ফিলোফোবিয়া পর্ব-২০+২১

0
533

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

২০.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

আজ ঈদ। সকাল থেকে বাড়িতে হৈচৈ। ঈদগাহ মাঠ থেকে ফিরে জাফর সাহেব মেয়েদের দেখতে না পেয়ে আওয়াজ দিলেন। ঈদের দিন ছেলে মেয়েরা আনন্দে হুল্লোড়ে মেতে থাকবে এতেই তো উৎসবের আনন্দ আরো দ্বিগুণ হবে। জাফর সাহেবের আওয়াজ শুনে হুড়াহুড়ি করে ছুটে এলো দুই মেয়ে। কার আগে কে সালাম করবে তা নিয়ে ধাক্কাধাক্কি। প্রিয় দ্রুত সালাম করে তড়াক করে উঠে বাবার সামনে হাত ফেলে বলল,
‘ আব্বা আমার ঈদ সালামি।’
প্রভা কপাল কুঁচকে নিলো। ঝাঁঝালো গলায় বলল,
‘ আপার আগে আমি এসেছি। আমাকে আগে সালামি দিবে আব্বা।’
‘ তাতে কি! সালাম তো আমি আগে করেছি।’
ভ্রু নাচিয়ে বলল প্রিয়। প্রভা রেগে হাতপা ঝেরে বলল,
‘ ভালো লাগেনা প্রত্যেকবার তুই জিতিস। উফ!’
মুখ ভেঙ্গচি কাটল প্রিয়। কাঁধ নাচিয়ে বিজয়ের হাসি হাসল। মেয়েদের খুঁনসুটিতে জাফর সাহেব হেসে ফেলল। মেয়েদের হাতে সালামি তুলে দিতেই মেয়েরা খুশিতে নেচে-কুঁদে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। মায়ের কাছ থেকেও তো সালামি আদায় করতে হবে!

রাতে খাওয়াদাওয়ার পর মায়ের ঘরে গেল প্রিয়। মা তখন ঘর গোছাতে ব্যস্ত। গলা ঝেড়ে ডাকলো প্রিয়। আমেনা বেগম ঝাড়ু দিতে দিতে মেয়ের দিক এক পলক তাকালেন। জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে প্রিয়। মেয়ের কাচুমাচু মুখ দেখে আমেনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কিছু বলবি!’
প্রিয় যেন সাহস পেল। নীচু গলায় বলল,
‘ কাল দিতীদের বাড়ি আমাকে আর প্রভাকে দাওয়াত করেছে। যদি তুমি বলো….
প্রিয়’র কথা কেটে, আড়ষ্ট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন আমেনা বেগম,
‘ দিতী কে? তোর ক্লাস সেভেনের বান্ধবী। যার বাবা ওইবার ইলেকশন করেছে?’
মাথা ঝাকাল প্রিয়। আমেনা বেগম একটু চুপ থাকল। তারপর বলল,
‘ নেতার বাড়ি, বখাটেদের ভিড় থাকে সবসময়। যেতে হবে না কোথাও।’
‘ ও অনেক করে বলছে। বাড়িতে কেউ নেই। প্রভাও তো সাথে যাবে।’
আমেনা বেগম সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো মেয়ের দিক।বললেন,
‘ যেতেই হবে?’
উপর নিচ মাথা ঝাঁকাল প্রিয়। আমেনা বেগম বললেন,
‘ গেলে তুই একা, প্রভা যাবেনা।
এতক্ষণ দরজার আড়ালে থেকে সব শুনছিল প্রভা। না যাওয়ার কথা শুনে আড়াল থেকে বেড়িয়ে এলো। মুখ কালো করে। কান্না মত মুখ করে বলল,
‘ কেন মা! আমিও আপার সাথে যাবো।’
‘ প্রিয়’র বন্ধু তুই কেন যাবি?’
প্রভার সুরে তাল মিলিয়ে বলল প্রিয়,
‘ ওকেও দাওয়াত করেছে। সাথে চলুক না মা!’
‘ আগামীকাল তোর আব্বার কলিগ সুহাস আহমেদ পরিবার সহ আসবেন। বাড়ি তোদের কাউকে না পেলে কি ভাববে?’
‘ কিন্তু মা….
‘ আর কোন কথা শুনতে চাইছিনা। প্রিয়’র বন্ধু ও যাক।তুই আমার সাথে বাড়িতে থাকছিস প্রভা।’
কড়াকড়ি করে বললেন আমেনা বেগম। মায়ের কথার পিঠে কথা বলার সাহস পেলনা প্রিয় প্রভা। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল চুপচাপ।

সচ্ছ আকাশ। সকালে মেঘ মেঘ গুমোট ভাব থাকলেও এখন একদম উজ্জ্বল আকাশ। ঝলমল করছে প্রকৃতি। ড্রাইভিং সিটে বসে আছে শতাব্দ। রোদচশমা চোখে। সূর্যের প্রচণ্ড তাপ। তীর্যক আলো পড়ছে চোখেমুখে। ভাপসা গরম ছেড়েছে। পাঞ্জাবির কলারটা পেছন দিকে হেলিয়ে দিলো শতাব্দ। গাড়ির সামনের কাচের আড়াল থেকে প্রিয়কে দেখা যাচ্ছে। কালো গ্রাউন পড়েছে। এক হাতে হ্যান্ড ব্যাগ অন্যহাতে গ্রাউনের কুচি ধরে এদিকটায় আসছে। কোমর ছোঁয়া খোলা লতানো কেশ। লাজুক চোখমুখ। নিমিষেই অদ্ভুত এক মুগ্ধতা ছুঁয়ে গেল শতাব্দকে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল সে।
গাড়ির জানালার কাচে টোকা পড়তে ঘোর কাটল শতাব্দের। দরজা খুলে দিলো সে। প্রিয় এসেছে। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো প্রিয়। বড় বড় শ্বাস ফেলছে। হাঁপিয়ে গেছে। ভ্রু কুঁচকে নিলো শতাব্দ। পানির বতলটা এগিয়ে দিলো। ঢকঢক করে এক বতল পানি শেষ করে ফেলল প্রিয়। অনবরত হাপাচ্ছে এখনো।
‘ হাপাচ্ছ কেন? কি হয়েছে?’
একটু সময় নিয়ে প্রিয় উত্তর দিলো,
‘ এলাকার অনেকেই আব্বার পরিচীত। সেই সুবাদে আমাদেরকেও চিনে। যদি কেউ দেখে আব্বাকে বলে দেয় কেলেঙ্কারি ঘটে যাবে।’
‘ প্রভা যাবেনা?’
‘ না, আজ দুপুরে বাসায় মেহমান আসছে। তাই প্রভাকে আসতে দেয়নি মা।’
গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে শতাব্দ জিজ্ঞেস করল,
‘ কোথায় যেতে চাও’
‘ আপনার এপার্টমেন্টে।’
প্রিয়’র অকপট আওয়াজে ভড়কে গেল শতাব্দ। পাশ ফিরে বিমূঢ় দৃষ্টিতে প্রিয়’র দিক তাকালো। প্রিয়’র সহজ সরল অকপট মুখ। আবার জিজ্ঞেস করল,
‘ কোথায় যাবে?’
‘ আপনার এপার্টমেন্টে। কেন?’
কপাল কুঁচকে সরল কন্ঠে জিজ্ঞেস করল প্রিয়। শতাব্দ হেসে ফেলল বলল,
‘ যা বলছো ভেবে বলছো তো?’
‘ এখানে ভাবাভাবির কি আছে। আপনার এপার্টমেন্টে দেখার খুব ইচ্ছা আমার। তাই আজ যখন সময় সুযোগ পেয়েছি তাই সেখানেই যেতে চাই।’
প্রিয়’র চাহনিতে নিছক সরলতা। সেখানে নেই কোন মিথ্যা অভিনয়, কৃত্রিমতার আশ্রয়। হেসে ফেলল শতাব্দ। বলল,
‘ এতটা সরলতাও ভালো নয় প্রিয়। তুমি আমার সাথে আমার এপার্টমেন্টে যেতে চাইছ! ভয় করছেনা তোমার? যদি তোমার ক্ষতি করে ফেলি!’
‘ ক্ষতি করার হলে আগে থেকে সাবধান করেনা কেউ। তাছাড়া আমার আপনার উপর ভরসা আছে!’
‘ কারো উপর এতো ভরসা রাখা ভালোনা প্রিয়। আমার তো নিজের উপর একবিন্দুও ভরসা নেই।’
‘ আপনি যেই কেউ না। আপনি আমার….
এতটুকু বলে থেমে গেল প্রিয়। ঠোঁট মেলে হাসলো শতাব্দ। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি তোমার?’
প্রিয় চুপ। মুখের সামনে ঝুঁকে এলো শতাব্দ। ধীর আওয়াজে আবার জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি তোমার..তার পর কি প্রিয়?’
লজ্জায় মিয়িয়ে যাচ্ছে প্রিয়। বুক ধুকপুক করছে তার। কাচুমাচু হয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে নিলো। হাত জড়সড় করে শক্ত হয়ে বসে রইল। হেসে দুরে সরে গেল শতাব্দ। গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে জিজ্ঞেস করল,
‘ তুমি সত্যি আমার এপার্টমেন্ট দেখতে চাও?’
বাহিরে তাকিয়ে লাজুক মাথা ঝাকাল প্রিয়।

শতাব্দের এপার্টমেন্টে এসে হতভম্ব প্রিয়। বাড়িটা কি চমৎকার দেখতে। ভেতরে ওয়েল ফার্নিস্ট। ইমান্দিপুরের বাড়ি থেকে এখানকার এপার্টমেন্টটা আরো বেশি সুন্দর করে সাজানো। দারুণ ফার্নিচার। জমিন মার্বেল পাথরের সাদা ফকফকে টাইলস মোড়ানো। চারিদিকে হরেক রকম লাইটিং আর অভিজাত পূর্ন জিনিসে সাজানো। ভেতরের আয়োজন সাজানো দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে, যিনি সাজিয়েছে নিশ্চয়ই ভীষণ সৌখিন মানুষ তিনি। এতবড় এপার্টমেন্টে শতাব্দ একা থাকে? এখানে বড়সড় পরিবার বেশ আরাম করে থাকতে পারবে নিঃসংকোচ।
সোফায় বসে উসখুস করছে প্রিয়। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছে। গলা শোকাচ্ছে তার। শতাব্দকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইছে। করবে কি, করবে না তা নিয়ে ভাবছে। প্রিয়’র মনের উসখুস ভাবটা বুঝি বুঝল শতব্দ। জিজ্ঞেস করল,
‘ কিছু বলতে চাও?’
প্রিয় যেন সাহস পেল। হতভম্ব কন্ঠে গড়গড় করে বলতে শুরু করল,
‘ এটা কার এপার্টমেন্ট? এখানে আপনি একা থাকেন?’
‘ বিশ একুশ বছর আগে, দাদাভাই তখন ইমান্দিপুরের চেয়ারম্যান। বাবা যখন নতুন নতুন ব্যবসা শুরু করলেন। ব্যবসার সুবাদে বেশিভাগ সময় এখানে থাকতে হতো বাবাকে। তাই আমি আর মা, বাবার সাথে এখানে থাকতাম। এই বিল্ডিংয়ের কাজ চলছিল তখন। বাবার ব্যবসার অবস্থাও বেশ ভালো ছিল। এপার্টমেন্ট গুলো বেশ সস্তা পানির দামে বিক্রি করছিল। তাই বাবা একটা কিনে রেখেছিল। কয়েক বছর এখানে ছিলাম। ইমান্দিপুরে ফিরে যাবার পর এতবছর এমনি পরেছিল। বছর তিনেক আগে রি- ডেকোরেট করা হয়েছে।’
প্রিয় জ্ঞানী ব্যক্তিদের মত মাথা ঝাকিয়ে বলল, ‘ওহ।’
শতাব্দ প্রিয়’রকে অন্যসব ঘর গুলো দেখাতে নিয়ে গেল। সব ঘর খালি পড়ে, তালাবদ্ধ। তালা খুলে এক এক করে দেখাচ্ছে শতাব্দ। সবশেষে শতাব্দের ঘরে ঢুকলে প্রিয় থমকে গেল। চোখমুখে চরম বিস্ময়ের ছাপ। সবকিছু এলোমেলো অগোছালো। কাপড়চোপড় বইপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বিছানার অবস্থাটাও বেহাল। এত সুন্দর ঘরটার এই কি হাল। কিংকর্তব্যবিমূঢ় প্রিয়। প্রশ্নসূচক বিমূঢ় দৃষ্টিতে শতাব্দের দিক মাথা তুলে তাকালো। শতাব্দ বলল,
‘ কাজের লোক ছুটে আছে। তাই গোছগাছ করা হয়নি।’
প্রিয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। টেনে বসার ঘরে নিয়ে এলো শতাব্দ। সোফায় আরাম করে বসে। ঘড়ির দিক তাকালো। তিনটা বাজতে চলছে। প্রিয়কে জিজ্ঞেস করল,
‘ ক্ষুধা পায়নি তোমার? আমার কিন্তু প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। সেই ভোরে বাড়ি থেকে নাস্তা করে বেরিয়েছি।’
‘ এত সকালে কেন?’
‘ বন্ধুদের সাথে গেটটুগেদার ছিল।’
‘ ওহ’ ঠোঁট গোল করে বলল প্রিয়।
‘ ক্ষুধা লেগেছে না? কি খাবে বলো?’
প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। ক্ষুধায় চুঁচুঁ করছে পেট। এক্সাসাইটমেন্টে সকালে নাস্তাটাও করেনি। লজ্জা, জড়তায় ভদ্রতাসূচক বাক্যে মুখে বলল,
‘ ক্ষুধা লাগেনি। পেট ভরা আমার।’
প্রিয়’র জড়তা বুঝল শতাব্দ। বলল,
‘ আমার পছন্দ মত কিছু নিয়ে আসবো। আমি বাহির থেকে লক করে দিয়ে যাচ্ছি। থাকতে পারবে? ভয় পাবেনা তো।’
মাথা নাড়াল প্রিয়। যার অর্থ ভয় পাবেনা। পকেট থেকে অন্যফোনটা বের করে প্রিয়’র হাতে দিয়ে বলল,
‘ ভয় পেলে ফোন করো।’
শতাব্দ বেরিয়ে গেল। মিনিট পাঁচেক এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে শতাব্দের ঘরে গেল। এলোমেলো সবকিছু দেখে অস্থির লাগছে প্রিয়’র। প্রথমে ঘরের জানালা দরজা খুলে দিলো। তারপর কোমরে ওড়না বেঁধে ঘর গুছাতে নেমে পড়ল। সবকিছু গোছগাছ শেষ করতে গিয়ে ক্লান্ত প্রিয়। হাত পা ছড়িয়ে সোফায় বসে পড়ল। মা এমন গোছগাছ করতে দেখলে, ভীষণ খুশি হতো নিশ্চয়ই! ভেবেই হেসে ফেলল প্রিয়। আচমকা, বিছানার পাশে ছবির ফ্রেমের দিক চোখ আটকালো। হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো। চেয়ারম্যান সাহেব, শতাব্দ, তার মা কিন্ত পাশের লোকটাভীষণ চেনা চেনা লাগছে। এর আগে কোথাও কি দেখেছে? কোথায় দেখেছে!
মনে করার চেষ্টা করল প্রিয়। পারছেনা। কোথাও তো অবশ্যই দেখেছে।

বিকালের শেষ প্রহর। মুড়ছে পড়েছে সূর্যের আলো। তাপটা মিলিয়ে মৃদু বাতাস বইছে। র*ক্তবর্ণ সূরটা এখন নেতিয়ে গেছে। গোধূলি লগ্ন প্রায়। সোফায় জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে প্রিয়। অবাধ্য চুল চোখ ছুঁইছে বারবার। তিরতির কাঁপছে ঠোঁট। মৃদু বাতাসে শীত শীত কি লাগছে? আরো গুটিয়ে নিলো নিজেকে। হঠাৎ কেউ কপাল ছুঁয়ে কানের নিচে চুল গুজে দিলো। কারো অকস্মাৎ স্পর্শে কেঁপে উঠল প্রিয়। ধরফরিয়ে উঠে বসলো। ভড়কে যাওয়া বড়বড় দৃষ্টি মেলে সামনে তাকাতেই চমকাল। হেসে ফেলল শতাব্দ। বলল,
‘ শুভ বিকেল! তোমার কফি।’
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল প্রিয়। নড়েচড়ে উঠে বসলো। চুল ঠিক করতে করতে বলল,
‘ আপনি কখন এলেন?’
‘ অনেকক্ষণ।’
‘ ডাকেননি কেন?’
‘ ইচ্ছা করল না। ঘুমন্ত প্রিয়কে দেখতে ভীষণ মিস্টি লাগছিল।’
মুচকি হাসল প্রিয়। বলল,
‘সরি হুট করে আপনাকে দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম।’
‘ আমার বাড়িতে ঢুকে আমার প্রিয়কে ছোঁয়ার সাধ্যি কার?’
আবারো হাসলো প্রিয়। লজ্জায় মাথা নুয়ে নিলো। সামনের টেবিলে গরম ধোঁয়া উঠা কফি দেখে বলল,
‘ কফি কে করেছে! আপনি?’
‘ রাতবিরেতে কফি খাওয়া’র বদঅভ্যাস তাই….’
এক্সাইটেড হয়ে তড়িঘড়ি করে কফির মগ তুলতে গিয়ে হাতের দিক চোখ পড়লো গাজরা গোলাপের মালা। চমকালো প্রিয়। বিস্মিত দৃষ্টিতে শতাব্দের দিক তাকালো। প্রিয়’র চোখেমুখে খুশির আমেজ উল্লাস স্পষ্ট।
‘ আপনি কি করে জানলেন আমার গাজরার মালা হাতে পড়তে পছন্দ?’
‘ উম! মনে হলো!’
‘ ধন্যবাদ।’
খুশিতে উজ্জ্বল চোখমুখ নিয়ে বলল।
কফির মগ হাতে তুলে চুমুক দিচ্ছে প্রিয়। নিমিষ চেয়ে রইল শতাব্দ। চোখ জুড়ে কি নিদারুণ সরলতা, পবিত্রতা। কপালে পড়ন্ত চুল গুলো গুছিয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা। কোমরে বেঁধে রাখা ওড়না। সাধারণের ভেতর ভীষণ অসাধারণ মেয়েটা। তার আশেপাশে থাকলে কেন এত অগোছালো হয়ে যায় শতাব্দ! তার ব্যক্তিত্ব, অস্তিত্ব ভুলে। নিজেকে ভুলে অন্য এক শতাব্দ হয়ে যায়। কোন এক অদ্ভুত নেশা টানে। বারবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করে প্রিয়কে।
শতাব্দকে এমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে নড়েচড়ে বসলো প্রিয়। কফির কাপ রাখার বাহানায় উঠতে গেলে আচমকাই পেছন থেকে হাত আটকে ধরল শতাব্দ। টেনে তার সামনের টেবিলটায় বসালো। প্রিয়’র কোমর থেকে ওড়নার গিট খুলে গায়ে জড়িয়ে দিতে দিতে বলল,
‘ এসব কেন করেছ প্রিয়?’
‘ আপনার ঘর অগোছালো ছিল তাই…
চোখ তুলে তাকালো শতাব্দ। প্রিয়’র কথা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল। প্রিয়’র হাত জোড়ায় গভীর করে চুমু দিলো। হাতে পিঠে আঙ্গুল ছুঁয়ে দিতে দিতে, চোখে চোখ ডুবিয়ে নেশাতুর নিমিষ কন্ঠে বলল,
‘ আমার বউ হয়ে সংসার করতে ইচ্ছা করছে? আমার কিন্তু করছে! এমন কোমরে ওড়না গিট দিয়ে তোমাকে কাজ করতে দেখে, আমার ভীষণ বউ পেতে ইচ্ছা করছে। পাশেই কাজি অফিস। বিয়ে করে নেই! কি বলো?’
বলে চোখ টিপলো শতাব্দ। লজ্জা মিয়িয়ে গেল প্রিয়। চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চাইল। মানুষটা এমন বেফাঁস, লাগামহীন কেন!

চলবে………

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

২১.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)

অন্ধকারে ঘনিয়ে এসেছে চারিপাশ। নভোমণ্ডল নিকষ কালো রূপ নিয়েছে। বিকালের আলো মাড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। শহরের রাস্তাঘাট কৃত্রিম আলোয় সেজে। মেঘ ডাকছে গুরুম গুরুম। বোধহয় ঝুম বৃষ্টি নামবে রাতে। গাড়ি বাড়ির রাস্তায় ঢুকতেই ব্যাগপত্র নিয়ে তৈরি হয়ে বসলো প্রিয়। বাড়ি থেকে সামান্য দূরে গাড়ি থামালো শতাব্দ। গাড়ি থেকে নামতে নিলে হাত চেপে আটকালো শতাব্দ। চোখ নাচিয়ে বলল,
‘ বাড়ি যাওয়ার এত তাড়া?’
আশেপাশে ব্যস্ত দৃষ্টিতে চোখ ঘুরালো প্রিয়। চোখেমুখে স্পষ্ট ভয়। কন্ঠে তাড়া জুড়ে বলল,
‘ অনেক দেরি হয়ে গেছে। আশেপাশের অনেকেই পরিচীত। কেউ দেখলে…..
‘ দেখবেনা কেউ। ঝড়ো হাওয়া ছেড়েছে, দোকানপাট গুছিয়ে বাড়ি যেতে ব্যস্ত সবাই।’
পেছনের সিট থেকে ব্যাগ এনে প্রিয়’র দিক এগিয়ে দিলো। বলল,
‘ তোমার আর প্রভার গিফট।’
হতভম্ব প্রিয়। ব্যাগের ভেতর বেশ দামি ব্যান্ডের পারফিউম আর কয়েকটা চকলেট বক্স। বিমূঢ় কন্ঠে বলল,
‘ এসবের প্রয়োজন ছিল না কোন। এগুলো বেশ দামি। আমি নিতে পারবো না বাসায়।’
বলতে বলে শতাব্দের দিক এগিয়ে দিলো ব্যাগ।সুক্ষ্ম দৃষ্টি মেলে তাকালো শতাব্দ। আড়ষ্ট কন্ঠে বলল,
‘ গিফট ফেরত নিবোনা আমি। এখন তুমি বাড়ি নিয়ে যাবে নাকি রাস্তায় ফেলে দিবে এটা তোমার ব্যপার।’
অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়। মলিন কন্ঠে বলল,
‘ কিন্তু…
‘ আমার কথা ঘুরবেনা প্রিয়।’
কথা কেটে বলল শতাব্দ। প্রিয় বাধ্য হয়ে ব্যাগটা নিতে হলো। প্রিয়’র কপালে আসা অবাধ্য কেশ আদুরে হাতে কানের পেছনে গুজে দিলো শতাব্দ। চোখে তার অন্তহীন, নিদারুণ প্রেম। বিবশ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল প্রিয়,
‘ আবার কবে দেখা হবে?’
‘ খুব দ্রুত। আগামী বুধবার ছোট মামা দেশে ফিরছে। এয়ারপোর্ট থেকে মামাকে পিক করে ইমান্দিপুরে আসছি।’
ভ্রু কুঁচকে নিলো প্রিয়, বলল,
‘ ছোট মামা? কোথায় থাকেন তিনি?’
‘ দুবাইতে ব্যবসা আছে। সেখানেই তার হেড অফিস। মাসের বেশির ভাগ সময়ই সেখানে কাটান। ব্যস্ততার কারণে অনেক বছর ইমান্দিপুরে আসা হয়না তার। এবার আসছে। লুবনার পা ভেঙেছে গতকাল। ফুপু ইমান্দিপুরে আছেন। তাই মামা এবার সরাসরি ইমান্দিপুরে আসছে।’
অবাক হলো প্রিয়। লুবনার পা ভেঙ্গেছে শতাব্দের মামা আসবে কেন? বিমূঢ় সুরে জিজ্ঞেস করল,
‘ মানে? লুবনার পা ভেঙ্গেছে উনি আসবেন কেন?’
‘ কারণ তিনি লুবনার বাবা। তাই।’
‘ লুবনার বাবা?’ অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল।
‘ হুম’
ফ্যামিলি পিকনিকে লুবনাকে দেখেছিল প্রিয়। ভীষণ অহংকারী মেয়ে। রাগ ভনিতা সবসময় নাকের আগায়। বাবার এমন অগাধ টাকা আছে বলেই বোধহয় এত অহংকারী মেয়ে। শতাব্দের দিকেও মেয়েটার অদ্ভুতরকম ঝোঁক।
প্রিয় আটকে আসা কন্ঠে বলল,
‘ আমি জানতাম না যে লুবনা আপনার ফুফাতো বোন মামাতো বোন দুইটাই।’
‘ তুমি ইমান্দিপুর কবে ফিরছ?’
‘ রবিবার।মা রেগে আছেন বোধহয়। আজ আসি?’
‘হু’
শতাব্দের নিমিষ চাহনির। নিষ্প্রাণ উত্তর।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল প্রিয়। রাস্তা পাড় হয়ে পেছন ফিরে শতাব্দের দিক তাকালো একবার। মিষ্টি হেসে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেল। পেছন থেকে নিমিষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো শতাব্দ। শুরু হলো, লম্বা এক অপেক্ষার প্রহর।

বুধবার বিকালে জুবাইদা এলো প্রিয়দের বাড়িতে। সবসময়ের মত নিজের ঘরে শুয়ে উপন্যাসের বই পড়ছিল প্রিয়। জুবাইদা মুখ বাঁকাল। হাঁকডাক দিয়ে বলল,
‘ শুয়ে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তোর? কি বইটই নিয়ে পড়ে থাকিস সারাদিন।’
জুবাইদাকে দেখে বই বন্ধ করে উঠে বসলো প্রিয়। চুল হাত খোপা করতে করতে বলল,
‘ এই সময় এখানে যে?’
‘ বড়মা ডেকেছে তোকে।’
প্রিয় নড়েচড়ে বসলো। কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমাকে? কেন?’
‘ ছোট ফুফা এসেছে। বাড়িতে ছোটখাটো গেটটুগেদারের আয়োজন করেছে।’
‘ সেখানে আমি যেতে কি করবো?’
‘ ভনিতা না করে চল। নয়তো, ভাই এসে কান টেনে নিয়ে যাবে।’
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়। চাপা উত্তেজনা চোখমুখে। কৌতূহলী কন্ঠে বলল,
‘ সে এসেছে?’
‘ হ্যাঁ, ভাইতো ফুফাকে নিয়ে দুপুরের আগেই চলে এসেছে।’
বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিলো জুবাইদা। বিছানা ছেড়ে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো প্রিয়। ঝটপট করে তৈরি হয়ে জুবাইদার সাথে বেরিয়ে গেল।

ছাদে ছোট ছোট তোষক বিছানো। ধবধবে সাদা চাদর, কুশন বিছিয়ে। বেশ সুন্দর করে সাজানো। গ্রুপ বেঁধে জায়গায় জায়গায় চায়ের আড্ডা চলছে। চায়ের সাথে ভাজাপোড়া, বিভিন্ন রকম ফাস্টফুড সহ নাস্তার বিশাল আয়োজন। এখানে এমন আয়োজন দেখে বেশ বিস্মিত প্রিয়। ইংলিশ সিনেমা গুলোতে দেখেছে, লাঞ্চ ও ডিনারের মাঝে এমন চা নাস্তার ব্যবস্থাকে ‘হাইটি’ বলে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে উচ্চবিত্ত বৃটিশদের মধ্যে বেশ প্রচলন ছিল।
জুবাইদার পাশে যেয়ে বসলো প্রিয়। শতাব্দের সাথে একবার চোখাচোখি হলো। ভীষণ ব্যস্ত সে। ছাদের অন্য পাশে ডিনারের জন্য মাটির চুলায় রান্না হচ্ছে। মোটামুটি বেশ বড়সড় আয়োজন। সেসব দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করতে ব্যস্ত এখন।

ল্যাপটপে বন্ধ করে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন শোয়েব হক। এতদিন পর পরিবারের কাছে এসেছেন সাপ্তাহ দু’একের জন্য। এতেও ফুরসত নেই কোন। হাজারো কাজ জমে। যদিও এতে তার সমস্যা হচ্ছেনা কোন। ভালোই লাগছে। এতবছর পর ইমান্দিপুর এসেছে। মানসিক শান্তির জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখাটা বেশ প্রয়োজন। আচমকাই চোখ আটকালো সামনের বাড়িটায়। বাগানবিলাসে ডেকে থাকা সেই পুরানো বাড়িটা। আগের মতই এখনো। আচ্ছা, বাড়িটা কি রঙ করেছে? হুম, হয়তো। গেটের সামনে সেই ডাকবাক্স। পুরানো সেই স্মৃতি! কিছুই বদলায়নি। শুধু সময় আর সেই মানুষটা ছাড়া। ভেবেই ব্যথাতুর হাসলো শোয়েব হক।
হঠাৎ, অদ্ভুত এক যন্ত্রণা অনুভব হলো বুকে। অতীতের কিছু স্মৃতি মাথাটা ঝেঁকে ধরলো। চোখ সরিয়ে দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ছাদের চারপাশের আলো গুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। আড্ডায় মশগুল সবাই। শোয়েব হক ছাদে উঠতেই হৈচৈ শুরু হলো। মামাকে সামনে নিয়ে বসেছে সমুদ্র। দুবাইয়ের শেখদের বিলাসী জীবন নিয়ে বেশ উৎসাহ তার। প্রশ্নের ঝুলি খুলে ঝেঁকে ধরেছে। ভাগিনার এমন কৌতূহল দেখে হেসে ফেলল শোয়েব হক। এক এক করে বলছে সব। কথার ফাঁকে রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রিয়’র দিক চোখ পড়তেই থমকে গেল সে। হতভম্ব চোখমুখ। বিমূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। এটাও কি সম্ভব! সত্যিই কি সে? তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো শোয়েব হক। প্রিয়’র সামনে যেয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ আয়শা?’
আচমকা শোয়েব হককে সামনে দেখে ঘাবড়ে গেল প্রিয়। ঠোঁটে কোনে হাসি টেনে সালাম জানালো। বলল,
‘ উহু, আমি জুবাইদার ফ্রেন্ড। প্রিয়। অশীতা জাফর প্রিয়।’
শোয়েব হকের চোখে মুখে স্পষ্ট হতভম্বের ছাপ এখনো। বিড়বিড় করে বলল,
‘ তুমি হুবহু তারমত দেখতে।’
মিষ্টি হাসলো প্রিয়। বলল,
‘ সবাই তাই-ই বলে। মাও বলে আমি হুবহু খালার মত দেখতে।’
‘ আয়শা তোমার খালা?’
‘ হুম।’
শোয়েব হক আচমকা বুকের ভেতর অদ্ভুত কিছু অনুভব করল। কি বলবে এটাকে যন্ত্রণা নাকি ভালোলাগা? আয়েশার মত দেখতে বলেই কি প্রিয়কে এত ভালো লাগছে তার।
দূর থেকে মামার সাথে প্রিয়কে কথা বলতে দেখে ভ্রু কুঁচকাল শতাব্দ। মামার অতীত নিয়ে অনেক কথা শুনেছে। কিছু ভালো কিছু ভীষণ নিকৃষ্ট।
তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এলো এদিকে। প্রিয়’র পাশে এসে দাঁড়িয়ে এক হাত মেলে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ ও প্রিয়। আমার প্রিয়!’
হ্ঠাৎ শতাব্দকে এমন করে আসতে দেখে ঘাবড়ে গেল প্রিয়। সেই সাথে লজ্জাও পেল। মাথা তুলে আড়চোখে একবার শতাব্দের দিক তাকালো। কেমন জানো অদ্ভুত গম্ভীর চোখ। শতাব্দের চাহনী দেখে কথার ধাঁচ দেখে, শোয়েব হক এখনো বোধহয় ঘোরে। ভাগিনা এমন চাহনি আগে দেখেনি কখনো। ঘোর কাটিয়ে প্রিয়’র দিক চেয়ে বলল সে,
‘ তুমি অনেক সুন্দর। অনেক বেশি। ঠিক তোমার খালার মত।’
শোয়েব হক চলে যেতেই প্রিয়’র মনে পড়লো। উনাকে আগেও দেখেছে। শতাব্দের এপার্টমেন্টে। আর তার আগেও কোথায় যেন দেখেছে? কোথায় দেখেছে?

রাতে ডিনারের পর গানবাজনার আয়োজন করেছে। সবাই গোল করে বসে। বড়রা পেছনে বসেছে। প্রিয় জুবাইদার সাথে টুকটাক কথা বলছে। মাঝেমধ্যে আড়চোখে লাজুক দৃষ্টিতে শতাব্দের দিকেও তাকাচ্ছে। ব্যপারটা শতাব্দের ছোট ফুপু ছবি বেগমের চোখে আটকালো। প্রথম থেকেই প্রিয়কে চোখে চোখে রাখছে। শতাব্দের মাকে ডেকে বললেন,
‘ ভাবি। ও ভাবি। শুনো না।’
অভিলাষা বেগম পিছন ফিরে চাইলেন। বললেন,
‘ হ্যাঁ ছবি বলো। শুনছি।’
ছবি বেগম প্রিয়’র দিক তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
‘ তোমাদের কি আন্দাজ জ্ঞান নেই কোন? বাড়িতে এতগুলো জুয়ান ছেলে। যাকে তাকে বাড়ি আনছো কেন?’
আভিলাষা বেগম কপাল কুঁচকে চাইলেন। বললেন,
‘ কার কথা বলছো ছবি?’
কন্ঠে বিরক্তি ঠেলে ছবি বেগম উত্তর দিলেন,
‘ ওইযে জুবাইদার বন্ধু! প্রিয়া নাকি প্রিয় কি জানো নাম? যাইহোক মেয়েটা বড্ড চতুর। চোখেচোখে রাখো। পিকনিকেও নাকি অনেক কান্ড বাঁধিয়েছে। লুবনা বলল। ঢাকার মেয়েতো! না জানি কখন তোমার কোন ছেলেকে ফাঁ*সিয়ে ফেলে।’
বিরক্ত হলো অভিলাষা বেগম। কন্ঠে কঠোরতা এনে বলল,
‘ ফাঁ*সালেই ক্ষ*তি কি? মেয়ে না যেন গুড়ের মাছি। কি শান্ত, ভদ্র, সুন্দর! এমন মেয়েকে ছেলের বউ করে আনতে কে’না চায়।’
কথাটা যেন পছন্দ হলোনা ছবি বেগমের। ভাবির মুখের উপর বলতে পারলো না কিছু। বাড়িতে অভিলাষা বেগমের বেশ চলে। এমন কি গ্রামের মানুষজনও বেশ মানে।

বাড়ি ফিরে তড়িঘড়ি করে হল ঘরের কাঠের আলমারি খুলে ছবির এলবামটা বের করল। অনেক গুলো ছবির ভেতর সেই কাঙ্খিত ছবিটা পেল। এই ছবিটাই তো এতোদিন খুঁজছিল প্রিয়। খালার পাশে শতাব্দের মামা দাঁড়িয়ে। একই রকম ইউনিফর্ম দুজনের। দেখে মনে হচ্ছে কলেজ জীবনের।
‘ আবারো পুরানো এলবাম ঘাটছিস! কতবার মানা করেছি প্রিয়?’
হ্ঠাৎ খালার গম্ভীর আওয়াজে কেঁপে উঠল প্রিয়। বুকে হাত রেখে নিজেকে শান্ত করে এক গাল হেসে বলল,
‘ শতাব্দ ভাইয়ার মামা শোয়েব আঙ্কেল তোমার বন্ধু খালা? কখনো বলোনি যে। যাইহোক আজ দুপুরে উনি দুবাই থেকে ফিরেছে। কিছুদিন ইমান্দিপুরেই থাকবে। জিজ্ঞেস করছিল তোমার কথা।’
আয়েশা বেগম কেঁপে উঠলেন। আচমকা তার চোখমুখ পাল্টে গেল। মুখশ্রীতে রাগ ফোটানোর চেষ্টা করল। ভ*য়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ঝাঁঝালো স্বরে বলার চেষ্টা করল,
‘ তুই আবার ওই বাড়িতে গিয়েছিস? কেন গিয়েছিস? আর যাবিনা ওইখানে। কোন দিন যাবিনা।’
‘ কিন্তু খালা…’
‘ আমি কোন তর্ক শুনতে চাইছিনা প্রিয়। ঘরে যা এক্ষুনি।’
হতভম্ব প্রিয় চলে গেল। আয়েশা বেগম সোফায় বসলো। কাঁপাকাঁপি হাতে পানির গ্লাস তুলে ঢকঢক করে পুরোটা পানি শেষ করল। ভীতু কন্ঠে বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘ সে ফিরে এসেছে। সব বিনা*শ করতে আবার ফিরেছে! কিছুই ছাড়বেনা সে। শেষ করে দিবে সব।’

চলবে………

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।