#বাবুইপাখির অনুভূতি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৪৩+৪৪+৪৫
_________________
‘ কি ভেবেছিলি তুই মুখে মাস্ক আর চোখে কালো চশমা পড়ে আসলেই আমি তোকে চিনতে পারবো না শুভ?’
কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে কথাটা বলে উঠল আদ্রিয়ান শুভকে। আর আদ্রিয়ানের কথা শুনে ভয়ে ঢোক গিললো শুভ। তাহলে কি সত্যি সত্যি ধরা পড়ে গেল সে আদ্রিয়ানের কাছে। কিছুটা ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে পিছন ফিরে তাকালো শুভ। আদ্রিয়ান একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে ছিল শুভর দিকে। অন্যদিকে আহিও বেশ ঘাবড়ে গেছে আদ্রিয়ানের কথা শুনে। শুভ কিছুটা আমতা আমতা করে বললো,
‘ মানে?’
‘ মানেটা তুই ভালো করেই জানিস শুভ, এতটুকু বলে আদ্রিয়ান তাকালো আহির দিকে তারপর গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আমাকে এই হসপিটালে কেন এনেছো আর আমার ট্রিটমেন্ট কে করেছে?’
এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছে শুভ। এবার নিশ্চয়ই আদ্রিয়ান তাঁর ওপর রেগে যাবে। না জানি রেগে মেগে হসপিটাল ছেড়েই না চলে যায়। আহিকে চুপ থাকতে দেখে রাগী কন্ঠ নিয়ে বললো আহি,
‘ কি হলো তুমি কথা কেন বলছো না?’
এমন সময় আদ্রিয়ানের রুমে ঢুকলো নিলয়। আদ্রিয়ানকে রাগতে দেখে বললো সে,
‘ কি হয়েছে?’
বলেই সামনে শুভকে দেখে আঁতকে উঠল নিলয়। নিলয়ের আর বুঝতে বাকি নেই আদ্রিয়ান কি কারনে রেগে গেছে। নিলয় আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ রেগে যাস না প্লিজ আদ্রিয়ান?’
‘ আমায় এই হসপিটালে কেন এনেছিস তোঁরা?
নিলয় কিছু বলার আগেই আহি মাথা নিচু করে বলে উঠল,
‘ নিলয় ভাইয়া আনে নি আমি এনেছি?’
‘ আমি এক্ষুনি এই হসপিটাল থেকে চলে যাবো নিলয়?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুভ আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ এমন করো না ভাইয়া, তুমি এখনো পুরোপুরি ঠিক হও নি?’
শুভর কথা শুনে আদ্রিয়ান বলে উঠল,
‘ তাঁর মানে আমি ঠিকই ধরেছি তুই শুভই।’
এবার যেন সত্যি সত্যি চমকে উঠলো শুভ। শুভ তাঁর মুখের মাস্ক আর চোখের চশমা খুলে মাথা নিচু করে বললো,
‘ হুম।’
উওরে আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠ নিয়ে নিলয় আর আহিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আমি শুভর সাথে একা কথা বলতে চাই?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয় বলে উঠল,
‘ প্লিজ আদ্রিয়ান ওঁকে বকিস না তুই জানিস না ও তোর জন্য কতটা কেঁদেছে? প্লিজ এবার অন্তত ওঁকে ক্ষমা করে দে।’
‘ আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই নি, আমি শুভর সাথে একান্তে কথা বলতে চাই।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহিও বলে উঠল,
‘ আমি জানি না আপনাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে কিসের ধন্দ আমার হয়তো এই মুহূর্তে আপনাদের মাঝে কথা বলা ঠিক হবে না কিন্তু তারপরও আমি বলতে চাই দেখুন যা হয়েছে তাতে শুভর কোনো দোষ নেই কারন পরশু রাতে আমি আপনায় নিয়ে এই হসপিটালে এসেছিলাম আর শুভ ডাক্তার হয়ে তাঁর কর্তব্য পালন করেছে। প্লিজ ওঁকে বকবেন না।’
‘ আমি এক কথা বার বার বলা পছন্দ করি না তোরা বের হবি,,
বলেই মাথায় হাত দিলো আদ্রিয়ান। কারন অতিরিক্ত উচ্চ স্বরে কথা বলার কারনে মাথায় ব্যাথা লাগছে আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ানের কান্ড দেখে শুভ হাল্কা এগিয়ে এসে বললো,
‘ প্লিজ ভাইয়া তুমি উচ্চ স্বরে কথা বলো না তুমি আমায় বকবে তো আমি সব শুনতে রাজি আছি। তারপরও তুমি রেগে যেও না।
বলেই নিলয় আর আহিকে উদ্দেশ্য করে বললো শুভ,
‘ তোমরা বাহিরে যাও?’
উওরে নিলয় আর আহিও কিছু বলতে না পেরে আস্তে আস্তে চলে গেল। নিলয় যাওয়ার আগে আদ্রিয়ানের হাত ধরে বললো,
‘ প্লিজ আদ্রিয়ান এইবার অন্তত ক্ষমা কর শুভকে।’
কিন্তু উওরে আদ্রিয়ান কিছু বলে নি। নিলয় আহি যেতেই শুভ দরজাটা হাল্কা চাপিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো আদ্রিয়ানের দিকে। তারপর বললো,
‘ তোমার যা ইচ্ছে তাই করতে পারো ভাইয়া আমি কিছু মনে করবো না কিন্তু তুমি বেশি জোরে কথা বলো না। এতে তোমার খুব কষ্ট হবে। আর হসপিটাল থেকে যেও না লাগলে তুমি যতদিন হসপিটালে থাকবে ততদিন আমি তোমার কেভিনের আশেপাশেও আসবো না, তুমি প্লিজ যেও না।’
‘ আমার জন্য খুব ভাবিস তুই?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে ছলছল চোখে আদ্রিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে বললো শুভ,
‘ তুমি ছাড়া আমার পরম আপন আর কে আছে ভাইয়া। তুমি হয়তো আমার সাথে কথা বলো না দীর্ঘ দিন হয়েছে কিন্তু যতই হোক সেই ছোট বেলা থেকে তো তুমি আমায় বড় করেছো হয়তো কাছে আসো নি কিন্তু দূর থেকে তো করেছো। আমি আজ এত বড় ডাক্তার হয়েছি এর পুরো ক্রেডিট তো তোমারই। তুমি জানো না কাল যখন আহি আপু তোমায় আমাদের হসপিটালে নিয়ে এসেছিল তোমায় দেখার পর আমার কি অবস্থা হয়েছিল। বার বার মনে হয়েছিল তুমি চলে গেলে আমি একদমই এতিম হয়ে যাবো। সেদিন ঠিক টাইমে নীরব নামের ছেলেটি রক্ত না দিলে কি হতো?’
‘ আমায় খুব ভালোবাসিস তুই?’
আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে বেশ বিষন্ন মাখা মুখ নিয়ে তাকালো শুভ আদ্রিয়ানের দিকে। শুভর চাহনি দেখে আদ্রিয়ান আবারো বলে উঠল,
‘ কি হলো কথা বলছিস না কেন?’
‘ আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি সেটাকি মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে ভাইয়া। তুমি আমার সাথে সেই ছোট বেলা থেকে ঠিক মতো কথা বলো না, আমার একা থাকতে আর ভালো লাগে না ভাইয়া,আমিও তোমার সাথে এক বাড়িতে থাকতে চাই। অনেক তো হলো ভাইয়া এবার কি আমায় ক্ষমা করা যায় না।’
উওরে আদ্রিয়ান শুভকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ সরি ভাই।’
হুট করেই আদ্রিয়ানের কাজে শুভ যেন শকট। সে বিশ্বাস করতে পারছে না আদ্রিয়ান তাঁকে জড়িয়ে ধরেছে। শুভ নিজেও আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ ভাইয়া তুমি আমায় ক্ষমা করে দিয়েছো?’
‘ সত্যি বলতে কি জানিস ক্ষমা তো তোকে সেই কবেই করে দিয়েছি। তোর সাথে কথা না বলার একমাত্র কারণ হলো অপরাধ বোধ। তোকে দেখলেই আমার বার বার মনে হয় আমার জন্যই হয়তো অল্প বয়সে তুই বাবা মাকে হারিয়েছিস। আমি যদি সেদিন রাগ করে বাসা থেকে বের না হতাম তাহলে হয়তো এসব কিছুই হতো না।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুভ কান্না মিশ্রিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ না ভাইয়া সব দোষ তোমার ছিল না, আমি যদি তোমার প্রিয় শোপিচ না ভাঙতাম তাহলে আর কিছুই হতো না। আমাকে ক্ষমা করে দিও ভাইয়া।’
এই বলে দুই ভাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। যেন বহুত বছরের লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো আজ একত্রে বের হচ্ছে তাঁদের।’
___
অন্যদিকে,
আদ্রিয়ানের রুমে বাহিরে পায়চারি করছে আহি আর নিলয়। দুজনের চোখে মুখেই বিষন্নতার ছাঁপ। হঠাৎ সামনে পিছনে হাঁটতে গিয়ে একে অপরের মুখোমুখি হলো আহি আর নিলয়। হুট করে এমনটা হওয়াতে দুজনেই প্রায় চমকে উঠলো আহি তো চিন্তিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ এতক্ষণ ওনারা কি করছে ভাইয়া?’
‘ আমি কি জানি।’
‘ আচ্ছা ওনাদের মধ্যে সমস্যাটা কিসের ভাইয়া, আদ্রিয়ান কথা কেন বলে না শুভর সাথে?’
আহির কথা শুনে নিলয়ও বেশি কিছু না ভেবে বলে উঠল,
‘ একটা শোপিচের জন্য?’
নিলয়ের কথা শুনে বেশ বিস্মিত হয়ে বললো আহি,
‘ কি সামান্য একটা শোপিচের জন্য আদ্রিয়ান শুভর সাথে কথা বলে না।’
‘ তুমি ভুল বুঝছো আহি, ব্যাপারটা শুধু শোপিচের জন্য নয়।’
‘ তাহলে?’
‘ তাহলে হলো আদ্রিয়ান ছোট বেলা থেকেই একটু একটু অন্যরকম টাইপের বুঝতে পেরেছো নিজের জিনিস কারো সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করে না। তো একদিন শুভ আদ্রিয়ানের একটা ফেভারিট শোপিচ খেলতে গিয়ে ভেঙে ফেলে, শোপিচটা অনেক ফেভারিট ছিল আদ্রিয়ানের আন্টি দিয়েছিল ওকে আইমিন আদ্রিয়ানের মা। তো শোপিচটা ভাঙার কারনে আদ্রিয়ান সেদিন শুভকে প্রচুর বকে, গায়ে হাতও তুলতে নেয় আর তখনই আদ্রিয়ানর বাবা রেগে আদ্রিয়ানের সাথে রাগারাগি করে আর তখনই আদ্রিয়ান রেগে গিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আর তারপরই ঘটে সেই ভয়ানক ঘটনা আদ্রিয়ানকে কিডন্যাপ করা হয়। কিডন্যাপ করা ব্যক্তিটি মুক্তিপন হিসেবে অনেকগুলো টাকা চায়। আদ্রিয়ানে বাবা টাকা দিতে রাজিও হয়ে যায়। আর সেই টাকা নিয়ে যখন আক্কেল আন্টি গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল তখনই রাস্তায় তাদের এক্সিডেন্ট হয়। আর তাঁরা মারা যায় আর সেই থেকেই আদ্রিয়ান কথা বলে না শুভর সাথে। কিন্তু আমি জানি ভিতরে ভিতরে ও খুব ভালোবাসে শুভকে। কাছে যায় না ঠিকই কিন্তু দূর থেকে অনেক ভালোবাসে। শুভ যে কতবার আদ্রিয়ানের কাছে এসে সরি বলেছে। কিন্তু আদ্রিয়ানকে জানোই তো ও কেমন প্রত্যেকবার শুভর সাথে বাজে ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছে। যেদিন প্রথম তোমায় লোক দিয়ে ডেকে এনে ছিলাম অফিসে সেদিন শুভ এসেছিল আদ্রিয়ানের কাছে, ভেঙে যাওয়া শোপিচটার মতো হুবহু একটা শোপিচ গিফট করেছিল। কিন্তু আদ্রিয়ান রেগে যায়, আর সেই রাগ সব তোমার ওপর দেখায়।
‘ ওহ,
‘ হুম কিন্তু একটা জিনিসই বুঝতে পারছি না আজ এখনও বের হচ্ছে না কেন শুভ? আর কোনো সাড়াশব্দও পাওয়া যাচ্ছে না।’
‘ চলুন গিয়ে দেখি ভাইয়া?’
‘ বলছো?’
‘ হুম।’
তারপর আহি আর নিলয় দুজনই আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলে প্রথমে উঁকি মারলো আহি তারপর নিলয়। ভিতরে তাকাতেই আহি আর নিলয়ের চোখ চড়ুই গাছ তাদের তো বিশ্বাসই হচ্ছে না দুই ভাই এঁকে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। নিলয় তো চরম প্রকার অবাক হয়ে বললো,
‘ আমি যা দেখছি তুমিও কি তাই দেখছো আহি?’
‘ কি?’
‘ এই যে আদ্রিয়ান শুভ এঁকে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।’
‘ জ্বী ভাইয়া।’
‘ তাহলে কি আদ্রিয়ান শুভকে ক্ষমা করে দিয়েছে।’
‘ হতে পারে।’
‘ চলো তো গিয়ে দেখি,,
বলেই নিলয় আর আহি চলে গেল ভিতরে। নিলয় আর আহিকে ভিতরে যেতে দেখে আদ্রিয়ান শুভ দুজনই দুজনকে সামলে নিয়ে চোখ মুছে নিলো। নিলয় আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ আদ্রিয়ান তুই?’
‘ হুম আজ থেকে আমি আর শুভ একসাথে এক বাড়িতে থাকবো নিলয়?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয় আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ অবশেষে তোদের ধন্দ শেষ হলো দোস্ত আমি খুব খুশি হয়েছি।’
নিলয়ের কাজ দেখে শুভ বলে উঠল,
‘ আমাকেও তো জড়িয়ে ধরতে হবে ভাইয়া?’
উওরে নিলয় হেঁসে আদ্রিয়ান শুভ দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো। আজ তিনজনই খুব খুশি। অবশেষে দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর পর আদ্রিয়ান আর শুভ এক হলো। ভাবতেই খুশি লাগছে নিলয়ের।’
অন্যদিকে এঁদের তিনজনের কান্ড দেখে মুচকি হাসলো আহি। যাক যা হয়েছে খুব ভালো হয়েছে।’
____
বিকাল_৪ঃ০০টা,,
চুপচাপ নিজের কেভিনে বসে আছে আদ্রিয়ান। আর ওর পাশে দাঁড়িয়ে চাকু দিয়ে ফল কাটছে আহি। আজ নিজেকে অনেক হাল্কা লাগছে আদ্রিয়ানের। অবশেষে সে তাঁর অপরাধ বোধ কাটিয়ে শুভকে মেনে নিতে পেরেছে। সে ভেবে নিয়েছে আর কখনো শুভর সাথে বাজে ব্যবহার করবে না। এখন থেকে সবসময় তাঁরা একসাথে থাকবে, আর অনেক আনন্দে জীবন কাটাবে। শুধু একটা ইচ্ছে অপূর্ণ রয়ে গেল।
‘ যদি আহি তাঁকে মেনে নিতো।’
কথাটা ভেবেই আদ্রিয়ান তাকালো আহির মুখের দিকে। তারপর কিছু একটা ভেবে বললো আদ্রিয়ান,
‘ আমায় রক্ত কে দিয়েছিল আ..?’
আর কিছু বলার আগেই ব্যাথা পেয়ে ‘আ’ করে উঠলো আহি। কারন আদ্রিয়ানের কথা শুনতে গিয়ে চাকুতে আঙুল কেটে গেছে তাঁর। হুট করেই আহির মুখে এমন শব্দ শুনে কিছুটা চমকে উঠে বললো আদ্রিয়ান,
‘ কি হয়েছে?’
‘ না তেমন কিছু নয়।’
‘ দেখি এদিকে আসো?’
উওরে আহিও বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে আসে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ দেখি তোমার হাত,
‘ কিছু হয়নি আমার জাস্ট একটুখানি কেটে গেছে।’
‘ সেই একটুখানি দেখি আমি,
আদ্রিয়ানের জোরাজোরিতে আহিও দেখালো তাঁর হাত অনেকখানিই কেটে গেছে তাঁর আঙুল রক্ত বের হচ্ছে সেখানে থেকে। আদ্রিয়ান আহির আঙুল দেখে কড়া দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এখানে একটু কেটেছে,
‘ ওই আর কি?’
উওরে আদ্রিয়ান কিছু না বলে তাঁর সামনে থাকা ঔষধের বক্সটা খুলে ব্যান্ডেজ বের করে আহির আঙুল বেঁধে দিতে লাগলো খুব যত্ন করে। আর আহি শুধু তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের মুখের দিকে। আদ্রিয়ানকে দেখতে যতটা না রাগী মনে হয়, ভিতরটা তাঁর ততই নরম। লোকটা এমনিতে খুব ভালো শুধু রেগে গেলেই ভয়ংকর।– কথাগুলো ভেবে আনমনেই হাসলো আহি।’
এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রিনি আর শুভ। রিনির হাতে একটা ফুলের তোড়া আর তাঁর পাশেই শুভ। ওদের দুজনকে একসাথে দেখে কিছুটা অবাক হয় আদ্রিয়ান আহি দুজনেই। রিনি আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে ফুলের তোড়াটা হাতে দিয়ে বললো,
‘ এখন কেমন আছেন ভাইয়া?’
উওরে আদ্রিয়ানও মুচকি হেঁসে বললো,
‘ হুম ভালো।’
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে রিনি আর শুভ। রিনি খোঁচাচ্ছে শুভকে কারন তাঁরা কিছু বলবে আদ্রিয়ানকে। রিনি আজ সকালেই জানতে পারে শুভ আর আদ্রিয়ান নাকি দুই ভাই। শুরুতে শুভ একা ভেবে একটু খারাপ লাগলেও পরক্ষণেই শুভর একটা বড় ভাই আছে ভেবে খুব ভালো লাগে রিনির। রিনি শুভকে খোঁচাতে খোঁচাতে বলে উঠল,
‘ কি হলো তুমি কিছু বলছো না কেন?’
রিনির কাজে শুভ ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠল,
‘ এখনই বলতে হবে কাল বললে হয় না।’
‘ না হয় না, আমি কাল জিনিসটাকে খুব হেইট করি তাই যা বলার এক্ষুনি বলবে না হলে তোমার সাথে ব্রেকআপ।’
রিনির কথা শুনে শুভ ইনোসেন্ট মার্কা লুক নিয়ে বললো,
‘ রিনি।’
এদিকে শুভ রিনির কান্ড দেখে আহি আদ্রিয়ান দুজনই অবাক। আদ্রিয়ান কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
‘ তোমরা কি কিছু বলবে আমায়?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে রিনি শুভকে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো আদ্রিয়ানকে,
‘ হুম ভাইয়া শুভ আপনায় কিছু বলবে?’
রিনির কথা শুনে আদ্রিয়ান শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কি বলবি আর তুই চিনিস ওঁকে?’
উওরে শুভ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
‘ হুম। আসলে হয়েছে কি ভাইয়া?’
‘ কি হয়েছে?’
‘ না মানে।’
‘ বেশি না ধুতিয়ে বলে ফেল,
‘ আসলে ভাইয়া আমি আর রিনি
‘ তুই আর রিনি কি?’
‘ আমি আর রিনি
এদিকে শুভর এমন তোতলানো শুনে রিনি বুঝতে পেরেছে শুভর দারা সম্ভব হবে না কিছু বলার তাই সে নিজেই এগিয়ে এসে বললো আদ্রিয়ানকে,
‘ আসলে হয়েছে কি ভাইয়া আমি আর শুভ একে অপরকে ভালোবাসি। আর আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চাই?’
হুট করেই রিনির মুখে এমন কথা শুনে আহি আদ্রিয়ান এমনকি শুভও অবাক হয়ে বলে উঠল,
‘ কি?’
আহি তো চরম অবাক রিনি কি বললো এইমাত্র যে ছেলের সাথে রিনিকে ঝগড়া ছাড়া আর কিছু করতে দেখে নি সে। সেই শুভকে নাকি ভালোবাসে রিনি আবার বিয়েও করতে চায়। কেমনে কি করে হলো এসব?’
এদিকে রিনি ভাবছে অন্যকিছু আদ্রিয়ান আহি ‘কি’ বললো এটা মানা যায় কিন্তু শুভ ‘কি’ করে কেন উঠলো?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..
#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৪৪
_________________
হা হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান আর আহি রিনি আর শুভর মুখের দিকে। তাদের হয়তো বিশ্বাসই হচ্ছে না এইমাত্র রিনি কি বললো?’ আদ্রিয়ান তো পুরোই শকট কারন সে ভাবে নি তাঁর ‘আপু’ বলা পিচ্চি ভাইটাও কাউকে ভালোবাসবে। তবে আদ্রিয়ান যেদিন রিনিকে শুভর সেবাযত্ন করতে দেখছিল। সেদিনই একটু খটকা লেগেছিল তার কিন্তু পরে নিলয়ের কথা শুনে আর বেশি ভাবে নি সে কারন নিলয় খবর নিয়ে জেনেছে রিনির সাথে শুভর তেমন কোনো সম্পর্ক নেই এর মধ্যে ভার্সিটি বসে নাকি দেখা হয়েছিল তাও নাকি কথার চেয়ে ঝগড়া বেশি করেছে এঁরা। আদ্রিয়ান কথাগুলো আনমনে ভেবে কিছুটা অবাক হয়ে বললো শুভকে,
‘ এসব কি শুনছি শুভ? রিনি যা বলছে তা কি সত্যি?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুভ আমতা আমতা করে বললো,
‘ আসলে ভাইয়া,
সাথে সাথে রিনি শুভর পায়ে একটা খোঁচা দিয়ে দিলো তারপর আস্তে আস্তে বললো,
‘ বেশি আসলে আসলে করলে একদম খুন করে দিবো আর হ্যাঁ তুমি আমার কথা শুনে কি করে উঠলে কেন?’
‘ না মানে তুমি যে এক্ষুনি বিয়ের কথা বলে ফেলবে এটা আমি ভাবি নি তাই তো,
‘ তাই তো কি বিয়েটা একবার হোক তারপর তোমার এই তোতলানো স্বভাব বের করছি আমি।’
অন্যদিকে রিনি শুভর কান্ড দেখে অবাক হয়ে আবারো বলে উঠল আদ্রিয়ান,
‘ কি হলো কিছু বলছিস না কেন, রিনি যা বললো তা সত্যি তোরা একে অপরকে ভালোবাসিস?’
আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে শুভ উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল,
‘ হুম ভাইয়া।’
শুভর কথা শুনে আহি অবাক চোখে এগিয়ে আসলো শুভর দিকে তারপর বললো,
‘ এদিকে শোনো?’
শুভ ও আহির কথা মতো হাল্কা এগিয়ে আসলো আহির দিকে। তারপর বললো,
‘ হুম বলো আহি আপু?’
শুভর কথা শুনে ফ্যাল ফ্যাল চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো আহি,
‘ তুমি শিওর তো ভাইয়া এই ঝগড়ুটে আপুটাকেই তুমি ভালোবাসো?’
আহির কথা শুনে মাথা চুলকাতে চুলকাতে দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে বলে উঠল শুভ,
‘ হুম।’
এদিকে শুভ আর আহির ফিসফিস করে কথা বলা শুনে রিনি বলে উঠল,
‘ এই তোরা কি ফিস ফিস করছিস বলতো?’
‘ না কিছু না।’ (আহি)
উওরে রিনি বেশি কিছু না ভেবে আদ্রিয়ান দিকে তাকিয়ে খুব কনফিডেন্স নিয়ে বলে উঠল,
‘ তারপর ভাইয়া এখন আপনি বলুন আপনি কি রাজি আমাদের সম্পর্কে?’
রিনির কথা শুনে আদ্রিয়ানও বলে উঠল,
‘ যেহেতু তোমরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসো তাই সে ক্ষেত্রে আমি আর কি বলবো।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে রিনি খুশি হয়ে বলে উঠল,
‘ আমি জানতাম ভাইয়া আপনি এমন কিছুই বলবেন। আপনার ছোট ভাইটা না একদমই ভিতু। যাইহোক আপনারা কথা বলুন আমি এক্ষুনি গিয়ে আমার বাবা মাকে বলে আসি।’
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল রিনি। রিনিকে যেতে দেখে আহিও বেশি কিছু না ভেবে বলে উঠল,
‘ আমিও একটু আসছি বুঝলেন।’
বলে আহিও চললো রিনির পিছন পিছন। আর শুভ পড়লো মহা বিপদে এখন তাঁর ভাই কিছু জিজ্ঞেস করলে কি বলবে সে। শুভ দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ বলছিলাম কি ভাইয়া আমার একটা অপারেশন করার আছে আমি যাই বুঝলে পরে আবার আসবো।’
বলেই এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো শুভ। সাথে সাথে আদ্রিয়ান বলে উঠল,
‘ তলে তলে এসব কবে থেকে চলছে, শুভ?’
সাথে সাথে শুভ দাঁড়িয়ে পড়লো যার ভয় পেয়েছিল সেটাই হলো। শুভ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ বিশ্বাস করো ভাইয়া ও যে সরাসরি তোমায় এসে বিয়ে করার কথা বলবে এটা আমি ভাবতেই পারি নি?’
‘ তা তো তোর থোবড়া দেখেই বুঝতে পেরেছি যাই হোক তোর জন্য রিনির মতো চঞ্চল মেয়েই ঠিক আছে।’
উওরে মুচকি হাসলো শুভ। এমন সময় একজন নার্স এসে বললো শুভকে,
‘ স্যার অপারেশনের সব তৈরি এখন শুধু আপনি গেলেই হবে।’
‘ ঠিক আছে তুমি যাও আমি এক্ষুনি তৈরি হয়ে আসছি।’
‘ ঠিক আছে স্যার।’
বলেই চলে গেল নার্সটি। নার্সটি যেতেই শুভ তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানও হাল্কা হেঁসে বললো,
‘ যা আর ভয় নেই আমি কিছুই বলবো না তোকে।’
উওরে শুভ আদ্রিয়ানকে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে চলে গেল। শুভর কাজে আদ্রিয়ান হাল্কা হেঁসে বলে উঠল,
‘ আসলেই ভীতুর ডিম একটা।’
____
হসপিটালের করিডোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিনি। হাতে তার মোবাইল ফোন মুলত বাড়িতে ফোন করার জন্যই কল করছে সে তাঁর মাকে। কিন্তু তাঁর মা ধরছে না। এমন সময় ওর সামনে এসে দাঁড়ালো আহি, কোমড়ে হাত দিয়ে বললো সে,
‘ তলে তলে এসব কবে থেকে চলছিল শুনি?’
হুট করেই আহির কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকালো রিনি। তারপর বললো,
‘ এই তো আজ তিনদিন হলো ভেবেছিলাম তোকে বলবো কিন্তু সময় করে ওঠে নি সরি দোস্ত।’
রিনির কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো আহি,
‘ রিলেশনের আজ মাত্র তিনদিন হলো আর এর মধ্যে তুই বিয়ে নিয়ে কথা বলছিস।’
উওরে রিনি তাঁর ফোনটাকে তাঁর জিন্সের পকেটে রেখে আহি গলা জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠল,
‘ তুই তো জানিস আমি সব কিছুই তাড়াতাড়ি করা পছন্দ করি জিমিয়ে থাকা জিনিসপত্র আমার একদম পছন্দ না। আর শুভ যে আকার ভিতু আমার মনে হয় না আগামী চার বছরেও ও তাঁর ভাইকে আমাদের সম্পর্কে বলতে পারতো। তাই আমি নিজেই বলে দিয়েছি।’
‘ তাই বলে এত তাড়াতাড়ি, ইস যদি আমিও তোর মতো হতাম তাহলে হয়তো নীরব ভাইয়া আমারই হতো।’
কথাটা আহি মুচকি হেঁসে বললেও রিনির খারাপ লেগেছে সে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ভুলে যা না আগের সবকিছু আবার নতুন করে সবকিছু শুরু কর। দেখবি তোর জন্য কেউ না কেউ আছে যে তোকে খুব ভালোবাসবে।’
উওরে মুচকি হেঁসে বললো আহি,
‘ হুম, যাগ গে বাদ দে তো।’
এমন সময় রিনির ফোনটা বেজে উঠল উপরে তাঁর মায়ের নাম্বার দেখে বলে উঠল রিনি আহিকে,
‘ মা ফোন করেছে বুঝলি আমি এক্ষুনি আমার আর শুভর বিয়ের কথাটা বলে আসি।’
বলেই ফোনটা তুলে ‘হ্যালো’ বলে চলে গেল সে অন্য সাইডে। আর রিনির কাজে আহি হেঁসেই বলে উঠল,
‘ আসলেই এই মেয়েটার সবকিছুতেই খুব তাড়া।’
ভেবেই আদ্রিয়ানের কেভিনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলো আহি। এরই মধ্যে হঠাৎই এক চির চেনা ধ্বনি ভেসে আসলো তাঁর কানে। কেউ একজন বলে উঠল,
‘ আহি?’
আচমকাই বুকটা কেঁপে উঠল আহির। কারন ধ্বনিটা আর কারো নয় তাঁর প্রথম ভালোবাসা নীরবের কন্ঠ। আহি ধীরে ধীরে পিছন ফিরে তাকালো সত্যি সত্যি পিছনে ফুলের তোড়া হাতে নীরবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হয়েই এগিয়ে আসলো সে নীরবের দিকে। তারপর বললো,
‘ ভাইয়া তুমি এখানে?’
‘ হুম যাকে রক্ত দিলাম তাঁর সাথে একবার দেখা করবো না তাই চলে আসলাম।’
‘ ওহ তুুমি আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করতে এসেছো।’
‘ হুম।’
‘ আসো আমার সাথে উনি ওই সামনের কেভিনেই আছে।’
উওরে নীরবও বেশি কিছু না ভেবে চললো আহির সাথে সাথে। আদ্রিয়ানকে দেখার জন্যই এসেছে নীরব, তারওপর মনটাও ভালো নেই। তাই আসা এদিকটায়।’
____
নিজের কেভিনে চুপচাপ বসে আছে আদ্রিয়ান। অপেক্ষা কখন আহি আসবে কিন্তু আহির কোনো খবর নেই। হঠাৎই দরজা খোলার শব্দ পেতেই খুশি মনে তাকালো আদ্রিয়ান কারন সে বুঝতে পেরেছে আহি এসেছে। প্রথমে আহিকে দেখে খুশি হলেও পরক্ষণেই ওর পিছনে নীরবকে দেখে কিছুটা হতাশাও হয়েছে সে। আদ্রিয়ান ভাবে নি এই মুহূর্তে সে আহির সাথে নীরবকে দেখবে। নীরব খুশি মনে আদ্রিয়ানের দিকে ফুলের তোড়াটা হাতে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ কেমন আছেন স্যার?’
নীরবের কথা শুনে আদ্রিয়ানও হাল্কা হেঁসে ওর হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে বললো,
‘ হুম ভালো, তবে আপনি না থাকলে হয়তো এই মুহূর্তে ভালো থাকতাম না।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে নীরব হেঁসেই বলে উঠল,
‘ কি যে বলেন স্যার। কি আর করেছি আমি জাস্ট একটু রক্ত দিয়েছি আর বাকিটা তো আল্লাহ আর আপনার ছোট ভাই শুভই করেছে।’
‘ আপনি আমায় বার বার স্যার বলছেন কেন?’
‘ না আপনার মতো এত বড় বিজনেসম্যানকে শুধু ‘স্যার’ শব্দটাই মানায়।’
উওরে হাসলো আদ্রিয়ান। তারপর এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো তাঁরা। আর আহি শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলো। আহিও ভাবেনি এই মুহূর্তে নীরব আসবে এখানে, নীরবের কথা ভাবতেই অথৈর কথা মনে পড়লো আহির। আজ অনেকদিন পরই ওর কথা মনে পড়লো আহির। আহি অনেক আগেই ভেবে রেখেছিল অথৈদের বাড়ি যাবে তাঁরা কিন্তু সময় করে আর হয়ে উঠে নি। তবে এবার যাবে আদ্রিয়ান সুস্থ হলেই সে আর রিনি গিয়ে নিয়ে আসবে অথৈকে। যতই হোক যা হয়েছে তাতে অথৈর কোনো দোষ নেই। আনমনেই নানান কথা ভাবতে লাগলো আহি।’
বেশ কিছুক্ষন পর,
নীরব আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো তারপর নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ আজ তবে আসি স্যার ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে।’
উওরে আদ্রিয়ানও মুচকি হেঁসে নিজের হাত এগিয়ে বললো,
‘ নিশ্চয়ই সময় করে এসো আমার অফিসে।’
‘ অবশ্যই স্যার।’
বলেই নীরব এগিয়ে গেল আহির দিকে, আহি এখনো সেইম ভঙ্গিতে নিজের ভাবনায় মগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহিকে ভাবনায় মগ্ন দেখে নীরব ওর মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,
‘ তুই আবার কোন দেশে হারিয়ে গেলি, আহি?’
হুট করেই নীরবের কথা শুনে চমকে উঠলো আহি কিছুটা আমতা আমতা করে বললো সে,
‘ হুম হ্যাঁ কই কোথাও না তো, তুমি কি চলে যাচ্ছো ভাইয়া?’
‘ হুম,
হঠাৎই নীরবের চোখ যা আহির হাতের দিকে সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা চিন্তিত কন্ঠ নিয়ে আহির হাত ধরে বললো নীরব,
‘ তোর হাতে কি হয়েছে আহি?’
‘ না তেমন কিছু নয় ভাইয়া ওই ফল কাটছে গিয়ে হাল্কা একটু কেটে গেছে।’
‘ কাজ কথার সময় সাবধানে করবি না। কাজ করার সময় চোখ কোথায় থাকে তোর।’
এই রকম নানা কিছু বলে বকতে শুরু করলো নীরব আহিকে। আর আহি বেচারি ছলছল চোখে শুধু তাকিয়ে রইলো নীরবের মুখের দিকে। আজ অনেকদিন পর আবার সে নীরবের কাজে বকা শুনছে।’
অন্যদিকে আদ্রিয়ান, আহি আর নীরবের কান্ড দেখে মটেও ভালো লাগছে না তাঁর। ভিতরে ভিতরে খুবই বাজে ফিল হচ্ছে। আদ্রিয়ান চটজলদি নিজের চোখ সরিয়ে ফেললো ওদের দিক থেকে। কেন যেন বর্তমানে আহি আর নীরবকে একসাথে মেনে নিতে পারছে না সে। তার ওপর কিছু বলতেও পারছে না যার কারনে আরো বেশি অসস্থি হচ্ছে আদ্রিয়ানের।’
_____
রিনিদের বাড়িতে সোফায় গোল হয়ে বসে আছে রিনির মা, বাবা আর ভাই। মুলত রিনির বাড়িতে আসার জন্য অপেক্ষা করছে ওনারা। অন্যদিকে
রিনির মা তো কেঁদেই চলে কখন থেকে কারন কিছুক্ষন আগে মেয়ের কথা শুনে সে ভেবে নিয়েছে তাঁর মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। আর রিনির বাবা হতাশ কারন সে বুঝতে পারছে না তাঁর মেয়ে কি এমন বললো যার কারনে তাঁর বউ তাঁকে অফিস থেকে ডেকে এনেছে। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রিনি…
!
!
!
!
!
#চলবে…..
#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৪৫
_________________
কিছুটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রিনির বাবা মা ভাই রিনির মুখের দিকে। আর ওদের সামনেই কিছুটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে রিনি কিছুক্ষন আগেই হসপিটাল থেকে এসে বসেছে সে সবার সামনে। রিনির বাবা রিনির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে বললো,
‘ তুমি তোমার মাকে ফোনে কি বলেছো রিনি যার কারনে অফিস রেখে বাড়িতে আসা লাগলো আমার?’
বাবার কথা শুনে রিনি বেশি কিছু না ভেবে বলে উঠল,
‘ কি বলেছি আমি। আমি শুধু বলেছি আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি ওঁকে বিয়ে করতে চাই ব্যাস।’
রিনির কথা শুনে রিনির মা শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে কান্না ভেঁজা কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আমি তোমায় বলেছিলাম না তোমার মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। এবার বিশ্বাস হলো আমার কথা।’
রিনির মায়ের কান্না দেখে কিছুটা বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো রিনির বাবা,
‘ তুমি একটু চুপ করবে।’
‘ তোমরা তো শুধু পারোই আমায় চুপ করাতে।’ (রিনির মা)
‘ আরে মা তোমার মাথা ঠিক আছে আমি পাগল হতে যাবো কেন?’ (চরম প্রকার বিরক্ত নিয়ে বললো রিনি)
রিনির কথা শুনে রিনির বাবা বলে উঠল,
‘ তুমিও বা কি বলছো এসব।’
‘ দেখো বাবা তোমরা বরাবরই জানো আমি তোমাদের লুকিয়ে কোনো কিছু করি নি আর আজও করবো না। আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি আর বিয়ে করলে ওঁকেই করবো তবে এর মানে এই নয় যে আজ কালের মধ্যেই করবো। তোমরা যেদিন বলবে সেদিনই করবো আমি শুধু ছেলেটার কথা বলেছি ব্যাস এতটুকুই।’
মেয়ের কথা শুনে কিছুটা হতভাগ হয়ে বললো রিনির বাবা,
‘ ছেলেটা কে শুনি?’
‘ ছেলে খুব ভালো বাবা তোমার পছন্দ হবে।ছেলেটার কথা শুনলে তোমরা খুশিই হবে বাবা। ও একজন ডাক্তার আর তোমার বিজনেস পার্টনার আদ্রিয়ানের ছোট ভাই শুভ। ওই যে সোহান ভাইয়ার ট্রিটমেন্ট যে করেছিল সে।’
মেয়ের এবারের কথা শুনে বেশ অবাক হলেন রিনির বাবা মা আর সোহানও। রিনি তাঁর বাবার উওরের অপেক্ষায় না থেকে বলে উঠল,
‘ আমার শুধু একটাই কথা বাবা, আমি যদি বিয়ে করি তবে শুভকেই করবো নয়তো কাউকে নয়। আর বিয়ে তোমরা যেদিন বলবে সেদিনই করবো। এখন বাকিটা তোমাদের হাতে।’
বলেই নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো রিনি। আর বাকি সবাই শুধু রিনির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। যেন মেয়ের কাজে বিষন্ন তাঁরা। তবে শুভর কথা শুনে খুব একটা খারাপ লাগে নি রিনির বাবার। এখন দেখা যাক কি হয়?’
______
সময়টা যেন আজ ছুটলো ভীষণ জোরে। কখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল বুঝতেই পারলো না আদ্রিয়ান আর আহি। আজ নিলয় একবারও আসে নি হসপিটালে হয়তো অফিসের কাজে ব্যস্ত সে। আর নীরবও চলে গেছে অনেক আগে। নীরব যাওয়ার পর থেকে আদ্রিয়ানও ভীষণ চুপচাপ, হয়তো শরীরটা ভালো নেই তাঁর। আদ্রিয়ানের চুপচাপ থাকাটা কেন যেন আহি নিতে পারছে না, আদ্রিয়ানের রাগী লুকিংটাই যেন বেশ লাগতো আহির কাছে। হসপিটালের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চুপচাপ কথাগুলো ভাবছে আহি। অথৈ,নীরব, রিনি, শুভ, আদ্রিয়ান সবার কথাই যেন স্মরণীয় হয়ে উঠছে তাঁর। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আহি। আর তাঁর সামনেই হসপিটালের বেডে চুপচাপ শুয়ে আছে আদ্রিয়ান দৃষ্টি তাঁর মোবাইলের দিকে।’
এসবের ভাবনার মাঝেই আহির ফোনটা বেজে উঠল উপরে মায়ের নাম্বার দেখে খুশি মনে ফোনটা তুললো সে। আহি ফোন তুলতেই অপরপাশে তাঁর মা বলে উঠল,
‘ কেমন আছিস আহি?
মায়ের কথা শুনে আহি নীরব কন্ঠে বললো,
‘ হুম ভালো তুমি মা?’
‘ হুম ভালো আদ্রিয়ান কেমন আছে?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনতেই আহি তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে তারপর বললো,
‘ হুম মোটামুটি সুস্থ মা?’
‘ ওহ তা কবে আসবি ওকে নিয়ে বাড়ি
‘ আসবো মা উনি সুস্থ হলেই।’
‘ ঠিক আছে।’
এরপর কিছুক্ষন এটাওটা নিয়ে কথা বললো দুজন। তারপর বলতে না বলতেই কেটে গেলো আরো কয়েক ঘন্টা।’
রাত_৯ঃ৩০টা…
ভিডিও কলে নিলয়ের সাথে কথা বলছে আদ্রিয়ান পাশেই আহি হাতে খাবার নিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে তাঁকে। আজ অফিসে চাপ থাকায় নিলয় আসতে পারে নি হসপিটালে সাথে তাদের নিউ প্রজেক্টের কাজের জন্য আগামী ১০ বারো ১২ দিনের মধ্যে আদ্রিয়ানকে কিছুদিনের জন্য দেশের বাহিরে যেতে হতে পারে। বিষয়টা নিয়ে প্রায় সবাই একটু চিন্তিত। কারন আদ্রিয়ান এখনো সেইভাবে সুস্থ হয় নি। তবে আদ্রিয়ান বলেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সে হসপিটাল থেকে রিলিজ হয়ে বাড়ি ফিরবে আর যদি বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলেও যাবে সে। যতই হোক অফিসের কাজ বলে কথা। আর এবারের প্রজেক্টটা সাকসেসফুলি পার হলে তার কোম্পানি আরো ভালো একটা পজিশনে যেতো পারবে। এইসব নিয়েই বর্তমানে কথা হচ্ছে আদ্রিয়ানের সাথে নিলয়ের। আহির বেশ বিরক্ত লাগছে জিনিসটায় কারন ডাক্তার আদ্রিয়ানকে কথা কম বলতে বলেছে কিন্তু আদ্রিয়ান তো সেই কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছে। হঠাৎই আহি আদ্রিয়ানকে খাওয়ানো বন্ধ করে দিয়ে এসে সামনে দাঁড়ালো আদ্রিয়ানের। হুট করেই আহির এমন কাজে কিছুটা অবাক হলো আদ্রিয়ান সাথে আহির দিকে তাকিয়ে বললো সে,
‘ কি হলো’
আদ্রিয়ানের কথা কিছুটা রাগী লুক নিয়ে বললো আহি,
‘ কি হলো মানে কি করছেন আপনি এগুলো?’
আহির কথা শুনে বিস্ময় মাখা মুখ নিয়ে বললো আদ্রিয়ান,
‘ কি করেছি আমি?’
উওরে আদ্রিয়ানের হাত থেকে তাঁর ফোনটা নিয়ে নিলয়কে উদ্দেশ্য করে বললো ,
‘ ভাইয়া আজ আর ওনার সাথে কোনো কথা হবে না বাকি কথা উনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেই করবেন।’
বলেই ফোনটা কেটে দিলো আহি। আহির কাজে এপাশে আদ্রিয়ান আর ওপাশে নিলয় দুজনই প্রায় অবাক। আদ্রিয়ান তো চমকে গিয়ে বললো,
‘ আরে এটা কি করলে তুমি আমার নিলয়ের সাথে ইম্পরট্যান্ট কথা চলছিল।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে রাগী কন্ঠ নিয়ে বললো আহি,
‘ যা করেছি বেশ করেছি আর এক কথা বললে মোবাইল ছুঁড়ে ভেঙে ফেলবো।’
আহির কান্ডে আদ্রিয়ান চোখ বড় বড় করে বললো,
‘ কি বলছো তুমি?’
‘ যা ঠিক তাই বলছি এক্ষুনি সব খাবার শেষ করে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়বেন তা না হলে আপনার একদিন কি আমার একদিন।’
বলেই খাবার বাটিটা হাতে নিয়ে আবার খাওয়াতে শুরু করলো আহি। আহির কাজে চরমই অবাক আদ্রিয়ান সে বুঝলো না হুট করে এতো রেগে কেন গেল আহি।’
অতঃপর চটজলদি খাওয়া শেষ করে ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো আদ্রিয়ান।’
মাঝরাত তখন, বাহিরে বৃষ্টি পড়ছিল খুব। হঠাৎই আকাশে বাজ পড়ার শব্দ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় আহির। চটজলদি শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। বাহিরে বৃষ্টি নেমেছে দেখে দৌড়ে গিয়ে আদ্রিয়ানের রুমের জানালা বন্ধ করে দেয় সে। অসময়ে হুট করে এত বৃষ্টির প্রবণতা দেখে প্রায় আঁতকে উঠেছিল আহি। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়েছে সে।’
এদিকে,
আবারো সেইম স্বপ্নে আঁটকে ধরেছে আদ্রিয়ানকে,সেই ভাঙাচোরা বাড়ি, রক্তের ছাপ, কুকুরের নিথর দেহ থরথর করে কেঁপে উঠল আদ্রিয়ান। হঠাৎই স্বপ্নের ঘোরে আদ্রিয়ানের বাবা মা এসে বললো তাঁকে,
‘ আমাদের মেরে দিলি আদ্রিয়ান?’ তোকে না হয় একটু রাগ করে শুধু বকেই ছিলাম তাই বলে তুই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি। তুই যদি সেদিন বাড়ি থেকে না বের হতি তাহলে এগুলো কিছুই না। শুভও ছোট থেকে এভাবে অবহেলা পেতে পেতে বড় হতো না। এমন কেন করলি?’
মায়ের কথা শুনে ছলছল চোখে আদ্রিয়ান ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আমি কিছু করি নি মা আমি তোমাদের কেন মারতে চাইবো বলো।’
উওরে তেমন কিছু না বলে চলে যেতে লাগলো তাঁরা। ওনাদের যেতে দেখে আদ্রিয়ান দৌড়ে ওনাদের দিকে যেতে বললো,
‘ আমি কিছু করি নি মা, আমি কিছু করি নি বাবা প্লিজ তোমরা যেও না,
জোরে চিৎকার দিয়ে কথাগুলো বলতে লাগলো আদ্রিয়ান তাঁর বাবা মাকে কিন্তু তারা শুনলো না। অন্যদিকে হুট করেই আদ্রিয়ানকে ঘুমের ঘোরে চেঁচাতে দেখে আহি এগিয়ে আসলো আদ্রিয়ানের দিকে। থর থর করে কাঁপছে আদ্রিয়ান সাথে কিছু বলছে সে। আহি বুঝতে পেরেছে আজ রাতেও হয়তো আদ্রিয়ান স্বপ্ন দেখছে। আহি গিয়ে বসে পড়লো আদ্রিয়ানের পাশ দিয়ে তারপর বললো,
‘ কি হলো আপনার চোখ খুলুন আদ্রিয়ান?’
কিন্তু না আজ আর চোখ খুলছে না আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের কাজে আহি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে তারপর বললো,
‘ ভয় পাবেন না কিছু হয় নি আদ্রিয়ান আমি আছি আপনার সাথে।’
হঠাৎই কারো স্পর্শ আর কন্ঠ শুনে চোখ খুলে তাকালো আদ্রিয়ান সামনেই আহির মুখটা দেখে সে নিজেও জড়িয়ে ধরলো আহিকে তারপর ভয়ার্ত কন্ঠ নিয়ে বললো সে,
‘ আমি আমার বাবা মাকে মেরে ফেলেছি আহি?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে খুবই বিষন্ন আহি। আদ্রিয়ানকে ধরেই বললো সে,
‘ কিচ্ছু করেন নি আপনি ওনাদের হায়াত ওই পর্যন্তই ছিল।’
কিন্তু আদ্রিয়ান যেন নিজেকে শান্ত করতে পারছে না বার বার তাঁর মায়ের বলা কথাগুলো কানে বাজছে তাঁর। আদ্রিয়ান কান্নাভেজা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আমার জন্যই আমার বাবা মা মারা গেছে আহি?’
‘ আপনার জন্য কিচ্ছু হয় নি আদ্রিয়ান আপনি শান্ত হন আর ঘুমানোর চেষ্টা করুন দেখবেন ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি তো আছি আপনার কাছে,
আহির এবারের কথা শুনে শুধু ছলছল চোখে তাকালো আদ্রিয়ান আহির দিকে। আহিও তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের চোখের দিকে। আহি চোখের ইশারায় বললো আদ্রিয়ানকে ‘ কিচ্ছু হবে না আমি তো আছি আপনার পাশে’।
উওরে আদ্রিয়ান কিছু বললো না শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে আহিকে। বাহিরে মুসল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে, সাথে বারংবার বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আর এসবের মাঝেই আদ্রিয়ান জড়িয়ে ধরে বসে আছে আহি। আজ ভীষণ খারাপ লাগছে আহির আজ প্রথম আদ্রিয়ানের চোখে পানি দেখলো সে। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আহি।’
তাদের সামনেই কালো রঙের গোল বৃত্তের দেয়ালে আঁটকে থাকা ঘড়ির কাটাগুলো টিক টিক শব্দ করে ঘুরতে লাগলো। হয়তো নতুন গল্পের আভাস পাচ্ছে তাঁরা।’
🍁🍁🍁
অতঃপর সেই রাতের পর সময় চলছিল সময়ের মতো। রোজ আদ্রিয়ানের সেবা করা, খাইয়ে দেওয়া আর রাতে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে থাকা। বিষয়টা যেন কিছুদিনের রুটিন হয়ে গেছে আহির। প্রথম প্রথম জড়িয়ে ধরার বিষয়টায় কেমন কেমন লাগলেও এখন আর তেমন কিছু হয় না আহির যেন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে এগুলো।’
আর এমন করতে করতেই দেখতে না দেখতেই কেটে গেল পুরো এক সপ্তাহ। এখন আদ্রিয়ান প্রায় সুস্থ এর মাঝে দুদিন আগেই আদ্রিয়ানের মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দিয়েছে শুভ। আদ্রিয়ান চেয়েছিল সেদিনই বাড়ি যেতে কিন্তু শুভ রাজি হয়নি ভাইকে পুরোপুরি সুস্থ না করে সে কিছুতেই বাড়ি যেতে দিবে না। আজ অষ্টম দিন চলছে আদ্রিয়ানের হসপিটালে আর আজই বাড়ি ফিরবে আদ্রিয়ান আর তাঁর সাথে শুভ, আহিও। যদিও আহি আজ বিকেলেই বাড়ি চলে যাবে। কেন যেন বাড়ি ফেরার কথা শুনে প্রচন্ড খারাপ লাগলো আহির।’
অবশেষে কালো শার্ট, কালো প্যান্ট চুলগুলো ঠিক করে, মাথায় ক্যাপ পড়ে প্রস্তুত আদ্রিয়ান। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো শুভ আর নিলয়। শুভ তো ভাইয়ের এমন গেটাপ দেখে সে বুঝতে পেরেছে আদ্রিয়ান আজ ভিষণই খুশি। শুভ খুশি মনে এগিয়ে এসে বললো আদ্রিয়ানকে,
‘ তুমি আজ খুব খুশি তাই না ভাইয়া?’
‘ হুম কতদিন হলো বল তো একি বেডে শুয়ে আছি শোন বিকেলেই আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিবো তুই আর তোর জিনিসপত্র দুটোই চলে আসিস। আজ থেকে দুইভাই একসাথে থাকবো।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুভ খুশি হয়ে বললো,
‘ তুমি সত্যি বলছো ভাইয়া।’
‘ হুম।’
উওরে ভাইকে জড়িয়ে ধরে শুভ। আদ্রিয়ানও ধরে। দুই ভাই আজ ভীষণই খুশি, এই এক্সিডেন্টে একটা জিনিস খুব ভালো হয়েছে সেটা হলো আদ্রিয়ান শুভর দুরত্ব কমে গেছে। আজ নিলয়ও খুশি দুই ভাইয়ের বহু বছরের দুরত্ব কমে গেছে বলে। নিলয় নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এখন যাওয়া যাক তবে?’
উওরে আদ্রিয়ানও খুশি হয়ে বললো,
‘ হুম।’
তারপর এঁকে এঁকে আদ্রিয়ান আহি নিলয় আর শুভ বের হলো কেভিন নাম্বার ৫০৪ থেকে। শুভকে এখনই নিজের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল আদ্রিয়ানের। কিন্তু কালকে রাতেই শুনেছিল সে আজ শুভ হসপিটালে ব্যস্ত থাকবে খুব। তাই বিকেলের কথা বলছে শুভকে।
হসপিটালের বাহিরে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান আহি, শুভ, আর নিলয়। এমন সময় সেখানে আসলো রিনি সবাইকে একসাথে যেতে দেখে খুশি মনে বললো সে,
‘ অবশেষে তবে যাচ্ছো আদ্রিয়ান ভাইয়া?’
‘ হুম সাথে তোমাদের জন্যও সু’খবর আছে একটা।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুভ রিনি দুজনেই অবাক হয়ে বললো,
‘ সেটা কি ভাইয়া?’
‘ কি আবার তোমার বাবার সাথে কথা বলে তোমাদের বিয়েটা যাতে তাড়াতাড়ি দেওয়া যায় তারই ব্যবস্থা করবো।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে রিনি বলে উঠল,
‘ সেটা কি করে হয় ভাইয়া আগে আপনি বিয়ে না করলে আমরা কি করে বিয়ে করি যতই হোক আপনি শুভর বড় ভাই?’
‘ ঠিকই তো ভাইয়া তুমি না বিয়ে করলে আমি কি করে বিয়ে করবো।’ (শুভ)
‘ তোমাদের বিয়ের সাথে আমার বিয়ের সম্পর্ক কি?’
‘ সম্পর্ক তো আছেই তবে এসব নিয়ে পড়ে কথা হবে ভাইয়া এখন তুমি বাড়ি গিয়ে রেস্ট নেও।’ (শুভ)
উওরে আদ্রিয়ানও কিছু না বলে গিয়ে বসলো গাড়িতে। আর অন্যদিকে আহি আদ্রিয়ানের বিয়ের কথা শুনে কেমন যেন খারাপ লাগলো তাঁর। আহিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিনি বললো আহিকে,
‘ তোর আবার কি হলো?’
‘ হুম হ্যাঁ কিছু না তো
‘ তুই যাবি তো আদ্রিয়ানের সাথে?’
‘ হুম আচ্ছা শোন আমি আজ বিকেলেই বাড়ি চলে যাবো তুই অথৈদের বাড়ি চিনিস তো?’
‘ হুম কিন্তু কেন?’
‘ কেন আবার ওঁকে ফিরিয়ে আনতে।’
‘ কি?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..