#ফরগেট_মি_নট
#রক্তিমা(লেখনীতে)
#সূচনা_পর্ব
১.
“আপনার কোম্পানির সাথে ডিল ফাইলান তখনই হবে যখন আপনি আমাকে প্রসন্ন করবেন,মিস মৃত্তিকা মেহেরজান!”
সামনের চেয়ারে উপবিষ্ট দীপন মির্জার এমন প্রস্তাবে ফাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকায় মৃত্তিকা।মুখোমুখি চেয়ারে বসা দীপন মির্জার ওষ্ঠজুড়ে লুকায়িত এক বিশ্রী হাসির ছড়াছড়ি।মৃত্তিকা ডানহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে থুতনি স্পর্শ করে দীপন মির্জার দিকে সরু চোখে তাকায়।বুঝতে পারা কথাটার স্পষ্ট উত্তর শোনার জন্য দীপন চৌধুরীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“হোয়াট ডু ইউ মিন মিস্টার দীপন?যা বলার স্পষ্ট করে বলুন।”
সঙ্গে সঙ্গে দীপনের ওষ্ঠকোণে বাঁকা হাসির রেশ ফুটে উঠে।ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে সামনে বসা রমনীকে।যে মাত্র বিশ বছর বয়সে বাবার বিজনেসের দায়ভার নিয়ে সুনাম কেড়েছে।সাদা শার্টের উপর ওয়াইন কালার ব্লেজার পরনে মৃত্তিকার।সোজা কৃষ্ণবর্ণের কেশ পিঠ পর্যন্ত,হাতে দামি ওয়াচ আর কানে স্টোনের ইয়ারিং।গৌর বর্ণা সুশ্রী রমনীর মুখশ্রী জুড়ে আভিজাত্যের ছাপ।দীপন বাঁকা হেসে বলে উঠে,
“ইউ হ্যাভ টু স্পেন্ড ওয়ান নাইট উইথ মি!যদি আপনি এর জন্য রাজি হন..”
মুহুর্তেই মৃত্তিকার প্রতিক্রিয়াহীন মুখশ্রী রাগে থমথমে হয়ে আসে।শক্ত হয় কন্ঠ আর তীক্ষ্ণ হয় দৃষ্টি।দীপনকে সম্পূর্ণ বাক্য শেষ করতে তার দিয়েই তীরের মতো জবান চালায় মৃত্তিকা।
“বিজনেস চালানোর জন্য মৃত্তিকার আপনার মতো নোংরা মানসিকতার মানুষের নোংরা প্রস্তাবে সায় দেওয়ার আবশ্যকতা নেই।ইউ ক্যান গো নাও!”
“আর ইউ সিউর?বিশাল বড় লস হয়ে যাবে কিন্তু!”
“লসকে কিভাবে লাভে পরিনত করতে হয় তা মৃত্তিকা মেহেরজান ভালোভাবেই জানে।আপনি হয় এখনই আমার অফিস থেকে বের হোন নয়ত আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করতে আমার একমুহূর্তও লাগবে না।”
অপমানে বিদ্ধ হওয়া মুখশ্রী নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায়।মৃত্তিকা তখন অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে যেন ভস্ম করে দেবে সামনের মানুষটিকে।দীপন যেতে যেতে বলে,
“এই অপমান মনে থাকবে,মিস মৃত্তিকা।”
“আমি এমনভাবেই অপমান করি যে শতবছরের তা ভুলতে পারবেন না আপনি।আর হ্যা যাওয়ার সময় আমার পিএ এর কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাবেন।টাকার অভাবে মনে হয় মেয়ে পাচ্ছেন না?”
মৃত্তিকার গরম গরম অপমান শুনে চোয়াল শক্ত হয় দীপনের।তা দেখে পৈশাচিক আনন্দ পায় মৃত্তিকা।দীপন দরজা পেরিয়ে চলে যায় বাইরে।তবে যাওয়ার আগের মৃত্তিকার উপর নিক্ষিপ্ত তার দৃষ্টি বুঝায় এই অপমানের প্রতিশোধ সে নিবে,অবশ্যই।
.
বিশাল কক্ষটায় প্রবেশ করতেই রাফিনের সমগ্র শরীর শিউরে উঠে শীতলতায়।সাদা কক্ষটায় এসির পরিমাণ অধিক!যা তার গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু সমগ্র কক্ষজুড়ে দৃষ্টি বুলিয়েও সে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে খুঁজে পায় না।কান খাঁড়া করে শুনতেই ওয়াশরুম থেকে শাওয়ারের আওয়াজ ভেসে আসে।রাফিন নিশ্চিত হয় সে তার কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি গোসলে ব্যস্ত।পরপরই আবার শিউরে উঠে সে।রুমের তাপমাত্রায় শীতকালের আভাস!এর পরেও এত সকালে গোসল!ভাবতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শিহরণ বয়ে যায় রাফিনের।
মিনিট দশেক পরে ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ ভেসে আসে।তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে দাড়ায় রাফিন।মুহুর্তেই বেরিয়ে আসে কোমড়ে তোয়ালে পেঁচানো দীর্ঘদেহী এক সুদর্শন পুরুষ।রাফিন সেদিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেয়।তার মুলত নিজের উপর লজ্জা লাগছে।মানবটির শরীরের ভাঁজে জীম করার আভাস ফুটে উঠেছে।রাফিন তড়িঘড়ি করে বলে,
“দর্শন স্যার!আপনার হয়ে গেলে আমাকে ডাকবেন।”
কথাটুকু বলেই তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে রাফিন।দর্শনের নজর রাফিনের উপর পরে কেবলই।রাফিনকে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকায় সে।ছেলেটা কি তাকে দেখে লজ্জা পেল?হোয়াই?
পাঁচ মিনিট বাদে ডাক আসে রাফিনের।গুটি গুটি পায়ে রুমে প্রবেশ করতেই রাফিন টের পায় এবার এসির তাপমাত্রা একটু বাড়ানো হয়েছে।গায়ে কাঁপন ধরানো তাপমাত্রা এখন সে অনুভব করছে না।মনে কনফিডেন্স নিয়ে রুমের একপাশে দাঁড়ায় রাফিন।দর্শন তখন মাথার ভেজা চুল মুছতে ব্যস্ত।গায়ে সাদা শার্ট জড়ানো।চুল মুছতে মুছতেই সে রাফিনকে প্রশ্ন করে,
“ডিল ফাইনাল হয়েছে?”
দর্শনের প্রশ্ন শুনে শুকনো একটা ঢোক গিলে রাফিন।সময় নিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
“স্যার আসলে হয়েছে কি?”
“যা জানতে চেয়েছি সেটার আন্স দাও শুধু”
রাফিন চোখ মুখ খিঁচে না বোধক উত্তর দেয়।ওমনি চুলে সন্তর্পণে চলতে থাকা হাত খানা থামে দর্শনের।স্বাভাবিক মুখশ্রী রুপ নেয় গাম্ভীর্যের!গম্ভীর থেকেই প্রশ্ন করে,
“কেন? মির্জা সাহেবের বড় ছেলে না গিয়েছিল ডিল ফাইনাল করতে!”
দর্শনের বলা শেষাক্ত বাক্য তাচ্ছিল্যের ছোঁয়া।কিন্তু পরপরই চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠে দর্শনের।উচ্চস্বরে রাফিনকে প্রশ্ন করে,
“কি এমন হয়েছে যার জন্য এহমাদ ইন্ডাস্ট্রি ডিল ফাইলান করলো না?”
দর্শনের স্বরে হালকা কেঁপে উঠে রাফিন।তারপর মৃদু আওয়াজে বলে উঠে,
“একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে স্যার।দীপন স্যার ডেইজি ইন্ডাস্ট্রির উত্তরাধিকারী মৃত্তিকা মেহেরজানকে খারাপ প্রস্তাব দিয়েছিলেন!তাই তিনি দীপন স্যারকে অপমান করে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে।”
কথাগুলো শোনার জন্য যেন একদমই প্রস্তুত ছিল না দর্শন।একপ্রকার অবাক হয় সে।কিন্তু রাফিনের দিকে পিঠ দিয়ে থাকায় রাফিন দর্শনের সেই অবাক মুখশ্রী দেখতে পায় না।রাফিনের জানতে খুব ইচ্ছা হয় এটা শোনার পর ছোট স্যারের কি প্রতিক্রিয়া।
দর্শনের বিস্ময় বেশিক্ষণ থাকে না।সে গম্ভীর স্বর তুলে রাফিনকে কক্ষ ত্যগ করতে বলে।সে চলে যেতেই ঘুরে দাড়ায় দর্শন।চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে তার।মুখমন্ডল প্রচন্ড রাগান্বিত লাগছে।দাঁতে দাঁত চেপে দীপনের উদ্দেশ্য সে বলে উঠে,
“শুয়োরের বাচ্চা”
সবে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে দীপন।চোখে এখনও ঘুমভাব লেপ্টে।আচমকা কলারে টান অনুভব করে সে।তড়িৎ তাকায় সামনে।দর্শন অগ্নিমূর্তি ধারণ করে কলার চেপে ধরেছে তার।আকস্মিক আক্রমণে সামনের দিকে ঝুঁকে গেছে দীপন।বড় বড় চোখ নিয়ে তাকায় অনুজের দিকে।দীপনকে কিছু বলতে না দিয়ে দর্শন হুংকার ছেড়ে বলে উঠে,
“এনগেজমেন্ট হয়ে যাওয়ার পরও তুই কিভাবে অন্য মেয়েকে বাজে প্রস্তাব দিস?”
“কলার ছাড় দর্শন!কলার ছাড়!”
কলার ছেড়ে দেয় দর্শন।ছাড়া পেয়ে রাগে ফুঁসে উঠে দীপন।গর্জে বলে উঠে,
“আমি কি করলাম না করলাম তাতে নাক গলাতে আসবি না।ইটস নান অফ ইউর বিজনেস!”
মুখোমুখি রাগান্বিত দুই যুবক।আপাতদৃষ্টিতে এ অবস্থায় তাদের দেখে কেউ ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারবে না তারা একে অপরের সহোদর ভাই। দীপনের এক বছরের ছোট দর্শন অথচ লম্বা চওড়ায় দর্শনই বড় প্রতিলক্ষিত হয়।
“এই ডিলটা কত ইম্পর্ট্যান্ট তুই জানিস।যদি তোর বাজে প্রস্তাব দেওয়ার হেতু ডিলটা এটা ফাইলান না হয় তুই জানিস না আমি কি করবো!শা*লা ক্যারেক্টারলেস!”
নিজের বড় ভাইকে এমন করে কেউ গালি দেয় কি না তা জানা নেই দীপনের।তবে তাকে আদো ভাই বলে গন্য করে দর্শন?
দীপনকে ধমকাধমকি দিয়ে ওর রুম থেকে বেরিয়ে যায় দর্শন।গিয়ে সোজা ডাইনিং এ বসে।ব্রেকফাস্ট করে সে বেরুবে।কিছুক্ষণ পরেই ডাইনিং সে দীপন।দু’জনের মুখশ্রী এখন স্বাভাবিক। যেন একটু আগে কোন শলাপরামর্শ করেছে তারা!
.
কাঙ্ক্ষিত কেবিনের সম্মুখে এসে নক করা ছাড়াই ঢুকতে নিলেও থমকে দাড়ায় দর্শন।তারপর দরজায় টোকা দিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠে,
‘মে আই কাম ইন?”
সময় বাহিত হয়।অপরপাশ থেকে কোন আওয়াজ ভেসে আসে না।ভ্রু জোড়া ক্রমশ কুঁচকে আসে দর্শনের।ধৈর্যের লিমিট শেষ হচ্ছে তার।কেবিনের ভেতরে আদো কেউ আসে তো?মৃত্তিকার পিএ তো বললো ম্যাম ভেতরেই আছে!
নিজের ধৈর্য খুইয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দর্শন। কিন্তু এমন দৃশ্য সে দেখবে তা কল্পনার বাইরে ছিল তার।
টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে আছে এক রমনী।পরনে গাঢ খয়েরী সেলোয়ার কামিজ।মৃত্তিকাকে সচক্ষে কখনো দেখেনি দর্শন তবে সে সিউর এই সেই রমনী।ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি নিয়ে মৃত্তিকার সামনের চেয়ারে আয়েশ করে বসে সে।চোখ বুলায় মুখশ্রী জুড়ে।আস্তে করে বলে,
“ক্যারেক্টারলেসটা এমনি এমনি বাজে প্রস্তাব দেয়নি!”
মনে মনে একবার মৃত্তিকার পুরো নামটা আওড়ায় সে।মৃত্তিকা মেহেরজান!বেশ বড় নাম!দর্শন নিজের মতো করে নামটার শর্টফর্ম করে।তারপর ওষ্ঠযুগল নাড়িয়ে উচ্চারণ করে,
“জান!”
চলবে..?