#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃদিশা মনি
❝একটুর জন্য বেচে গেলাম❞
আলো হাফ ছেড়ে বাচে। বর্ষর দিকে তাকালে সে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। আলো সিটবেল্ট খোলার চেষ্টা করতে করতে বলে,
‘আপনি সত্যিই একটা খারাপ ড্রাইভার। আজ আরেকটু হলে কত বড় বিপদ হয়ে যেত। আমি আপনার গাড়িতে থাকার ভরসা পাচ্ছি না।’
‘চুপ করে বসে থাকো। আমার কথা না শুনলে তার ফল ভালো হবে না।’
আলো সিটবেল্ট খুলতে পারছিল না। বর্ষ তাকে সাহায্য করে। বর্ষকে নিজের এত কাছে আসতে দেখে আলো চোখ বন্ধ করে নেয়। তার কিরকম অন্যরকম অনূভুতি হচ্ছিল।
সিটবেল্ট খোলার পর বর্ষ বলে,
‘যদি সাহস থাকে গাড়ি থেকে নেমে দেখাও।’
আলো দোটানায় পড়ে যায়। বর্ষকে তার মোটেও সুবিধার লাগে না। না জানি এখন গাড়ি থেকে নেমে গেলে কোন বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।
‘কি হলো বসে আছো কেন? নেমে যাও।’
‘আপনি সাবধানে গাড়ি চালান এনগেজমেন্টের টাইম হয়ে যাচ্ছে।’
বর্ষ ক্রুর হেসে বলে,
‘যার এনগেজমেন্ট তার খবর নেই পাড়া পড়ছিস ঘুম নেই।’
৪৫.
‘এসব তুমি কি বলছ মম? তোমার মাথা ঠিক আছে তো? বর্ণর বদলে আমি হাউ ফানি। এটা কিভাবে সম্ভব?’
বর্ষর কথাটা শুনে সুমনা ভ্রু কুচকে তাকায়। তিনি বলেন,
‘আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা। হয় এক ঘন্টার মধ্যে বর্ণকে এখানে এনে হাজির কর আর নাহলে বর্ণর বদলে তুই এনগেজমেন্ট করে নে। এমনিতেও তোরা যমজ তাই কেউ বুঝতে পারবে না। চশমাটা খুললেই হবে।’
‘আমি ঐ এলিনাকে একদম পছন্দ করি না।’
‘এলিনাও কি তোকে পছন্দ করে না-কি? ও তো বর্ণকে পছন্দ করে। এখন তুই তো জানিস এখানে কত গেস্ট এসেছে। এনগেজমেন্টটা না হলে আমার সম্মান থাকবে না। তাই বলছি তুই বর্ণ সেজে এনগেজমেন্ট করে নে। তারপর বিয়েটা না হয় বর্ণর সাথে হবে।’
‘এরকম হয়না মম। আমি পারবো না এরকম ঠকবাজি করতে। প্লিজ আমাকে এসবের মাঝে জড়িও না।’
‘তোকে আমি এক ঘন্টা সময় দিয়েছি। এরমধ্যে হয় বর্ণকে নিয়ে আয় নাহলে নিজে বর্ণর গেট আপ নিয়ে এনগেজমেন্ট করে নে। যদি তা না করিস তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।’
‘এটা কিন্তু অন্যায় মম। তোমার আদরের ছেলে দোষ করবে আর তার ফল ভোগ করতে হবে আমায়।’
‘বর্ণ আসলে আমি ওকে দেখে নেবো। তুই এখন নিজের চিন্তা কর।’
কথাটা বলে সুমনা চলে যায়।
বর্ষ কি করবে বুঝতে পারে না। বর্ণকে বারবার কল করছে কিন্তু ফোন বন্ধ। বর্ষ পড়ে গেছে মহা ঝামেলায়। বিড়বিড় করে বলে,
‘এই বর্ণ মনে হয় এতক্ষণে ফ্লাইটে উঠে গেছে। নিজে চলে গিয়ে আমায় ফাসিয়ে দিল। ধুর ভাল্লাগে না।’
বর্ষকে এভাবে একা দাড়িয়ে বিড়বিড় করতে দেখে আলো। কাছে এসে বলে,
‘এত কি ভাবছেন স্যার? কোন সমস্যা?’
‘তোমায় বলে কি হবে তুমি কোন সলিউশন দিতে পারবে?’
‘পারলে পারতেও পারি।’
বর্ষ কিছুক্ষণ নিজের ভাবনায় মশগুল থাকে। তারপর এক এক করে আলোকে সব ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে আলোর মাথায় হাত উঠে যায়।
‘আপনার ভাই কেন এভাবে পালিয়ে গেল? বিয়ের সময় বউ পালানোর কথা শুনেছি। আজ প্রথম শুনলাম এনগেজমেন্টের সময় ছেলে পালায় হা হা হা। শহরের যত আজব কাহিনি।’
‘আমার এইরকম সিচুয়েশনে তুমি মজা করছ? হাউ ডেয়ার ইউ? কোন সলিউশন দিতে হলে দাও আর নাহলে চলে যাও।’
বর্ষর ধমকে আলো কেপে ওঠে। মনে মনে নিজেকে গালি দেয়।
‘এই রাগী লোকটার সাথে এভাবে কথা বলতে আসাই উচিৎ হয়নি।’
আলো ভাবতে থাকে এখন কি করা যায়। অনেক ভেবে একটা বুদ্ধি পায়।
‘শুনুন আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।’
‘কি বুদ্ধি?’
আলো বর্ষকে বুঝিয়ে বলে। আলোর কথা শুনে বর্ষ বলে,
‘বুদ্ধিটা কাজে লাগবে তো?’
‘হয়তোবা।’
‘ওয়েল আমি দেখছি। মেবি যদি তোমার বুদ্ধিটা কাজে লাগে তাহলে আমাকে ঐ এলিনার সাথে আংটি বদল করতে হবে না। মেয়েটা সবসময় আমাকে চাশমিশ বলে ক্ষেপায়। ইচ্ছে করে,,,,,’
বর্ষর কথা শুনে আলো খিলখিল করে হাসতে থাকে। বর্ষ আবারো ধমক দিয়ে বলে,
‘এত হাসার কি আছে?’
বর্ষর ধমক শুনে আলো সেখান থেকে গেস্টরুমের দিকে যেতে থাকে।
‘কি অকৃতজ্ঞ। আমি ওনাকে সাহায্য করলাম আর আমাকেই রাগ দেখাচ্ছে। আর জীবনে বেচে থাকতে ওনার কোন সাহায্য করবো না।’
বর্ষ ভাবে,
‘এই মেয়েটার সাথে বোধহয় বেশিই ফ্রি হয়ে যাচ্ছি। তাই এভাবে সাহস পাচ্ছে আমার সাথে এরকম করার। নাহ বর্ষ বি স্ট্রং। তোমাকে এরকম হলে চলবে না।’
৪৬.
আলোর মুখ থেকে সব কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে জোনাকি। আলো জোনাকি বর্ণর পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বলেছে। আলো সমানে এই বিষয়টা নিয়ে মজা করছে। জোনাকি ভাবছে অন্য কথা।
‘বর্ণ এত ছেলেমানুষ কেন বুঝিনা। আমার এখন খুব ভয় হয়। সুমনা ম্যাডাম আমাদের কত বিশ্বাস করে এখানে আশ্রয় দিয়েছে এখন না জানি বর্ণর কারণে কোন সমস্যার তৈরি হয়।’
জোনাকিকে গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে আলো প্রশ্ন করে,
‘কি এতো ভাবছিস আপু?’
‘কিছু না। আলো আমাদের মনে হয় এখন এখান থেকে যাওয়া উচিৎ।’
‘যাওয়া উচিৎ মানে? কোথায় যাব আমরা।’
‘দেখ আলো আমরা অনেকদিন থেকে এখানে আছি। এভাবে আর কতদিন। আমি দেখি কোথাও কোন বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় কিনা।’
‘এখানে থাকতে তোর কি কোন অসুবিধা হচ্ছে আপু?’
‘না রে আলো। আচ্ছা শোন তুই নে এই সালোয়ার টা পড়ে নে৷ আমি আজ আসার সময় তোর জন্য কিনে এনেছি। আজ বাড়িতে অনুষ্ঠান তুই এভাবে তো আর যেতে পারবি না। এই সালোয়ারটা পড়ে নে তোকে অনেক ভালো লাগবে।’
‘ধন্যবাদ আপু। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তুই নিজের জন্য কিচ্ছু আনিস নি?’
‘আমার আগের আছে। তাছাড়া এসব আমায় মানায় না। তুই সাজ তোকে অনেক ভালো মানাবে।’
আলো বুঝতে পারে সালোয়ারটা কিনতেই জোনাকির সব টাকা শেখার হয়ে গেছে তাই আর নিজের জন্য কিছু কিনতে পারে নি।
সুমনার খুব ভয় করছে। সব গেস্ট চলে এসেছে। এনগেজমেন্টের সময় প্রায় হয়ে এসেছে। বর্ণর এখনো কোন দেখা নেই। বর্ষও এখনো এলো না।
এলিনার মা এসে সুমনাকে জিজ্ঞেস করে,
‘বর্ণকে কে যে কোথাও দেখছি না৷ এনগেজমেন্টের টাইম তো হয়ে গেছে। ও কি আসবে না?’
‘আসবে। একটু তৈরি হচ্ছে। আজ এনগেজমেন্ট বলে কথা। এনগেজমেন্ট তো একবারই হয় তাই তো সবকিছু ১০০% পারফেক্ট হওয়া প্রয়োজন। ‘
‘ঠিক বলেছেন মিসেস মাহমুদ। আমার এলিনাকেও দেখুন কত সুন্দর পরির মতো লাগছে। বাই দা ওয়ে ঐ মেয়েটা কে? ঐ যে সালোয়ার কামিজ পড়া।’
সুমনা কিছু বলার আগেই জরিনা এসে বলে,
‘ও আমার ভাগ্নি। এনগেজমেন্টের কাজে হাতে হাতে সাহায্য করার জন্য নিয়ে এসেছি।’
‘আচ্ছা।’
সুমনা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেন। আলোর সম্পর্কে জানলে না জানি এরা কি ভাবতো।
এলিনার ভাই এরিকের লোলুপ দৃষ্টি আলোর দিকে। নিজের বন্ধুদেরকে বলে,
‘দেখছিস ঐ মেয়েটাকে? কি মা’ল রে। একে তো আমি বিছানায় শো’য়াবোই।’
‘এই মেয়ের মধ্যে কি দেখলি তুই এরিক?’
‘সি ইজ টু মাচ হ’ট।’
‘আমার তো মনে হয়না।’
‘তোরা কিছু বুঝিস নাকি।’
এরইমাঝে সবার মধ্যমনি হয়ে উপস্থিত হয় বর্ণ। এসে সবার সাথে ভালোভাবে কথা বলছিল। সুমনা ভাবেন,
‘দেখে তো বর্ণই মনে হচ্ছে। কিন্তু ও কি বর্ণ নাকি বর্ষ?’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨