ফরগেট মি নট পর্ব-০৭

0
16

#ফরগেট_মি_নট
#রক্তিমা(লেখনীতে)
৭.
“মিস্টার ইরফান চৌধুরী।আপনার মেয়ের পিএ হত্যা হওয়ার সময় আপনি এবং বাকিরা দানিশ মির্জার বাড়ির বাগানে উপস্থিত ছিলেন।আর একজন ছিল ওই রুমটাতে যেখানে মিস মৃত্তিকার পিএর ডেড বডি পাওয়া গিয়েছে।সম্পূর্ণ হত্যাকান্ড ঘটেছে দানিশ মির্জার বাড়িতে।আমাদের ইনভেস্টিগেশনের জন্য সেখানে উপস্থিত সকলের নামের লিস্ট দরকার।”

ইরফান চৌধুরী পুলিশের তলবে পুলিশ স্টেশনে এসেছেন।এতক্ষণ এসপি সাহেবের বলা কথা তিনি মনোযোগ দিয়েই শুনেছেন।কিছু একটা ভেবে তিনি বলে উঠেন,

“দেখুন যতদ্রুত সম্ভব খুনিকে বের করুন আপনারা।”

“তা তো অবশ্যই।বাট মিস্টার চৌধুরী আপনার মেয়ে কোথায়?পিএ কে মার্ডার করা হয়েছে আর তার কোন খোঁজ নেই!”

ইরফান চৌধুরীর কুঁচকানো ভ্রু সোজা হয়ে আসে সহসা।পুলিশের কথায় তিনি বেশ বুঝতে পারছেন সন্দেহের তীর তার মেয়ের দিকে বর্তাচ্ছে।সুক্ষ্ম আওয়াজ করে কেঁশে উঠেন ইরফান চৌধুরী।গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করেন,

“কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?আমার মেয়ে টুরে গেছে এইসব কিছু ঘটার আগে।”

“আমরা তার সাথে কথা বলতে চাই।”

“সে সাথে কোন সেলফোন নেয়নি!”

ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে উঠেন এসপি সাহেব।পরপর ভ্রু উচিয়ে বলে,

“আপনার মেয়ে এই জেনারেশনেরই তো?না মানে এখন আদো মোবাইল ফোন ব্যতিত কেউ চলাফেরা করে বলে মনে হয় না!নাকি আপনার মেয়ে পালিয়ে গেছে তাই কোন…”

এসপি মুখে নিজের একমাত্র মেয়ের সম্মন্ধে এমন মন্তব্য শুনে রাগে ফেঁটে পরেন ইরফান চৌধুরী।জোরে শব্দ করে টেবিলে থাবা বসান তিনি।একপ্রকার হুংকার ছেড়ে বলেন,

“মুখ সামলে কথা বলবেন এসপি সাহেব।আপনি ভুলে যাবেন না কার ব্যাপারে কি বলছেন!

” আশ্চর্য!আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন?ইটস কমন!সকলে এটাই সন্দেহ করবে।”

ইরফান চৌধুরীর ক্রোধ কিছুটা কমে এসপির আময়িক কথা শুনে।এসপি সাহেব ফের জিজ্ঞেস করেন,

“আচ্ছা আপনার মেয়ে কোথায় গেছে?”

ইরফান চৌধুরীর নিকট কোন জবাব নেই।তিনি রাশভারী মুখ নিয়ে পুলিশ স্টেশন ত্যাগ করেন।বাড়ি ফিরতে ফিরতে তার রাগ ক্রমশ বাড়তে থাকে।মৃত্তিকার এমন খেয়ালিপনা দেখে এবার তার রাগ হয় প্রচুর।মেয়েটা কি আক্কেল জ্ঞান সব খেয়েছে?নাকি দর্শনের কথা ভুল?ওয়েট!মৃত্তিকার আবার কিছু হয়নি তো?ভদ্রলোক আর ভাবতে পারেন না।গা এলিয়ে দেন গাড়ির সিটে।শরীর প্রচন্ড ঘামছে উনার।কোনরকমে ড্রাইভারকে নির্দেশ দেন দ্রুত গাড়ি চালানোর।
.
রাত দশটা।রাতের ডিনার শেষ করে নিজের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছেন দানিশ মির্জা।আরাম কেদারায় চোখ বদ্ধ করে শুয়ে আছেন তিনি।হঠাৎ কানে বেজে উঠে একটি শব্দ,

“ড্যাড!”

অতি পরিচিত কন্ঠস্বর শ্রবণ করে চোখ খুলতেই দর্শনের সুদর্শন মুখশ্রী অক্ষিপটে ভেসে উঠে দানিশ মির্জার।সামান্য সোজা হয়ে বসে তিনি প্রশ্ন করে,

“ইয়েস মাই বয়।কিছু প্রয়োজন তোমার?”

দর্শন গম্ভীর দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে।দৃষ্টি দিয়ে যেন দানিশ মির্জার অন্তস্তলে কি চলছে তা বোঝার চেষ্টা।পলক ফেলে দর্শন গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,

“আমি এখন কিছু চাইছি না বাট পুলিশ স্টেশন থেকে সেদিন পার্টিতে উপস্থিত সকলের নামের লিস্ট চেয়ে পাঠিয়েছে।মৃত্তিকার পিএ খুন হওয়ার ব্যাপারে!”

কথাটুকু সম্পূর্ণ করে দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে দর্শন।যাতে বাবার বিরক্ত হয়ে উঠাটা বেশ ভালোভাবেই ধরা পরে।দানিশ মির্জা খানিক বিরক্ত স্বরেই বলে,

“এই কেস এখনো সলভ হইনি!”
“খুনি তো ধরা পরেনি ড্যাড!”

দর্শনের কথা শুনে দানিশ মির্জার মুখ ভঙ্গি পাল্টে।তাড়া দিয়ে বলে,

“দিয়ে দিও লিস্ট।আর কিছু বলবে তুমি?”

“ওহ হ্যা।সিসিটিভি ফুটেজও চাইছে তারা।”

“বলে দাও সিসিটিভি নেই।”

“ড্যাড তোমার কি খুব গরম লাগছে?বেশ ঘামছো!”

দর্শনের চোখের প্রশ্নোত্তক চাহনি লক্ষ্য করে ঠোঁট এলিয়ে হাসেন দানিশ মির্জা।চেয়ার থেকে উঠে দর্শনের দিকে পিঠ দিয়ে বলে উঠেন,

“হ্যা গরম একটু বেশি”

কপালে জমে থাকা ঘাম রুমাল দিয়ে মুছে নেন দানিশ মির্জা।দর্শন তাচ্ছিল্য হেসে বাবার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রুম থেকে বের হওয়ার উদ্বেগ নেয়।দরজার কাছাকাছি এসে ঘুরে দাড়ায় সে।দানিশ মির্জা উদ্দেশ্য প্রশ্ন করে,

“ড্যাড!তুমি যেন সেদিন কি কালার কোর্ট ও শার্ট পরেছিলে?উম..কালো কোর্ট এন্ড অফ হোয়াইট শার্ট রাইট?

” হ্যা।কিন্তু হঠাৎ তুমি এমন প্রশ্ন কেন করছো?”

দানিশ মির্জা ভ্রু কুঁচকে ছেলের দিকে প্রশ্ন করে।দর্শনের চেহারা বেশ গম্ভীর হয়ে উঠে।দৃষ্টি হয়ে উঠে তীক্ষ্ণ!গম্ভীর আওয়াজে সে জবাব দেয়,

“আপনিই সেই ব্যক্তি তাই না যে মৃত্তিকার পিএকে খুন করেছে?”

মুহুর্তেই দানুশ মির্জার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে উঠে।চোখজোড়া যেন বিস্ময়ে কঠোর থেকে বেরিয়ে আসার প্রত্যাশায়।

“কি.. কি বলছো তুমি দর্শন?আমি কেন..”

বাবার কথা শেষ না হতেই হেসে ফেলে দর্শন।ছেলেকে এভাবে হাসতে দেখে আরেকদফা চমকায় দানিশ মির্জা।দর্শন হাসি আটকে বলে,

“আ’ম কিডিং ড্যাড!”

দর্শনের কথা শুনে যেন ধরে প্রাণ ফিরে দানিশ মির্জার।গোপন একটা প্রশান্তির শ্বাস ফেলেন তিনি।দর্শন সবটা লক্ষ্য করে গম্ভীর আওয়াজে বলে উঠে,

“গুড নাইট।এন্ড রিমেম্বার ড্যাড ইফ এনিওয়ান ডেয়ারস টু হার্ম মৃত্তিকা আই ওন্ট লেট দেম গো!ইভেন ইফ ইট ইস মাই ওউন ফাদার!এন্ড নাও আ’ম নট কিডিং!”
..

পূর্বে তখন সূর্য উঠবে উঠবে ভাব,বিছানায় কাচুমাচু করে শুয়ে আছে মৃত্তিকা।অক্টোবরের সমাপ্তিতে নভেম্বরের শুরু।এই সময়টায় ভোরবেলায় শীতের আমেজ টের পাওয়া যায়।ঘুমের ঘোরে একটু উষ্ণতার খোঁজে কাচুমাচু করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে সে।হঠাৎ মৃত্তিকার কাচুমাচু থামে।শরীরে কম্বলের ছোঁয়া উষ্ণতার সৃষ্টি করছে।ঘুমের ঘোরে ওষ্ঠকোণে এক চিলতে হাসি ফুটলেও তার স্থায়ীত্ব বেশিক্ষণ থাকে না।চোখ মুখ কুঁচকে চোখ মেলে তাকায় সে।দৃষ্টি স্পষ্ট হতে হতে সুদর্শন পরিচিত অপ্রিয় মুখমণ্ডল ভেসে উঠে।চমকে তড়িঘড়ি করে উঠে বসে মৃত্তিকা।
অথচ সামনের ব্যক্তির দৃষ্টি কিভাবে পলকহীন তার দিকে তাকিয়ে।মৃত্তিকা রাগী কন্ঠে বলে উঠে,

“এভাবে অবিবাহিত একটা মেয়ের রুমে যখন তখন প্রবেশ করাটা ঠিক নয়!”

“হুহ”

“কি হুহ!”

মৃত্তিকার কথায় দর্শনের ওষ্ঠকোণে একমুহূর্তের জন্য দুষ্ট একটা হাসি ফুটে মিলিয়ে যায়।গম্ভীর আওয়াজে বলে উঠে,

“তোমাকে বিবাহিত করে তারপর রুমে প্রবেশ করবো!”

মৃত্তিকা চোখমুখ কুঁচকে তাকায় বিরস মুখে।তিক্ত আওয়াজে বলে উঠে,

“বেরোও রুম থেকে!এক্ষুনি।”

দর্শন কোন বাক্য ব্যয় না করে বের হওয়ার জন্য উদ্ধত হয়।

“তোমার ঘুম আরেকটু গাঢ় হওয়া দরকার ছিল জান উরফে মেহেরজান।”

দর্শনের অতি নিচু স্বরে বলা কথা মৃত্তিকার কর্ণগোচর হয় না।সে রমনী বিছানায় বসে রুষ্ট দৃষ্টিতে কালো শার্ট পরিহিত যুবকের দিকে তাকিয়ে।দর্শন দরজা বাইরে থেকে লক করে চলে গেছে বুঝতে পেরে নিজের সমস্ত ভর বিছানায় ছেড়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে মৃত্তিকা।ভোরের ঠান্ডা পরিবেশে ঘুমটা বেশ তাড়াতাড়িই ধরা দেয়।
.
বেলা সাতটা। এক কাপ চা নিয়ে টিভির সামনে বসেছেন ইরফান চৌধুরী।চোখেমুখে গমগমে একটা ভাব।টিভি অন করে নিউজ দেখায় মগ্ন হয় তিনি।কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই টিভিতে দেখানো একটা সংবাদ তার বুক ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়!

“ডেউজি ইন্ডাস্ট্রির উত্তরাধিকারী মৃত্তিকা মেহেরজান চৌধুরীর পিএ খুন হওয়ার পর থেকে পলাতক মৃত্তিকা চৌধুরী!পুলিশ সন্দেহ করছে এই খুনের পেছনে হয়ত ইরফান চৌধুরীর কন্যার হাত আছে।নয়ত সেদিনই কেন নিখোঁজ হবেন মৃত্তিকা মেহেরজান চৌধুরী?এ কিরুপ যোগসূত্র?এমনকি ইরফান চৌধুরীর ভাষ্যমতে উনার মেয়ে সাথে কোন মোবাইল ফোন নেননি।যার দরুন তিনি মেয়ের সাথে কন্টাক্ট করতে পারছেন না।এমন অবস্থায় অদ্ভুতভাবে মারা যাওয়া তৃষার খুনের পিছনে পুলিশ মৃত্তিকা চৌধুরীকে খুনি হিসেবে টার্গেট করছে!”

চলবে..

ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।