ফিলোফোবিয়া
ঊর্মি প্রেমা ( সাজিয়ানা মুনির )
৩৭.
( কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ )
গভীর রাত। ঘর জুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার। খোলা জানালা দখিনা বাতাস। আকাশ জুড়ে তারার মেলা। চন্দ্রসুধায় ভুবন ছেয়ে। বারান্দার দোলনা দুলছে, বাতাসে শুভ্র গন্ধরাজের মাদকতা মিলিয়ে।
আঁধারে ডাকা ঘরটায় উষ্ণ নিশ্বাসের ভারী আওয়াজ।চাদর খামচে চোখ বুজে শক্ত শিথিল হয়ে শুয়ে আছে প্রিয়। শতাব্দ তার গলার গভীরে মুখ ডুবিয়ে। উত্তপ্ত নিশ্বাস, ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ায় কেঁপে উঠছে প্রিয়। সেদিকে কি ধ্যান আছে বেহোঁশ শতাব্দ’র। বুকের গভীরে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে প্রিয়’কে। আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছে। চোখে অঢেল ঘোর, গভীর নেশা মাখিয়ে।
প্রিয় কাঁপছে। হাত পা নড়ছে থরথর। শতাব্দের গাঢ় স্পর্শ তার শক্তপোক্ত আবরণকে ভেঙ্গে, ঘুড়িয়ে, মিলিয়ে দিচ্ছে। খোলস ছাড়িয়ে টেনে আনছে সেই পুরানো দুর্বল প্রিয়’কে।
কাঁপাকাঁপি হাতটা শতাব্দের ঠোঁটের কাছে ধরল প্রিয়। ভাঙ্গা ভাঙ্গা সুরে বলল,
‘ প্লি..প্লিজ থামুন। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।’
থেমে গেল শতাব্দ। মাথা উঁচিয়ে মুখপানে চাইল প্রিয়’র। চন্দ্রসুধা এসে তার চোখেমুখে পড়ছে। হরিণটানা চোখজোড়া টলমল করছে। রক্তিম লিপস্টিক ঠোঁটের চারপাশে ছড়িয়ে। অগোছালো কেশ বালিশের উপর এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে। হাত বাড়িয়ে কপালের চুল গুলো গুছিয়ে দিলো শতাব্দ। দুগালে হাত রেখে কপালে গভীর ঠোঁট ছুঁয়িয়ে প্রিয়’র বুকে মাথা রাখল। ঘর জুড়ে পিনপতন নীরবতা। প্রিয় তখনো অস্বাভাবিক রকম অস্থির, কাঁপছে। আকুতির স্বরে বিড়বিড় করে বলল,
‘ এমন কেন করছেন? আপনি বেহোশ! রাত পোহাতে সব ভুলে যাবেন। আমি কি করে ভুলব?’
গলায় নাক ঘোষতে ঘোষতে শতাব্দ নিগূঢ় সুরে বলল,
‘ ভুলতে কে বলেছে? সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে টেনে নেও কাছে।’
‘ কেন অবুঝ হচ্ছেন?’
‘ নিজের বিয়ে করা বউকে আদর করাতে অবুঝের কি দেখলে?’
চাপা রাগ হলো প্রিয়’র। অধৈর্য হয়ে বলল,
‘ আমাকে ছাড়ুন! যেতে দিন।’
শতাব্দের নিমিষ গভীর আওয়াজ,
‘ পারবো না ছাড়তে। ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। তুমি যে সোনার হরিণ!’
প্রিয় চুপ। শতাব্দ বলল,
‘ এতটা বছর আমি ভালো ছিলাম না প্রিয়। একটু ভালো ছিলাম না। তোমার শূন্যতায় আমিও পুড়েছি। আমার সকল সাফল্য তুমিহীন বৃথা। আমার প্রত্যেকটা দিন তুমিহীন ছিল মুশকিল!’
একটু চুপ থেকে আবারো বলতে লাগল,
‘ তোমার আমাদের প্রথম দেখার কথা মনে আছে প্রিয়?’
প্রিয়’র টলমল চোখ। খানিক সময় নিয়ে ছোট ঢোক গিলে বলল,
‘ মেলায়। আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম।’
মৃদু হাসল শতাব্দ। বলল,
‘ উহু তার আগে।’
বিস্মিত স্বরে প্রিয় জিজ্ঞেস করল,
‘ মানে! তার আগে আমাদের কোথায় দেখা হয়েছিল?’
‘ তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম দুইহাজার নয়ের গ্রীষ্মের কোন এক পড়ন্ত বিকালে। ঢাকা থেকে মাত্রই ফিরেছিলাম বাড়িতে। ভাপসা গরমে চারিদিক চৌচির। সূর্যের তাপ তখন কমেছে সবে। চারিদিকে র*ক্তিম আলো ছড়িয়ে। মাথায় ঠান্ডা পানি ঢেলে ফ্রেশ হতে বারান্দায় যেতে হ্ঠাৎ হাসির রোল বাজলো কাছে। আওয়াজের সুত্র খুঁজতে চোখ পড়ল পাশের বাড়ির ছাদে। এক ঝাঁক মেয়ে সেখানে। নাচ গান আড্ডা দিচ্ছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলাম, অমনি চোখ আটকে গেল এক কিশোরীতে। খুব সুন্দর করে হাত পা নাড়িয়ে ক্লাসিকাল ড্যান্স করছে। সাদা গ্রাউনটা গোল হয়ে রাউন্ড রাউন্ড ঘু্রছে, লম্বা খোলা কেশ বাতাসে দুলছে। কয়েক স্টেপ করেই থেমে গেল মেয়েটা। খিলখিল করে হেসে ফেলল। আমি থমকে গেলাম, স্তব্ধ হয়ে বিমূঢ় চেয়ে রইলাম। কতক্ষণ চেয়ে ছিলাম জানিনা। তবে , সেই মুখখানায় চেয়ে নির্দ্বিধায় এক যুগ কাটিয়ে দেওয়া যায়। তার আগেও অনেক সুন্দরী দেখেছি। কিন্তু সেই সুশ্রী মুখখানায় অন্যরকম অদ্ভুত টান ছিল। টানা চোখজোড়ায় মাদকতা মেশানো ছিল। সরু ঠোঁটের কোণে ভুবন ভুলানো এক চিলতে হাসি। নির্দ্বিধায় তাকে বলাই যায় অন্যন্য সুন্দরী! হ্ঠাৎ তার সাথে চোখাচোখি হতেই ঘাবড়ে গেল সে। কপাল কুঁচকে মিলিয়ে নিলো হাসি। গুটিসুটি হয়ে কায়দা করে আড়াল করে নিলো নিজেকে।
সেই মুখখানা আমার মস্তিষ্কে গাঢ় ছাপ এঁকে দিয়েছিল। সেইদিন থেকে আজ অবধি তাকে ভুলতে পারিনি। হ্যাঁ প্রিয়, তুমি হয়তো ভুলে গেছ। কিন্তু আমি কোনদিন সেই বিকালটাকে এক মুহূর্তে’র জন্যেও ভুলতে পারিনি।’
শতাব্দের কথা লেগে লেগে আসছে। বুজে আসছে চোখ। প্রিয়’র দিক হাত বাড়াল। মুখ ফিরিয়ে নিলো প্রিয়। চোখের কোনে জল জমেছে তার। কন্ঠ ধরে আসছে। নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করল। কাঁপা কাঁপা সুরে বলল,
‘ কেন এসেছিলেন আমার জীবনে? আপনার ভালোবাসাকে আমার ভয় হয়। প্রচন্ড ভয়!’
শতাব্দের করুন আকুতি,
‘ ভালোবাসি। একটু ভালোবাসো! দেখো, তোমার তৃষ্ণায় ক্ষণে ক্ষণে মরছি প্রিয়।’
‘ অনেক দেরি হয়ে গেছে। ভালোবাসা হবেনা আর!’
প্রিয়’র চোখের কোন বেয়ে পানি ঝরল। শতাব্দের দূর্বল চোখ বুজে বুজে আসছে। হাত বাড়িয়ে দিলো। প্রিয়’র চোখ মুছতে চাইল তার আগেই বিছানায় ঢলে পড়ল। খানিক বাদে কেশে উঠল। প্রিয়’কে ছেড়ে কাশতে কাশতে উঠে বসল। ফ্লোরে পা রাখতে পড়ে গেল। মুখ ভরে বমি করে মাখিয়ে ফেলল ফ্লোর। হতভম্ব প্রিয়। ধরফড়িয়ে বিছানা থেকে নামল। শতাব্দের পাশে যেয়ে বসলো। আ*তঙ্কিত চোখমুখ। আলতো করে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল প্রিয়,
‘ আপনি ঠিক আছেন?’
হা, না উত্তর দিলো না শতাব্দ। থম মে*রে বসে রইল। প্রিয় বুঝল ঘোর কাটেনি। শরীর দুর্বল। কোনরকম ধরে বুঝিয়ে শতাব্দকে বিছানায় বসালো। পানি এনে শতাব্দকে পরিষ্কার করে কাপড় পাল্টে। ঘর মুছে পরিচ্ছন্ন করে চলে গেল। কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখল, শুয়ে পড়েছে শতাব্দ। হাত পা গুটিয়ে ঘুমিয়ে। তার শীত করছে কি? হয়তো। গায়ে চাদর মেলে দিতে গিয়ে থমকে গেল প্রিয়। জ্বরে পু*ড়ছে গা। তড়িঘড়ি করে কপালে হাত রাখল। প্রচন্ড গরম। ঘাবড়ে গেল প্রিয়। কি করবে এখন? তাড়াতাড়ি করে ভেজানো কাপড়ে শরীর মুছে দিলো। ঘুমের ঘোরে শতাব্দ প্রিয়কে নিজের কাছে টেনে নিলো। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কোলে মাথা রাখলো। বাঁধা দিলো না প্রিয়। নিমিষ চেয়ে রইল শতাব্দের ঘুমন্ত মুখখানায়। বিড়বিড় করে বলল,
‘ একবুক ভালোবাসা নিয়ে আমার আঘা*ত সইতে পারবেন তো?’
পাশে বসে থেকে সারারাত জেগে কপালের জলপট্টি বদলে দিলো। ভোরের দিক শতাব্দের জ্বর নামল।
রাতের আঁধার চিড়ে উজ্জ্বল ভোর নেমেছে ভুবনে। রান্নাঘরে টুকটাক আওয়াজ। এক চুলায় চায়ের পানি ফুটছে অন্য চুলায় বেগুন ভাঁজা হচ্ছে। খাবারের ঘ্রাণে ঘর মোমো করছে। ব্যস্ত হাতে প্রিয় বেগুন ভাঁজা উল্টে দিচ্ছে। আচমকা এক জোড়া হাত কোমর চেপে ধরল শক্ত করে। প্রিয় কেঁপে উঠলেও চোখেমুখে বিস্মিয় ফুটতে দিলোনা। বাম হাতে ছাড়াতে চাইল একবার। শতাব্দের শক্তির সাথে পারল না। হাল ছেড়ে শব্দ করে খুন্তি রাখল। পেছনে ফিরে। গম্ভীর মুখ করে শতাব্দের কপালে হাত ছুঁয়ে দেখল। জ্বর নেই এখন। তারপর আবার ঘুরে কাজে হাত লাগালো। শতাব্দ ঠোঁট মেলে হাসলো। আবারো প্রিয়’র কোমর চেপে ধরল। কানের কাছে মুখ এনে আলতো স্বরে বলল,
‘ সরি! হবেনা আর।’
কন্ঠে রাগ এঁটে প্রিয় বলল,
‘ কন্ট্রোল করতে না জানলে সেই জিনিস না খাওয়াই ভালো।’
দুষ্ট হাসল শতাব্দ। বলল,
‘ সব এনার্জি তো বউ সামলাতেই লেগে যায়। কন্ট্রোল করতে কি করে জানবো।’
রাগী চোখে তাকাল প্রিয়। উত্তর দিলো না কোন। শতাব্দ আশেপাশের তাকিয়ে দেখল, ভুনা খিচুড়ি, আলু গরুর গোস্ত, ভর্তা সব রান্না সাজানো। চুলায় বেগুন ভাঁজা হচ্ছে। সবকিছুই শতাব্দের পছন্দের।
শতাব্দ চমকাল। বিস্ময় সুরে বলল,
‘ এত ভালো রান্না জানো জানতাম না তো।’
প্রিয়’র আড়ষ্ট গম্ভীর উত্তর,
‘ কারণ আপনি জানতেই চাননি কখনো।’
শতাব্দ প্রিয়’র দিক চেয়ে রইল। প্রিয় চুলা বন্ধ করে গোছগাছ করতে করতে বলল,
‘ ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনাকে খাবার দিয়ে, ভার্সিটিতে যাবো।’
শতাব্দের গম্ভীর উত্তর,
‘ তুমি আজ ভার্সিটিতে যাচ্ছো না।’
হতভম্ব প্রিয়,
‘ মানে? যাচ্ছিনা মানে? ‘
‘ আজ সারাদিন তুমি আমার সাথে থাকবে। অসুস্থ স্বামীর, সেবা করবে।’
‘সেবা করতে আমার বয়েই গেছে! ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। সামনে ফাইনাল। নোট কালেক্ট করতে হবে।’
‘ তোমার সব নোট বাড়িতে পোঁছে যাবে।’
ফস করে শ্বাস ফেলল প্রিয়।
ঘামে ভিজে থাকা প্রিয়’র মুখখানায় চেয়ে আছে শতাব্দ। নাকের ডগায় মুক্তার মত বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সামনের বেবি হেয়ার গুলো ঘেমে কপালে লেগে। দুকদম এগিয়ে এলো শতাব্দ। আঙ্গুল দিয়ে নাকের ঘাম মুছে দিতে দিতে আলতো আবদার করে বলল,
‘ ভালো লাগছেনা কিছু। আজকের দিনটা আমার সাথে কাটাও না প্রিয়!’
ভ্রু কুঁচকে ছোট ছোট চোখ করে তাকাল প্রিয়। খানিক চেয়ে থেকে হনহনিয়ে চলে গেল।
বিকালের শেষ প্রহর। চারিদিকে নিভু নিভু আলো। যান্ত্রিক শহরের কৃত্রিম আলো জ্বলতে শুরু করেছে। দোলনায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে প্রিয়। দুপুরের দিকে জ্বর উঠেছিল আবার। ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে এখন। তাই এখন বইখাতা খুলে বসেছে। ক্লাস শেষে ইরা এসেছিল। নোট দিয়ে গেছে। সেই গুলোতে চোখ বুলাচ্ছে। কেউ পাশে বসতে প্রিয়’র ঘোর কাটল। শতাব্দ এসেছে। প্রিয় বইয়ের দিক চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল,
‘ জ্বর ছেড়েছে আপনার?’
উত্তরে কিছু বলল না শতাব্দ। প্রিয়’র মুখের সামনে ধরা বইটা টেনে নিলো। কোমর টেনে কাছে এনে প্রিয়’র হাত কপালে রেখে বলল,
‘ তুমি-ই দেখো।’
তড়িঘড়ি করে হাত সরিয়ে নিলো প্রিয়। গম্ভীর মুখ করে দোলনা ছেড়ে উঠে যেতে চাইল। শতাব্দ হাত টেনে ধরল।কোলে বসিয়ে কোমর চেপে শক্ত করে ধরল। প্রিয়’র ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে আলতো স্বরে বলল,
‘ আমাদের একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক হতে পারেনা প্রিয়?’
প্রিয়’র সোজাসাপটা রুখা উত্তর,
‘ না, পারেনা।’
‘ কেন?’
তাচ্ছিল্য হাসল প্রিয়। বলল,
‘ অনেক বছর আগে আমি সব ছেড়ে আপনার কাছে এসেছিলাম। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আপনি। আমার বিপদের দিনে আপনাকে পাশে পাইনি। এখন আমার আর আপনাকে চাইনা!’
শতাব্দের শান্ত, স্বাভাবিক আওয়াজ,
‘ কারণ কি এতটুকুই? নাকি অন্যকিছু!’
প্রিয় চুপ। তার চঞ্চল চোখ। শতাব্দ তা ঠাহর করল। কিছু বলল না। একটু চুপ থেকে বলল,
‘ সেদিন তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়াটা অত্যন্ত জরুরী ছিল। আমি চাইনি এতো অল্প বয়সে শেয়াল কুকুরদের মাঝে এসে পড়ো। তখন তুমি সবে কিশোরী। এই অল্প বয়সে আমি কি করে তোমার কাঁধে দায়িত্বের বোজা ফেলি।সেই পুরানো ইতিহাস আবার রিপিট করি। তাও তখন, যখন চারিদিকে জ*ঘন্যরকম বি*পদ। আমি নিজে তখন সামান্য মেডিক্যাল স্টুডেন্ট, আমার হাতে না জোর ছিল, না ছিল আজকের মত এমন ক্ষমতা। তখন তোমাকে নিজের কাছে রাখা মানে, তোমার হ*ত্যা করা। আমি তোমাকে রাস্তায় ছেড়ে দেইনি প্রিয়। সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা তোমার বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আজকের এই প্রিয় প্রাপ্তবয়স্ক, স্ট্রং, আত্মনির্ভরশীল। কেউ সহজে ভাঙ্গতে পারবেনা। আর আমার সেইদিনকার সেই প্রিয় ছিল অবুঝ, সরল। আমি কি করে নিজের সুখের জন্য সেই নিষ্পাপ কিশোরী মেয়েটাকে এমন গোলক ধাঁধা এনে আটকাই। তখন আমার মনে হয়েছে, আমার কাছে থাকার চেয়ে, তোমার বেঁচে থাকাটা বেশি জরুরী। আর তা নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নই। আরো হাজার বারও যদি তোমার ভালোর জন্য এমন করতে হয়। আমি করবো।’
খানিক চুপ থাকল। রাগ চেপে আবারো বলল শতাব্দ,
‘ আর রইল বি*পদের দিনে হাত ছেড়ে দেওয়ার কথা! আমি কখনো এক মুহূর্তের জন্য তোমাকে ছাড়িনি। আমি সবসময় তোমার পাশে ছিলাম। ছায়ার মত। অতীতে খোঁজ করে দেখো কখনো….. কিন্তু একটা আফসোস চিরকাল থাকবে আমার। সেই রাতে তোমার কাছে পৌঁছাতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। যার জন্য আমি আজও অনুতপ্ত। রোজ সেই অনুতপ্ততার আগুন খাঁখাঁ করে পোঁড়ায়।’
শতাব্দ রাগে শক্ত হয়ে বসে রইল। প্রিয়’র কোমর ছেড়েছে অনেকক্ষণ।
খানিকক্ষণ নীরবতায় কা*টলো। প্রিয় গম্ভীর জিজ্ঞাসু সুরে বলল,
‘ তাদের ঝামেলা আমার খালার সাথে ছিল। তাহলে আমাকে টার্গেট করল কেন?’
প্রিয়’র মুখপানে গম্ভীর হয়ে চেয়ে রইল শতাব্দ। বলল,
‘ কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই ভালো।’
শতাব্দ দোলনা ছেড়ে উঠে গেল। তার যাওয়ার দিক তাকিয়ে, গভীর ভাবনায় ডুবে গেল প্রিয়।
চলবে…….
ফিলোফোবিয়া
ঊর্মি প্রেমা ( সাজিয়ানা মুনির )
৩৮.
( কার্টেসী ছাড়া কপি নিষেধ )
যান্ত্রিক শহরের ব্যস্ত পথঘাট। চারদিকে হাজার হাজার লোকজন, কর্মজীবনের ব্যস্ততা। শীতের মায়া অনেক আগে ছেড়ে, চারিদিক কাঠফাটা গরমে মেতেছে । প্রিয় বাড়ি ফিরেছে সবে। কলিং বেল চাপতেই, রহিমা এসে দরজা খুলল। ওড়নার ঝুলে থাকা অংশ দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে ভিতরে ঢুকল প্রিয়। সোফায় গা এলিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বসল। রহিমা খালা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে প্রিয়’র দিক এগিয়ে দিলো। গালভরা হাসি নিয়ে বলল,
‘ আম্মা স্যারের ছোট ভাই আইছে।’
পানি শেষ করে টেবিলের উপর গ্লাস রাখতে রাখতে প্রিয় উত্তর দিলো,
‘ কে সমুদ্র ভাই?’
‘ না, একবারে ছোটোটা। কি জানি নাম কইলো…ওহ মনে পড়ছে শাদ।’
প্রিয় ভ্রু কুঁচকে নিলো। শাদ সচরাচর এখানে আসে না। বিয়ের পর থেকে এখন একদমই আসে না। শতাব্দের সাথে কোন জরুরী তলব পড়লে সরাসরি তার হাসপাতালে যায়।
‘ শতাব্দ বাড়ি নেই, বলেননি?’
‘ কইছি, কিন্তু সে কইলো। স্যারের সাথে না তোমার সাথে দরকার। বারান্দায় অপেক্ষা করতাছে তোমার।’
কপালের ভাঁজ আরো গভীর হলো। প্রিয়’র সাথে শাদের কি দরকার! সোফা ছেড়ে বারান্দার দিক পা বাড়াল প্রিয়। যাওয়ার সময় রহিমা খালাকে জলখাবারের ব্যবস্থা করতে বলল।
বারান্দার কাঠের চেয়ারে বসে আছে শাদ। দৃষ্টি ফোনের স্কিনে। প্রিয়’র পায়ের ভাঁজ পেয়ে চোখ তুলে তাকাল। সামনা সামনি চেয়ারটায় বসল প্রিয়। শাদ টেবিলের উপর মোবাইল রাখল। মোবাইলের স্কিনে কয়েক সেকেন্ডে জন্য তুরফার হাস্যোজ্জ্বল মুখখানা ফুটে উঠল। যা চোখ এড়ালো না প্রিয়’র। নীরবতা ভাঙ্গতে প্রিয় বলল,
‘ রাস্তায় জ্যাম ছিল তাই ফিরতে দেরি হলো। অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছিলে! ভীষণ জরুরী কিছু?’
শাদ চুপ করে বসে। চোখজোড়া টেবিলে। ভিতরে ভিতরে কথা গোছাচ্ছে। কি বলবে, কোথা থেকে শুরু করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। প্রিয় সন্দিহান দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। শাদের উত্তর নেই কোন। খানিক অপেক্ষা করে, জোরাল স্বরে বলল,
‘হ্ঠাৎ আমার সাথে কি প্রয়োজন! ‘
হ্ঠাৎ শাদ বলে উঠল,
‘ আমার হয়ে তুরফার কাছে তরফদারি করেছেন কেন?’
প্রিয় হতভম্ব। সাথে সাথে কোন উত্তর দিলো না। একটু সময় নিয়ে বলল,
‘ তুরফার কথা ভেবে। তোমার আসেপাশে থাকলে সেভ থাকবে। তোমার ফুপু কিছু করার আগে কয়েকবার ভাববে।’
ঠোঁট মেলে হাসল শাদ। সামনের দিক ঝুকে আসলো, বলতে শুরু করল,
‘ আপনার এই শক্তপোক্ত কঠিন রূপটা যে লোক দেখানো তা বেশ ভালো করে জানি আমি। বিয়ে মানেন না অথচ শ্বশুর বাড়ি্র মানুষের জন্য টান আপনার। আপনি শুধু তুরফার জন্য না। আমার কথা ভেবে, ওর কাছে আমার প্রেমের তরফদারি করেছেন! তাই না?’
উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল প্রিয়। ঝাঁঝাল গলায় উত্তর দিলো,
‘ হ্যাঁ করেছি তো! শ্বশুরবাড়ির মানুষের প্রতি কোন টান-ফান নেই আমার। আমি এখনো তোমাকে অতটাই অপছন্দ করি। আমি চাইনি আরেকটা প্রিয়’র জন্ম হোক। সেদিন তোমার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা, আহাজারিতে অনেক বছর আগের পুরানো আমি’কে দেখেছি। আমি জানি ভালোবেসে না পাওয়ার যন্ত্রণা কতটা ভ*য়ানক। তাই তুরফাকে বুঝিয়েছি। আমি তোমার ভাইয়ের বউ সেই খাতিরে নয়। চোখে বেঁধেছে। মানবতার খাতিরে সব করেছি।কারণ আমার মনে হয়েছে তোমার ভালোবাসা খাঁটি।’
হাসল শাদ। খানিক চুপ থেকে বলল,
‘ পৃথিবীতে যদি কাউকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, সেটা হচ্ছে শতাব্দ ভাই। ছোট থেকে আমার রোল মডেল। ভাইয়ের মত চলন, বলন সবকিছু অনুকরণ করার চেষ্টা করতাম। ভাইয়ের সবচেয়ে কাছের মানুষটা হতে চাইতাম। আপনি আসার আগ অবধি ছিলামও। যেই ভাইয়ের জীবনে আপনার আগমন ঘটলো। অমনি সব পাল্টে গেল। ভাইয়ের প্রায়োরিটি লিস্টে আমার দ্বিতীয় স্থান হলো। ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছিলাম না। মূলত সেই ঈর্ষা থেকেই আপনাকে অপছন্দ, বিরক্ত করা। ফার্ম হাউজে পিকনিকের দিন না বুঝে আপনাকে ওয়াশরুমে বন্ধ করে দেই। এত ভ*য়ঙ্কর কিছু হয়ে যাবে, আমার তা বিন্দু মাত্র আইডিয়া ছিল না। বাড়ি ফিরে ভাইয়ের ভ*য়ঙ্কর তোপের মুখে পড়লাম। সেই থেকেই দুজনের মাঝে শক্তপোক্ত অদৃশ্য একটা দেয়াল দাঁড়াল। সেই দেয়ালের কারণ আপনাকেই মানতাম। আরো বেশি অপছন্দ করতে শুরু করলাম। কিন্তু কলেজে যখন তুরফার সাথে পরিচয় হলো। এত বছর ধরে মেনে আসা মস্তিষ্কের সব থিউরি উল্টেপাল্টে গেল। আমাদের বন্ধুত্ব হলো, বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসায় গড়ালো। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। হ্ঠাৎ তুরফা যখন জানলো আমি ইমান্দিপুরের চেয়ারম্যানের ছেলে, উষ্ণচরের ছবি বেগম আমার ফুপু। অমনি আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করল। সম্পর্ক ছিন্ন করে দূরে সরিয়ে দিলো। অদ্ভুত ঘৃ*ণার দৃষ্টিতে আমাকে দেখতে শুরু করল। ওর ভাষ্যমতে লুবনা আপা, লিমন ভাই ওর বড় বোন তদ্রাকে খু*ন করেছে। দুজন টিনেজার কাউকে কি করে খু*ন করতে পারে! যদিও এটা ওর ভুল ধারণা। তুরফা মানতে চাইছেনা।…আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে বারবার। এখন আমি ভাইয়ের ব্যাপারটা খুব করে বুঝতে পারি। কাউকে মনেপ্রাণে ভালোবাসলে সেই মানুষটা প্রায়োরিটি লিস্টের সবচেয়ে চূড়ায় থাকে। তার গায়ে লাগা সামান্য আঘা*ত ও বুকে যেয়ে বিঁধে! এখন আপনাকে অপছন্দ হয়না। চোখে চোখ মিলাতে লজ্জা লাগে। মূলত সেই কারণেই এড়িয়ে চলা। এতবছর অপছন্দ করা মানুষটার মুখোমুখি হয়ে কিভাবে কি বলবো, সেই লজ্জাবোধ থেকেই এমন আড়ষ্ট রুক্ষ আচরণ।’
প্রিয় চুপ থেকে শাদের সবকথা শুনল। শাদ চোখ তুলে তাকাচ্ছেনা। চোখে মুখে ভীষণ অপ*রাধবোধ। খানিক নীরব থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ তোমার সত্যি মনে হয় দুজন টিনেজার কাউকে খু*ন করতে পারেনা? লিমন, লুবনা নিরপরাধ!’
শাদ বিস্ময় চোখে তাকাল। তাচ্ছিল্য হাসল প্রিয়। বলল,
‘ তুমি আইডিয়া করতে পারবেনা, তারা কতবড় অমানুষ, ভয়*ঙ্কর শ*য়তান। মাথায় বড় ঘোমটা টেনে থাকা তোমার ফুপু ছবি বেগম কতটা জ*ঘন্য মহিলা। এক একটা নর্দমার কীট!’
শাদ হতভম্ব, অবাক। চোখে স্পষ্ট কৌতূহল। সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ আসলেই কি ওরা এমনটা করেছে? কি ঘটেছে স্পষ্ট খুলে বলুন। আর আপনি এসব কি করে জানেন!’
প্রিয় নীরব। শাদের উত্তেজনা কৌতুহল দেখে মুখ খুলল। বলল,
‘ তুরফার বড় বোন তদ্রা আমার সমবয়সী ছিল। দুইহাজার এগারোতে বড় আপার বিয়েতে দেখেছিলাম একবার।তুরফার মা সালেহা আন্টি বড় খালার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। সেই সুবাদে চেনা। সাহেলা আন্টি মোহসিন আঙ্কেল দুজনই সরকারী হাসপাতালে ডক্টর। ঊষ্ণচর বাড়ি হলেও কাজের তাগিদে ঢাকাতেই থাকতেন। দুইহাজার তেরোতে ছুটিতে তন্দ্রা তুরফাকে দাদির কাছে ঊষ্ণচর বেড়াতে আসে। কোন এক বিকালে বাহিরে নদীর পাড়ে ঘুরতে বের হলে, ঝোপের কাছে কয়েকজন মাদক আসক্ত ছেলে মেয়েকে দেখে। ঘাবড়ে যায় তদ্রা তুরফাকে নিয়ে পিছু ফিরে যেতে নিলে, মাতাল লিমন এসে তদ্রার হাত চেপে ধরে। তদ্রা তুরফাকে পালাতে বলে। ঘাবড়ে যায় ছোট তুরফা। বোনের হাত ছাড়িয়ে দূর ঝোপের আড়ালে পালায়। ভয়ে কাঁপতে লাগে। বোনকে কি করে বাঁচাবে বুঝে উঠতে পারছিল না ছোট্ট তুরফা। ততক্ষণে চারিদিকে সবাই এসে তদ্রাকে ঘিরে ফেলেছে তখন। তদ্রা হাত ছাড়ানোর জন্য চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে, লুবনা এসে মুখে কাপড় বেঁধে দুই ভাইবোন মিলে টেনে হিঁচড়ে ঝোপের কাছে নিয়ে যায়। গ্রামে ইলেকশন চলছে তখন। তাদের ধারণা ছিল তাদের এসব কাজের কথা তদ্রা গিয়ে গ্রামে ছড়াবে। মাতাল লুবনা লিমন তাদের সঙ্গীদের নিয়ে ট*র্চার করে তদ্রাকে । তদ্রা বারবার ইশারায় বোঝাতে চাইল তারা বুঝেনি, মুখ বেঁধেই নি*র্মম অ*ত্যাচার চালায়। সিগারেটের আগুন দিয়ে জায়গা জায়গা ঝলসে দেয়। বোনের উপর এমন অত্যাচার দেখে সাহায্যের জন্য ঝোপের আড়াল থেকে অগোচরে বেরিয়ে বাড়িতে দাদীর কাছে ছুটে যায় তুরফা। যখন দাদিকে নিয়ে ফিরে আসে আশেপাশে কেউ ছিলনা তখন। চারিদিকে অনেক খোঁজাখুঁজি চলে। রাতে গিয়ে তদ্রার লা*শ পানিতে ভেসে উঠে। লা*শ ময়নাতদ*ন্তের জন্য পাঠাতে রিপোর্ট আসে, ধর্*ষনের পর গলা টি*পে হ*ত্যা করা হয়েছে। আঙ্কেল আন্টি কেস করলে ছবি বেগম ছেলে মেয়েকে বাঁচাতে পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার ক্লিয়ার রাখতে সব জায়গায় টাকা খায়িয়ে পুরো ব্যাপারটা অপমৃ*ত্যু বলে ধামাচাপা দিয়ে দেয়। আর এই দুনিয়া সত্যের চেয়ে টাকার ভাষায় বেশি চলে। পুরো ব্যাপারটা মাত্র কয়েকদিনের ভেতর ধামাচাপা পড়ে যায়। সাথে ছবি বেগম হুমকিও দেয় যে, যদি এই নিয়ে পরবর্তীতে কোন ঝামেলা করে তাহলে তুরফাকেও ছাড়বেনা তারা। আঙ্কেল আন্টি ন্যায় পাওয়ার সব চেষ্টা বন্ধ করে দেয়। বড় মেয়ের পর ছোট মেয়ে হারাতে চাননি তারা। ‘
শাদ স্তব্ধ, হতভম্ব বসে। শাদের বিমূঢ় চাহনি। লুবনা লিমন ফুপু এমনও করতে পারে! শাদের চাহনীতে প্রিয় বলল,
‘ বিশ্বাস হচ্ছেনা তাইনা? প্রমাণ দেখে নিশ্চয়ই বিশ্বাস হবে?’
ঘরে যেয়ে একটা ফাইল নিয়ে ফিরে আসলো। শাদের দিক এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ এখানে দেখো তদ্রার মৃ*ত্যুর কারণ স্পষ্ট লেখা। ওই যমজ ভাইবোন, ছবি বেগম অগণিত নির্দোষ মানুষের উপর অত্যা*চার করেছে। লিমনের বিয়েটা কিভাবে হয়েছে নিশ্চয়ই জানো? কুকাজ করতে গিয়ে ধরা না পড়লে ওই গরিব অসহায় মেয়েটাকে বিয়ে করত না কখনো। আর আমা্র আর খালার সাথে যা করেছে তার সবটাই তো জানো।’
ফাইলের দিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে শাদ। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। তুরফার এত বলার পরও তাকে একবার বিশ্বাস করল না। উল্টো তাকে ভুল প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগলো। রাগী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল শাদ,
‘ সামনে কি করবেন! কোন প্লান আছে। আমাকে বলুন কি করতে হবে আমাকে।’
‘ তুমি সত্যি সাহায্য করতে চাও?’
শাদের অকপট উত্তর,
‘ তুরফাকে অবিশ্বাস করে অনেক বড় ভুল করেছি। যদি আমার সাহায্যে ওর বোনের ন্যায় বিচার পাওয়া যায়। আমার একটু হলেও শান্তি মিলবে তবে। আপনি শুধু বলুন কি করতে হবে আমাকে!’
শাদের ক্রোধান্বিত মুখখানায় চেয়ে রইল প্রিয়। খানিক চুপ থেকে বলল,
‘সময় আসুক বলব।’
শাদের সাথে প্রিয়’র আরো কিছুক্ষণ কথা হলো। যাওয়ার সময় শাদ পেছনে ফিরে করুন গলায় বলল,
‘ জানিনা সামনে কি হবে। আপনার উদ্দেশ্য কি! আমার ভাই আপনাকে ভালোবাসে। প্রচন্ডরকম, পাগলের মত। এতটা কেউ কাউকে কখনো ভালোবাসতে পারে, জানতাম না। যদি আপনার বিচ্ছেদের পরিকল্পনা থাকে, বলবো না থেকে যেতে। বললেও মানবেনা, জানি। কারণ আপনার উপরও অ*ন্যায় হয়েছে। তবে এতটুকু আপনাকে বলবো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার কাজ শেষ করে দূরে চলে যান। যত সময় যাবে ভাইয়ের ভালোবাসা আরো গাঢ়রূপ নিবে। আপনি চলে গেলে নিজেকে সামলাতে ততটাই কষ্ট হবে। আর আমি আমার ভাইকে সেই নরকের উত্তপ্ত আগুনে পুড়তে দেখতে পারবো না! আমার কষ্ট হবে।’
শাদ চলে যাওয়ার পর প্রিয় সারাদিন বসে ভাবলো। নাওয়া খাওয়া হলোনা আর। দোলনায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকলো। শাদের শেষ কথা গুলো মনে গেঁথেছে। সত্যি-ই তো! যত দিন যাবে শতাব্দের অনুভূতি বাড়বে। সেও দিনদিন শতাব্দের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে। এভাবে চলবেনা। যেই উদ্দেশ্যে এসেছে, সেই কাজ সেরে তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে। দোলনা ছেড়ে উঠল প্রিয়। এই কয়েক বছর অনেক তল্লাসি করেছে। ঊষ্ণচরে ছবি বেগমের মাদ*ক ব্যাবসার কাগজপত্র গুলো হয়তো এখানেই আছে। যার জন্য ছবি বেগম শতাব্দের সামনে দুর্বল। মাথা নত করে এখনো। যা বলে তাই শুনতে বাধ্য। ইমান্দিপুরের শতাব্দের ঘরে খুঁজেছে, কিছু মিলেনি সেখানে। এখানে আছে নিশ্চয়ই। শতাব্দ এখন বাড়িতে নেই। ঘর তল্লাসী করার এটাই সুযোগ। তড়িঘড়ি হাতে শতাব্দের ঘরে খোঁজাখুঁজি শুরু করল। ঘরের কোথাও কোন কিছু নেই। আলমারী খুলে দ্বিতীয় পাল্লায় খোঁজ করতেই পেয়ে গেল। উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে উঠল প্রিয়। যেই ফাইল নিয়ে ফিরে যাবে, অমনি একটা চিঠির খামে প্রিয়’র চোখ আটকাল। তার বাবার নামে চিঠি। প্রেরক বড় খালা আয়শা বেগম।বাবার চিঠি শতাব্দের কাছে কেন? আর খালা-ই বা কেন বাবাকে চিঠি লিখেছিল। কিসের চিঠি এটা! শত চিন্তা-ভাবনা এড়িয়ে চিঠির খাম খুলল প্রিয়।
চলবে……..