প্রেমের তাজমহল পর্ব-১৫+১৬+১৭

0
278

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব১৫ (বিয়ে স্পেশাল পর্ব )
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

গোধূলি বিকেলে আকাশে স্বল্প মেঘের আনাগোনা। আনায়া নিজের ঘরে বসে ল্যাপটপে মুভি দেখছে। মাঝে কেটে গেছে আরো অনেক গুলো দিন। অর্ণব আনায়াকে এর মাঝে আর কোনো ফোন দেয় নি। আর না বাসায় এসেছে। আনায়া ওপরে ওপরে খুশি দেখালেও ভিতরে ভিতরে পুড়ে মরছে অর্ণব নামক পুরুষের বিরহে। এইযে মানুষটা তাকে ফোন দিচ্ছে না, হুটহাট তার সাথে দেখা করতে আসছে না। এগুলো আনায়াকে পড়াচ্ছে। কিন্তু আনায়া সেটা প্রকাশ করছে না। ও সর্বচ্চো চেষ্টা করছে নিজেকে সামলানোর তবে ও ব্যর্থ। আনায়া মনে মনে ভাবছে, ” তবে কি ও অর্ণবের প্রেমে পরে গেল? ভালোবেসে ফেলল অ*সভ্য পুরুষটাকে?”। একবার মনে হয় ও অর্ণব নামক পুরুষের ভালোবাসায় মত্ত হয়ে গেছে। তাকে গভীর ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে। পর মুহূর্তেই মনে হয় এটা সম্ভব না। কোনো ভাবেই সম্ভব না। আনায়া অর্ণবের ক্ষতি হোক সেটা মোটেই চায় না। তাইতো এক পা এগিয়ে দু’পা পিছিয়ে আসে। আনায়ার ভাবনার মাঝে ওর ঘরে ঢোকে আবির। আনায়াকে এভাবে এক ধ্যানে কিছু ভাবতে দেখে ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“কিরে, ল্যাপটপে মুভি ছেড়ে তুই কোন ভাবনার শহরে ডুবে আছিস?”

আনায়া হতোচকিয়ে উঠল। নিজেকে সামলে মাথা ডলতে ডলতে বলল,
“কিছু না। এমনি”

“সত্যি করে বল কি ভাবছিলি?”

আনায়া কথা ঘুরাতে বলল,
“তেমন কিছু না। তুই বল, তুই হটাৎ আমার রুমে কি করছিস?”

আবির বিছানায় বসতে বসতে বলল,
“ভাবছিলাম অনেক দিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না। চল দুই ভাই বোন মিলে ঘুরে আসি”

আনায়া প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে নিঃক্ষেপ করে বলল,
“দুজন কেনো? সবাই মিলে কোনো নয়?”

আবির হতমত খেয়ে বলল,
“কিছু না। আরে বুঝিস না সবাই মিলে গেলে তোর ভাগে কম পড়বে। তাই চল তুই আর আমি দুই ভাই-বোন মিলে ঘুরে আসি। সবাই মিলে অন্য একদিন যাবো”

আনায়া কিছুক্ষন আবিরের দিকে সন্দেহ জনক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হেসে আবিরের গাল টেনে বলল,
“আমার সুইট ভাইটা। আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি তুইও রেডি হতে যা”

আনায়া রেডি হতে চলে গেল। এতক্ষনে আবির সস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা টাইপ করে পাঠিয়ে দিল কারো কাছে। অতঃপর নিজেও চলে গেল রেডি হতে।

আনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে। তৈরি হওয়া শেষে নিজেকে এক বার আয়নায় দেখে বেরিয়ে পড়ল। আবির গাড়ি থামালো একটা পার্কের সামনে। দুই ভাইবোন একসাথে পার্কের ভিতরে ঢুকল। আনায়া পার্ক টা ঘুরে ঘুরে দেখছে। আবির দেখছে ওর আদরের ছোটো বোনটাকে। সেই ছোট্ট আনায়া কতটা বড় হয়ে গেছে। ছোটো বেলায় যখন আনায়া জন্ম নিয়েছিলো তখন আবির ওকে কোলে নিয়ে কতই না খুশি হয়েছিল। দুই ভাইয়ের অনেক আদরের বোন আনায়া। আবির আনায়াকে বলল,
“তুই থাক আমি তোর জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসছি”

আনায়া সম্মতি দিলে আবির চলে গেল। আনায়া পাশের একটা বেঞ্চে বসল। হটাৎ কোত্থেকে একটা বাচ্চা মেয়ে এসে আনায়ার সামনে ফুল ধরল। আনায়া বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করল,
“ফুল কার জন্য?”

বাচ্চাটা মিষ্টি হেসে দিয়ে বলল,
“তোমার জন্য”

আনায়া বাচ্চাটার কাছ থেকে ফুল নিয়ে ওকে আদর করে দিল। আনায়া বাচ্চাটাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই বাচ্চাটা দৌড়ে চলে গেল। একটু পর আরেকটা বাচ্চা ফুল নিয়ে এলো। এভাবে পর পর অনেক গুলো বাচ্চা আনায়াকে ফুল দিয়ে গেল। আনায়াতো অবাক। হটাৎ বাচ্চারা ওকে ফুল দিচ্ছে কোনো? আনায়া একটা বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমরা আমাকে ফুল দিচ্ছ কোনো?”

“একটা ভাইয়া আমাদের হাতে ফুল দিয়ে বলেছে তোমাকে দিতে”

আনায়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কে সেই ভাইয়া?”

বাচ্চাটা মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলল,
“সিক্রেট”

বাচ্চাটা দৌড়ে চলে গেল। আনায়া আবার নিজের জায়গায় বসে পড়ল। ভাবনায় মত্ত হলো। কে এই ফুল গুলো পাঠালো? কে হতে পারে সেই ব্যক্তি? আনায়ার চেনা কেউ? আনায়ার ভাবনার মাঝে কেউ একজন আনায়ার সামনে বসল। আনায়া ধ্যান ভেঙ্গে তাকিয়ে দেখে ওর সামনে অর্ণব হাঁটু ভেঙ্গে বসে আছে। হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ।
“শোনো মেয়ে তোমায় বলছি, বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমাকে। তুমি হলে আমার মনের একমাত্র রানী,
তুমি কি হবে আমার অর্ধাঙ্গিনী? তোমার হাত হাত রেখে দেখতে চাই ভালোবাসার শহর। তৈরি করতে চাই #প্রেমের_তাজমহল। যেই তাজমহল জুড়ে থাকবে শুধু তোমার আনাগোনা। যেখানে ভালোবাসায় থাকবেন না কোনো মানা। মেয়ে তুমি কি রাজি? রাজি হলে বলো ডাকবো তাড়াতাড়ি কাজী? করবো তোমায় বিয়ে, পালকিতে চড়িয়ে যাবো তোমায় শশুর বাড়ি নিয়ে”

আনায়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অর্ণবের দিকে। যেই মানুষটা এতো গুলো দিন তার কোনো খোঁজ নেয় নি হটাৎ করে তাকে এভাবে নিজের সামনে দেখে আনায়া কেন যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। আনায়া হাত বাড়িয়ে অর্ণবের গালে রাখল। মানুষটাকে নিজের সামনে দেখে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে আনায়া বুঝতে পারছে না। অর্ণব আনায়ার সামনে চুটকি বাজাতেই আনায়ার ধ্যান ভাঙলো। আনায়া সাথে সাথে ওর হাত সরিয়ে নিল। অর্ণব এখনো ওর পানে তাকিয়ে আছে ওর উত্তর শোনার জন্য। আনায়াকে কিছু বলতে না দেখে অর্ণব পুনরায় জিজ্ঞেস করল,
“কি হলো? কিছু বললে না যে? তুমি কি হবে আমার অর্ধাঙ্গিনী?”

আনায়া ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার উত্তর যদি না হয়”

অর্ণব কিছুটা ধাক্কা খেল। ও জানতো আনায়ার উত্তর এমনটা হতে পারে। তাই নিজেকে সামলে বলল,
“অপেক্ষা করব”

“আর যদি হ্যা হয়”

“এখনই কবুল পড়ে আমার নামে লিখে নেবো”

আনায়া কিছু বলছে না। কি যেন একমনে ভাবছে। অর্ণব ওকে কিছু না বলতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“কোনটা তোমার উত্তর ধরে নিবো? ”

আনায়া কিছুক্ষন সময় নিয়ে ভাবল। অতঃপর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলল,
“দ্বিতীয় টা ধরে নেন”

অর্ণব খুশিতে আনায়াকে জড়িয়ে ধরল। আনায়াও জড়িয়ে নিল অর্ণবকে। অর্ণব আনায়াকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আনায়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিল।আনায়াও তাল মিলিয়ে হাটছে অর্ণবের পাশে।
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”

“গেলেই দেখতে পারবে”

“আরে ভাইয়া তো আমাকে খুজবে”

“ওর কথা তোমাকে ভাবতে হবে না”

আনায়াকে গাড়িতে বসিয়ে অর্ণব নিজে বসল ড্রাইভিং সিটে। ফোনে কারো নাম্বার ডায়াল করে বলল,
“তোরা সব ব্যবস্থা কর আমি আসছি ওকে নিয়ে”

ওপর পাশ থেকে কি বলল কিছুই শুনতে পেলনা আনায়া। অর্ণব ফোন কেটে আনায়ার দিকে তাকালো। অর্ণব এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ওর সামনে বসা মায়াবতীর দিকে। এই মায়াবতী কে যে ওর চাই। সারাজীবনের জন্য নিজের করে চাই। নহলে যে ওর হাঁসফাঁস লাগবে, মন আনচান আনচান করবে। ওর হৃদয় ফাঁকা ফাঁকা লাগবে। তাই অর্ণব আজ এই মায়াবতী কে সারাজীবনের জন্য নিজের নামে লিখে নিবে। কিছুক্ষনের ব্যবধানে অর্ণব একটা বিল্ডিংয়ের নিচে গাড়ি থামালো। আনায়ার হাত ধরে দোতলায় চলে এলো। আনায়া তাকিয়ে দেখল গোটা গোটা অক্ষরে লিখা “কাজী অফিস”। আনায়া ভেবে পেল না ওরা এখানে কেন এসেছে। অর্ণব কে জিজ্ঞেস করল,
“আমরা এখানে কোনো এসেছি?”

“মানুষ যা করতে আসে, আমরাও তাই করতে এসেছি”

আনায়া কিছুটা চেঁচিয়ে বলল,
“মানে?”

অর্ণব শান্ত ভঙ্গিতে পকেটে হাত গুঁজে বলল,
“বিয়ে করতে এসেছি আমরা”

“এখন? এভাবে? কাউকে না জানিয়ে?”

“হ্যাঁ এখন। বলা তো যায় না কখন তোমার মুড চেঞ্জ হয়ে যায় তখন বলবে আমি আপনাকে বিয়ে করবো না। আমি সেই রিস্ক নিতে পারবো না। তাই এখন আমরা বিয়ে করবো দেন বাসায় যাবো”

“কিন্তু এখন এখানে মা-বাবাকে না জানিয়ে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না”

“সেটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি সব সামলে নিবো তুমি শুধু কবুল বলবে এতেই হবে”

আনায়াকে নিয়ে অর্ণব ভিতরে ঢুকল। অর্ণবের কিছু ফ্রেন্ড এসেছে। তাঁদের মধ্যেও দুটো মেয়েও আছে।তারা আনায়ার মাথায় একটা লাল ওড়না জড়িয়ে দিল। আনায়াকে নিয়ে বসেনো হলো অর্ণবের পাশে।
কাজী সাহেব আনায়াকে কবুল বলতে বললে আনায়া অসহায় চোখে তাকালো অর্ণবের দিকে। তখন কেউ আনায়ার মাথায় হাত রাখল। আনায়া তাকিয়ে দেখল আবির দাঁড়িয়ে আছে। আবির বোনের হাত শক্ত করে ধরে ওকে আশ্বাস দিল। আনায়া ভাই কে পাশে পেয়ে সস্থি পেল। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে দিল কাঙ্খিত সেই শব্দ। অর্ণবের মনে প্রশান্তির ছোঁয়া। অর্ণবকে কবুল বলতে বললে ও সময় না নিয়ে ফটাফট বলে দিল। অর্ণবের বলার ধরণের সবাই হেসে দিল।অতঃপর দুজন কাবিন নামায় সাক্ষর করে বাধা পরে গেল এক পবিত্র সম্পর্কে। সবাই সমস্বরে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ”

#চলবে?

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব১৬
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

আনায়াদের ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই। অর্ণব তার পরিবারকে ফোন করে বলেছে আনায়াদের বাড়িতে চলে আসতে। সবাই উৎসুক হয়ে বসে আছে অর্ণবের কথা শোনার জন্য। অর্ণব প্রথমে সবার মুখ অবলোকন করে নিল। কথাটা শোনার পর কার কি রিকশন হবে সেটাই দেখার পালা। অর্ণবের বাবা ইমতিয়াজ সাহেবের ছেলের এই নীরবতা পছন্দ হলো না। তিনি বলে উঠলেন,
“কি কথা বলবে সেটা বলছো না কেন অর্ণব? যা বলবে তাড়াতাড়ি বলো। তোমার নীরবতা পালন করা দেখার জন্য বসে নেই আমরা”

অর্ণব নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“আমি আর আনায়া দুজন বিয়ে করে নিয়েছি”

কথাটা যেন বিস্ফোরণ ঘটালো। সবাই অদ্ভুত নজরে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আনায়া অর্ণবের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। ও ধীরে ধীরে অর্ণবের পিছনে চলে গেল। অর্ণব তার বাবার রিঅ্যাকশন দেখার জন্য অধির আগ্রহে বসে আছে। ও যত বড় এমপিই হোক না কেন বাবা কে অর্ণব ভয় পায়। ভয় পায় বলতে খুবই সম্মান করে। এক সময় ওর বাবা ও একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। ছেলে মেয়েরা যদি কোনো ভুল করে তাহলে তিনি গর্জে উঠেন। এমনি সময় সে ছেলে মেয়েদের কাছে বন্ধু সমান। ইমতিয়াজ সাহেব হাতে ধরে ছেলে কে রাজনীতি শিখিয়েছেন। অর্ণবের সকল চিন্তা তার বাবাকে নিয়েই। অর্ণবের বাবা আর আনায়ার বাবা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থেকে আচমকা দুজনের হা হা করে হেসে দিলেন। তাঁদের সাথে হেসে দিল সবাই। আনায়া এদের এভাবে হাসতে দেখে বেক্কেল হয়ে গেল। ও অর্ণবকে খোঁচা দিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল,
“ওনারা সবাই এভাবে হাসছেন কোনো?”

“আমি কিভাবে বলবো? তুমি যেখানে আমিও তো সেখানে”

অর্ণবের বাবা ইমতিয়াজ সাহেব হাসি থামিয়ে বললেন,
“তোমরা কি মনে করেছ আমরা তোমাদের বিয়ের বেপারে কিছুই জানি না, তাহলে তোমরা ভুল ভাবছো। আবির আমাদের আগেই বলে দিয়েছিলো। আমরা তো এতক্ষন অভিনয় করছিলাম তোমাদের রিয়েকশন দেখার জন্য”

অর্ণব কটমট চোখে আবিরের দিকে তাকাল। তবে আবির ওকে পাত্তাই দিল না। আবির তো ব্যস্ত অহনাকে দেখতে। তার প্রিয়সীকে দেখে সে তার চোখ জুড়াচ্ছে। অর্ণবের এমন রাগী লুক দেখতে তার বয়েই গেছে। ইমতিয়াজ সাহেব অর্ণবের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“আমরা তো তোমাদের বিয়ে এমনিই দিতাম। তাহলে তোমাদের কাজী অফিসে যেয়ে বিয়ে করার কি দরকার ছিলো”

অর্ণব আমতা আমতা করে বলল,
“আসলে বাবা আমার খুবই ইচ্ছে ছিলো কাজী অফিসে যেয়ে বিয়ে করার। তাই আরকি”

অর্ণবের পিছনে দাড়িতে আনায়া মিটিমিটি হাসছে। সবার সামনে গর্জে উঠা মানুষটাকে নিজের বাবার সামনে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করতে দেখে আনায়ার খুবই হাসি পাচ্ছে। হাসি আটকে রাখতে না পেরে আনায়া মিটিমিটি হাসছে। অর্ণব ওকে চোখ রাঙানি দিতেই আনায়া ভদ্র মেয়ের মতো চুপ হয়ে গেল।

ইমতিয়াজ সাহেব আশরাফ সাহেব কে বলল,
“ভাইজান ছেলে মেয়ে যেহেতু বিয়ে করেই নিয়েছে আমাদের তো এতে কোনো আপত্তি নেই। তাই আমি চাচ্ছি আমার ঘরের বউকে খুব জলদি আমার বাড়ির আরেক মেয়ে করে নিয়ে যেতে, আপনি কি বলেন?”

আনায়ার বাবা আশরাফ সাহেব ইমতিয়াজ সাহেবের কথায় সম্মতি জানালেন। দুই পরিবার মিলে আলোচনায় বসল বিয়ের বেপারে। আনায়া নিজের ঘরে চলে এল। ওর পিছু পিছু মিহি আর নীলিমাও এলো। আনায়া বিছানায় বসতেই মিহি ওর পাশে বসে টিটকিরি মেরে বলল,
“তলে তলে এতো কিছু হয়ে গেল আর আমরা টেরই পেলাম না। এতো দিন তো খুব বলতে আমি এই অ*সভ্য এমপিকে কিছুতেই বিয়ে করবো না আর আজ সোজা কাজী অফিস থেকে বিয়ে করে ফিরলে। কি এমন জাদু করলো গো আমাদের দুলাভাই যে একে বারে বিয়েই করে নিলে?”

আনায়া লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় ওর গাল লাল হয়ে যাচ্ছে। এখন নিজেরই নিজেকে মারতে ইচ্ছে হচ্ছে। কেন ওই অসভ্য এমপির কথায় তাকে বিয়ে করতে গেল। নাহলে এদের এতো কথা শুনতে হতো না। আনায়া নিজের লজ্জাটাকে প্রকাশ পেতে না দিয়ে কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে বলল,
“এসব কি ধরণের কথা মিহি। আমি তোর বড় বোন হই সেটা ভুলে যাস না”

“আমি কিছু বললেই দোষ। তুমি করলে দোষ নেই”

আনায়া কি বলবে কিছু খুঁজে পেল না। নীলিমা আর মিহি মিলে এটা ওটা বলে আনায়া লজ্জা দিয়ে যাচ্ছে। হটাৎ আগমন ঘটলো অহনার। ও আসতেই নীলিমা ওকে আনায়ার পাশে বসার জায়গা করে দিল। অহনা আনায়কে দেখে বলল,
“মাশাআল্লাহ। আমার ভাইয়ের পছন্দ আছে বলতে হবে। ভাবি তোমাকে আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। কি মিষ্টি দেখতে তুমি”

মিহি পাশ থেকে বলল,
“দেখতে হবে না কার পছন্দ। এমপি সাহেব এমনি এমনি আমার বোনের প্রেমে আছাড় খেয়ে পড়েছে নাকি। কোয়ালিটি আছে বস”

মিহির কথা শুনে নীলিমা আর অহনা শব্দ করে হেসে দিল। আনায়া বেচারি পড়েছে বেকায়দায়। সবাই মিলে ওকে লজ্জা দিচ্ছে ও চাইলেও কিছু বলতে পারছে না। বেচারি এদের কথায় লজ্জা লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।

আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো পনেরো দিন পরে অনুষ্ঠান করে আনায়াকে সিকদার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। বেচারা অর্ণবের মন খারাপ। বিয়ে করেও শান্তি নেই ওর। পনেরো দিন বউ ছাড়া থাকতে হবে ভেবেই অর্ণবের কেমন এতিম এতিম ফিল হচ্ছে। কিন্তু সবার সামনে কিছুই বলতে পারছে না যতই হোক ও খুব ভদ্র ছেলে বলে কথা।

খাওয়া দাওয়া শেষে অর্ণবরা আনায়াদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। অর্ণব এর মাঝে অনেকবার অহনাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে আনায়াকে ওর সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু আনায়া যায় নি। ও জানে এখন অর্ণবের সামনে যাওয়া মানে ওর জন্য বিপদজনক। অর্ণবের সামনে গেলেই আনায়াকে লজ্জার সম্মুখীন হতে হবে। আর সাথে তো অ*সভ্য লোকটার অ*সভ্য কথা ফ্রি।

আনায়া এক সেট কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে গেল। বিকেলের পর থেকে ওর ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। বিকেলের দিকেও ও অবিবাহিত একটা মেয়ে ছিলো এখন এক জনের অর্ধাঙ্গিনী। বিষয়টা ভাবতেই আনায়ার গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। একদিক দিয়ে ভালোও লাগছে অর্ণবের মতো একজন মানুষকে ও ওর জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে তাই। আনায়া ফ্রেশ হয়ে বের হলো। ওর খুবই ক্লান্ত লাগছে তাই কোনো কিছু না ভেবে বিছানায় শুয়ে পড়ল। মুহূর্তেই মাঝে ঘুমের দেশে পারি দিল আনায়া।

আনায়ার গভীর ঘুমে আছন্ন। আচমকা পাশে রাখা ওর ফোনটা সশব্দে বেজে উঠল। আনায়া ঘুম ঘুম চোখ হাতড়িয়ে পাশ থেকে ফোনটা নিল। কোনো মতে রিসিভ ওরে কানে ধরল,
“হ্যালো”

আনায়ার ঘুম ঘুম কণ্ঠে কারো মনে মাদকতার সৃষ্টি হচ্ছে। সে খুব মনোযোগ দিয়ে আনায়ার ঘুম ঘুম কণ্ঠ শুনছে। খুব শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“ঘুমাচ্ছ?”

“হুম”

আনায়া পুনরায় ঘুম ঘুম কণ্ঠে জবাব দিল। ওপর পাশে থাকা ব্যক্তির মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠল।
“তুমি কি ভুলে গেছো আজকে রাতটা আমাদের জন্য কি?”

আনায়া কিছুক্ষন ভাবল। কিন্তু ওর কিছুই মনে পড়ছে না। তাই ওপর পাশের ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলো,
“না, আমার কিছু মনে পড়ছে না। আপনি বলুন”

ওপর পাশে থাকা মানুষটা ফিসফিস কণ্ঠে বলল,
“বাসর রাত”

কথাটা আনায়ার কর্ণকুহুরে পৌঁছাতেই ও লাফ দিয়ে উঠে বসল। ফোনটা সামনে এনে দেখল স্ক্রিনে “অ*সভ্য লোক” নামটা জ্বলজ্বল করছে। আনায়া আজকে সারাদিনের কথা মনে করল। ওদের বিয়ের কথা স্মরণ হতেই মনে পড়ল সত্যিই তো আজকে ওদের বাসর রাত। আনায়া তো এতো কিছু মনে রাখেনি। ও দিব্বি ঘুমাচ্ছিলো। আনায়াকে কিছু বলতে না দেখে অর্ণব বলল,
“কি হলো? কিছু মনে পড়ল”

আনায়া না জানার ভঙ্গি করে বলল,
“না আমার কিছুই মনে পড়ছে না”

অর্ণব দুস্টু হেসে বলল,
“তাহলে আমি কি আসবো তোমাকে মনে করাতে?”

আনায়া চিৎকার দিয়ে বলল,
“না, আপনার আসার দরকার নাই। আমি ঘুমাচ্ছি আপনি নিজেও ঘুমান। আল্লাহ হাফেজ”

বলেই আনায়া ফট করে ফোনটা কেটে দিল। ওর এমন বোকামোতে ওপর পাশে অর্ণব শব্দ করে হেসে দিল। হাসি থামিয়ে বলল,
“পাগলী বউ আমার”

#চলবে?

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব১৭
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

আঁধারে আচ্ছন্ন পুরো ঘর। হিম শীতল পরিবেশ। গভীর নিদ্রায় আছন্ন এক রমণী। নিদ্রায় নিজেকে আবেশে জড়িয়ে রেখেছে। এমন মুহূর্তে রমণীর হাতের কাছে থাকা ফোনটা বেজে উঠল। হাতড়ে ফোনটা খুঁজে রমণী হাতে নিল। তার এতো সাধের ঘুম এতক্ষনে বিদায় নিয়েছে। পিটপিট করে চোখ খুলে দেখল তার প্রানপ্রিয় সখীর ফোন। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরল। ওপর পাশ থেকে অর্ষা হন্তদন্ত হয়ে বলল,
“দোস্ত তুই আজকের নিউজ দেখেছিস?”

আনায়া ভ্রু কুঁচকে ফেলল। এই সকাল বেলা অর্ষা নিউজ দেখার জন্য এতো সাধের ঘুমটা ভাঙালো। আনায়া ধমক দিয়ে বলল,
“তুই শুধু মাত্র নিউজ দেখার জন্য আমার ঘুম ভাঙালী? কি এমন নিউজ দিচ্ছে যা দেখার জন্য তুই আমার এতো সাধের ঘুমটা নষ্ট করলি?”

“তুই শুধু নিউজ টা দেখ তাহলেই দেখবি তোর ঘুম এমনি উড়ে যাবে”

“ঘুম তো তুই নিজেই উড়িয়ে দিয়েছিস, বাকি আর কি আছে?”

“টিভিটা অন কর দেখবি তোর বাকি ঘুমও উড়ে যাবে”

আনায়া ফোনটা রেখে সামনের ঘড়ির দিকে তাকালো দশটা বেজে পাঁচ মিনিট। রুম অন্ধকার থাকায় কোনো আলো আসছিলো না তাই ও বুঝতে পারেনি এতটা বেলা হয়ে গেছে। কালকের ধকলে ক্লান্ত থাকায় ঘুম ভাঙতে এতো দেরি হয়ে গেছে। আনায়া জানালার পর্দা গুলো সরিয়ে দিল। পুরো ঘরটা মুহূর্তের মাঝেই আলোকিত হয়ে গেল। আনায়া ফ্রেশ হতে চলে গেল। নিচে নেমে আনায়া খাবার নিয়ে টিভির সামনে বসল। আনায়া খাবার মুখে পুড়ে টিভির চ্যানেল চেঞ্জ করে নিউজ চ্যানেল দিল। আনায়ার মুখের খাবার ওর গলায় আটকে গেলো। টিভিতে দেখাচ্ছে নিশানের হাতে হাত কড়া। চারপাশ থেকে পুলিশ ওকে ঘিরে রেখেছে। একজন রিপোর্টার মাইক হাতে নিয়ে বলছে,
“এবারের নির্বাচনে অর্ণব সিকদারের বিপরীতে নির্বাচনে হেরে যাওয়া নিশান আহমেদ কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশের বক্তব্য মতে নিশান আহমেদ তার কোম্পানিতে সবার অগোচরে ড্রাগস পাচার করতেন। গোপন সূত্রে এই তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ নিশান আবরারের গোডাউনে তল্লাশি চালালে সেখানে থেকে কয়েক কোটি টাকার ড্রাগস উদ্ধার করেন। অতঃপর পুলিশ সকল প্রমানের ভিত্তিতে নিশান আহমেদকে গ্রেফতার করেন। বিস্তারিত জানতে হলে চোখ রাখুন আমাদের চ্যানেলে”

আনায়া মুহূর্তের মাঝে স্তব্ধ হয়ে গেল। লোকটা খারাপ এটা জানতো তবে এতটা নিকৃষ্ট হবে সেটা ওর কল্পনাতেও ছিলো না। আনায়া গলা দিয়ে খাবার আর নামলো না। খাবারটা সেভাবে রেখে নিজের রুমে চলে এলো।

নিশানকে পুলিশ জিজ্ঞাসা বাদের জন্য স্পেশাল একটা রুমে রেখেছে। হটাৎ সেখানে অর্ণবের আগমন ঘটলো। অর্ণব একটা চেয়ার নিয়ে নিশানের সামনে বসল পায়ে পা তুলে। নিশান রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে তবে অর্ণবের সেদিকে খেয়াল নেই। অর্ণব নিশানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে কেমন লাগছে?”

নিশান রাগে ফুসে উঠে বলল,
“এই সব তোর কীর্তি তাই না? তুই আমাকে ধরিয়ে দিয়েছিস। তবে কাজটা তুই মোটেও ভালো করিসনি অর্ণব”

অর্ণব ঠোঁটের কোণে হাসিটা বজায় রেখে বলল,
“বুদ্ধিমান ছেলে। কতো সহজেই বুঝে গেলি। অর্ণব সিকাদারের সাথে লাগতে আসলে এমনই হয়। তোর খুব শখ ছিলো না আমাকে ধ্বংস করার, এখন জেলে বসে তুই তোর নিজের ধ্বংসের প্রহর গুনতে থাক”

নিশান রাগে ফেটে পড়ছে কিন্তু হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ানো থাকায় কিছুই করতে পারছে না। নাহলে এতক্ষনে দুজনের মাঝে বড় সর একটা মারামারি বেঁধে যেত।
“এই নিশান আহমেদ কে জেল খানায় আটকে রাখা এতো সহজ না। খুব শীঘ্রই আমি ফিরবো তোকে ধ্বংস করে তোর ভালোবাসার প্রায়সীকে নিজের করে নিতে। তুই বসে বসে দেখবি কিন্তু কিছু করার থাকবে না তোর”

“সেগুড়ে বালি। তুই জেল খানায় বসে বসে স্বপ্ন দেখতে থাক। আমি আসছি”

অর্ণব নিশানের দিকে তাকিয়ে গাঁ জ্বালা দেওয়া একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে এলো সেখানে থেকে।

আনায়া নিজের ঘরে বসে আছে। হটাৎ ওর ফোনে ম্যাসেজের টোন বেজে উঠল। আনায়া চেক করে দেখল অর্ণবের নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে।
“শুভ সকাল বউ”

ম্যাসেজ টা পরে আনায়ার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। এতক্ষনের মন খারাপ মুহূর্তের মাঝেই ভালো হয়ে গেল। আনায়া ম্যাসেজের রিপ্লাই করলো,
“শুভ সকাল অ*সভ্য এমপি সাহেব”

অ*সভ্য শব্দ টা পরে অর্ণব শব্দ করে হেসে দিল। ওর মনের মাঝে খুশিরা ঢেউ খেলছে। সব কিছুর শেষে ও নিজের প্রিয়সীকে নিজের করে পেয়েছে এটাই অনেক। আনায়া আর অর্ণবের মাঝে কিছুক্ষন বার্তা আদান প্রদান হলো।

সারাদিন আনায়া খুব সুন্দর করে উপভোগ করল। বিয়ের জন্য ওর বাবা-ভাইয়েরা ওকে অফিসে যেতে দেয়নি। আনায়া সারাদিন মিহি নীলিমার সাথে খুনসুটি করে কাটিয়ে দিল। রাতের বেলা আনায়া নিজের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওর খুবই ভালো লাগে ব্যালকনিতে বসে ফুরফুরে বাতাসে সময় কাটাতে। তাই ও যখনই সময় পায় ব্যালকনিতে চলে আসে। ওর ব্যালকনিতে একপাশে বেলি ফুল গাছ রয়েছে। বেলি ফুলের ঘ্রানর মাতোয়ারা পুরো ব্যালকনি জুড়ে। আনায়া বুক ভরে শ্বাস নিল। বেলি ফুল ওর খুব পছন্দের একটা ফুল। আনায়া সুন্দর মুহুর্ত উপভোগ করছে কিন্তু ওর মস্তিষ্কের যেন সেটা পছন্দ হলো না। হটাৎ করে মস্তিষ্কে সকালের ঘটনা মনে পরে গেল। সত্যিই কি নিশান এসবের পিছনে আছে নাকি ওকে ফাঁসানো হচ্ছে? আনায়া কিছুই বুঝতে পারছে না। আনায়া স্মৃতিচারণে মগ্ন হলো।

অতীত,

আনায়া আর তার চিঠি প্রেমিকের দিন গুলো ভালোই কাটছিলো। এভাবে চিঠি প্রেমিকের চিঠি পড়তে পড়তে এক সময় আনায় মনে তীব্র আশা জাগলো চিঠির মানুষটার সাথে কথা বলার। ওর অনুভূতি সম্পর্কে তাকে জানানোর। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু আনায়া বুজতে পারলো না তাকে কিভাবে জানাবে। চিঠি তো সে তার বইয়ের ভাঁজে পেত। কিন্তু চিঠির মানুষটাকে কিভাবে চিঠি দিবে? ওর মনের ভাব কিভাবে যেন চিঠির মানুষটা বুঝে ফেলল। একটা চিঠির শেষে সে লিখল,
“এবার সময় হয়েছে তোমার অনুভূতি জানার মায়াবতী। আমি চাই তুমিও তোমার অনুভূতি সম্পর্কে আমাকে জানাও। এভাবে একা একা চিঠি লিখে আর ভালো লাগছে না। আমি অধির আগ্রহে বসে আছি তোমার অনুভূতি জানার। আমি তোমাকে যেই বইয়ের ভাঁজে চিঠি দিবো তুমিও তোমার সেই বইয়ের ভাঁজে চিঠি লিখে রেখে দিবে। দেখবে চিঠি আমার কাছে চলে আসবে”

আনায়া সেদিন খুব খুশি হয়েছিল। ফাইনালি সে নিজেও তার অনুভূতি তার চিঠির মানুষটাকে জানাতে পারবে। এরপর থেকে শুরু হলো তাদের মাঝে চিঠির আদান-প্রদান। আনায়া অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতো চিঠি আসার। আর চিঠি এলে তার খুশির সীমা থাকতো না। আনায়া ধীরে ধীরে তীব্র ভাবে মানুষটার প্রেমে পরে গেছে। এইযে মানুষটার চিঠি পড়লে ওর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠে। আনায়া মাঠের এক কোণে বসে চিঠি পড়ছিলো আর মুচকি মুচকি হাসছিলো। অর্ষা এসে ওর পাশে বসে ওকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“প্রেমে পরে গেলি নাকি? এভাবে পা*গ*লের মতো একা একা হাসছিস যে?”

আনায়া ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে বলল,
“প্রেমে তো আমি পড়ছি। চিঠির প্রেমে পড়েছি। চিঠির মানুষটার প্রেমে গভীর ভাবে পড়েছি”

“তুই কি চিঠির মানুষটাকে দেখেছিস?”

আনায়া দু পাশে মাথা নাড়ালো। যার মানে সে দেখেনি মানুষটাকে।
“তাহলে তার প্রেমে পড়লি কিভাবে?”

“আমি মানুষটাকে অনুভব করে তার লিখা কে ভালোবেসে তার প্রেমে পড়েছি”

অর্ষা কিছুক্ষন এক মনে কিছু একটা ভাবলো। অতঃপর আনায়াকে বলল,
“দোস্ত তোর ইচ্ছে করে না চিঠির মানুষটাকে সামনে থেকে দেখতে? তার মিষ্টি কণ্ঠস্বর শুনতে? তার কণ্ঠে ভালোবাসার মধুর কথা শুনতে?”

আনায়া মুখটা ফেকাশে করে বলল,
“ইচ্ছে তো করে, খুব ইচ্ছে করে মানুষটাকে সামনে থেকে দেখতে। তার মুখে মুধুর কথা শুনতে,
কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?”

“শোন আমি তোকে একটা বুদ্ধি দেই। তুই এখনই চিঠি লেখ তুই তাকে সামনাসামনি দেখতে চাস। তার সাথে কথা বলতে চাস। দেখ সে কি বলে”

আনায়া অর্ষার কথা মতো সাথে সাথেই চিঠি লিখতে বসে গেল। চিঠি লিখা শেষে বইয়ের ভাঁজে রেখে দিল। তারপর দুজন মিলে ক্লাসে চলে গেল। বাসায় এসে আনায়া সেই বই চেক করল কিন্তু চিঠিটা আর পেল না। তার মানে চিঠি তার কাছে পৌঁছে গেছে। আনায়া অপেক্ষা করছে চিঠির। দুইদিন পড় চিঠি এলো। চিঠির মানুষটাও আনায়ার সামনে আসতে চায়। আগামী শুক্রবার বিকেলে একটা জায়গার নাম বলে দিয়েছে সেখানে গেলেই আনায়া তার চিঠির প্রেমিককে দেখতে পাবে। আনায়ার খুশির শেষ নেই। কিন্তু চিন্তা হলো শুক্রবার ও বাসা থেকে কিভাবে বের হবে? অর্ষাকে কথাটা বলতেই অর্ষা ওর মাথায় গাট্টা মারলো।
“গাধী, প্রেমে পরে কি তোর সব বুদ্ধি লোপ পেল নাকি?”

আনায়া মাথা ডলে বলল,
“হবে হয়তো। তুই এখন আমাকে না মে*রে বুদ্ধি দে”

“তুই বাসায় বলবি আমার বাসায় আসছিস ব্যাস। এই বলে তুই সেখানে চলে যাবি”

“কিন্তু দোস্ত আমার যে ভয় লাগবে। একা একা কিভাবে যাবো? তুইও চল আমার সাথে”

“পা*গল তুই? তোদের কপালদের মাঝে আমি যেয়ে কি করবো?”

“তুই তো জানিস আমি একা কোথাও যাই নি। আমার অনেক ভয় করবে আর নার্ভাসও লাগবে। তুইও আমার সাথে চল প্লিজ”

“ঠিক আছে। আমিও তোর সাথে যাবো। এবার তুই শান্ত হ”

#চলবে?