বিচ্ছেদময় সুখ পর্ব-১০

0
312

#বিচ্ছেদময়_সুখ — [১০]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
🚫(অন্য কোথাও পোস্ট নিষিদ্ধ)🚫
_______________________

মীরার অস্বাভাবিক কান্ডে রুহিন কিছু মুহুর্তের জন্য ভড়কে গেলেও মনের ভেতর বেশ প্রশান্তি লাগছে। এইভাবেই তো সে একদিন মীরাকে চেয়েছে আজকে যেনো চাওয়াটা পূর্ন হলো কিন্তু মীরা তো এখন অন্য কারোতে নিবদ্ধ!

-‘ বলো মীরা কি বলবে তুমি?’

রুহিন মীরাকে নিজের বুক থেকে সড়িয়ে দিলো। রাত্রের আবছা অন্ধকারের ভেতরও মীরা দেখতে পেলো রুহিন নিজের চোখ মুখছে! মানুষটা নিজেও কতো কষ্ট পাচ্ছে অথচ তবুও এই বিচ্ছেদ!

-‘ আজ রাত পোহালেই তো কালকে তন্ময়ের সঙ্গে আমার বিয়ে আপনি পারবেন তো আমাকে নিজের ভাই বউ হিসাবে মেনে নিতে?’

-‘ মেনে নিতে না পারলেও যে মেনে নিতে হবে মীরা। কারন তুমি আমার ভাইয়ের বউ হবে আর কয়েক প্রহর পরেই।’

মীরার মনে জমে থাকা ক্ষুদ্র আশার প্রদীপটুকু নিমিষেই নিভে গেলো! রুহিন মীরাকে সরিয়ে দেবার পরেই!

-‘ শুনুন, এখনো সময় আছে সবটা ঠিক করবার। চলুন পালিয়ে যাই এখান থেকে বহুদূরে। যেখানে কেউ থাকবে না শুধু আপনি আর আমি। তারপর আমরা দু’জন মিলে এটক ছোট্ট সংসার করবো সুখে শান্তিতে থাকবো চলুন চলে যাই?’

রুহিন মীরাকে আকস্মিক ভাবে একটা চ’ড় মে’রে ওঠলো! মীরা গালে হাত দিয় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! কয়েক সেকেন্ড কি এমন হলো যে রুহিন তাকে চ’ড় মে’রে দিলো!

-‘ তোকে আগেও বলেছি এখনও বলছি আমার ভাইয়ের শান্তি নষ্ট করে তুই আমাকে শান্তিতে থাকতে বলছিস! আমি এরকম কাজ কিছুতেই করবো না মানে না বুঝেছিস? আমি মা’কে দেওয়া আমার কথা রাখবো। আমি চাই না আমার জন্য আমার ভাই কোনো রকম বিন্দু পরিমানও কষ্ট পাক বুঝেছিস তো? ওর সব কষ্ট আমি নিবো কিন্তু তন্ময় যেনো ভালো থাকে। আর ফের এসব কথা বলবি তো খারাপ হয়ে যাবে মীরা!’

আর সইতে পারলাম না! কি এমন বলেছি আমি? ভালোবাসি বলেই তো এই লোকটার কাছে বারেবার ফিরে যাই আমি শুধু ভালোবাসি বলেই! কিন্তু উনি এর জন্য আমাকে চ’ড় মা’র’লেন! এটা কি ঠিক হলো? এটা কেনো কোনো কিছুই তো আর আমার সঙ্গে ঠিক হচ্ছে না!

-‘ যখন আপনার কথা মতন ওই বাড়িতে গেছিলাম দেখলাম আপনি নেই তন্ময় আছে তখনও আপনার সঙ্গে কথা বলতে গেছি কিন্তু আপনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, দিত্বীয়বার যখন শুনলাম বিয়ে ঠিক হয়েছে তখনও আপনার কাছে গেছিলাম, তারপরও আজকে গায়ে হলুদ হবার পরেও আপনার কাছে বে’হায়ার মতন আবারো এসেছি তারপরও আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন! এই যে এতোবার আপনি আমাকে ফিরিয়ে দেবার পরও আমি আপনার কাছে বারবার ছুটে গেছি না? একটাই কারন শুধু আপনাকে ভালোবাসি বলে! শুনেছেন? শুধু আপনাকে ভালোবাসি বলে রুহিন! সেজন্য আপনার এতো কথা এতোকিছুর পরেও বারবার আসি। কিন্তু আপনি যেটা করলেন ঠিক করলেন না! এই যে আমি আজকে এখন চলে যাচ্ছি না? আর ফিরে আসবো না দিত্বীয় বার আপনার কাছে! এই পথ আলাদা হওয়াই আমাদের জন্য সারাজীবন আলাদা হওয়া হয়ে গেলো! ভালো থাকবেন আপনি। আপনাকে বিরক্ত করতে আর কেউ আসবে না, বলবে না কেউ ভালোবাসি!’

মীরা চলে গেলো! অতি কষ্টে কথাগুলো রুহিনকে বলে মীরা চলে গেলো সেই জায়গায় থেকে। মীরা চলে যেতেই রুহিন ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো! কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে কোনো কূল কিনারা নেই!

-‘ আমার কাছে আর কোনো পথ নেই মীরা! আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো বলেই বারবার ছুঁটে আসো কিন্তু কালকে তো তোমার বিয়ে? এখন এবাবে বলা ছাড়া আমার আর অন্য কোনো উপায় ছিলো না হাতে, ক্ষমা করে দিও পারলে। আমাদের এই বিচ্ছেদই থাকুক সমাপ্তিতে সুখ আর ধরা না-ই বা দিলো। ‘
————————-

সকাল সকাল বিয়ে বাড়ির তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে! কালকের তুলনায় আজকে বাড়ি আরো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বাড়ির সকল মানুষ ছুটোছুটি করে চলেছে যে যার কাজ নিয়ে। বাড়িতে আত্নীয় স্বজন, প্রতিবেশি সব মিলে ভর পুর হয়ে জমে ওঠেছে একেবারে বিয়ে বাড়ি। আর কয়েক প্রহর পরেই তন্ময়রা চলে আসবে! মীরাকে পার্লারের জন্য তৈরী করা হলো বউ সাজাবে বলে। মীরাও যেনো কথা বলতে ভূলে গেছে, যে যা বলে চলেছে সে সেটাই করে চলেছে। পার্লারে যেতেই সেই লাল রঙের টুকটুকে একটক বেনারসি পড়িয়ে দেওয়া হলো মীরাকে, হাতে ম্যাচিং করে লাল চুড়ি, লাল রঙের ফুল মাথায়, গয়না সবকিছু দিয়ে মীরাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে-ই দেখবে মীরাকে চোখ ফেরাতে পারবে না! মীরার সাজগোজের দিকে কোনো ধ্যান নেই! তার ধ্যান পড়ে আছে রুহিনের জন্য। কেবল অতীতের কথা ভেবে যাচ্ছে আর বুকের ভেতর চাপা কষ্ট অনুভব করছে। কিছুক্ষণের ভেতর মীরাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। মীরাকে কনের আসনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। শোরগোল শুরু হয়ে গেলো বর এসেছে! বরযাত্রীকে বসানো হয়েছে অপর পাশের রুমের ভেতর। কাজী সাহেবও চলে এসেছে বিয়ের জন্য। আর একটু পরেই বিয়ে পড়ানো হবে। লিপি সর্বপ্রথম এসেই মীরার কাছে যেয়ে বসেছে। বধু সেজে সজ্জিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু মুখে কোনো হাসির অস্তিত্বও নেই! লিপি কি বলবে নিজেও বুঝতে পারছে না শুধু মীরাকে আসসত্ব করলো সব ঠিক হয়ে যাবে। আসলেই কি আর কিছু ঠিক হবে? যা হবার তো হয়েই গিয়েছে!
বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজী সর্বপ্রথম তন্ময়ের কাছে গেলো। তন্ময়কে তিন কবুল বলার জন্য যে-ই না বলতে বললো, ওমনি তন্ময় ওঠে দাঁড়ালো!

-‘ এই বিয়ে হবে না! আমি মীরাকে বিয়ে করতে পারবো না। ”

তন্ময়ের কথায় বিয়ে বাড়ির উপস্থিত সকল মানুষ যেনো থমকে দাঁড়ালো। মীরাও চোক তুলে তাকালো! কি বলছে কি এই ছেলেটা? ওর জন্যই তো এতোকিছু হলো আর ও এখন করতে কি চাইছে? বরযাত্রীর সঙ্গেও রুহিন এসেছে! যে ভাইয়েন জন্য এতোকিছু করলো নিজের ভালোবাসা অব্দি বির্সজন দিলো এখন সে বলছে বিয়ে করবে না! সবাই মিলে ধরে বসলো তন্ময়কে!

-‘ তোর মা’থা কি ঠিক আছে তন্ময়? তুই কি বলছিস? এরকম কেনো করছিস? বিয়ে করতে তোর আপত্তি কোথায়?’

-‘ আপত্তি আছে বাবা। অন্যের ভালোবাসার মানুষকে নিযে আমি সুখে থাকবো কি করে বলোতো? আর সেই মানুষটি যদি হয় আমার নিজের বড়ো ভাই তাহলে?’

উপস্থিত সবাই এবার আরো চমকে ওঠলো! তন্ময় কি বলছে কি করছে কেউই কিছু বুঝে ওঠে পারছে না!

-‘ কি বলছিস কি? খুলে বলবি সবটা?’

-‘ তাহলে শোনো, এই যে মীরা আছে না? ও রুহিন ভাইয়াকে ভালোবাসে। আর ভাইয়াও তাই কিন্তু আমি যখন ভাইয়াকে বলি যে মীরাকে আমি বিয়ে করতে চাই তখন ভাইয়া নি দ্বিধায় মেনে নেয় নিজের ভালোবাসাকে ত্যাগ করে শুধু আমার জন্য! আর আমিও কেমন স্বার্থপরের মতন করে নিজের ভাইয়ের সুখকে বির্সজন দিয়ে নিজের কথা ভেবেছি? একটিবারও ভেবে দেখিনি যে রুহিন ভাই আমার জন্য এতোটা করছেে অথচ আমিই তার ভালোবাসা কে’ড়ে নিচ্ছি! কিন্তু কালকে যখন ভাইয়াকে দেখলাম তখন বুঝতে পারি ঠিক কতোটা কঠিন হয়ে গেছে আমার ভাই আমার কথা চিন্তা করতে গিয়ে! কালকে স্বচক্ষে ভাইয়ার করুন পরিস্থিতি দেখার পর মীরার প্রতি কোনো রকম বিয়ের আগ্রহ আর আমার ভেতর নেই বাবা! ভাইয়া সি’গ্’রেট খেয়েছে, কেঁদেছে মীরার জন্য যেটার কারন আমি! ঐগুলা কি মেনে নেওয়া যায়? তাই আমি কালকে ঠিক করি এইরকম দু’জন মানুষকে কষ্ট দিয়ে আমি নিজের সুখের কথা চিন্তা করতে পারবো না! তাই কাজী সাহেবকে বলে কয়ে সবকিছু আগ থেকে ঠিক করে রেখেছি। আজকে ভাইয়ার সঙ্গে মীরার বিয়ে হবে আমার নয়। পূর্নতা পাক ওরা দু’জন বাবা।’

-‘ কিন্তু এই চক্করে এখন আমার মেয়ের কি হবে? এরকম কেনো করলে তোমরা? আমাদের পরিবারের কাউকে জানাও নি কেনো?’

মীরার বাবার প্রশ্নে রুহিন মুখ খোলে,

-‘ আংকেল ও বড্ড ছেলেমানুষ! এসব ধরবেন না বিয়র শুরু হউক।’

-‘ বিয়ে তো আমি কিছুতেই করবো না! আর কতোটা আত্নত্যাগী হবি তুই আমার জন্য? আর কতো স্বার্থপর হবো আমি শুধু নিজের জন্য! ওই মেয়েটি বধু সেজে বসে আছে কিন্তু মনে মনে হয়তো তোকে স্বামী হিসাবে মেনে নিয়েছে! আমি এতোদিন দেখেও কিছু দেখিনি শুধু ভেবেছি বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু কিচ্ছু ঠিক হবে নারে ভাইয়া! আমি নিজের ভূল বুঝতে পেরেছি আমাকে শোধরাতে দে, আমি এই বিয়ে করবো না!’

এতোক্ষণ ধরে, তন্ময়, রুহিনের অনেক কথা শুনেছি এবার পালা এসেছে আমার মুখ খোলার!

-‘ আমি এই বিয়ে কিছুতেই করবো না! না তন্ময়কে বিয়ে করবো আর না এই রুহিনকে যাকে আমি ভালোবাসি! এদের দুজনের কাউকেই আমি বিয়ে করবো না, মানে না! কি ভেবেছে কি এরা আমাকে? প্রথমমে বড়ো ভাই এসে ছোটো ভাইয়ের জন্য বুঝিয়ে যাবে আমাকে আমি বারবার ছুটে যাবো উনি আমাকে ফিরিয়ে দিবোন তারপর তার ছোটো ভাইয়ের এখন উদারতা জেগে ওঠেছে, দরদ উতলে পড়ছে নিজের ভাইয়ের জন্য যে এখন সে-ও তার ভাইয়ের কথা ভাবছে! একবার বড়ো ভাই ছোটো ভাইয়ের জন্য নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করে মহান হবেন আবার বিয়ের দিন ছোটো ভাই তার বড়ো ভাইয়ের জন্য দরদ উতলে পড়বে! আমাকে বলবে রুহিনকে বিয়ে করতে আমি করবো? মানে এদের যখন যা ইচ্ছে তা-ই করবে আমাকে নিয়ে? শুধু আমি রুহিনকে ভালোবাসি বলে! উঁহু! আমি কোনো হাতের পুতুল নই যে আপনারা দু ভাই মিলে আমাকে খেলবেন। অনেক সহ্য করেছি এ ক’দিন, নিজের কষ্ট নিজের মধ্যে রেখে দিয়েছিলাম, এখন আবার আপনাদের দু ভাইয়ের প্রেমে জেগেছে না? আমি কাউকেই বিয়ে করবো না! আর যে মানুষটা কালকেও আমাকে ফিরিয়ে দিছে তাকে তো নইই! মোট কথা এখানে আর কোনো বিয়ে হবে না! আমি কোনো বিয়ে করবো না ব্যস!
#চলবে?