#প্রেমের_তাজমহল_২
#অন্তিম_পর্ব
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
স্রোতের গতিতে সময় কেটে যাচ্ছে। সবাই সবার পার্সোনাল জীবনে ব্যাস্ত। আনায়ার পড়াশোনা, সংসার, বিকেলে অহনার সাথে আড্ডা, অর্ণবের সাথে খুনসুটি মিলিয়ে দিন কাল ভালোই যাচ্ছে। সামনের মাসে নির্বাচন। অর্ণব নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যাস্ত। তবুও আনায়াকে সময় দিতে ভুলছে না। একবার ব্যাস্ততায় বউ শশুর বাড়ি গিয়েছে। আর কখনো সুযোগই দিবে না বউকে রাগ করে বাবার বাড়ি যাওয়ার। ইদানিং আনায়ার শরীর ভালো যাচ্ছে না। মাথা ঘুরাচ্ছে, হুট্ হাট বমি পাচ্ছে, শরীর দুর্বল। অর্ণব ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে আনায়া ইচ্ছে করেই যায়নি। বলেছে এমনি ঠিক হয়ে যাবে। অর্ণব অনেক বার জোরাজুরি করেছে তবে বার বার আনায়ার জেদের কাছে হেরে গেছে। মেয়েটা ইদানিং বড্ড জেদি হয়ে গেছে। কিছু বললে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। অর্ণব তাই বেশি কিছু বলেনি।
শুক্রবার দিন হওয়ায় সবাই বাসায় আজকে। অর্ণব, ইমতিয়াজ সাহেব, অহনা সবাই আজকে বাসায়। অর্ণবদের বাড়িতে আয়োজন চলছে। আনায়াদের বাড়ির সবার আজকে দুপুরে অর্ণবদের বাড়িতে দাওয়াত আছে। মেহনাজ বেগম সহ দুজন সার্ভেন্ট মিলে রান্না করছেন। আনায়াও তাঁদের সাথে সাহায্য করছে। মেহনাজ বেগম বার বার আনায়াকে আসতে মানা করেছে কিন্তু কে শোনে কার কথা! মেহনাজ বেগম বললেন,
“আনায়া কেটে রাখা সবজির বাটি টা দে তো মা”
“দাঁড়াও দিচ্ছি আম্মু”
আনায়া কেটে রাখা সবজির বাটি মেহনাজ বেগমকে দিবে এমন সময় মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। আনায়া পড়ে যাওয়ার আগে পাশে থাকা কেবিনেট ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো। মেহনাজ বেগম এগিয়ে এসে বললেন,
“কিরে কি হলো? খারাপ লাগছে?”
“মাথাটা ঘুরে উঠলো”
“এই জন্যই বলি ঠিক মতো খাবার খাঁ। কিন্তু তু্ই শুনিস্ আমার কথা? দাঁড়া অর্ণবকে বলবো ঘাড়ে ধরে তোকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে। দিন দিন ফাঁকিবাজ হয়ে যাচ্ছিস”
মেহনাজ বেগম আনায়াকে রুমে পাঠিয়ে দিলেন। অর্ণব ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বিছানায় বসে আছে। কি যেন করছে? আনায়াকে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হলো চলে এলে যে? রান্না করার শখ এতো তাড়াতাড়ি মিটে গেল?”
আনায়া মুখ ভার করে বলল,
“আম্মু পাঠিয়ে দিয়েছে”
অর্ণব হেসে উঠলো। কোলের ওপর থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে রাখলো। এক টানে আনায়াকে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। ওর কানে ফিসফিস করে বলল,
“আম্মুও বুঝে গেছে ছেলে বাসায় আছে তাই বউমার ছেলের কাছাকাছি থাকা দরকার নাহয় এ জীবনেও নাতি নাতনির মুখ দেখতে পারবে না। কিন্তু আফসোস তুমি বুঝলে না মেয়ে, তুমি বুঝলে না”
অর্ণবের বেশরম কথা বার্তায় আনায়ার গাঁ জ্বলে উঠলো। এই লোকটার যত অ*সভ্য কথা বার্তা। লাগাম ছাড়া বেডা মানুষ! আনায়া অর্ণবের বুকে চাপর দিয়ে বলল,
“অ*সভ্য কথা বার্তা না বললে হয় না?”
অর্ণব অবাক ভঙ্গিমায় বলল,
“আমি কোথায়, কখন অ*সভ্য কথা বললাম?”
“মাত্র কি বললেন?”
“বললাম ইচ্ছে করছে….”
অর্ণব আনায়ার কানে কানে কিছু একটা বলল। আনায়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ওর কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে। মৃদু স্বরে বলল,
“অ*সভ্য পুরুষ”
“আমি যদি অ*সভ্যই হতাম তাহলে এতদিনে তোমার কোলে অন্তত ৪-৫ জন থাকতো। এভাবে ছাড়া হাত পায়ে ঘুরে বেড়াতে পারতে না। তবে খুব শীঘ্রই ব্যাবস্থা করছি ওয়েট”
আনায়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। বেসরম লোকটার মুখে তো বিন্দু মাত্র লাগাম নেই। উল্টো ওকে লজ্জা পেতে হচ্ছে। আনায়া মনে মনে অর্ণবকে ডিটার্জেন্ট ছাড়াই ধুয়ে ফেল ফেলছে।
——
সবাই একসাথে খেতে বসেছে। আনায়া বসতে না চাইলেও মেহনাজ বেগম ওকে জোর করে বসিয়ে দিয়েছে। আনায়া খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে খাচ্ছে না। পাশ থেকে অর্ণব বলে উঠলো,
“কি হলো খাচ্ছ না কেন? কোনো সমস্যা?”
আনায়া একবার সবার দিকে তাকালো। মিহি আর অহনা দুই বজ্জাত ওদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আনায়া মাথা নাড়িয়ে নাকোচ করলো। গাঁ কেমন গোলাচ্ছে। খেতে ইচ্ছে করছে না। খাবার থেকেও কেমন গন্ধ আসছে। আনায়া তাও জোর করে কয়েক লোকমা মুখে দিলো। সবাই খাবার খাচ্ছে। আনায়া চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো। মুখ চেপে এগিয়ে গেল ডাইনিং রুমের পাশের ওয়াশরুমে। গড় গড় করে বমি করে দিলো। আনায়া কে উঠে যেতে দেখে অর্ণবও ওর পিছু পিছু গেল। ওয়াশরুমে পা রাখতেই খেয়াল করলো আনায়া বেসিনে বমি করছে। অর্ণব এগিয়ে গিয়ে আনায়াকে ধরলো। মেয়েটা অনর্গল বমি করেই যাচ্ছে। অর্ণব আনায়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করালো। পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। যা খেয়েছে সব বমি করে শান্ত হলো আনায়া। ক্লান্ত শরীরে নেতিয়ে পড়ছে। অর্ণব পানি ছেড়ে হাত ধুয়ে নিলো। এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো আনায়াকে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ওকে নিয়ে যেতে নিলে মেহনাজ বেগম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“আনায়ার কি হয়েছে? তু্ই ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? মেয়েটা কিছু তো খেলো না”
“তোমার আদরের বউমা বমি করে যা পেটে ছিলো সব ফেলেছে। কদিন ধরে শরীর ভালো না। ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে সে যাবে না। এখন বমি করে ঢোলে পড়ছে। আমি ওকে রুমে নিয়ে যাচ্ছি”
তাপসকে বলল,
“ডক্টর আংকেল কে ফোন করে আসতে বল”
“জি ভাই”
অর্ণব আনায়াকে নিয়ে চলে গেল। আনায়া বিছানায় শুয়ে আছে। আশালতা বেগম, মেহনাজ বেগম, নীলিমা আনায়ার পাশে বসে আছে। অর্ণব পায়চারি করে যাচ্ছে। আনায়ার মুখ মলিন হয়ে গেছে। কিছুক্ষনের মাঝে ডক্টর চলে এলো। ডক্টর আনায়ার চেক আপ করছে। অর্ণব চিন্তিত মুখে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে আছে। ডক্টরের মুখ গম্ভীর।
“কোনো সমস্যা আঙ্কেল? বড় কিছু হয়েছে কি?”
ডক্টর মেহনাজ বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,
“মিসেস সিকদার মিষ্টির ব্যাবস্থা করুন”
পাশে দাঁড়ানো অহনা জিজ্ঞেস করে বসলো,
“আঙ্কেল মিষ্টি কেন? ভাবির কি সুগার ফল করেছে?”
অহনার বোকা কোথায় ঘরে থাকা সবাই হেসে দিলো। ডক্টর হাসতে হাসতে বলল,
“বোকা মেয়ে তুমি ফুপ্পি হতে চলেছো”
সবাই অর্ণব আনায়াকে অভিনন্দন জানিয়ে চলে গেল। ওদের একা ছেড়ে দিলো। সিকদার বাড়িতে খুশির বন্যা। পরিবারে নতুন সদস্য আসছে বলে কথা। ইমতিয়াজ সাহেব পারে না পুরো এলাকা মিষ্টিতে ভরিয়ে ফেলেন।
আনায়া নত মুখে বসে আছে। ওর সামনে অর্ণব বসে। আনায়ার লজ্জা, সুখ, কান্না সব মিলিয়ে মিশ্র অনুভুতি হচ্ছে। তবে অর্ণব নির্বাক ভঙ্গিতে বসে আছে। ওকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আনায়ার চিন্তা হলো। অর্ণব কি তাহলে খুশি হয়নি? আনায়া ভয় ভয় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“এমপি সাহেব! আপনি কি খুশি হননি? রাগ করেছেন আমার ওপর?”
আনায়ার কথায় অর্ণবের ধ্যান ভাঙলো। জিজ্ঞেস করলো,
“কিছু বললে?”
আনায়া পুনরায় একই কথা বলল। অর্ণব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার এমনটা কোনো মনে হলো?”
“এই যে তখন থেকে আপনি মুখটা কেমন গম্ভীর করে রেখেছেন? মুখে হাসি নেই”
অর্ণব আনায়ার চোখে চোখ রাখলো। অতঃপর বলা শুরু করলো,
“তুমি জানো না আজকে আমি কতটা খুশি? আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না তার আগমনে আমি কতটা খুশি হয়েছি। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না এতক্ষন। তাই ওভাবে বসে ছিলাম। তুমি আমার জীবনের একমাত্র পূর্ণতা বউ। তুমি আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে সুখকর অনুভূতিটা দিয়েছো। ছোটো ছোটো পায়ে সে আমার কাছে এগিয়ে আসবে। তার ছোটো ছোটো হাত, পা, ছোট্ট শরীর। ভাবলেই মনে সুখ এসে দোলা দেয়। আলতো কণ্ঠে আমাকে বাবা বলে ডাকবে এগুলো ভাবতেই আমার চোখে অশ্রু আসে ধরা দেয়। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে এই সুখের সাথে পরিচয় করানোর জন্য। ভালোবাসি বউ, অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে”
অর্ণব আনায়াকে জড়িয়ে ধরলো। আনায়াও অর্ণবের পিঠে হাত রাখলো। জড়িয়ে ধরে বলল,
“ভালোবাসি অ*সভ্য এমপি”
———
কেটে গেছে পাঁচটা বছর,
সিকদার বাড়ির ড্রয়িং রুম জুড়ে দৌড় দৌড়ি করছে ছোট্ট এক রাজ কুমার। মুখে লেগে আছে তার খিল খিল হাসি। হাসির ঝলকে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। আনায়া ছেলের পিছু পিছু খাবার নিয়ে ঘুরছে। বাড়িতে ভর্তি মেহমান গিজ গিজ করছে। তাঁদের ভিড়ে ছেলে দৌড়ে চলেছে। আনায়ার নাজেহাল অবস্থা। রাজ পুত্র দৌড়াচ্ছে এমন সময় কেউ আলতো হাতে তাকে কোলে তুলে নিলো। আনায়া ছেলের পিছু যেতে গিয়ে থেমে গেল।
“আপনার আসার সময় হলো? এই ধরুন খাবার আর ছেলে তো আপনার কোলেই আছে। এখন বসে বসে ছেলেকে খাওয়ান”
“তুমি কোথায় যাচ্ছ?”
“আমি খাওয়াতে পারবো না। আমার মেলা কাজ পড়ে আছে। আমি যাচ্ছি”
আনায়া খাবার অর্ণবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল। অর্ণব বেচারা ফেঁসে গেছে। ছেলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টালো। অর্ণবের ভঙ্গিমা দেখে ছেলের কি হাসি! অর্ণব তাকিয়ে রইলো মিষ্টি সেই হাসির পানে। ছেলেটা দুস্টু ওর মতো হলো দেখতে একদম মায়ের মতো হয়েছে মায়াবী। একদম মায়ের মতো গোল গোল চোখ, ফোলা ফোলা গাল, মায়াবী চোখ। অর্ণব ছেলেকে খাওয়াতে বসে পড়লো।
সিকদার বাড়ি সাজে উঠেছে বিভিন্ন রঙে। অর্ণব সিকদারের ছোটো বোনের বিয়ে বলে কথা সাজ না হলে চলে? আনায়া এদিকে সেদিক ছুটো ছুটি করছে। একমাত্র ননদের বিয়ে। অহনা আবার বায়না ধরেছে আনায়া ছাড়া কারো হাতে সে সাজবে না। আনায়া শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলল,
“অহনা তুমি তো মেকআপ আর্টিস্টের কাছে সাজতে পারতে”
“উহু আমি তোমার হাতেই সাজবো। তুমি তোমার ভাইয়ের মন মতো করে সাজিয়ে দিবে। নাহয় খ*বিস লোকটার আবার পছন্দ হবে না। বলবে এতো মেকআপ করেছো কেন?”
আনায়া মশকরা করে বলল,
“পে*ত্নী সাজিয়ে দেই”
“দেও। হার্ট অ্যাটাক করলে তোমার ভাই করবে।আমার কি?”
“তবে রে বিচ্ছু মেয়ে”
আনায়া অহনা দুজনেই হেসে দিলো। দুজন ননদ ভাবি না যেন দুই বোন। আনায়া অহনাকে সাজাচ্ছে এমন সময় জিয়া কোলে করে অর্ক কে নিয়ে এলো। আনায়া অর্ণবের ছেলে “অয়ন সিকদার অর্ক”। অর্ক হাত বাড়িয়ে দিলো অহনার কাছে যাওয়ার জন্য। অহনা অর্ক কে কোলে নিয়ে গালে চুমু খেল। অর্ক চোখ বড় বড় করে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,
“মাম্মা দেখো মামনিকে কতো সুন্দর লাগছে। একদম বউ বউ লাগছে”
“মামনি তো বউই, তোমার মামুর বউ। একটু পর মামু এসে মামুনিকে নিয়ে যাবে”
আনায়ার কথা শুনে অর্ক অহনার গলা জড়িয়ে ধরলো। বলল,
“উহু না। আমার মামনিকে কেউ নিতে পরবে না। মামুও নিতে দিবো না”
“মামু তো তাহলে কান্না করবে আব্বাজান?”
“মামু কান্না করলে আমার চকলেট থেকে ওকে একটা চকলেট দিয়ে দিবো। তাও আমার মামনিকে দিবো না”
অর্কর কথা শুনে রুমে থাকা সবাই হেসে দিলো। আনায়া আর কি বলবে? ও অহনাকে সাজানোতে মন দিলো। অর্ক অহনার কোলে বসে আছে। আনায়া কতো করে বলল অহনার কোল থেকে নামতে। ছেলের এক কথা সে তার মামনিকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। অহনাও বাঁধা দিলো। অর্ক হটাৎ প্রশ্ন করে বসলো,
“মাম্মা আমার বউ কবে হবে? আমার বউও কি মামনির মতো লাল টুকটুকে বউ হবে?”
আনায়া ছেলের কথা শুনে হতবাক! এই টুকু ছেলে এরকম পাকা পাকা বলছে ভাবা যায়! রুমে আবার হাসির রোল পড়ে গেল। আনায়া ছেলেকে ধমক দিয়ে বলল,
“চুপচাপ বসে থাকো। নাহয় পাপার কাছে যাও। মামনিকে জ্বালিও না”
অর্ক চুপ করে গেল। আনায়া অহনাকে সাজানো শেষ হলে চলে গেল। কিছুক্ষণ পড় আনায়াদের বাড়ির সবাই চলে এসেছে। অর্ণব আনায়া তাঁদের আপ্পায়নে ব্যাস্ত। নিজেরা নিজেরা হওয়ায় তেমন ঝামেলা হয়নি। অর্ষা এসেছে বউ সাজে অহনাকে দেখতে। ওর খুব ইচ্ছে ছিলো আবির ভাইয়ের বউ রূপে নিজেকে দেখার। তবে সে সুযোগ তো হয়নি! কিন্তু আবির ভাইয়ের বউকে দেখার সুযোগ ও হাত ছাড়া করবে না। অহনাকে দেখতে পুরো পুতুল পুতুল লাগছে। মেয়েটা অসম্ভব সৌন্দর্যের অধিকারী। অর্ষার তেমন কোনো অনুভূতি হলো না। এখন সে অন্য কারো স্ত্রী। মানুষটা নিজের সর্বস্ব উজার করে ওকে ভালবাসে। অর্ষার সেদিন কার কথাটা মনে পড়ে গেল। অর্ষা নিজের বাড়িতে পাত্র রূপে তাপস কে দেখে অবাক হয়েছিলো। অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ওদের আলাদা কথা বলতে দিলে তাপস সোজা হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিলো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলো,
“কখন তোমার সাথে ঝগড়া করতে গিয়ে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না। তোমায় ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না। বেহায়া মন সব জায়গায় তোমায় খুঁজে বেড়ায়। তুমি কি আমার হবে ধনী লঙ্কা?”
অর্ষার সেদিনের কথা ভেবে হাসি পায়। তাপসের ভীতু চাহনি। সেদিনের পড় মানুষটা নিজের ভালোবাসয় মুড়িয়ে রেখেছে ওকে। অর্ষার এখন আর কোনো আফসোস নেই কেন আবির ভাই ওকে ভালোবাসেনি। আবির ভাই ওকে ভালোবাসলে পা*গলের মতো ভালোবাসা এই মানুষটাকে ওর পাওয়াই হতো না। অর্ষা হেসে অহনার দিকে এগিয়ে গেল। দুজন হেসে হেসে কথা বলছে।
——
অহনা আবিরের বিয়ে পড়ানো শেষ। আবির তাকিয়ে আছে অহনার দিকে। অহনার কোলে বসা অর্ক। ও কিছুতেই ওর মামনিকে ছাড়বে না। আবির অহনার কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। অহনা লাজুক হাসলো। অর্ক ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,
“মামু তুমি মামনিকে পাপ্পা দিলে আমাকে দিলে না?”
অর্কর কথায় সবাই হেসে দিলো। আবির অর্কর কপালেও চুমু দিলো। আস্তে করে বলল,
“আজকে অন্তত আমার মান সম্মান না ডুবালেই পারতিস বাপ্!”
অর্ক কি বুঝলো কে জানে? খিল খিল করে হেসে উঠলো। অবশেষে পূর্ণতা পেল আরো এক খান জুটি। আবিরের মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা,
অর্ক যেদিন জন্ম হলো সবাই হসপিটালের করিডরে দাঁড়িয়ে। একজন নার্স সাফেদ রঙা তোয়ালে মুরিয়ে রাজ পুত্র কেএনে অর্ণবের কোলে দিলো। সবার মাঝে খুশির বন্যা বইছে। অহনা রাজ পুত্রটাকে কোলে নিয়ে ওর কাছে এলো। পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আমারও এমন একটা রাজ পুত্র চাই”
আবির সেদিন হ্যাঁ বোধক জবাব দিয়েছিলো। এখন বুঝতে পারছে সেদিন হ্যাঁ টা না বললেই হতো। অর্কর মতো ছেলে হলে ওর মান সম্মান সব ধুলোয় গড়াগড়ি খাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
অহনার বিদায় শেষে অর্ণব ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। সেই কখন থেকেই একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। আনায়া অর্ককে কোলে নিয়ে এগিয়ে গেল। রাত হয়েছে। পুরো বাড়ি নীরব। অর্ক বাবাকে দেখে তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। আনায়া অর্ণবের কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“মন খারাপ?”
অর্ণব মাথা নেড়ে নাকোচ করলো। মৃদু কণ্ঠে বলল,
“খারাপ লাগছে। বড্ড আদরের বোন ছিলো আমার। বিদায় দিতে একটু তো কষ্ট লাগবেই। বাট সমস্যা নেই। অভ্যাস হয়ে যাবে”
তিনজনই নিশ্চুপ। আনায়া তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আকাশে থালার ন্যায় চাঁদ উঠেছে। নীরবতার মাঝে অর্ক বলে উঠলো,
“পাপা মামুর মতো আমিও বিয়ে করবো”
ছেলের কথা শুনে অর্ণব আনায়া চমকিত হয়ে ছেলের দিকে তাকলো। অর্ণব কোনো উত্তর দিলো না। অর্ক ফের বলে উঠলো
“পাপা, ও পাপা বলো না আমি বিয়ে করবো কবে? মামুর মতো আমিও বিয়ে করবো পাপা। আমিও বিয়ে করবো”
অর্কর সেকি কান্না! অর্ণব অসহায় চোখে আনায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আনায়া হাসছে, হাসতে হাসতে ওর পেটে খিল ধরে গেছে তাও হাসি থামার নাম নেই। হাসতে হাসতে বলল,
“তেমন অ*সভ্য বাপ্ তেমন তার ছেলে”
আনায়া হেসেই যাচ্ছে। অর্ণব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর মায়াবতীর দিকে। এই মেয়েটার মাঝে ও হারিয়ে যায় সব সময়। মেয়েটার হাসিতে থমকে যায় ওর হৃদস্পন্দন। অর্ণব ঘোরের মাঝে বলে উঠলো
“মায়াবতী”
একসাথে দুই বার প্রতিধ্বনি হলো শব্দটা। অর্ণব আনায়া অবাক চোখে তাকালো ছেলের পানে।
অর্কও অর্ণবের সাথে বলেছে। তিনজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। এদের দেখে এক লহমায় যে কেউ বলে দিবে ❝সুখী পরিবার❞। অবশেষে সুখে থাকুক ভালোবাসা, সুখে থাকুক ভালোবাসার মানুষ গুলো।
~সমাপ্ত~
প্রেমের তাজমহল সিজন-০১ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন