প্রেমের তাজমহল পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
277

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৩৩
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

আঁধারে নিমজ্জিত চারপাশ। অর্ণব ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করলো। পুরো রুম ড্রিম লাইটের আলোয় আলোকিত। ড্রিম লাইটের স্বল্প আলোয় আনায়ার মায়াবী চেহারা দেখা যাচ্ছে। আনায়া গভীর ঘুমে মগ্ন। অর্ণব এগিয়ে গেল আনায়ার কাছে। পাশে গিয়ে বসল নিশ্চুপে। এক দিনের অসুস্থতায় মেয়েটার মুখ কতটা মলিন হয়ে গিয়েছে। কেমন ফেকাশে দেখাচ্ছে। অর্ণব কতক্ষন আনায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো তার হিসেব নেই। ঘোর কাটতেই লক্ষ্য করলো ঘড়ির দিকে। রাত তিনটা বাজে ঘুমানো প্রয়োজন। অর্ণব আনায়ার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে উঠে পড়লো। গাঁয়ের শার্ট ঘামে ভিজে গেছে চেঞ্জ করা প্রয়োজন। অর্ণব ফ্রেশ হতে চলে গেল ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এগিয়ে গেলো বিছানার দিকে। আনায়ার পাশে শুয়ে ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল। কয়েক মুহূর্তের মাঝে ঘুমিয়ে গেল।

সকালের মিষ্টি আলো অর্ণবের চোখে পড়তেই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল। পাশে তাকিয়ে দেখলো আনায়া ওর হাতের ওপর মাথা দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছে। অর্ণবের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। এমনি সময় আনায়া ওর আগে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। অর্ণব তাকালো ঘুমন্ত প্রিয়সীর মুখপানে। আনায়ার মুখের ওপর কিছু চুল পড়ে আছে। অর্ণব চুলগুলো কানের পিছনে সরিয়ে দিলো। অগোছালো চুলেও প্রিয়সীকে অর্ণবের নিকট মায়াবী লাগছে। প্রিয়সীর মুখটা ঘিরে যেন সকল মায়ার বসবাস। অর্ণব প্রিয়সীর মুখের মায়ার হারিয়ে যাচ্ছে। পাশ থেকে ফোনটা বেজে উঠল। অর্ণব ফোন রিসিভ করে কানে ধরল। ওপর পাশ থেকে তাপস বলল,
“স্যার আজকে দশটায় পার্টি অফিসে মিটিং আছে। আপনি যদি ভুলে যান তাই মনে করিয়ে দিলাম”

“আসলেই আমি ভুলে গিয়েছিলাম। ভালোই হলো তুমি মনে করিয়ে দিলে। আমি রেডি হয়ে থাকবো তুমি ঠিক সাড়ে নয়টার সময় চলে এসো”

“ঠিক আছে স্যার”

অর্ণব ফোন কেটে দিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আটটা বাজে। উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল। বেরিয়ে দেখলো আনায়া এখনো ঘুমিয়ে আছে। হাই ডোজের ওষুধ দেওয়ার হয়েছে ওকে তাই হয়তো ঘুমাচ্ছে। অর্ণব আনায়াকে না ডেকে নিচে চলে গেল। অর্ণবকে দেখে নীলিমা জিজ্ঞেস করলো,
“এতো সকালে উঠে গেলে যে? আনায়া উঠেছে?”

অর্ণব সোফায় বসতে বসতে বলল,
“ঘুম ভেঙ্গে গেল তাই আরকি। আনায়া উঠেনি ঘুমাচ্ছে, তাই আমিও ডাকিনি”

“ভালোই করেছো না ডেকে মেয়েটার ওপর দিয়ে কাল যা গেল। ও ঘুমাক। তুমি বলো চা নাকি কফি কোনটা খাবে?”

“কফি”

নীলিমা রান্না ঘরে চলে গেল। কিছুক্ষম পর এক কাপ কফি এনে অর্ণবের সামনে রাখলো। অর্ণব কফিটা শেষ করে উপরে চলে এলো। রুমে ঢুকে দেখলো আনায়া ঘুম থেকে উঠে গেছে।
“ঘুম ভেঙেছে মহারানীর?”

“হ্যাঁ ঘুম ভেঙেছে”

“ফ্রেশ হবে তো? উঠো আমি তোমাকে হেল্প করছি”

আনায়া খুব সাবধানে উঠে বসলো। অর্ণব আনায়াকে পাজাকোলে তুলে নিল।
“এই কি করছেন? নামান আমাকে। আমার হাতে ব্যাথা পায়ে তো কোনো সমস্যা নেই। আমি হেঁটে যেতে পারবো তো। নামান বলছি”

“চুপ থাকো। যেভাবে নিয়ে যাচ্ছি সেভাবেই চলো। বেশি কথা বললে ফেলে দিবো কিন্তু”

অর্ণব হাতের বাঁধন একটু হাল্কা করলো। আনায়া ভয়ে শক্ত করে অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরল। অর্ণব হাসলো আনায়ার কাণ্ডে। অর্ণব আনায়াকে বেসিনের সামনে দার করিয়ে দিলো। ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে বলল,
“হা করো”

“আমাকে দিন আমি পারবো”

“কথা নয় যা বলেছি সেটা করো”

অর্ণব আনায়াকে ব্রাশ করিয়ে মুখ ধুইয়ে দিলো। টিসু নিয়ে সুন্দর করে মুছে দিলো। আনায়ার ফ্রেশ হওয়ার শেষে ওকে পুনরায় কোলে তুলে এনে বিছানায় বসালো।
“তুমি এখানেই বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি”

অর্ণব বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষনের মাঝে ফিরে এলো। ওর হাতে সুপের বাটি। আনায়া চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। অর্ণব আনায়ার মুখের সামনে চামচ ধরতেই আনায়া নাক সিটকে বলল,
“সুপ? আমি খাবো না। কাল থেকে শুধু সুপ আর সুপ খাইয়ে চলেছেন। আমার আর ভালো লাগছে না। আপনি এটা আমার সামনে থেকে সরান আমি খাবো না”

“তা বললে কি হবে? তোমাকে তো খেতেই হবে। খেয়ে ওষুধ খেতে হবে তো। তাড়াতাড়ি হা করো দেখি”

“বললাম তো আমি খাবো না”

“এভাবে বলে না সোনা। এখন কষ্ট করে সুপটা খেয়ে নাও প্লিজ। খাওয়ার পর তোমাকে ওষুধ খেতে হবে তো”

আনায়া আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ খেয়ে নিল। আনায়াকে খাওয়ানো শেষে অর্ণব নিচে যেয়ে খেয়ে আসলো। অর্ণব তৈরি হচ্ছে আর আনায়া তাকিয়ে ওকে দেখছে। মানুষটাকে সাদা পাঞ্জাবীতে খুবই স্নিগ্ধ লাগে। অর্ণব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে। আনায়াকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“কিছু বলবে?”

আনায়া মাথা নেড়ে ‘না’ বোঝালো। অর্ণব রেডি হওয়া শেষে আনায়ার সামনে বসল। কপালে চুমু দিয়ে বলল,
“আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি। কোনো কিছুর দরকার হলে ভাবি বা মিহিকে ডেকে নিও। খুব জরুরি মিটিং না হলে যেতাম না। আমি চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি আসার। রেস্ট নেও, পাকনামি করে নিচে নামবে না কিন্তু”

“আপনি যেভাবে বলছেন মনে হচ্ছে আমার ভয়াবহ কিছু হয়েছে। হাতে সামান্য একটা গুলি লেগেছে এই তো”

অর্ণব আনায়ার গালে হাত রেখে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার কাছে এটা সামান্য হতে পারে তবে আমার কাছে খুবই গুরুত্বর। তোমার সামান্য আঘাতও আমার বুকে ক্ষত সৃষ্টি করে। বাদ দাও প্রেমিক হৃদয়ের ক্ষত তুমি বুঝবে না”

অর্ণব রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আনায়া ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। সত্যিই কি ও অর্ণবকে বুঝতে পারেনি? ও তো এমনিই বলছিলো। অর্ণব যেন ওকে নিয়ে বেশি টেনশন না করে তাই। একটু পড়ে আবির এসে আনায়ার সাথে কথা বলে গেল। মিহি এলো তারও কিছুক্ষন পর। দুবোন মিলে গল্প করলো অনেকটা সময়। সকাল গরিয়ে দুপুর হলো। অর্ণব এখনো বাসায় আসেনি। আশালতা বেগম এসে আনায়াকে খাইয়ে দিয়ে গেছেন। অর্ণব এলো তারও ঘন্টা খানেক পড়ে। সকালের পরিপাটি পাঞ্জাবী ঘামে ভিজে গেছে। সোজা শাওয়ার নিতে চলে গেল। বের হতেই নিচ থেকে নীলিমা ডাকলো খাওয়ার জন্য। অর্ণব আনায়ার সাথে কথা বলার সুযোগ পেল না। নিচে চলে গেল খেতে। খাওয়া শেষ করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল আনায়ার পাশে। আনায়া অর্ণবের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“আমি কি সত্যিই আপনাকে বুঝতে পারিনা? আমি ব্যর্থ আপনাকে বুঝতে, আপনার মনের অনুভূতি জানতে”

অর্ণব অবাক হলো। সকাল বেলা কি না কি বলে গেছে। মেয়েটা এখনো সেটা মনে রেখেছে।
“বোকা মেয়ে ওটা তো আমি কথার কথা বলেছিলাম। তুমি সেটা এখনো মনে রেখেছো?”

“সত্যিই কি কথার কথা?”

“হ্যাঁ সত্যি। এখন এটা নিয়ে মন খারাপ করো না”

আনায়া আর কথা বাড়ালো না।এভাবেই দিন কাটতে লাগলো। আনায়া সবার সেবায় আগের থেকে এখন অনেকটা সুস্থ। মাঝে দুইবার অর্ণবদের বাড়িলোক এসে আনায়াকে দেখে গিয়েছে। অহনা তো যখন তখন আনায়াকে দেখতে চলে আসে। দুজনে মিলে গল্প করে। আনায়ার সবার এই ভালোবাসা খুবই ভালো লাগে। ও এই ভালোবাসা গুলো উপভোগ করে। আনায়া অনেকটা সুস্থ তাই ওরা অর্ণবদের বাড়িতে চলে এসেছে।

অর্ণব বাড়িতে নেই বাহিরে গিয়েছে। অহনাও ভার্সিটিতে। আনায়া একা একা কি করবে ভেবে পেল না। এভাবে বসে থাকতেও ভালো লাগছে না। আনায়ার চোখ পড়লো বুক সেল্ফ এ। আনায়া উপন্যাসের একটা বই নিল পড়ার জন্য। কেয়ক পৃষ্ঠা পড়তেই আনায়া একটা খাম পেল। ওর ভ্রু কুঁচকে গেল। বইয়ের মাঝে খাম কি করে এলো?কার এই খাম? এখানেই বা কি করছে? আনায়ার মনে আগ্রহ জাগলো ভিতরে কি আছে সেটা দেখার। ও নিজের আগ্রহ ধরে রাখতে না পেরে খামটা খুলল। ভিতরে একটা কাগজ। আনায়া কাগজটা বের করে খুলল। কাগজটা খুলতেই আনায়ার মাথা ঘুরে গেল। এটা কিভাবে সম্ভব?

#চলবে?

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৩৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

আনায় বিস্মিত নয়নে চেয়ে আছে। এটা কিভাবে সম্ভব? ওর লেখা চিঠি অর্ণবের কাছে কি করে এলো ? এই বইয়ের মাঝেই বা কি করছে? এই চিঠি তো ও চিঠির সেই প্রেমিকের জন্য লিখেছিলো। তাকে দেওয়া চিঠি কিভাবে অর্ণবের কাছে এলো? আনায়ার মাথা ঘুরছে। কিছুই মাথায় আসছে না। চিঠির মানুষটা তো নিশান। সেই মতে এই চিঠি তো নিশানের কাছে থাকার কথা কিন্তু এই চিঠি অর্ণবের কাছে কি করছে? ওর কাছেই বা কিভাবে এলো? আনায়ার মাথায় প্রশ্ন কিলবিল করছে। কিন্ত এর উত্তর ওর কাছে নেই। আনায়া পায়চারি করছে। অপেক্ষা করছে অর্ণব কখন বাসায় আসবে তার জন্য। আনায়ার মাথায় এলো সেইদিনের কথা। সেদিন বৃষ্টিতে অর্ণবের করা সকল কার্যকলাপ হুবহু চিঠির সাথে মিলে যাচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে অর্ণব কিভাবে চিঠির কথা জানলো? আনায়ার মনে প্রশ্নের অভাব নেই তবে তার উত্তর দেওয়া মানুষটা যে এখানে নেই। আনায়া অনেকক্ষন পায়চারি করলো তবে অর্ণবের দেখা নেই। আনায়া আর ধর্য্য ধরতে পারছে না। এতো এতো প্রশ্ন জমেছে ওর মনে। আনায়া ডায়াল করলো অর্ণবের নাম্বারে। প্রথম বার কেটে গেল। একে একে বার কয়েক ফোন দিলো। পঞ্চম বারের সময় ফোন রিসিভ হলো। আনায়া অপর পাশের মানুষটাকে কিছু বলতে না দিয়েই বলা শুরু করলো,
“এমপি সাহেব আপনি কোথায়? কখন আসবেন বাসায়?”

অপর পাশ থেকে অর্ণব বলে উঠল,
“আমায় মিস করছো বুঝি”

“এমন কিছু না। আপনি বলেন কখন আসবেন?”

“তাহলে কেমন কিছু?”

“কথা না বাড়িয়ে যেটা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দিন”

“সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছ কোনো? এখন দেখছি বউয়ের সাথে রসিকতাও করা যাবে না। বউ সারাদিন সিরিয়াস মুডে থাকে”

“আপনি বলবেন নাকি আমি কল কেটে দিবো”

“এতো রাগ করলে চলে রাগিনী? এইতো ঘন্টা খানেক সময় লাগবে আসতে। কোনো বলতো?”

আনায়ার মাথায় দুস্টু বুদ্ধি চাপলো। ফোনটা এপাশের কান থেকে অপর পাশে নিল। ফিসফিস করে বলল,
“আসলে হয়েছি কি এমপি সাহেব আমার না আপনাকে শক্ত একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আপনি তো এখান বাসায় নেই। তাই কখন আসবেন সেটা জানতেই ফোন করেছিলাম। বলা তো যায় না আপনি আসার আগে যদি আমার মুড বদলে যায়”

“তুমি তোমার মুড ধরে রাখো আমি আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি। বউ নিজ থেকে চুমু খেতে চাইছে এমন মোক্ষম সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না”

“তাড়াতাড়ি আসেন, নাহলে মুড বদলে যেতে পারে”

আনায়া কল কেটে দিল। নিজেকে বাহবা দিয়ে নিজেই হেসে দিলো। এইযে এখন অর্ণব তাড়াহুড়ো করে চলে আসবে ও তো এটাই চায়। এতক্ষন ও ছটফট করেছে অর্ণবের আসার এখন অর্ণব ছটফট করবে ওর কাছে আসার জন্য। আনায়ার মনে এখন কিছুটা শান্তি লাগছে। আনায়া অর্ণবের অপেক্ষায় ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছে।

গেট দিয়ে অর্ণবের গাড়ি ঢুকল। আনায়া দেখল। অপেক্ষা করছে অর্ণব কখন ঘরে আসবে আর ও নিজের প্রশ্নের উত্তর পাবে। অর্ণব ঘরে এসে আনায়াকে খুঁজলো। না পেয়ে ব্যালকনিতে এলো। আনায়া উল্টো দিকে ঘুরে আছে। অর্ণব পিছন থেকে আনায়াকে জড়িয়ে ধরলো। আনায়া অর্ণবের উপস্থিতি আগেই টের পেয়েছে। কিন্তু পিছু ফিরেনি।
“কি হলো বউ ওদিকে ঘুরে আছো কোনো? আমার দিকে ফিরো আর ঝটপট করে তোমার সেই শক্ত চুমুটা দাও তো”

আনায়া নিজেকে প্রস্তুত করলো। গম্ভীর মুখে ফিরলো অর্ণবের দিকে। অর্ণব বউয়ের এমন গম্ভীর মুড দেখে অবাক হলো। আবার কি হলো? বউয়ের এমন ফুরফুরে মেজাজ পরিবর্তন হলো কোনো?
আনায়া গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলো,
“আপনি কে?”

অর্ণবের ভ্রু আপনাআপনি কুচকে গেল। আনায়া হটাৎ এমন প্রশ্ন করছে কোনো? মেয়েটা কি পা*গল হয়ে গেল ওর শোকে? ও আসতে কি একটু দেরি করেছে এতটুকু সময়ে বউ অপেক্ষায় থাকত থাকতে শেষে কিনা পা*গল হয়ে গেল। এটা কি মানা যায়?
“আমি তোমার একমাত্র স্বামী আশিয়ান সিকদার অর্ণব। তুমি সেটা ভুলে গেলে বউ? দেখি তো জ্বর টর এলো নাকি?”

অর্ণব আনায়ার কপালে হাত রেখে চেক করলো। না তাপমাত্রা তো স্বাভাবিক। তাহলে বউ এমন উল্টাপাল্টা বকছে কোনো? আনায়া অর্ণবের হাতের বাঁধন ছুটিয়ে রুমে গেল। চিঠিটা এনে অর্ণবের সামনে ধরলো। অর্ণব ভ্রু কুঁচকে চিঠিটা খুলল।
“আপনি কে বলুন তো? আপনার কাছে এই চিঠি এলো কোথা থেকে? সেইদিন আপনার করা সকল কার্যকলাপ চিঠির সাথে মিলে গেল কিভাবে? উত্তর দিন। কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কোনো?”

আনায়া হইপার হয়ে গেছে। অর্ণব এক গ্লাস পানি ওর দিকে এগিয়ে দিল। আনায়া ঢক ঢক করে পুরোটা খেয়ে নিল।
“কি হলো বলুন। কিভাবে এলো আপনার কাছে এই চিঠি?”

অর্ণব আনায়াকে ধরে বিছানায় বসালো।
“শান্ত হও। আমি তোমার সকল প্রশ্নের উত্তর দিবো। আগে ফ্রেশ হয়ে আসি। এরপর শান্ত মাথায় সব কিছু খুলে বলব”

আনায়া সম্মতি দিল। অর্ণব ফ্রেশ হতে চলে গেল। বের হতেই নিচ থেকে ডাক পড়লো খাবার খাওয়ার জন্য। দুজন মিলে খেতে চলে গেল। আনায়া খাওয়া শেষ করে রুমে এসে অর্ণবের জন্য অপেক্ষা করছে। অর্ণব রুমে ঢুকতেই বলে উঠল,
“এখন বলুন”

অর্ণব আনায়ার হাত ধরে ব্যালকনিতে নিয়ে গেল। ব্যালকনিতে রাখা ডিভানে বসল দুজন। অর্ণব আনায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলার শুরু করলো,
“আমি তখন সবে মাত্র ভার্সিটিতে উঠেছি। বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা, একটু আধকুটু রাজনীতি এই মিলেই চলছিল আমার জীবন। একদিন বন্ধুরা মিলে গল্প করতে করতে একটা স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। হটাৎ আমার চোখ আটকে গেল একটা মায়াবতীতে। বাঙালি স্টাইলে লাল শাড়ি পড়া, হাতে লাল রেশমি চুরি। চোখে গাঢ় কাজল। মুখে অল্প প্রসাধোনির ছোঁয়া। সব মিলিয়ে তাকে মায়াবতী লাগছিলো। তাকে এক দেখাতেই তার নাম দিলাম ‘মায়াবতী’। সে আমার সামনে দিয়ে চলে গেল আর আমি ফেলফেল করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ধ্যান ভাঙলো আমার বন্ধুর ধাক্কায়। এরপর আমার শান্তির জীবনে অশান্তি নেমে এলো। চোখের সামনে সেই মায়াবতীর মুখ ভেসে উঠতো। কোনো কাজে মন বসাতে পারতাম না। মাথায় শুধু তাকে নিয়ে ভাবনা কিলবিল করতো। মাঝে মাঝেই তার জন্য সেই স্কুলের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তাকে এক পলক দেখার আশায়। তবে তার দেখা পেতাম না। অতঃপর খোঁজ লাগলাম তার। জানতে পারলাম আমার এক কাজিন সেই স্কুলে পড়ে। কাজিনের সাথে কথা বললাম। সে নাকি কাজিনের ক্লাস মেট। একদিন মাথায় বুদ্ধি এলো তাকে চিঠি লিখার। রীতিমতো চিঠি লিখতে বসে গেলাম। সেভাবে গুছিয়ে লিখতে পারতাম না তবে চেষ্টা করতাম তার নিকট আমার মনের ভাব প্রকাশ করার। চিঠিটা কাজিনের কাছে দিয়ে বলেছিলাম তাকে পৌঁছে দিতে। একটা দুটো করে তাকে চিঠি দিতাম। কাজিনের থেকে শুনেছিলাম আমার চিঠি পড়ে তার মুখে নাকি হাসি ফুটে উঠে। সেদিন নিজেকে অনেক খুশি লাগছিলো। এভাবেই তাকে একতরফা আমার মনের কথা জানিয়ে যাচ্ছিলাম। হটাৎ একদিন খুব জ্বর এলো। জ্বরের প্রকোপে অনেকদিন অসুস্থ ছিলাম। ইচ্ছে থাকলেও তাকে চিঠি দিতে পারিনি। তার নাকি সে সময় অনেক মনে খারাপ ছিলো। তাই অসুস্থ শরীর নিয়েই লিখতে বসেছিলাম। একদিন খুব ইচ্ছে হলো তার অনুভূতি জানার। তাকে বললাম আমি তার অনুভূতি জানতে চাই। ভেবেছিলাম হয়তো তার উত্তর পাবো না। তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে তার ওই নরম হাতের লিখা একটা চিঠি পেলাম। সেদিন নিজেকে অনেক সুখী মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো আমি পেরেছি তার মনে জায়গা করে নিতে। দিন যাচ্ছিলো। আর আমরা চিঠির মাধ্যমে আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করছিলাম। আচমকা একদিন সে চিঠিতে জানালো সে আমার সাথে দেখা করতে চায়। সামনাসামনি আমাকে দেখতে চায়, কথা বলতে চায় আমার সাথে। আমিও তাকে জানিয়ে দিলাম আমি তার সাথে দেখা করতে রাজি। একটু একটু করে এগিয়ে আসল সেই দিন। মনে অল্প স্বল্প ভয়ের আনাগোনা। আমি তৈরি হয়ে তার সাথে দেখা করতে যাব এমন সময় এক বন্ধুর কল এলো সে অসুস্থ। তাকে নিয়ে হসপিটালে দৌড়া দৌড়ি করলাম। মাথা থেকে তখন কিছুক্ষনের জন্য মায়াবতীর কথা বেরিয়ে গেল। যখন মনে পড়ল তখন ছুটে গিয়েছিলাম সেখানে। যেয়ে দেখি মায়াবতী সেখানে নেই। পড়ে খবর নিয়ে জানতে পারি মায়াবতী এসেছিলো। তবে তাকে অন্য কেউ আমি সেজে দেখা দিয়েছে। সেও তাকে চিঠির মানুষ ভেবে নিয়েছে। একবার ভেবেছিলাম মায়াবতীর সামনে যেয়ে সত্যিটা বলে দিব। পর মুহূর্ত ভবলাম মায়াবতী আমায় ভালোবাসনি। আমায় ভালোবাসলে সে অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে পারতো না। তার প্রতি অভিমান হলো। তিব্র অভিমান। দূরে সরে এলাম তার থেকে। তার জন্য বন্ধুত্ব শেষ হলো। চক্রান্তের স্বীকার হয়ে ভার্সিটি ছাড়লাম। এরপর সবার ওপর রাগ করে একে বারে দেশ ছাড়লাম। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর দেশে ফিরলাম। ততদিনে বদলে গেছে অনেক কিছু। দেশে এসে রাজনীতিতে মন দিলাম। ততদিনে মায়াবতীকে প্রায় ভুলে গিয়েছি। ভুলে গিয়েছি বলতে তাকে মনের আড়ালে খুব গোপনে রেখে দিয়েছি। মাঝে মাঝে তাকে তীব্র ভাবে মনে পড়তো। নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে যেত। তবে সামলে নিতাম নিজেকে। বন্ধু বান্ধব সব কিছু থেকে দূরে সরে এসেছিলাম। কয়েকবার খোঁজ করেছিলাম মায়াবতীর তবে পাইনি। হটাৎ একদিন বেস্ট ফ্রেন্ড জোর করলো ওর সাথে দেখা করার। দেখা করে দুজনে কথা বলছিলাম তখন ওর কল এলো। ও কথা বলা শুরু করলো। আকস্নাৎ ওর ফোনে চোখ যেতেই মাথা ঘুরে গেল। সেই মায়াবতী। ওর সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে। মায়াবতী কি তবে ওর কাছের কেউ? কথা শেষ হতেই ওকে প্রশ্ন করলাম,
“যার সাথে কথা বললি সে তোর কে হয়?

“মানে?”

“এই মেয়েটা তোর কে?”

“আমার একমাত্র বোন”

মুহুর্ত ব্যায় না করে সাথে সাথে বন্ধু কে জড়িয়ে ধরেছিলাম সেদিন। এদিকে আবির কিছুই বুঝতে পারছে না। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
“কিছুই বুঝসিস না তাইতো?”

আবির মাথা নেড়ে শায় জানাল।
“আমি যেই মেয়েকে হন্যে হয়ে খুঁজছি সে আর কেউ না তোর একমাত্র বোন। দোস্ত তুই তাড়াতাড়ি বল তোর বোন কোথায় আছে। আমি এখনই ওর সাথে দেখা করতে চাই”

“ও তো এখন দেশে নেই”

“দেশে নেই মানে?

“ও কানাডা গেছে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার জন্য”

সেদিন হতাশ হয়েছিলাম। আবির জিজ্ঞেস করলো,
“ঘটনা কি বলতো?”

ওকে সব কিছু খুলে বললাম। তারপর দুই বন্ধু মিলে সকল রহস্যের জট খোলা শুরু করলাম। একে একে সব প্রশ্নের উত্তর পেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম এবার দেশে আসলেই মায়াবতীকে একে বারে নিজের করে নিবো। যেই ভাবনা সেই কাজ মায়াবতী দেশে ফিরতেই তাকে আমার মনের খাঁচায় বন্দি করে নিলাম”

আনায়ার চোখ ছলছল। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
“আপনিই আমার সেই চিঠির প্রেমিক?”

#চলবে?

#প্রেমের_তাজমহল
#পর্ব৩৫
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

আনায়ার চোখ ছলছল। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
“আপনিই আমার সেই চিঠির প্রেমিক?”

অর্ণব মাথা নেড়ে সায় জানালো। আনায়া সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো অর্ণবের ওই প্রসস্থ বুকে। আঁকড়ে ধরলো অর্ণবকে। অর্ণব নিজেও তার মায়াবতীকে আগলে নিল। আনায়া কান্না করছে। অর্ণব পিঠে হাত রেখে সান্তনা দিলো। আনায়া কেঁদেই যাচ্ছে কাঁন্না থামার কোনো নাম নেই। অর্ণবের টিশার্ট বুঁকের কাছটা ভিজিয়ে ফেলেছে। হেঁচকি উঠে গেছে। তবুও আনায়ার থামার নাম নেই।
“আর কাঁদে না মায়াবতী। তুমি কাঁদলে আমার মনে যে ছুরির আঘাত লাগে। তোমার চোখের অশ্রুরা আমাকে পীড়া দেয়। কাঁন্না থামাও প্লিজ”

“আমার এখন মনে হচ্ছে আমি চিঠির মানুষটাকে ভালোবাসতে পারেনি। আমি পারিনি তাকে চিনতে। আমি কোনো চিনতে পারলাম না আপনাকে এমপি সাহেব ? কোনো? আমার জন্যই এতগুলো দিন আপনাকে আমাকের দুজনকেই কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি যদি সেদিন নিশানকে বিশ্বাস না করতাম তাহলে আমাদের দিনগুলো অন্য রকম হতে পারতো। আমাদের একটা মিষ্টি গল্প হতো। সব কিছুর জন্য আমি দায়ী, আমি”

অর্ণব আনায়াকে সান্তনা দিয়ে বলল,
“এভাবেই নিজেকে দায়ী করো না। তখন তুমি খুব ছোটো ছিলে। আবেগের বয়স ছিলো। তাই কোনটা ভুল কোনটা সঠিক সেটা বুঝতে পারোনি। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। এটা কোনো বেপার না। ভাগ্যে যা থাকবে সেটা হবেই। হয়তো আমাদের ভাগ্যে এটাই লিখা ছিলো। আফসোস করো না। শেষ পর্যন্ত যে আমরা এক হতে পেরেছি এটাই অনেক”

আনায়া তবুও থামার মেয়ে না। হেঁচকি তুলে কেঁদেই চলেছে।
“আমার আফসোস হচ্ছে এই জন্য আমি কোনো আপনাকে আপনার মতো করে ভালোবাসতে পারলাম না। আপনার মতো করে চাইতে পারলাম না। কোনো আপনাকে চিনতে পারলাম না,কোনো?”

“আফসোস করো না মায়াবতী। আগে ভালোবাসাতে পারোনি তো কি হয়েছে এখন বাসবে। আমার মতো করে না, তুমি তোমার মতো করে আমাকে ভালোবাসবে”

আনায়া চুপচাপ শুনলো অর্ণবের কথা। কোনো উত্তর করলো না। অর্ণব পুনরায় বলল,
“এখন প্লিজ কান্না থামাও মায়াবতী। তুমি কান্না না থামালে আমিও কিন্তু কান্না শুরু করবো, তখন কিন্তু তুমি আমাকে থামাতে পারবে না”

আনায়া অর্ণবের কথায় কান্নারত অবস্থায় ফিক করে হেসে দিলো। মানুষটা পরেও। এইযে সিরিয়াস মুহূর্তেও উল্টোপাল্টা বকে ওর মন ভালো করার চেষ্টা করছে, ওকে বুঝাচ্ছে। এগুলো আনায়ার মনে প্রশান্তি দেয়। আনায়া কান্না থামিয়ে দিলো। কিন্তু এখনো হেঁচকি উঠছে। অর্ণব রুম থেকে পানি এনে দিলো। আনায়া ঢক ঢক করে সম্পূর্ণ পানি শেষ করে অর্ণবের হাতে খালি গ্লাস দিলো। অর্ণব গ্লাস রেখে এসে আনায়ার পাশে বসলো। আনায়া দূর আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্ণব এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ওর ব্যক্তিগত চাঁদের দিকে। নিভৃতে কেটে গেল কিছু সময়।
“তুমি কি জানো মায়াবতী আকাশের ওই চাঁদ আর তোমার মাঝে মিল আছে?”

আনায়া চাঁদের থেকে দৃষ্টিতে সরিয়ে অর্ণবের দিকে ফিরল। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কিভাবে?”

“চাঁদের মাঝে মুগদ্ধতা আছে, আমি তোমাতে মুগদ্ধ।
চাঁদ আলোকিত সূর্যের আলোয়, তুমি আলোকিত আমার ভালোবাসায়”

আনায়া শুনলো কিন্তু কিছু বললো না। পুনরায় মন দিলো চন্দ্রবিলাসে। অর্ণবের হিংসে হচ্ছে। এইযে বউ ওকে না দেখে চাঁদকে দেখছে।
“আমি কিন্তু জেলাস ফিল করছি?”

“কোনো?”

“এই যে হ্যান্ডসাম একটা জামাই পাশে রেখে তুমি চাঁদকে দেখছো। কোথায় ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে, হুটহাট আদর করে দিবে। তা না করে চন্দ্র বিলাস করছো। এটা কিন্তু অন্যায়, ঘোর অন্যায়”

“এই অন্যায়ের শাস্তি কি?”

“শাস্তি খুবই ভয়ানক। ভয়াবহ”

“শুনি সেই ভয়ানক, ভয়াবহ শাস্তির কথা”

“শাস্তি হিসেবে তোমাকে সারাজীবন বন্ধি হয়ে থাকত হবে অর্ণব সিকদারে হৃদয়কোঠোরে”

আনায়া ফিক করে হেসে দিলে। অর্ণব তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
“শাস্তি মাথা পেতে নিলাম”

রাত বাড়ছে। অর্ণব হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত একটা বেজে চব্বিশ মিনিট। আনায়ার হাত ধরে ওকে উঠালো।
“রাত অনেক হয়েছে ঘুমাতে চলো”

রুমে প্রবেশ করলো দুজনে। আনায়া অর্ণবকে বলল,
“আপনি বিছানায় যান আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি”

অর্ণব বিছানার এক পাশে শুয়ে আছে। আনায়া যেয়ে অর্ণবের বুঁকের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। অর্ণব মুচকি হাসলো। আঁকড়ে ধরলো আনায়ার কোমর। কাছে টেনে নিল আরো খানিকটা। কপালে এঁকে দিলো ভালোবাসার পরশ। দুজন একত্রে পারি দিলো নিদ্রার শহরে।

আনায়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে দেখলো অর্ণব রাতের ন্যায় এখনো ওকে ধরে রেখেছে। আনায়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসল। নিশ্চুপে ছুঁয়ে দিলো অর্ণবের ললাট। অর্ণব জেগে থাকলে লজ্জা পেত তাই ঘুমন্ত অবস্থা ছুঁয়ে দিলো ভালোবাসার মানুষটাকে।বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হতে চলে গেল।

অর্ণব ঘুমের ঘোরে পাশে হাতড়িয়ে আনায়াকে খুজলো। কিন্তু না পেয়ে চোখ খুলে দেখলো সারা ঘর ফাঁকা। উঠে বসল ঘড়িতে সকাল আটটা বাজে। ফ্রেশ হয়েই হাক ছাড়লো,
“আনায়া, এই আনায়া। কোথায় তুমি? একটু এদিকে আসো তো। আমি আমার ঘড়িটা খুঁজে পাচ্ছি না। খুঁজে দিয়ে যাও”

আনায়া মেহনাজ বেগমের সাথে নাস্তা বানাচ্ছিলো। অর্ণবের এমন হাক শুনে লজ্জা পেল। পাশে শাশুড়ি দাঁড়িয়ে তার সামনে থেকে এখন কিভাবে যাবে? আর কি বা বলবে তাকে? আপনার ছেলে আমাকে ডাকছে আমি যাই মা, এভাবে? ছি ছি। আনায়া পারবে না ওর যে খুব লজ্জা করবে। মেহনাজ বেগম বোধ হয় বুঝলো আনায়ার পরিস্হিতি। নিজে থেকেই বলল,
“আনায়া যাও তো দেখে এসো অর্ণব কোনো ডাকছে”

আনায়া ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে বলল,
“জি মা যাচ্ছি”

আনায়া রাগে গজ গজ করতে করতে রুমে ঢুকলো। রুমে ভিতরের দৃশ্য দেখতেই সাথে সাথে উল্টো দিক ঘুরে গেল।
“আপনার কি লজ্জা নেই? খালি গাঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নির্লজ্জ লোক”

“আজব এখানে লজ্জার কি হলো? আমার ঘর, আমার বিয়ে করা বউ। তার সামনে আমি খালি গাঁয়ে থাকলেই কি আর কাপড় পড়ে থাকলেই বা কি?”

“আপনার কিছু না হলেও আমার অনেক কিছু”

“কথা বাদ দিয়ে এদিকে এসো”

“আপনি আগে পাঞ্জাবী পড়ে নেন তারপর আসবো”

“আমি নিজে নিজে পাঞ্জাবী পড়তে পারবো না। এতকাল নিজে পড়ে এসেছি আজকে থেকে তুমি পড়িয়ে দিবে”

“এ্যা”

“এ্যা না হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি এসো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে”

আনায়ার আর কি করার। চোখ বন্ধ করে অনুমান করে যেতে লাগলো। এক পর্যায়ে ধাক্কা খেল অর্ণবের বুঁকের সাথে।
“আমি কোনো বাঘ বা ভাল্লুক নই যে তোমাকে খেয়ে ফেলবো। চোখ খুলো আর তাড়াতাড়ি পাঞ্জাবী টা পড়িয়ে দাও”

আনায়া চোখ মেলে চাইলো। অর্ণবের ধবধবে ফর্সা উন্মুক্ত বুক। আনায়া চোখ সরিয়ে নিল। ওর বুক ধুপক ধুপুক করছে। হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা হাতে অর্ণবকে পাঞ্জাবী পড়িয়ে দিয়েই পালাতে চাইলো। অর্ণব খপ করে ওর হাত ধরে ফেলল,
“কোথায় পালাচ্ছ? এখনো তোমার কাজ শেষ হয়নি”

আনায়া ঢক গিললো। এই লোক ওকে দিয়ে আর কি কি করাবে কে জানে। আনায়া অর্ণবের দিকে ঘুরলো,
“পাঞ্জাবির বোতাম আটকে দাও। তারপর চুলগুলো সুন্দর করে মুছে আঁচড়ে দিবে”

আনায়া দাঁড়িয়ে আছে ওর কোনো নড়চড় নেই।
“কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কোনো? তাড়াতাড়ি করো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে”

আনায়া ভদ্র মেয়ের মতো পাঞ্জাবী বোতাম আটকে দিলো। টাওয়াল নিয়ে সুন্দর করে চুলগুলো মুছে আঁচড়ে দিলো। আনায়া মুখ ফুলিয়ে কাজগুলো করছে। অর্ণব ওর মুখ ফুলানো দেখে মিটিমিটি হাসছে। আনায়া কাজ শেষ করে যাবে এমন সময় ওর চোখে পড়লো ঘড়ির দিকে। ড্রেসিং টেবিলের সামনেই ঘড়িটা রাখা আছে। ও ঘড়িটা হাতে নিয়ে বলল,
“এই তো এখানে আপনার ঘড়ি”

“জানি”

“তাহলে আমাকে ওভাবে হাক ছেড়ে ডাকলেন কেনো?”

“ওটা তো শুধু বাহানা ছিলো”

অর্ণব আনায়ার হাত থেকে ঘড়ির নিয়ে পরে শিস বাজাতে বাজাতে রুম থেকে চলে গেল। পিছন থেকে আনায়া বলে উঠল,
“অ*সভ্য লোক”

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। )