বাবার ভালোবাসা পর্ব-২৬+২৭

0
318

#বাবার_ভালোবাসা।
লেখকঃরাইসার_আব্বু।
পর্বঃ২৬

রাইসা যখন হসপিটাল থেকে নেমে একটা জুয়েলারির দোকানে গিয়ে মালাটা দেখিয়ে বললো ‘ আঙ্কেল মালাটা বিক্রি করে দিবো। ‘
– দোকানে থাকা একটা ছেলে বললো’ বস মালাটা মনে হয় চুরি করে আনছে। কিছু টাকা হাত ধরিয়ে বিদায় করে দেন।
– মামনি মালা দাও তো দেখি। মালাটা নিয়েই বললো ‘ এই পুলিশকে ফোন দাও তো। বাচ্চাটা কার জানি মালা চুরি করে নিয়ে আসছে।

– ছি:আমার বাবার দেওয়া মালা। চুরি কেন করবো। আপনি মালাটা নিয়ে টাকা দেন বাবাইয়ের জন্য খাবার নিবো। আমার বাবার ক্ষুধা লাগছে। দেন না আঙ্কেল?আর পুলিশ ডাকবেন না। আমার বাবাই খুব অসুস্থ। প্লিজ দয়া করেন আঙ্কেল।

– বস মেয়েটাতে পাক্কা অভিনয় করতে পারে।
– এই তুই চুপ কর। আচ্ছা মামনি তোমার বাবা কি সত্যি অসুস্থ?
– হ্যাঁ আমার বাবা দু’দিন ধরে কিছুই খায়নি। নেন না আঙ্কেল মালাটা। আমাকে কিছু টাকা দেন, আমার বাবাই এর জন্য খাবার কিনে নিয়ে যাবো।
– দোকানদার রাইসার কথা শুনে পকেট থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে দিয়ে বলল’ মামনি মালা লাগবে না। ‘টাকাটা নিয়ে নিয়ে তোমার বাবার জন্য খাবার নিয়ে যাও।

– আঙ্কেল আপনি আমার মালা রেখে টাকা দেন। তাছাড়া আমি আপনার টাকা নিতে পারবো না। কি হলো নেন না মালা।
– মামনি বললাম তো মালা লাগবে না। মালাটা সুন্দর তোমার কাছেই থাকুক।
– না না, আঙ্কেল তাহলে আসি। বাবা শুনলে মন খারাপ করবে যদি শুনে আপনার কাছ থেকে টাকা নিছি। আমি অন্য দোকানে বিক্রি করে দিবো। আসসালামু আলাইকুম।

– এই মামনি কই যাও? আমি নিবো। আচ্ছা কত টাকা লাগবে বলো?
– আপনি তো জানেন কতটাকা হতে পারে! যা হয় তাই দেন।
– মামনি এই নাও এক হাজার টাকা। আর মালাটা রাখলাম। তোমার বাবা সুস্থ হলে টাকা দিয়ে নিয়ে যেয়ো। আমি বিক্রি করবো না মনে করো আমানত রাখলে।
– আচ্ছা দেন। রাইসা টাকা নিয়ে বাহির থেকে ফল কিনে নিয়ে যখন হসপিটালে ঢুকল। দোকানদার রাইসাকে ফলো করতে করতে হসপিটালে ঢুকল। রাজ রাইসাকে দেখেই বললো আমার মা টা কোথায় গিয়েছিল?
– কেন জানো না? ছেলের জন্য খাবার নিয়ে আসতে গিয়েছিল।
– রাজ রাইসার হাতে কিছু ফলমূল আর বিরিয়ানির প্যাকেট দেখে চমকে যায়।

– বাবাই তোমার ক্ষুধা লাগছে তাই না? এই নাও তোমাকে আপেল আর আঙুর কেটে দিচ্ছি খেয়ে নাও। রাইসা ফল নিয়ে রাজের কাছে যেতেই রাজ বললো’ মামনি তুমি টাকা কোথায় পেলে?’
– খাও তো বাবাই। টাকা কোথায় পেলাম জানতে হবে না। হা করো আমি খাইয়ে দেয়।
– রাইসা বলো, তুমি কি কারো কাছ থেকে টাকা ভিক্ষা চেয়েছো? আমি জানি তোমার কাছে এক টাকাও নেই।
– বাবা তোমার মা কি ভিক্ষা করতে পারে এ বলেই রাইসা কেঁদে দিল।
– রাজ রাইসার গলার দিকে চেয়ে দেখে তার দেওয়া সোনার চেইনটা রাইসার গলায় নেই। রাজের বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। তাহলে কি রাইসা গলার মালা বিক্রি করে, আমার জন্য খাবার নিয়ে আসলো।
– রাইসা কোন কথা বলছে না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
– রাজ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল’ আমার মা টা গলার মালাটা কোথায়? আমার মা কথা বলছে না কেন?
– বাবাই তুমি মন খারাপ করো না। মালা বিক্রি করে দিয়েছি। আমার কাছে মালার দরকার নেই। আমার বাবাই যেন সুস্থ হয়ে যায় এটাই আমি চাই। বাবাই কি হলো তুমি খাবে না? ও বাবাই?
– মারে একটু বুকে আয়। রাজ রাইসাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। রাজের মনে এখন আর কোন কষ্ট নেয়। আল্লাহ তায়ালা তাকে রাইসার মতো একটা মেয়ে দিয়েছে।

– রাইসা আজকে খাইয়ে দিচ্ছে। রাজের গাল বেয়ে পানি পড়ছে। আচ্ছা আমার মা টা খেয়েছে?
– তুমি জানো না বাবাই তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে খাই?
– রাজ বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে রাইসাকে খাইয়ে দিচ্ছে।
– ডাক্তার কণা পাশে দাঁড়িয়ে বাবা-মেয়ের ভালোবাসা দেখছে। ডাক্তার কণার চোখে এমন ভালোবাসা দেখে পানি এসে যায়। মন চাচ্ছে তারও যদি এমন একটা মেয়ে থাকতো।
– হঠাৎ রাইসার চোখ যায় কণার দিকে।
– আন্টি তুমি কখন এলে?
– এইতো মামনি এখনি। খেয়েছো তোমরা?
– হে খেলাম!
– ওহ! আমাকে খেতে বললা না?
– এখনো সব বিরিয়ানি শেষ হয়নি। ফল তোমাকে দিবো না। ওটা বাবাই খাবে। বাবা যে অসুস্থ। আর তুমি তো ডাক্তার সব জানো।

– কণা এবার হেসেই দিল। আচ্ছা মামনি আমি খেয়ে এসেছি। আর তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

– রাজ অনেকটা কৃতজ্ঞতার সুরে বলল’ ম্যাডাম এমনিতেই আপনি অনেক করেছেন। ‘ আর আমাদেরকে ঋণী করবেন না।
– কি যে বলেন মানুষকে সেবা করাই আমাদের ধর্ম।

– রাজ যখন ডাক্তারের সাথে কথা বলছিল তখন দোকানদার লোকটা দোকানের সব কথা খুলে বলল। এবং মালাটা রাইসার গলায় পড়িয়ে দিয়ে বলল’ মা’রে তুরে খুশি হয়ে দিলাম। আর এই যে মি:আপনি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান এমন একটা মেয়ে পেয়েছেন। আচ্ছা ভাই আমার কার্ড মন চাইলে দেখা কইরেন। আমি আসি।
– লোকটা চলে গেল। রাইসা আমার মাথার কাছে বসে আছে। এটা সেটা বলছে ।

– এদিকে কথা ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। ঘুমাতে গেলেও রাজের সে রক্তমাখা চেহারাটা ভেসে ওঠে। রাইসার কাকুতি-মিনতি গুলো বারবার কথার কানে বেজে ওঠে কথা ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। কথা রাজকে ভুলতে পারছে না। কথা মনে মনে বলতে লাগলো, রাজ তুমি কি একটাবারো আমার কথা ভাবলে না? আমি তো রাইসার মা হওয়ার জন্য নিজের মাতৃত্বকে কুরবানি দিয়েছিলাম। আমি তো তোমাকে ভালোবাসতাম তবে কেন করলে এমন? তুমি জানো আমি ঘুমাতে পারি না। খেতে পারি না। আমাকে মেরে ফেলতে। তারপরও এতোটা কষ্ট পেতাম না। কথা বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে আর এসব ভাবছে। হঠাৎ কথার বাবা রুমে প্রবেশ করল।
– কথা তার বাবাকে দেখে চোখের পানি অকপটে মুছে ফেলল।

– বাবা কিছু বলবে?
– মা’রে তোর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছি না। মা’রে আমি আগেই বলেছিলাম। গরীবদের তাড়াতাড়ি বিশ্বাস না করে একটু ভেবে দেখ। আচ্ছা এসব নিয়ে মন খারাপ করিস না। শহরের নামকরা ধনি, রিফাত সাহেব তার ছেলেকে দিয়ে তোর বিয়ের কথা বলেছে। ছেলেটাকেও নাকি অনেক ভালো। বিদেশ থেকে পড়ালেখা করে এসে বাবার ব্যবসার হাল ধরেছে ।
-বাবা থামবে তুমি? আমি বিয়ে করবো না। আর হ্যাঁ বাবা আমি আর এদেশে থাকবো না। আমি আবারো আমেরিকা চলে যাবো।
– কি বলছিস মা? আমি বুড়ো হয়ে গেছি আর কয়দিন বাঁচি?
– বাবা আমি পারছি না আমার দম বন্দ হয়ে আসছে এখানে। আবার মন ভালো হলে চলে আসব। তুমি এ মাসের মাঝেই আমার আমেরিকা যাবার ব্যবস্থা করবে।
– আচ্ছা, তাহলে রিফাত সাহেবকে না করে দিবো?
– আবারো!
– না থাক। তোকে আমেরিকায় পাঠাচ্ছি। বিয়ে করতে হবে না আর।

– এদিকে মৌ আবারো পরের দিন হসপিটালে যায়। হসপিটালে গিয়ে দেখে রাজ শুয়ে আছে। রাজের বুকের উপর রাইসা মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। রাজ রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মৌ আস্তে আস্তে রাজের কেবিনে ঢুকল।
– রাজ মৌকে দেখেই বলল’ আপনি?আপনি আবার কেন এসেছেন? কি চান আপনি?
– আমি কি চাই জানো না?
– জানতে আপনাকে বলতাম?

– রাজ আমি তোমার পায়ের নিচে একটু জায়গা চাই। দিবে জায়গা টা?
– কি বলছেন এসব? আপনি কেন আমার পায়ের নিচে জায়গা চাইবেন?
– রাজ আমি তোমাকে ছাড়া সত্যি বাঁচবো না। আমি ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নাও। আমার হার্ট যে তুমি। রাজ আমাকে ক্ষমা করে দাও না।
– প্লিজ আপনি চলে যান। কথাটা বলার সাথে সাথে ‘মৌ আমার দু’পা ঝাপটে ধরে বলতে লাগল রাজ আমাকে ক্ষমা না করলে আমি তোমার পা ছাড়বো না। আমি কিভাবে বুঝাবো, আমার হৃদয়ে শুধু তুমি আছো। এমন সময় রাইসা ঘুম থেকে উঠে পড়ল। রাইসা ঘুম থেকে উঠেই দেখে মৌ তার বাবার পা ধরে আছে। বাবাই এই পঁচা মহিলাটা তোমার পা ধরে আছে কেন? আর আপনি কেন বারবার আমাদের বিরক্ত করতে আসেন? কি চান। বাবা চলে যেতো বলো, আমার দেখতে মন চাচ্ছে না ।
– রাজ তুমি আমাকে গলা টিপে মেরে ফেল তবুও আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়ো না তুমি যা বলবে তাই শুনবো । কখনো বাড়ির বাহির হবো না।
– আপনি পা ছাড়েন। প্লিজ পা ছাড়েন।
– যতক্ষণ পর্যন্ত বুকে টেনে না নিবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার পা ছাড়বো না। সেদিন তোমাকে ঘুমের ওষধ খাইয়ে যা করেছি সব তোমাকে পাওয়ার জন্য করেছি। তোমাকে যে ভালোবাসি। আমি তোমার সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না ।
– রাজ আল্লাহ তো ক্ষমাশীলদের পছন্দ করে। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও না।
– পা ছাড়েন। ক্ষমা করে দিয়েছি আপনাকে। আল্লাহর শপথ, আমার একবিন্দু অভিযোগ আপনার প্রতি নেই।
– আমাকে একটু বুকে নিবা?
– সরি।
– মৌ ফলকাটা ছুরিটা তার হাতে নিয়ে বলল’ রাজ তুমি যদি আমাকে বুকে টেনে না নাও তাহলে হাতের শিরা কেটে মরে যাবো।
– এই মৌ কি পাগলামী করছো? এসব করে না। আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে।মৌ তার হাতে এক পোঁচ দিতেই ফিলকি দিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো।

– রাইসা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল’ এই যে আপনি কেন হাত কাটছেন? আর আপনি যদি এখান থেকে না যান তাহলে আমার আর বাবাইয়ের মরা মুখ দেখবেন।
-মৌ রাইসার মুখে এমন কথা শুনে আর একমুহূর্তও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। এক দৌড়ে বাসায় চলে যায়।
– মৌ চলে গেলে, রাইসা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগে ‘ বাবাই মম তোমাকে সত্যি ভালোবাসে। মমকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। চলো না কালই মমের কাছে যায়? যাবে তো? আমার খুব করে মন চায় মমের বুকে যাবো। সত্যিই তোমার মমকে আবার নিয়ে আসবো? হ্যাঁ নিয়ে আসো। কথা পঁচা আন্টির চেয়ে ভালো আছে। মম আজ তোমার জন্য মরতে চেয়েছিল।

– এদিকে পরের দিন, রাইসাকে নিয়ে যখন মৌ এর বাসায় আসি। বাসায় এসে দেখি মৌ আর নিলয় অাপত্তিকর অবস্থায় শুয়ে আছে। দু’জনেই অর্ধ নগ্ন! রাইসা তার চোখ ধরে ফেলল। তাড়াহুড়া করে রুম থেকে বের হয়ে পড়লাম।
– আমরা যখন মৌ এর বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সা ধরছি এমন সময় কালো একটা প্রাইভেট কার থেকে নেমে কথাকে মৌ এর বাসায় দিকে যেতে দেখলাম।
– বাবাই তোমার চোখে পানি?
– কেঁদো না বাবাই আমার মম লাগবে না। আমরা এ শহর ছেড়ে চলে যাবো কেমন?

-চলবে””””’

#বাবার_ভালোবাসা
পর্ব:২৭
লেখা:রাইসার_আব্বু।

– এদিকে পরের দিন, রাইসাকে নিয়ে যখন মৌ এর বাসায় আসি। বাসায় এসে দেখি মৌ আর নিলয় অাপত্তিকর অবস্থায় শুয়ে আছে। দু’জনেই অর্ধ নগ্ন! রাইসা তার চোখ ধরে ফেলল। তাড়াহুড়া করে রুম থেকে বের হয়ে পড়লাম।
– আমরা যখন মৌ এর বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সা ধরছি এমন সময় কালো একটা প্রাইভেট কার থেকে নেমে কথাকে মৌ এর বাসায় দিকে যেতে দেখলাম।
– বাবাই তোমার চোখে পানি?
– কেঁদো না বাবাই আমার মম লাগবে না। আমরা এ শহর ছেড়ে চলে যাবো কেমন?
– কি হলো বাবাই তার পরেও তুমি কাঁদছো? কেঁদো নাতো। আমার কোন মম লাগবে না বাবাই।
– রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম।

– রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে রাস্তায় হাটুগেড়ে বসে আছি। মাথায় ক্ষতটা এখনো শোকায়নি ঠিকমতো। হঠাৎ সামনের দিকে তাকাতেই অনেকটা চমকে ওঠলাম। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম’ কথা তুমি?’

– এই ছোটলোকের বাচ্চা আমার নাম ধরে ডাকার সাহস কোথায় পাস তুই? আর তোর মতো চরিত্রহীনের মুখে কথা নামটা শোভা পায় না। ম্যাডাম বল।
– সরি ম্যাডাম। গরীবতো তাই ব্যাবহার টা শিখতে পারিনি। ক্ষমা করে দিয়েন।
– আচ্ছা আজকেও কি, মৌ এর কাছে এসেছিলি? আচ্ছা বলতো কেনো আমার জীবনটা নিয়ে ছিনিমিলি করলি? আগেই বলতি তোদের মাঝে ফ্যাজিক্যালি রিলেশন ছিল। আমি তোদের চারহাত এক করে দিতাম।

– ম্যাডাম প্লিজ, আমার মেয়ে আছে। এসব কথা বলবেন না। আমরা এখন আসি।

– এই এই কই যাস? বল মৌ এর বাসায় কেন গিয়েছিলি? নাকি আজকেও ওসব করতে গিয়েছিলি?
– ম্যাডাম বললাম না আমার মেয়ে সাথে আছে। এসব কথা না বললে হয় না।
– কুত্তা, তুই ভিডিও বের করবি। ছোট্ট মেয়ে রেখে মৌ এর সাথে রাত কাটাবি। আর আমি বলছি, তোর শরীরে লাগে। কুত্তার বাচ্চা।

– প্লিজ স্টপ। আরেকবার কুত্তার বাচ্চা বললে আমি কিন্তু আপনাকে যে সম্মানটা দিচ্ছি সেটা আর দিবো না।
– কি বললি কুত্তার বাচ্চা? ঠাস করে কথা গালে চড় বসিয়ে দিল। আমি কিছু না বলেই রাইসাকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। এসব বড়লোকদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
– এই কই যাস? সেদিন তোকে বাঁচায় রাখাটাই ভুল হয়েছে। জানি না কতমেয়ের জীবন নষ্ট করছিস। জানিস তোর ওসব ভিডিও কথা যখন মনে পড়ে তখন মন চাই, তোকে খুন করে ফেলি। তুই যদি আর কোনদিন আমার চোখের সামনে আসবি নার। লুজার। তুই আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিস। কুত্তার বাচ্চা আবারো আমার দিকে তাকিয়ে থাকিস। তোর কোন যোগ্যতা আছে, ল্যাংড়াকে যে আমি আশ্রয় দিয়েছিলাম এটাই তো বেশি। আর সে আশ্রয় দেওয়ার জন্যই কালসাপ হয়ে কলিজাতে ছোবল দিলি। অধরা ঠিকই বলেছিল, তুই আমার বাড়ির চাকর হওয়ারো যোগ্য নস। আর তুই কিনা হবি আমার বর। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। যে আমার পায়ের যোগ্য না সে হবে বর।
– ম্যাডাম প্লিজ এটা রাস্তা। আমি বামন হয়ে চাঁদ ধরার আশা করিনি। আর হ্যাঁ সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে। আর আপনি বলছেন না কোনদিন যেন আপনার সামনে যেন না আসি? হ্যাঁ আল্লাহ যেন তাই করে। কোনদিন আপনার সামনে আসবো না। আর বলছেন না যোগ্যতা?
– বাবা তুমি চুপ করো, আজ আমি বলি। এই যে ম্যাডাম। সরি, আপনাকে ক্ষনিকের জন্য মম ডেকেছিলাম। বলতে গেলে আপনি জোর করেই ডাকিয়েছিলেন। বিশ্বাস করেন আমি মন থেকে, আপনাকে মম মনে করেছিলাম। বাবাইকে রাজি করেছিলাম। কিন্তু আপনি তার প্রতিদান স্বরুপ আমার কাছ থেকে বাবাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমি কি এমন ক্ষতি করেছিলাম যার জন্য আমার বাবাইকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। আজ আপনাকে বলছি, যে বাবাই আপনার যোগ্য না বললেন, আল্লাহ এমনোতো করতে পারে সে বাবার পায়ের নিচে আশ্রয়ের জন্য কাঁদবেন। আপনার দালান কোঠা সেদিন কোন কাজেই আসবে না। আমি বলে গেলাম, আমার বাবাইকে যে কষ্ট দিছেন। সেজন্য আপনি হাজারগুণ বেশি কষ্ট দিবেন। আর আপনি আমার বাবার পায়ের যোগ্য না। চলো তো বাবাই,এখানে আর এক মুহূর্তও নয়।

রাইসাকে নিয়ে রিক্সা করে যাচ্ছি। আর মনে মনে ভাবছি আজ থেকে সব শেষ হয়ে গেল। যে টুকু বিশ্বাস ছিল সেটাও তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল। ভেবেছিলাম সব ভুলে মৌকে বুকে টেনে নিবো কিন্তু তা আর হলো না। বরং হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মানুষ কিভাবে পারে এসব করতে? সৃষ্টিকর্তা কি ক্ষমা করবে? আমি কি অপরাধ করেছিলাম যার জন্য সবাই আমাকে নিয়ে খেলছে। একবার কথা একবার মৌ। সত্যিই কি গরীবের কোন মর্যাদা নেই। আর কথা এতটা আঘাত করবে ভাবতে পারিনি। কথার প্রতিটা কথা কলিজা ছেঁদ করে ফেলছে। ছোটবেলায় থেকে চোখের জল সঙী হয়ে আছে। বয়স যখন সাত বছর নিষ্ঠুর পিতাটা আমার মাথার উপর থেকে মাকে কেড়ে নেয়। সৎ মায়ের ঘরে থাকতে পারিনি। যে বাড়িতে নিজের মা নেই সেখানে কিভাবে থাকি। যেদিন শুনেছি বাবা আর ডাইনীটা মিলে আমার মাকে মেরে ফেলেছে সেদিন আর পারিনি সে বাড়িতে থাকতে। আল্লাহ তায়ালার কাছে বিচার রেখে এসে পড়েছি। এতিমখানায় বড় হয়েছি। যখন কোন ছেলে-মেয়েকে তার মা বাবা আদর করতো। কুলে নিতো, তখন মনে হতো বুকের ভিতরটাতে চিনচিনে ব্যাথা করতো।

– কি হলো বাবাই তুমি কি ভাবছো?
– না বাবা কিছু না।

– এমন সময় রিক্সার সামনে দেখি একাটা প্রাইভেট কার দাঁড়ালো। রিক্সা ওয়ালা অনেকটা ভয় পেয়ে যায়।
– হঠাৎ গাড়ি থেকে কণা ম্যাডামকে নামতে দেখে অবাক হয়ে যায়।
-ম্যাডাম আপনি?
– হ্যাঁ আমি। আর মিস্টার রাজ, আপনি এভাবে লুকিয়ে এসে পড়ছেন কেন?
– মা আপনাকে নিয়ে যেতে বলছে। চলেন আমার সাথে।

– এখন?
– হ্যাঁ এখন।

– কণা জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে গেল।

– এদিকে কথা, মৌ এর বাড়িতে ঢুকতেই একটা বাইক দেখতে পায়। বাইকটা তার খুব পরিচিত পরিচিত লাগছে। কিছুক্ষণ ভাবনার সাগরে ঢুব দিতেই মনে পড়ল এটা তো নিলয় এর বাইক। নিলয় মৌ আপুর কাছে কেন আসছে?
– কথা মৌকে খুঁজতে খুঁজতে একদম উপরে চলে যায়। কথা উপরে গিয়ে যখন মৌ এর রুমে নর্ক করবে এমন সময় ভেতর থেকে চাঁপা কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পেল। ‘এই ছাড়ো নীলয়, কি করছো?’

– একটু আদর করি না।
– এসব ঠিক না। তুমি রাজকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবে বলে প্রমিজ করেছিলে। কিন্তু এখন তোমার মতিগতি আমি বুঝতে পারছি না। আমি রাজকে যেকোন মূল্যেই হোক চাই।

– হুমম তুমি যেমন রাজকে চাও, তেমনি আমি কথাকে চাই। আমার একটু ভুলের জন্য শতকোটি টাকার সম্পত্তি হাত ছাড়া হয়ে যায়। তাই লাস্ট গেমটা তোমাকে দিয়েই খেললাম। আর সরি তোমার রাজ নিরপরাধ হয়েও মার খেলো।
– কি বলছো এসব? তুমিও মারছো রাজকে?
– আরে না কথার সামনে একটা থাপ্পর দিয়েছিলাম। তবে কি জানো, তুমি ফাস্ট ক্লাস অভিনয় করতে পারো। ওদিন যদি সুসাইডের কথা বলে ওকে না নিয়ে আসতে তা হলে দেখা যেত সব প্লেন ব্যসতে যেত।

তবে কি জান রাজ তোমাকে ভালোবাসতো। তা না হলে, এতোরাতে তোমার সুসাইডের কথা শুনে ছোট্ট বাচ্চা রেখে ছুটে আসতো না।
– হুম জানি। আমিও তো রাজকে ভালোবাসি। জানো নিলয় কথার মুখে যখন শুনেছি রাজকে সে ভালোবাসে। তখন আমার মনে হয়েছিল তাকে খুন করে ফেলি। কিন্তু পারিনি। আমি জানতাম রাজ কখনো রাজি হবে না। কারণ রাজ হচ্ছে কষ্টি পাথর। কিন্তু যখন রাজ কথাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় তখন আমি আর পারিনি সহ্য করতে। আর তখনি তুমি বুদ্ধিটা দিলে, রাজকে বাসায় ডেকে এনে, ঘুমের পিল খাইয়ে দিতে। তোমার বুদ্ধিটাও বেশ কাজে লেগেছে।
– তাই বুঝি মৌ।
– হ্যাঁ তাই। ওদিন যদি সুসাইডের কথা বলে ওকে না নিয়ে আসতে তা হলে দেখা যেত সব প্লেন ব্যসতে যেত। তবে কি জান রাজ তোমাকে ভালোবাসতো। তা না হলে, এতোরাতে তোমার সুসাইডের কথা শুনে ছোট্ট বাচ্চা রেখে ছুটে আসতো না।
– হুম জানি। আমিও তো রাজকে ভালোবাসি। জানো নিলয় কথার মুখে যখন শুনেছি রাজকে সে ভালোবাসে। তখন আমার মনে হয়েছিল তাকে খুন করে ফেলি। কিন্তু পারিনি। আমি জানতাম রাজ কখনো রাজি হবে না। কারণ রাজ হচ্ছে কষ্টি পাথর। কিন্তু যখন রাজ কথাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় তখন আমি আর পারিনি সহ্য করতে। আর তখনি তুমি বুদ্ধিটা দিলে, রাজকে বাসায় ডেকে এনে, ঘুমের পিল খাইয়ে দিতে। তোমার বুদ্ধিটাও বেশ কাজে লেগেছে।
– তাই বুঝি মৌ।
– হ্যাঁ তাই।

– তবে কি জানো? একটা জিনিস সবচেয়ে ভালো লেগেছে, ঘুমের ঘরে রাজ আর তোমার পিকগুলো যে তোলা হয়েছে সেটা কথা বুঝতে পারে নাই। আর যে ভিডিওটা আমি আর তুমি করলাম সেটা কিন্তু সেই হইছে।
– কথাটা বলে নীলয় আর মৌ দু’জনেই হেসে দেয়।
-কথার কাছে এখন সবকিছু দিনের ন্যায় পরিষ্কার। সে যা দেখেছে সব ভুল। কথার খুব কষ্ট হচ্ছে। যে মেয়েকে সে বোন বানালো সে এমন করলো? কি দোষ করেছিল সে? রাজকে নিয়ে স্বপ্নই তো দেখেছিল। কথার বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। এদিকে নীলয় মৌ এর বুক থেকে উঠে পড়তেই জানালার দিকে চোখ যায়। নিলয় কথাকে দেখবে সে ভাবতে পারে নায় । নিলয় যখন দরজা খুলে বের হবে তখনি কথা তাড়াহুড়া করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়।

– নিলয় মনে হচ্ছে কথা আমাদের সব কথা শুনে ফেলেছে। এখন কি করা যায়? প্লিজ তুমি একটা করো।

– তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি সব ব্যবস্থা করছি। নিলয় মনে মনে ভাবলো রাজকে শেষ করে দেওয়া ছাড়া কথাকে পাওয়া যাবে না। কেননা কথা যেকোন কিছুর বিনিময়ে হলেও রাজকে তার করে নিবেই।

-এদিকে কথা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, রাজ কি তাকে ক্ষমা করবে। রাজকে কত অপমান করলাম। আমার রাজ যদি আমাকে ক্ষমা না করে। আমি যে ওকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না। এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় না না গিয়ে সরাসরি রাজকে যে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছিল সেখানে চলে যায়। হসপিটালে গিয়ে রেজিস্টারে রাজের কথা জিজ্ঞেস করলে, কাউন্টার থেকে বলে রাজ নামে যে একজন ভর্তি হয়েছিল সে, দু’দিন আগে চলে গেছে। কোথায় গিয়েছে বলতে পারবেন?
– সরি ম্যাডাম তা তো পারবো না। কণা ম্যাডামকে বলতে পারেন! ম্যাডামের রিলেটিভ হবে বোধহয়।

-কথা হসপিটাল থেকে ঠিকানা নিয়ে যখন কণাদের বাসায় চলে যায়। কথা যখন কণাদের বাসায় ঢুকবে এমন সময় রাজ আর রাইসাকে বাসা থেকে বের হতে দেখেই দৌড়ে রাজের সামনে গিয়ে বললো’ রাজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ‘
– ম্যাডাম ছোটলোকের কাছে ক্ষমা চাইতে নেই।
– রাজ প্লিজ আমি বুঝতে পারিনি। আমি না বুঝেই এসব করছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– এই রিক্সা নিউমার্কেট যাবে?
– আমি যখন গাড়িতে উঠবো, এমন সময় কথা পিছন থেকে হাতটা ধরে ফেলল। আমি কথার হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে কথার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম। কথা কাঁদছে। হ্যাঁ কাদুক।
– কি হলো আরো মারো? তবুও ছেড়ে যেয়ো না।

চলবে”””””