#বাতাসে_তার_সৌরভ–২১
” কেমন আছেন? শুনলাম রিজাইন দিয়েছেন আপনার শরীর এখন কেমন বলেন আগে ”
” জি ভালো আপনি কেমন? “নিশি হেসে জবাব দিলো সামনের শ্যমলা মাঝারি উচ্চতার ভদ্রলোক মাথা নেড়ে বললেন,
” একটু শুকিয়েছেন কিন্তু আপু ”
” আপনি কিন্তু ভারী হয়েছেন ভাই। ”
সামনের কথক একটু যেন চিন্তিত হয়ে নিজের পেটের দিকে তাকালো,” আসলে সকালে হাঁটাহাঁটি কমিয়ে দিয়েছি তো…”
মানুষটা বোকার মতো হাসছে।
নিশি সাবধানে বিরক্তি লুকাচ্ছে৷
নিউমার্কেটর গেটের মুখে একগাদা শপিং ব্যাগ হাতে উটকো লোকের বকবক শুনছে, তবে এতক্ষণ পরেও তার মনে পড়ছে না মানুষটার সাথে কোথায় দেখা হয়েছিল। মানুষটা মাথা দুলিয়ে বলছে,
” আমি তো আসলে বিরাট ঝামেলায় পড়েছিলাম বুঝলেন আপু , সেই দিন আপনাকে নামিয়ে আমি যে বাসায় এসেছি দেখলাম আমার বড় ভাই এক্সিডেন্ট করেছে। ”
“মবিন ভাই! আপনি.. ” নিশি দ্রুত সামলে নিলো। আশ্চর্য এই মানুষটাকে চিনতে পারছিলো না অথচ সেদিন খুব আন্তরিকতার সাথেই তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন।
” ঝামেলায় আটকেছিলাম আপু। ফিরে এসে শুনলাম আপনি রিজাইন দিয়েছেন। খারাপই লাগলো, আপনার শরীরও অসুস্থ ;ভাবছিলাম ফোন দেব। কিন্তু দেখি নাম্বারও নেই নাই, যাক চাকরি ছেড়েছেন ভালো হয়েছে এখন আপনার রেস্ট দরকার ”
” দরকার নাই! ” নিশি একটা নি:শ্বাস ছেড়ে সহজভাবে বলল ” আমার বাচ্চাটা আর নাই ”
মবিন বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকালো, ” আমি সরি আপু। বুঝতে পারিনি। এই জন্যই মনে হচ্ছিল শুকিয়ে গেছেন। ভাইয়া কি এখন ঢাকায়.. ”
”
” ভাইয়া নাই! ” নিশি আরও সহজ গলায় বলল।” উই আর সেপারেটেড, ও এই বাচ্চার রেসপনসেবলিটি নিতেই চায়নি। একা স্ট্রেস নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। কাজেই যা হবার তা হলো ”
মবিন অবাক হয়ে তাকিয়ে। নিশি একটা দম নিয়ে বলল,” হ্যাপি নাও? এটাই জানতে চাচ্ছিলেন তাই না? আমার সম্পর্কে কম-বেশি সবাই জানে তবুও একটা ছুতো ধরে জানতে চায় ”
” আমি কিছুই জানতাম না। তবে এতটুকু বলতে পারি যে আপনার কষ্টটা আমি বুঝি। দুই বছর আগে আমার মেয়েটা যখন ইনকিউবেটরে তখন আমার ওয়াইফ স্ট্রোক করে৷ তার তিনদিন পর আমার মেয়েটাও মায়ের কাছে চলে যায়।”
এবার নিশির অবাক হবার পালা। মবিন কিছু থেমে বলল, “স্কুলের অনেকেই জানে আপনি হয়তো জানেন না, আল্লাহ আমায় এই বিষয়ে কম দেন নাই, তাই মানুষের কষ্টের আখ্যান শোনার আগ্রহ আমার কম হয় ”
” নিশু , পাওয়া গেল না রে হেঁটে পা ফুলিয়ে ফেললাম ” শানুর হাতের ব্যাগ গুছিয়ে নিশির পাশে দাঁড়াতেই মবিনের দিকে চোখ পড়লো৷ মবিন কিছু বুঝে সালাম দিলো। নিশি পরিচয় করিয়ে দিলো মায়ের সাথে।
” মা! বলেন কী আমি তো বড় বোন ভেবেছিলাম ”
শানুর সরুদৃষ্টি হঠাৎ কোমল হলো মিষ্টি হাসি দিয়ে তরল কন্ঠে বললেন ” ওমনই কিছু ও আমার ছোটকালেরই জন্ম। মাত্র ষোল বছরের এইজ ডিফারেন্স ” নিশি হতভম্ব হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ের মধ্যে হুট করেই কেমন খুকি খুকি ভাব চলে এসেছে। শুধু তাই নয় দেখা গেল মবিনের সাথে অল্পেই আলাপ জমে গেল।
” আরে আন্টি, ধুন্দলের আঁশ খুঁজতেসেন,এইটা তো কাঁচাবাজারের দিকে, ”
” আল্লা তাই, আপনি আমায় ম্যানেজ করে দেবেন ভাইয়া?”
মায়ের মাথায় সম্পর্কের ক্যালকুলেশন কোন ইকুয়েশন ফলো করছে নিশির মাথায় এলো না। কথায় কথায় মবিনের কাছে শপিং ব্যাগ গছিয়ে দিয়ে সাবধানে বেরিয়ে এলো। এখন হোম ইকোনমিকস কলেজে যাবে। লোকজনের ভিড়,রাস্তার এলোমেলো হকারদের রঙবেরঙের দোকান, অনিয়ম ভরা ট্রাফিকের শহরকে গুডবাই জানাতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। অদ্ভুত রূঢ়, ভয়ংকর স্বার্থপর একটা জায়গা, তবুও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো শহরটা ছাড়তে মায়া লাগছে ৷ শহরটার জন্য না নদী গাধীটার জন্য নিশি বলতে পারে না। হাবা মেয়েটার ইদানীং একটা সমস্যাও হয়েছে৷ যেটা মনিটর করতেই তার ক্যাম্পাসে যাওয়া।
নদীর ফোনে পাওয়া গেল না অর্থাৎ ফোন তুললো না, তার বান্ধবী তৃষা থেকে তাকে খুঁজে বের করলো। পেছনে ক্যান্টিনের দিকে পুকুর পাড়ে ঝিম মেরে কী লিখছে।
দুই চিমড়ে লুজার বন্ধু একটু দূরে বসে বিজবিজ করছে। তবে নদীর আশেপাশে যাচ্ছে না।
” তোমার বোনের কী হইসে নিশি? কিছু জিগাইলেই খ্যাক করে উঠতেসে ”
সুবর্ণার কথায় নিশি অবাক
” বল কী? ”
” আমি কি বলব, ওই ওর কলিগ তুষার না কে, সে ডেট অফার করসে। আমাদের সামনে রাজিও হইলো। ফোন রেখে গজগজ করতেসে আমি শুধু বলসি ভালোই তো, চেচিয়ে বলল,” তাহলে তুই ঝুলে যা ”
” আলুভাইত্যা তুষার!তোর মাথা গেছে?”
নিশির ধমকে নদী চমকে উঠেও সামলে নিলো। মুখ ভোঁতা করে নোট তোলায় মনোযোগ দিলো, লিখতে লিখতে বলল, ” খালামণি কই, শপিং শেষ? ”
” তোর মাথা শেষ! ফাইনালি তুষার? কি উল্টাপাল্টা করতেছিস ”
তৃষা মাথা নেড়ে বলল ” উল্টাপাল্টা তো হয়ে গেছে কয়েকদিন আগেই। ওর ওই বিদেশি বস নাকি আমেরিকা চলে গেছে। তারপর থেকেই কেমন কেমন করে দেখ না। মনে হচ্ছে আমরাই ভাগায় দিসি”
নিশি আরও আকাশ থেকে পড়লো ” বাবুর্চি ব্যাক করসে? আমারে তো বলিস নাই! এখন কী হবে বে?”
নদী বিরক্ত হয়ে বলল” তার দেশ সে যাবে না? আর তুই এই দুই হারিকেন বাতির আবজাব শুনে আসছিস ফাজলামো করতে”
” তুই সিরিয়াস না হলে ওই লাল্লুকে চান্স দিতি? “নিশি মুখ বিকৃত করলো।
“চান্স দিচ্ছি না, শুধু তার সহজ এপ্রোচটাকে সম্মান করতেসি। কালকে ফ্রী আছি সে বলল বসুন্ধরার সিনেপ্লেক্সে কখনো যায়নি ..আমি বলছি ভেবে দেখি ”
” কেন? ”
” কারণ এটা রিয়েলিটি। আমার কোন লুজারদের মতো অসম্ভব স্বপ্ন দেখে মন খারাপ করার মতো অবস্থা নাই নিশি। আমি খুব সাধারণ,ঠিক সাধারণও না। আশ্রয়হীন , এতিম একজন। আমাকে মাটিতেই হাঁটতে হবে৷ আজাইরা চাঁদের চিন্তা করা মানে সময় নষ্ট। কাজেই এইসব কথা আমাকে বলিস না। যায়ও আসে না”
” নদী তোকে যেই চেনে সেই বলবে তুই নরমাল নাই ” তৃষা বলল।
সুবর্ণা বলল, ” নরমাল তো নাইই, নাহলে প্রেকটিকাল স্কোর সবচেয়ে বেশি কি পায় ”
” সবচেয়ে বেশি?” নিশি অবাক।
” মিইল ম্যানেজমেন্টের প্রেকটিকাল ভাইবায় সবচেয়ে ভালো স্কোর পেয়ে বসে আছে। নদীকে নিয়ে ওরে লেকচার ম্যাডামের! ”
নিশি শুনে অবাক, এদিকে ফুড ক্যামিস্ট্রির নোট লিখতে লিখতে নদীর নিজের চিন্তার একাগ্রতা আনতে পারছে না। ঠান্ডা মাথায় পেছনে ফিরে তাকালে কিছু কিছু ঘটনাকে এড়ানো সম্ভব হয় না৷ দৈবিকভাবে একটার পর একটা ঘটনায় গ্যাব্রিয়েলের সাথে জড়িয়ে যাওয়া একটা অলিখিত বন্ধুত্বের শুরু। কিচেনে ট্রান্সফার হবার পর সেটা যেন একটা অন্য মাত্রাই পেয়ে গেল।
কিচেনে দায়িত্ব পাবার পর মাত্র চারটা সপ্তাহই ছিল তার অধীনে। কিন্তু এই চারটা সপ্তাহ সে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে জানে না।
দূরের একজন মানুষ হুট করে কাছে চলে এসেছিল। দেখেছিল তার অসাধারণ প্রাণশক্তি, আর কি অদ্ভুত খুশি ছিলো গ্যাব্রিয়েল।
সবার সাথে কাজে উদ্যোমী, নদীকে দেখতো যেন ছোট কোন বাচ্চা। কাজের ফাঁকে কথার মাঝে চোখে ছলকে উঠতো মমতা, দায়িত্ব বাড়তি যত্ন আর… ?.
সবার অগোচরে যার তৈরি ইমারতেরই আজ প্রশংসা পাচ্ছে নদী। কলেজের মিইল ম্যানেজমেন্ট ক্লাসে ইংলিশ ফাইভ কোর্স মিইলের টপিকটা মনোযোগ দিয়ে পড়েইনি। তবুও আজ কি অসাধারণ ভাবে গড়গড় করে বলে গেলো।এক্সাটারনাল ম্যাডামের চোখে রীতিমতো মুগ্ধতা ।সেইসময় নদীর কানে বেজে চলেছিলো অন্য কারো লেকচার। কথার জালে আটকে থাকা ব্যাখাতীত বিচিত্র অনুভূতি —
“ফাইভ কোর্স মিল ইজ লাইক মেকিং লাভ ”
সেদিন নদী হা করে তাকিয়ে ছিল এই লোক বলে কী? গ্যাব্রিয়েলের চোখাচোখি হলেই আরো বলল,” বোথ আর একচুলি আর্ট।”
ঢিমতালের দুপুরে আলস্য কাটাতে কখনো কখনো বসের গল্পের মুড হতো। সেদিন যেন ক্লাসই নিয়ে ফেলল খালি কিচেনে। ভালো শেফদের জানতে হবে তাদের কাজের ব্যাখ্যাও। তাই আরেকটু বোঝাতে গ্যাব্রিয়েল নদীকে ডাইনিংয়ে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো। সামনে রাখলো একটা সাজানো স্প্রিং রোলের প্লেটার।
” ফার্স্ট কোর্স – এপাটাইজার। ভারী নয় হাল্কা খাবার।পরিমিত সার্ভ করতে হবে এবং খেতেও হবে পরিমিত, এটা খিদে বাড়াবে কিন্তু মেটাবে না। ঠিক যেমন প্রথম ডেট,চেনাজানায় সহজ হওয়া বুঝেসুঝে কথা বলা; উদ্দেশ্য শুধু আগ্রহ বাড়ানো।”
নদী শুনে যাচ্ছে, জি এসের ইংরেজি ততদিনে দুর্বোধ্য লাগতো না । কিন্তু তার কন্ঠের ধীর ও মসৃণলয়ে মাথায় গিট লাগাচ্ছিল।
স্প্রিং রোল সরিয়ে গ্যাব্রিয়েল সাবধানে সুপের প্ল্যাটার এলো সামনে। নদী বোঝার চেষ্টা করছে, গ্যাব্রিয়েল হঠাৎ তার কানের কাছে নিচু গলায় বলল ” নাও সার্ভিং দ্যা স্যুপ। ডেটে কথার মাঝে প্রথম ছোঁয়া, হাত বা চুল…! নিরাপদ কিন্তু ডিলাইটফুল ।তেমনি স্যুপও ভারি খাবার নয় তবে অনেক গরম! সেকেন্ড কোর্স .. লাইক ফার্স্ট টাচ …।
চেয়ারে বসা নদী ঢোক গিলেছিল। গ্যাব্রিয়েল স্যুপের বাটি সরিয়ে নতুন সালাদের প্ল্যাটার রাখলো সামনে ” এরপর স্যালাদ, ভেরি লাইট! বিন, কর্ণ, এন্ড দি ল্যাটুস। নাও ইউ হ্যাভ টু মুভ ভেরি কেয়ারফুলি। টেক এ স্পেস, হ্যাভ সামথিং ফ্রেস এন্ড ন্যাচারাল ।এর স্বাদটা লাইট হবে, যেন মেইন কোর্স উপভোগ করতে পারো। এগ্রেশন নয় ধীরে ধীরে এগোনো…।জাস্ট লাইক,কিছু অন্তরঙ্গ কথা তাকে কম্ফোর্ট ফিল করানো,এন্ড ফার্স্ট কিস”
কানের কাছে ঝুঁকে থাকা গ্যাব্রিয়েলের চোখে স্পষ্ট নিজের চেহারা ; নদী দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নিল। ঘাড়ের রোমকূপ পুড়ছে, সেটা কথায় না কথকের তপ্ত নি:শ্বাসে বুঝতে পারছে না। গ্যাব্রিয়েল আরেকটা প্যাটার এগিয়ে দিলো,
” ফোর্থ কোর্স, বা যাকে বলে মেইন কোর্স ; চিকেন উইথ মাশরুম পেপার সস।খুব যত্নে উপস্থাপন করবে ।ভালোবাসার এই পর্যায়ে তোমার নিজেকে শিল্পী হিসেবে প্রমাণ দিতে হবে ”
শিল্পী! নদী টিসু খুঁজে কপালের ঘাম মুছলো। সন্দেহ হচ্ছে এই মানুষটা টিউটোরিয়াল আর কাউকে কি দিয়েছেন না সে একাই। গ্যাব্রিয়েল বলে চলেছে ” তোমার সমস্ত আর্টিস্টিক এপ্রোচ, কৌশল কতটা মুগ্ধতা ছড়াবে এই কোর্সেই সব নির্ভর করে..। ফোর্থ কোর্স ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট, লাইক ফো**প্লে, এন্ড দি ফিফথ কোর্স ইজ…’
” আই গট ইট স্যার'” নদী টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।
” কী বলো তো? ”
” ডেজার্ট” নদীর শুকনো গলায় উত্তর।
” স্মার্ট গার্ল ” গ্যাব্রিয়েল মুচকি হাসলো। ” এরপর তোমার পরীক্ষা নেব দেখবো কতটা শিখেছ ”
নদী উঠে দাঁড়ালো” শিউর স্যার ”
“মেহরোজ”
পরীক্ষা নেবার বাড়তি চাপ নিয়ে সেদিন প্যারাডক্সিকাল টিউশন ক্লাস থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসেছিল নদী। কিচেনে হওয়া এসব কথা, সময় পরিবেশ সবই ছিলো অস্পষ্ট, রহস্যময়, কিছুটা ব্যাখ্যাতীত। তেমন কিছুই নয় আবার যেন অনেক কিছু।কাউকে বলা হয়নি বলা যায়নি, বলতে ইচ্ছেও হয়নি। কিন্তু এই বিষয়গুলো স্বপ্ন দেখার জন্য যথেষ্ট নয়৷ বাস্তবতা নদীর সামনে। গত সপ্তাহেই গ্যাব্রিয়েল হাসিমুখে ফিরে গেছে দেশে।
” জি এসের গার্লফ্রেন্ড আছে তো কি যেন নাম মেয়েটার মনে নাই” গ্যাব্রিয়েল যাবার পর জেরিনের কথায় অবাক হয়েছিল নদী।
“সোহরাব স্যারই বলেছে তারা একসাথে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তেও গিয়েছিল । ফাইভস্টার হোটেলের চাকরি ফেলে শুধু তার জি এফের জন্য। হাইস্কুল থেকেই প্রেম দুজনের। ”
” তাহলে তো বিয়েও করবে তাই না?”নদীর চেষ্টা প্রাণপণ স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা যেটা জেরিন খেয়াল করলো কি না বোঝা গেল না। মাথা হেলিয়ে বলল, ” কে জানে। এদের ভাবনা চিন্তা আমাদের থেকে ভিন্ন।বিয়ের জন্য কি এত ভাবে? মেইলবর্নে তো লিভ ইনেই ছিলো দুজন ”
নদী কথা বেশি আগায়নি। তবে অদ্ভুত ভাবে বুকটা একটু দুমড়েমুচড়ে গেল।যেটা খুবই অযৌক্তিক।সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতির, ভিন্ন ভাবনার, ভিন্ন অবস্থার মানুষকে নিয়ে আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখা তার সাজে না; মনখারাপ করে সময় নষ্টও নয়।
তার সামনে অনেকগুলো ধাঁধা যার সমাধান জরুরি।
প্রথমত, তুষারের সাথে ওই ভূত বাচ্চাদের যোগাযোগ। ব্যাপারটা এমনিতে উদ্ধার হবে না কিছুটা বন্ধুত্ব করে এগোতে হবে। দ্বিতীয়ত, জেরিনের ভাবগতির দিকে খেয়াল রাখা। এই চিন্তা যদিও নদীর নয় রাবেয়ার। তার চিন্তা জেরিন তার জায়গা দখল না করে ফেলে। রাবেয়া এই খানে তার স্বার্থও টেনে আনছে।
“রম্য তো চলে গেছে এই জেরিন সবার ওপর কীভাবে ছড়ি ঘুরায় তুমি দেখ।
সাবধানে থাকবে বুঝলে নদী আর ওর মুভমেন্টগুলো খুব মনিটর করবে ভয়ংকর চালাক একটা মেয়ে”
দ্বিপাক্ষিক কুটনৈতিক বিষয়ে নদী নিজের গা বাচিয়ে চলতেই চেয়েছে। মনোযোগ দিয়ে কিচেনে কাজ করছে। সালেমভাই ভালোই সামলাচ্ছেন, নতুন দুজন ওয়েটার ওয়েট্রেস এপয়েন্ট হয়েছে। কিন্তু কোথাও যেন ভয়ংকর ফাঁকা ফাঁকা লাগে।যদিও শূন্যস্থানের মানুষটা আছে খুবই খুশি।সোশ্যাল নেটওয়ার্কে তার দেয়ালে ঝলমল করে পরিবার বন্ধুদের সাথে হাস্যজ্বল ছবি। নদী প্রাণপণ ভাবলেশহীন থেকে যায় তবুও ধরা পড়ছে নিশিটার চোখে।
” যাওয়ার আগে একটা প্ল্যান করি চল, সাতক্ষীরায় শাহীন ভাইয়ার বিয়েতে চলে যাই ”
” তুই যা ”
” আমার থেকে তোর দরকার বেশি। টুটা দিল নতুন পরিবেশে ঠিক হলেও হতে পারে ”
” ফোট টুটা দিল।ওই পাগলের সমাবেশে গেলে ফুটা দিল হয়ে যাবে ”
নিশির কথা তুড়ি মেরে উড়িয়েই ডিউটিতে জয়েন করতে চলে গেল নদী। রেস্তোরাঁয় খেয়াল করলো সেইদিনের নিতিন মন্ডল নামের লোকটা আজ আবারও এসেছেন গম্ভীর মুখে কথা বলছেন সোহরাব সাহেবের সাথে।
নদীর ভেতর জেঁকে ধরেছে একটা ফাঁকা অনুভূতি। মনে হচ্ছে এখনই অফিস থেকে বের হবেন জিএস। স্বভাব মতো গম্ভীর ভাবে আসবেন কিচেনে, ” কী অবস্থা শেফস! ” নদী মাথা ঝাড়া দিলো।অসহ্য! প্রেম এতই সহজ?
******
সারাদিনের হই হুল্লোড় আর বন্ধুদের পার্টিতে রম্যের শরীর এখন ছেড়ে দিচ্ছে। কোকোনাট রাম ককটেলের প্রভাব হতে পারে, ঝলমলে বিশাল এট্রিয়াম পার হতে হতে চোখে মদিরতা আসছে। এই রঙিন শহরে কিছু মানুষের ফুর্তি যেন ক্লান্তিহীন।
ভেগাস পৌঁছে ডিনার পার্টির পর আফটার পার্টির একটা প্ল্যান ছিলো তার মাঝে অনির সামান্য কাসিনোগুলোয় একটু ঢু দেবার শখ হয়েছে। আসলে লাস ভেগাসে এসে সাধু সেজে থাকার অর্থও হয় না। ফুর্তির জায়গায় ফুর্তি করাই বাধ্যতামূলক।
এইবারে ভাইয়ের অভ্যর্থনায় অনির আয়োজনটাও ছিল দারুণ।রম্যের জন্য রীতিমতো চমক! পৌঁছে যাবার সন্ধ্যাতেই বন্ধুদের গেট টু গেদার আয়োজনটা মা রেবেকার মেক্সিকান বন্ধুদের থেকে রক্ষা করলো তাকে।তবে রম্যের চাপা অস্থিরতা অন্য কোথাও ছিলো। মিশেলের সাথে নতুন করে যোগাযোগ হচ্ছে গত চার সপ্তাহ থেকেই। কিছুটা মিরাকলই বলতে হবে। মিশেল যোগাযোগ করলো ঠিক সেই দিন যেরাত্রে মেহরোজ এলো তার ফ্ল্যাটে। মধ্যরাতে শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ঠিক তখনই একটা কল। ভারী একটু হাস্কি ভেজা ভেজা স্বর –
“হেই রমি ইটস মি… ”
শুরুতে দ্বিধা এরপর একটু একটু মান অভিমানের ভুলে যাওয়া ব্যখ্যা। কখন যে প্রায় রাত পোহালো বুঝতেই পারেনি রম্য। কথায় কথায় জেনেছিল অনেক কিছু, বুঝেছিলো মিশেলের সাথে তার বর্তমান পার্টনারের দূরত্ব,তার আর নবজাতক মেয়ের প্রতি উদাসীনতা। হয়তো দোষ তার বয়ফ্রেন্ডেরও নয় দোষ ছিল রম্যের সাথে আগে পরিচিত হওয়া।
” রমি তুমি তোমার পুরো ক্যারিয়ারটা ছেড়ে চলে এসেছিলে অস্ট্রেলিয়াতে শুধু আমার সঙ্গ দিতে..”
-আমি এটাকে পজিটিভলিই নেই মিশ, এই সুযোগে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাচেলর কোর্সটাও তো হয়ে গেছে। ”
মিশেলের গলা ধরে এসেছিলো, এই ব্যাপারগুলোই তোমাকে সবচেয়ে আলাদা করে! সবচেয়ে অন্যরকম তুমি সহজে কাউকে ব্লেইম করতে চাও না , তুমি একটু খারাপ হলেও মনে হয় আমি তোমাকে ভুলে থাকতে পারতাম… ”
কথা কথায় ছিড়ে যাওয়া সম্পর্কের জাল কখন নতুন করে বোনা শুরু হয়েছে রম্য জানেও না।
এরপরেই অনির ভেগাসে আসার প্ল্যান। রম্যের আসার শখ তেমন না থাকলেও
মনটা হাল্কা হলো সাথে দেশে ফেরার জন্যেও কিছুটা অস্থির হলো। মিশেল বলেছিল এই মাসের শেষ সপ্তাহে সেও আসছে ডালাস। রম্য আগেই টিকিট কেটে ফেলল। মায়ের সাথে আগে দেখা করে তাকে ঠান্ডা করে রাখলে এই দিকটায় তেমন নাক গলাবেন না। মিশেলকে রেবেকার এমনিই পছন্দ না। এতদিন পর নতুন করে বন্ধুত্ব দেখলে কী রি-এক্ট করে বলা যায় না। এই বিষয়ে ঠান্ডা মাথায় এগোতে হবে। বুঝলে ভালো, না বুঝলে কিছু করার নেই।
ভাবতে ভাবতে রম্য এগোচ্ছে। লুক্সর হোটেল লস ভেগাসের অন্যতম জনপ্রিয় হোটেল। বিশাল পিরামিড আকারের এই হোটেলের গোটা ডিজাইন মিশরের সভ্যতার থেকে উদ্বুদ্ধ।থেকে থেকে মিশরীয় স্ফিংক্স, মমি, দেয়ালের হায়ারোগ্লিফিক্সের কারুকাজ নানা রঙের রঙিন মেঝে দেখতে দেখতেও পুরো ইজিপ্টের ফ্লেভার চলে আসে৷
আরেকটা ব্যাপার হলো হোটেলটা কিডস ফ্রেন্ডলি। লাস ভেগাসে ফুর্তি করার ব্যবস্থাগুলো আলাদা আলাদা, কোন কোনটা ব্যক্তিরুচি হিসেবে ভয়াবহ।
সেখানে কিডস ফ্রেন্ডলি হওয়া অর্থ ন্যুনতম নির্মল জৈবিক পলুশন ফ্রী পরিবেশ পাওয়া।
ইজিপশিয়ান সভ্যতার সাজে ঝলমলে বিশালতার মাঝে হাঁটতে রম্যের মন ভালো হয়ে যাচ্ছে। একজন সঙ্গীরও অভাববোধ হচ্ছে। অনির তো সমস্যা নেই তিনি হলেন মিস্টার ম্যাগনেট। যেখানে যান নিজের মতো জুটে যায়, এখানেও জুটেছে শ্যারন আর নাজিয়া। এদিকে রম্য বন্ধুত্ব করতে শুরু থেকেই সময় নেয়।বাংলাদেশে থাকতে এইজন্যই অনির চিন্তার শেষ ছিলো না–” ভেজিটেরিয়ান হয়ে থাকবি কী করে বল তো? প্রোটিন ডেফিসিয়েন্সিতে তো মারা পড়বি৷ কাউকে ম্যানেজ কর, একটু কাছে আসতে দে। ফর ইউ ইটস নেসেসারি!
কেউ কেউ কাছে এলেও নেসেসারি পূরণ হয়নি। অনিও বিশ্বাস করে সেই সুযোগ ছিল না, কারণ তেমন কেউ ছিলোই না। আসলেই কি ছিলো না?
চিন্তা ঝেড়ে হোটেল লবি সেকশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ফোন বেজে উঠলো, রম্য বুঝলো অনি! নিশ্চিত হেরে ভূত হয়েছে।
” কী অবস্থা কত গেল? ”
” গেল! আমি ভাসছি টাকায় ব্রো, সিক্সথ রাউন্ড অভার ওয়ার্থ টেন থাউজ্যান্ড বাক্স ”
” বলিস কী ”
” নয়তো কী, ইউ বেটার কাম ওভার হিয়ার “অনি হাসছে , রমি বুঝলো তার বেটিং টেবিলের আশেপাশে রূপবতীদের ঝঙ্কার বাড়ছে। ” নিজে চোখে দেখে যা আজ ত মনে হয় লুটপাট হয়ে যাবে”
” শখ নাই। খুবই এক্সস্টেড, ঘরে গিয়ে ঘুম দেব ”
” থ্যাংক মি লেটার ”
রম্য বেশি ঘাটালো না। দেহাবয়ব ছাড়া দুই জমজ ভাইয়ের ভাবনা, চিন্তা রুচি সব কিছুর মাঝেই প্রকট পার্থক্য।এমবিএর স্কলার, ব্যবসাটাই যার রন্ধ্রের মাঝে।
অতি অল্প বয়সে রেস্টুরেন্ট ব্যবসাতে প্রচন্ড উন্নতি করলেও ভাইয়ের মতো রসনার নেশা তার কখনোই ছিল না। আর তার যা নেশা, তাতে রম্যের বেশি রুচি নেই।
হোটেলে দরজায় কার্ড পাঞ্চ করতেই,
” হেই রমি”
কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলো রম্য। মিশেল দাঁড়িয়ে, স্নিগ্ধ হেসে এগিয়ে এলো।
” আমিই অনিকে নিষেধ করেছিলাম তোমাকে বলতে, উদগ্রীব ছিলাম কখন শুধু সামনে দেখবো , আরনট ইউ হ্যাপি?”
রম্য কী বলবে বুঝতে পারছে না।দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার পর এক পরম কাঙ্ক্ষিতা সামনে দাঁড়িয়ে।গত কয়েকদিনে যার কন্ঠ শুনে আগের মতো একই ভাবে হৃদয় কেঁপেছে। আজ সত্যি সামনে দাঁড়িয়ে। এতটাও কি আশা করেছিলো? হঠাৎ চমক মানুষকে স্থবির করে দেয়। মিশেল সেই স্থবির অবস্থায় তাকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে ফেলল, অধরে বর্ষালো উষ্ণ অভ্যর্থনা।
এরপরের দৃশ্যপট সবই সহজভাবেই প্রাকৃতিক। হাল্কা মিউজিক ঘরের বাতাসে যেন গোলাপি রঙ মিশিয়ে দিচ্ছে, তৈরি করছে মোহনীয় এক লহর। সেই লহরে ভেসে যাচ্ছে দুজন।
গাঢ় আলিঙ্গনে মধ্যে চাপা উত্তেজনা, সিক্ত ঠোঁট ক্রমে পরিণত হচ্ছে চুম্বকে। ঘরময় অদ্ভুত একটা সৌরভ৷ এই ঘ্রাণ রম্য মাঝরাতে ধানমন্ডির বাড়িতেও পেতো। বাড়িটার ব্যাকইয়ার্ডে বেশ কিছু ফুলের গাছ লাগানো, লেট অটামের ফুটতো। এই ফুলটার কী যেন নাম,
” হাস্নাহেনা, অদ্ভুত ফুল, রাতে ফোঁটে স্যার! অপূর্ব গন্ধ হয়, আমার মা বলতেন এই ফুলের গন্ধে নাকি সাপ চলে আসে”
ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলা কথায় হাসি পেয়েছিলো। তবে রম্যের ধারণা তার কালো রেশমি চুলেও একই সৌরভ , হ্যাঁ একই তো সৌরভ পাচ্ছে সে। নেশাতুর অবস্থায় রম্য সত্যিই হাত দিয়ে স্পর্শ করছে তাকে। এই জলপাই রঙের ত্বক, কখনো কখনো যেখানে ব্রোঞ্জের উজ্জ্বলতা খেলে, টানা বড়ো কালো চোখে ঝিকমিক করে কতকথা ,পুরু ঠোঁটে যখন হাসে বিদ্যুৎ খেলে যায় মুখে।
মসৃণ, খাঁজকাটা, নিরাভরণ দেহবল্লরীর এক ঝলকেই স্নায়ু পুড়ে ছাই হয়েছিল…। ভুলেও ভোলা হয় না নাভির বাম পাশের লালচে তিল। গাঢ়তর সান্নিধ্যে কানে কানে আর্জি অজান্তে আসে জবানে,
” কিল মি মেহরোজ…. ”
” মেহরোজ, এটা কি বাংলা? টেল মি বেবি”
কেউ যেন চারশো চল্লিশ ভোল্টের ধাক্কা দিলো রম্যকে।গৌরবর্ণা, স্বর্ণকেশী মিশেল তার গলা জড়িয়ে স্মিথ হাসছে। রম্য দ্রুত সামলে নিলো, ” মিশ, তোমার ফ্রেগরেন্সটা সম্ভবত নতুন। মাই ইংলিশ রোজ… ” রম্য বিব্রতভাব কাটাতে লড়ে যাচ্ছে প্রাণপণ।
মিশেল হেসে আরও টেনে নিলো কাছে,” বেবি তুমি যে আরও কিউট হয়ে এসেছ জানো? হার্ড টু রেজিস্ট, টু নাইট আই এম গনা ইট ইউ আপ… ”
ঘরের গোলাপি আলোয় রম্য নিজের অবস্থার সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হবার চেষ্টা আছে।এতদিন ফোনের কথপোকথনে কোন দ্বিধা ছিল না সামনাসামনি রাজ্যের আড়ষ্টতা যেন আঁকড়ে ধরেছে ।কোথাও তাল কেটেছে বুঝল না, বাঁধ সাধলো ফোন কল।
” রমি ”
” হেই ড্যাড, কি অবস্থা? ”
” ভালো অবস্থা। মিস করছি” সোহরাব সামদানী কিছু সময় নিয়ে স্বগতোক্তি করলেন, ” রমি বয়, তুমি কি ডালাসে? ”
” না এই ফ্রেন্ডসদের সাথে হ্যাঙাউটে ভেগাসে ”
” ওকে দেন ইনজয়, তুমি ডালাসে ফিরলে কল দেব ” বাবার কন্ঠে কোন যেন চাপা হতাশার দ্যোতনা। রম্য সতর্ক হয়ে গেল,
” ড্যাড, কী ব্যাপার বলো তো কোন সমস্যা”
সোহরাব সাহেব ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেললেন।অনেকদিন পর বাড়ি ফিরেছিলো, এভাবে ছেলের ভ্যাকেশন খারাপ করতে তিনি চাননি। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে ডাক পড়লে এড়ানোর উপায়ও থাকে না। রম্য সময় নিয়ে বাবার কথা শুনতে লাগলো। সেই সাথে পরিবর্তিত হতে লাগল তার মুখভঙ্গি। প্রগলভ মদিরতা কাটিয়ে দুশ্চিন্তার ছায়া থমথম করতে লাগলো মুখাবয়ব।
“ওটা ভুল ফাইল ছিলো যা দিয়ে গিয়েছিলে, আজ সলিসিটর সাহেব খোঁজ করছিলো,আমি খুঁজে পাইনি।আসলটা বেহাতে গেলে ঝামেলা রমি, অনেক বড় ঝামেলা ”
*****
নিতিন মন্ডল চোখ বুজে জিনিসটার রেসিপি আন্দাজ করে যাচ্ছেন।জিনিসটার বিলিতি নাম চিকেন বাস্কেট। নিজের অভিজ্ঞতায় জানেন ঠাটবাট সম্পন্ন রেস্তোরাঁয় শুধু পারফেক্ট ফিনিশিংয়ের জিনিস পাওয়া যায়, ভেতরের মাল ভালো হয় না, যতটা হয় পাড়ার কোণার দিকের চা-পুরির দোকানে। কিন্তু এই জিনিস মুখে দিয়ে মোটামুটি তিনি বিস্মিত। ভেতরের চিকেন কিমায় কিছু একটা মশলা দেয়া। পুজোয় মায়ের হাতের কষামাংসের স্বাদটা ভুলেই গিয়েছিলেন।আজ হঠাৎই মনে পড়লো।
” কী আশ্চর্যের ব্যাপার নিতিন দা ফাইনালি আপনাকে কনসার্ন করলো ” সোহরাব সাহেব সাবধানে ঘাম মুছে হাসলেন।
নিতিনবাবুর তা চোখ এড়ালো না,” পৃথিবীটাই অনেক ছোট সোহরাব, তবে আমিও তো জানতাম না তোমার ছেলেই যে গ্যাব্রিয়েল। এখন তো মনে হচ্ছে বিষয়টা আরো যত্ন নিয়ে এগোনো দরকার ”
” আসলে আমার ছেলের ধারণা নেই আপনি আমার ভার্সিটি সিনিয়র ছিলেন । রম্য আসলে এইখানকার সিস্টেমগুলো ধরতে পারছে না। অল্পতেই অস্থির হয়ে যাচ্ছে। ”
” ঘটনা যা শুনলাম বিষয়টি অল্প বলা যাচ্ছে না সোহরাব ” নিতিনবাবু তীক্ষ গলায় বললেন ” যতদূর আমার বিশ্বাস, এই ঝামেলা আরও বাড়বে। কারণ এর পেছনে অনেক বড় রাঘববোয়ালদের হাত আছে। সানশাইন বিল্ডার্স নামটা তো শুনেছ তুমি তাই না? বর্তমান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী ইফতেখারের বাবা ইসমাইল হোসেনের কোম্পানি। ঢাকার সব অভিজাত এলাকায় এদের একের পর এক পশ প্রজেক্ট। এদেরই বিশাল একটা ফাইভস্টার রেস্টুরেন্টের প্রজেক্ট হচ্ছে এই ধানমন্ডি পাঁচনম্বরেই। কয়েকটা প্লট তারা জব্দ করেও নিয়েছে।যতটা জানি তাদের প্ল্যানের মাঝে এই প্লটও কভার করে।”
” এটা কী করে সম্ভব আমি এই জমি প্রায় দশ বছরের জন্য লিজ নিয়েছি, ব্যাংক এটা করতে পারে না৷ দিস ইজ টোটালি এগেইন্সট দ্যা ল ”
নিতিনবাবু হাসলেন “কাম অন সোহরাব, তুমি অন্তত জানো এই মাটিতে ক্ষমতা আর টাকা থাকলে ল জিনিসটা খেলনা।মানুষ নিজেকে খোদা দাবি করে ফেলে আর তুমি হিসেব করছ তারা কী পারে না? এনি ওয়েজ লিজের একটা কপি তোমার ছেলের কাছ থেকে চেয়েছিলাম আমি। ওর ব্যস্ততায় পাঠাতে পারেনি সম্ভবত। ”
“হ্যাঁ একচুলি ও ভেবেছিল ওর কাছে আছে তবে ছিল না। জিনিসটা আমার কাছে।” সোহরাব সাহেব দ্রুত বললেন। এই ডকুমেন্টসের কাগজ হাত ছাড়া হবার বিষয়টি নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না।বিষয়টি পাঁচকান হলে লোকসান ছাড়া লাভ কিছু নেই। চিন্তা সামলে সোহরাব বললেন ” ব্যংক থেকে কপি তুলে আমি আপনাকে মেইল করে দেব দাদা ”
” যদি চাও যে আমি তোমাকে সাহায্য করি। মূলত এই প্রজেক্টে ইফতেখারের কোম্পানি জড়িত বলেই আমার আগ্রহটা আরও বেড়েছে। এই পরিবারের কর্মকাণ্ড বহুত মনোমুগ্ধকর… ঠিক তোমার এই মিট বাস্কেটের মতো। বাইরে থেকে আশাও করিনি এতটা সারপ্রাইজ আছে৷ রিয়েলি ফ্যান্টাস্টিক ”
সোহরাব সাহেব ব্যস্ত হয়ে আরো কিছু অর্ডার দিলেন। কিন্তু নিতিন বাবুর আর্জি এই শিল্প কারিগরকেই দেখবেন। এতদিন পর মায়ের মুখ মনে করিয়ে দেয়া এই শিল্পী নিশ্চিতভাবেই সাধারণ কেউ নয়।
সোহরাব সাহেব নিতিন বাবুর মতো দুঁদে সাংবাদিককে সামাল দিতে যেখানে আকাশপাতাল করছেন, অন্যদিকে ফ্রিজার রুমে একটা ঝামেলা পেকে গেছে। জেরিনের মুখ থমথম করছে, হাতে ফন্ডেন্ট কেক। রাজিয়া ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে। অবিশ্বাস নিয়ে বলল” এটা কীভাবে সম্ভব? ”
” আমি কি ভুল বলছি? “জেরিন ঝাঁজ দিয়ে বলল, ” এই মেহরোজ তুমি মুখে দিয়ে দেখ টক লাগে কি না”
নদী কেকটা মুখে দিয়ে বুঝলো আসলেও বেশ টক। ” ফন্ডেন্টটা টক লাগছে৷ ”
” ফাজলামি করো? আমি নিজে তৈরি করেছি “রাজিয়া চেচিয়ে বলল।
” তাহলে তুমি নিজেকে দেখছো না কেন আমরা কি ভুল বলছি? ” জেরিনের ধমকে রাজিয়া চিন্তিত মুখে এক টুকরো মুখে দিল এবং মুখ বিগরে গেল–
” মনে হচ্ছে লাইম সিরাপ পড়ে গেছে আগার আগারের সাথে ”
রাজিয়ার স্বীকারোক্তিতে জেরিন কড়া গলায় বলল,”এসব আমি কিছুই জানি না।শুরু থেকেই তুমি ডেজার্টের প্রসেসে কাউকে এড কর না। কাজেই ভুল হলে দায়িত্ব একান্ত তোমার। এখন বাজে বিকাল চারটা, ম্যারেজ সিরিমনি টাইম আটটা; কেক দরকার সাড়ে সাতটার মধ্যে। তোমার হাতে মাত্র তিনঘণ্টা সময়।কীভাবে করে কী করবে আমি জানি না, ব্যাস আমি সময় মতো কেক রেডি চাই ”
” কিন্তু লাইম সিরাপ আসলো কী করে?” রাজিয়ার চিন্তা যাচ্ছে না।
” সময় নষ্ট করছ রাজিয়া!” জেরিন কড়া গলায় বলে নদীকে সাথে নিয়ে বের হলো। লিজার মুখ হাসি হাসি।
” বেশ হইসে মাতব্বরি করতো খুব।”
লিজার কথায় ঘুরে তাকালো নদী,
” লাইম সিরাপ কি তুমি মিশিয়েছ? ”
” আই থিংক জেরিন ম্যাম, ঠিক হইসে। কুটনি একটা”
লিজার কথায় কিছুটা আহত হলো নদী।রাজিয়া নি:সন্দেহে কুটনি।তবে কেউ ভুল হলে তাকে সেই ভাষায় জবাব দেওয়াটা সমিচীন না। বিশেষ করে যেখানে গ্যাব্রিয়েলস কিচেনের রেপুটেশন জড়িত। রাজিয়া পাগলের মতো সব যোগাড়যন্ত্র করছে, যদি সময় মতো তৈরি না হয়? কেন যেন আজকাল জেরিন ম্যামের আচরণে সুক্ষ অহমিকা চোখে পড়ে নদীর। ডানহাতের অনামিকায় একটা হীরের আংটি চকচক করে।লিজার প্রশ্নে কেমন রহস্যময় হাসি দিয়েছে জেরিন।
নদীর মনে হচ্ছে ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তিনি যেন প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠছেন। এমন মানুষ সবার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কাজে ফিরে নদী ফোনে কয়েকটি মিসকল দেখলো। সবই সাতক্ষীরার; দুটা রানু খালার, একটা মেজ মামা, একটা বড় মামার। এখন কথা বলতেই ভালো লাগছে না।এইখানে কারো অনুপস্থিতিতে তার সৌরভ মেখে কাজ করা যায়, ওইখানে গিয়ে বন্ধ কূপে দম আটকে ফেলার মানে নেই।
” যাবার প্ল্যানটা কি আছে না ড্রপ দিয়েছ? ”
কিচেনে ঢোকার মুখে তুষারের সাথে দেখা। নদী স্বাভাবিক হাসলো, ” শুক্রবার ঘরের অনেক কাজ থাকে। এইজনয় এখনো ডিসিশন নেইনি তুষার ভাই।’
” নিয়ে ফেল প্লিজ। ভালো লাগবে, আজকাল কেন যেন মনে হয় তোমার মন খারাপ ”
“আপনি দেখেনই বা কখন, আমাদের তো এখন কর্মক্ষেত্রই আলাদা ; এইগুলা আপনার মনের কল্পনা ”
” হতে পারে আমার নিজের মন খারাপ থাকে বলেই। যখন থেকে এইখানে ঢুকেছি দম ফেলারও সময় পাই নাই।শুরুর দিকে সম্পূর্ণ রেস্তোরাঁর একআ ওয়েটার ছিলাম। তখন ভাবতাম আমার মত পরিশ্রম কেউ করতে পারবে না, তোমাকে দেখে ধারণা চেঞ্জ হয়ে গেছে। এত অল্প বয়সে পড়ার সাথে কাজ করার ছুৎমার্গ ছেড়ে এগোচ্ছ। স্যালুট করতে মনে চায়।নদী তুমি নিজেও জানো না তুমি কত অসাধারণ। ”
নদী অল্প হাসলো, ” আপনিও বেশ অসাধারণ। পরলোকবাসীর সাথে বন্ধুত্ব!
নদী কথা আর আগাতে পারলো না তার ডাক পড়লো সোহরাব সাহেবের থেকে।
” আমি একটা পেনড্রাইভ পাঠিয়েছি তুমি দেখেছ নাকি জানি না, ওইখানে অনেক কিছু ক্লিয়ার করা আছে। ” চিকেন বাস্কেট মুখে দিতে দিতে নিতিন মন্ডল মাথা নেড়ে বলছেন।
সোহরাব সাহেব বললেন, ” আমিও কিছুটা জানি, নাসির সাজ্জাদ আসলে এই বাড়ির এগেইন্সটে ব্যাংকে অনেক লোন করে ফেলেছিলেন কিন্তু সেটা শোধ করতে পারছিলেন না। কিন্তু এত এত টাকা লোন করে কি করেছেন কেউ জানে না”
” বাচ্চার চিকিৎসা ” নিতিন বললেন, ” দশ বছর আগে আমি যতটা খোঁজ নিয়েছিলাম, ওর যে বড় মেয়েটা চার-পাঁচ বছরে ব্লাডে কোন সমস্যা হয়েছিলো ;এখানে চিকিৎসা হতো না। বাইরে নিয়ে যেতে হয়েছিল। প্রচুর খরচও হয়েছে।ছিল সাধারণ কলেজের প্রফেসর৷ দামী এরিয়ায় একটা পুরনো পৈতৃক সম্পদ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এইজন্যই সম্ভবত মডগেজ দিয়ে..। ”
” আম্মা আমরা প্লেনে কি উড়ছি? প্লেনটা মাঝ আকাশে দাঁড়ায় আছে কেন?”
নদী স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে৷ সামনের ভদ্রলোকের কথায় মাথায় ভাসছে অস্পষ্ট ছেড়া ছেড়া স্মৃতি।প্রথম প্লেনের যাত্রা, বিদেশের মাটিতে যাওয়া, জ্যাকিচেনের মতো দেখতে ডাক্তার তার চিকিৎসা করেছিলেন। মায়ের সাথে দীর্ঘদিন থাকতে হয়েছিল হাসপাতাল । বাবার জড়িয়ে সেই কান্না,–
“আলহামদুলিল্লাহ আমার মা সুস্থ হয়ে গেছে আল্লাহ তোমার দয়ার শেষ নেই… ”
” কী ব্যাপার নদী তুমি এখানে? ” সোহরাবের উচ্চস্বরে নদীর স্মৃতি পর্দা ভাঙলো।
নদী বলল ” স্যার আপনি মিট বাস্কেটের শেফকে ডেকেছিলেন ”
” সো ইউ আর দ্যা আর্টিস্ট!” নিতিন বাবু অবাক হয়ে দেখলেন। ” মাই গড এতো একেবারে ছেলেমানুষ, তাতেই এত দারুণ হাত । কী নাম মা তোমার ?
” মেহরোজ সাজ্জাদ ” নদী নিজের নামটা স্পষ্ট বললেও ভদ্রলোক তেমন ভালো মতো শুনলেন না। হাতে পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে গেলেন। নদী নিতে চাইলো না।
” রেখে দাও তোমায় প্রণামী দিলাম। একেবারে ধ্রুপদীর হাত গো মেয়ে, এই গুণের যত্ন নিয়ো আশীর্বাদ করি, অনেক এগোবে”
নদী ভেতরে একটা অস্থির অতীতের ঢেউ তুলে ভদ্রলোক চলে গেলেন। নদী তার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারলো না। সোহরাব সাহেব নিজেও তেমন কিছু খুলে বললেন না।ভদ্রলোক বিদায় নেবার পর অন্য কোন ফোন কলে বিজি হয়ে উঠে গেলেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় নদী টেবিল গোছাচ্ছে। এরই মাঝে তুষার এসে উপস্থিত,
” তাহলে কাল যাচ্ছ সিনেপ্লেক্স?”
” হু” নদীর উত্তরটাও আনমনা।
“আমি দশটায় তোমার হোস্টেলে চলে আসব”
” আচ্ছা ”
” মেনি থ্যাংকস নদী ” তুষার হাসলো।
” তুষার ভাই এই মানুষটা কে বলতে পারবেন, সোহরাব স্যারের কাছে যে এসেছিলো ”
” নামী মানুষ তো,টক শো দেখ না? সাংবাদিক নিতিন মন্ডল ফ্রীডম চ্যানেলের নিউজ এডিটর ”
“ওহ সত্যি। অনেক উপকার করলেন তুষার ভাই ”
তুষার হাসলো৷ উপকারের মেয়েটা দেখেছে কী, কাল দেখবে।তুষারের ভেতর ভেতর অন্য একটা মাতাল করা প্লাবন।কালকের প্ল্যানটা তার বন্ধুর, কাল সিনেমার মাঝে একটা চিপসের প্যাকেট বাকিটা সব সহজ করবে। অল্প একটু অসুস্থ হবে শুরুতে তারপর তুষার তাকে নিয়ে বেরিয়ে যাবে। নদীর মতো মেয়েদের শায়েস্তা করতে হলে এভাবেই করা দরকার। সব মধু শুধু সি ই ওই কেন খাবে?
এদিকে মাথায় একশো প্রশ্নের গিটে নদীর অসহায় লাগছে। ভদ্রলোক কে এবং কী বলছিলেন বিষয়টি জানা খুব জরুরি। কেন যেন মনে হচ্ছে সব সাজানো পৃথিবীতে কোথাও একটা বড় ফাঁকি। কিন্তু কেউ নেই এটা ধরিয়ে দেবার।
নদীর তৎকালীন হতাশাকে নাড়া দিতেই যেন ফোন বেজে উঠলো নতুন উদ্যোমে। ম্যাসেঞ্জার কল, নামটা অবিশ্বাস্য! হৃদয়টা না থেমে যায়! এটা কি সত্যি?
” হ্যালো ”
ওপাশ থেকে সুললিত কন্ঠ ” মেহরোজ কী অবস্থা? ”
” স্যার আমি ভালো আপনি কেমন? ”
” অসাধারণ!শুধু মিস করছি তোমাদের কিচেনের বাকিরা ভালো? ”
” জি ”
“আমার মোবাইল সিসি মনিটরে তোমাকে প্রতিদিন দেখি কিন্তু কথা হয় না। আসলে সময় হচ্ছিলো না, পুরনো বন্ধুদের গেট টু গেদার ছিল, আর কিছু পেন্ডিং কাজ… এনিওয়ে মেহরোজ, তুমি কিছু মনে না করলে একটা বিষয়ে আমায় সাহায্য করতে পারবে?মানে জানতে চাই তুমি কিছু জানো কি না …”
” নিশ্চয়ই স্যার ”
রম্য ধীরলয়ে তার সমস্যাটা বয়ান করলো।
” গ্যাব্রিয়েলস কিচেনের ইম্পর্ট্যান্ট ডকুমেন্টস! ” নদীর মুখ গম্ভির ” স্যার আপনি ঠিকই আছেন কিছু কাগজ আর একটা পেনড্রাইভ ওই ব্যাগের একটা চেইনে আমি দেখেছি।কাজের ব্যস্ততায় আমার আসলে দিতে মনে ছিলো না আপনিও যাবার প্রস্তুতি করছিলেন.. ”
” তারমানে ওগুলো তোমার কাছে আছে! “রম্য যেন দারুণ খুশি হয়ে গেল ” থ্যাংক গড! আমিই লইয়ারকে ভুল ফাইল দিয়েছি, তুমি দারুণ বাঁচালে । তুমি এগুলো গুছিয়ে বাবাকে হ্যান্ডওভার করতে পারবে? ”
” নিশ্চয়ই করব স্যার ” নদী একটা ছোট ঢোক গিলল, ” ব্যাস, ছোট একটা সমস্যা ”
রম্য আতঙ্কিত হয়ে ধীরে ধীরে বলল “মেহরোজ ওয়েট ,এটা তোমার ফেমাস ছোট একটা সমস্যা! সেটা কী বলতো? ”
*****
পরেরদিনের সকাল সাড়ে দশটা। সাতক্ষীরা সোহাগ বাসস্ট্যান্ড। সারারাতের বাসের জার্নিতে শরীরের ভাঁজ ভাঁজ ব্যথা নদীর। দীর্ঘ ছয় মাস পর ফিরতে হলো পুরনো জনপদে। এখানের প্রকৃতি আকাশবাতাস যেন অবাক চোখে দেখছে তাকে।
বড়মামা এসেছেন তাকে নিতে, হাসিমুখে এগিয়ে আসছেন। মোজাফফর হোসেন সাহেবের মাথায় একটা দুশ্চিন্তা থেকে নিষ্কৃতি , মেয়ে এলো তাহলে। পাত্রপক্ষকে শামিমের বিয়ের আসরেই দেখিয়ে দিতে হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে সরাকাবিন পড়িয়ে ফেলা সমস্যা না। শিক্ষিত পরিবার, ভদ্র বনেদী কোন চাহিদাও নেই এমন সুযোগ একেবারে হাতছাড়া করা যাবে না।
মামাকে বিনয়ের সাথে সালাম দিলেও নদী ভেতর তীব্র দ্রোহ। বিয়ের অতিথির ছদ্মবেশে সে এসেছে কঠিন এক মিশনে। জেদ চড়েছে পারতেই হবে। খুঁজে পেতে বের করতে হবে সেই হলুদ ব্যাগ আর ডকুমেন্টস। রানুখালার ফাজলামোর জন্য কোন অবস্থাতেই গ্যাব্রিয়েলকে বিপদে ফেলা চলবে না। তার সামনে তুচ্ছ লাগছে সকল বিপদ। গ্যাব্রিয়েলের সামান্য রিক্যুয়েস্ট তার জন্য অনেক কিছু। বুকের মাঝে এই অস্থির ঝড়ের নাম কী নদী জানে না।
(চলবে)
#শারমিন_আঞ্জুম