প্রেমের তাজমহল ২ পর্ব-০১

0
9

#সূচনা_পর্ব
#প্রেমের_তাজমহল_২
#আফিয়া_আফরোজ_আহি

“আপনার মতো চরিত্র*হীন, গু*ন্ডা, মা*স্তান, লাফা*ঙ্গাদের মারপিট করে বেড়ানো এমপিকে আমি আজীবনে বিয়ে করবো না। লাগলে সারাজীবন কুমারী থাকবো তাও আপনাকে না বিয়ে করবো না”

ব্যালকনির রেলিংয়ে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে সাফেদ রঙা পাঞ্জাবী গাঁয়ে এক যুবক। রমণীর রণ মূর্তি চিত্তে বলা আক্রোশ পূর্ণ শব্দ গুলো যেন তার কর্ণকুহরে পৌঁছায়নি। তার ভাবভঙ্গি দেখে সেটাই মনে হচ্ছে। আক্রোশ নিয়ে একপ্রকার চি*ল্লিয়ে কথা গুলো বলে থামলো তার সামনে দাঁড়ানো আনায়া নামক রমণী। কিন্তু অবাক হলো এমপি সাহেবের এমন শান্ত রূপ দেখে। মানুষটার তো এতক্ষনে রাগে গট গট পায়ে কক্ষ ত্যাগ করার কথা ছিলো। কিন্তু তা না হয়ে ঘটনা বিপরীত দিকে দেখে আনায়া কিছুটা অবাক হলো তবে বুঝতে দিলো না। অর্ণব ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে আনায়ার দিকে। আনায়া আচমকা অর্ণবকে তার দিকে এগোতে দেখে ভরকে গেল। সরে যেতে নিলে সামনে দাঁড়ানো অর্ণব নামক পুরুষটা তা হতে দিলো না। রমণীর দুপাশে ব্যালকনির রেলিংয়ে হাত দিয়ে আটকে ফেলল। আনায়ার সারার জায়গা নেই। অর্ণব কিছুটা এগিয়ে হুট্ করে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে নিলো আনায়াকে। অতঃপর সুধালো,
“আমি কি তোমাকে এভাবে জরিয়ে ধরেছি?”

আনায়া কিছু বুঝতে পারলো না। না বুঝেই মাথা নেড়ে নাকোচ করলো। এরপর অর্ণব ঝুঁকে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো আনায়ার কপোলে।
“আমি কি তোমাকে এভাবে কিস করেছি?”

এবারও রমণী ক্যাবলাকান্তের ন্যায় মাথা নেড়ে নাকোচ করলো। অর্ণব নামক পুরুষটির ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো তির্যক হাসি। সেই হাসি বজায় রেখেই এগিয়ে গেলে রমণীর ওষ্ঠের দিকে। রমণী হয়তো বুঝে ফেলল অর্ণব নামক পুরুষের ফন্দি। ফট করে হস্ত দ্বারা ঢেকে ফেলল নিজের অধরজোড়া। অর্ণব তার কান্ড দেখে হেসে ফেলল। হাসি বজায় রেখেই জিজ্ঞেস করল,
“কিস করেছি তোমার লিপে?”

আনায়া একই ভঙ্গিতে ‘না’ বোঝালো। এবার অর্ণবের ঠোঁটের কোণে থাকা হাসি আরো দীর্ঘ হলো।
“তাহলে চরিত্র*হীন বললে কেন? চরিত্র*হীন রা আর যাই হোক বদ্ধ ঘরে সুন্দরী রমণীর সামনে সুপুরুষ বেসে থাকে না”

আনায়া কোনো জবাব দিলো না। যেন সে মৌনতা পালন করছে। অর্ণব শান্ত ভঙ্গিতে তাকালো আনায়ার চোখে। চোখে চোখ পড়তেই কেমন যেন অনুভূতি হলো। অদ্ভুত এক অনুভূতি। চোখে চোখ রেখেই দৃঢ় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“ঘৃ’ণা করো আমায়? নাকি আমার পেশাকে? আমি এমপি বলেই কি তোমার এতো সব বাহানা?”

একটু সময় নিলো আনায়া অতঃপর মৃদু স্বরে বলে উঠলো,
“রাজনীতি করা মানুষ আমি ঘৃ’ণা করি। রাজনীতি করা নেতা কখনো সুপুরুষ হতে পারে না। তাঁদের চরিত্র হয় নর্দমার ময়লা পানির মতো”

“সবাই এক না মেয়ে! সব জায়গা ভালো খারাপ আছে”

“তবে রাজনীতিতে ভালোর অস্তিত্ব নেই”

“এতটা ঘৃ’ণা রাজনীতি?”

“আপনার ধারণার চেয়েও বেশি”

“থাকলেও আমার কিছু করার নেই। তোমাকে রাজনীতি করা এই মানুষটাকেই বিয়ে করতেই হবে। তার সাথেই সংসার করতে হবে”

“কোনোদিনও না। প্রয়োজনে ভিখারি কোনো ছেলেকে বিয়ে করবো তাও আপনাকে না”

“ও কথা মাথাও এনো না মেয়ে! তোমার আশেপাশে অন্য কেউ এলে তাকে সরাতে এই আশিয়ান সিকদার অর্ণবের ২ মিনিট ও লাগবে না। তাই ভালোয় ভালোয় বিয়েতে রাজি হয়ে যাও এটাই ভালো হবে”

“দেখুন মিস্টার…”

অর্ণব আনায়ার কথায় ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসলো। আনায়াকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“দেখা দেখির সময় এখনো পড়ে আছে। আপাতত বিয়েতে রাজি হলেই হবে”

কথাটা বলে আনায়ার দিকে তাকিয়ে দুস্টু হাসি দিয়ে চলে গেল। পিছন থেকে আনায়া বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
“অ*সভ্য এমপি”

ততক্ষনে অর্ণব এগিয়ে গেছে অনেকটা। রুমের দরজার কাছাকাছি। আনায়ার কথা শুনে পিছন ফিরে হেসে দরজা খুললো। এমন সময় হুড়মুড় করে নিচে পড়ে গেলে মিহি আর অর্ষা। মিহি নিচে তার ওপর অর্ষা। অর্ষা ওপরে থাকায় উঠে দৌড় কাকে বলে! মিহি কোনোমতে উঠে হিহি করে হেসে বলল,
“বড় মা ডাকতে পাঠিয়েছিলো। নিচে যেতে বলেছে”

এই বলে ও দিলো ভোঁ দৌড়। আনায়া নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড আর বোনের কাহিনী দেখে লজ্জিত। বেস্ট ফ্রেন্ড কে দেখতে আসার খুশিতে অর্ষা লাফিয়ে লাফিয়ে চলে এসেছে। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ার সুফল আরকি । এরা যে আড়ি পাততে এসেছে এতে কোনো সন্ধেহ নেই আনায়ার। অর্ণব গট গট পায়ে চলে গেল। আনায়া সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশ পানে তাকালো। তার কোনো কালেই রাজনীতি পছন্দ ছিলো না। রাজনীতি যেন তার শত্রু। দুচোখে দেখতে পারে না সে রাজনীতি। আর রাজনীতি করা মানুষের কথা আর কি বলবো! আনায়ার ধারণা মতে রাজনীতি করা সকল মানুষ অসাধু, আর পুরুষ হলে তো কথাই নেই। কয়েক দিন আগেই নিউজ আর্টিকেলে পড়েছিলো এক নেতার কু’কর্মের কথা। তারপর থেকে ভেবেই নিয়েছে জীবনে আর যাই হোক রাজনীতিবিদ বিয়ে করবে না। কিন্তু শেষমেষ তার কপালে যে কি আছে কে জানে!
——

আশরাফ খান এবং আশালতা বেগমের একমাত্র আদরের কন্যা সেহরিশ আনায়া। অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী আনায়া। সবে কয়েক দিন হলো কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। আনায়ার বড় দুইজন ভাই রয়েছে। আনায়ার বড় ভাই আব্দুল্লাহ খান আয়ান। আয়ানের স্ত্রী নীলিমা আর তাঁদের চার বছরের কন্যা নাদিরা। ছোটো ভাই আদ্রিয়ান খান আবির। আনায়াদের যৌথ পরিবার। আশরাফ সাহেবরা দুই ভাই, তার ছোটো ভাই আকরাম খান। আকরাম খানের স্ত্রী মালিহা বেগম। তাঁদের দুই ছেলে মেয়ে মাহির এবং মিহি। মাহির অনার্স চতুর্থ বর্ষে এবং মিহি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আশরাফ সাহেব, আকরাম সাহেব, আয়ান এবং আবির সবাই মিলে ব্যবসা দেখা শোনা করে।

ইমতিয়াজ সিকদার এবং মেহনাজ বেগমের একমাত্র পুত্র আশিয়ান সিকদার অর্ণব। তবে অর্ণবের একটা ছোটো বোন অহনা। ইমতিয়াজ সিকদাররা তিন ভাই বোন। ছোটো ভাই ইলিয়াস সিকদার তার স্ত্রী জেসমিন বেগম। তাঁদের দুই ছেলে এক মেয়ে জারিফ, জিহাদ, জিয়া। ইমতিয়াজ সাহেবের একমাত্র বোন রেহানা বেগম। তার একমাত্র মেয়ে লাবণ্য। অর্ণবের দাদা ইশতিয়াক সিকদার ছিলেন একজন তুখোড় রাজনীতিবিদ। সেই সূত্রে অর্ণবের বাবাও রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু অর্ণবের চাচা রাজনীতিতে না জড়িয়ে নিজের শখের পেশা ডাক্তারি বেছে নিয়েছেন। অর্ণবের ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল দাদা আর বাবার মতো রাজনীতি করবে। রাজনীতি তার ভালোবাসা। রাজনৈতিক পরিবার হওয়ায় রাজনীতি যেন তার রক্তের সাথে মিশে গেছে। তাই তো বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে এসে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে। এইতো কয়েক দিন আগে হওয়া নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছে।
——-

আনায়া বসে আছে নিজের রুমে।। তার কাছে সব কিছু কেমন বিরক্ত লাগছে। অর্ণবরা চলে গেছে সেই বিকেলে। বিকেলে গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে এখন রাত। এক মনে সিলিংয়ের পানে তাকিয়ে কি যেন ভেবে চলেছে। ওর ভাবনার মাঝেই আগমন হলো অর্ষা’র। অর্ষা এসে ধপাস করে শুয়ে পড়লো আনায়ার পাশে। আনায়া কিছু বললো না। অর্ষা উৎসাহিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“জিজু কেমন লাগলো দোস্ত?”

“ভালো না”

অর্ষা ভ্রু কুঁচকে নিলো। চোখ ছোট ছোটো করে আনায়ার দিকে তাকলো।
“রাজনীতি করে বলে?”

“তুই তো জানিস ইয়ার আমি রাজনীতি আর রাজনীতি করা মানুষ দুটোর একটাও দেখতে পারি না!”

‘কিন্তু আনায়া এটা তোর ভুলে ধারণা সবাই এক হয় না”

“হয়তো!”

অর্ষা সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে দীঘিশ্বাস ফেলল। এই মেয়েকে বুঝিয়ে লাভ নেই। একবার যখন বলেছে তো বলেছে। একে হাজার বার বুঝালেও সেই একই কথা বলবে। অর্ষা হতাশ কণ্ঠে বলল,
“আমার মানুষটাকে দেখে খারাপ মনে হয়না। এর আগেও তো ভাইয়াকে অনেক বার দেখেছি। কখনোই তাকে খারাপ মনে হয়নি। বাকিটা তোর ইচ্ছে”

অর্ষা উঠে চলে গেলে। আনায়া একবার ওর যাওয়া দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে ফের তাকালো সিলিংয়ে। ভাবনায় আসছে হাজারো প্রশ্ন। তবে আনায়ার মাঝে উত্তর খোঁজার কোনো প্রয়াস নেই।
চলবে।

(আপনাদের রিকোয়েস্ট এ সিজ্ন-২ শুরু করলাম। । ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)