ফিলোফোবিয়া পর্ব-১৮+১৯

0
530

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

১৮.

(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)

দুই গ্রামের লোকজন চেয়ারম্যান মেম্বার সহ সালিশ বসলো। সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঝামেলা মিটিয়ে, মিলমিশ করে নিতে হবে দুজনকে। কিন্তু, শতাব্দ তা মানল না। তুমুল কথাকাটাকাটি হলো সেখানে। এক সময় ক্ষেপে গেল শতাব্দ। আরেক চোট বেদম পিটানো পিটালো শিহাবকে। শতাব্দের এমন রূপ দেখে হতভম্ব চেয়ারম্যান সাহেব। ছেলের এমন রূপ দেখেনি আগে। পরবর্তীতে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা দিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছে।
সালিশে প্রিয়’র নাম তোলার কোন সুযোগ দেয়নি শতাব্দ। তার পূর্বেই গন্ডগোল করে থামিয়ে দিয়েছে সব।
সারা গ্রামে চাপা গুঞ্জন। ঝামেলা যে কোন মেয়েকে কেন্দ্র করেই হয়েছে তা সকলে নিশ্চিত। গ্রামের আনাচে-কানাচে সেই মেয়েকে নিয়ে হাজারো জল্পনা কল্পনা কৌতূহল। অজানা সেই রহস্যময়ীকে খোঁজার। চারিদিকে তল্লাশি বার্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

শতাব্দের প্রস্তাবে সরাসরি বিরোধিতা না করলেও, বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে আয়েশা বেগম। যেমন, প্রিয়’র সাথে হুটহাট দেখা না করা, কথা না বলা, যোগাযোগ না করা এমন আরো অনেক শর্ত। সেসব শর্ত না মানলেও। বিরোধী তার বিরোধিতাও করেনি শতাব্দ। ইমান্দিপুরে আসা কমিয়ে দিয়েছে আজকাল। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া আসেনা। মাসে বড়জোর দুই-এক দিনের জন্য আসা তার।

স্কুল থেকে ফিরে ব্যাগ ফেলে। টানটান হয়ে বিছানায় হাতপা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল প্রিয়। আজ থেকে ছুটি শুরু। আগামী বিশদিন ঈদের বন্ধ থাকবে স্কুল। বাবা তা আগে থেকে জানত। গাড়ি পাঠাতে চাইছে বারবার, আজ ইফতারের পর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হতে বলছে। খালাও তাতে এক মত। তিনি চাইছেন না শতাব্দের সাথে প্রিয়’র দেখা হোক।
অভিমানে মন ভার প্রিয়’র। জলে চিকচিক চোখ। গতরাত থেকে কতবার শতাব্দকে ফোন করছে। কখনো বন্ধ বলছে। কখনো আবার তুলছেনা ফোন। বিরক্ত হলো প্রিয়। শতাব্দ কি পড়াশোনা নিয়ে এতই ব্যস্ত! যে তার ফোন তোলার মত সময় পাচ্ছেনা অন্তত। সে কি আড়ালে এড়াতে চাইছে প্রিয়’কে? কথা না বললেই কি প্রিয়’র আবেগ অনুভূতির উপর কাবু আনতে পারবে সে!
ফোঁস করে শ্বাস ফেলল প্রিয়। বিছানা ছেড়ে উঠল। ব্যাগ থেকে মোটা ডায়েরিটা বের করল। ডায়েরি কেটে তার ভেতরে ফোন রেখেছে। ডায়েরি কেটে ফোন রাখার বুদ্ধিটা অবশ্য তানহার। নির্বাচনের পর, ঢাকায় যাওয়ার আগে মোবাইলটা দিয়ে গেছে শতাব্দ। প্রিয়’র ফোন চালানোর উপর নিষিদ্ধ জারি করেছে খালা। তাই খালা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর, রোজ রাতে শতাব্দের ফোনের আশায় হাতে মোবাইল নিয়ে বসে থাকে প্রিয়। সচরাচর ফোন করেনা শতাব্দ। যখন নিজের আবেগ অনুভূতির উপর খুব বেকাবু হয়ে পড়ে তখনি এলোমেলো হয়ে ফোন করে। আবেগে অনুভূতিতে বেকাবু হয়ে আবোলতাবোল অনেক কিছু বলে। তার অনুভূতি মাখানো বেফাঁস কথাবার্তার সদা হু, হা বলে উত্তর দেয় লজ্জায় জর্জরীত প্রিয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে উথাল-পাতাল ঝড় চলে তার।
ঘড়ির দিক তাকালো প্রিয়। চারটা বাজতে চলছে। সে নিশ্চয়ই ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরেছে। একবার তাকে ফোন করবে কি?
অনেক ভেবে চিন্তে মোবাইল অন করল। শতাব্দের নাম্বারে কল করল। কয়েকবার রিং বাজতেই ফোন তুলল শতাব্দ।

‘ কেমন আছো প্রিয়?’

ফোনের অপর পাশে হতে শতাব্দের গভীর আওয়াজে পেয়ে আবেশে চোখ বুজে নিলো প্রিয়। দুইদিন পর এই আওয়াজটা আবার শুনলো। সারা শরীর জুড়ে এক মৃদু শীতল হাওয়া বয়ে গেল। শতাব্দের প্রশ্নের উত্তর দিলো না প্রিয়। কাঁপাকাঁপি কন্ঠে তড়িঘড়ি করে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ল,
‘ কেমন আছেন? শরীর সুস্থ আছে আপনার? গত দুইদিন ফোন করেননি। কোন খোঁজখবর পাচ্ছিলাম না। চিন্তা হচ্ছিলো আমার।’
প্রিয়’র কন্ঠে চিন্তা, অস্থিরতা। অপর পাশ হতে নিশ্বাসের দ্রুত ফোঁসফোঁস আওয়াজ ভেসে আসছে। একটু চুপ থেকে শতাব্দ বলল,
‘ শান্ত হও। আমি সুস্থ আছি। এই দুইদিন পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই যোগাযোগ করতে পারিনি।’
প্রশান্তির শ্বাস ফেলল প্রিয়। নিশ্চিত হলো। একটু শান্তি লাগছে এখন।
‘ এত আবেগী হলে হয়না প্রিয়। নিজের ইমোশনের উপর কন্ট্রোল আনো।’
শতাব্দের এমন কথায় রাগ হলো প্রিয়’র। একজন মানুষ আচানক দুদিন কোন খোঁজখবর ছাড়া লাপাত্তা হয়ে গেলে তাকে নিয়ে চিন্তা করাটা কি স্বাভাবিক না? কপাল কুঁচকে বলল সে,
‘ আমি কি করে আমার আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসার উপর নিয়ন্ত্রণ আনবো? এগুলোকে কি আদৌ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়? আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনার জন্য চিন্তা হয় আমার! এটা কি অস্বাভাবিক?’
‘ হ্যাঁ, অস্বাভাবিক!’
ভীষণ কষ্ট পেল প্রিয়। কান্নাভেজা অভিযোগী কন্ঠে বলল,
‘ জানি আপনি আসবেননা তবুও প্রত্যেক সাপ্তাহ আমি আপনার ফেরার অপেক্ষা করি। জানি ফোন করবেন না। তবুও ভোর অবধি মোবাইল হাতে নিয়ে আপনার ফোনের অপেক্ষায় থাকি। সারাক্ষণ আপনার চিন্তায় বিভোর রই। এসব কি অস্বাভাবিক আবেগ মাত্র! ভালোবাসা না?’
শতাব্দ চুপ। প্রিয় কেঁদে ফেলল এবার। কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,
‘ আমার কষ্ট হয়। খুব কষ্ট। আমি আপনার মত অত পাথর হৃদয়ের মানুষ না। আমার অনুভূতি গুলো বড্ড বেকাবু। সারাক্ষণ শুধু আপনাকে খোঁজে। আপনার মত অত শক্তপোক্ত মনের আমি নই। আমি চেষ্টা করি পারিনা। পারছি না!’
আজ মনের জমানো সব অভিযোগ ঝেড়ে কেঁদে ফেলল প্রিয়। শতাব্দের এই এড়িয়ে চলা, নিতে পারছেনা সে। খালার শর্ত মানতেই কি এমন এড়িয়ে চলছে সে। কারণ যাইহোক না কেন! শতাব্দের এড়িয়ে চলা মানতে পারবেনা সে। একদম মানতে পারবেনা!
অনবরত কেঁদে যাচ্ছে প্রিয়। নীরবতা ভেঙ্গে মুখ খুলল শতাব্দ। অস্থির হয়ে বলল,
‘ স্টপ ক্রায়িং প্রিয়!’
শুনল না প্রিয়। অনবরত কেঁদে যাচ্ছে সে। এগ্রেসিভ হয়ে উঠল শতাব্দ বলল,
‘ প্রিয়! আই স্যে স্টপ ক্রায়িং।…….. তুমি কান্না করা বন্ধ করবে? নাকি আমি এসে ঠোঁটে চুমু খেয়ে কান্না বন্ধ করবো?’
শতাব্দের এমন কথা নড়েচড়ে উঠল প্রিয়। থতমত খেয়ে। আচানক কান্না থামলো তার। স্তব্ধ বসে রইল। অশ্রুকণা এখনো চিকচিক করছে গালে। কোন সারাশব্দ না পেয়ে অপর পাশ থেকে শতাব্দ আবার বলল,
‘আমার অনুভূতি গুলো কতটা গাঢ় তুমি আন্দাজোও করতে পারবেনা প্রিয়। তোমার খালাকে কথা দিয়েছি। দূরে থেকে তোমার অনুভূতির পরিক্ষা নিবো। এটা আসলেই ভালোবাসা নাকি তোমার আবেগ! যদিও এতে কিছু আশে যায় না আমার। আবেগ হোক বা ভালোবাসা রাজি না থাকলে তুলে আনবো। দূরে থেকে মূলত নিজেকে কন্ট্রোলে আনতে চাইছি। তোমার কাছে গেলে বারবার কন্ট্রোলেস হয়ে যাই কিনা!
তবে হ্যাঁ, ওনেস্টলি আমি জানতে চাই কি চলছে তোমার মনে।
তখন কি জানো বলছিলে তুমি? রোজ আমার অপেক্ষা করো। তোমার আইডিয়া নেই আমার প্রেম কতটা ভ*য়ঙ্কর হতে পারে! তোমার এই ছোট বয়স তা সহ্য করতে পারবেনা প্রিয়।
ছটফটানি কি জিনিস বুঝো? জানো ক্ষণে ক্ষণে কতটা ছটফট করছি আমি। রোজ সকালে চোখ মেলে আমার তোমাকে চাই। বিকালে চায়ের কাপের সাথে তোমাকে চাই। গভীর রাতে আষ্টেপৃষ্টে আলিঙ্গন করে তোমাকে নিয়ে ঘুমাতে চাই। তোমার খোলা চুলে মুখ ডুবাতে চাই। এক কথায় আমার বউ চাই……
তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দিলো প্রিয়। বুক ধুকপুক করছে এখনো। নিশ্বাসের প্রচন্ড উঠানামা। গাঁ শিরশির করছে এখনো। সাথে সাথে আবারো ফোন এলো। একটু সময় নিয়ে ফোন তুলল প্রিয়। কানে ধরতেই চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। অপর পাশ থেকে শতাব্দের গভীর নেশাতুর আওয়াজ ভেসে এলো,
‘ ভদ্র প্রেমিক হতে চেষ্টা করছিলাম। দিলেনা তো! আমার অভদ্রতা ঠেলার জন্য তৈরি হও প্রিয়। আসছি। এক্ষুনি!’
ফোন কেটেছে শতাব্দ। কানে ফোন নিয়ে এখনো বসে আছে প্রিয়। শরীর তিরতির কাঁপছে এখনো। শতাব্দের নেশাতুর ভ*য়ঙ্কর আওয়াজটা কানে বাজছে এখনো।

সন্ধ্যার আজান পড়েছে। চারিদিকে অন্ধকার নেমেছে। টিপটপ তৈরি হয়ে শতাব্দের অপেক্ষায় বসে আছে প্রিয়। ঘড়ি দেখছে বারবার। আচমকা খালা এসে বলল,
‘ ব্যাগপত্র গুছিয়ে তৈরি হয়ে নে প্রিয়। তোর বাবা আসছে নিতে।’
হতভম্ব প্রিয়। হকচকিয়ে বলল,
‘ বাবা আসছে মানে? আমার তো দুইদিন পরে যাওয়ার কথা ছিল।’
‘ পাশেই কোথায় জানো তোর বাবার দাওয়াত ছিল। তাই এখন ফোন করে বলল, এদিকে এসেছে যখন একেবারে সাথে করে নিয়ে যাবে তোকে।’
‘ কিন্তু খালা…’
সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো খালা। কন্ঠে গম্ভীরতা এঁটে বলল,
‘ বাড়ি যাওয়ার জন্য আগে বায়না করতি রোজ। এখন বাড়ির কথা শুনলে এভাবে নাক ছিটকাস কেন?’
প্রিয় আমতা আমতা করে বলল,
‘ এখনো কিছু গোছানো হয়নি তাই…’
খালা থামিয়ে বলল,
‘ হাতেহাতে আমি গুছিয়ে দিচ্ছি। তোর বাবা চলে আসবে এখনি।’
নেতিয়ে পড়ল প্রিয়। বুক ফেটে কান্না আসছে খুব। কতদিন পর আজ শতাব্দকে দেখবে বলে আশা নিয়ে ছিল। কিন্তু….

সারাক্ষণ খালা সাথে ছিল। শতাব্দকে জানানোর সুযোগ হয়নি প্রিয়’র। খানিক বাদেই বাবা চলে এলো। এটা ওটা বলে দেরি করছিল প্রিয়। অবশেষে বাবাকে ঘন্টা খানেক বসিয়ে রেখে মন মরা হয়ে বের হলো। বাড়ি যাওয়া নিয়ে চোখেমুখে কোন উৎসাহ নেই আজ। খালাকে বিদায় জানিয়ে বিষন্ন মন নিয়ে গাড়িতে চড়ল প্রিয়।
ইমান্দিপুর থেকে বেরিয়ে। গাড়ি হাইওয়ের রাস্তায় ইউটার্ন নেওয়ার সময় হ্ঠাৎ প্রিয়’র চোখ পড়লো পাশের গাড়িতে। শতাব্দ ইমান্দিপুরের দিক ইউটার্ন নিচ্ছে। হাস্যোজ্জ্বল হয়ে এলো প্রিয়’র চোখমুখ। আজ পুরো এক মাস পঁচিশ দিন পর শতাব্দকে দেখলো! গলা উঁচিয়ে একবার ডাকতে চাইল। পাশের সিটে বাবাকে দেখে দমে গেল। চোখ ভরে এলো জলে। ইমান্দিপুরে যেয়ে শতাব্দ নিশ্চয়ই প্রিয়’কে খুঁজবে। প্রিয়’য়কে না পেলে কি রেগে যাবে!

চলবে…….

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

১৯.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

ঢাকায় এসে কোথাও মন বসাতে পারছেনা প্রিয়। সবকিছুতে কেমন অস্বস্তি লাগছে। মাথায় শুধু শতাব্দের কথা ঘুরছে সারাক্ষণ। শতাব্দ কি খুব বেশি রেগে আছে?
রাতের খাবারে আমেনা বেগম বিশাল আয়োজন করেছে। অনেকদিন পর মেয়ে বাড়িতে এসেছে। মেয়ের পছন্দের সব খাবারে টেবিল সাজিয়েছে। পাশে বসে প্লেটে এই আইটেম ওই আইটেম তুলে দিচ্ছে। এত খাবার দেখেই হাঁপিয়ে উঠেছে প্রিয়। কপাল কুঁচকে আওয়াজ করে বলল,
‘ পেট ভরে গেছে মা। আর খাবোনা।’
আমেনা বেগম ভড়কে বললেন,
‘ তোর পছন্দের জিনিস রান্না করেছি সব।মাত্রই তো খেতে বসলি। এত তাড়াতাড়ি পেট ভরে গেল। শরীর ঠিক আছে তো তোর?’
বিরক্ত হলো প্রিয়। বলল,
‘ শরীর পুরোপুরি সুস্থ মা। দুইজন মানুষের খাবার প্লেটে তুলে দিচ্ছ। এত খাবার এক সাথে খাবো কি করে?’
মেয়ের কথা আমেনা বেগমের বিশ্বাস হলোনা সন্দিহান দৃষ্টিতে চাইল একবার। গম্ভীর কন্ঠে আওড়াল,
‘ আসার পর থেকে এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে তোর?’
‘ কিছুনা মা। জার্নি করে একটু ক্লান্ত লাগছে। ঘুমাবো।’
আমেনা বেগম আর জোর করলেন না। ঘরে পাঠিয়ে দিলেন মেয়েকে। ঘরে এসে বিছানায় বসলেই বাবা আর প্রভা এলো। প্রিয়’র অনুপস্থিতে এতোদিন কি কি ঘটেছে উৎসাহ নিয়ে বলছে সব।
বারবার ঘড়ি দেখছে প্রিয়। শতাব্দের সাথে কথা বলার জন্য উসখুস করছে মন। কারো সামনে বের করতে পারবেনা ফোন। অস্বস্তি চিন্তায় নাজেহাল অবস্থা তার।
রাত বারটা বাজছে।মাত্রই ঘুমিয়েছে প্রভা। সবাই ঘুমানোর পর ব্যাগ খুলে মোবাইল বের করল প্রিয়। মোবাইল অন করতেই। উঁচু আওয়াজ হলো। তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে অন্ধকার জানালার দিক পা বাড়াল প্রিয়। দ্রুত হাতে ফোন সাইলেন্ট করলো। ঝটপট করে শতাব্দের নাম্বারে ফোন দিলো। রিং হচ্ছে অপর পাশ থেকে তুলছেনা ফোন। আবারো ফোন করলো প্রিয়। বেজে বেজে কেটে গেল। কষ্টে কান্না পেল প্রিয়’র। শতাব্দ কি রেগে আছে তার উপর? এর জন্যই কি ফোন তুলছে না। ডুকরে কেঁদে উঠল হ্ঠাৎ। আচানক পেছন থেকে প্রভার হতভম্ব আওয়াজ ভেসে এলো,
‘ ফোন! কোথা থেকে পেলি আপা? প্রেম করছিস তুই?’
ভয়ে আঁতকে উঠল প্রিয়। চোখমুখ মুছে, তড়িঘড়ি পায়ে প্রভার কাছে এলো। প্রভার মুখ চেপে বলল,
‘ আস্তে আব্বা আম্মা শুনে ফেলবে।’
প্রভা শুনলো না। আগের মত ভড়কে যাওয়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ আপা কতদিন ধরে চলছে এসব। ছেলেটা কোথাকার? ঢাকার নাকি ইমান্দিপুরের? তোর সাথে তার কিভাবে পরিচয়? তাড়াতাড়ি বল আপা’
প্রভার কন্ঠে প্রচন্ড তাড়া, চাপা উত্তেজনা। প্রিয় হাত বাড়িয়ে দিলো। গম্ভীর হয়ে বলল,
‘ তার আগে আমাকে ছুঁয়ে কথা দিতে হবে কাউকে বলবি না তুই। কাউকে না।’
চোখমুখ ছোট হয়ে এলো প্রভার। আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
‘ আমি কি কারো কথা কারো কাছে বলি আপা?’
‘ আলবাত! বিশ্বাস নেই। যদি মায়ের সামনে উবলে ফেলিস।’
‘ আচ্ছা, বলবো না। এবার বলো।’
‘ সে ইমান্দিপুরের। বেশ পাওয়ারফুল ফ্যামিলির বড় ছেলে। নাম শতাব্দ। ঢাকা মেডিকেলে পড়াশোনা করছে।’
প্রভাকে বিস্তারিত কিছু বলল না প্রিয়। প্রভাকে এক পয়সার ভরসা পায়না সে। দেখা যাবে মায়ের কাছে ভালো সাজতে গিয়ে উবলে ফেলেছে সব। শতাব্দের ব্যাপারে বিন্দু মাত্র রিস্ক নিবেনা সে।
প্রভা নেচে উঠল খুশিতে। খুশিতে গদগদ করে বলল,
‘ তার মানে সে ভবিষ্যৎ ডাক্তার। ওয়াও। নিশ্চয়ই ভীষণ হ্যান্ডসাম তাই না আপা? তোকে খুব ভালোবাসে?’
প্রভার দিক গোল গোল চোখ করে তাকালো প্রিয়। চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,
‘ এত জানতে হবেনা তোকে। ছোট ছোট’র মত থাক।’
‘ এটা ঠিক না আপা। তুই আমাকে ভুলভাল বুঝ দিচ্ছিস। বি..
ফোনের ভ্রাইবেশন বেজে উঠল হ্ঠাৎ। অন্ধকারে বারবার আলো নিবছে আর জ্বলছে। কেঁপে উঠল প্রিয় শতাব্দের ফোন কাঁপাকাঁপি হাতে ফোন তুলে কানে ধরতেই অপর পাশ হতে শতাব্দের অস্থির আওয়াজ ভেসে এলো,
‘ আমি তোমাদের বাড়ির সামনে। নিচে আসো। এক্ষুনি!’
‘ কিন্তু….
‘এক্ষুনি নিচে আসছ তুমি! কুইক।’
প্রিয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, ফোনটা কেটে দিল শতাব্দ। ফোন হাতে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল প্রিয়। পাশ থেকে প্রভা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছে আফা? এমন জমে আছো কেন?’
পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়। যন্ত্রের মত করে বলল,
‘ সে এসেছে। আমাকে নিচে যেতে বলছে।’
‘ কি! উনি এখানে এসেছে আপা?’
‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়াল প্রিয়। হতভম্ব হয়ে থাকা প্রভার মুখটা আচমকা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে এলো। লাফিয়ে উঠল। গদগদ করে বলল,
‘ ওয়াও! ভাইয়া কত রোমান্টিক মুভির হিরোদের একদম।’
রেগে গেল প্রিয়। প্রভার দিক সরু দৃষ্টিতে চেয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। চিন্তিত হয়ে বলল,
‘ নিচে যাবো কি করে! আব্বা টের পেয়ে যায় যদি?’
‘ ওহো আপা! এত চিন্তা করছিস কেন। আমি আছি না? এক্ষুনি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
‘ কিন্তু…
‘ কিন্তুকিন্তু না করে তাড়াতাড়ি নিচে যা। নয়তো তোর হিরো উপরে চলে আসবে আপা।’
ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে চাবি এনে, ধীরপায়ে দরজার দিক এগিয়ে গেল দুবোন। দরজা খুলে দিয়ে প্রভা ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ তুই যা, আমি এদিকটা দেখছি আপা। বারান্দায়ই আছি।’
থতমত মুখে উপর নিচ মাথা ঝাকাল প্রিয়। ভয় চিন্তায় হাতপা থরথর করছে তার। ধীর পায়ে শব্দহীন বেড়িয়ে পড়ল প্রিয়। প্রভা জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। রাস্তার ওই পাড়ে মেরুন গাড়ি দাঁড়িয়ে। পাশে একজন পুরুষ মানুষের ছায়ামূর্তি দেখা যাচ্ছে। ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোয় মানুষটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। উত্তেজনায় মাথা উঁচিয়ে দেখতে চাইল প্রভা। কিন্তু অন্ধকার হওয়ায় তার চেষ্টা বিফল হলো। দেখতে পেলো না শতাব্দকে।

ঘড়িতে রাত সাড়ে বারট। ঢাকার রাস্তাঘাট এখনো সজাগ। শোঁশোঁ করে গাড়ি চলছে। গায়ে পাতলা চাদর জড়িয়ে, গ্রিন সিগ্ন্যালের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। সিগ্ন্যাল পড়তেই দ্রুত পায়ে ছুটে গেল প্রিয়। অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দ। বিধ্বস্ত মুখ। এলোমেলো চুল। কাছাকাছি যেতেই থমথমে হয়ে গেল প্রিয়। পা জোড়া কাঁপাকাঁপি শুরু করল। রেগে যাবেনা তো শতাব্দ?
ভয়ে জড়সড় পায়ে শতাব্দের সামনে দাঁড়াল। কাঁপা কাঁপা ভীতু স্বরে বলল,
‘ আ..আমি জানতাম না হুট করে আব্বা এসে ঢাকায় নিয়ে আসবে……আপনাকে ফোন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাশে খালা থাকায়.. সরি..’
আচমকা হেঁচকা টান দিয়ে বুকে মিশিয়ে নিলো শতাব্দ। প্রিয় থমকে গেল। ঝটপট করে কথা বলাটা, থেমে গেল হুট করে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আষ্টেপৃষ্টে মিশিয়ে নিলো শতাব্দ। উৎকণ্ঠা স্বরে বলল,
‘ অনেক মিস করছি প্রিয়! খুব, খুব, খুব বেশি।’
স্তব্ধ হয়ে গেল প্রিয়। আচানক চারিপাশের সবকিছু থমকে গেল যেন। শক্ত মূর্তি বনে দাঁড়িয়ে রইল। শতাব্দের হাতের বাঁধন আলতো হলো। প্রিয়’কে মুখোমুখি দাঁড় করালো। গাড়ির জানালার কাচ যেয়ে ঠেকলো প্রিয়’র পিঠে। ল্যাম্পপোস্ট থেকে সামান্য দূরে বড় বটগাছটার নিচে দাঁড়িয়ে। ল্যাম্পপোস্টের আবছা হলদেটে আলোটা প্রিয়’র মুখ ছুঁইছে। তিরতির করে কাঁপছে প্রিয়’র আঁখিপল্লব। অনুভূতি, উত্তেজনায় উসখুস করছে। খোলা কেপ মৃদু বাতাসে থরথর করছে। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শতাব্দ। দৃষ্টিতে প্রিয়তমাকে কাছে পাওয়ার অসীম তৃষ্ণা। নেশাতুর চোখ জোড়ায় গভীর ঘোর। ধীরেধীরে তা আরো তীব্র হচ্ছে। অজানা কোন ব্যথি’র মত সারা অঙ্গ শুষে মাথায় চড়ছে এখন। নিষিদ্ধ, অবাধ্য এক ইচ্ছা জাগ্রত হলো মনে। আচানক প্রিয়’কে চেপে ধরল। গাড়ির সাথে মিশিয়ে নিলো। ঠোঁট জোড়ায় গভীর করে চুমু দিলো। বিমূঢ় প্রিয়। শক্ত পাথরের মত জমে গেছে সে। সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি বইছে। বিভ্রান্ত চোখ জোড়া গোল গোল করে চেয়ে। উন্মাদের মত আচরণ করছে শতাব্দ। চোখ গাল কপালে অনবরত ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে। যেন হাজার বছর অপেক্ষা’র পর কোন অমূল্য রত্ন পেয়েছে। অদ্ভুত পাগলাদে তার আচরণ। অসহায় প্রিয় দাঁড়িয়ে। অনুভূতি শরীর ধরধর কাঁপছে। কন্ঠে অচেনা এক তৃষ্ণা জমে।
বেশ কিছু সময় থামলো শতাব্দ। চোখ বুজে প্রিয়’র কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে ভারী ভারী নিশ্বাস ফেলল। একটু সময় নিয়ে গভীর উৎকণ্ঠা স্বরে ডাকলো,
‘ আমার প্রিয়’
কেঁপে উঠল প্রিয়। শতাব্দের এমন অধিকার নিয়ে উৎকন্ঠা আওয়াজটা বুক চিড়ে গেল। অজানা এক আনন্দ মনে যেয়ে ঠেকলো। চোখ বুজে আছে প্রিয়। শতাব্দ আবারো আগের মত ডেকে বলল,
‘ ড্যাম! ঠিক এই ভয়টাই ছিল….আবারো কন্ট্রোলেস…আমি এত নিয়ম বেঁধে ভালোবাসতে পারব না প্রিয়!….চেষ্টা করেছি হচ্ছেনা, পারছিনা। ভদ্রপ্রেমিক হওয়াটা কি খুব জরুরী? পারছিনা তো! চলো, বিয়ে করে ফেলি? তারপর পুতুল সাজিয়ে চোখের সামনের বসিয়ে রাখবো সারাক্ষণ! যখন ইচ্ছা ধুপধাপ চুমু খাবো তখন।’
লজ্জায় মিয়িয়ে গেল প্রিয়। চোখজোড়া আরো শক্ত করে বুজে নিলো। মানুষটা এমন বেফাঁস, শিথিল কেন?
প্রিয়’র কানের পেছন চুল গুজে দিতে দিতে বলল শতাব্দ,
‘ ইমান্দিপুর গিয়ে তোমাকে না পেয়ে মাথা আউলে গেছিল। সবকিছু তছনছ করে দিতে ইচ্ছে করছিল। ঘরে যাওয়া হয়নি। গাড়ি থেকেই ফিরে এসেছি। এই বিরহ যন্ত্রণা আর ভালো লাগেনা প্রিয়। চলো বিয়ে করে ফেলি। এই কাপড়ে, এক্ষুনি!’
শতাব্দের এমন কথায় বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়। ছেলেমানুষী আবদারে ফিক করে হেসে ফেলল। বলল,
‘ আব্বা- মা মানবেনা কখনি।’
ঝুঁকে এলো শতাব্দ। প্রিয়’র আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল ডুবিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
‘ মানিয়ে নিবো আমি।’
শতাব্দের চোখমুখ বেশ সিরিয়াস। প্রিয় সম্মতি দিলে এখনি কাজি অফিসে চলে যাবে। মাথা ঝুঁকিয়ে নিলো প্রিয়। নিচের দিক তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ধীর কন্ঠে বলল,
‘ বড় আপা কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিল। পরে অবশ্য জানাজানির পর আনুষ্ঠানিক ভাবে আব্বা তুলে দিয়েছিল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। আপা মারা যাবার এতদিন পরও তা ভেবে কষ্ট পায় আব্বা। আমি চাইনা আমার জন্য আবারো কষ্ট পাক আব্বা।’
খানিক নীরব থেকে মাথা তুলে তাকালো প্রিয়, শতাব্দের চোখেচোখ রেখে ধরে আসা নিবিড় কন্ঠে বলল,
‘ আমি আপনাকে চাই শতাব্দ। খুব করে চাই। তবে সবার অনুমতি দোয়া নিয়ে আপনাকে পেতে চাই।’
চোখ চিকচিক করছে প্রিয়’র। প্রচন্ড অনুভূতিতে হয়তো। ঠোঁট মেলে হাসলো শতাব্দ। দু’কদম এগিয়ে এলো। প্রিয়’র হাত জোড়া হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
‘ কথা দিচ্ছি, সবার অনুমতি নিয়ে ঘটা আয়োজন করে লাল শাড়িতে মুড়িয়ে বউ সাজিয়ে ঘরে তুলবো তোমায়।’
লজ্জায় মিয়িয়ে গেল প্রিয়। দৃষ্টি সরিয়ে, মাথা নুয়ে নিলো। মনে মনে বলল,
‘ সেই দিনটার অপেক্ষায় রইলাম’

প্রিয়’কে রাস্তা পাড় হতে দেখে, তড়িঘড়ি করে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো প্রভা। দরজা খুলতেই ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল প্রিয়। ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ টের পায়নি তো কেউ’
‘ উহু, নজর রেখেছি। দরজা আটকে বারান্দায় ছিলাম এতক্ষণ।’
ফোঁস করে স্বস্তির শ্বাস ফেলল প্রিয়। ঘরে যেতেই উত্তেজনায় ঝেঁকে ধরলো প্রভা। টাইপিং মেশিনের মত অনর্গল প্রশ্ন ছুঁড়তে লাগল,
‘ ভাইয়া চলে গেছে? কোথায় যাবে এখন? ইমান্দিপুরে? এত রাতে!… আচ্ছা এতক্ষণ কি বললি তোরা পার্সোনাল কিছু? আমাকে বলা যাবে? আচ্ছা আপা ভাইয়া কি রেগে ছিল? তুমি…
‘ আস্তে প্রভা। ধম ফেল। এত কথা কেউ এক সাথে বলে? শ্বাস আটকে ম*রে যাবি তো।’
মুখ চুপসে নিলো প্রভার। বিড়বিড় করে বলল,
‘ এমন করছ কেন বলো না আপা!’
ছোট নিশ্বাস ফেলল প্রিয়। শান্ত স্বরে বলল,
‘ সে এখন এখানে তার এপার্টমেন্টে গেছে। কাল সকালে ইমান্দিপুর যাবে। রেগে ছিলনা। চিন্তা করছিল একটু। আর সব কথা শুনতে হবে কেন তোর?’
চোখমুখ কুঁচকে নিলো প্রভা। চাদরের নিচ থেকে চকলেটের বক্সটা বের করল প্রিয়। প্রভার দিক এগিয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ সে দিয়েছে, এটা তোর জন্য।’
চকলেট বক্স দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠল প্রভা। তড়িঘড়ি হাতে নিয়ে গদগদ কন্ঠে বলল,
‘ ওয়াও! Ferrero Rocher. তাও আবার আটচল্লিশ পিসের! এটা তো অনেক দামী…আমার ভীষণ পছন্দের … ভাইয়া জানলো কি করে?’
‘ আমার জন্য এনেছিল। তোর কথা শুনে তোকে দিতে বলল। আরো বলল, পরেরবার গিফট নিয়ে আসবে তার শালিকার জন্য।’
প্রভা এবার খুশিতে নেচে উঠল। বলল,
‘ আজ দেখতে পারিনি। পরেরবার অবশ্যই ভাইয়াকে সামনা সামনি দেখবো। আর গিফটও নিবো। আচ্ছা আপা, ভাইয়া কি খুব হ্যান্ডসাম? ‘
‘ হুম, খুব।’
‘ কেমন?’
‘ স্বপ্নের রাজপুত্রের মত।’
‘ তোমার স্বপ্নে আসে?’
‘ আসে। এসে, ভীষণ রকম জ্বালায় রোজ।’
ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে চোখ বুজে নিলো প্রিয়। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে যে! স্বপ্ন জগতে আসবে তো সে?

চলবে……

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।