বিন্নি ধানের খই পর্ব-৬+৭

0
344

#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_০৬
#মিদহাদ_আহমদ

আমি রাতেই মাকে কল করে জানালাম, তাদের জামাই পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে আসবে আগামীকাল। সেই টাকায় যেনো ইফতারি কিনে আনে বাবা। কোনকিছুর কমতি যেনো না থাকে।

সেই রাতে আমি ঘুমালাক কম, শুনলাম বেশি। একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দিতে দিতে আসিফ আমার পাশে এসে বসলো। খাটের এক পাশে বালিশ দেয়ালের দিকে নিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। টু-কোয়ার্টার প্যান্ট হাঁটু ছেড়ে আরও সামান্য উপরে উঠে এসেছে। এসি ছাড়া, তার পরও তার এই অভ্যাস যেনো একটা চিরাচরিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গালভর্তি ঘন দাড়ি আর লম্বা গোঁফের ভর্তি চেহারা দেখতে যে কারোর ই ভালো লাগবে। হয়তো এই চেহারার প্রেমে কত রমনি মাতোয়ারা হয়ে থাকে সব সময়!

এক হাতে সিগারেট, অন্য হাতে মদের গ্লাস। গ্লাস রেখে মাথার চুলে হাত দিতে দিতে আসিফ আমাকে জিজ্ঞেস করলো

‘কী চাও তুমি?’

আমি কিছুটা অপ্রস্তুত, কিছুটা ভয় আর কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বললাম,

‘এই মদের গ্লাসটা কি এক পাশে রাখা যাবে এখন?’

আসিফ হো হো করে হেসে উঠলো৷ সাদা দাত আর মুখ থেকে বের হওয়া সিগারেট আর মদের অদ্ভুত মাতোয়ারা গন্ধে যেনো চারপাশ ছেয়ে গেলো। তারপর খাটের বক্সে হাত লম্বা করে নিয়ে মদের গ্লাসটা রাখলো। তারপর অন্যহাতে সিগারেটে টান দিতে দিতে আমার দিকে মুচকি হাসে হেসে বললো,

‘কী চাও?’

আমি এবার কোন কথা বলে উঠতে পারলাম না৷ আসিফ বললো,

‘তোমাকে বলেছিলাম তুমি কী চাও। আর তুমি উঠে বললে মদের গ্লাস রেখে দিতে?’

কথাটা বলেই আবার নিজের মতো করে হেসে উঠলো আসিফ। আমি এই প্রথম সম্ভবত আসিফের হাসি এত গভীরভাবে দেখলাম। খেয়াল করলাম তার গালে টোল পড়ে। ছেলেদের গালে টোল পড়তে আমি দেখিনি সচরাচর৷ গালভর্তি দাড়ির ভেতরে থাকা তার উজ্জ্বল গাল যেনো মলিন হয়ে এসেছে। যত্ন নিলে এই গালকেই হয়তো ফর্সা দেখাতো!

আসিফ নিজ থেকে বললো আবার,

‘তোমার স্বপ্ন কী ছিলো?’

আমি বললাম,

‘ডাক্তার হবো। এমনটাই আশা দেখেছিলাম সব সময়।’

‘হু হু হু। তারপর? বিয়ে হয়ে গেলো? এইতো জীবন! হো হো হু৷ আমাকেও বিয়ে করিয়ে দিলো৷ ভেবেছে বিয়ে করলে মদ নারী এসব ছেড়ে দিবো। জীবনে নিজের স্বপ্নের মৃত্যু নিয়ে কি আর বেঁচে থাকা যায়?’

আমি বললাম,

‘যায় তো। বেশ যায়। কেন যাবে না? আমিও তো বেঁচে আছি তাইনা?’

এবার আসিফ গলা ঝেড়ে আমাকে জোর গলায় বললো,

‘না৷ এই বাঁচাকে বাঁচা বলে না। এইটা বাঁচতে বাঁচতে মরে যাওয়া। এই মরার চেয়ে বহু আগেই মরে যাওয়া ভালো৷ বহু আগেই মরে যাওয়া ভালো।’

মাথার বালিশটা একপাশে রেখে বিছানা থেকে পা নামালো নিচে আসিফ। তারপর লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরালো৷ আমি কেশে উঠলাম। এই কয়েকমাসে সিগারেটের গন্ধ আমার সয়ে গিয়েছে। অভ্যাস হয়ে উঠেছে। তবুও খেয়াল করলাম আসিফ উঠে বারান্দায় চলে গেলো। কয়েক সেকেন্ড পরে আবার উঠে এসে আলমারি থেকে মদের বোতল বের করলো। আবার চলে গেলো বারান্দায়৷ বারান্দার গ্লাস টেনে লাগিয়ে দিলো।

ভেতরে ভেতরে মনে হতে লাগলো, হয়তো আমি কেশেছি এজন্য আসিফ গ্লাস বন্ধ করে দিয়েছে বারান্দার! এর আগে তো সে এমন করেনি!

এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে আমি ঘুমিয়ে গেলাম তার টেরই পেলাম না৷ রাতে সেহরিও খাওয়া হলো না। কেউ ডেকেছিলো কিনা তাও বলতে পারছি না। সকালে উঠে দেখলাম, আসিফের এক পা আমার উপরে৷ সে বেহুশের মতো ঘুমাচ্ছে৷ তাকে সরিয়ে দিয়ে উঠলাম আমি৷ গোছল সেড়ে বাইরে আসতেই ননাস বললো,

‘কী? সেহরির সময়েও উঠা লাগে না নাকি? এসব অসভ্যতামো কোনদিন যাবে না? ঘরে শ্বশুর শাশুড়ি ননাস ননদের আছে যে, এইটা ভুলে গিয়েছো? ‘

আমি কোন জবাব না দেয়ায় ননাস আমার আরও কাছে এসে চিৎকার করে আবার বললো,

‘কথা কানে যায় না নাকি?’

শাশুড়িও সামনে এলেন। বললেন,

‘কতদূর? তোমার বাবা আসছেন তো সবকিছু নিয়ে?’

আমার মনে হলো এমন সময়ে যে আসিফ বলেছিলো পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবে। অথচ সে এখনও ঘুমাচ্ছে রুমে! আমারও মাথায় ছিলো না এইটা। তড়িঘড়ি করে রুমে গেলাম। দেখি আসিফ বসা আছে ইজি চেয়ারে। মোবাইলে গেইমস খেলছে। আমি বলার আগেই বললো,

‘তোমার বাবাকে টাকা দিয়ে এসেছি সকালেই। তুমি ঘুমে ছিলা। তাই আর জাগাইনি। বাবা টাকা নিতে চাচ্ছিলেন না। আমি জোর করে দিয়ে এসেছি। কোন টেনশন করার দরকার নেই ‘

আমার ভেতরটা এক প্রশান্তিতে ভরে গেলো। যে মানুষটা আজ তিনমাসের মাঝে একবারও আমার সাথে ভালো ব্যবহার করেনি, সেই মানুষটা আজ কেমন করে যেনো নতুন রূপে আমার সামনে এসে হাজির হচ্ছে! এ যেনো এক নতুন বিস্ময়! ননাস এসে ডাক দিয়ে আমাকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। ননদ বললো তার লেবুর শরবত করে রাখতে৷ আমি সবার জন্য লেবুর শরবত করবো কিনা জিজ্ঞেস করতেই শাশুড়ি বললেন,

‘বাপের টাকায় লেবু আসছে নাকি তোমার যে দুইশো জনের জন্য লেবুর শরবত করবা? এখানে বালতি রাখা আছে আর রুহ আফজার এক বোতল রাখা আছে। এই এক বোতল রুহ আফজা দিয়ে দুইশো জনের শরবত বানিয়ে রাখো৷ আর তারপর বালতিটা ডিপ ফ্রিজে তুলে রেখে দিও।”

আমি শরবত বানালাম। শরবত এতটাই পাতলা হলো যে মুখে তোলার মতো অবস্থা না৷ আমার দেখতেই খারাপ লাগছিলো।

যোহরের নামাজ শেষ হতে না হতেই শাশুড়ি আমাকে বারবার জিজ্ঞাসা কর‍তে লাগলেন আমার বাবা কোথায়। ননদ এসে কটাক্ষ করে বলতে লাগলো,
‘ট্রাক দুইটা লোড কর‍তে তো সময় লাগেই মা। বুঝো না কেন’

ননাসও তার বোনের সাথে যুক্ত করে বললো,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ। আজ নুপুরের বাপের বাড়ি থেকে এতো ইফতার আসছে যে এগুলা লোড কর‍তে সময় তো লাগবেই।’

এত অপমান, এত কথা সহ্য করছিলাম আমি নীরবে৷ আড়াইটার দিকে বাবা এলেন৷ দেখলাম এক মাইক্রোবাস আর দুই ঠেলা এসে আমাদের আলিশান ভবনের মেইন গেইট ক্রস করলো। একে একে ঠেলাওয়ালারা বাসার ভেতরে ইফতারির আইটেম এনে রাখতে লাগলো। শাশুড়ি গুণতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর ননাস এসে বললো,

‘নিমকি মাত্র দশ কেজি কেন? আর জিলাপি যদিও লোকে খায় না তার পরও এক মণ তো দেয়া যেতোই। আধা মণ জিলাপি কম হয়ে গেলো না নুপুর? মিষ্টি এক মণ, আমার তো বাবা দিয়েছিলো দুই মণ। আর ফলফ্রুট যা এসেছ, চলে আরকি। ”

শাশুড়ি এসে তার মেয়েকে আটকালেন। আবারও বললেন তাচ্ছিল্যের সুরে,

‘আরে দুই হাড়ি গরুর আখনি এসেছে যে এটাই অনেক। আমি তো ভেবেছিলাম আমাদের মান সম্মান আবার সব ধূলোয় মিশে যায় কিনা। প্রথম দিনেই যা ইফতারির বাহার দেখলাম তার বাপের বাড়ির!’

‘আশ্চর্য! আমাদের ঘরে কি খাবার কম আছে নাকি? এতকিছু তার পরও তোমাদের মন ভরছে না? অন্যজন কীভাবে দিয়েছে এইটাও তো ভেবে দেখার বিষয়! মানুষ খাইয়ে এতো ইফতার এনে, অন্যের উপর জুলুম আর চাপিয়ে দেয়া ছাড়া তোমরা জীবনে কিছুই শিখোনি?’

পেছন থেকে এসে কথাগুলো মা আর বোনদের বললো আসিফ। আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম রান্নাঘরের কোণে।

(চলবে)

#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_০৭
#মিদহাদ_আহমদ

আসিফের কথা শুনেই এক মুহূর্ত দমে রইলো না আমার ননাস। মুখের উপর সে আমার দিকে তাক করে বললো

‘শেষ? এখন তাহলে আমার ভাইয়ের ব্রেইন ওয়াশ করাও হয়ে গিয়েছে? লাগানো, পড়ানো শুরু হয়ে গিয়েছে?’

শাশুড়িও নাকি সুরে বললেন তার ছেলেকে,

‘কী আসিফ? এতদিন তো কোন কথা ছিলো না মুখে৷ আজ নতুন করে কথা বলা শিখে এসেছিস নাকি কেউ শিখিয়ে এনেছে?’

আসিফও যেনো রেগে উঠলো। সে বললো,

‘কী আবোল তাবোল বকছো তোমরা? আসলে তোমাদের প্রবলেম টা কোথায়? তোমরা কী করতে চাও আমার সাথে? আমি কিছু বলি না, এখন বলছি তার মানে এই দোষটাও অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে হবে এবার?’

আসিফ চলে গেলো রান্নাঘর থেকে। তার যাওয়ার পর শাশুড়ি আর ননাস আরও কতক্ষণ একা একা কথা বললো তাদের নিজেদের মাঝে। কথার টপিক ছিলো এই একই, ছোট ঘরের মেয়েকে বিয়ে করিয়ে নিয়ে এলে এই সমস্যা, সেই সমস্যা হেনতেন। আমি নাকি আমার স্বামীর ব্রেইণ ওয়াশ করছি এখন৷ তাকে লাগাচ্ছি এসব হেনতেন নানাকিছু। ননদ এসে আমাকে বললো,

‘তা এতকিছু পারো তো নিজের স্বামীকে ঠিক করতে পারো না? পারো না এসব নেশা থেকে বের করে দুনিয়ায় আনতে?’

এতগুলো কথার মাঝে আমার শুধু আমার ননদের কথাটাই মাথায় গেঁথে গেলো। ঠিকই তো বলেছে সে! আমি কি পারি না আমার স্বামীকে ঠিক করতে? পারি না তাকে আবার সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে?

এসব ভাবতে ভাবতে রুমে গিয়ে দেখি সিগারেটের ধোয়া। দেখলাম আসিফ এই রোজার মাসেও বারান্দায় বসে সিগারেট টানছে একটার পর একটা। আমি তার কাছে গেলাম। গিয়ে আলতো করে পিঠে হাত দিয়ে বললাম,

‘কী দরকার ছিলো মায়ের সাথে এমন কথা বলার? দেখলে তো এমনি এমনিই তোমাদের ভুল বুঝাবুঝি হলো।’

‘অহ! তার মানে আমার সাথে হওয়া অপরাধ এখন আরেকজনের সাথে হচ্ছে, অবিচার হচ্ছে, অন্যায় হচ্ছে তাও আমি মেনে নিবো? চোখ খোলা রেখেও বন্ধের মতো আচরণ করবো? এইটাই চাচ্ছো নাকি এখন? তুমিও কি এখন আবার নতুন করে আমার স্বাধীনতায় বাধা হয়ে আসবে?’

আমি সেই টপিকটা এড়িয়ে গেলাম। এবার আসিফকে বললাম,

‘রোজামাসে সিগারেট না ধরালেই নয়? তাও দিনের বেলা? কেউ যদি দেখে ফেলে তো?’

আসিফ বললো,

‘দেখলে দেখুক। আমার কোন সমস্যা নেই। কেন তোমার কোন সমস্যা আছে? আমি ফেইক পারসোনালিটি নিয়ে থাকি না। আমি যা, আমি তাই। আমি কখনো এই কখনো সেই এমন দেখাই না। যা আমার বাস্তবে, তাই আমার ভেতরে।”

বুঝতে বাকি রইলো না আসিফকে এখন বুঝিয়ে আমার লাভ নেই। এতে হিতে বিপরীত হবে আমার। আমার কানে বারবার বাজতে লাগলো আমার ননদের কথা, সে বলেছে, আমি আমার স্বামীকে ঠিক করতে কেন পারিনা! আসলেই তো!

এসব ভাবতে ভাবতে বারান্দা থেকে আমার আলমারি পর্যন্ত চলে এলাম। শাড়ি বের করবো। ননাস বলে দিয়েছে আজ সবুজ পাড় আর সাদা জমিনের কাতান শাড়ি যেনো পরি। তার শ্বশুরবাড়ি থেকে সবাই আসবে ইফতারে। আমি আলমারির দরজা খুলতে গিয়ে লুকিং গ্লাসে দেখলাম বারান্দায় বসা আসিফ তার হাত থেকে সিগারেট ছুড়ে ফেলে দিলো। গুণগুণ করে সে গান গাইতে লাগলো একা মনে। আমার ভেতরটা খুশিতে ভরে উঠলো। সামনে না হোক, রোজার দিনেও হোক, রোজা ভেঙ্গেও ফেলুক, তার পরও মানুষটা আমার কথা শুনেছে। হয়তো বুঝেছেও। তাই হয়তোবা সিগারেট ফেলে দিয়েছে।

আমি গোছল করে এলাম আবার। গরম লাগছে প্রচন্ড। নামাজ পড়ে শাড়ি পরে নিলাম। চুল ভেজা ছিলো। তাই বাঁধিনি৷ চুল যখন ড্রেসিংটেবিলে বসে বসে শুকাচ্ছিলাম হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে, তখন বিছানায় বসে থাকা আসিফ আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ভারী সুন্দর চুল তো তোমার! এই চুলে সাদা গাজরা লাগিয়েছো কখনো?’

আমি উত্তর দিলাম,

‘না।’

‘অহ! গাজরায় মানাবে তোমার চুল। ‘

আর কোন কথা বাড়লো না আমাদের। আমার ভেতরে ভেতরে এই সুখস্মৃতি ধরা দিলো যে, কী হচ্ছে এসব আমার জীবনে! আমার স্বপ্ন, আমার সাধা, আমার ইচ্ছা সবশেষে সবকিছু কি আবার তবে ঠিক হতে চলেছে?

ভাবনার ফুরসৎ ফুড়ানোর আগেই ননাস রুমে ঢুকলো। কাছে এসে হাত এগিয়ে আমার হাতে চার গাছা সোনার চুড়ি, গলায় ভারি বেনিচেইন, কানে ঝুমকা আর নাক থেকে সোনার নাকফুল খুলে ডায়মন্ডের নাকফুল পরিয়ে দিলো। দশ আঙুলের ছয় আঙুল ভর্তি করে দিলো আংটি দিয়ে৷ তারপর একটা ছয় ইঞ্চি জুতা বের করে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললো,

‘এই জুতা পরে বাইরে এসো। সবাই দেখবে বলে অপেক্ষা করছে। আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে কোন জবাব দেয়ার দরকার নেই। বুঝেছো? আমি পাশে থাকবো। যা বলার আমিই বললো।

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। যাবার সময় ননাস বললো,

‘চুল ছাড়া কেন? ভিজা চুল তো শুকানো লাগে নাকি? চুল বাঁধো। খোপা করে নাও। আর মাথায় টেনে ঘোমটা দিবে। আর এই ব্লাউজ কেন পরেছো? ফোর কোয়ার্টার ব্লাউজ পরো। গরম তো কী অসহ্য হয়ে যাচ্ছো? বাসায় এসি আছে তার পরও হচ্ছে না? বাপের বাড়িতে কি আইসের মাঝে থাকতা কাপড়চোপড় পরে?’

আমি হ্যাঁ বা না কোনকিছু বললাম না আর। ব্লাউজ চেইঞ্জ করে ছয় ইঞ্চি উঁচু জুতা পরে রুম থেকে বের হবার আগে আসিফকে বললাম,

‘টু কোয়ার্টার প্যান্ট ছেড়ে গোছল করে এই পিচ কালারের পাঞ্জাবি আর কালো পাজামা পরে নিও। তোমাকে সুন্দর মানাবে ”

আমি কী না বলবো কথাটা, আসিফ তার পাশে থাকা সিগারেটের স্ট্রে টা ছুড়ে মারলো আমার দিকে ইশারা করে। তারপর বললো,

‘এই মেয়ে তোমার সমস্যা কোথায়? আমার লাইফ, আমার চয়েজ। এখানে তোমার ঢুকার তো অনুমতি আমি দেইনি। আমি কী পরবো, না পরবো অথবা আমি টু-কোয়ার্টার পরে থাকবো কিনা না এইটা আমার বিষয়। নেক্সট টাইম এসব নিয়ে কান ঝালাফালা করবা না আমার বলে দিলাম।’

আমার চোখের কোণে জল চলে এলো। আমি সেই জল আর কাওকে দেখালাম না৷ চলে এলাম রুম থেকে বের হয়ে। আমি যখন রান্নাঘরে যাবো, তার আগেই আমার ননদ তামান্নার রুম ক্রস করতে যাবো ঠিক তখনই খেয়াল করলাম সে কাকে যেনো বলছ

‘আরে বাবা আমার শরীর পাবা। সমস্যা কী? আর আসবো না আমি বলেছি? হ্যাঁ, বাসায় বলেছি যে আজ আমি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবো রাতে। রোজামাস। ভার্সিটি তো বন্ধ। বুঝতেই পারছো জান। একটু বুঝার ট্রাই করো। আজ রাতে তো তোমাকেই আমি সময় দিবো। আর হ্যাঁ, হোটেলের রুম সুন্দর তো? পরিপাটি আর সবকিছু সেইফ আছে তো? আমি আগে বলে রাখছি কিন্তু এসব ঠিকঠাক রাখা লাগবে….’

(চলবে)