প্রেমের মরা জলে ডুবে পর্ব-১২+১৩

0
266

#প্রেমের_মরা_জলে_ডুবে

#তানিয়া

পর্ব:১২

শুভ্র ভোরে উঠে ওযু করে নিলো।তিমিরের দিকে তাকিয়ে ভাবলো ওকে ডাকবে কিনা,কারণ শুভ্র জানে তিমির ভোরে তার ঘরে উঁকি দেয় সেটা, কিন্তু অজানার ভান করতো।তাছাড়া শুভ্র এটাও জানে তিমির নামাজ পড়ে সকালে।এখনো উঠছে না দেখে নিজেই ডাক দিলো।

তিমির উঠো, নামাজ পড়বে না?

কয়েকবার ডাকার পরও তিমির উঠলো না।শুভ্র এবার শরীর ঝাকিয়ে ডাকতে তিমির বিরক্তের সুরে গলা তুললো,

উফফ জ্বালাস না তো শুভা?

শুভ্র বুঝলো তিমির শুভা মনে করে কথা বলছে।

তিমির নামাজ পড়বে না?

তিমির কোন হা হু করলো না।ওয়াক্ত শুরু হওয়ায় শুভ্র নিজেই নামাজ আদায় করে নিলো।নামাজ শেষ করে শুভ্র আরেকবার তিমিরকে দেখলো। মেয়েটা কুঁজো হয়ে গেছে।গতকাল হালকা বৃষ্টি পড়েছে বলে সকালে ঠান্ডা বেড়েছে। শুভ্র কাভার্ড থেকে চাদর নিয়ে তিমিরকে জড়িয়ে দিলো।

ঘুম থেকে উঠে তিমির দেখলো তার গায়ে চাদর।পাশে শুভ্র অঘোরে ঘুমোচ্ছে। শুভ্র তার গা থেকে এতটাই দূরে যা পাশ ফিরতে গেলে সোজা নিচে পড়বে।তিমির উঠে গিয়ে রুমে গেলো।যদি নিপা এসে দেখে তিমির শুভ্রর রুমে তাহলে তুলকালাম ঘটাবে।

সকালের নাস্তা করে তিমির বেরিয়ে গেলো। একটুপর শুভ্রও বের হলো।গাড়ি থেকে দেখলো তিমির রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।শুভ্র গাড়ি থামালো যে তিমির কেনো দাড়িয়েছে সেটা জানার জন্য কিন্তু তিমির দেরী না করে সোজা গাড়ির দরজা খুলে শুভ্রর পাশে বসে গেলো।

আরে আরে কি সমস্যা তুমি গাড়িতে উঠে বসলে কেন?

আপনি গাড়ি থামিয়েছেন কেনো সেটা বলুন?

আজব গাড়ি থামিয়েছি বলে তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে?

হ্যাঁ কারণ আপনি গাড়িটা আমার জন্য থামিয়েছেন সেটা বলতে লজ্জা পাচ্ছেন।যাই হোক অযথা কথা বাড়াবেন না তাড়াতাড়ি চলুন লেট হচ্ছে। তাছাড়া শুভা থাকলে দুজনে কথা বলতে বলতে যায় এখন তো শুভা নেই তাই আপনার সাথে যাবো।যতদিন শুভা আসবে না শুভার সব কাজ আপনাকে করতে হবে।

ওহ হ্যালো তোমার মাথা ঠিক আছে,আমি আর শুভা এক না?তাছাড়া তোমার এসব পাগলামো শুভা মানতে পারবে আমি না?

এখন কি নেমে যাবো?

তিমির মুখ গোমড়া করে প্রশ্ন করলো।শুভ্র বিষয়টা বুঝে গাড়ি স্টার্ট দিলো।তিমির মুচকি হেসে সামনে তাকালো।শুভ্র আড়চোখে দেখলো তিমিরের হাসি।

কলেজের একটু আগে তিমিরকে নামিয়ে দিলো কারণ শুভ্র চায় না দুজনকে একসাথে দেখে সবাই উৎসুক হোক।তিমির মুখ ভেংচি কেটে গাড়ি থেকে নেমে বাকি পথটা হেটে গেলো।

শুভ্র ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে তখনি তিমির ব্যস্ততার ভঙ্গি নিয়ে তার ঘরে ঢুকলো।

আরে আমাকে একটু সাহায্য করুন,তাড়াতাড়ি এদিকে আসুন?

শুভ্র চোখ তুলে দেখলো তিমির দুই হাতে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বলতে গেলে বেঁকে আছে। শুভ্র গিয়ে বইগুলো নিয়ে বিছানায় রাখলো।

এসব হাঁড়িপাতিল নিয়ে তুমি আমার রুমে কি করছো,তাছাড়া আমার কাজের সময় তোমাকে আসতে মানা করলাম না?

আপনি এভাবে আমার বিদ্যাকে হাড়ি পাতিল বলছেন কেনো,তাছাড়া একা রুমে পড়তে ভালো লাগছে না আবার সামনে বোর্ড পরীক্ষা, না পড়লে ফেল তাই আপনার কাছে এলাম পড়তে।আমি ইংরেজিতে যথেষ্ট কাঁচা আমি যদি ফেল করি তাহলে তো আপনি শিক্ষক হিসেবে ব্যর্থ।

কেনো তোমার ফেলের সাথে আমার কি সম্পর্ক?

আলবাত সম্পর্ক আছে। আপনি ইংরেজির এত বড় শিক্ষক আর আপনার বউ ইংরেজিতে ফেল করবে সেটার দায়ভার কে নিবে আপনারই তো তাই না?তাই আপনি এখন আমাকে পড়াবেন?

পারবো না পড়াতে।তোমাকে পড়াতে গেলে আমি পাগল হয়ে যাবো তারচেয়ে নিজের রুমে যাও

না আপনাকে তো বলেছি শুভা না আসা পর্যন্ত আপনি তার হয়ে আমাকে সাহায্য করবেন।তাছাড়া একজন শিক্ষক হয়ে কোন মুখে না বলেন দেখি?

শুভ্র বুঝলো তিমির সহজে ছাড়বে না।একবার যখন বলেছে সে এখানে পড়বে তবে তাকে আর সরানো যাবে না।শুভ্র নিজেও ল্যাপটপ নিয়ে কাজে মন দিলো।

তিমির পড়ছে ঠিকই তবে মাঝে মধ্যে শুভ্রকে এটা ওটা নিয়ে বিরক্ত করছে।

তোমার সমস্যা কি তিমির পড়ছো পড়ো না কেনো আমাকে ডিস্টার্ব করছো?

বা রে একটানা পড়লে যে পড়া সব ভুলে যাই তাই একটু খেলাধুলা করছি।আপনি একটা বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে এমন করছেন কেনো স্যার?

হোয়াট,তুমি বাচ্চা? তোমাকে বাচ্চা বললে সকল বাচ্চাকে ছোট করা হয়,ঝুনো নারকেল চিনো তুমি হচ্ছো সেটা?

কিইইইই?আপনি এত বড় কথা বললেন আমাকে? স্যার আপনার মুখে এসব মানায় না,এগুলো পচা কথা?

মুখ ভার করে বললো তিমির।

তুমি আমাকে বারবার স্যার বলছো কেন,এটা তো ক্লাস রুম না?

তো কি বলবো শুনি, শুভ্র ভাইয়া?

তিমির পাগলের মতো কথা বলো না,তোমার সাথে আমার ভাই বোনের সম্পর্ক না বুঝেছো?

বা রে স্যার ডাকবো না আবার ভাইও ডাকব না তো কিভাবে কথা বলবো?মেয়েরা তাদের জামাইকে হয় নাম ধরে ডাকে না হয় হ্যা গো, ওগো, শুনছো গো বলে।আবার না হয় অমুকের বাপ তমুকের বাপ এভাবে বলে।আপনি তো আর এসব সম্বোধন পছন্দ করেন না আবার স্যার ভাই ডাকও শুনতে চাইছেন না তাহলে ডাকবো কি করে?

না ডাকলেই তো চলে।

তিমির কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর আইডিয়া বলে চেচালো।তিমিরের চিৎকারে শুভ্র কটমট করে তাকালো।তিমির নিজেকে সংযত করে হেসে দিলো।

শুনুন আপনার একটা নাম পেয়েছি আর সে নামে ডাকবো।

কি?

অনাগত বাচ্চার বাপ?

হোয়াটটটট??

তিমির কানে হাত দিলো।

এভাবে গরুর মতো চিল্লান কেনো,ভুল কি বললাম শুনি?আপনি সোহাগী ডাক পছন্দ করেন না আবার আমাদের কোনো বাচ্চা নেই যে সে নামে ডাকবো।বাই চান্স যদি আমাদের মিলমিশ হয়ে যায় তখন তে বাচ্চা হবেই তাই সেই বাচ্চার কথা চিন্তা করে আপনাকে তার বাপ বানিয়ে দিলাম ভালো না?

তিমির তুমি এ মুহুর্তে বের হও রুম থেকে।আর কখনো পড়তে আসবে না আমার রুমে।

শুভ্রর কঠিন গলার স্বর শুনে তিমির মুখ কালো করে ফেললো।তারপর বইগুলো নিয়ে দরজার কাছে যেতে একবার পিছনে ফিরে তাকালো। শুভ্র ওর দিকে রাগান্বিত চোখে চেয়ে আছে।

আপনাকে শুধু একটা কথা বলবো অনুমতি দিবেন?

না তুমি একটা কথাকে একটা রচনা তৈরি করে ফেলো আমি শুনবো না।

শুনুন না,বাংলা সিনেমাতে দেখেছি পায়ে পায়ে ঘষলে নাকি বাচ্চা হয়,একদিন পর দেখি নায়কার কোলে ফুটফুটে বাচ্চা। আপনি অনুমতি দিলে আমি আপনার পায়ের সাথে পা টা ঘষাবো।না মানে কালকের মধ্যে যদি বাচ্চাটা পেয়ে যায় তাহলে তার নাম দিয়ে আপনাকে ডাকতে সুবিধা হবে এ আরকি?

তিমিরের কথা শুনে শুভ্র বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো,কি বলে এ মেয়ে এগুলো কোথা থেকে শিখলো?তিমির মনে মনে মজা পাচ্ছে কিন্তু চেহারায় ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে শুভ্রর উত্তরের আশায় বসে আছে। শুভ্র কোলের ল্যাপটপ ফেলে তিমিরের দিকে এগিয়ে আসতে তিমির ইতিউতি না দেখে সোজা রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।তবে পেছন থেকে শুনলো, যদি আর সেদিকে যায় তবে পা পায়ের জায়গায় থাকবে না।তিমির এ কানে শুনে ও কানে বের করলো।আপাতত রাত হোক সোজা বালিশ নিয়ে আবারও আক্রমণ করবে।

শুভ্র খেতে এসে দেখলো তিমির আসে নি।শুভ্র আপন মনে খেতে লাগলো কারণ তিমিরকে নিয়ে প্রশ্ন করলে মা আবার রেগে গিয়ে কি না কি ভাববেন।শুভ্র অপেক্ষা করছিলো তিমির কখন আসবে কিন্তু সে এলো না।আশ্চর্য মেয়েটা খেতে আসছে না কেউ ওর খোঁজও করলো না।খাওয়ার মাঝপথে জিন্নাহ সাহেব নিপাকে প্রশ্ন করলেন তিমির কোথায়?নিপা জবাব দিলেন শরীর খারাপ তাই নাকি তিমির খাবে না,জিন্নাহ সাহেব নিপাকে বললেন খাবারটা যাতে উপরে দিয়ে আসে এতে নিপা একটা ধমক দিয়ে নিজে খেতে বসে গেলেন।

শুভ্র বিছানা ঠিক করে দরজা বন্ধ করতে গিয়ে আবার ফিরে এলো।যদি সত্যি সত্যি তিমির আসে।খাওয়া শেষ করে আসার সময় একবার তিমিরের রুমে উঁকি দিবে ভেবেছিল দ্বিধা নিয়ে সরে এলো।

রাত একটা প্রায় হয়ে গেছে তিমির এখনো আসে নি আবার শুভ্ররও ঘুম না আসাতে সে এপাশ ওপাশ করছে।কি মনে করে সে তিমিরের রুমে গেলো,তিমির আধো কেনো আসে নি।তিমিরের দরজায় হাত লাগাতে সেটা খুলে গেলো,বিছানায় তিমির নেই কিন্তু গোঙানির শব্দ কানে আসছে।শুভ্র দু কদম এগিয়ে যেতে দেখে তিমির মেঝেতে কুন্ডলী পাকিয়ে পড়ে আছে। দুই হাত শক্ত করে পেটে চাপ দিচ্ছে। সেই সাথে চোখ মুখ কিচে কান্না আটকাচ্ছে।শুভ্র হঠাৎ তিমিরকে এ অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে গেলো।তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে তিমিরের মাথাটা কোলে নিলো,

তিমির কি হয়েছে তোমার তুমি এমন করছো কেনো?

তিমির ঢুলুঢুলু চোখে একবার শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আবারও চোখ বন্ধ করল।শুভ্র বুঝল না ব্যাপারটা, তিমির পেটে হাত দিয়ে কুকড়াচ্ছে।শুভ্র তিমিরকে পাজাকোল করে বিছানায় রাখতেই হাতে তরল কিছু লাগলো।হাতে লাল কিছু লেগে আছে বুঝতে পারলো এটা রক্ত।সাথে চোখ পড়লো তিমিরের কাপড়ে।শুভ্রর বুঝতে বাকি রইলো না তিমির এমন করছে কেনো?সে তাড়াতাড়ি হটপটে পানি গরম করে বালতিতে রাখলো।তিমিরকে ধরে ধরে নিয়ে গেলো।রাতে তিমির কিছু খায় নি দেখে খাবার আনলো হালকা। তিমির ওয়াশরুম থেকে বের হতেই শুভ্র খাবারটা খাইয়ে দিয়ে একটা ব্যাথার ঔষধ দিলো।তিমির বিছানায় শুয়ে ধড়ফড় ধড়ফড় করছে।শুভ্র ভেবে পেলো না কি করবে,সে তিমিরের কানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

তিমির বেশি খারাপ লাগছে ডাক্তার ডাকবো?

তিমির হাতের ইশারায় না করলো।তখনো তিমিরের চোখ থেকে পানি পড়ছে।শুভ্র হট ব্যাগ এনে তিমিরের পেটে দিলো।তিমির সেটা চেপে ধরে পড়ে রইলো।আস্তে আস্তে তিমিরের চোখে ঘুম নেমে এলো।শুভ্র জীবনে এ প্রথম এ ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়েছে।মেয়েদের থেকে দূরে থাকায় কখনো এসব নিয়ে কারো সাথে আলাপ বা চোখে পড়ে নি।এ বাড়িতেও দুজন মেয়ে আছে কখনো তাদের দেখে নি এমন বিষয় নিয়ে ছটফট করতে।হয়তো তারা করেছিলো শুভ্র টের পায় নি?আজও পেতো না যদি না সে তিমিরকে দেখতে আসতো।শুভ্র তিমিরের দিকে চেয়ে রইলো। কতটা ক্লান্ত লাগছে তিমিরকে।কান্নার শুকিয়ে যাওয়া জলটা এখনো চাপ রয়ে গেছে। শুভ্র তিমিরের মাথায় বিলি কাটছে।ছোট বেলায় তার ঘুম না আসলে মা এভাবে ঘুম পাড়াতো তাই সেও করছে।কাজটা করতে করতে নিজেও ঘুমিয়ে গেলো।

সকালে ঘুম ভাঙতেই শুভ্র দেখলো তিমির ঘুমচ্ছে।নিজে রুমে গিয়ে তৈরি হয়ে একবার উঁকি দিয়ে নিচে গেলো। নাস্তা করে উপরে এসে একটা চিরকুট লিখে তিমিরের হাতের মুঠোয় দিয়ে চলে গেলো। তিমির ঘুম থেকে উঠে দেখলো তার হাতে কাগজ সেটাতে লেখা,পাকনামি করে বাসা থেকে বের হবে না সারাদিন রেস্ট করো।তিমির হেসে দিলো শুভ্রর এমন মিষ্টি শাসনে।

শুভ্র কলেজ থেকে বাসায় এসে দেখে শুভা তিমিরের সাথে গল্প করছে।শুভাকে দেখে হঠাৎ শুভ্র বিরক্ত হলো।কেনো বিরক্ত হলো শুভ্র বুঝলো না তবে মনে হলো শুভা এত তাড়াতাড়ি এসে তার সমস্যা করেছে।শুভা ভাইকে দেখে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করলো।

তুই আজ চলে এলি যে বেড়ানো শেষ?

হ্যাঁ ভাইয়া। তুমি কেমন আছো?

ভালো।তা আগে তো অনেকদিন বেড়াতি এবার কম হলো যে?

তখন তো বাসায় একা থাকতাম বোর লাগতো এখন তো তিমির আছে তাই চলে এলাম।

শুভ্র কিছু না বলে বিরক্ত কিছুটা প্রকাশ করে চলে গেলো।শুভার চোখ এড়ালো না সেটা।সে তিমিরকে জিজ্ঞেস করল শুভ্রর এ ব্যবহার। তিমির মুচকি হেসে এতদিনের সব কথা বললো।শুভা তো চোখ বড় বড় করে সেসব শুনছে আর হাসছে।

বাহ্ তুই তো দেখি আমার ভাই ্কে একদম কাজের ছেলে বানিয়ে দিলি।তুই এসব করেছিস ভাইয়ার সাথে?মানতে হবে রে তুই জিনিয়াস।তার মানে আমাকে দেখে ভাইয়ার খুশি না হওয়ার এ কারণ।সমস্যা নাই তুই চাইলে ভাইয়ার সাথে থাকতে পারিস।

না সম্ভব না এতদিন তুই ছিলিনা সে অজুহাত দিয়েছি কিন্তু এখন পসিবল না।তাছাড়া অনেক গল্প আছে তোর সাথে। তোর বেড়ানোর গল্প গুলো শুনবে আজ থেকে।

শুভ্র কাজ শেষ করে বিছানা ঠিক করলো।তখনি তার বালিশের পাশে তিমিরের বালিশটা দেখে মনটা কেমন জানি করে উঠলো।সে বালিশটার দিকে চেয়ে রইলো, আজ কি তবে তিমির আসবে না?হঠাৎ দরজায় ঠকঠক শব্দ হতে শুভ্রর ঠোঁটে হাসি ফুটলো।সে দরজা খুলতে দেখে তিমির হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। তিমির শুভ্রর হাসিটা লক্ষ্য করলো।

আজ কেনো এসেছো,এখন তো শুভা চলে এসেছে, এখনো কি ভয় লাগছে?

শুভ্রর পিঞ্চ মার্কা কথা শুনে তিমির বুঝলো এ পুরুষ ভাঙবে তবুও মচকাবে না।সে আরেকটু মিষ্টি হেসে বললো,

না আজ আর থাকবো না।এসেছি বালিশ নিতে।এখন শুভা আসায় তো এক বালিশে শুতে পারবো না তাই আমার বালিশটা নিতে আসলাম।কই দেখি দিন তো বালিশটা।

শুভ্রর মনের আনন্দটা হঠাৎ মিয়ে গেলো।তিমির নিজে এগিয়ে গিয়ে বালিশ নিয়ে শুভ্রর পাশ দিয়ে আসতে শুভ্র তাকে একবার ডাকলো।তিমির প্রশ্নসূচক চোখে তাকালো কিন্তু শুভ্র কিছু বললো না।চোখ দিয়ে ইশারা করলো চলে যেতে।তিমির বের হতেই শুভ্র ধড়াম করে দরজা লাগালো।তিমির বুঝলো এটা কীসের প্রকাশ?সে শুভাকে গিয়ে সব জানাতে দুজনে গড়াগড়ি করে হাসলো।তবে শুভা আফসোস করলো ভাইয়ের জন্য।

শুভ্র বিছানায় সে যে বসে আছে এখনো শুই নি।তার ভালো লাগছে না একা শুতে।এ মেয়েটা দিন দিন তাকে তার প্রতি অভ্যাসে পরিণত করছে।হঠাৎ শুভ্রর ইচ্ছে হলো যদি তিমির চলে আসতো তবে আজ কোনো বকা দিতো না।বড় একটা জায়গা তিমিরকে দিতো।মেয়েটার কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমানোটা বড্ড বেশি আহত করল শুভ্রকে।
,
,
,
চলবে………..

#প্রেমের_মরা_জলে_ডুবে

#তানিয়া

পর্ব:১৩

তিমিরের মধ্যরাতে ঘুম ভাঙতে সে শুনলো কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে।তিমির হাতড়ে হাতড়ে শুভার জায়গা পর্যন্ত যেতে শুভাকে হাতের কাছে পেলো না।তিমির চোখ কচলিয়ে উঠে বসলো।ফিসফিসানি ঝাপসা শোনা যাচ্ছে কিন্তু তিমিরের কান অবধি তেমন আসছে না।তিমির বিছানায় বসে রইলো শুভার আসার অপেক্ষায়।শুভা রুমে পা টিপে টিপে আসছিল কিন্তু বিছানায় তিমিরকে বসারত অবস্থায় দেখে চমকে গেলো।

শুয়ে পড় শুভা, অনেক রাত হয়েছে?

শুভা অপরাধী ভাব নিয়ে এগিয়ে এলো।তিমিরকে কিছু বলার আগেই তিমির শুয়ে পড়লো।শুভা বুঝলো তিমির রাগ করেছে। আগামীকাল তাকে সবটা খুলে বলতে হবে।

সকালে নাস্তা শেষ করে শুভা তিমির কলেজের উদ্দেশ্য বের হলো।শুভা তিমিরের সাথে কথা বলতে চাইছে কিন্তু তিমির রেসপন্স করছে না।শুভা বুঝলো তিমির ক্ষেপে গেছে। আর একবার ক্ষেপে গেলে তাকে গলানো কঠিন। ক্লাস শেষ হতে শুভা তিমিরকে চেপে ধরলো।

তিমির তুই আমার সাথে কথা বলছিস কেনো?

আমি তোর সাথে কথা বললেও কি না বললেও কি, তাছাড়া তোর কথা তো শুনছি এরচেয়ে বেশি আর কি করবো?

তিমির বোন প্লিজ রাগ করিস না,আসলে তোকে বলবো বলবো কথা বলা হয় নি।আমার ভয় লাগছিল ব্যাপারটা কীভাবে তোকে বলব,আসলে আমি নিজেও ঘোলাটে অবস্থায় আছি?

তিমির চুপ রইলো এতক্ষণ। এবার মুখ খুললো,

কে ছেলেটা?

শুভা চমকে উঠলো।বুঝলো তিমির বুঝে গেছে বিষয়টা।

তিমির আসলে ও আমার নানার বাড়ির সেখানে থাকে।ছোট থেকে আমাকে স্নেহ করতো ভাবতাম হয়তো বোনের চোখে দেখে।কিন্তু ওনি সবসময় আমাকে বেশিই কেয়ার দিতেন যা আমার ছোট মন বুঝে নি।মাঝখানে ওনি লেখাপড়ার জন্য চলে যায় সিলেট যার জন্য আমার সাথে ওনার দেখা হয় না প্রায় বছর কয়েক হলো।এ যে বাড়ি গেলাম ওনিও বেড়াতে আসলেন।আর আসার ওর আমার সাথে দেখা হলেই ওনি দেখি আমাকে বিভিন্ন ইঙ্গিত দেন।ওনার ইঙ্গিত বোঝার মতো বয়স আমার হয়েছে। আমি তেমন গুরুত্ব দিই নি কারণ তুই জানিস মা আর ভাই ্য়াকে আমি কতটা ভয় পায়।কিন্তু ওনি আমার নাম্বার জোগাড় করে আমার সাথে কথা বলা শুরু করেছেন।আমি ওনাকে বোঝাচ্ছি কিন্তু ওনি বুঝতে চাইছেন না।ওনার এক কথা ছোট থেকেই ওনি আমাকে ভালোবাসতেন বাচ্চা ছিলাম বলে তখন চাপ দেয় নি এখন নাকি তিনি আমাকে চান।কিন্তু ওদের অবস্থা আমাদের চেয়ে কিছুটা দূর্বল সেই সাথে ওনার বাবা আমার নাানাদের জমিতে চাষ করে।ওনাকে বলছি হবে না কিন্তু ওনি বলছে যদি আমাকে না পায় তবে নাকি আত্মা হত্যা করবে, এখন বল কি করবো আমি?

তুই পছন্দ করিস?

তিমির সরু চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো শুভাকে।শুভা মাথা নিচু করে রইলো।তিমির বুঝে নিলো উত্তর হ্যাঁ।

নাম কি,কোথায় পড়ে, কি নিয়ে পড়ে?

নীল,সাস্টে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছে।দুই বছর পর পড়াশোনা শেষ হবে।ওনি বলছে এখন আপাতত রিলেশনে থাকি।পড়াশোনা শেষ হলেই বিষয়টা জানাবে ততদিন যেন আমি ওনার সাথে শুধু সম্পর্কটা চালিয়ে যায়।

এখন কি এখানে আছে নাকি চলে গেছে?

আমি আসার দুদিন পর চলে গেছে। আসবে আবারও মাসখানেক পর।তিমির এখন বল আমি কি করবো?

আপাতত তুই ওনার সাথে কথা বলা বন্ধ রাখবি।যখন ওনি আসবে তখন আমি কথা বলবো তারপর দেখা যাবে কি হয়?ঠিক আছে কি বলেছি মনে রাখিস?

তিমিরের কথায় শুভা আহত চোখে তাকালো।তিমির বুঝলো শুভাও নীলকে পছন্দ করে।কিন্তু শুভা ইমোশনাল মেয়ে যদি বেশি মেলামেশায় পরে ওর আবেগীয় মনে আঘাত পায় তবে সমস্যা হবে?তাছাড়া তিমিরও একবার ছেলেটাকে পরখ করে দেখতে চায় তবে সে অনুমতি দিবে বিষয়টা।

টিউশন থেকে বের হতে শুভা তিমিরকে কল দিলো।জানালো শুভ্র তাদের শপিং এ নিয়ে যাবে তাই সে যেন মীরপুরের বা দিকের রাস্তায় অপেক্ষা করে।শুভ্র শপিং করাবে শুনে তিমির খুশী হয়ে গেলো।মীরপুরের দিকে আসতে দেখলো শুভারা অপেক্ষা করছে।তিমির শুভার সাথে বসতে যেতেই শুভ্র গলা খাকরি দিলো যার মানে তিমির সামনে এসে বসুক।তিমির বুঝে সামনে এসে বসলো।

শপিং মলে অনেক নতুন ডিজাইনের কাপড় এসেছে। শুভা আর তিমির সেগুলো দেখছে।শুভা চয়েজ করলে শুভ্র সেগুলো কিনে দিচ্ছে কিন্তু তিমির একটাও নেয় নি।শুভ্র তিমিরকে জিজ্ঞেস করলো সে কি নিবে,তিমির স্মিথ হাসলো কিন্তু তেমন কিছু বললো না।

শুভ্র একটা কাপড়ে হাত রাখতে দোকানদার এগিয়ে এসে সেটার প্রশংসা করলো।

স্যার এটা নিন, কাপড় মানেও ভালো আর টিকবেও অনেকদিন।স্যার কার জন্য নিবেন?

শুভ্র তিমিরের দিকে তাকাতে দেখলো তিমির চেয়ে আছে। আসলে তিমির শুনতে চাইছিল শুভ্র তাকে কি বলে পরিচয় দেয়।শুভ্র যখন কিছু না বলে হাত দিয়ে তিমিরকে দেখালো তিমির সাথে সাথে অন্য দিকে চোখ ঘুরালো।জমাট বাধা পানিটা শুভ্রর চোখে যেন না পড়ে।

শপিং শেষ করে তিমির শুভার সাথে পেছনে বসলো।শুভ্র অপেক্ষা করলো তিমির তার পাশে বসবে কিনা দেখার জন্য কিন্তু তিমির যখন নড়লো না তখন শুভ্র গাড়ি স্টার্ট দিলো।

রেস্টুরেন্টে এসে গাড়ি থামতে তিনজনি নামলো।তিমির মুখ ভার করে বসে আছে। শুভ্র দুজনকে জিজ্ঞেস করলো কি খাবে কিন্তু তিমির উত্তর দিলো না।শুভ্র তিমিরকে আবারও জিজ্ঞেস করলো,

তিমির তুমি চুপ করে আছো যে কি খাবে বলো?

আমার খিদে নেই।

তিমিরের কথাটা গম্ভীর শোনালো।শুভ্র একটু চিন্তিত হলো তিমির কেনো এভাবে কথা বলছে সেটা নিয়ে?

তিমির কি হয়েছে তোমার, এভাবে কথা বলছো কেনো?

আমার কি হবে, কিছু হয় নি।তাছাড়া আমি তো এমন কেউ না যে আমার খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে।অযথা আমাকে প্রশ্ন না করে নিজেরা খান।

তিমির হাত দিয়ে কপাল চেপে নিচে তাকিয়ে রইলো।শুভা তিমিরকে দেখে একবার শুভ্রকে দেখে একবার।শেষে তারা কিছু না খেয়ে বেরিয়ে গেলো তবে শুভ্র খাবার প্যাক করে নিলো।

বাসায় সবাই খাবার খেলেও তিমির খায় নি।শুভ্রর ব্যবহার তার খারাপ লেগেছে। শুভ্র এখনো তাকে পরিচয় দিতে লজ্জা পায় এটা তিমিরের জন্য কষ্টের।শুভ্র খেয়ে তিমিরের রুমে যায়, যে কেনো সে খেলো না জানতে?

তিমির কি হয়েছে তোমার তুমি ভালোই ভালোই শপিং এ গেলে হঠাৎ কি হলো এমন ব্যবহার করছো?

আমাকে নিয়ে আপনার এত চিন্তা কেনো,আমাকে পরিচয় দিতে লজ্জা হয় আর আমি না খেলে চিন্তা হয় এ সায়েন্স টা বুঝলাম না?

শুভ্র বুঝলো দোকানদারের প্রশ্নে নিরব থাকাতে তিমির এমন করছে কিন্তু সে তে বুঝে উঠে্তে পারছেনা তিমিরকে আধো সে স্ত্রী হিসেবে মানবে কিনা?আগে যে বিষাদ ছিল সেটা নেই ঠিকই তবে এমন কোনো ফিলিং ্স হয় না যা তিমিরের প্রতি আগ্রহ দেখাবে!

তিমির সরি,আসলে আমি ওসব মিন করে কিছু বলিনি।

বাদ দিন। আপনি কি ভেবে বলেছেন আপনি জানেন।শুনতে ইচ্ছুক নয়।তাছাড়া আপনি যেখানে আমাকে মানেন না সেখানে আপনার কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার আশা করা বোকামি।তাছাড়া শুভাও আমাকে আজ পর্যন্ত ভাবি ডাকে নি,কেনো?কারণ আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানেন না তাহলে শুভা আমাকে ভাবি ডাকবে কোন অধিকারে,তাই সে এখনো আমাকে নাম ধরে ডাকে।কি রে শুভা তুই তো আমাকে তোর ভাই য়ের বউ হিসেবে মানিস না তাই না,কারণ তোর ভাই নিজেই তো আমাকে মানে না বউ হিসেবে?

শুভার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে শুভ্র র দিকে তাকালো তিমির।শুভা চোখ বড় করে আছে।কি চালাক মেয়ে,ভাই য়ের পেট থেকে কথা বের করতে শুভাকে ফাসালো?

শুভ্র তিমিরের প্রশ্ন গুলো শুনে মন খারাপ করে চলে গেলো,এ উত্তর সে জানে না?শুভ্র যেতে শুভা পেছন থেকে একটা কিল বসালো?

কিরে বাদরী,তুই ভাইয়াকে নালিশ করলি কেনো?আমি তোকে ভাবি ডাকি না?

কচু ডাকিস।কইবার ডাকলি বলতো,তাছাড়া আমি দেখতে চাই তোর ভাই য়ের মনে কি আছে তাই তাকে এসব কথা বলছি কিন্তু দেখ সত্যিই তোর ভাই আমাকে এখনো মানতে পারলো না!

তিমির দীর্ঘ শ্বাস ফেলতে শুভা তাকে জড়িয়ে ধরলো।

চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।আমার ভাই ্টা একটা আঘাত পেয়েছে তাই সব সামলাতে সময় নিচ্ছে। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।

তিমিরের পেন্সিল কামড়ে বসে আছে।ইংরেজি পেসেজ নিয়ে বসে সে কখন কিছু বুঝে তো কিছু বুঝে না।শুভা আইসিটি করছে তাই তিমির তাকে বিরক্ত করছে না।যতই হোক দুজনে পরীক্ষার্থী অযতা নিজের জন্য অন্যের ডিস্টার্ব করার মানে হয় না।সে ভাবলো শুভ্রর কাছে যাবে।এমনিতেও কিছুদিন রাগ করে কথা বলে নি তাতে অবশ্য শুভ্র তেমন পরিবর্তন হলো না।তবে তিমির হতাশ হলো।বুঝলো এ পুরুষ কখনো নারী মন বুঝবে না তাই রাগ করা অর্থহীন।আবারও আগ বাড়িয়ে কথা বললো তিমির। তিমির বই কলম নিয়ে শুভ্রর রুমে গেলো।

আজকের আবাহাওয়াটা বেশ জোস।বৃষ্টি পড়ার আগ মুহুর্তে আকাশ যেভাবে অভিমান করে থাকে ঠিক তেমন করে কালো মেঘে ছেয়ে আছে নীল আকাশ।সেই সাথে হেলেদুলে পড়ছে গাছের এক পাতা অন্যটির গায়ে।শুভ্র বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির রূপটা ভোগ করছে এরমধ্যে রুম থেকে তিমিরের গলা শুনতে পেলো।শুভ্র বিরক্ত হলো তবুও রুমে গেলো।তিমির বিছানায় বসে কলম কামড়ে মাথা দুলাচ্ছে।

কি ব্যাপার আবার কি নিয়ে বিরক্ত করতে এসেছো?

তিমির মাথা তুলে তাকাতে তার চোখ জোড়া থমকে গেলো।কালো টিশার্ট পরা,ভাসা ভাসা চোখ, চুলগুলো হালকা এদিক ওদিক।প্যান্টের দুই পকেটে হাত দিয়ে শুভ্র তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করছে।শুভ্রকে এ গ্যাট আপে দেখে তিমিরের মুখ থেকে কলম পড়ে গেলো।শুভ্রকে হঠাৎ লাস্যময় লাগছে।বাইরের শীতল বাতাস তিমিরের শরীরকে ছুয়ে দিলো।তিমির কম্পিত হচ্ছে আর অস্থিরতা বোধ করছে।শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।

তিমির কি হলো,ডাকলে কেনো?

তিমির ধ্যান ভেঙে জবাবা দিলো,

আসলে আমি এ পড়াটা বুঝতেছিনা যদি হেল্প করেন তো ভালো হয়।

শুভ্র এগিয়ে এসে তিমিরের পাশে দাঁড়ালো। একটু ঝুঁকে পড়াটা দেখছে।তিমির ঠিক তার পাশেই বসা।শুভ্রর মাথার চুলগলো তর মুখ বরাবর।তিমির চোখ বন্ধ করে নিলো।এত সুন্দর ঘাড় দেখে তার মাথাটা ঘুরছে।শুভ্র চোখ তুলে তাকাতে দেখলো তিমির চোখ বন্ধ করে আছে,

কি হলো সমস্যা দেখিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?

তিমির চট করে চোখ খুলে ফেললো।

আপনার কি মনে হয় আমি বসে বসে ঘুমাচ্ছি?

হতেই পারে তোমার জন্য অসম্ভব না?

বাহ্ তাহলে তো আমি সেরা একজন আপনি তা স্বীকার করেন।চাইলে আপনি কখনো আমার মতে পারবেন না তাই না?

তিমির হাসলো তবে তার চোখ শুভ্রর দিকে গভীর চাহনিতে আবদ্ধ।

এত কথা না বলে যা জানতে চাও তা শোনো।
এখানে বলা হয়েছে নারীদের জীবন নিয়ে কিছু তথ্য। বেগম রোকেয়া নারীকে পুরুষের সমকাতারে তুলনা করেছেন তিনি বুঝিয়েছেন নারী আর পুরুষ একি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। একটি গাড়ির চাকার মতো।কেউ কাউকে ছাড়া চলতে পারে না বা কাউকে বাদ দিয়ে কখনো সভত্যার উন্নতি সম্ভব না।

এখানে একটু ভুল আছে, বরং নারীরা যা পারে সব কাজ পুরুষ পারে না কিন্তু পুরুষ যা পারে নারী তা করতে পারে।

শুভ্র বিরক্ত হলো।

কোনদিক দিয়ে বলছো এটা?প্রকৃতি কিছু কাজ নারীদের জন্য দিয়েছে তাই নারী ছাড়া সেটা পুরুষ পারবে না।তাহলে কোন কথার ভিত্তিতে এটা বলছো।

আরে না আমি সেসব বলছি না মানে বলছি কিছু কিছু কাজ আছে যা সব পুরুষ করতে পারে না, কিছু কিছু পুরুষ দ্বারা হলেও সব পুরুষ সব কাজ পারে না।

যেমন?

যেমন এমন অনেক কাজ আছে যা অন্য কেউ পারলেও আপনি পারবেন না।

এমন কি কাজ যা আমি পারবো না।

আপনি যখন পারবেন না তাহলে শুনে লাভ কি?

শুনি তো আগে তারপর না হয় দেখা যাবে পারবো কি পারবো না?

না আপনি পারবেন না আমি একশ নিশ্চিত তাই আপনাকে বলবো না।

তিমির রাগ তুলো না।তুমি আমাকে চ্যালেঞ্জ করছো নাকি?ঠিক আছে তুমি বলো কি করতে হবে আমি করবো?

তিমির ঠোঁট কাম*ড়ে হাসলো। হাসিকে প্রসারিত করে উঠে দাঁড়ালো।

অযথা জেদ করবেন না।সব কাজ সবার জন্য না।আপনি পারবেন না মানে পারবেন না। শুধু শুধু শুনতে চান কেনো?

তিমির চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে শুভ্র তিমিরের বাহু ধরে নিজের দিকে নিয়ে এলো।

তিমির মেজাজ পুরো খারাপ হওয়ার আগে বলো কি করতে হবে।আমি তোমাকে বলছি তুমি যা বলবে তাই করব।তুমি আমাকে চ্যালেঞ্জ করছে আর আমি সেটা মানবো না তা হতে পারে না।

শুভ্র দাঁত কিড়মিড় করে কথাগুলো বললো।

ছাড়ুন ব্যা*থা লাগছে।আপনি পারবেন না, আমার হাতে ব্য*থা পাচ্ছি।

পাও ব্যথা তুমি না বললে হাত গিরা থেকে নিয়ে আসবো বলো কি করতে হবে?

শুভ্র এবার তিমিরকে একদম কাছে নিয়ে এলো।দুজনের মধ্যে এক ইঞ্চির চেয়েও কম ব্যবধান।শুভ্র তিমিরের চোখে চোখ রেখে কথা বলছো আর তিমির শুভ্রর ঠোঁটের নড়নচড়ন দেখছে।তিমির এখনি জ্ঞান হারাবে যদি তার ইচ্ছেটা মেটাতে না পারে।শুভ্র এক বাক্য বলছে সে তিমিরের শর্ত পালন করবে, আর তিমির সেসবে কান না দিয়ে দেখছে রক্তজবা ঠোঁট জোড়া।আচানক তিমির শুভ্রের ঠোঁট গুলো ঠোঁট দিয়ে চেপে নিলো।তিমির খুব শক্ত করে চাপ দিলো।ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটলো যে শুভ্র বরফপিন্ডে পরিণত হলো।তার মাথা থেকে সব চলে গেলো হাওয়ায়।তিমিরের ধরে রাখা বাহুটা শীতল হয়ে গেলো।তিমির বুঝলো শুভ্র আর তার চেতনায় নাই। সে আরো মজবুত করে আলিঙ্গন করলো শুভ্রকে।নিজের পিপাসিত তৃষ্ণাটা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় তিমির আত্মহারা হয়ে গেলো। শুভ্র মূর্তির মতো হয়ে গেলো।তিমির ঠোঁট ছেড়ে একটু দূরে সরে এলো।ঠোঁটে হাসি রেখে বললো,

এবার দেখি করুন তো যা আমি করেছি?

শুভ্র হা হয়ে তাকিয়ে আছে। তিমির হাসি হাসি জবাব দিলো,

বলেছিলাম না ওসব আপনার কাজ না।সব কাজ সব পুরুষ পারে না।আমি জানি এ কাজ আপনি কোনোদিন পারবেন না।অযথা ত্যা*ক্ত করলেন আমাকে।দূর আমি শুধু শুধু কষ্ট করলাম।আমার বোঝা উচিত ছিল আপনি একটা মাকাল ফল।

কথা শেষ করে তিমির বই কলম নিয়ে কোমড় দুলিয়ে চলে গেলো।শুভ্র এখনো শ*কড।একটু আগে তিমির যা করলো তা কি সত্যি নাকি কল্পনা। সে আয়নার সামনে যেতে দেখলো তার ঠোঁট গুলো ভয়া*বহ ভাবে লাল হয়ে আছে যেন র*ক্তজমাট বেধে আছে ঠোঁটে।
,
,
,
চলবে…..