প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে পর্ব-৫১

0
981

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকা: আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব____৫১

” আপনি রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে চলে আসলেন, সৌরভ ভাই? মামাকে ওইসব ক্যান বলতে গেলেন? এভাবে বলা ঠিক হয় নাই। মেজো মামি কল করে আম্মুকে সব বলছে। এমনটা আশা করে নাই আম্মু। ভাইয়া, আম্মু সবাই সবকিছু ভালোভাবে চাইছিল। আর কত ক্ষয় হইব সম্পর্ক?”

সৌরভ প্রশ্নগুলো অবজ্ঞা করে নৌকা থেকে নেমে হাত বাড়িয়ে দেয় শিমুলের দিকে। শিমুল তখনো শুভ্র পা যুগল ঝিলের হালকা সবুজ রঙের পানিতে ভেজাতে মগ্ন। গ্রীষ্মের প্রবল তাপিত রোদ্দুরে জল শুকিয়ে চৈত্রের খরা ছুঁই ছুঁই। সৌরভের দিকে মনোযোগ নেই ওর। মধ্যদুপুর পেরিয়ে সবে বিকেল ধরাতলে নামবে নামবে ভাব। তেজহীন রোদে জলের মাঝে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছে সে আবছা আবছা।

সৌরভের ধৈর্য্য কুলাল না আর। হাত বাড়িয়ে না রেখে বরং এক টানে কোলে তুলে নেয় শিমুলকে। ঘটনার আকস্মিকতায় কিম্ভূতকিমাকার হয়ে যায় শিমুল। চিল্লিয়ে ওঠে জোরালো কণ্ঠে,
” কী করতেছেন আপনি? কোলে নিলেন ক্যান? সর্ব-নাশ, সর্বনা–শ। মাঝি কাকার সামনে, ছিঃ! ছিঃ! নামান,নামান। ”

চোখ পাকিয়ে তাকাল সৌরভ বুকে হট্টগোল বাঁধানো বাচ্চা বাচ্চা চেহারার চঞ্চল মেয়েটার পানে। ব্যস! গলার আওয়াজ দমিয়ে নিল মেয়েটা। গলা জড়িয়ে ধরে সৌরভের কাঁধের ওপর দিয়ে মাঝি কাকাকে দেখে নিল। বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটা দাঁত বের করে হাসছে। শিমুল মিনমিন করে বলে,
” দেখেন,উনি হাসতেছে। গ্রামে রটাইবে শিউর থাকেন। ”
সৌরভ ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে কিছুক্ষণ ভাবে। বলে,
” আমার পকেটে হাত দে। ”
” কেন?”
” মানিব্যাগটা বের কর। ”
পড়ন্ত বিকেলে সূর্য অস্তাচলে যাবার মুহূর্তে নীলাম্বরে থোকা থোকা রক্ত জমাট বাঁধার মতোই আরক্তিম হয়ে ওঠে শিমুলের শ্বেত বদন। সৌরভ ভুরু আরো কুঁচকে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলে। ফিসফিস করে বলে,
” প্রেম করবি বলতে সময় লজ্জা পাস নি, এখন আমাকে ছুঁতে গেলেই লজ্জা! এটা একদমই অপ্রত্যাশিত ছিল আমার জন্য। আমি উল্টো ভেবে রেখেছি বিয়ের পর আদুরে স্পর্শের ব্যাপারটা তোর দিক থেকেই সর্বপ্রথম হবে। মানিব্যাগটা বের কর এখন। ”
শিমুল কটমট করে উঁচু স্বরে বলে ওঠে,
” আপনি কি আমায় এত বেহায়া ভাবেন? ভালোবাসা লুকিয়ে রাখতে হয় না,বলে দিতে হয়,তাই আমি প্রকাশ করেছি। তাই বলে অন্য কিছু কেন আমি করতে যাব? আমি মেয়ে মানুষ, অনেক শরমভরম আছে আমার। ”
” মাইক এনে দেব? ওয়েট কর মাইক এনে দিচ্ছি তারপর পুরো গ্রামে বলিস। এত ঝগড়াটে তুই! ভাইগুলোর মতো হয়েছিস। একটা কথাও মাটিতে পড়তে দেয় না। ”

ক্ষুধার্ত বাঘের মতো হিং–স্র হয়ে উঠল শিমুল। সৌরভের গলায় প্যাঁচিয়ে রাখা দু হাতের নখ বসিয়ে দিল ঝট করে। হুট করে তীব্র জ্বলনে সৌরভ মৃদ্যু ব্যথা প্রকাশ করে কোল থেকে ছেড়ে দিল ওকে। বেঁধে গেল গণ্ডগোল। ঈষৎ কাদা মাটিতে পড়ে গেল সে। চিৎকার করে উঠল। খানিকটা উপর থেকে হুট করে পড়ায় ব্যথা পেল কিঞ্চিৎ। মাঝিকাকা ওঠে এলেন হাহুতাশ করতে করতে,
” হায়,হায়! সৌরভ বাবাজি ফালাই দিলা চেয়ারম্যানের মাইয়াটারে। চেয়ারম্যান দেখলে ভেজাল করব। ”

মাঝি কাকা মতিন মিয়া এই ঝিলে নৌকা চালান বছর কয়েক হবে, সবার পরিচিত মুখ। সৌরভ গলা ঢলতে ঢলতে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে পাঁচশ টাকার নোট ধরিয়ে দিল উনার হাতে। বিরক্ত গলায় বলল,
” আপনি যান, কাউকে কিছু বলবেন না। ”
আর্থিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত হওয়ায় মতিন মিয়া পাঁচশ টাকা পেয়ে আনন্দিত স্বরে বলে উঠলেন,
” আইচ্ছা, বাবা। রফিক ভাইরে আমার সালাম দিয়ো,গেলাম। ”
সৌরভ মানিব্যাগ পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটু ভেঙে বসে। কাঁদায় মাখোমাখো শিমুলের দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্যের কণ্ঠে বলে,
” ভাইদের কথা বললেই জ্বলে উঠিস ক্যান? সত্যিই বলেছি। আর তুই আমার বয়স ভুলে যাস? আবুইদ্দা একটা মেয়ে আমাকে মার–তে আসিস। ”
” আবুইদ্দা মেয়ের সাথে যে প্রেম করেন,সে বেলায়? আমার ভাইদের নিয়ে একটা উল্টাপাল্টা কথা বললে আমি হাজার বার আক্রম-ণ করব। প্রয়োজনে ছোটোবেলার টেকনিকগুলো কাজে লাগাব। আজ শুধু ট্রেইলার দেখালাম খামচি দিয়ে। ছোটোবেলায় ঝগড়ায় না পারলে খামচি, থুতু,চুল টান কত কি দিয়েছি। ”

শিমুল মহা আনন্দের সরোবরে ভেসে গিয়ে বলল কথাগুলো। ব্যথার কথাও ভুলে গেছে প্রায়। সৌরভ আশেপাশে তাকাল। নির্জন হয়ে আছে সম্পূর্ণ জায়গা। মতিন মিয়ার নৌকাও প্রায় অনেক দূরে চলে গেছে। কর্দমাক্ত শিমুলকে ঝট করে বুকে চেপে ধরল সে। রোষানলে দগ্ধ করে বলে, ” আমি তোর অনেক বড়ো,অনেক। বড়োদের মার**ধর করে না সোনা। ”
শিমুল চোখ উঁচু করে আবার নামিয়ে নেয়। তিরতির করে নড়ছে দীর্ঘ পল্লব জোড়া। ওষ্ঠ নেড়ে বলে,
” ছি! ছি! এসব কী ডাকতেছেন? এসব ডাকবেন না। আমি শিমুলই ঠিক আছি। ”
দুষ্ট হাসে সৌরভ, ” আমি এসবই বলব। প্রেম করলে এসবই শুনতে হবে। ”
শিমুল আর কঠোরতার খোলস পরে থাকতে পারছে না। প্রেমে এসব রংঢং তার মোটেও ভালো লাগে না। সে ভালোবাসি শব্দখানি শুনতে পারলেই চলে,আর কোনো আদিখ্যেতা ওর চায় না।
” এসব শোনার জন্য প্রেম করি নাকি?”
সৌরভ বুকের সাথে আরো চেপে ধরে ছোট ছোট ছাটাই করা দাঁড়ি যুক্ত গাল নিয়ে রাখল শিমুলের তুলতুলে নরম গালে। হালকা ঘষে দিয়ে কপালের এক কোণে রুক্ষশুষ্ক ঠোঁট দুটি গাঢ়ভাবে ছুঁয়ে বলে,
” এসবের জন্যই প্রেম করে। ”
শিমুলের শরীর তপ্ত হয়ে গেল। হুড়মুড়িয়ে সৌরভের থেকে সরে গেল ও। লাগামহীন গলায় সরাসরি বলল,
” আপনি লুচু হয়ে গেছেন,সৌরভ ভাই।”
” এখন তো লুচু মনে হবেই। তুই যে আমার গলায় খামচি দিলি সেটা কি? মানুষ দেখলে সন্দেহ করবে আমায়। ভাববে,আবিয়াত্তা ছেলের গলায় এমন নখের দাগ আসল কই থেকে। ”
শিমুল আবারো লজ্জায় পড়ে গেল। এমন লজ্জায় সে কখনো পড়ে নি। এমনকি সৌরভকে প্রথমবার ভালোবাসার প্রস্তাব দিতে গিয়েও না,কেন যে দেখা করতে আসল সে!
” আমি বাড়িতে চলে যাব, নৌকা ডাকুন। ”
” নৌকা নেই একটাও ঘাটে। অপেক্ষা করতে হবে। ”
শিমুল একপাশে গিয়ে দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। সৌরভের এমন রোমান্টিক মুড নিতে পারছে না ও। আজ মনে হচ্ছে এসব ব্যাপারে এলার্জি আছে তার,আগে কেন টের পায় নি! লজ্জাটা একটু বেশিই বাড়ছে,গলা ধরে আসছে। সৌরভ ওর সামনে দাঁড়িয়ে হাত টেনে নিজের বুকে চেপে ধরে। হাসে স্মিত। শিমুলের বুকে তানপুরার সুর বেজে ওঠে। হাসিটা মাদকতা ছড়িয়ে দেয় ওর কোমল মনে, কাজ করে কোনো মায়াজাদুর ন্যায়। জাদুতে বশীভূত হয়ে অনিমিখ চেয়ে চেয়ে থাকে সম্মুখের পুরুষের মুখাবয়বে। সেই পুরুষ ওকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
” এত লজ্জা কেন পাচ্ছিস শিমুল, বল তো আমায়। দেখ,আমার ভিতরটা কত হাহাকার করছে তোকে পাবার আশায়। ব্যথাও করছে খুব। ব্যথা প্রশমিত করে দে না দ্রুত বউ হয়ে এসে। ”
শিমুল মোহগ্রস্তের মতো করে উত্তর সাজায়,” তাড়াতাড়িই আসব বউ হয়ে। ব্যথা করতে দেব না আর এই বুকটায়। ”
সিদ্ধান্ত নিল শিমুল প্রহরকে বলবে মামাকে রাজি করাতে। পাথরের প্রতিমার মতো নিজ জেদে অটল থাকা মামাকে কেবলই প্রহর নাড়াতে পারবে। ভাবতেই সুখসিন্ধুতে উথাল-পাতাল তরঙ্গের সাথে ভেসে যাচ্ছে ও, যেই লোকটা একদিন পুরোদমে অবহেলায় ফেলে রাখত ওকে,সময়ের পরিক্রমায় কত বদলে গেল! পাল্টে গেল পুরোপুরি। সময় আসলেই সবকিছু পরিবর্তন করে দেয়। ওকে না চাওয়া মানুষটা আজ উম্মাদ হয়ে শুধু ওকেই চায়।
_____________________________

ঊষা সারা রাস্তা নিশ্চুপ থেকে এসেছে। গাড়িতে উঠার পর প্রত্যয়ের সাথে অনেকবার কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু প্রত্যয় সশব্দে ধমকে ওঠে তাকে,
” কোনো কথা যেন বের না হয় তোর মুখ থেকে। ”
ব্যস! তারপর থেকেই ও চুপচাপ। এরকম ধমক ঠিক কবে খেয়েছিল মনে পড়ছে না ওর। অভিমানে কান্না আসছে। প্রিয় মানুষেরা ভুল বুঝলে ভীষণ কষ্ট হয়। সমস্ত জগত এলোমেলো লাগে। প্রত্যয় নিশ্চিত ওকে ভুল বুঝেছে,নতুবা আচরণ কেন ক্ষিপ্র হবে! প্রত্যয় গাড়ি থেকে নামলে পথ আগলে দাঁড়াল ও।
” তুমি আমাকে ভুল বুঝছ। উনি সকালে এসে কথা বলার জন্য জোর করছিল। আমি তাকে জাস্ট এটাই বলতে গিয়েছিলাম কোনো ঝামেলা যেন না করে। ”
সরু চোখে তাকায় প্রত্যয়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চাহনি নরম করে সে। ঊষার হাত ধরে বলে,
” কাকে ভুল বুঝব আমি? নিজেকে? তুই আমার অস্তিত্বে মিশে গিয়েছিস ঊষা। নিজের সত্তাকে কেউ ভুল বুঝে না। আমার রাগটা সমীরণ জানো***য়ারটার ওপর। তুই দেখা করেছিস, জেলাস হয়েছি আমি। খুব হয়েছি। কিন্তু পরক্ষণে আমার মনে আসে যখন আমাকে তুই অন্য মেয়েদের সাথে দেখতি,কত কষ্ট হতো তোর। কত কষ্ট দিয়েছি আমি তোকে। ভালোবাসা সঠিক সময়ে উপলব্ধি করলে আমার দ্বারা এত ভুল হতো না রে পুষি৷ ক্ষমা করে দে আমায়। ”

ঊষা ধীর গতিতে মাথা এলিয়ে দেয় প্রত্যয়ের বুকে। বেসামাল হৃদস্পন্দন বাধাহীন প্রবেশ করছে তার শ্রবণগ্রন্থিতে ভীষণ অবলীলায়। ঘুম ভাঙানিয়া পাখির ন্যায় কলকল করে বলে,
” ভালোবাসা দেরিতে আসলেও সততা, বিশ্বাস, গভীরতা নিয়ে এসেছে। আমি অতীতে বিচরণ করতে চাই না, চাই এই গভীর ভালোবাসায় চিরকাল পথ হারানো পথিক হয়ে থাকতে। এই পথিককে আর ওইসব বলে পথ হারাতে বাধা দিয়ো না তুমি। ”
প্রত্যয়ের চোখ ছাপিয়ে এক ফোঁটা জল গড়ায়। বলিষ্ঠ হাতে বাহুডোরে বেঁধে রাখে তার হৃদয়ের মালকিনকে। দোতলার বারান্দা থেকে ওদের হিরন্ময় মুহূর্ত দেখে আলতো করে হাসেন মোশতাক সাহেব। অবশেষে তাঁর মেয়ের জীবনটা পরিপূর্ণ হলো ভালোবাসা পেয়ে, প্রত্যয়ের ছন্নছাড়া জীবনটা খুঁজে পেল গতিপথ।
______________________

বৈশাখে পেরিয়ে জৈষ্ঠ্য ভীরু ভীরু পায়ে এলো মর্ত্যলোকে। নিজের রাজত্ব এখনো ছড়াতে পারে নি পুরোপুরি। স্মরণিকা নিবাসের আনাচে-কানাচেতে উৎসবের তোরজোর চলছে। ঊষা শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে দুই মগ কফি বানিয়ে বসার ঘরে নিয়ে এলো। প্রত্যয় প্রহরের দিকে তাকিয়ে বলছে,
” ভাই, অবশেষে তোমার শ্বশুর আমাদের বাড়িতে তার স্বর্ণ দিয়ে বাঁধাই করা পা ফেলছে। কেমন অনুভূতি হচ্ছে তোমার? ”
প্রহর চাটা মা””রল ওর মাথায়। বলল,
” আমার শ্বশুরজান তোর মামা। অনুভূতি অনেক গভীর, প্রকাশ করা যাবে না। মাঝে মাঝে মনে হয় বউয়ের থেকে শ্বশুরকে ভালোবাসি বেশি। ”
ঊষার হাত চালের গুঁড়োয় মাখামাখি। আলতা ভাইয়ের বাড়ির সবার জন্য বিভিন্ন পিঠা বানাবেন বলে ঠিক করলেন। হাতে সময় কম তাই সে সাহায্য করে দিচ্ছে। ট্রে রেখে বলল,
” আসলেই তাই মনে হচ্ছে ভাইয়া। নিশুকে পাওয়ার জন্য অনেক দ্বন্দ্ব করেছ। ”
প্রহর সোফায় গা এলিয়ে বলে, ” শুধু নিশুকে পাওয়ার জন্য লড়াই করি নি। ছোট থেকে সম্পর্কের অবনতি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম বলে সকল অপ–মান সহ্য করেও বার বার সবকিছু সঠিক করার পেছনে লেগেছিলাম।”

উজ্জ্বল সাহেবে বড়োসড়ো ফুলের মালা নিয়ে এসেছেন। শত্রু**রূপী বন্ধু আসবে বলে কথা। ছেলেদের সামনেই রাখলেন মালাটা। প্রত্যয় চোখ জোড়া সংকুচিত করে প্রশ্ন করল,
” এটা কি মামুর জন্য? ”
” হ্যাঁ। ”
সহাস্যে বললেন তিনি। প্রহরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” নিশাতকে এভাবে নিয়ে এলো ভালো হতো না? অনুষ্ঠানের ভেজালের কী দরকার ছিল?”
” আপনিও কি আমার শ্বশুরের মতো কিপ্টা,বাবা?”
প্রহরের প্রশ্নে থতমত খেলেন উনি। হতভম্ব স্বরে বললেন,
” না,কইছিলাম কয়বার বিয়া করবা,বাপ? গ্রামবাসী বার বার তোমার বিয়ের কথা শুনলে এখন বলে আপনের ছেলে কয় বিয়া করছে, চেয়ারম্যান সাহেব? একবার তনুজার সাথে বিয়ের কথা, আবার নিশাতের সাথে হলো, এখন অনুষ্ঠানের কথা উঠায় সন্দেহ করতেছে নতুন কাউরে করবা কিনা। বিশ্বাস করে না আগের বিয়ের অনুষ্ঠান যে। ”
প্রহর সোফায় হেলান দিয়ে নির্বিকার সুরে বলল,

” বার বার করব। আপনার ওই ভুড়িওয়ালা পেটুক বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করতে আমার কোনো আলসেমি নেই। কিপ্টামি না করে অনুষ্ঠানটা মহা ধুমধামে করিয়েন। বন্ধুর বৈশিষ্ট্য আপনার মাঝেও কিছুটা বিদ্যমান আছে আমি খেয়াল করেছি। কিপ্টামি একটা বাজে গুণ, বিরত থাকুন এর থেকে। ”
__________________
স্মরণিকা নিবাসের সামনে গাড়ি আসতেই নেমে গেলেন রফিক আজম। দুপুরের উত্তপ্ত তাপমাত্রায় শরীর দরদর করে ঘামছে উনার। একমাসের বদলে দেরি করে এ বাড়িতে আসার সিদ্ধান্ত নিলেও পুরোপুরি নিজেকে প্রস্তুত করে আসতে পারলেন না। কথিত আছে, চোরে**র মন পুলিশ পুলিশ। তেমনই তাঁর মনে বার বার ভয় হানা দিচ্ছে উনি যেভাবে অপ**মান করতেন,সেভাবে যদি উনাকেও করা হয়! তাঁর জন্য বাড়ির অন্য সদস্যরাও গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রোকেয়া ডাকছেন,তিনি কর্ণপাত করছেন না। মায়ের ইশারায় নিশাত এগিয়ে গিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত কণ্ঠে জানতে চায়,
” কী হলো আব্বা? যাবেন না?”
প্রহর ব্যতীত কাউকে ভরসা করতে পারছেন না রফিক আজম। ছেলেটা যেহেতু তাঁর মেয়েকে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব, সুতরাং অপদস্থ করবে না হয়তো। ভয় করছে উনার ভিতরে প্রবেশ করতে। গম্ভীর স্বরে আদেশ করলেন,
” তোমার জামাইকে ডাকো,বলো আমাদের এখান থেকে নিয়ে যেতে। ”

নিশাত কল দেয় প্রহরকে। রিসিভ হতেই গলা খাদে নামিয়ে বলে,” গেটে দাঁড়িয়ে আছি। আব্বা আপনাকে ছাড়া ভেতরে যাবেন না। ”
” কেন? তোর বাপের আবার বাচ্চাদের মতো তালবাহানা কেন? ফোন দে উনার কাছে। ”
মেয়ে মোবাইল বাড়িয়ে দিলে রফিক আজম ভারিক্কি সুরে বলে,” কই তুমি?”
প্রহর ছাদ থেকে দাঁড়িয়ে তাদের অবলোকন করতে করতে বলে,
” আপনি নাকি আমাকে ছাড়া ভেতরে আসবেন না? আপনি কি চাইছেন আমি আপনাকে কোলে করে ওয়েলকাম করি? সমস্যা নেই শ্বশুরজান। বলিষ্ঠ শরীরটা কোনদিনের জন্য? আপনার মেয়েকে কোলে নিই,আর আপনাকে নিতে পারব না? এখুনি আসছি, অপেক্ষা করুন। ”

কল কাটতেই মুখের রংচং কর্পূরের মতো উবে গিয়ে ছাই রঙা হয়ে গেল রফিক আজমের। বুড়ো বয়সে কোলে উঠবেন তিনি! তা-ও মেয়ের জামাইয়ের!

#চলবে!