#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আমান বরবেশে তৈরি হয়ে গেছে। একটু পরেই বর যাত্রীদেরকে সাথে নিয়ে আদরের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হবে আমান। চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। আমান তার ফোন বের করল। আমানের ফোনে ছোয়ার অনেক গুলো ছবি আছে। সবগুলোই লুকিয়ে তোলা। আমান শেষবারের মতো ছবিগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নিল। অতঃপর সে ভাবল,
‘ছোয়া যখন আজ আমার জীবন থেকে চিরদিনের মধ্যে মুছেই যেতে চলেছে তখন আমি ওর এই ছবিগুলো আর ফোনে রেখে কি করব? আজ আমার নতুন জীবন শুরু হবে। তাই পুরাতন সব স্মৃতি আমি মুছে দেব।’
এই ভাবনা থেকেই এক এক করে সবগুলো ছবি ডিলিট করে দিতে থাকে আমান। আমানের আজ খুব আফসোস হচ্ছিল। নিজের প্রতি, নিজের ভাগ্যের প্রতি সর্বোপরি ছোয়ার প্রতি একরাশ হতাশা কাজ করছিল।
আমান ফোন থেকে ছোয়ার সমস্ত ছবি ডিলিট করে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রাখে। কিছু সময় পরেই তার বিয়ের জন্য আনা পাজামা এবং শেরওয়ানি পড়ে নেয়। বরবেশে অনেক সুন্দর লাগছিল আমানকে।
এসবের মধ্যেই তার ফোন হঠাৎ বেজে ওঠে। আমান ফোন বের করে হাতে নেয়। তখনই সে দেখে ছোয়া তাকে ফোন করেছে। আমান এই মুহুর্তে ছোয়ার ফোন পেয়ে প্রচণ্ড পরিমাণে হতাশ হয়। বুক চিরে অজান্তেই দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসে। আমান বিড়বিড় করে বলে,
‘এখন ফোন করে কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস ছোয়া? তুই তো আমার হবি না। এই শেষ মুহুর্তে অন্তত নিজেকে সামলে নিতে দিতি।’
আমান এসব ভাবনা থেকেই ফোনটা রিসিভ করে না। কারণ তার মনে হয় এই মুহুর্তে ফোনটা রিসিভ করলে ছোয়ার প্রতি তার দূর্বলতা বৃদ্ধি পাবে যেটা আমান চাচ্ছে না। কারণ যেখানে আজ থেকে সে অন্য কারো সাথে নিজের জীবন জড়াতে যাচ্ছে সেখানে ছোয়াকে মনে রাখা অনুচিত হবেই বলে মনে হচ্ছে আমানের।
ছোয়া বারংবার ফোন করেই চলেছে। আমান এবার বিরক্ত হয়ে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করেই নেয়। আমান ফোন রিসিভ করতেই ছোয়া বলে ওঠে,
‘কি হয়েছিল আমান ভাইয়া? সেই কখন থেকে আপনাকে ফোন করছি, ফোনটা রিসিভ করছেন না কেন আপনি?’
আমান বেশ রুঢ় গলায় বলে,
‘এখন তোর সাথে আমার আর কোন কথা থাকতে পারে বলে আমার অন্তত মনে হয়না। আমাদের পথ অনেক আগেই আলাদা হয়েছে। তাছাড়া তুই তো চাইছিলি এই দূরত্বটা। তাহলে এখন কেন ফোন করছিস আমাকে?’
ছোয়া বেশি কথা বাড়াতে চাইল না। তাই সে বলল,
‘আমি এমনি এমনি আপনাকে ফোন করিনি আমান ভাইয়া। আমার আপনাকে খুব জরুরি কিছু কথা বলার আছে আপনার হবু স্ত্রী আদরের ব্যাপারে।’
ছোয়া কিছু বলার পূর্বেই আমান বলে,
‘থাক, তোকে আর কিছু বলতে হবে না। এই বিষয় নিয়ে কিছু শুনতে চাইছি না।’
‘কথাটা শোনা খুব দরকার আমান ভাইয়া।’
আমান ফোনটা কে’টে দেয়। এমনিতেই তার মনে তিক্ততা ছিল তাই এখন নতুন করে আর ছোয়ার কথা শুনতে চায়না।
৪৩.
ছোয়া আরো কয়েকবার আমানের ফোনে কল দিলো। আমান বিরক্ত হতে লাগল। এক সময় ফোনটা বন্ধই করে দিল। ছোয়া এবার অনেক বড় চিন্তা পড়ে গেলো। আদরের বয়ফ্রেন্ড হাবিবও তার সামনেই দাড়িয়ে আছে এখন। ছোয়া ভাবল, এখন আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। যে করেই হোক আমানের সাথে আদরের বিয়ের পূর্বেই তাকে এটা আটকাতে হবে। এই কারণেই ছোয়া হাবিবকে বলল,
‘আপনি চান তো যাতে আপনার প্রেমিকার বিয়েটা না হয়?’
হাবিব বলল,
‘হ্যা অবশ্যই। আমি ভালোবাসি আদরকে। সব থেকে বড় ব্যাপার, ও আমার বাচ্চার মা হতে চলেছে। তাই আমি ওকে নিজের করে পেতে চাই। জানি আমাদের দ্বারা কিছু ভুল হয়েছে কিন্তু এখন কি করব? আমি শুধু এক্টাই উপাত দেখছি সেটা হলো আদরকে আমি নিজের স্ত্রীরূপে পেতে চাই। যাতে আমাদের সন্তানও একটা স্বীকৃতি পায়। আমরা একটা হ্যাপি ফ্যামিলি গঠন করতে চাই।’
হাবিবের কথা শুনে ছোয়া বলল,
‘যদি আপনি এমনটাই চান, তাহলে চলুন আমার সাথে।’
হাবিব এতক্ষণে ছোয়ার কাছ থেকে জেনে গেছে যে, তার প্রেমিকার সাথে যার বিয়ে হতে যাচ্ছে সে ছোয়ার চাচাতো ভাই। তাই এখন হাবিবের মনে হতে থাকে, ছোয়াই এখন তার একমাত্র ভরসা। শুধু ছোয়াই পারে তাকে এই মুহুর্তে সাহায্য করতে। এমন ভাবনা থেকেই হাবিব বলে,
‘ঠিক আছে চলুন।’
✨
আমান বরযাত্রী নিয়ে প্রস্তুত হয়ে গেছে। একটু পরেই আদরের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেবে সে। মোট তিনটি মাইক্রো আনা হয়েছে। তার মধ্যে আমান যেই মাইক্রোতে যাবে সেখানে যাত্রীদের জন্য দুটো সিট বরাদ্দ ছিল। আমান সেই মাইক্রোতেই উঠে পড়ে। বরের গাড়ি হওয়ায় মাইক্রোটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল।
তবে এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরতে থাকে যে, এই মাইক্রোতে আমানের সাথে কে যাবে। জান্নাতুল খাতুন বলেন,
‘আমানের অনেক বন্ধু-বান্ধব তো এসেছে, তাদের মধ্যেই কেউ যাক।’
সেই মুহুর্তে আব্দুল হোসেন বলে উঠলেন,
‘না থাক। আমি যাবো আমার ছেলের সাথে।’
জান্নাতুল খাতুন প্রচণ্ড অবাক হন কথাটা শুনে। বলেন,
‘তুমি যাবে!’
‘হুম। কেন কোন অসুবিধা আছে কি? তুমি এত অবাক হচ্ছ কেন? কোথায় লেখা আছে যে ছেলের বিয়েতে তার বাবা তার সাথে বসে যেতে পারবে না?’
জান্নাতুল খাতুন আর তর্ক করতে চাইলেন না। তাই বললেন,
‘তুমি যেতে চাইলে যাও। আমার কোন প্রব্লেম নাই।’
অবশেষে আব্দুল হোসেন আমানকে নিয়ে রওনা হয়ে গেলেন। পিছে পিছে বাকি বরযাত্রীও যেতে লাগল।
৪৪.
ছোয়া হাবিবকে নিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হলো। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে এসে সে দেখলো আমান অলরেডি বিয়ের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিয়েছে। সবশেষ একটি গাড়ি দাড়িয়ে ছিল। আলিয়া সহ ছোয়ার কিছু কাজনি অপেক্ষা করছিল। ছোয়াকে আসতে দেখেই আলিয়া এগিয়ে এসে বলল,
‘আপুনি তুমি কই ছিলা? জানো সবাই তোমার কত খোজ করল। তোমাকে ফোনও করল কিন্তু তুমি রিসিভ করলে না। অবশেষে আম্মু বলল তোমার জন্য অপেক্ষা করতে। তাই আমরা আছি এখানে। ওরা সবাই চলে গেছে।’
ছোয়া বলল,
‘আমার ফোন সাইলেন্ট ছিল, তাই শুনতে পাইনি। আচ্ছা আমান ভাইয়া কতক্ষণ আগে রওনা দিয়েছেন?’
‘এই তো ১০-১২ মিনিট আগেই। এখন মনে হয় একটু দূরে চলে গেছে। জানো আব্বুও গেছে আমান ভাইয়ার সাথে।’
আলিয়ার কথা শুনে যেন নতুন আশা খুজে পেল ছোয়া। আমান নিজের ফোন বন্ধ করে রেখেছে। তাই ছোয়া একটু দূরে সরে এসে আব্দুল হোসেনকে ফোন করল। আব্দুল হোসেন ফোন রিসিভ করে ছোয়াকে বললেন,
‘ছোয়া কোথায় তুই? আসার আগে তো তোকে দেখলাম না। আমরা ইতিমধ্যে বেরিয়ে এসেছি। দেখ আলিয়ারা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। ওদের সাথে চলে আয়।’
‘তোমাকে জরুরি কিছু কথা বলার আছে বড় আব্বু।’
‘হ্যা বল।’
ছোয়া এবার আব্দুল হোসেনকে হাবিব ও আদরের সব কথা খুলে বলেন। সব শুনে আব্দুল হোসেন ভীষণ অবাক হন। আদর মেয়েটাকে ভালো বলেই জানতেন তিনি। সে যে এমন কিছু করতে পারে তা সত্যি অভাবনীয়। আব্দুল হোসেন কিছুক্ষণ ঠান্ডা মাথায় ভেবে বললেন,
‘অনেক বড় ব্লান্ডার হয়ে গেছে। এখন সবকিছু শোধরাতে চাইলে তোকে আমার কথা শুনতে হবে।’
‘হুম বলো, আমি শুনছি।’
অতঃপর আব্দুল হোসেন ছোয়াকে কিছু বললেন। যা ছোয়াকে দ্বিধায় ফেলে দিলো। ছোয়া কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারল না। কথাটা বলা শেষ করে আব্দুল হোসেন বললেন,
‘যদি তুমি চাও আদরের সাথেই আমানের বিয়ে না হয়, তাহলে আমি যা বললাম তাই করো।’
কথাটুকু বলেই তিনি ফোন রেখে দিলেন৷ এদিকে ছোয়া পড়ে গেল মহা ভাবনায়! আব্দুল হোসেন যা বললেন সেটা করা ছোয়ার কাছে সহজ নয়। কিন্তু এখন যে এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨
#প্রেমের_পরশ
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আমানকে সাথে নিয়ে কাজি অফিসের দিকে রওনা দিলো আব্দুল হোসেন। আমান আব্দুল হোসেনকে বলল,
‘আমি তোমার আর ছোয়ার সব কথা শুনেছি আব্বু, এটা ঠিক যে আদর যা করেছে তারপর ওকে বিয়ে করা আমার ঠিক নয়। কিন্তু তাই বলে আমাকে এখন ছোয়াকে বিয়ে করতে হবে কেন?’
আব্দুল হোসেন মুচকি হেসে বললেন,
‘এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝিস না তুই? আমি আজ কত শখ করে তোর সাথে এসেছি। কত স্বপ্ন ছিল আমার তোর বিয়ে দিয়ে নতুন বৌমা নিয়ে ঘরে ফিরব। এখন আদরের ব্যাপারে সব জানার পর ওকে তো আর বাড়ির বউ করতে পারি না। তাই ভাবলাম তোর মায়ের ভাইয়ের মেয়ে না হোক, আমার ভাইয়ের মেয়ের সাথে বিয়েটা দেই। তাছাড়া, তোর কোন সমস্যা তো এখানে হওয়ার কথা। তুই তো ভালোবাসিস ছোয়াকে। তাহলে বিয়েটা হলে তোর অসুবিধা কোথায়?’
আমান বেশ হতাশার সাথে বলে উঠল,
‘আমি ভালোবাসলে কি হবে? ছোয়া তো আমাকে ভালোবাসে না। আমি কিভাবে একটা ভালোবাসাহীন সম্পর্কে জড়াবো না।’
‘শোন, বিয়ের পর ভালোবাসা এমনিই হয়। বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক। তাছাড়া আমি তো ছোয়াকে করিনি কোন বিষয়ে। তুই আমার সাথে কাজী অফিসে চল। ওখানে গিয়ে অপেক্ষা করি। যদি ছোয়া আছে তো ভালো, না আসলে আমরা খালি হাতেই ফিরব। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে ছোয়া আসবেই। আজ তোদের বিয়েটা হবেই।’
আমানের মনে আবার নতুন করে আশার আলো জাগে৷ তার মনে হতে থাকে, এখন হয়তো একটা সামান্য আশা বেচে আছে ছোয়াকে পাওয়ার। তবে সে মন থেকে খুশি হতে পারছে না। আমানের কেন জানি মনে হচ্ছে, ছোয়া তাকে এতগুলো দিন যেভাবে কষ্ট দিয়েছে, তার অনুভূতিগুলোর দাম দেয়নি, তখন আমানের এত সহজে ছোয়াকে আপন করে নেওয়া ঠিক হবে না। কারণ কোন জিনিস সহজে পেয়ে গেলে আমরা সেই জিনিসটার মূল্য দিতে জানিনা। এই ভাবনা থেকেই আমান মনে মনে ফন্দি করে নিল,
‘যদি আজ আমাদের বিয়েটা হয়েও যায়, তবুও এত সহজে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। তোর পাথ্র হৃদয়ে আগে আমার জন্য অনুভূতি তৈরি করব ছোয়া। তারপর তুই যখন নিজে তোর অনূভুতিগুলো স্বীকার করবি, তখনই আমার প্রেমের পরশে ঢেকে ফেলবো আমি তোকে, তার আগে নয়।’
৪৫.
কাজি অফিসের সামনে এসে থামলো আমান ও আব্দুল হোসেনের গাড়ি। অতঃপর দুজনেই গাড়ি থেকে নামল। আমান গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে বলল,
‘তুমি তো বলছ যে ছোয়া আসবে, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ও আসবেনা।’
‘এমন মনে হওয়ার কারণ জানতে পারি?’
‘কারণটা খুব পরিস্কার, ছোয়া আমাকে চায় না। সেদিন তো তোমাকে স্পষ্টভাবেই বলে দিল সেটা৷ তাছাড়া আমি যখন ওর কাছে নিজের মনের অনুভূতি গুলো তুলে ধরেছি তখনও ছোয়া আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এত কিছুর পরে আমার অন্তত মনে হয়না ছোয়া আসতে পারে বলে।’
আব্দুল হোসেন অনেকটা আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলে উঠলেন,
‘আমি বাজি ধরে বলতে পারি ছোয়া আজকে আসবেই। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।’
আমানের মন চাইছিল তার বাবার কথা বিশ্বাস করতে, কিন্তু মস্তিষ্ক সায় দিচ্ছিল না। তবুও নিজের মনের কথা শুনে অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগল সে।
আধ ঘন্টা এভাবে অপেক্ষা করতে করতেই চলে গেলো। আমানের চোখে মুখে ফুটে উঠল বিরক্তির ছাপ। আব্দুল হোসেনের কপালেও চিন্তার ভাজ ফুটে উঠল। আমান আর অপেক্ষা করতে পারছিল না। তার ধৈর্যের বাধ পুরো ভেঙে যাচ্ছিল। আমান নিজের রাগ সম্বরণ করতে না পেরে বলে উঠল,
‘অনেক হয়েছে আব্বু আর না। ছোয়ার আসার হলে এতক্ষণ এসেই যেতো। আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম ছোয়া আসবে না। মিথ্যা আশা দেখিও না। এখন চলো এখান থেকে।’
আব্দুল হোসেন কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
‘আরেকটু অপেক্ষা করে দেখি। হয়তো কোথাও আটকে গেছে ছোয়া।’
‘আর কত অপেক্ষা করব আব্বু? এত টুকু পথ আসতে তো এত সময় লাগার কথা না। আমি নিশ্চিত ছোয়া আসবে না। তাই অপেক্ষা করার কোন মানেই হয়না। চলো এখনই চলে যাব আমরা।’
আমান আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করলো না। গাড়িতে উঠে পড়ল। অতঃপর গাড়ির দরজা লাগাতে যাবে এমন সময় ছোয়া হাফাতে হাফাতে গাড়ির সামনে এসে দাড়ালো। অনেক ক্লান্ত লাগছে তাকে। আমান তাকালো ছোয়ার দিকে। তার পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। ছোয়াকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো আমান। অতঃপর ছোয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্দুল হোসেন ছোয়ার কাছে এসে বলল,
‘এত দেরি হলো কেন তোর? আমরা তো ভেবেছিলাম তুই আসবি না। এক্ষুনি তো চলে যেতাম আমরা।’
ছোয়া ক্লান্ত গলায় বলে ওঠে,
‘রাস্তায় জ্যামে আটকে গিয়েছিলাম। তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।’
হাবিবও এসেছে ছোয়ার সাথে। হাবিবকে দেখে আব্দুল হোসেন বললেন,
‘এই কি সেই ছেলে যার কথা তুই বলছিলি?’
‘জ্বি, বড় আব্বু।’
আব্দুল হোসেন হাবিবের কাছে এসে তার দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে বললেন,
‘দেখে তো ভালো ঘরের ছেলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু তোমার শিক্ষার আমি বড্ড অভাব দেখতে পাচ্ছি। কিভাবে অবিবাহিত অবস্থায় কোন মেয়ের সাথে মেলামেশা করো তুমি? আবার তাকে প্রেগন্যান্টও বানিয়ে দাও!’
হাবিব লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। আমতাআমতা করে বলে,
‘আমি আদরকে খুব ভালোবাসি। ওকে আপন করে নিতে চাই। কিন্তু আমি এখনো স্টুডেন্ট। তাই ওর সাথে কিছুতেই আমার বিয়ে দেবে না ওর ফ্যামিলি। আমরা যৌবনের উত্তাল ঢেউয়ে বেসে একে অপরকে সামলে রাখতে পারিনি। আর তাই,,,,’
‘থাক আর কিছু বলতে হবে না। এটা কোন ভুল নয়, এটা অন্যায়। তোমাদের যুগে এটা এখন এমন ভাবে হচ্ছে যেন কোন ম্যাটারই না। আমাদের সময় হলে বুঝতে। যাহোক, অন্যায় যখন করে নিয়েছ আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিও। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু। আর এবার আদরকে বিয়ে করে নিয়ে হালাল ভাবে সংসার শুরু করো। নিজেদের সন্তানকেও একটা পরিচয় দেও৷’
হাবিব মাথা দুলিয়ে হ্যা বোধক সম্মতি জানায়। অতঃপর আব্দুল হোসেন বলেন,
‘তুমি আর বেশি চিন্তা করো না। আগে আমার ছেলের বিয়েটা দিয়ে নেই। তারপর তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করছি।’
৪৬.
আব্দুল হোসেন ছোয়া ও আমানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললেন,
‘কি হলো দাড়িয়ে আছিস কেন তোরা? কাজি অফিসের ভেতরে চল। বিয়েটা তো করতে হবে নাকি?’
ছোয়া সামনের দিকে পা বাড়ালে আমান তার হাত ধরে থামিয়ে দেয়। অতঃপর নিজের বাবাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আব্বু তুমি ভিতরে গিয়ে বিয়ের যা ব্যবস্থা করার করো। আমরা একটু পরেই যাচ্ছি।’
আব্দুল হোসেন আর কথা বাড়ালেন না। তিনি সোজা কাজি অফিসে প্রবেশ করলেন। হাবিবও গেল তার সাথে।
সবাই যাওয়ার পর আমান ছোয়াকে জিজ্ঞেস করল,
‘আচ্ছা ছোয়া তুই সত্যি করে একটা কথা বল তো, তুই কি মন থেকে এই বিয়েতে রাজি আছিস?’
ছোয়া কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল,
‘আমি যদি রাজি না থাকতাম, তাহলে নিশ্চয়ই এখানে আসতাম না। আমি বিয়েটা করতে রাজি জন্যই তো এসেছি।’
আমান এবার সরাসরি ছোয়াকে বলে দিল,
‘শোন বিয়ে কিন্তু কোন ছেলে খেলা নয়। আমরা আজ থেকে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছি। সেখানে একটা বোঝাপড়া দরকার। তুই যদি মন থেকে রাজি না থাকিস তাহলে ফিরে যেতে পারিস।’
ছোয়া এবার জোর দিয়ে বলে,
‘আমি মন থেকেই রাজি আছি।’
আমানের ঠোটের কোনায় এবার হাসি ফুটে উঠল। সে ছোয়ার হাতটা খুব সুন্দর করে ধরল। অতঃপর বলল,
‘তাহলে চল আমার সাথে। এখান থেকেই আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨✨