#ফরগেট_মি_নট
#রক্তিমা(লেখনীতে)
৬.
দর্শন ও দীপনের তর্ক শেষ হয় রাফিনের উপস্থিতির পর।দুজন দুজনের দিকে নিরব তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হাঁটা শুরু করে।
তাদের প্রস্থানের পরপরই বেশ ভাবুক হয়ে উঠেন ইরফান চৌধুরী।মৃত্তিকাকে নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত।এখন অবধি কোন কল আসেনি তার।দর্শনের ভাষ্যমতে মৃত্তিকা সাথে সেলফোন নেয়নি!কিন্তু এটা কোন ধরনের বোকামি!আজকাল কার জামানায় মোবাইল ফোন ছাড়া আদো কোন ব্যাক্তি চলতে পারে?ইরফান চৌধুরীর মনে সংশয়ের উদয় হয়।আর কিছুটা সন্দেহের!
ইরফান চৌধুরী অনেকদিন পর এমন জটিল ভাবনায় ঢুকে যাচ্ছেন যা তার দেহের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।বাবার অসুস্থতার কথা বেশ ভালো করে জানে মৃত্তিকা আর এটাও জানে তার অনুপস্থিতি আর হুট করে কোথাও চলে যাওয়া নিয়ে ইরফান চৌধুরী ব্যাপক চিন্তায় পরবেন।বাবাকে এভাবে চিন্তায় ফেলছে কেন মৃত্তিকা?
ভাবতে ভাবতে মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ উচ্চারণ করে ইরফান চৌধুরী।তারপর কিছু জটিল চিন্তায় মাথা ঘামিয়ে ফোন লাগায় একটা নাম্বারে।
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল পরেছে।সূর্য পশ্মিম আকাশে উদয়মান।মৃত্তিকাকে যেই ঘরে রেখেছে দর্শন তার জানালাগুলো বেশ বড় বড়।এজন্য দিনের বেলায় আলোতে ভরপুর থাকে ঘরটা।মৃত্তিকা এখন বিছানা থেকে বা দিকের একটা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।পরনে ক্রিম কালারের লং জামা।দর্শনের নিয়ে আসা ড্রেসের মধ্যে এটা একটা।লং হাতা জামাটা পায়ের পাতা ছুঁয়েছে মৃত্তিকার।অপরুপা লাগছে মেয়েটাকে!
কিন্তু মৃত্তিকার হুঁশ নেই সেদিকে।তার মন বড়ই বিষন্ন।দর্শনের সাথে যে এভাবে তর্ক করে সে পেরে উঠবে না তা বুঝতে খুব একটা দেরি হয়নি।
বাইরে থেকে আসা মৃদু বাতাসে মৃত্তিকার রেশমি চুল আলগোছে উড়ছে।এই জানালা থেকে যতদুর অবধি দৃষ্টি যায় ততদুর অবধি অবলোকন করছে সে।হঠাৎ দৃষ্টি এসে থামে দক্ষিণের দিকে।ফুলে ফুলে ভরপুর জায়গাটা।দূর থেকেই হাতছানি দিয়ে ডাকছে তাকে।
মৃত্তিকার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হয়।বন্দিনীকে হাতছানি দিয়ে ডাকার বৃথা চেষ্টা সেই নন্দন কাননের!
আচমকা দরজা খোলার আওয়াজ হতেই চমকায় ভাবনায় মগ্ন রমনী।মৃদু কেঁপে উঠে লতানো কায়া!কিন্তু পেছন ফিরে তাকায় না সে।কারো হেঁটে আসার শব্দ আসতে আসতে জোরালো হলে দাঁতে দাঁত পিষে মৃত্তিকা।পরমুহুর্তেই চোখ বুঁজে ধমকায় নিজেকে।তার বোকামি তার অসহায়ত্ব দ্বিগুন করবে।
মৃত্তিকা অবাক হয় যখন একটা কফির কাপ তার চোখের সামনে আসে।চট করে পাশ ফিরে তাকায় সে।আশ্চর্যজনক ভাবে তার সামনে দাঁড়ানো যুবকের পরনেও একই রঙের শার্ট।এটা দেখে মনে মনে সুক্ষ রাগ হয় মৃত্তিকার।তার সাথে মানুষটার পোশাকের রঙ কেন মিলবে?যেখানে তাদের ব্যাক্তিত্বই সম্পূর্ণ ভিন্ন!
মৃত্তিকা তাকায় দর্শনের পানে।দর্শনের দৃষ্টিতে কাপ নেওয়ার আদেশ।মৃত্তিকা কাপটা নেয় বেজায় মুখে।দৃষ্টি স্থির করে সম্মুখে।
দর্শন কি তাকিয়ে আছে?নাকি দৃষ্টি সরিয়েছে মৃত্তিকার মুখশ্রী থেকে?ভাবতেই আড়চোখে তাকায় মৃত্তিকা।মুহুর্তেই দৃষ্টি সরিয়ে বাইরে তাকায় পাষাণ যুবক।
মৃত্তিকা হাতের কফির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চায়।তারপর দর্শনের উদ্দেশ্যে সন্দিহান স্বরে বলে উঠে,
“এখানে আমার কিছু মিশিয়ে আনোনি তো?সামথিং লাইক..”
” ঘুমের ওষুধ,অ্যালকোহল এন্ড সব ধরনের নেশালো দ্রব্য!”
দর্শনের কথার টোন তীক্ষ্ণ হয়ে কানে বাজে মৃত্তিকার।ফ্যাল ফ্যাল ভঙ্গিতে দর্শনের পানে তাকায় সে।গা ছাড়া ভাব নিয়ে দর্শন একের পর এক চুমুক বসাচ্ছে কফির কাপে।
মৃত্তিকা শুকনো ঢোক গিলে কাপে চুমুক বসায়।প্রতিদিন খাওয়া স্বাদের বদলে ভিন্ন একটা স্বাদ জিভে এসে লাগে!কিন্তু বিষন্ন মনে তা কোন ছেদ ফেলায় না।
“আমাকে যেতে দিবে কোন দিন?”
“যেদিন তুমি ভুলভাল যা দেখছো তা ভুলে যাবে!”
“আমার বাবা আমার খোঁজ না পেলে অসুস্থ হয়ে পরবে!”
মৃত্তিকার করুন কন্ঠে দর্শনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।পলকহীন তাকায় মৃত্তিকার মুখপানে।রমনীর করুন চাহনিতে ঘৃণা লেপ্টে আছে কি?
দর্শন গা ছাড়া ভাবে বলে উঠে,
“ওষুধ কিনে দিব তবে।”
“তুৃমি মজা করছো আমার সাথে?”
মৃত্তিকার শক্ত কন্ঠস্বর।করুন চাহনি হয়েছে শক্ত।দর্শনের সরাসরি উত্তর,
“নাহ!”
মৃত্তিকা ভেবে রেখেছিল দর্শনের সাথে রুক্ষ স্বরে কথা বলে তার বন্দি সময় বাড়াবে না।কিন্তু লোকটার আচরণ তাকে বাধ্য করছে!
মৃত্তিকা তীক্ষ্ণ ও কঠোর স্বরে বলে উঠে,
“শুধুমাত্র নিজের অপরাধ লুকানোর জন্য যদি তুমি আমাকে সকলের থেকে আড়াল করে রাখার পরিকল্পনা করে থাকো তবে শোন মিস্টার দর্শন মির্জা আমাকে আজীবন বন্দী করে রাখতে তবে তোমার।কেননা যেইদিন আমি এখান থেকে,তোমার থেকে মুক্ত হবো সেইদিন হবে তোমার লাস্ট দিন।মাইন্ড ইট!”
দর্শন গাঢ় চোখে চায় রাগে উত্তেজিত রমনীর পানে।ক্রোধের দরুন বুক উঠানামা করছে বারম্বার।নাক হয়েছে রক্তাভ।দর্শন রাগ্বানিতা রমনীর দিকে দৃষ্টি রেখে গাঢ় স্বরে বলে উঠে,
“তুমি আমাকে খুন করতে দেখেছো মৃত্তিকা?দেখেছো আমাকে গুলি চালাতে?”
“তোমার হাতে রিভলবার ছিল আর কপালে গুলিবিদ্ধ ছিল তৃষা!এর অর্থ কি দাঁড়ায় বিশ্লেষণ করো দর্শন মির্জা।আমাকে বোকা ভাবো তুমি?নাকি ফিডার খাওয়া বাচ্চা?”
মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসে দর্শন।সেটাই তীক্ষ্ণ চোখে লক্ষ্য করে মৃত্তিকা।এমন করে হাসার অর্থ কী?
দর্শন হঠাৎ নিচু স্বরে ফিসফিসয়ে বলে উঠে,
“তোমাকে আমি যা মনে করি তা বললে তুমি মূর্ছা যাবে মেহের..জান!”
মৃত্তিকার দেহের লোম দাঁড়িয়ে পরে তৎক্ষনাৎ।লজ্জার এক ভীষণ শিহরণ বয়ে যায় সমস্ত কায়ায়।সহসা রুমের বাইরে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ায় দর্শন।তাতে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে মৃত্তিকা।তবে সে করুন চোখে তাকায় দর্শনের প্রস্থানের দিকে।কবে তাকে মুক্তি দিবে এই পাষণ্ড?
.
ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা কক্ষ!বাইরে চাঁদের ক্ষীণ আলো প্রবেশ করছে সেথায়।যাতে আঁধার কাটেনি একটুও।শীতল কক্ষে বসে আছে দর্শন।সামনে ল্যাপটপে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার।ল্যাপটপের আলোতেই এখন আবছা হয়ে উঠেছি কক্ষটি।
আয়েশ করে বসে মাউস দিয়ে ল্যাপটপে থাকা একের পর এক পিকচার পাল্টাচ্ছে সে।হঠাৎ তার দৃষ্টি আটকে একটা ছবিতে।সহসা চোখ খিঁচে বন্ধ করে যুবকটি।মস্তিষ্কে স্মৃতি আওড়ায়।পরপরই চোখ খুলে সে।এবার তার দৃষ্টিতে সব পরিষ্কার।সেদিন দেখা আবছা অবয়বকে আবারও চোখের সামনে দেখে দৃষ্টি সরু হয়ে আসে তার।
কালো কোর্টের মাঝ দিয়ে ক্রিম কালার শার্ট ও কালো টাই উঁকি দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করছে।তবে লোকটার মুখ দৃশ্যমান নয়।ছবি পাল্টায় দর্শন।আরো বেশ কয়েকটা ছবি পাল্টায়েও হতাশ হয় সে।লোকটার আর কোন ছবি নেই!
তখনই দরজার নক করে কেউ।দর্শন ল্যাপটপ অফ করে উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করে,
“কে?”
“স্যার আমি রাফিন।”
রাফিনের ঠান্ডা স্বরে কানে আসতেই উঠে দাড়ায় দর্শন।দরজা খুলে দিয়ে এসে পুনরায় আগের জায়গায় এসে বসে সে।রাফিন কক্ষে প্রবেশ করে ধীরে।মুহুর্তেই ঠান্ডায় শিরশির করে উঠে তার দেহ।এসির মাত্রা এত বাড়িয়ে রাখে মানুষটা!
রাফিন এসে দর্শনের মুখোমুখি দাড়ায়।দর্শনের চোখে একটা চশমা বলে বিদ্যমান।বিজ্ঞ লোকটিকে আরো বিজ্ঞ মনে হচ্ছে রাফিনের এবার।একটা পেনড্রাইভ এগিয়ে দেয় রাফিন দর্শনের দিকে।শান্ত স্বরে বলে,
“আপনি যেটা চেয়েছিলেন স্যার সেটা কালেক্ট করা হয়ে গেছে।আপনার বুদ্ধি আরেকবার কাজে লাগলো!”
দর্শন পেনড্রাইভটা টেবিলে রেখে বলে,
“তুমি দেখছো আমি যা চেয়েছিলাম?”
রাফিনের ভ্রু কুঁচকে আসে সঙ্গে সঙ্গে।দর্শন তাকে বারণ করেছিলো ভিডিওটা না দেখতে।তবে এমন প্রশ্ন কেন?
রাফিন দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়।দর্শন গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
“গুড!ইউ ক্যান গো নাও।”
রাফিন প্রস্থান করলে দর্শন পেনড্রাইভ কানেক্ট করে নির্দিষ্ট ভিডিও অন করে।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দুইজন পুরুষ ভেসে উঠে।দৃষ্টিতে বিস্ময় দেখা দেয় দর্শনের।পরপরই ল্যাপটপ অফ করে পাশে থাকা কাঁচের একটা শোপিচ দেওয়ালে ছুড়ে মারে রাগান্বিত দর্শন মির্জা!
চলবে..
ভুল-ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক!