বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
267

#বাবুইপাখির অনুভূতি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ২৮+২৯+৩০
_________________

সূর্যের কড়া রোদ্দুর মুখে পড়তেই ঘুম ভাঙলো আহির চোখ বন্ধ করেই এদিক৷ থেকে ওদিকে ঘুরলো আহি। তক্ষৎনাত ঘুমের মধ্যেই কাল রাতের কথা স্মরণে আসলো তাঁর। হঠাৎই আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে ছিল এমনটা মনে পড়তেই হকচকিয়ে উঠলো আহি। সাথে সাথে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। তারপর চারদিক তাকাতেই বুঝতে পারলো আহি সে নিজের বাড়ি নয় অন্যকোনো বাড়িতে আছে। আশেপাশে তাকিয়ে হঠাৎই চোখ পড়লো আহির নিজের দিকে পরনে তাঁর ওয়াইট শার্ট সাথে ব্লাক জিন্স। আহি কিছু একটা ভেবেই দু’কান চেপে ধরে এক চিৎকার। কিন্তু আহির চিৎকার শুনে আপাতত এখানে কেউ আসলো না। আহি তক্ষৎনাত বিছানা থেকে নেমে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল,

‘ না না এটা হতে পারে না ওই রাগী হনুমান কিছুতেই আমার সাথে এমনটা করতে পারে না। ওহ গড কাল রাতে কেন আমি বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। আমার সব শেষ হয়ে গেল এখন আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না। এখন আমার কি হবে?’

এ রকম আরো হাজারো আজেবাজে বক বক করতে করতে রুমের মধ্যে পায়চারি করতে লাগলো আহি।’

এভাবে কিছুক্ষন কাটানোর পর আহি হতাশ হয়ে ধপাস করে বিছানায় বসে পড়লো গায়ের শার্টটা দেখলেই রাগ হচ্ছে আহির। সাথে খুব জোরে কান্নাও পাচ্ছে তাঁর। আহি নিরাশ হয়ে চোখ মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো,

‘ ধুর! এখন কি করবো আমি?’ উফ মাথাটা ভন ভন করছে আমার।’

এরই মধ্যে হঠাৎই আহির চোখ গেল তাঁর বিছানার পাশে থাকা একটা চিরকুটের দিকে। আহি বেশ আগ্রহ নিয়েই চিরকুটটা হাতে নিলো। যেটা সকালে আদ্রিয়ান রেখে গিয়েছিল তার জন্য।’

আহি বেশি কিছু না ভেবে চিরকুটের ভাজটা খুলে পড়তে শুরু করলো যেখানে আদ্রিয়ানের লেখা,

‘ মাঝে মাঝে আমরা যেগুলো ভাবি সেগুলো হয় না। আবার মাঝে মাঝে আমরা যা ভাবি তাঁর থেকেও অনেক সময় ভালো কিছু আমাদের জন্য থাকে। আমি জানি তোমার মন খারাপের কারন আসলে কাল সকালেই ভার্সিটিতে তোমার আর নীরবের বিষয়টা দেখেছি আমি। তোমায় শুধু এতটুকুই বলতে পারি মন খারাপ করো না। কিছুদিন নিজেকে সামলাও দেখবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে গেছে। অনেক সময় অনেক কিছু হারিয়েও মানুষ ভালো বা উওম কিছু পায়। তুমিও পাবে শুধু ধৈর্য ধরো আর আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখো। আর শোনো নিচে তোমার জন্য ব্রেকফাস্ট রাখা আছে খেয়ে যেও। আর একটা কথা আমি জানি তুমি হয়তো তোমার পরনে আমার শার্ট আর জিন্স দেখে উল্টো পাল্টা কিছু ভাব্বে। উল্টো পাল্টা ভাবার মতো কিছু হয় নি তোমার ড্রেস আমি চেঞ্জ করি নি। কাল রাতে নিলয়ের গার্লফ্রেন্ডকে এনেছিলাম সেই সব করেছে।’

আদ্রিয়ানের এবারের লেখাটা পড়ে ঠোঁটে কামড় দিল আহি। ছি ছি এতক্ষণ সে কি সব উল্টো পাল্টা ভাবছিল। মুহূর্তের মধ্যে আহির ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। আহি খুশি মনে আবারো চোখ রাখলো চিরকুটে যেখানে লেখা,

ভেবেছিলাম আমি যাওয়ার আগে হয়তো তোমার ঘুম ভাঙবে কিন্তু ভাঙলো না তাই আর ডিস্টার্ব করলাম না। ঘুম ভাঙলে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট আর কিছু মেডিসিন আছে ওগুলো খেয়ে যেও। আর হ্যাঁ আবারো বলছি,

মন খারাপ করো না, তোমার চেহারায় মন খারাপ মানায় না। সব সময় হাসবে বুঝলে। হাসলেই তোমাকে সুন্দর লাগে।’ ❤️

ইতি আদ্রিয়ান।’

আদ্রিয়ানের শেষের লাইনটা পড়ে আনমনেই হাসলো আহি।’

‘ এই লোকটা আসলেই খুব ভালো কতবার আমায় হেল্প করলো।’

কথাগুলো ভেবেই আশেপাশে তাকালো আহি। ছোট্ট একটা কাগজে লিখলো সে,

‘ থ্যাংক ইউ’

তারপর সেটাকে সযত্নে বালিশের পাশ দিয়ে রেখে দিলো আহি। তারপর আস্তে আস্তে বিছানার ছেড়ে চলে যায় সে ওয়াশরুমের দিকে।’

____

অফিসে বসে আছে আদ্রিয়ান। তবে মনটা তাঁর পরে আছে আহির দিকে। কাল শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে ছিল সে। সকালে যখন ঘুম ভাঙে তখন ঘড়িতে সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছিল। আদ্রিয়ানের ঘুুম ভাঙতেই ডেলিভারি বয় এসে তাকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে যায়। এটা নতুন কিছু নয় রোজ হোটেলের খাবার খাওয়াতেই অভ্যস্ত সে। সকালে ব্রেকফাস্ট বাড়িতে, দুপুরের লান্স অফিসে আর রাতে হোটেল থেকে খেয়ে তারপর বাড়ি যায় আদ্রিয়ান। আজকে সকালে না খেয়েই বেরিয়ে আসে আদ্রিয়ান কারন আহির জন্য খাবার রাখা। তবে অফিস এসেই ব্রেকফাস্টের অর্ডার করেছে আদ্রিয়ান। হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যেই নিলয় নিয়ে আসবে। আদ্রিয়ান চুপচাপ বসে আছে আর ভাবছে সকালের কথা। আজ একটু অন্যরকম লাগছে নিজেকে। এই ফাস্ট টাইম কোনো মেয়ের জন্য চিরকুট রেখে এসেছে আদ্রিয়ান। সকালে চিরকুট রাখতে গিয়ে আহির ঘুমন্ত মুখের ওপর চোখ আঁটকে গিয়েছিল আদ্রিয়ানের কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে চলে আসে সে।’

এরই মাঝে আদ্রিয়ানের রুমে ব্রেকফাস্ট নিয়ে ঢুকলো নিলয়। সে বেশ বুঝতে পেরেছে সকালের ব্রেকফাস্টটা আহির জন্য রেখে এসেছে আদ্রিয়ান। একটা জিনিস তো পাক্কা আদ্রিয়ান মানুষটা রাগী হলেই মনটা একদম খাঁটি সোনা দিয়ে বাঁধানো। নিলয় ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসে রাখলো টেবিলের উপর তারপর বললো,

‘ তোর খাবার।’

কিন্তু উওরে কোনো জবাব দিলো না আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল নিলয়,

‘ কি হলো শুনতে পাচ্ছিস না তোর খাবার।’

সাথে সাথে এক প্রকার চমকে উঠলো আদ্রিয়ান কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললো সে,

‘ কি?’

আদ্রিয়ানের ‘কি’ শুনে ব্যাগ থেকে খাবার বের বললো নিলয়,

‘ তোর খাবার।’

‘ ওহ।’

‘ হুম।’

বলেই খাবারগুলো বের করে আদ্রিয়ানের সামনে রাখলো সে। আদ্রিয়ানও এঁকে এঁকে সব খাবারগুলো দেখে বললো,

‘ তুই খেয়েছিস?’

‘ হুম তুই খা।’

উওরে আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে খেতে শুরু করলো। হঠাৎই আদ্রিয়ানের মনে পড়লো কালকের পিন্সিপালের দেওয়া শুভর কিছু জিনিসের কথা। আদ্রিয়ান তাঁর ড্রয়ার থেকে ব্যাগটা বের করে বললো,

‘ এটার মধ্যে শুভর কিছু জিনিস আছে কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিস কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবি পিন্সিপাল দিয়েছে।’

‘ ঠিক আছে।’

বলেই ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো নিলয়,

‘ তুই তবে ব্রেকফাস্ট কর আমি এগুলো পাঠানোর ব্যবস্তা করি।’

‘ ঠিক আছে।’

উওরে নিলয়ও আর কিছু না বলে বেরিয়ে যায় আদ্রিয়ানের রুম থেকে। আর আদ্রিয়ানও চুপচাপ খেতে থাকে।’

_____

সোফার উপর বসে ব্রেকফাস্ট করছে আহি। কিছুক্ষন আগেই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিজের ওগালো আর এলেমেলো চুলগুলোকে ঠিক করে নিচে চলে আসে সে। আদ্রিয়ানের বিশাল বড় বাড়ি দেখে চোখ যেন চড়ুইগাছ আহির। পুরো বাড়িটাই হাল্কা হাল্কা ঘুরে দেখেছে সে। ভাড়ি ভাড়ি আসবাবপত্রে ঘেরা পুরো বাড়িটা। আহি চটজলদি ব্রেকফাস্ট শেষ করে খাবারের পাশে রাখা মেডিসিনগুলো খেয়ে নিলো। তারপর চটজলদি খাবারের নোংরা হওয়া প্লেটগুলো নিয়ে খুঁজতে খুঁজতে চলে যায় রান্নাঘরের দিকে। তারপর বেসিন থেকে থালাবাসনগুলো ধুয়ে ঠিকভাবে গুছিয়ে রেখে আবার চলে আসে সে। পুরো বাড়িটা ঘুরতে ঘুরতে আহি চলে যায় ছাঁদের ওপর বিশাল বড় ছাঁদ আদ্রিয়ানের বাড়িটার। ছাঁদের এক কর্নার দিয়ে টেবিল চেয়ার আর একটা দোলনা রাখা। পরিষ্কার ধবধবে আকাশ আহি অল্প কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে জোরে নিশ্বাস ফেলে চলে আসে ভিতরে কারন এখন তাকে যেতে হবে। ভেবেই আদ্রিয়ানের পড়া শার্ট আর জিন্স পড়ে নিজের জামাকাপড় গুলো ব্যাগে ভরে চলে যায় সে।’

.
.

কলিং বেল বাজতেই আহির মা এসে দরজা খুলে দেয়। সামনেই আহিকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেঁজা কন্ঠে বলে সে,

‘ সারারাত কোথায় ছিলি তুই তোর জন্য কত টেনশন হচ্ছিল আমাদের জানিস।’

এরই মধ্যে আহির বাবাও এসে হাজির উনিও চিন্তিত মাখা মুখ নিয়ে বললো,

‘ ছিলি কই তুই সারারাত?’

এখন আহি কি বলবে যে সারারাত সে আদ্রিয়ানের বাড়িতে ছিল। কাল মন খারাপের কারনে বিছানার ওপর মোবাইলটা রেখেই চলে যায় সে হসপিটালে যার কারনে সে ফোনও করতে পারে নি। আহি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘ আরে আরে এত টেনশন করছো কেন আমার কিছু হয় নি। আসলে ওই ফেরার পথেই বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারনে আমি আঁটকে পড়েছিলাম। তারপর রাস্তায় এক বন্ধুর সাথে দেখা হয় আর তখনই ওদের বাসায় যাই আমি। কাল তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার কারনে ফোনটা নিতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই তোমাদের কিছু জানাতে পারি নি সরি মা, সরি বাবা।’

‘ ঠিক আছে এখন যা ঘরে তোর খরগোশ ছানা মন খারাপ করে বসে আছে রুমে। রাতে খাবার দিয়েছি তোর শোকে সেটাও খায় নি।’

মায়ের কথা শুনে আহি আর বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে চটজলদি দৌড়ে চলে যায় তাঁর রুমে। রুমের দরজা খুলেই আহি ‘শিরো’ বলে ডাক দেয়। আহির গলা কানে আসার সাথে সাথেই খাটের তলা থেকে খরগোশ ছানাটা দৌড়ে বেরিয়ে আসে। আহিও খরগোশ ছানাকে দেখে নিচ থেকে খরগোশ ছানাটাকে কোলে নিয়ে বলে,

‘ কি ব্যাপার শুনলাম তুই নাকি আমার জন্য কাল রাতে খাবার খাস নি খিঁদে লাগে নি নাকি।’

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় আহি তারপর রান্না ঘর থেকে একটা গাজর এনে দেয় শিরোর কাছে। সেও মজা করে খেতে শুরু করলো। আহি তেমন কিছু না ভেবে খরগোশ ছানাটা নিয়ে চলে যায় নিজের রুমের বেলকনিতে। তারপর কিছুক্ষন ওটাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বলে আহি,

‘ জানিস তো কালকে থার্ড টাইমের মতো চিঠি লিখে নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করতে গিয়েছিলাম কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো কি জানিস? নীরব ভাইয়া আমায় নয় অথৈকে ভালোবাসে। এখন আমি কি করি বলতো মন খারাপ হয় কিন্তু কোনো ব্যাপার না আমি ঠিক আছি। ছোট বেলা থেকেই আমার প্রিয় জিনিসগুলো আমার কাছে থাকতে চায় না। প্রথমে সেই প্রিয় দুটি বাবুইপাখি, তারপর কুকুর ছানাটা আর এখন নীরব ভাইয়া। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আহি। তারপর খরগোশ ছানাকে একটা কিস করে বললো আহি,

‘ তুুইও কিন্তু আমার প্রিয় একজন তুই আবার এই বাহানায় ছেড়ে যাস না ঠিক আছে।’

এরই মধ্যে আহির ফোনটা বেজে উঠল ফোনের শব্দ কানে আসতেই আহি খরগোশ ছানাটাকে নিচে রেখে চলে যায় সে রুমে। প্রথম কলটা বিছানা পর্যন্ত আসতে আসতেই কেটে যায় আহির। আহিও বেশি কিছু না ভেবে ফোনটা তুললো উপরে রিনির ১৫টা মেসেজ আর ৬০ টা কল দেখে আহির যেন চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। আহি চটজলদি রিনির নাম্বারে কল করলো কল ঢুকতেই রিনি কল ধরে হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ কাল থেকে কতগুলো কল করেছি তোকে ধরিস নি কেন? জানিস তোর টেনশনে সারারাত ঘুম হয় নি আমার।’

‘ এতো টেনশন নেওয়ার কি আছে আমি ঠিক আছি।’

‘ তুই সত্যি ঠিক আছিস,আহি?’

‘ আরে বাবা হুম আমি সত্যি ঠিক আছি।’

‘ তাহলে কাল রাতে ফোন ধরিস কেন?’

‘ আরে কাল রাতে বাসায় থাকলে তো ফোন ধরবো।’

আহির এবারের কথা শুনে রিনি অবাক হয়ে বললো,

‘ মানে?’

এরপর আহি সব খুলে বললো রিনিকে। রিনি তো সব শুনে অবাক হয়ে বললো,

‘ আবার আদ্রিয়ান।’

উওরে আহিও বিছানায় ধপাস করে শুয়ে বললো,

‘ হুম, লোকটা রাগী হলেও এমনিতে খুব ভালো বুঝলি। এই নিয়ে তিনবার হেল্প করলো আমায়।’

‘ ওহ খুব ভালো এখন শোন কালকের জন্য মন খারাপ করিস না নীরব ভাইয়া হয়তো তোর ভাগ্যে নেই।’

‘ সেটাই হয়তো আচ্ছা এখন রাখি বুঝলি পরে কথা বলবো।’

‘ ওঁকে।’

‘ হুম।’

বলেই আহি ফোনটা কেটে চোখ বন্ধ করে দেয় হাল্কা ক্লান্ত লাগছে নিজেকে।’

____

আজ দু’দিন পর ভার্সিটি যাচ্ছে আহি। অনেক ভেবে দেখলো সে যা হয়েছে তাতে অথৈর কোনো দোষ নেই। তাই রাগ করে আহি দু’দিন ওর সাথে কথা না বললেও আজ ভার্সিটি গিয়েই আগে অথৈকে খুঁজে ওর সাথে কথা বলবে। লাস্ট দু’দিন আগে কয়েকবার কল করেছিল অথৈ আহিকে। কিন্তু আহি ওয়াশরুমে থাকায় কল ধরতে পারে নি কিন্তু সে যখন পাল্টা কল করছিল তখনই সেটাকে বন্ধ বলে আহি ভেবেছে হয়তো ফোনে চার্জ নেই। তবে এর মাঝখানে কোনো কল আসে নি অথৈর। আর আহিও কল করে নি।’

ভার্সিটির গেট পর্যন্ত রিকশা করে আসতেই ওর সামনে এসে থামলো একটা গাড়ি। গাড়িটা দেখে আহির বুঝতে বাকি নেই এটা রিনিরই গাড়ি। রিনি চটজলদি গাড়ি থেকে নেমে চলে আসে আহির কাছে। তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ তুই ঠিক আছিস তো দোস্ত?’

‘ হুম এখন চল সবার আগে অথৈর কাছে যাবো।’

অথৈর কথা শুনতেই কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে বললো রিনি,

‘ ওর কাছে গিয়ে করবি ওর কাছে যাওয়ার দরকার নেই।’

রিনির কথা শুনে আহি রিনির গলা জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বললো,

‘ এমনভাবে বলছিস কেন যা হয়েছে তাতে ওর কোনো দোষ নেই ও তো আর গিয়ে নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করে নি বরং নীরব ভাইয়া নিজে এসে ওকে প্রপোজ করেছে তাই এক্ষেত্রে ওর কোনো দোষ নেই। শুধু শুধু ওর সাথে কথা না বলে ভুল করেছি আমি তাই এখন ভুলটাকে শুধরাতে এসেছি।’

বলতে বলতে চলে যায় আহি আর রিনি সাইন্সের ক্লাসের সামনে। কিন্তু অথৈকে না দেখে দুজনেই যেন ভীষণ অবাক। অথৈই তো কখনো ক্লাস মিস দেয় না। আহি অনেক ভেবে চলে যায় লাইব্রেরিতে কিন্তু সেখানেও অথৈই নেই। অথৈকে না দেখে বললো রিনি,

‘ ও তো এখানেও নেই আহি তবে কি ও ভার্সিটি আসে নি আজ?’

রিনির কথা শুনে কেমন যেন লাগলো আহির।’

______

‘ দুপুর বারোটা’

ভার্সিটির হাফটাইম শেষ করে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসে আহি আর রিনি। কেন যেন অথৈর জন্য বড্ড খারাপ লাগছে আহির। তাই আহি ঠিক করেছে এখন অথৈদের বাড়িতে যাবে তাঁরা। যেই ভাবা সেই কাজ রিনির গাড়ি করেই ওঁরা বেরিয়ে পড়ে অথৈদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।’

বেশ কিছুক্ষন পর….

বাড়ির কলিং বেল বাজাতেই অথৈর আপু এসে দরজা খুললো সামনেই রিনি আর একটা মেয়েকে দেখে বললো সে,

‘ রিনি তুমি আর ও?’

অথৈর বোনের কথা শুনে আহি নিজেই বলে উঠল,

‘ আমি আহি, অথৈ বাড়িতে আছে আপু আজকে ভার্সিটি গেলো না তাই আর কি? ওর সাথে কি একবার কথা বলা যাবে।’

আহির কথা শুনে বেশ অবাক আর হতাশ হয়ে বললো অথৈর বোন,

‘ কেন তোমরা জানো না ও তো চলে গেছে?’

অথৈর বোনের কথা শুনে আহি, রিনি দুজনেই অবাক হয়ে বললো,

‘ চলে গেছে মানে কোথায় চলে গেছে?’

‘ ওহ রাজশাহী ফিরে গেছে আর আসবে না এখানে?’

অথৈর বোনের এবারের কথা শুনে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো আহি,

‘ কি?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ২৯
_________________

বিষন্ন মাখা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আহি অথৈর বোনের মুখের দিকে। তাঁর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না অথৈ ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। আহি ছলছল চোখে অথৈর বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ হুট করে ও চলে কেন গেল, আপু?’

উওরে অথৈর বোন চোখের ইশারায় ভিতরে আসতে বললেন আহি আর রিনিকে। আহি আর রিনিও ওনার চোখের ইশারা বুঝতে পেরে চললো ভিতরে।

সোফার উপর বসে আছে আহি আর রিনি। তাদের সামনেই কিছু খাবার রাখা। কিন্তু আপাতত খাবারের ওপর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আহি রিনির। তাঁরা দুজনেই অথৈর চলে যাওয়া নিয়ে ভিষন আপসেট। কেউ ভাবতেই পারে নি অথৈ এইভাবে না বলেই চলে যাবে। এরই মধ্যে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো অথৈর বোন হাতে একটা চিঠি নিয়ে এসে এগিয়ে দিল সে আহি আর রিনির দিকে। তারপর বললেন,

‘ এটা ও যাওয়ার সময় তোমাদের দিতে বলেছিল হয়তো ও জানতো তোমরা আসবে।’

এতটুকু বলে আহির হাতে দিলো সে চিঠিটা। আহিও তেমন কিছু না ভেবে হাতে নিলো চিঠিটা তারপর বললো,

‘ ঠিক আছে আপু আজ তবে আসি আমরা।’

‘ সে কি তোমরা তো কিছুই খেলে না।’

‘ আবার অন্য আরেকদিন এসে খাবো,এখন আমরা আসি আপু (রিনি)

অতঃপর ওঁরা আর না দাঁড়িয়ে চলে গেল অথৈদের বাড়ি থেকে।’

চলন্ত গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে আহি তাঁর পাশেই রিনি। দুজনেই চুপচাপ কারো মুখেই কোনো কথা নেই। আহির হাতে রয়েছে অথৈর লিখে যাওয়া চিঠি। আহি জোরে এক নিঃশ্বাস ফেলে পড়তে শুরু করলো চিঠিটা প্রথমেই লেখা,

প্রিয় আহি,

আমি জানি তুই হয়তো আমার ওপর ভিষণ রেগে আছিস। বিশ্বাস কর আমি কখনো ভাবিনি আমার জীবনে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমি কল্পনাও করতে পারি নি নীরব তোর বদলে আমায় প্রপোজ করবে। বিশ্বাস কর আমি কখনোই ওনাকে সেই চোখে দেখি নি। তারপরও সেদিন যখন তুই ভার্সিটির পিছনে বসে রিনিকে ধরে কাঁদছিলি তখন কেন যেন নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়েছিল। বার বার শুধু মনে হচ্ছিল আমার জন্যই হয়তো তোর এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিস। আমি চলে যাচ্ছি আর কখনো আসবো না এখানে। এটা জানানোর জন্য তোকে লাস্ট ফোন করেছিলাম কিন্তু তুই তো ধরলি না। চাইলে রিনিকে কল করতে পারতাম কিন্তু করিনি কারন আমি সেদিন ওর চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম ও আমার ওপর বড্ড রেগে আছে। তাই এই চিঠি লেখা। অবশেষে বলবো, তুই, নীরব, রিনি, মীরাআপু সহ আরো যাঁরা আমার বন্ধু ছিলি তোরা সবাই ভালো থাকিস। তোদের সাথে কাটানো এই কটা দিনই আমার জীবনে স্মরণী হয়ে থাকবে। তোদের খুব মিস করবো রে। আবারো বললাম পারলে ক্ষমা করে দিস আমায়? আর হ্যাঁ আমায় খুঁজতে আসিস না আবার আমি আর ফিরবো না।’

ইতি অথৈ।’

অথৈর লেখাগুলো পড়ে আহি রিনি দুজনেরই বেশ খারাপ লাগলো। তাঁরা ভাবতেও পারে নি দু’দিনের মধ্যেই অথৈ এইভাবে সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে যাবে। যতই হোক যা কিছু হয়েছে তাতে অথৈর কোনো দোষ ছিল না। আহি আনমনেই মন খারাপ নিয়েই বলে উঠল,

‘ এটা ঠিক হলো না।’

_____

রোদ্দুরের চিক চিক করা দুপুরের আলোতে আনমনেই একটা খোলা মাঠের পাশ দিয়ে হাঁটছে আহি। অথৈর জন্য বড্ড খারাপ লাগছে তাঁর। অথৈ কাজটা একদমই ঠিক করে নি। কিছুক্ষন আগেই রিনিকে বাসায় যেতে বলে এখানে গাড়ি থামিয়েছে আহি। এর দুটো কারন এক আর এক ঘন্টার পরই সে হসপিটালে যাবে। আর দুই এই মুহূর্তে আহির বাড়ি যেতে মটেও ইচ্ছে করছে না। তারওপর মন খারাপ, ইদানীং শুধু মন খারাপই হয় আহির। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আহি কিছুই ভালো লাগছে না তাঁর। হঠাৎই আহির চোখ যায় সামনে ভীষণই অবাক হয়ে তাকিয়ে রয় সে কারন তাঁর থেকে কিছুটা দূরেই আদ্রিয়ান কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়েদের সাথে হাসাহাসি করছে সাথে কানামাছি খেলছে। আহি যেন তাঁর নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না আদ্রিয়ানের ওমন রাগী চোখের আড়ালে এমন একটা বাচ্চামো ভাব লুকিয়ে আছে। আহি ভীষণ অবাক হয়েই আনমনে এগিয়ে চললো আদ্রিয়ানের দিকে।

এদিকে….

আজ মা বাবার কথা মনে করে মনটা হাল্কা খারাপ থাকায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে ছিল আদ্রিয়ান। তখনই এই খোলা মাঠের একটা গাছের পাশে বেঞ্চে বসেছিল সে আর তখনই দেখা হয় তাঁর সাথে কতগুলো বাচ্চাদের। কানামাছি খেলছিল তাঁরা আর সেইসয়ম বাচ্চাগুলোর মধ্যে একটা মেয়ে এসে হাসামাখা মুখ নিয়ে আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করে সেও তাদের সাথে খেলবে কি না। আদ্রিয়ান মেয়েটির হাসিমাখা মুখ দেখে কেন যেন মানা করতে পারে নি তাই সেও চলে যায় ওদের সাথে।’

বর্তমানে বড্ড ক্লান্ত হয়ে আদ্রিয়ান গিয়ে বসলো সামনের বেঞ্চটাতে। ভীষণই ভালো লাগছে তাঁর যতটা মন খারাপ নিয়ে এখানে সে এসেছিল তাঁর বিন্দুমাত্র নেই এখন। এমন সময় আদ্রিয়ানের পাশে এসে বসলো আহি তারপর বললো,

‘ আপনি এখানে?’

হুট করেই কেমন আহির কন্ঠের মতো মেইলি কন্ঠ কানে আসতেই আদ্রিয়ান ফিরে তাকালো পাশে সত্যি সত্যি আহিকে তাঁর পাশে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,

‘ তুমি এইসময় এখানে কি করছো ভার্সিটি যাও নি আজ?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি আদ্রিয়ানের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নিচু করে হাল্কা মন খারাপ নিয়ে বললো,

‘ তেমনটা নয় ভার্সিটি গিয়েছিলাম কিন্তু ফুল টাইম না থেকে চলে এসেছি।’

‘ কেন শরীর ভালো নেই নাকি?’

‘ না তেমন কিছু নয়।’

‘ তাহলে?’

আদ্রিয়ানের তাহলের উওর দিতে হাল্কা সংকোচ ফিল হলো আহির। আহিকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘ ইট’স ওকে বলতে হবে না।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি ছল ছল চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আসলে অথৈ আমাদের ছেড়ে চলে গেছে?’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান কিছুটা বিস্ময়ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ অথৈ কে?’

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে কোনো সংকোচ ছাড়াই বলে উঠল আহি,

‘ নীরব ভাইয়া যাকে ভালোবাসে।’

‘ ওহ কিন্তু এটা তো তোমার জন্য ভালো হয়েছে অথৈ চলে গেছে।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে ভ্রু-কুচকে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো আহি,

‘ কিসে ভালো হয়েছে শুনি?’

‘ কেন এখন তোমার আর নীরবের মাঝখানে কেউ থাকবে না।’

‘ আপনার মাথা।’

‘ হোয়াট?’

‘ দেখুন বেশি হোয়াট হোয়াট করবেন না মনটা ভিষণ খারাপ আর ও চলে গেলেই কি নীরব ভাইয়া আমায় ভালোবাসবে নাকি? শুধু শুধু আমার একটা বন্ধু কমে গেল। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর এভাবে আমায় না বলে যাওয়া ঠিক হয় নি।’

‘ তোমার কি সত্যি অথৈ চলে যাওয়ার জন্য খুব খারাপ লাগছে?’

‘ আপনার কি আমার কথাগুলোকে মজা মনে হচ্ছে?’

‘ না তা নয়।’

‘ তাহলে?’

‘ নাথিং নাথিং।’

উওরে আহি আর কিছু না বলে মন খারাপ নিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। এদিকে আদ্রিয়ান বেশ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো আহির মুখের দিকে। এই মুহূর্তে আদ্রিয়ানের মনে হচ্ছে আহির মনটা ভিষণ ভালো না হলে ওর জায়গায় অন্যকেউ থাকলে অথৈ চলে যাওয়াতে হয়তো ভিষণ খুশি হতো। কিন্তু আহি, আনমনেই মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে হাসছে এটা বুঝতে পেরে আহি আদ্রিয়ানের দিকে না তাকিয়েই বলে উঠল,

‘ আপনি হাসছেন কেন?’

‘ না কিছু না।’

এরপর কিছুক্ষনের জন্য নেমে আসে আহি আর আদ্রিয়ানের মাঝে নীরবতা। হঠাৎই এই নীরবতা ছিন্ন করে আনমনেই নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ Will be my friend?’

হুট করে আদ্রিয়ানের মুখে বন্ধুত্বের দাঁওয়াত শুনে আহি বেশ অবাক হয়ে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। তারপর আদ্রিয়ানের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কি?’

‘ তুমি কি বুঝতে পারো নি আমি কি বলেছি?’

‘ না তেমনটা নয় আপনি আমার বন্ধু হবেন?’

‘ হুম।’

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে বিস্ময় মাখা মুখ নিয়ে বললো আহি,

‘ সত্যি?’

‘ তোমার কি আমার কথাগুলো মজা মনে হচ্ছে?’

হেঁসে উঠলো আহি। তারপর সেও নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ আর বকতে পারবেন না কিন্তু?’

উওরে মুচকি হাসলো আদ্রিয়ান। সে নিজেও জানে না এই জিনিসটা আদ্রিয়ান কেন করলো। কিন্তু তাঁর কেন যেন আহির সাথে বন্ধুত্ব করতে খুব ইচ্ছে হলো।’

_____

রাজশাহীতে নিজের রুমে বসে আছে অথৈ। আজ দু’দিন যাবৎ সে তাঁর রুমেই আছে কোথাও বের হচ্ছে না সাথে কারো সাথে তেমন কথাও বলছে না। অথৈ এমনিতেও কথা কম বলা মানুষ। কিন্তু এখন যেন পুরোই চুপ হয়ে গেছে সে। দুজন প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে আজ তাঁর বড্ড খারাপ লাগছে। এমন সময় তার রুমে ঢুকলো অথৈর মা, বিষন্ন মাখা মুখ নিয়ে বললেন উনি,

‘ তোর কি হয়েছে বল তো আসার পর থেকেই দেখছি চুপচাপ বসে থাকিস কারো সাথে কোনো কথা বলিস না, জানি তুই এমনিতেই চুপচাপ থাকিস কিন্তু এবার যেন একটু বেশিই।’

মায়ের কথা শুনে কিছুটা বিরক্ততা নিয়েই বললো অথৈ,

‘ আমার আবার কি হবে কিছুই হয় নি।’

‘ কিছুই যখন হয় নি তখন হুট করে চলে কেন আসলি ভার্সিটি পছন্দ হয় নি নাকি?’

‘ ভার্সিটি কেন পছন্দ হবে না মা।’

‘ তাহলে কেন এসেছিস তুই? সামনে যে তোর পরীক্ষা, যে মেয়ে পড়াশোনা ছাড়া দু’মিনিট থাকতে পারে না সে হুট করে এইভাবে চলে আসলো।’

‘ এখন তুমি কি চাও আমি আবার চলে যাই।’ (রেগে)

‘ আরে রাগ করছিস কেন যা তোকে আর কিছু বলবো না এখন শোন যাবি?’

‘ কোথায় যাবো?’

‘ তোর কাকা ফোন দিয়েছিল লিলির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে পরশু গায়ে হলুুদ তারপর বিয়ে তোকে যেতে বলেছে যাবি তুই?’

‘ আমার ভালো লাগছে না তোমরা যাও।’

‘ এমন করোস কেন চল লিলিও খুব খুশি হবে আর তোরও মনটা ভালো হয়ে যাবে। তুই না গেলে লিলিকে কি বলবো বল তো?’

মায়ের কথা শুনে অথৈ কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘ ঠিক আছে আমি যাবো কিন্তু আমায় নিয়ে যেন কোনো বারাবারি না করে আর কাকার শাশুড়ি আইমিন লিলির নানু যেন বিয়ে কবে করবো এই নিয়ে একদম কোনো কথা না বলে?’

অথৈর কথা শুনে অথৈর মা খুশি হয়ে বললো,

‘ কেউ কিছু বলবে না তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে নে আমরা বিকেলেই বের হবো?’

বলেই চলে যায় অথৈর মা আলমারির দিকে। তারপর আলমারির ওপর থেকে ব্যাগটা নামাতে নেয় সে হঠাৎই পাশে থাকা একটা বড় বাক্সের সাথে বারি লেগে বাক্সের ভিতর থেকে সব কাগজ পত্র সাথে একটা লাল রঙের ডায়রি পড়ে গেল নিচে।’

হুট করেই কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ কানে আসতেই অথৈ তাঁর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এটা করলে তুমি মা?’

‘ কিছু হয় নি এক্সাইটিং এ ব্যাগের সাথে বারি লেগে বাক্সটা পড়ে গেছে।’

হঠাৎই আহির চোখ গেল লাল রঙের ডাইরিটার দিকে। কিছু একটা মনে পড়তেই অথৈ এগিয়ে যায় সেখানে তারপর মাকে বের করে দিয়ে বলে,

‘ তুমি যাও আমি গুছিয়ে নিচ্ছি?’

‘ কিন্তু?’

‘ কোনো কিন্তু নয় তুমি যাও আমি এগুলো একাই করে নিচ্ছি..

বলেই একপ্রকার জোরপূর্বক মাকে বের করে দিয়ে দরজা আঁটকে দিলো অথৈ।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৩০
_________________

বিষন্নমাখা মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে চলছে অথৈ তাঁর ডাইরিটার দিকে। সাথে অনেক পুরনো কিছু স্মৃতি নিগড়ে বের হচ্ছে তাঁর। বুকের ভিতর ধুকপুকানি যেন কয়েকশত বেড়ে চলছে তাঁর। অথৈ এঁকে এঁকে নিচে পড়ে থাকা সব জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে রাখলো বাক্সের মধ্যে। তাঁরপর বাক্সটাকে নিচে রেখেই এগিয়ে যায় সে তাঁর পড়ার টেবিলের দিকে। আনমনেই চেয়ার টেনে বসে পড়ে টেবিলের পাশ দিয়ে। দুপুরের রৌদ্রময়ী বাতাস আসছে জানালার কার্নিশ বেয়ে সাদা পর্দা ভেদ করে। অথৈই খুব আগ্রহ নিয়ে ডাইরির প্রথম পাতাটা খুললো। শুরুতেই ডাইরির প্রথম পাতায় একটা সুন্দর ছবি আঁকা। যেখানে রয়েছে,,

একটা অল্প বয়সের ছেলে সাইকেল নিয়ে এগিয়ে আসছে সামনে। প্রকৃতিরা দুলছে বারংবার। চারপাশের গাছেরা ভর্তি করে আঁটকে রেখেছে তাঁকে। ফুলেরাও ঝরছে বেশ।’

‘ বয়সটা তখন খুবই অল্প অথৈর। দশ কি এগারো বছর হবে তখন। প্রিয় কাকিমার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল সে। পরন্ত বিকেল বেলা চারিদিকে বাতাস বইছে ভীষণ, রাস্তার চারপাশ জুড়ে ফুলেরা দুলছিস বারংবার। রাস্তার পাশেই এঁকে বেঁকে চলছিল একটা নদী। নদীর তীরেই ছিল বসার জন্য ছোট্ট একটা বেঞ্চ, নদীর তীরের রাস্তার দিকটা জুড়ে ছিল রেলিং। এসবের ভিড়েই রাস্তার অন্যদিক জুড়ে ছিল একটা ছোট্ট টংয়ের দোকান। হাতে পাঁচ টাকা নিয়ে কিছু লজেন্স কিনতে এসেছিল অথৈ। পরনে তাঁর পেস্ট আর সাদার মিশ্রণের সুন্দর একটা ফ্রর্ক। লম্বা চুলগুলো খুলে সাদা রঙের হেয়ার বেন্ট দেওয়া। অথৈ সেদিন একাই এসেছিল টংয়ের দোকানে। কিন্তু ভাগ্য ক্রমে সেদিন দোকানটা বন্ধ ছিল। বেশ নিরাশ হয়েই উল্টোদিক মুখ করে বাড়ির পথের দিকে হাঁটা দিচ্ছিস সে। এমন সময় সাদা টিশার্ট, এস কালার ট্রাউজার সাথে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে ছোট্ট সাইকেল চালিয়ে আসছিল একটা ছেলে। চারদিকে প্রকৃতিরা যেন মেতে উঠেছিল ভীষণ চারদিকে বাতাস বইছে খুব, বাতাসের তীব্রতায় গাছের ফুলেরা ঝরে পড়ছিল চারদিক জুড়ে। এমন সময় সামনের ছেলেটির চোখে কিছু একটা পড়তেই সাইকেলের বেলেন্স হারিয়ে ধারাম করে পড়ে যায় নিচে। হুট করে এমন কিছু দেখে খিল খিল করে হেঁসে ফেলে অথৈ। অন্যদিকে অথৈকে হাসতে দেখে ছেলেটি সাইকেল নিয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো তারপর বললো,

‘ এত হাসার কি আছে?’

উওরে সেদিন কিছুই বলে নি অথৈ শুধু হাসতে হাসতে ছেলেটির দিকে তাকাতে তাকাতে চলে গিয়েছিল সে। তবে অথৈ সেদিন অতোশতো না বুঝলেও এতটুকু বুঝতে পেরেছিল ছেলেটি খুব রাগ করেছিল তারওপর।’

এমনই প্রকৃতি ঘিরে সাইকেলে করে চড়ে আসা ছেলেটির ছবি এঁকেছিল অথৈ। যদিও সেটা খুব অস্পষ্টনীয় কিন্তু প্রকৃতিটা রিয়েল ছিল কারন বেশ কয়েকবারই সেখানে গিয়েছিল অথৈ। তাই ছেলেটির ফেঁসের দিকটা অগোছালো হলেও চোখের চশমাটা আর প্রকৃতিটা বেশ এঁকেছে অথৈ। পুরো ছবিটায় একবার হাত বুলিয়ে মুচকি হাসলো অথৈ। অথৈ ছোট বেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভীষণ পারদর্শী ছিল এর মধ্যে প্রকৃতির ছবি ছিল তাঁর খুব প্রিয়। সুন্দর প্রকৃতি দেখলেই সেটা নিমিষেই এঁকে ডাইরি ভর্তি করতে ভীষণ পছন্দ করে সে।’

এরপর বেশ কয়েকটা পাতা উল্টালো অথৈ। হঠাৎই আর একটা আঁকা ছবির দিকে চোখ আঁটকে পড়লো অথৈর।’

সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনার ঠিক দু’দিন পড়েই। অথৈ তাঁর কিছু মেয়ে বন্ধুদের সাথে একটা আম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল চুপচাপ আর তাঁর বন্ধুরা গাছের ওপর ঝুঁলে থাকা আমের দিকে ঢিল ছুঁড়তে ছিল।’

এমন সময় কিছু ছেলেদের নিয়ে জড়ো হয় সেই চশমা পড়া ছেলেটিও। চশমা পড়া ছেলেটির পাশে থাকা ছেলেদের মধ্যে একজন বলেছিল,

‘ ঢিল ছুঁড়ে আম ফেলা তোদের কাজ নয় বলেই সেই ছেলেটি চটপট উপরে উঠে গাছে চড়ে বসে। তারপর বলে,

‘ দেখলি এইভাবে গাছে উঠে আম পাড়তে হয়।’

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হয় গাছের মালিক ব্যাস সব কয়টায় ভয়ের চোটে পালালো। এদের মধ্যে অথৈ ছিল চুপচাপ দাঁড়িয়ে কারন সে বুঝতে পারে নি সবাই কেন দৌড়াচ্ছিল। অথৈকে দৌড়াতে না দেখে চশমা পড়া ছেলেটি এগিয়ে এসে বললো অথৈকে,

‘ কি হলো তুমি দৌড়াচ্ছো না কেন?’

ছেলেটির কথা শুনে অথৈ বলে উঠল,

‘ আমি দৌড়াবো কেন, আমি তো কিছু করি নি?’

এরই মধ্যে হাতে লাঠি নিয়ে এগিয়ে এসে বললো গাছের মালিক,

‘ এই বদমাইশ বাচ্চারা আমার গাছের আম চুরি করোস খাঁড়া আইজ তোগো একদিন কি আমার একদিন।’

বলেই তেঁড়ে আসতে নিলো মালিক। মালিককে আসতে দেখে চশমা পড়া ছেলেটিও বেশি কিছু না ভেবে অথৈর হাত ধরে দিল দৌড়। ততক্ষণে গাছের উপরে থাকা ছেলেটি তিনটা আম পেড়ে গাছ থেকে নেমে ঝড়ের গতিতে দিল দৌড়। অথৈর সেদিন প্রথম ভালো লাগা কাজ করছিল সেই চশমা পড়া ছেলেটির ওপর। অথৈই সেই থেকে প্রায় দাঁড়িয়ে থাকতো সেই চশমা পড়া ছেলেটার জন্য কিন্তু ছেলেটি আর আসতো না।’

আম গাছের নিচে হাত ধরে দৌড়ে যাওয়া এমনই এক দৃশ্য এঁকে ছিল অথৈই।’

এরপর নানা ভাবেই দেখা হতো দুজনের। কখনো পুকুর পাড়ে একসাথে বসে মাছ ধরতে, তো কখনো একসাথে খেলাধুলা করতে। এইরকমেরই ছোট বেলার ছবি এঁকেছে অথৈই। আর ছবিগুলোই ছিল অথৈরই অনুভূতির প্রমান। এমনই করতে করতে একদিন বিদায় জানিয়ে চলে আসলো অথৈই নিজের বাড়িতে। আর সেই ছেলেটাও চলে গিয়েছিল তার নিজেদের বাড়িতে। এরপরই যতবারই অথৈ গিয়েছিল তাঁর কাকিমার বাড়িতে একবারও দেখা হয় নি সেই ছেলেটার সাথে। সেই থেকে অথৈ এখনো অপেক্ষায় আছে সেই ছেলেটার। যদিও সে জানে না ছেলেটি এখন দেখতে কেমন? কি ছিল তাঁর নাম আর থাকতোই বা কোথায়?’

আর ধীরে ধীরে তাঁর সেই অনুভূতি মেশানো অপেক্ষাগুলো ভালোবাসায় বদলে গেল কখন বুঝতে পারে নি অথৈ। এঁকে এঁকে সব স্মৃতিগুলো মনে পড়তেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অথৈ। কে জানে আধও আর কোনোদিন দেখা হবে কি না তাদের। এমন সময় দরজায় নক করলো অথৈর মা বললেন তিনি,

‘ কি রে গোছানো হয় নি তোর?’

হুট করে মায়ের কন্ঠ কানে আসতেই হকচকিয়ে উঠলো অথৈ চটজলদি ডাইরিটাকে টেবিলের উপর রেখে বললো সে,

‘ এই তো মা হয়ে এসেছে তুমি তৈরি হও আমিও তৈরি হয়ে আসছি।’

অথৈর কথা শুনে অথৈর মাও বলে উঠল,

‘ ঠিক আছে তুই তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আয়। তাড়াতাড়ি না বের হলে তোর কাকিমার বাড়ি যেতে দেরি হয়ে যাবে তো।’

‘ কিছু হবে না তুমি গিয়ে তৈরি হও?’

‘ ঠিক আছে তুইও তৈরি হয়ে বেরিয়ে আয়?’

‘ ঠিক আছে মা।’

উওরে আর অথৈর মা কোনো জবাব দিলো না। মাকে আর কিছু বলতে না দেখে অথৈ বুঝতে পেরেছে তাঁর মা চলে গেছে। তাই আর বেশি কিছু না ভেবে সেও চটজলদি ব্যাগগুছিয়ে হাল্কা তৈরি হয়ে চোখে চশমাটা লাগিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আর রয়ে গেল টেবিলে ওপর তাঁর অনুভূতি মিশ্রিত ডাইরিটা। দুপুরের রোদ্দুরেরা চলে যাচ্ছে এখন সাথে হাল্কা হাল্কা তাদের ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে অথৈর অনুভূতি মিশ্রিত ডাইরিটাকে।’

_____

বাচ্চাদের সাথে হুড়োহুড়ি সাথে কানামাছি খেলছে আহি আর আদ্রিয়ান। কয়েক মুহূর্ত আগেই এক বাচ্চার ডাক শুনে আহি আদ্রিয়ান দুজনই চলে আসে ওদের সামনে। তারপর আর বেশি কিছু না ভেবে তাঁরাও খেলতে শুরু করলো৷ বর্তমানে আহির চোখ বাঁধা আর বাকিরা ছোটাছুটি করছে আহির চারপাশ জুড়ে। এমন সময় আদ্রিয়ানের ফোনটা বেজে উঠল তাই সেও সবার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলো। আর আহি বেচারি চারপাশে ঘুরতে লাগলো কারন সে কাউকেই ধরতে পাচ্ছে না।’

হঠাৎই আহি হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় আদ্রিয়ানের কাছে। কারো উপস্থিতি টের পেতেই আহি ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে তারপর হাসি মাখা মুখ নিয়ে বললো সে,

‘ ধরে ফেলেছি?’

হুট করে আহির এমন কাজে চমকে উঠলো আদ্রিয়ান। পরক্ষণেই আহির হাসিমাখা মুখ দেখে চোখ আঁটকে যায় তাঁর। আনমনেই তাকিয়ে রয় সে আহির মুখের দিকে। এমন সময় সব বাচ্চারা ওদের দিকে এগিয়ে এসে লাফাতে লাফাতে বলে উঠল,

‘ কি মজা কি মজা আহি আপু আদ্রিয়ান ভাইয়াকে ধরে ফেলেছে?’

বাচ্চাদের কন্ঠ কানে আসতেই নিজের ভাবনা দেখে বেরিয়ে আসলো আদ্রিয়ান। এর মধ্যে আহিও তাঁর চোখে বাঁধা রুমালটা খুলে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। দুজনই দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।’

হঠাৎই নিজের খেয়াল আসতেই আহি তাড়াতাড়ি আদ্রিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে দু’কদম পিছনে চলে গেল। আদ্রিয়ান আহির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ আমাকে এখন যেতে হবে?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহিও বলে উঠল,

‘ আমাকেও যেতে হবে হসপিটালে?’

উওরে আদ্রিয়ান আর তেমন কিছু না বলে বাচ্চাগুলোর কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে সাথে কিছু চকলেট কিনে দিয়ে চলে যায় সে।’

আর আহিও আদ্রিয়ানকে যেতে সেও চলে যায় তাঁর গন্তব্যের দিকে। তবে আজ ভীষণ ভালো লাগছে তাঁর আদ্রিয়ানের সাথে সময় কাটিয়ে।’

_____

রাত_৮ঃ০০টা….

গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে রিনি। সন্ধ্যা থেকেই মনটা তাঁর ভিষণ খারাপ বার বার মন চাইছিল অথৈকে একটা ফোন করতে কিন্তু কোথাও যেন একটা আঁটকে পড়ছিল সে, সাথে নিজের ওপর নিজেরই রাগ হচ্ছিল তাঁর। হয়তো শুধু শুধুই অথৈর ওপর রেগে গিয়েছিল সে। সত্যি তো ওর তো কোনো দোষ ছিল না। অথৈ তো আর নীরব ভাইয়াকে গিয়ে প্রপোজ করে নি, নীরব ভাইয়া নিজে এসে ওকে প্রপোজ করেছিল। এই রকম নানা কিছু ভাবতে ভাবতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল রিনি, আজ সে একাই ড্রাইভ করছে কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানে না। এমন সময় আচমকা একটা সাইকেল সামনে আসাতে রিনি ঘাবড়ে গিয়ে জোরে ব্রেক কষলো কিন্তু তারপরও সেই তাঁর গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে সামনের ছেলেটি পড়েই গেল রাস্তায়। ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে রিনি ঘাবড়ে গিয়ে চটজলদি গাড়ি থেকে বের হলো তারপর দৌড়ে সামনের ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আপনি ঠিক আছেন?’

বলেই শুভকে দেখে বলে উঠল সে,

‘ আপনি?’

অনেকদিন পর রিনির ভয়েস শুনে অবাক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে রইলো শুভ। তবে কিছু বললো না।’

__

খোলা এক উঁচু মাঠের কিনারায় বসে আছে রিনি আর শুভ। তাদের পিছনেই রাস্তার কিনারায় রিনির গাড়ি আর শুভর সাইকেল রাখা। কিছুক্ষন আগেই এদিকে এসেছে তাঁরা। শুভ নিচে পড়ে গিয়ে হাতে আর পায়ে ব্যাথা পেয়েছে একটু। বর্তমানে রিনি শুভর হাতে মলম লাগিয়ে দিতে দিতে বলে উঠল,

‘ ওইভাবে কেউ হুট করে গাড়ি সামনে চলে আসে নাকি যদি কিছু হয়ে যেত তবে?’

উওরে শুভ রিনির মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমি বুঝতে পারি নি যে আপনি চলে আসবেন।’

শুভর কথা শুনে রিনি শুভর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আই এক্সট্রিমলি সরি আসলে ভুলটা আমারই বেশি ছিল মনটা একটু খারাপ থাকায় অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলাম তাই আর কি?’

‘ ইট’স ওকে। কিন্তু আপনার মন খারাপ কেন?’

‘ আসলে আমার প্রিয় একটা বন্ধু আমার উপর অভিমান করে চলে গেছে আমাকে সরির বলার সুযোগটাও দেয় নি তাই আর কি?’

রিনির কথা শুনে এক মুহূর্তের জন্য হলেও আদ্রিয়ানের কথা মাথা আসলো শুভর। শুভ আনমনেই বলে উঠল,

‘ অভিমানকে বেশি দূরে যেতে দিবেন না, এতে দুরত্ব বাড়বে বই কমবে না।’

শুভর কথা শুনে রিনি অবাক দৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ মানে?’

‘ মানে এটাই প্রিয় মানুষ হোক বা প্রিয় বন্ধু কারো সাথেই বেশিদিন অভিমান করে থাকবেন না আর তাঁকেও থাকতে দিবেন না। কারন এতে প্রিয় মানুষটা আজীবনের জন্য আপনার থেকে দূরে চলে যাবে,হয়তো আর কখনো ফিরেও আসবে না।’

‘ তাহলে আমার কি ওঁকে ফোন করে সরি বলা উচিত?’

রিনির কথা শুনে শুভ খোলা আকাশের দিকে একপল তাকিয়ে বললো,

‘ যেহেতু ভুলটা আপনার ছিল তাই সরি বলাই উচিত। একটা সরি আপনার মুড অন বা মন খারাপ যেটাই বলুন কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আর আপনার বন্ধুও যদি আপনাকে মন থেকে বন্ধু ভেবে থাকে তাহলে নিমিষেই আপনার সরি সে গ্রহণ করবে।’

‘ তাহলে আপনি বলছেন আমি ফোনটা করবো ওঁকে?’

‘ হুম।’

শুভর কথা শুনে রিনি জোরে নিশ্বাস ফেলে বললো,

‘ জানেন তো সেই বিকেল থেকে এই বিষয়টা নিয়ে ডিপ্রেসড ছিলাম আমি, ধন্যবাদ আপনাকে।’

উওরে শুভ মুচকি হাসলো তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে আবারো বলে উঠল সে,

‘ আজকে আকাশটা খুব সুন্দর তাই না।’

শুভর কথা শুনে রিনিও তাকালো আকাশটার দিকে। চারদিকে তাঁরারা ভড় করেছে ভীষন। রিনি আনমনেই বলে উঠল,

‘ হুম,খুব সুন্দর।’

রিনির কথা শুনে শুভ তাকালো রিনির মুখের দিকে,

আজ অনেকদিন পর শুভ দেখলো রিনিকে। সেদিন বাড়ি যাওয়ার পর থেকেই রিনিকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে তাঁর, ওর সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। বার বার ইচ্ছে করছিল একবার দেখা হোক রিনির সাথে তাঁর। জ্বরে ঘোরেও বার বার রিনির কথাই মনে পড়ছিল শুভ। সেই শুভর মুখ চেপে ধরা মুহূর্তটা যেন বার শুভর চোখের সামনে ভাঁসে। যেন রিনিতে পাগল হয়ে যাচ্ছিল সে। প্রচন্ড বিরক্ত তার অস্থিরতা নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল।
অন্যমনস্ক হয়ে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল শুভ। কিন্তু তাঁর এই অন্যমনস্কই যে রিনির সাথে দেখা করাবে এটা ভাবতে পারে নি শুভ।’

শুভ আনমনেই রিনির মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমি কি তবে আপনায় ভালোবেসে ফেলেছি,রিনি?’

হুট করেই শুভ মুখে কিছু শুনে রিনি শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কি?’

সাথে সাথে ঘাবড়ে গেল শুভ। মাথায় একটা কথাই বাজছে তার,

‘ শুনে ফেললো নাকি?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..