টেনে তার সমস্ত শরীর বুকের কাছাকাছি নিয়ে এলো সে। মাদক চাউনিতে তাকে বন্দি করে গাঢ় ও নেশাতুর গলায় বলল,” কীভাবে চাই জানিস না? একজন বর তার বউকে যেভাবে চায় সেভাবেই।”
লাল রঙে রাঙা হয়ে উঠে ঊষার ফুলো ফুলো গাল দুইখানা। কপট তেজ দেখিয়ে সরে যাওয়ার ব্যর্থ প্রয়াস করতে করতে বলল,” অসভ্য তুমি। ”
প্রত্যয় স্মিত হেসে বলে,” বউয়ের কাছে অসভ্য হবো না তো কার কাছে হবো? পৃথিবীর সকল পুরুষই তার বউয়ের কাছে অসভ্য। ”
এ কথা কর্ণপাত হওয়া মাত্র ঊষার তেষ্টা পেয়ে গেল ভীষণ। লজ্জায় মাখোমাখো হয়ে তাড়া দিয়ে বলল,” পানি আনো জলদি।”
___________________
সৌরভের মনে হচ্ছে সে ছ্যাঁকাখোর প্রেমিক। বিষাদ তার ভেতরে হইহই করে বেড়ে চলেছে। এককালে তার প্রেমে বিষাদিনী হয়ে ওঠা শিমুল আজ তাকে বিষাদের নৌকায় তুলে দিয়ে নিঃশব্দে যেন বলছে,ভাসতে থাকো অনন্তকাল, আমাকে এতকাল বিরহে ডুবিয়ে রাখার জন্য শাস্তি। যেই বাড়ির আশেপাশেও সে আসত না,আজ শিমুলকে এক নজর দেখার জন্য তার খোঁজ পাওয়ার জন্য পাগলের মতো ছুটে এসেছে। চো**রের মতো উঁকিঝুকি মারছে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে।
প্রহর কফির মগ নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। গেটের সামনে বাতির হলদেটে আলোয় সৌরভের ছটফটানি দেখে মুচকি হেসে নেমে এলো সে। গেট খুলে প্রহরকে বেরোতে
দেখে থমকে গেল সৌরভ। সচকিত হলো নিজের করা বোকামির ওপর। এখন সামনে থেকে চলে যাওয়া আরো বোকামি হবে বিধায় দাঁড়িয়ে প্রহরের কথা বলার অপেক্ষাতে রইল।
” তোর বোনের সাথে প্রেম করে বিয়ে করেছি বলে তুই আমার পিচ্চি বোনের সাথে প্রেম শুরু করলি?”
তিলার্ধ পরিমাণ ভড়কাল না সৌরভ। বলল,” পরের বোনকে বউ বউ লাগে,আর নিজের বোনের বেলায় সবারই পিচ্চি মনে হয়। অস্বাভাবিক কোনো কথা না। ”
প্রহর সহাস্যে বলল,” মন্দ বলিস নি। লুকিয়ে আমার বোনের সাথে প্রেম করছিস ভালো কথা,বিয়ে কি লুকিয়ে করবি? সেটা তো হবে না। মা মোবাইল নিয়ে গেছে ওর। তোর সাথে প্রেম নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। চল আমার শ্বশুর বাড়ি যাই। তোর বোনকে মানে আমার বউকে মনে পড়ছে খুব। ”
আলতা ফুপু শিমুলের মোবাইল নিয়ে গেছে! তার মানে সদ্য তৈরি হওয়া সম্পর্কের কথাও জেনে গেল। প্রহরের দিকে চেয়ে সোজাসাপ্টা গলায় বলল,” তোর বোনকে বিয়ে করব। ”
” এক শর্তে দেব। ”
” কী শর্ত?”
” মামুজান নিজে আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলে। ”
সৌরভ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে,” জটিল শর্ত। শালা, বিয়ে না দেওয়ার ধান্ধা। তোর শিরা উপশিরায় কুবুদ্ধি। ”
# চলবে~
#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকা: আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব_____৪৬
আলতা তৈরি হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার জন্য। ইমারজেন্সিতে রোগী আছে আজ। শিমুল মায়ের রুমের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে অবলোকন করছে মাকে। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ নিঃসৃত হচ্ছে না। আলতা মেয়ের দিকে এক নজর চেয়ে কিছুটা ভারী গলায় বলল,” ডায়েরিটা নিয়ে যাও। ”
দ্রুত হেঁটে বিছানার ওপর থেকে ডায়েরিটা হাতে তুলে নেয় শিমুল। লজ্জা-শরমে আড়ষ্ট হয়ে আছে সে। মা কতটুকু পড়েছে ডায়েরিটা! পুরোটা কি পড়ে ফেলেছে! মায়ের মনে কী চলছে! পুরোটা পড়ে থাকলে আর মুখ দেখানো যাবে না মাকে। কত-শত নিষিদ্ধ, আবেগ, অনুভূতি যে এই মধ্য আকৃতির ডায়েরিটার ফকফকা সাদা পাতায় কালো কালির মাধ্যমে লেখনীতে প্রকাশ করেছে সৌরভ ভাইয়ের জন্য তার ইয়ত্তা নেই। মা এসব পড়লে থাকলে কত নির্লজ্জ আর বেশরমই না ভাববে তাকে! একে তো সৌরভ ভাইয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক জেনে খেপে আছে কিঞ্চিৎ। শিমুল কস্মিনকালেও ভাবে নি,মা এই সম্পর্কের কথা জানলে রেগে যাবে। বরঞ্চ ভেবেছিল খুশি হবে, অনায়াসে মেনে নেবে। গতকাল রাতে বসে বসে ডায়েরিতে কিছু অনুভূতি লিখছিল সে,তখুনি নৈঃশব্দে তার ঘরে প্রবেশ করে মা। পেছন হতে হাত বাড়িয়ে ডায়েরিটা নিয়ে কয়েক পাতা পড়ে যা বুঝার বুঝে যায় সে। প্রশ্ন করে, সৌরভও তাকে ভালোবাসে কি-না। উত্তরে ” হ্যাঁ ” জানায় শিমুল। আলতা সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছেড়ে মোবাইল ও ডায়েরিটা নিয়ে চলে যায় এবং আদেশ করে,” আমি না বলা পর্যন্ত যোগাযোগ করবি না সৌরভের সাথে। ” ব্যস এটুকুই। তখন থেকেই ভয়াতুর মন নিয়ে বাড়িতে সৌরভের সাথে সাক্ষাতের জন্য ব্যাকুল হয়ে ঘুরঘুর করছে। ডায়েরিটা হাতে নিয়ে আমতাআমতা করে প্রশ্ন করে,
” পুরোটা পড়েছ আম্মু?”
” পুরোটা পড়লে খুশি হতি? মেয়ের আবেগ পড়ে এ বয়সে এসে আবেগি হতে চাই না। ”
লজ্জারুণ বদন নত হয়ে গেল তার৷ টের পেল ভীষণ ভয়ানক ও লজ্জামিশ্রিত একটা প্রশ্ন করে ফেলেছে মাকে। ডায়েরিটা নিয়ে চলে যাওয়ার সময় বেহায়া হয়ে থেমে গিয়ে বলল,” সৌরভ ভাই ভালো ছেলে আম্মু। ”
” সৌরভ ভালো ছেলে সেটা জানি। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তোর মামা এখনো প্রহর ও নিশুর সম্পর্কটা মেনে নেয় নি,সেখানে তোদেরটা মেনে নিবে? নেবে না। তাই এসব ছেড়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দে। ”
শিমুল কখনোই মায়ের মুখের ওপর কথা বলে না। কিন্তু আজ কী মনে করে বলে ফেলল,” ভাইয়াকে তো বাধা দাও নি আম্মু। ”
কথাটা শুনে হতাশা ঘিরে ধরল আলতাকে। মেয়েকে তিনি কীভাবে বুঝাবে বর্তমান পরিস্থিতি? কোনো কিছুই স্বাভাবিক নেই। অস্বাভাবিক জীবনে ছেলেটা দিন-রাত ভুগছে, এখন মেয়েকে কীভাবে ঠেলে দেবে? গত রাত্রিরে অর্ধ সময় টুকু মেয়ের জন্য ভাবনায় ব্যয় করেছে। প্রথমে বুঝার চেষ্টায় নিমগ্ন ছিল যে ডায়েরিতে উল্লেখিত কথাগুলো সৌরভের প্রতি শিমুলের আবেগ নয় তো? কিন্তু ডায়েরিটায় লিখিত শব্দগুলো জানান দিল মোটেও আবেগ নয়,বরং ভালোবাসা। অতটুকু বয়সে মেয়ের এমন ভালোবাসায় অবাক হলো সে। সবথেকে বেশি অবাক হয়েছে এটা জেনে তার ভালোবাসা শুরু থেকে একপাক্ষিক ছিল। কিন্তু ভয় কেবল রফিক আজমকে নিয়ে। নিশাত বাবার বিপক্ষে এ বাড়িতে আসলে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য কেউ নেই। কিন্তু রফিক আজমের অসম্মতিতে শিমুল কখনোই ওই বাড়িতে বউ হয়ে পা রাখতে পারবে না। তাই তিনি মেয়ের ভালোর জন্য অল্প কঠোর হয়েছে। তাতেও যেন শান্তি নেই। সৌরভ ও শিমুলের যোগাযোগ বন্ধ রেখেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না। বার বার মনে হচ্ছে এতে দুজনে কষ্ট পাচ্ছে, আবার প্রেমের সম্পর্কে থেকেও ওরা কখনোই রফিক আজমের জন্য এক হতে পারবে না এটা ভেবে বুকে চিড় ধরছে। মূলত কী করা উচিত ওদের সম্পর্ক নিয়ে তা নিয়ে বেশ দ্বিধান্বিত আলতা। প্রহরের সাথে কথা হয়েছিল। সে বলল সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে। ছেলের এসব রহস্যময়, উল্টাপাল্টা কথা বুঝেন না তিনি। শিমুলের মাথায় হাত রেখে বলল,
” তোকে বাধা দিচ্ছি না। তোর বড়ো মামা সবসময় আমাদের থেকে দূরেই থাকতে চান। তোদের একটাবার ভাগ্নি বলে আদর করে সেই বাড়িতে ঢুকতে দেয় নি,ছেলের বউ হিসেবে নেবেন এটা ভাবা বোকামি। তবে উনি রাজি হলে আমার আপত্তি নেই। সৌরভের সাথে কথা বলব আমি,মনে হয় না সে বলতে পারবে তার আব্বাকে তোর কথা। ”
” বলতে পারবেন উনি৷ তুমি সৌরভ ভাইয়ের ওপর বিশ্বাস রাখো আম্মু। আমি উনাকে খুব ভালোবাসি। আমি বয়সে ছোটো কিন্তু অতটা ছোটো নই। তুমি যদি ভাবো মামা রাজি না হলে,সৌরভ ভাইয়ার সাথে বিয়ে না হলে আমি ভেঙে পড়ব মোটেও এমন না। আমি সবসময় এমনই থাকব, আর সৌরভ ভাইও আমাদের নিরাশ করবে না দেখিও। মামা এখন না হোক একদিন তো হবে? আমি বড়ো হব আর অপেক্ষা করব ততদিন পর্যন্ত। ”
পিংকির সাথে সৌরভের প্রেম ছিল ব্যাপারটা আলতা জানে। নিশাত র**ক্ত দেখে যেদিন জ্ঞান হারাল সেদিন পিংকিকে অজানা ব্যক্তির চিঠি দেওয়ার ব্যাপারটা ধরা পড়ে যাওয়ায় সৌরভকে বেশ বিচলিত দেখা গিয়েছিল,যেটা তার চোখ, চেহারা দেখে ধরে ফেলে আলতা। সেই ক্ষণেই বুঝার বাকি থাকে না যে পিংকির চিঠিগুলোর মালিক এবং প্রেমিক সৌরভ ছিল। সৌরভ তো ভালোবেসেও পিংকিকে বিয়ে করতে পারে নি, বাবার জন্য পিছিয়ে গেল। শিমুলের বেলায় যদি এমনটা করে? এতে শিমুল বিরহে ডুবে যাবে না তো? কাল থেকে এসব ভেবে ভেবে ছটফট করছিল সে। এখন মেয়ের কথা শুনে মনে হলো সপ্তদশী শিমুল বয়সের তুলনায় যথেষ্ট বুঝদার মেয়ে। এক সমুদ্র চিন্তার আংশিক হারিয়ে গেল মেয়ের কথায়।
মোবাইলটা দিয়ে শিমুলের কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বেরিয়ে গেল হসপিটালের উদ্দেশ্যে। মোবাইল পেয়ে হাতে খাজানা পাওয়ার সুখ অনুভূত হলো শিমুলের। মায়ের রুম থেকে দৌড়ে এসে নিজের ঘরে ঢুকল। কল দিল সৌরভের মোবাইলে।
প্রহরের সাথে কথা বলে বাজারে চলে আসে সৌরভ। শিমুলের কল ধরতে সেকেন্ড দুয়েক বিলম্ব হলো তার। তড়িৎ গতিতে কেঁপে উঠল গলাটা, ” ফুপু বেশি কিছু বলেছে?”
” আপনি কীভাবে জানলেন আম্মুর কাছে মোবাইল ছিল?”- অবাক স্বরে প্রশ্ন করল শিমুল।
” তোর ভাই। দেখা হয়েছিল তার সাথে তোদের বাড়ির সামনে। ”
” আপনি আমাদের বাড়ির সামনে আসছিলেন? ভিতরে আসেন নাই ক্যান?”
” তোদের বাড়ির ভিতরে আমি কোনদিন গিয়েছি যে আজ যাব?”
সৌরভ সরল মনে কথাটা বললেও রাগ ধরে গেল শিমুলের। কটমট করে বলে উঠল,” আমাদের বাড়ির মেঝেতে কি আবর্জনা পড়ে আছে যে আপনার সোনায় বাঁধা পা এখানে ফেললে পা টা ময়লা হয়ে যাবে?”
মুহূর্তেই বেকুব বনে গেল সৌরভ,” আমি এমন কখন বললাম? আমার বলার মানে ছিল আগে কোনোদিন যাই নি,আজ যেতে কেমন লাগবে না? অথচ তুই রেগে গেলি। কথায় কথায় রেগে বো–ম হয়ে যাস কেন শিমুল ফুল? আমাদের কি ঝগড়ার সম্পর্ক? আমার মনে হয়, প্রেমের চেয়ে তুই আমার সাথে ঝগড়া করতে ভালোবাসিস বেশি। ”
শিমুল বিছানায় পা উঠিয়ে বসল। একটুও মিথ্যা বলে নি সৌরভ। কেন জানে না,তবে সৌরভ ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করতে বেশ ভালো লাগে তার। স্বীকারও করল তা অকপটে,” কথাটা সত্য বলছেন। ”
সৌরভ অধরজোড়া প্রসারিত করে দুষ্টু গলায় বলে,
” তাহলে অনেক ভালো। ঝগড়া করতে করতে তোর মুখ তিতা হয়ে গেলে মিষ্টির কিছু খাওয়ার জন্য যখন ছটফট করবি,তখন আমারও মিষ্টিমুখ করার সুযোগ হয়ে যাবে। ঝগড়া তাহলে মন্দ নয়। ”
শিমুল শ্রবণগোচর হওয়া একেকটা বর্ণ বুঝার পর কিছু একটা আঁচ করতে পেরে নিশ্চিত হবার জন্য জিজ্ঞেস করল,” আপনার কীভাবে মিষ্টিমুখ করার সুযোগ হইবে? কথা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলেন কেন?”
” তুই শুনতে চাস কীভাবে হবে?”
এবার গলাটা নরম শোনাল সৌরভের, কেমন মাদকমিশ্রিতও। শিমুলের বুকে কম্পন ছড়িয়ে যায়। সৌরভ সাধারণত এভাবে কথা বলে না। হুট করে এমন গলাতে বলায় যেন মন-দেহে প্রবল আলোড়ন তৈরি হলো। আস্তে করে সম্মতি জানায়,” হু। ”
” আমাকে আবার খারাপ পুরুষ ভাবতে পারবি না। প্রেমে পড়লে প্রেমিকার কাছে নিজেকে সুপুরুষ সাজিয়ে রাখা খুব কঠিন, বুঝলি? দিন-রাত চেষ্টা করে যাচ্ছি সুপুরুষ হবার। তবুও বেহায়া মন মাঝে মাঝে অনুভূতি চেপে রাখতে পারে না। এই যে তুই ঝগড়া করিস তখন আমার কী ইচ্ছে হয় জানিস?”
” কী?”- আগের মতো করেই প্রশ্ন করে শিমুল।
” ইচ্ছে করে তোকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে। কপালে নয়,গালে নয়, সোজা তোর অধরে চুমু খেয়ে প্রেম পিপাসা মেটাতে। প্রেমিকা বলে দমিয়ে রাখছি নিজেকে,বউ হলে এক চিমটিও ছাড় পাবি না। এমন অসভ্য পুরুষ ছিলাম না আমি শিমুল,তোর ভালোবাসার ফল। ইচ্ছে করছে এখুনি তোকে তুলে এনে কাজি অফিসে গিয়ে বলি,’ কবুল,কবুল,কবুল। ‘ এই হলো মিষ্টিমুখের সামান্য অনুভূতি প্রকাশ। শুনেছিস?”
শিমুল মোবাইল এক হাতে কানে ধরে আরেক হাত বুকের বা পাশে চেপে ধরল। শরীর প্রচন্ড খারাপ লাগছে, হৃৎস্পন্দন ছুটছে বেগতিক হারে। তার প্রেমিক পুরুষ তো এমন বর্বর ছিল না। এত নির্লজ্জ কবে হলো!
” শুনছিস তুই? ঠিক আছিস শিমুল?”
সে অনেক কষ্টেসৃষ্টে জবাব দিল,” হু। ”
” গলা শুকিয়ে গেছে? শরীর খারাপ লাগছে? লাগলে কী করার বল? একটা সময় তুই আমায় ভালোবাসার জন্য বহুত জ্বালিয়েছিস। এখন আমি সেই ভালোবাসা তোকে দিতে লড়াই করে হলেও তোকে আমার বউ করব। বিয়ের কথা বলব আব্বাকে। ”
শিমুল আতঙ্কিত হয়ে প্রশ্ন করে, ” মামা রাজি হবেন?”
” কতবার ভালোবাসা হারাব? ভালোবাসা হারানোর কষ্ট আর আমি সহ্য করতে চাই না। ”
” পিংকিকে খুব ভালোবাসতেন, তাই না?”
এই প্রশ্নের উত্তর দিল না সৌরভ। অতীত টেনে বর্তমান নষ্ট করবে না সে। প্রিয়জন অন্যকে ভালোবাসত,সেটা মুখে বললে মেনে নেওয়া অনেক কষ্টকর। শিমুলকে তিল পরিমাণ কষ্ট দিতে অপারগ সে। বলল,
” তুই আমার প্রথম ভালোবাসা না হলেও শেষ ভালোবাসা শিমুল। তোকে আমি ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি। ”
যেই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে গেছিল শিমুল,আজ তা শুনেও সহজভাবে উত্তরে বলতে পারছে না,” আমিও আপনাকে ভালোবাসি। ” এসব লজ্জা কোত্থেকে এলো তার! নিশ্চয়ই নিশাতের সাথে থাকার ফলাফল। সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। অমন লাজুক মেয়ের সাথে থাকলে লাজ এসে ঘিরে ধরবে স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে প্রহর ভাইয়ের জন্য মাত্রাধিক আফসোস হয় তার।
.
.
পানি খাওয়ার পর ঊষা বায়না করল আইসক্রিম খাবে। আইসক্রিম খাওয়ার পর আবার বায়না ধরল আলুর চপ খাবে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে প্রত্যয় ওকে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে বাজারের ভিতরে গেল আলুর চপ আনতে। প্রত্যয়ের সন্নিকটে ঊষার মনপাখিটা ফুড়ুৎ করে উড়ে যেতে চাইছে সুখের আহ্বান পেয়ে। এই ভালোবাসাটা সে চেয়েছিল একটা সময় পাগলের মতোন৷ চেয়েছিল প্রত্যয় তাকে ভালোবেসে পেছনে পড়ে থাকুক সর্বক্ষণ। আজ সব চাওয়া পূরণ হচ্ছে। ঊষার মনে হচ্ছে, জীবনের সকল শূন্যস্থানগুলো পূরণ হয়ে যাচ্ছে। ট্রাফিক জ্যামে গাড়ি থেমে আছে অসংখ্য। অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে এদিক সেদিক চেয়ে প্রত্যয়ের ফেরার অপেক্ষা করছে। ইচ্ছে করেই তাকে জ্বালাতন করছে আজ। তাছাড়া প্রত্যয়ের প্রেম প্রেম শব্দ মনের মধ্যকার সকল দুঃখ মুছে দিয়ে তার দিকে টানছে জোরালোভাবে।
” মেয়র সাহেবের মেয়ে ফুটপাতে কী করছে? বহুদিন পরে দেখা পেলাম, চোখের তৃষ্ণা নিবারণ হয়ে গেল। ”
অকস্মাৎ পরিচিত স্বর পেয়ে চমকাল ঊষা। পাশ ফিরে চেয়ে পিছিয়ে গেল কয়েক পা। স্বরনালি ভেদ করে অস্ফুটস্বরে উচ্চারিত হলো উক্ত বাক্যখানা,” সমীরণ! এখানে কী করছেন আপনি?”
সমীরণ রক্তিম চোখ মেলে সরু নজরে দেখতে লাগল ঊষাকে৷ তার চাহনি দেখে থমকে গেল ঊষা। চোখের হালকা ধূসর মণি দুটো লাল রঙে রঙ্গিন হয়ে আছে। চুলগুলোও এলোমেলো। তখন কথাগুলোও কেমন থেমে থেমে বলছিল। বি**শ্রী গন্ধও আসছে মুখ থেকে। ঊষার বুঝতে বাকি রইল না সমীরণ নে–শা করে আছে। কিন্তু তার কাছে কেন এসেছে? দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ” দূরে থাকুন। ”
সমীরণ কৌতূক শুনে মজা পেয়েছে এমন কণ্ঠে বলল,” দূরে থাকার জন্য আসি নি কাছে। গাড়ি থেকে তোমাকে দেখতে পেয়েই আসা। তোমাকেই দেখতে চেয়েছিলাম এতদিন। মনোবাসনা পূর্ণ হয়ে গেল। ”
” কেন? আমাকে দেখার কী আছে? আমার আরও দুইটা চোখ উঠেছে, মাথায় শিং গজিয়েছে? ”
আগুন ঝরছে যেন ঊষার কণ্ঠে। সমীরণ তোয়াক্কা করল না,বেপরোয়া হয়ে বলল,” তোমার প্রেমের জাল থেকে বের হতে পারলাম না এখনও। তোমার ভাই গেম খেলল আমার সাথে। আমার বোনকে ব্যবহার করে এমপি হয়ে কচি মেয়ে বিয়ে করে ফেলল। আর প্রত্যয় কি করল! সে মৃন্ময়ী নামের মেয়েটার পেছনে ঘুরে ঘুরে, হুট করে এসে তোমাকে বউ বানিয়ে ফেলল। তোমাকে পাওয়ার কথা তো আমার ছিল। আমি কেন পেলাম না? ওই চরি**ত্রহীন কেন তোমারে পাইল, ঊষা? তুমি জানো,তুমি ছাড়া আমার এখন আর কিছু ভালো লাগে না। ”
ঊষা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল প্রত্যয়ের দেখা মিলে কিনা। খবরই নেই। আলুর চপ আনতে কি এতক্ষণ লাগে? এই মাতালকে এখন সামলাবে কেমন করে?
” আপনি যান এখান থেকে। আমি কখনোই আপনার ছিলাম না। আর চরিত্রহীন আপনি,আমার স্বামী না। আপনি না নিশুকে বিয়ে করতে গিয়েছিলেন? মা**রধোলাই খেয়ে শিক্ষা হয় নি? ”
” ওইটা জাস্ট প্রহরকে নিচু করার জন্য। আমি এতদিনে উপলব্ধি করেছি আই লাভ ইউ, ঊষা। আই নিড ইউ। ”
ঊষার মেজাজ বিগড়ে গেল। থাপ্প**ড় মারতে ইচ্ছে করছে সমীরণকে। নতুন আরেক ফন্দি এঁটেছে মনে হয় শয়**তানটা। এখানে অহেতুক তর্ক করে লাভ নেই। যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে পেছন থেকে হাতের কব্জি চেপে ধরে সমীরণ। সমস্ত কায়ায় শীতল স্রোত বয়ে যায় ঊষার। গা ছমছম করে ওঠে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,” হাত ছাড়ুন। নয়ত পরিণাম খুব খারাপ হবে। ”
” শুনো না কেন তুমি আমার কথা? তোমার দুই ভাই আমার সাথে যা করেছে তা সব আমি ভুলে যাব তুমি আমার হলে। ”
সে ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সমীরণের বুকে হাত রেখে ধাক্কা মারল। পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয় সমীরণ। ঊষা তেজী স্বরে বলে উঠল,
” আর একবারও আমার হাত ধরলে তোর অবস্থা নাজেহাল করে ছাড়ব আমি। আর তুই আমার ভাইয়া ও স্বামীকে কী করবি? দ্যাখ তোর অস্তিত্ব থাকে কিনা কয়দিন পর। মেয়ে দেখলেই তোর ভিতরের জানো**য়ার চরিত্রটা বেরিয়ে আসে। ”
সমীরণ চোয়াল শক্ত করে তেড়েমেড়ে আসতে লাগল তার দিকে। একটা বলিষ্ঠ হাত টেনে বুকের মাঝে নিয়ে নিল তাকে। চক্ষুদ্বয় গরম করে শাসাল সমীরণকে,” আমার বউ। একদম ছোঁয়ার চেষ্টা করবি না। এমনিতেই তোর দিনক্ষণ ফুরিয়ে আসছে। শেষ বেলায় ভালো হয়ে যা। ”
সমীরণ বিদ্রুপ করল,” আমার শেষ বেলা? তোদের দুই ভাইয়ের শেষ বেলা বলতে পারিস। আর বউ নিয়ে সুখের সংসার বেশিদিন টিকবে না। তোদের কাউকেই আমি সুখের সংসার সাজাতে দেব না। আমার ক্ষমতা হাসিলে তোরা দুই ভাই সবথেকে বড়ো বাধা হয়েছিস। বাহিরে মুখ দিয়ে অবশেষে ঘরেরটাই ভোগ করলি। ”
প্রত্যয় এগিয়ে গিয়ে ঘুষি মারল সমীরণের মুখে। রাগের দাপটে সুগঠিত দেহটা কাঁপছে তার। ঊষা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এলো তাকে সেদিক থেকে। সমীরণ গালে হাত দিয়ে বাঁকা হেসে তাকিয়ে থাকল ওদের দিকে। ক্ষমতা, ঊষা সবকিছুই হারিয়েছে সে। আগে ঊষার প্রতি তার অনুভূতি শুধুমাত্র চাহিদা হিসেবে থাকলেও ঊষার বিয়ের পর থেকে সে প্রত্যয়ের হয়ে যাওয়ায় নিজেকে পরাজিত সৈনিক মনে হয় তার। জেদ কাজ করে কেন ঊষা তার হলো না, যন্ত্রণাও হয় মাঝেমধ্যে ভেতরে ভেতরে। মন সারাক্ষণ ঊষাকেই খুঁজে বেড়ায়।
________________________
” কল ধর, নয়তো ভিতরে গিয়ে তুলে নিয়ে সোজা স্মরণিকা নিবাসে যাব। মামুজানের দেওয়া শর্তও মানব না। ”
ক্ষুদে বার্তাটা পড়ে জানালা দিয়ে মাথা বাড়িয়ে বাড়ির পেছনের রাস্তার দিকে তাকাল নিশাত। প্রহরের গাড়িটা দেখা যাচ্ছে। গাড়ির ভিতর বসে আছে সে। তাকে কল দিচ্ছে বার বার। অভিমান করে কলটা ধরছে না সে। কেন এসেছে? সালিশ শেষ, শহরে চলে গেলেই তো হয়। শুধু শুধু কাজকর্ম ছেড়ে এখানে আসতে গেল কেন? গলায় ওড়না ঝুলিয়ে মোবাইলটা নিয়ে বাহিরে এলো। মাকে বলেই এলো। রোকেয়া বলে দিলেন, নিয়ে আসিস প্রহরকে। মাথা নাড়িয়ে গাড়ির কাছে এলো সে। গাড়ির কাছে আসতেই গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিয়ে অতি পরিচিত ভরাট কণ্ঠের মালিক বলে উঠল,” ভিতরে আয়। ”
ভিতরেই বসতেই নিজেকে সামলানোর সুযোগ পেল না নিশাত। তার আগেই প্রহর তার কোলে মাথা রেখে আদেশ করল,” চুল টেনে দে। স্বামী সেবা কর। আদর তো করিস না, সেবাটাই কর। জীবনেও ভাবি নি তোর মতো গাধী এমন কিপ্টুস হবি আদরের বেলাতে। ”
নিশাত স্তব্ধ, নিশ্চুপ। অভিমানে লজ্জাও পাচ্ছে না আজ তার। নিঃশব্দে চুলে হাত বুলাতে লাগল,টানতে লাগল আস্তেধীরে। প্রহর ধমকে উঠল,” ভাত খাস নি? হাতে জোর নাই?”
নিশাত একটু তেজ দেখিয়েই বলল,” সন্ধ্যার পর পরই ভাত খায় কে?”
প্রহর ভ্রু উঁচিয়ে গাড়ির ভিতরকার মৃদু রশ্মিতে দেখল নিশাতের চেহারাটা। দৃঢ় কণ্ঠে প্রশ্ন করল,” তুই কি তেজ দেখালি আমাকে? মনে হলো শক্ত গলায় কথা বললি। ”
প্রতুত্তর করল না নিশাত। একটুখানি দৃঢ় কণ্ঠে জবাবটা দিলেও অনেকখানি ভীতসন্ত্রস্ত সে মনে মনে। নিশ্চয়ই প্রহর এখন মার**বে তাকে? কেন যে অভিমানের বহিঃপ্রকাশ ঘটল! প্রহর ওর কোল থেকে মাথা তুলে ওঠে বসল। তাকে বিস্ময়ে আবিষ্ট করে একটা গাল ধরে নিজের অতীব কাছে মুখটা নিয়ে শীতল কণ্ঠে জানতে চাইল,” আমার তিলবতী কি রেগে আছে? কেন রেগে আছিস সুইটহার্ট? আদর করি না বলে?”
বলেই কপালে রুক্ষ ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিল গভীরভাবে। শরমে অভিমান উড়ে গিয়ে চুপসে যেতে লাগল নিশাত। ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হতেই প্রহরের তৃষ্ণার্ত, নেশাগ্রস্ত চাউনি নিজের অধর পানে দেখে থমকাল সে। সরে যেতে চাইল। লাভ হলো না বিশেষ। তার শীর্ণ দেহ প্রহরের বলিষ্ঠ শরীরের কাছে নগন্য। পেরে উঠল না শক্তিতে। প্রহর ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসি ফুটিয়ে প্রশ্ন করে, ” সরে যাচ্ছিস কেন? আদর নিবি না?”
নিশাত চোখ বুঁজে নিজের লজ্জা নিবারণে নিমগ্ন হলো। ভয়ংকর অসভ্য এই লোক তাকে মুহূর্তেই ধরাশায়ী করে ফেলেছে যেন। মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার পূর্বেই নিটোল ওষ্ঠে ওষ্ঠজোড়া রেখে আরও কাছে টেনে নেয় প্রহর। দুই জোড়া অধরের মিলনে দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয় নিশাতের। বুকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে চায় সে। প্রহর ঠোঁটজোড়া মুক্ত করে দিয়ে ওর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,
” মাঝে মাঝে তোর বাপের কাছে কান্নাকাটি করে বললেই তো পারিস,’ আব্বা,আমি আমার স্বামীকে অনেক মিস করি,তার জন্য পরাণ পুড়ে, মনটা জ্বলে। ‘ এতে তোর বাপের মনটা গললেও গলতে পারে। কিন্তু তুই তো তোর বাপের মতোই, জামাইয়ের জন্য কোনো মায়াদয়া হয় না তোর। বুড়ো বলে পাত্তা দেস না,তাই না? ”
#চলবে~