বিবর্ণ আলোকবর্ষ পর্ব-২৪+২৫

0
260

#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃদিশা মনি

❝তাহলে এনগেজমেন্ট করে নেওয়া যাক।❞

সুমনার কথায় সবাই মনযোগ দেয়। আলো দূরে দাড়িয়ে ভাবছিল,
‘ব্যবহার, কথাবার্তা সবই বর্ণ মাহমুদের মতো কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে উনি বর্ষ স্যার।’

এলিনাকে নিয়ে আসা হয় সামনে। সুমনা বলে,
‘নে এবার এই রিংটা এলিনাকে পড়িয়ে দে বর্ণ।’

বর্ষ মুচকি হাসে। কেউ বোধহয় সন্দেহ করছে না যে সে বর্ষ। বর্ণকে এমনভাবে নকল করেছে যে কারো সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ ছিলনা। বর্ণর উপর খুব ক্ষেপে আছে সে। আজ শুধুমাত্র বর্ণর খামখেয়ালী পনার জন্য এই এলিনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এলিনাকে দুচোখে সহ্য করতে পারে না বর্ষ।

এলিনা বর্ষর দিকে তাকাচ্ছিল আর মিটিমিটি হাসছিল। বর্ষর ইচ্ছা করছিল এলিনার গালে ঠা’স করে একটা থা’প্পর মা’রতে। এইরকম বে’হায়া মেয়েকে তার একদম সহ্য হয়না। এলিনা বর্ষর কাছে এসে বলে,
‘হেই বর্ণ লং টাইম নো সি। কেমন আছো?’

‘ভালো।’

‘তোমার ঐ চাশমিশ হে’বলা ভাইকে তো কোথাও দেখছি না। কোথায় ও?’

নিজের নামে এরকম কথা শুনে বর্ষর চোখ রাগে লাল হয়ে যায়। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সবার সামনে এলিনার গালে থা’প্প’র মা’রে। এই আকস্মিক ঘটনায় সবাই হতবাক হয়ে যায়। আলো ঢোক গিলে বলে,
‘আমি তো বর্ষ স্যারকে বলেছিলাম অসুস্থ হওয়ার নাটক করতে। এটা উনি কি করলেন। আল্লাহ কি হবে এবার।’

বর্ষর হুশ ফেরে। রাগের মাথায় এ কি করে দিল সে। এখন কিভাবে সবকিছু সামলাবে সেটাই ভাবছে। এলিনা ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে। এরিক এসে বর্ষর কলার ধরে বলে,
‘হাউ ডেয়ার ইউ বর্ণ? কোন সাহসে আমার বোনের গায়ে হাত তুললে?’

এই ব্যবহারে বর্ষর রাগ আরো বেড়ে যায়। এরিককে ঠেলে সরিয়ে দেয়।

‘আমি বর্ণ নই বর্ষ। আমার ভাই তোমার বোনকে রিজেক্ট করে চলে গেছে।’

বর্ষ আর এক মুহুর্ত সেখানে দাড়ায় না। দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। পুরো ঘটনায় তাজ্জব বনে যায় সুমনা। এখন কিভাবে সবকিছু সামলাবেন সেটাই ভাবছেন। এলিনার মা বলেন,
‘এটা আপনি ঠিক করলেন না মিসেস মাহমুদ। আমার মেয়েকে এত বড় ইনসাল্ট।’

এরিক রাগে ফুসতে থাকে। প্রতিশোধস্পৃহার জন্ম নেয় তার অন্তরে। এলিনার ক্রন্দনরত মুখের দিকে তাকিয়ে শপথ করে,
‘বর্ণ আর বর্ষ মাহমুদকে তাদের উপযুক্ত শাস্তি আমি দেবো।’

৪৭.
গোটা বাড়ির পরিস্থিতি থমথমে। এনগেজমেন্টের ওখানে যা হলো তাতে পরিস্থিতি ঘোলাটে থেকে আরো বেশি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। বর্ষ রেগে বাড়ি থেকে চলে গেছে। সুমনাও নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে।

জরিনা আচমকা গেস্টরুমে প্রবেশ করে। আলো, জোনাকি দুজনে কেবলমাত্র খাবার খেয়ে রুমে এসেছে। জরিনা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তাদের দিকে। রেগে বলে,
‘তোমরা যে এমন কিছু একটা করবে সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম। এভাবে আ’গুন নিয়ে না খেললেও পারতে৷ পু’ড়তে কিন্তু তোমাদেরই হবে।’

জরিনার কথার কোন মানে খুঁজে পায়না তারা কেউ। আলো জিজ্ঞেস করে,
‘আপনি কিসের কথা বলছেন।’

জরিনা শান্ত হয়। সে জানে এই মেয়েগুলোর তেমন দো’ষ নেই। না চাইতেই তারা এরকম পরিস্থিতিতে আটকে গেছে। জরিনা নিজেও তো এমন ভুল করেছিল। নিজের ইতিহাস আজ অনেকদিন পর জরিনা মেলে ধরতে চায় এই মেয়েদুটোর সামনে। যাতে মেয়েগুলো সচেতন হতে পারে। সে যেই পথে পা বাড়িয়েছে সেই পথে যেন পা না বাড়ায়।

৪৮.
‘আমি জরিনা, এই বাড়ির ছোট মেয়ের সাথে একই স্কুলে পড়তাম, অনেক মেধাবী ছিলাম আমি। কিন্তু আমার পরিবার অনেক গরীব ছিল। আচমকা আমার আব্বুর মৃত্যুতে আমাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। আমরা সবাই দিশাহীন হয়ে যাই। আমার সব ভাইবোনেরা ছোট ছিল, তাই বাধ্য হয়ে আমি একটি বাড়িতে কাজের লোকের কাজ নেই। তখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়তাম। কিন্তু পরে আর পড়াশোনা চালাতে পারি নি। আমি যেই বাড়িতে কাজ নেই তারা অনেক ধনী ছিল। সেই বাড়ির দুই ছেলে ছিল। বড় ছেলে খুব অহংকারী আর দাম্ভীক ছিল, ছোট ছেলে ছিল খুব সহজ সরল। তার সরলতা আমায় মুগ্ধ করত। কখনো আমার সাথেকে কাজের লোকের মতো আচরণ করেনি। সবসময় আপনজনের মতোই দেখত। আর এই ব্যাপারটা আমাকে তার উপর দূর্বল করে দেয়। আমি ভালোবেসে ফেলি তাকে। সেও আমাকে পছন্দ করত, তার আচরণে ব্যাপারটা আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। বয়সটা আবেগের ছিল, তাই নিজের ভুল বুঝতে পারিনি। আমি একদিন তাকে জানিয়ে দেই নিজের মনের কথা। সেও খুশি হয়। শুরু হয় আমাদের নতুন সম্পর্ক। সবকিছু ভালোই চলছিল, একদিন হয়ে যায় বিপদ। উনি আমায় বললেন আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে চান। আমি তখন না করে দেই, এরপর কিছুদিন থেকে উনি আমায় উপেক্ষা করেন। যাতে আমার কিশোরী মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। একসময় থাকতে না পেরে আমি ওনার আবেদনে সাড়া দেই। একদিন রাতে চুপিসারে ওনার সাথে মিলিত হই। এভাবে দিন ভালোই যাচ্ছিল, আমার খুব কষ্ট হতো কিন্তু তবুও ওনার জন্য সব সহ্য করতাম। এরকমই একদিন ওনার বড় ভাইয়ের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে যাই আমরা৷ সেদিন উনি আমায় অনেক মেরেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম আমায় বের করে দেবে কিন্তু তা হয়নি৷ আমায় কাজে বহাল রাখা হয়। এমন কিছু হয়ে যায় যা আমার কল্পনাতীত। ওনার বিয়ে ঠিক হয়৷ আমি সেদিন অনেক কান্না করেছিলাম। ওনাকে বলেছিলাম বিয়েটা না করতে। কিন্তু উনি আমার কথা না শুনে বিয়ে করতে রাজি হন। কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যায়। চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এভাবে অন্য কারো হতে দেখে খুব খারাপ লাগে। তবুও আমি সব সহ্য করছিলাম। যেদিন ওনার স্ত্রী বাড়িতে থাকত না উনি আমার কাছে আসতেন। আমি কিছু মনে করতাম না। ভালোবাসায় এত অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে ভালোমন্দের বিচার ভুলে গিয়েছিলাম। এভাবে একসময় আমি গর্ভবতী হয়ে যাই৷ কথাটা ওনাকে জানানোর পর উনি বাচ্চা নষ্ট করতে বলেন, আমি রাজি না হলে আমার উপর অত্যাচার শুরু করেন। আমি এসব সহ্য করতে না পেরে আমার বান্ধবী মানে এই বাড়ির ছোট মেয়ে জ্যোতিকে জানাই। সে আমায় নিজের বাড়িতে চলে আসতে বলে। আমি সিদ্ধান্ত নেই চলে আসব। যেদিন আমি আসার চেষ্টা করে সেদিন ওরা দুইভাই মিলে আমায় পাকড়াও করে। ওরা ভেবেছিল আমি চলে গেলে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করব। তাই আমায় একটা ঘরে বন্দি করে রাখে। সেই সময়টা আমার কাছে জা’হান্নাম মনে হতো। প্রতিরাতে ওরা দুই ভাই আমার উপর অত্যাচার কর‍ত। আমি খুব করে চাইতাম সেখান থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু পারতাম না। একদিন সাহস করে জ্যোতির সাথে যোগাযোগ করি। জ্যোতি আমায় সাহায্য করবে বলে। দূর্ভাগ্যক্রমে ওরা এ ব্যাপারে জেনে যায়। সেদিন আমার উপর অনেক বেশি অত্যাচার নি’র্যাতন করে। আমি মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন জ্যোতি এসে গিয়েছিল বলে বেচে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাচ্চাটাকে বাচাতে পারিনি।’

জরিনার কথাগুলো শুনে আলো, জোনাকি দুজনেই খুব কষ্ট পায়। তারা জানতোই না যে তার জীবনে এরকম ভয়ংকর অতীত ছিল। সব বলার পর জোনাকি আবার বলে,
‘বড়লোকেরা কখনো গরীবদের ভালোবাসে না। শুধু তাদের সাথে খেলে। তাই আমি নিজের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে তোমাদের বলব আমার মতো ভুল করো না। চলে যাও দূরে। এইজন্যই আমি প্রথম থেকে তোমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম কারণ তোমাদের মাঝে আমি নিজের অতীতকে দেখেছিলাম।’

জোনাকি বলে ওঠে,
‘হ্যা আমরা আজই চলে যাবো, আলো রেডি হয়ে নে।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃদিশা মনি

জোনাকি ও আলো একসাথে বেরিয়ে পড়ে রুম থেকে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে এই বাড়িতে আর থাকবেনা। এই সিদ্ধান্তের আর কোন নড়চড় হবে না। যেই ভাবা সেই কাজ।

দুজনে যাওয়ার আগে সুমনার কাছে আসে। হাজার হোক তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। সুমনা জোনাকি আর আলোকে নিজের রুমে দেখে বলে,
‘তোমরা? একি তোমাদের হাতে ব্যাগ কেন? তোমরা কি কোথাও যাচ্ছ?’

জোনাকির চোখ ছলমল করছিল। সুমনা তাদের অনেক ভালোবাসা দিয়েছে। আজকালকার যুগে এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। উপকারীর অপকার করতে চায়না জন্যই তো এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

‘হ্যা আমরা চলে যাচ্ছি। আমরা আবার বাড়িতে ফিরে যাবো। আপনি এতদিন আমাদের এখানে আশ্রয় দিয়েছিলেন এজন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আল্লাহ আপনার সহায় হোক।’

সুমনার চোখে জল চলে আসে জোনাকির কথাটা শুনে।

‘এভাবে হঠাৎ চলে যাচ্ছ কেন? আর কিছুদিন থেকে যেতে পারতে।’

‘না আন্টি আমাদের যেতে হবে। আব্বু আমাদের ফিরে যেতে বলেছেন। আজকেই ফিরে যেতে চাই।’

সুমনা চোখের জল নিয়ে তাকায় আলোর দিকে। মেয়েটাকে দেখলে তার নিজের চাচাতো বোন জ্যোতির কথা মনে পড়তো। আজ মেয়েটা চলে যাবে ভেবে খারাপ লাগছে।

‘ঠিক আছে, যখন একবার ঠিক করে নিয়েছ চলে যাবে তখন আর আমি তোমাদের আটকাবো না।’

সুমনা আলমারী থেকে কিছু টাকা বের করে জোনাকির হাতে দিয়ে বলে,
‘এগুলো নিয়ে যাও কাজে লাগতে পারে।’

‘না আন্টি লাগবে না।’

‘আমি কোন কথা শুনব না। নিতে বলেছি চুপচাপ নিয়ে নাও। এমনি আমার মন মেজাজ ভালো নেই।’

‘ঠিক আছে নিলাম।’

এবার আলো আসে সুমনার সামনে।

‘ভালো থাকবেন আন্টি। নিজের খেয়াল রাখবেন।’

সুমনা আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

‘তুমিও ভালো থেকো আলো। জানো তোমার সাথে একজনের খুব মিল খুজে পাই আমি। যাইহোক আমি ড্রাইভারকে বলছি তোমাদের পৌছে দেবে।’

জোনাকি আপত্তি জানায়।

‘আমরা একাই চলে যেতে পারবো।’

‘একা কিভাবে যাবে? তোমাদের বাড়ি তো অনেকদূর সেই জামালপুরে।’

‘এখান থেকে সিএনজি নিয়ে যাব তারপর ট্রেন।’

‘সিএনজি নেওয়ার দরকার নেই। অন্তত রেলস্টেশন পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে যাও।’

‘ঠিক আছে।’

আলো আর জোনাকি সুমনার সাথে সালাম বিনিময় করে। দুজনে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। সুমনাও আসে তাদের পিছু পিছু।

জরিনা বাইরে দাড়িয়ে ছিল। আলো ও জোনাকিকে আসতে দেখে বলে,
‘তোমরা একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ। যাও দূরে চলে যাও এটাই তোমাদের জন্য ভালো হবে।’

আলো,জোনাকি গাড়িতে ওঠে। গাড়ির কাচ দিয়ে শেষবারের মতো সুমনাকে দেখে। সুমনা তাদের ইশারা করে টা টা বলে। গাড়ি স্টার্ট হয়। অবশেষে আলো, জোনাকির এই বাড়িতে থাকার মেয়াদ শেষ হয়।

৪৯.
আলো, জোনাকি চলে যাওয়ার পর জরিনা যায় গেস্টরুম পরিস্কার করতে। বিছানা পরিস্কার করার সময় বালিশের নিচে একটি ছবি দেখতে পায়। ছবিটা ভালোভাবে খেয়াল করার পর জরিনার বুক কেপে ওঠে। ক্ষীণস্বরে বলে,

‘জ্যোতি,,,’

বর্ষ অবশেষে সব অভিমান ভুলে বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে এসেই দেখতে পায় বর্ণ সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। বর্ণকে এভাবে আয়েসি ভঙ্গিতে শুয়ে থাকতে দেখে বর্ষর রাগ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বর্ণকে টেনে তুলে বলে,
‘আমাকে বিপদে ফেলে এখন এখানে শান্তিতে ঘুমানো হচ্ছে? তোর না বিদেশে থাকার কথা ছিল। এখানে কিভাবে এলি?’

বর্ণ হালকাভাবে ধা’ক্কা দিয়ে বর্ষকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। শার্ট ঝাড়া দিয়ে বলে,
‘আমি বিদেশে গেছি কখন বললাম? আমি তো শুধু এয়ারপোর্টে ছিলাম। এতই টেনশনে ছিলাম যে ফ্লাইটের টিকিটই কা’টার কথা মনে ছিলনা। ফ্লাইট উড়ান দিলে ভাবলাম আজকের রাতটা আর বাড়িতে ফেরার দরকার নেই। তাই একটা হোটেলে থাকলাম। এনগেজমেন্টটা তো ভেস্তে দেওয়া গেছে। তুই এতো রেগে আছিস কেন?’

‘রেগে থাকবোনা? তুই যে কাণ্ড করেছিস। তোর জন্য কাল মম আমায় এলিনার সাথে এনগেজমেন্ট করাতে চেয়েছিল।’

‘কিইইই!’

বর্ষ বর্ণকে গতকাল রাতের সব ঘটনা বলে। সব শুনে বর্ণ খিলখিল করে হাসতে থাকে। বর্ষ এতে ভীষণই রেগে যায়।

‘তোর লজ্জা করছে না এভাবে হাসতে?’

বর্ণ হাসি থামায়। কিছুক্ষণ গম্ভীর ভাব করে থেকে আবার হাসতে থাকে আর বলে,
‘তুই এই কাজটা একদম ঠিক করিস নি। এভাবে এতগুলো লোকের সামনে এলিকে থা’প্পর মে’রে দিলি।’

‘তোর যখন এতোই দরদ তোর এলির উপর তখন ওকে বিয়ে করে নিলেই তোর পারিস। এলিনাকে আমার একদম সহ্য হয়না।’

‘এভাবে বলছিস কেন? তুই জানিসনা আমার মনজুড়ে কার বাস। তুই তো জানিস বল আমার এই জীবনে আগে কখনো প্রেমে পড়িনি। কখনো পড়ব ভাবিও নি। জোনাকি আসার পর না জানি কিভাবে ও আমার মনে প্রেমের ফুল ফুটিয়ে দিল। বাগানের ফুলগুলো আমার খুব পছন্দ। ফুল ফুটতে দেখতে আমার দারুণ লাগে ঠিক সেরকমই দারুণ লেগেছিল জোনাকির জন্য নিজের মনে ফুল ফুটতে দেখতে।’

‘এতকিছু না করে মমকে সবকিছু বলে দিলেই হতো।’

‘আমি কিভাবে আম্মুকে সবকিছু বলতাম? আচ্ছা বাদ দে। আমার বুকটা ক’দিন থেকে খুব ব্যাথা করে। এই ব্যাথা কোন শারীরিক ব্যাথা না, ভালোবাসা না পাওয়ার ব্যাথা। যখন হার্টের সমস্যার জন্য ব্যাথা হতো তখন সেই ব্যাথা অনায়াসে সহ্য করে নিতাম। কিন্তু এখন যে ব্যাথা হচ্ছে সেটা কোনভাবেই সহ্য হচ্ছে না।’

৫০.
সুমনার মন খুব খারাপ ছিল। একে তো কাল এনগেজমেন্টের ওখানে যা হলো তার উপর জোনাকি, আলোর এভাবে চলে যাওয়ায় তার খুব খারাপ লাগছে।

আচমকা জরিনা তার রুমে চলে আসে। জরিনা কাদছিল। সুমনার কাছে এসে বলে,
‘ম্যাম এই দেখুন এটা কি।’

‘এটা,,,এটা তো জ্যোতির ছবি। আর এই ছবি তুমি কোথায় পেলে? চাচা তো জ্যোতি চলে যাওয়ার পর তার সব ছবি, জিনিসপত্র সব পু’ড়িয়ে দিয়েছিল।’

‘ভালো করে দেখুন ম্যাম এই ছবিতে জ্যোতি একটা ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আছে।’

‘এই ছবি তুমি কোথায় পেলে?’

‘গেস্টরুমে।’

সুমনার আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না।

‘তারমানে,,,,আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল। আলোর সাথে জ্যোতির মুখের এত মিল দেখেও আমি কেন বুঝলাম না? আগে যদি জানতাম তাহলে এভাবে ওদের যেতে দিতাম না। জ্যোতির সাথে দেখা করার একটা উপায় ছিল ওরা।’

জরিনা কেদে ফেলে। কাদতে কাদতে বলে,
‘সব দো’ষ আমার। শুধুমাত্র আমার জন্য মেয়েদুটো এভাবে চলে গেল।’

‘কি বলছ তুমি? তোমার দো’ষ কিভাবে?’

জরিনা সুমনাকে সবকিছু বলে। সব শুনে সুমনা হতভম্ব হয়ে যায়। তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিল না।

‘আম যাচ্ছি ওদের ফিরিয়ে আনতে। জ্যোতির সাথে আমাকে দেখা করতেই হবে।’

সুমনা দ্রুত পায়ে হেটে নিচতলায় চলে আসে। এসেই বর্ণ আর বর্ষর সাথে দেখা। বর্ণকে দেখে রে’গে বলে,
‘কোথায় গিয়েছিলি তুই? তোর জন্য কাল কত কি হয়ে গেল।’

বর্ণ মাথা নিচু করে ফেলে। বর্ষ জিজ্ঞেস করে,
‘তুমি এভাবে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছ?’

‘আলো-জোনাকিতে আটকাতে। তোরা জানিস ওরা আমার চাচাতো বোন জ্যোতির মেয়ে।’

‘কি বলছ তুমি মম? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’

‘বেশি কিছু বলার টাইম নেই। ওরা কমলাপুর রেলস্টেশনে চলে গেছে। যেকোনসময় ট্রেন চলে আসতে পারে। ওদেরকে আটকাতে হবে।’

বর্ণ আর বর্ষ সমস্বরে বলে ওঠে,
‘না,,,’

বর্ণ বলে,
‘তোমাকে যেতে হবে না আম্মু। আমরা যাচ্ছি ওদের ফিরিয়ে আনতে।’

বর্ণ আর বর্ষ একসাথে গাড়ি নিয়ে রওনা দেয়।

‘আরো জোরে চালা বর্ষ। আজ যদি জোনাকিকে হারিয়ে ফেলি তাহলে আমি আর বাচবোনা।’

বর্ষ যথাসম্ভব জোরে ড্রাইভ করছিল কিন্তু জ্যামে গাড়ি আটকে যায়। জ্যাম সেরে গেলে আবার গাড়ি চালায়।

কিছু দূর এগিয়ে আসার পর দেখে তাদের গাড়ি যেটাতে করে আলোরা এসেছিল সেটা দাড়িয়ে আসে। কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। আশেপাশে অনেক মানুষের ভিড়।

সামনে গিয়ে কয়েকজন মানুষকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে,
‘আজকাল যে কি দিনকাল পড়ল! দিনেদুপুরে ড্রাইভারকে মে’রে দুটো মেয়েকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেল।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨