#ফরগেট_মি_নট
#রক্তিমা
১৯.
“ইউ নো আ’ম নট দাট টাইপ অফ গার্ল হো গিভস কিস।আই থিংক এতোদিনে তোমার এটলিস্ট নিজের ওয়াইফ সম্পর্কে ধারণা থাকার কথা ছিল!”
মৃত্তিকার শক্ত স্বর শুনে দর্শন গম্ভীর রুপ ধারণ করে।তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় সামনে উপবিষ্ট সর্বগ্রাসী রমনীর দিকে।মৃত্তিকার লালাভ ওষ্ঠদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে,
“বাট দ্যা ট্রু ইস দর্শন মির্জা কান্ট আন্ডারস্টেন্ড হিস ওয়াইফ।নট ইভেন হিমসেল্ফ!”
মৃত্তিকা দর্শনের চোখে চোখে রাখে।কিছুতো আছে দর্শনের গম্ভীর স্বরে বলার মাঝে।যা সর্বদা মৃত্তিকাকে আকৃষ্ট করে প্রবলভাবে।আর ওই তীক্ষ্ণদৃষ্টি?একটু আগে হাস্যরস করা দর্শনের অতি দূলর্ভ রুপ।
৬০ সেকেন্ড অতিবাহিত হয় দু’জনের দৃষ্টি বিনিময়ের।না বলা কোন শব্দ,কোন বাক্য বিনিময় হলো কি?হয়তো!
মৃত্তিকা চোখ সরিয়ে অন্যদিকে চায়।তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।দর্শনের চেহারায় বদল আসে ধীরে ধীরে।অদ্ভুত মানব শিষ বাজাতে বাজাতে রুম থেকে বের হয়।
—–
গাড়ি চলছে ধীর গতিতে।দর্শন কানে এয়ারপট গুঁজে,চোখে কালো সানগ্লাস পরে ড্রাইভিং করছে।মাঝে মাঝে তার দৃষ্টি চলে যাচ্ছে পাশে বসা রমনীর পানে।মেরুন রঙের থ্রিপিস পরিহিতা রমনী যে অতি আকর্ষণীয়।পরক্ষণেই চোখ ফেরায় দর্শন।রমনী সর্বনাশীও বটে!
মৃত্তিকা বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত।প্রথমবার তো সে এই পথ ভ্রমণ করেছে অচেতন অবস্থায়।দ্বিতীয়বার জড় বস্তুর ন্যায় আর তৃতীয়বার মনে ভয়,দ্বিধা নিয়ে।প্রকৃতি উপভোগের সুযোগ কোথায় তখন।
মৃত্তিকা বাইরে তাকিয়েই ভাবে রাস্তাটা উপভোগ করার মতো।গাড়ি ধীরে চালানোর জন্য ভালোভাবে উপভোগ করা যাচ্ছে।হঠাৎ গাড়ির স্পিড বেশি হলে বাইরে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দর্শনের পানে তাকায় মৃত্তিকা।ভ্রুদুটো কুঁচকে গেছে তার।মৃত্তিকা বিরক্ত মনে দর্শনকে প্রশ্ন করে,
“গাড়ি জোরে চালালে কেন?
” এত সুন্দর হ্যান্ডসাম হাসবেন্ড থাকা সত্ত্বেও আমার বউ বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে এটা সহ্য হচ্ছিল না জাস্ট!”
“তুমি সুন্দর?”
মৃত্তিকার তাচ্ছিল্যময় কন্ঠ।পরপরই মৃত্তিকা আবার বলে,
“শুধুমাত্র দেখতে ভালো হলেও কেউ সুন্দর হয় না।মনটাও সুন্দর হওয়া লাগে।”
“থ্যাংকস ফর ইউর ইনফরমেশন।”
দর্শনের রসিকতাময় স্বর শুনে বিরক্ত হয় মৃত্তিকা।সব সিরিয়াস মুহুর্তে লোকটার রসিকতা তার যেন সহ্য হয় না।
দর্শন গাড়ির স্পিড আরো বাড়ায়।একসময় চৌধুরী বাড়ির সামনে এসে থামে গাড়ি।মৃত্তিকা খানিক অবাক হয়।তবে সেটা মুখশ্রীতে ফুটিয়ে না তুলে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি নিয়ে দর্শনের পানে তাকায়।
“এখানে কেন?”
“শুনেছিলাম বাপের বাড়ি আসতে পারলে নাকি মেয়েরা খুশি হয়।তোমাকে দেখে তো তেমনটা মনে হচ্ছে না।”
“তুমি কথা ঘুরাচ্ছো দর্শন।”
মৃত্তিকা খানিক রেগে জবাব দেয় দর্শনকে।পরপরই সমনে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতেই তার ওষ্ঠকোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে।ভ্রুদ্বয় বাঁকিয়ে দর্শন উদ্দেশ্য তাচ্ছিল্যময় কন্ঠে বলে উঠে,
“ওহ তবে এটাই তোমার সেই আনএক্সেপটিং সারপ্রাইজ?বিয়ে করা বউকে বিয়ের পরের দিন বাপের বাড়িতে রেখে যাওয়া!পার্মানেন্ট ভাবে তাইতো?”
নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে দর্শন।এতে যেন মৃত্তিকা আরো রেগে যায়।খানিক চিৎকার করে বলে উঠে,
“উত্তর কেন দিচ্ছো না?এর মানে আমি যা ভাবছি সত্যি?”
এবার চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে দর্শন মৃত্তিকার পানে তাকায়।দর্শনের নীরবতা মৃত্তিকাকে অশান্ত করে তুলে।অতি ক্রোধে অক্ষিপটে জমতে শুরু করে অনাকাঙ্ক্ষিত অশ্রু।দর্শন মৃত্তিকার ব্রাউন আঁখি দুটোতে দৃষ্টিপাত করে প্রতক্ষ করে সেথায় অশ্রুকনা জমছে একটু একটু করে।কেন?
দর্শন গম্ভীর স্বরে আদেশ করে,
“বাড়িতে যাও মৃত্তিকা!”
মৃত্তিকা অন্যদিকে তাকিয়ে অশ্রু লুকায়।প্রানপণ চেষ্টায় তাদের অক্ষিকোটর হতে বের না হওয়ার জন্য বাধ্য করে।তারপর সময় নিয়ে ফিরে তাকায় দর্শনের দিকে।দর্শন তখনো সেইভাবেই তাকিয়ে আছে।
দর্শনের প্রতি তৈরি হওয়া ঘৃণা যা একটু একটু করে অদৃশ্য হতে শুরু করেছিল তা যেন হঠাৎ ফুটে উঠে।মৃত্তিকা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
“শেষ তোমার সুপুরুষত্ব!কি বলেছিলে তুমি ভুলে গেছো?ডিভোর্সের কথা বলার সময় যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলে যেসব মিথ্যে,ভন্ডামি ছিল মাত্র?”
দর্শন কিছু বলে না।সে যেন এইমুহূর্তে মৌনব্রত পালন করছে।মৃত্তিকার রাগ এতে টরটর করে বাড়ছে।সে একপ্রকার চিৎকার করেই বলে উঠে,
“আনসার মি দর্শন!”
“তুৃমি তো এটাই চেয়েছিলে আমার থেকে মুক্তি!ইভেন বিয়েটাও আমি জোর করে করেছি।দ্যান হোয়াই ইউ আর শাউটিং?
দর্শনের শান্তস্বরে বলা কথা শুনে মৃত্তিকা তাকিয়ে রয় দর্শনের পানে।তারপর দৃষ্টি সরিয়ে মলিন হাসে।আস্তে করে বলে উঠে,
” ইয়াহ!হোয়াই আ’ম শাউটিং?
মৃত্তিকা একটা ঢোক গিলে গাড়ির দরজার খোলার জন্য ফিরতেই একটা বাক্য এসে কানে বাড়ি খায়।দর্শনের অতিশান্ত তবে অশান্ত প্রতিপন্ন হওয়া স্বরে বলা কথা,
“আই লাভ ইউ!”
মৃত্তিকা ফিরে তাকায় না।বরং দ্রুত দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।পেছনে তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা মানুষটার দিকে ফিরে তাকায় না একবারও।অতিদ্রুত হেঁটে বাড়িতে প্রবেশ করে দর্শনের চোখের আড়াল হয়ে পরে।
——–
ড্রয়িংরুমের সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন দানিশ মির্জা।বাইরে আলো ফুটিয়ে সন্ধ্যা হয়েছে সবে।অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে যাওয়ায় মাথায় বজ্রপাতের যোগাড়!পাশেই দীপন বসে আছে থমথমে মুখশ্রীতে।দুহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল এক করে আছে সে।হঠাৎ শিষ বাজানোর শব্দ শুনে বাবা-ছেলে দুজনেই সদর দরজার দিকে তাকায়।ব্রাউন কালার শার্ট পরনে,পকেটে দুহাত পুরে বাপ-ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে আসছে দর্শন।বাবা ও দীপনের সামনের সোফায় বসতে বসতে বলে,
“হোয়াটস আ’প গাইস?”
ছোট ছেলের আচরণে বিরক্ত হয়ে তাকায় দানিশ মির্জা।শক্ত কন্ঠে বলে,
“দুনিয়ার কোন খবর দেখি আজকাল আর রাখো না তুমি!কি ঘটেছে জানো না?আর কোথায় ছিলে তুৃমি?”
দর্শন বাবার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কাপ কফির অর্ডার দেয় সার্ভেন্টকে।তারপর বলে,
“হুহ!কিছু বলছিলেন?”
“তুমি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছো দর্শন!”
“সভ্য ছিলাম কবে?”
দর্শনের উপর নিক্ষিপ্ত দীপনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করে কথাটুকু বলে দর্শন।পরপরই দীপন বলে উঠে,
“ভিডিওটা তো তোর কাছে ছিল তবে এটা নিউজ চ্যালেন আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো কিভাবে?”
দর্শন অবাক হয়ে দীপনের দিকে তাকায়।নিষ্পাপ স্বরে বলে উঠে,
“তুই আমায় সন্দেহ করছিস?এটা বলতে চাইছিস তো আমি বাপ-ভাইয়ের গোপন আলাপের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছি!ওহ সরি গোপন আলোচনা করার সময় একজন মেয়ে তা জেনে যাওয়ায় তাকে খুন করার ভিডিও!”
“দর্শন….!”
হঠাৎ দানিশ মির্জা চিৎকার করে উঠে।অগ্নিদৃষ্টি দর্শনের পানে তাকিয়ে বলে উঠে,
“ভুলে যেও না তুমি তোমার বাবার ব্যাপারে কথা বলছো।”
“ইয়াহ!আই রিমেম্বার।”
ছেলের জবাবে দানিশ মির্জা চুপ হলেও দীপন বলে উঠে,
“আ’ম সিউর ড্যাড।ভিডিও ওই ছেড়েছে।হি ইস দ্যা কালপ্রিট!”
“তোর ধারণা শক্তি আসলেই খুব ভালো।ইয়াহ ইট’স মি!”
দর্শনের জবাব শুনে দানিশ মির্জা বড় বড় চোখে তাকায়।
“স্বার্থপর!”
“স্বার্থ শব্দটা মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন বোঝ হওয়ার পরপরই।সেই হিসেবে যদি আমি আজকে স্বার্থপরের মতো কাজ করি তাতে আমার দোষ কিন্তু খুব একটা নেই ড্যাড!”
——-
“কি সমস্যা তোমার দীপন?”
কালো কোর্ট,অফ হোয়াইট শার্ট পরিহিত দানিশ মির্জা গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে উঠে দীপনকে।দীপন একটু সময় নিয়ে বাবার দিকে তাকায় তারপর বলে,
“আই ওয়ান্ট মৃত্তিকা,ড্যাড!”
“মৃত্তিকা?”
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে উঠেন দানিশ মির্জা।তারপর নিজেই বলে উঠেন,
“ডটার অফ ইরফান চৌধুরী?”
“হ্যা।আপনার কথায় আমি শ্রেয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।বাট নাও আই ডোন্ট ওয়ান্ট হার!”
তীক্ষ্ণ চোখে তাকান দানিশ মির্জা।পরপরই বলেন উঠেন,
“ওই সর্বনাশী মেয়ে কখনোই আমার পুত্রবধু হতে পারবে না।ইরফানের স্ত্রী, আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে আমি হারিয়েছি একমাত্র ওই মেয়ের জন্য!ওকে জন্ম দিতে গিয়েই ডেইজি মারা গেছে।এন্ড আই লস্ট হার।
দানিশ মির্জার চোখেমুখে মৃত্তিকার প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব ফুটে উঠে।দীপন অবাক হয় তার সাথে বিরক্ত।দানিশ মির্জা আবার বলেন,
“ইফ আই এভার গেট এ চান্স,ওই মেয়েকে আমি….!”
হঠাৎ দরজায় আওয়াজ শুনে দুজনেই চমকে তাকায়।দরজা লক করা ছিলো না!এতক্ষণ তৃষা চুপিচুপি তাদের কথা শুনছিলো।কিন্তু দরজায় হেলান দিতেই হুরমুড়িয়ে ভেতরে এসে পরে সে।
“মৃত্তিকার পিএ!”
“ধরো ওকে!”
দানুশ মির্জার হুকুমের পরপরই তৃষাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে ধরে দীপন।তৃষা তখন ছাড়া পাওয়ার জন্য প্রানপণ চেষ্টা করছে।সেই সাথে বলে চলছে,
“ছাড়ুন আমায়।আমি ম্যাম আর স্যারকে সব বলে দিবো!”
হঠাৎ দানিশ মির্জা বলে উঠে,
“ছাড়ো ওকে!”
বাবার কথা শুনে দীপন ভ্রু কুঁচকে তৃষাকে ছেড়ে দেয়।তৃষা দৌড়ে দরজার কাছে আসতেই গুলির বিকট শব্দ হয়।দরজার কাছেই স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে পরে তৃষা।মাথার পেছন থেকে গুলি কপালে এসে ঠেকেছে।সাউন্ড বক্সের ভলিউম তখন একটু কমানোর জন্য আশে পাশে থাকা মৃত্তিকা সেটা শুনতে পেয়েছিল।সেই সাথে শুনতে পেয়েছিলো আরেকজন।দর্শন!
হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনে সতর্ক হয় দানিশ মির্জা ও দীপন মির্জা।একে অপরকে ইশারা করে রুমের পেছনের দরজা দিয়ে বের হয় দুজনে।তখনই রুমে প্রবেশ করে দর্শন।হাতে রিভলবার ধরা।দীপনের এক ঝলক দেখে সে শুধু তারপর গুলি চালাতেই তা গিয়ে দেওয়ালে লাগে।”
হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ভিডিওটা দেখে মৃত্তিকা কম্পিত কন্ঠে উচ্চারণ করে,
“দ্যা মার্ডারার ইস দানিশ মির্জা!”
চলবে….