বিনিদ্র রজনী পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
681

#বিনিদ্র_রজনী
#পর্ব_১৮_শেষ_পর্ব
#মুমতাহিনা_তারিন

আদনান তুলিদের বিল্ডিং এর থেকে কিছুটা দূরেই একটা বাসা ভাড়া নিয়েছে,, যদিও নিলয় অনেক অনুরোধ করেছিল ওর সাথে থাকতে কিন্তু আদনান থাকে নি ,,, ছিমছাম ছোটো খাটো একটা ঘর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাসাটা ভাড়া দিতে রাজি হয়েছে বাড়িওয়ালা । এইখান থেকে তুলিদের বিল্ডিং মাত্র পাঁচ মিনিটের রাস্তা ,,,,একটা মানুষ লাগবে রান্নাবান্নার জন্য আজকের দিনটা কোনোমতে বাইরে খেয়ে কাটিয়ে নিয়েছে আদনান কিন্তু বাইরের খাবারে অভ্যস্ত না হওয়ায় শরীরটা কেমন করছে ,,,,কিন্তু সেইসব নিয়ে এখন ভাবল হবে না একটু অফিস এর কাজ করতে হবে নইলে কোনো ভাবেই প্রজেক্ট সুন্দর হবে না ,,,। অফিসের কলিগদের সাথে ও কালকে একটু দেখা করতে হবে আদনান এর তাই ল্যাপটপ খুলে সবাইকে একটা ছোটো মেইল পাঠিয়ে দিল আদনান ,,,,,

সকাল বারোটা বাজে ,,,,আদনান হুট করে রাতে আসায় সবাই একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল,,বেশি অবাক হয়েছিল তুলি ,,শাপলা বেগম রাতে অনেক অনুরোধ করার পরেও তাদের ঐখানে রাখতে পারেনি আদনানকে ,,তুলি যেমন বিরক্ত হয়েছে ঘটনায় তেমন ভাবেই আশ্চর্য ও হয়েছে ,,, প্রায় চারদিন গড়িয়ে গিয়েছে আদনান বাসা ভাড়া নিয়েছে সব নিলয় তুলিকে পাই টু পায় জানায় ,,নিলয় এখন তুলির অন্যতম দৈনিক পত্রিকা ,,,তুলি এতো বারণ দেয় ওর কথা সামনে বলবে না তাও নিলয় ঠিক কথার ফাঁকে ফাঁকে আদনান এর কথাটা তুলে ধরে ,,,তুলি চাইলেও যা এড়িয়ে যেতে পারে না ।

অনেক ভাবনা চিন্তা করেছে তুলি শেষ পর্যন্ত একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে ,,,, যাতে হয়তো কিছুটা হলেও নিজের প্রতি সম্মান দেখানো হবে আর নিজের সন্তান এর ভবিষৎ নিয়ে কোনো ভাবনা থাকবে না । টাকার কাছে মানুষ অনেক বেশি অসহায় হয়ে দাঁড়ায় ,,,তুলির কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা পয়সা নেই যা বেবিটার ভবিষৎ ভালো করতে পারে ,,নিলয় যে কথাগুলো বলেছিল সেটা কোনো দিক দিয়েই ভুল নয় ,,,যদি তুলিকে নিজের আত্মসম্মান এর দোহায় দিয়ে বাচ্চাকে নিজের কাছে রাখে তাহলে সেটা তার জন্য ঠিক হলেও তার সন্তানের জন্য ঠিক হবে না ,,,,সারাদিন কাজ করলে মায়ের ভালোবাসাটা ঠিক ভাবে দিতে পারবে না তুলি তারউপর শাপলা বেগমের বয়স হয়েছে তার খুব কষ্ট হবে একটা বাচ্চাকে সামলাতে ,,,আর বাবার ভালোবাসা থেকে চিরদিনের মত বঞ্চিত হবে তার সন্তান । একজন মেয়ে হিসেবে হয়তো আত্মসমান আগে আসে কিন্তু মা হিসেবে?? মা হিসেবে তার সন্তানের সুখের থেকে কোনো কিছুই বেশি মূল্যবান নয় । কোন মা চাইবে না তার সন্তান একটা সুস্ত পরিবেশে এ বড়ো হোক!!আর যদি তুলি আত্মসম্মান নিয়ে পড়ে থাকে তাহলে তো গল্পের মত কেউ আসবে না যে তাকে আগলে রাখবে ,,,মানুষ সব তামাশা দেখবে কেউ এগিয়ে আসবে না সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ,,,,,,

রোদের তাপ অনেক থায় গ্লাস ভেদ করে আশা এই রোদ ছুঁয়ে দিতে মন চাইছে তুলির ,,,সবে গোসল করেছে সে চুল গুলো ভিজে ,,যদিও খুব গরম পড়ছে তবুও কেমন যেনো ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে তুলির ,, মাথাটাও একটু ব্যাথা করছে মনে হয় জোর আসবে ,,,মাঝে মাঝে বৃষ্টি আর মাঝে মাঝে এই অসহ্য গরম মানুষকে বেশি অসুস্থ করে তুলছে ,,,তুলি হাতের গামছাটা দিয়ে চুলগুলো পেঁচিয়ে জানালা টা খুলে দিল ,,,,রাস্তার অন্যপাশে টং দোকানে বসে আছে আদনান ,,,চোখ না চাইতেও আদনান এর দিকে চলে যায় তুলির ,,,সূর্যের কড়া রোদ যেনো আদনানকে ছুঁতে পারছে না শরীর ঘেমে গিয়েছে কিন্তু তাতে আদনান এর মধ্যে কোনো ধরনের অস্বস্তির লক্ষণ দেখছে না তুলি ,,,সে খুব নিশ্চিন্তেই চা খাচ্ছে ,,,মাঝে মাঝে ভাবনার ঝুড়ি খুলে তুলি অবাক হয় আদনান এতো চা খাই কিভাবে পেট জ্বলে না!! ঠোঁট পুড়ে যাই না!! কিন্তু কোনো উত্তর পাই না কিভাবে পাবে কেনো না সে তো হার কাছে উত্তর পাবে তার কাছেই শুনতে পারে না কখনো,,,,,আগের দিনগুলো আজকে খুব মনে পড়ছে তুলির ,,,এমন রোদে তুলি কত কাপড় নিয়ে ছাদে মেলে দিতে যেত ,,,,সেই কাপড়ের মধ্যে সব থেকে প্রিয় কাপড় গুলো ছিল আদনান এর তার শরীরে মাখা অসাধারণ মেনস পারফিউম তুলিকে মোহিত করতো ,,,আর আগের দিনগুলোতে ফেরা সম্ভব না যা চলে গেছে সেটা হারিয়ে গেছে ….

____________________________

তুলিকে ঘিরে রেখেছে শাপলা বেগম ,নিলয়, রোহান শিউলী ,,,আদনান এক পাশে বসে আছে হাতে ছোটো একটা বাচ্চা চোখ গোল গোল করে আদনানকে দেখছে ,,,আল্লাহর অনেক রহমত তুলির উপর নিজের চরিত্রে যারা দাগ লাগানোর চেষ্টা করেছিল,,,,তুলির মনে যে আশঙ্কা ভয় ছিল সব যেনো আল্লাহ এক নিমিষেই শেষ করে দিয়েছে,,,বেবির চোখ নাক মুখ সহ গায়ের রংটা ও পেয়েছে আদনানের,,,আদনানের এক দফা কান্নাকাটি শেষ,,,ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে আদনানের কাছেই প্রথম মেয়েকে দিয়েছিল নার্স ,,,,,,কিভাবে ধরবে! যদি পড়ে যায় এমন হাজারো ভয় নিয়ে কোনো মতে দুই হাতে ধরেছিল আদনান প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতিটা যেনো তার চোখের জলে সবাই বুঝে গিয়েছিল । বাসায় কল দিয়ে সবাইকে জানিয়েছে আদনান,,,তাদের থেকে কোনো রেসপন্স নেই লিতুন বেগমের ফোন বন্ধ বার বার চেষ্টা করেও আদনান কল পায়নি ,,,,

রাত একটা দিকে হঠাৎ তুলির পেট ব্যাথা শুরু হয় ,,,ঘুমানোর আগে ও হচ্ছিল কিন্তু তুলি তেমন গায়ে লাগায়নি ,,,মাঝে মাঝেই ওমন ব্যাথা হয় কিন্তু রাতে সেই ব্যাথা যখন চরম একার ধারণ করে তখন তুলি না পেরে শাপলা বেগমকে ডেকে দেই মেয়ের অবস্থা দেখে অনেক বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলো শাপলা বেগম ,,,তুলি ব্যাথায় বেডশিট শক্ত করে চেপে ধরে আছে ,,,কি করবে কিছুই বুঝতে পড়ছিলো না শাপলা বেগম দুই থেকে তিন মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর শাপলা বেগম বুঝতে পারেন কি হচ্ছে ,,ঘুম থেকে ওমন জেগে যাওয়াই মাথায় কিছুই যেনো ঢুকছিল না । তিনি হুড়মুড় করে নিলয়ের বাসায় গিয়ে করে জোরে দরজা ধাক্কা দিয়ে নিলয়কে জাগায় ,,,ততক্ষনে মালতী বেগম পাশের ঘর থেকে ছুটে এসেছে ,,,নিলয় অ্যাম্বুলেন্স এ কল দিয়েই আদনানকে কল দেয় ,,, আদনান সব শুনে গাড়ি নিয়ে সাথে সাথেই বেরি হয়ে টির বিল্ডিং এর সামনে আসে সময় কম ,, অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হতে পারে ভেবে আদনানের গাড়িতে নিয়েই হাসপাতালে পৌঁছায় আদনান ,,, হাসপাতালে যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘর জ্বালিয়ে কেঁদে উঠে ছোটো বাচ্চা ,,,নরমাল বাচ্চা ডেলিভারি হয়েছে আদনান এর চোখে কোনো ক্লান্তি নেই ,,কান্নার আওয়াজ শুনে তার বুকের ভিতর বাজা ড্রাম যেনো নিজের গতি কমিয়ে দিল ,,,হাসিমুখে এসে দ্বিতীয় বারের মত আদনানের হাতে দিলো বাচ্চা নিলয় শাপলা বেগম ,,তুলির অবস্থা কেমন তাই নিয়ে উদ্বিগ্ন ,,,তুলি বেবী কলে নিয়েই নার্সকে তুলির কথা জিজ্ঞেস করলে তুলি সুস্ত আছে বলেই বেরিয়ে যায় । রেখে যায় একটা ভাঙা মন জোড়া লাগানোর এক বড়ো হাতিয়ার ,,,যার সচ্ছ মুখ আর কাচের গুলির মত চোখ গুলো প্রথম দেখায় বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক অনেক বেশি মায়া আর ভালোবাসা ,,,

তুলির জ্ঞান ফিরেছে ,,,সবাইকে তার পাশে বসে থাকতে দেখে প্রথম। অবাক হলেও আগে কি কি ঘটেছে সব ধীরে ধীরে মনে পরে তুলির ,,সবাইকে এক নজর দেখে বলে –

” তোমরা একটু বাইরে যাবে,,, উনার সাথে একটু কথা আছে ”

তুলির কথা বুঝতে পেরে সবাই বাইরে চলে যায় হয়তো এইটা সবার জন্য অতি প্রতীক্ষিত মুহুর্ত ,,,
আদনান তুলির দিকে একটু এগিয়ে যায় ,,,কলের বাচ্চাটাকে খুব সাবধানে তুলির পাশে শুয়ে দেয় ,,,

” কি বলবে বলো”

” আমি আপনার সাথে থাকতে রাজি আছে কিন্তু,,,’

তুলির অর্ধেক কথা শুনেই আদনান এর মন যেনো শান্ত হলো ,,,আনন্দে মুখ উজ্জল হলো আদনানের কিন্তু সেটা স্থায়ী হলো না ,,মুহূর্তের মধ্যেই সেটা ব্যাথাতুর হয়ে উঠলো,,,

” আমি শুধু আর শুধু মাত্র নিজের সন্তানের কথা চিন্তা করেই আপনার সাথে থাকতে রাজি হয়েছি ,,,আমি চায়না আমার সন্তান তার নিজের বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হোক ,,,আর একজন স্ত্রী হিসেবে আমার যত দায়িত্ব আছে আমি পালন করবো কিন্তু,,,,আপনি আমার কাছ থেকে কোনো ধরনের ভালোবাসা আশা করবেন না ,,আর কোনোদিন আমার পক্ষে হয়তো আপনাকে ভালোবাসা সম্ভব না,,, ভালবাসাটা একান্ত আমার ”

আদনানের দৃষ্টি নত হল,,তুলির কথার পরিপ্রেক্ষিতে কি বলবে সে! কিছুই তো বলার নেই এমন কিছুই তো হওয়ার ছিল । নিজের বিমূর্ষতা প্রকাশ করলো না আদনান মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে বললো –

” তুমি যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছো তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই ,,,আর আমি চাইলেও তোমাকে জোর করতে পারতাম না,,,ভালোবাসা সত্যি খুব একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার আর সেটা কোনোভাবেই জোর জবরদ্তিমূলক না ”

এতো টুকু কথা বলেই থামলো আদনান বুকটা কেমন ভারী হয়ে গিয়েছে ,,,কত সহজ একটা কথা আমার থেকে ভালোবাসা আশা করবেন না কিন্তু এই কথাটা আদনানের ঠিক অন্তরে গিয়ে ছিদ্র করলো ,,, এখন হয়তো নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হবে । তুলির উপর কোনো কিছু নিয়েই আদনান মনক্ষুন্ন নয় ,,,সে তো শুধুমাত্র স্ত্রী নয় সেও তো মানুষ ,,,তার দুঃখ আছে কষ্ট আছে অনুভূতি আছে একজন মানুষ একজন নারী একজন মা হিসেবে তার যে সিদ্ধান্ত সেটা অত্যন্ত প্রশংসাজনক ,,,যদি তুলির জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকতো আর এমন একটা উত্তর দিলে হয়তো আদনান সেটা দেখে খুশি হতো ,,,কিন্তু তার জীবনেই এমন ঘটেছে আর উত্তরদাতা ও তার নিজের স্ত্রী যার সাথে অন্যায় করতে তার একসময় কোনো খারাপ লাগে নি । যেহেতু সে নিজেই দোষী সেহেতু তার পক্ষ থেকে কোনো সাফাই হয় না আর হাওয়া উচিত না । তবে একটা বিষয় আদনানকে খুশি করেছে তুলি তার সাথে থাকবে ,, তাদের সেই পবিত্র বন্ধন বিচ্ছিন্ন হবে না । নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসবে আদনান ,,,তুলি না বাসুক তুলির মত করেই তুলিকে ভালোবাসবে আর হয়তো কোনো একদিন তার মনের একটা জায়গা আবারও দখল করবে আদনান …….

পনেরো দিন হয়ে গিয়েছে ,,,,সময় কিভাবে চলে যায় বোঝায় যায় না । জীবনের গতি যে কোনো স্থানে থেমে নেই । তুলি আর আদনান দুজনে মিলে মেয়ের নাম রেখেছে নাওয়ার অবশ্য আদনান এই নামটার কথা প্রথমে বলেছিল তাই তুলি আর দ্বিমত করেনি ,, তারও নামটা খুব ভালো লেগেছে নাওয়ার অর্থ শুভ্র ফুল,,, তুলির সাদা ফুল খুব পছন্দ করে তাই আদনান এই নামটা রেখেছে,,,

তুলি নির্নিমেষ নতুন জীবন নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নেই । যাঁরা তার সাথে অন্যায় করেছিল তাদের উপর ও কোনো রাগ রাখেনি তুলি ,,সাফ মনেই সবাইকে মাফ করে দিয়েছে । আম্মার কথা মত নিকৃষ্ট ব্যাক্তির সাথে উৎকৃষ্ট আচরণ করার চেষ্টা করে তুলি । সে বুঝেছে কখনো কাউকে মাফ করেই কেউ কোনোদিন ছোটো হয়না ,,,কারোর আত্মসম্মান আঘাতপ্রাপ্ত হয় না । কেউ যদি কারোর সাথে বার বার খারাপ ব্যাবহার করে আর সে নিজে বার বার তাকে ক্ষমা করে তাহলে সামনে থাকা ব্যাক্তি নিজের ভুলটা আরো বেশি ভালোভাবে বুঝতে পারে তার মধ্যে সৃষ্টি হয় এক অপার সম্ভাবনা ,,,যা সবার জন্য সুখকর অন্যদিকে যদি মাফ না করে প্রতিশোধের অনোলে জ্বলে তাকে শাস্তি দেওয়া অথবা ছোটো করা হয় তাহলে সে কোনোদিন বুঝতে পারে না সে কতটা ভুল ছিল বরং সে আরো বেশি উদ্যম নিয়ে খারাপ কাজের দিকে ধাবিত হয় ।

অরোরা শিউলী নিজের কাছে বড্ড ছোটো হয়ে গিয়েছে । তুলি আগেরমত করেই তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে ,,,তার এমন আচরণ যেনো কোনো কিছুই ঘটেনি সব সাভাবিক আছে । তাদের অন্যায়ের প্রতি কোনো ধরনের কড়া জবাব দেয়নি তুলি । সে চাইলেই পারতো সবার সামনে শিউলী আর অরোরার সত্যিটা সামনে এনে নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে কিন্তু তুলি সেটা করেনি । নিজের সম্মান গেছে বলে অন্যের সম্মান নিয়ে টানাটানি থেকে সে বহুদুর আছে । যদি তুলি রাগে অগ্নিশর্মা হতো ,,অথবা অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে অরোরা আর শিউলীকে অপমান করত তাহলে হয়তো এতো খারাপ লাগাটা কাজ করতো না কিন্তু তুলির চুপ থাকা আর তাদের প্রতি সম্মান আর ভালোবাসা আগের মত দেখে আরো বেশি খারাপ লাগছে । আয়নার সামনে গিয়ে নিজের চোখে চোখ রাখতে পারে না। আত্মগ্লানি প্রতি ক্ষণে ক্ষণে কষ্ট দেয় তাদের ।

শিউলির বাচ্চা হবে না আর ,, ডাক্তারদের মতে তাতে রোহান যতটা কষ্ট পেয়েছে তার থেকে অধিক কষ্ট পেয়েছে শিউলির আচরণে ,,ভালোবাসা কি ওমন! যেখানে বিশ্বাসের জায়গা নেই ,,রাতের আধারে শিউলির কান্না ঠিক শুনতে পাই রোহান কিন্তু বুকে জড়িয়ে তাকে আর থামায় না,,, মনে হয় সে ব্যর্থ ছিল নিজের কাছে নিজের ভালোবাসার কাছে । তবু এতো খারাপ লাগার মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে ,,,আদনান আর তুলি এক সাথে আছে ,,,

আদনান এখন নামাজ পড়ে ,,আগে সপ্তাহে একবার তাও দুপুরে তাকে মসজিদে যেতে দেখা যেত এখন প্রতি ওয়াক্তে তাকে মসজিদে পাওয়া যায় । তার এমন পরিবর্তন দেখে বন্ধুমহলে আর অফিস কলিগদের মধ্যে দুটো রিয়াকশন দেখা যায় একটা হলো সবাই তাকে উৎসাহ দেয় অন্যটা তাকে টেনে হিচড়ে নিচে নামানোর চেষ্টা অবশ্য সে সবে ধার ধারে না আদনান ,,নিজের ছোট্ট পরিকে নিয়ে তার অবসর কাটায় ,,নিয়ম করে তুলির জন্য গোলাপ,,ফুচকা কিনে নিয়ে যায়,,তুলির পছন্দসই কাজ করে তাতে তুলির নির্জীব চাহুনি তাকে ক্ষতবিক্ষত করলেও সে থেমে যায়নি ,,,,নিজেদের বাড়ির দশ মিনিটের দূরত্বে একটা ফ্ল্যাট কিনেছে সেখানে থাকে তুলি আর আদনান ,,,, তুলি ওই বাড়ি পা রাখেনি আর হয়তো কোনোদিন রাখার ইচ্ছা পোষণ করবে না তাই নিজের জমান কিছু টাকা আর ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছে আদনান । নিজের বাবার টাকায় হাত লাগায়নি ,,,,

সকালের সতেজ বাতাস উপভোগ করছে আরহাম রহমান ,,সকালে উঠে হাটাহাটি করার অভ্যাস অনেক আগের থেকেই ছিল ,,আজকে আর নতুন নয় ,,,সকালে উঠে নামাজ পড়ে বাইরে বেরিয়েছে তখন লিতুন ঘুমিয়ে ছিল,,, ওর ছোটো মুখটায় বয়সের ছাপ খুব কম পড়েছে দেখলে ঠিক আগের মতই সুন্দরী মনে হয় আর হামের কাছে ,,,অনেক বেশি অন্যায় করে ফেলেছে নিজের স্ত্রীর উপর,,,যখন তার কেউ ছিল না তখন লিতুন শক্ত করে আরহামের হাত ধরে এই পর্যন্ত এনেছে আর তার সাথেই এতো বড় অন্যায় করেছে আরহাম! রাস্তার পাশে থোকা থোকা ফুল ফুটেছে ,,,হলুদ লাল মিশেল কৃষ্ণচূড়ার এক গুচ্ছ ফুল ছিঁড়েছে আরহাম অনেকদিন হয়ে গিয়েছে লিতুনের জন্য ফুল নেওয়া হয়না ,,

লিতুন বেগম বিষম খাওয়ার উপক্রম ,,, আরহাম ওর জন্য এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে সদর দরকার সামনে দাড়িয়ে আছে । নিজের হা হয়ে থাকা মুখটা কোনোমতে বন্ধ করে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো ,,

” নিবে না ফুল অনেক কষ্ট করে এনেছি ”

লিতুন বেগম কিছু না বলেই আরহামের বাড়িয়ে দেওয়া হয় থেকে কৃষ্ণচূড়া গুলো নিলো । আজকে খুব কান্না পাচ্ছে তার অনেক বেশি ক্ষতি হতো কি এই দিনটা আরো দশ বছর আগে আসলে…ফুল গুলো নিয়ে রাহেলাকে চা দিতে বলে ঘরে চলে গেলো ,,,

বালকনি তে দাড়িয়ে ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠলো এই বয়সে এমন হ মাওঃ করে কান্না করা অনেক বেশি বেমানান ,,,কিন্তু নিজেকে ধরে রাখার সাধ্য নেই লিতুনের কতটা দিন নিজের ভিতর চাপিয়ে রাখা যন্ত্রণা পাশে রাখবে,,,, হঠাৎ পিছে থেকে লীতুনের হাত ধরলো আরহাম নরম চোখে লাল হয়ে যাওয়া লিতুনের মুখটা দেখলো ,,পরম যত্নে জড়িয়ে ধরলো লিতুনকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো
” আমার উপর রেগে থেকো না ,,,তুমি আমার জিবনে প্রথম ছিলে আর প্রথম থাকবে সবদিন হ্যাঁ হয়তো আমি তোমাকে বুঝতে পারেনি কিন্তু এখন তো বুঝেছি ,,,সারাজীবন অবুঝ থাকার চেয়ে শেষ সময়ে নাহয় বুঝলাম ”

লিতুনের মনের মধ্যে এখন দ্বন্দ্ব চলছে ,, এতবছর দূরে থাকতে থাকতে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরী হয়েছে তাদের মধ্যে এক নিমিষে সেই দেয়াল ভাঙা কি সম্ভব! নাহ্ আর মনে কোনো দ্বিধা রাখলনা লিতুন শেষ সময়ে যদি একটু ভালোবাসা পাওয়া যায় তাতে ক্ষতি কি!

” রাগ করে থাকলে এতদিন সংসার করতে পারতাম নাকি! ”

” যাবে বিকেলে ঘুরতে? সেই জায়গায় যেখানে বসে আমরা বাদাম খেতাম আর গল্পঃ করতাম,, নীল একটা শাড়ি পড়বে নিশ্চয় আমার দেওয়া প্রথম শাড়ি তোমার কাছে আছে,,আগের মত সাজুগুজু করে ঘুরতে যাব,,,তারপর আদনান আদররী সাথেও দেখা করতে হবে কিন্তু সবার আগে বউ ”

” ঢং বুড়ো বয়সে ভীমরতি !!”

সমাপ্ত

রিচেক করি নি ভুল থাকলে ম্যানেজ করে নিবেন ।