বিবর্ণ বৈশাখে রংধনু পর্ব-১৪+১৫

0
188

#বিবর্ণ_বৈশাখে_রংধনু
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
পরিচিত মেয়েলি কণ্ঠে নিজের নাম শুনে সদর দরজার দিকে চেয়ে আরহান উৎফুল্ল স্বরে বলে ওঠে,
“আরে তোরা?”
“হ্যাঁ আমরা। কেন খুশি হোসনি?”
মেয়েটির কণ্ঠে অভিমান। আরহান ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“খুশি হব না কেন? তোরা আমার বাড়িতে যে কোন সময় আসতে পারিস। আমি সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি তাই জিজ্ঞাসা করেছি। ভেতরে আয়।”

সাফা, রাফাত, তন্নিরা ভেতরে এসে আয়েশা খানমকে সালাম দেন। আয়েশা খানম হাসি মুখে বলেন,
“কেমন আছো তোমরা?”

“এইতো দাদী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”

সাফার স্বতঃস্ফূর্ত জবাবে আয়েশা খানম মুচকি হাসেন। অতঃপর বলেন,
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বসো তোমরা।”

ওদেরকে বসতে বলে আয়েশা খানম রান্নাঘরের দিকে গেলেন সার্ভেন্টকে বলতে। এদিকে সাফা ঘুর ঘুর নজরে রুহানীকে দেখছে। সে বলে ওঠে,
“হাই আমি সাফা। সাফা ইসলাম। তুমি?”

সাফার কথার বিপরীতে রুহানী মুচকি হাসে। আরহান বলে ওঠে,
“ওর নাম রুহানী।”
“তোকে জিজ্ঞাসা করেছি? তুই কেন বলছিস? ওর নাম ও বলুক।”

কথাটা সাফা ভ্রুকুটি করেই বলল। আরহান জবাব দেয়,
“ও কথা বলতে পারে না।”

আরহানের মুখ থেকে রুহানীর সত্যটা শুনে সাফার কুঁচকানো ভ্রুঁ শিথিল হলো। সে নরম স্বরে বলল,
“সরি।”

রুহানী প্রতিবারের মতো একই প্রতিক্রিয়া দেখাল।

_________

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই রুহানী সোফায় বসে আছে তখন পায়ের কাছে কেউ নড়াচড়া করছে। পায়ে সুরসুরি অনুভূত করায় মাথা নুইয়ে দেখে বাচ্চা খোরগোশটা সোফার নিচে! রুহানীর ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে ওঠে। সে খোরগোশটাকে কোলে তুলে নিল। তারপর ওর সাথেই খেলতে লাগল।

আরহান তার বন্ধুদের জন্য কফি করে নিয়ে বাগানে যাচ্ছিল তখন রুহানীকে দেখে। সে রান্নাঘরে ফিরে গিয়ে ঝটপট ফ্ল্যাক্স থেকে গরম পানি, গুড়ো দুধ, চিনি, কফি পাউডার নিয়ে আরেক মগ কফি বানিয়ে ট্রে সহ ধীর পায়ে রুহানীর দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে বনিকে রুহানীর কোলে দেখে কিছুটা অবাক হলো। বনি তার সাথে রান্নাঘরে ছিল। ভেবেছে খেলছে কিন্তু সে দেখি রুহানীর কাছে চলে এসেছে! আরহান মুচকি হেসে বলল,

“মনে হচ্ছে বনির তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। তোমার কাছেই বারবার চলে আসছে।”

রুহানী মিষ্টি হেসে আরহানের দিকে একবার নজর বুলিয়ে বনির গায়ে হাত বুলাতে থাকে। আরহান এবার ওকে কফির অফার করে।

“চলো আমাদের সাথে কফি আড্ডায় যোগ দাও।”

কথাটা শুনে রুহানী প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালে আরহান হেসে বলে,
“চলো তো। বেশ মজা হবে। আমার ফ্রেন্ডগুলো যা ব*দ*মা*শ!”

রুহানী হালকা হেসে বনিকে নিয়ে সাথে চলল। বাগানে যেতেই রাইদা এসে আরহানের হাত থেকে ট্রেটা নিয়ে নিল। আরহানের পাশে রুহানীকে দেখে সাফার বুকের ভেতর কেমন কেমন করতে লাগল। সে নিজেকে শান্ত রেখে বলে,

“আসো রুহানী। আমাদের সাথে জয়েন হও।”

আরহান বলে,
“রুহানীর চাচিকে নিয়ে মনে হয় দাদী নিজের ঘরে রেস্ট করছেন। রুহানী একা বসে ছিল তাই আমাদের সাথে আসতে বললাম। বসো রুহানী। ”

রুহানী হালকা হেসে বসল। ওরা আড্ডা, হাসা-হাসি করছে। সাফা প্রচণ্ড হাসছে। সে হাসতে হাসতে আরহানের উপর বারবার পরেও যাচ্ছে। আরহান এবার মজা করেই বলে ওঠল,
“তুই একটু সোজা হয়ে বসতে জানিস না? এমন ব্যালেন্সে সমস্যা হলে প্লেন ব্যালেন্স কীভাবে করবি?”

কথাটা অন্যসব দিনের মতো সাফা সাধারণ ভাবে নিল না। তার ইগোতে লাগায় সে রাগ করে উঠে দাঁড়াল। অতঃপর বলল,
“যা আমি চলে যাচ্ছি। থাকব না এখানে। ”

সাফা সাথে সাথে গটগটিয়ে গেইটের দিকে হাঁটা ধরল। তন্নি বলে ওঠল,
“ওকে আটকা আরহান।”

“আরে বাদ দে। ওর রাগ কর্পূরের মতো। আজ বাদে কাল আবারও এমনটাই করবে। যেতে দে। আবার ঠিক হয়ে যাবে।”

কথাটা সাফাও শুনল। সে চোখ বন্ধ করে নাকের কাছে হাত দিয়ে কান্নার ধা*ক্কা আটকানোর চেষ্টা করল। অতঃপর পেছনে না ঘুরে সোজা হেঁটে গেইটের বাহিরে চলে গেল। রাফাত এবার আরহানকে বলল,

“ও এবার সত্যি সত্যি রাগ করল নাতো?”

“আরে ইয়ার, ওকে তুই চিনিস না? অতিরিক্ত আহ্লাদী। ঠিক হয়ে যাবে। তোরা কফি শেষ কর।”

আরহান নিজের মগে চুমুক দিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখল রুহানী কফি না খেয়ে গেইটের দিকেই চেয়ে আছে।
“তুমি খাচ্ছ না কেন? খাও। ওর কথা ভেবো না। কালকেই ঠিক হয়ে যাবে।”

রাইদা এতক্ষণ সবটা দেখে এবার বলল,
“দেখি কালকে। একটু পেছনে ঘুরে প্রতিবারের মতো বললও না।”

আরহান সবাইকে সাফার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে দেখে কিঞ্চিত বিরক্তি প্রকাশ করে বলে ওঠে,
“যা! তোরাও যা। আমি ঘুমাব। তোদের মতো দুঃখ প্রকাশ করতে টাইম নাই। সারাদিন বনিকে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি।”

রাফাত বলে,
“আরেহ তোরা দুটো একইরকম। এতো রাগিস কেন? তুই টায়ার্ড। রেস্ট কর।”

কিছুক্ষণ পর কফি খাওয়া শেষে টুকটাক আড্ডা শেষে আরহানের অন্য বন্ধুরাও চলে যায়। আরহান লক্ষ্য করে রুহানী বনিকে পরম যত্নে আগলে রেখেছে। আরহান বলে,

“তোমার খোরগোশ পছন্দ?”

রুহানী দৃষ্টি না সরিয়েই হ্যাঁ বোধক মাথা দুলায়।

“তাহলে আজ থেকে বনি তোমার।”

রুহানী তৎক্ষণাৎ হতভম্ব হয়ে আরহানের দিকে তাকায়। আরহান হালকা হেসে বলে,
“হ্যাঁ আমি সত্যি সত্যি বনিকে তোমায় দিচ্ছি। আমি বাসায় খুব একটা থাকি না। তখন সার্ভেন্ট ওদের খাবার দেয়। বনি এমনিতে খেতে চায় না। খুব জিদ্দি। খাবার হাত দিয়ে ধরে ধরে খাওয়াতে হয়। তুমি নিয়ে গেলে যত্নও হবে। আমি বাসায় থাকলেও ওকে খুব একটা সময় দিতে পারি না। নিবে তুমি?”

রুহানী কালক্ষেপন না করে দ্রুত সায় দেয়। আরহান বনিকে একবার কোলে নিয়ে আদর করে রুহানীর কোলে দিয়ে দেয়।

বিকেলের দিকে রুহানীরা আরহানদের বাড়ি থেকে ফিরে আসে। রুহানী নিজেই বনির জন্য নিজের ঘরেই থাকার জায়গা বানলো। যদিও জানে বনি ওখানে থাকবে না। কিন্তু সে ভীষণ খুশি।

_______

আজমল খান আরহানকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়েছে। আরহান আসলে তিনি বলেন,
“দেখো আমি তোমার শখ মেনে নিয়েছি। ২ বছরের মতো হচ্ছে তুমি পাইলট হয়ে জয়েন করেছ। গ্রাজুয়েশনের পরেই তোমাকে বলেছিলাম মাস্টার্সের জন্য লন্ডন যাও। কিন্তু শোনোনি। জেদ করে নিজেরটা করেছ। এবার তোমাকে শুনতে হবে। আমার শরীর আগের মতো কর্মঠ নেই যে মাঠেঘাটে দৌঁড়াব। আমি চাই তুমি এবার আমার কথাও শোনো। তুমি একজন বেটার পাইলট তা নিয়ে আমার সন্দেহ নেই কিন্তু আমার ব্যবসা, রাজ*নী*তি সবকিছুরও তোমায় হাল ধরতে হবে। আমি কতোদিন বাঁচি তা তো বলতে পারি না। তোমাকে সব বুঝিয়ে যেতে চাই। তুমি এখানকার কোনো ভার্সিটি থেকে মাস্টার্সটাও করে নাও।”

আরহান মৌন হয়ে সবটা শুনল। তারপর লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“পাইলটের জবটা ছেড়ে দিব বলছ? মায়ের মৃত্যুর পর তার স্বপ্নটাকে নিজের করেছিলাম। এখন বাবারটাও?”

আজমল খান ছেলের মুখাবয়বের দিকে নির্নিমেষ চেয়ে রইলেন। আরহানের গ্রাজুয়েশনের পরপর এটা নিয়ে ঝা*মেলা হয়েছিল। এখনও কি আরহান রাজি হবে না? মনে মনে প্রতিকূল চিন্তা করেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

#বিবর্ণ_বৈশাখে_রংধনু
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
আরহান তার বাবার মলিন মুখশ্রী অবলোকন করে মনে মনে হতাশ হলো। অবশেষে সে তার বাবার কথায় রাজি হয়েই গেল। আরহান নরম কণ্ঠে বলল,

“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি খবর নাও। আমি মাস্টার্সের জন্য এপ্লাই করব। কিন্তু এক মাস অন্তত আমাকে এসব নিয়ে ঝামেলা দেওয়া যাবে না। এক মাস পর আমি ভর্তি হবো নতুন সেসন যখন শুরু হবে তখন। এই একমাস আমার স্বপ্নের পথে উড়তে দাও।”

আরহান চলে গেলে আজমল খান মলিন দৃষ্টিতে ছেলের চলে যাওয়া দেখলেন। ছেলের কণ্ঠের বিষাদ তাকে স্পর্শ করেছে ঠিক কিন্তু সে কী করবে! একটাই ছেলে তার। তার কাজগুলোকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে ছেলেকেই তো লাগবে। আজমল খান দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের স্টাডি রুমে চলে যান।

______

সাফা রুম অন্ধকার করে বসে আছে। বারবার ফোনের স্ক্রিন অন করছে তারপর কিছু সময় পর আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাফার গালে অশ্রুধারার ছাঁপ। সে আপনমনে স্বগতোক্তি করে,

“কেন আরহান? কেন তুই আমায় ভালোবাসতে পারিস না? জাস্ট ফ্রেন্ডই ভেবে গেলি। আমি যে রাগ করে চলে এসেছি। একটা বারও কল করে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন বোধ করলি না? এতোটাই বিরিক্তিকর আমি? আমি যে দিন-রাত তোরই কথা ভাবি! একটু তো ভালোবেসে দেখ, আমি তোক তার তিনগুণ ফিরিয়ে দিব।”

আবারও নিরব কান্নায় ভেঙে পরে সে। কতোসময় এভাবে কাঁদল তার হিসেব নেই। তারপর রাত এগারোটার দিকে মায়ের ডাকে রুমের আলো জ্বালিয়ে হাত-মুখ ধোঁয়। সে কয়েকটা দিন ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসার কথা ভাবল।

________

আরও কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেছে। রুহানী প্রতিদিন ক্লাসে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ক্লাসের সবাই জেনে গেছে রুহানী কথা বলতে পারে না। প্রিন্সিপ্যাল স্যার নিজে এসে বলে গেছেন, যাতে রুহানীর সাথে কেউ কোনো খারাপ আচরণ না করে। রুহানীর সাথে একটা মেয়ের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। মেয়েটা রুহানীদের এড়িয়াতেই থাকে। মেয়েটা রুহানীর সাথেই ক্লাসে যায়। নাম তার কাজল।
আজ প্রচণ্ড গরম। প্রখর রোদের জন্য হাতের চামড়া পু*ড়ে যাওয়ার দশা! রুহানীর গাড়ি আজকে আগে আগে আসেনি। গাড়ির জন্য সে পাঁচ মিনিট যাবত কলেজের গেইটে অপেক্ষা করছে। সাথে কাজলও আছে। হঠাৎ পাশ থেকে গুটিকতক ছেলে রুহানীদের উদ্দেশ্যে বাক্য ছুড়ল,

“কী সুন্দরীরা? এই রোদের মধ্যে দাঁড়ায় আছো কেন?”(সিলেটি ভাষাকে বোঝার জন্য এভাবে লেখা)

রুহানী ও কাজল দুইজনেই বেশ ভয় পেয়ে যায়। কাজল এদেরকে চিনলেও রুহানী চিনে না। ওরা দুজনে সামনের দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু ছেলেগুলো আবারও ডেকে ওঠল,

“ও সুন্দরীরা, এদিকে আসো। কতক্ষণ রোদের মধ্যে দাঁড়ায় থাকবা? আসো তোমাদের পৌঁছে দেই।”

রুহানী কেঁপে ওঠে। এক হাতে কাজলের হাত শক্ত করে ধরে রেখে আরেক হাতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ড্রাইভার কতোদূর এলো জানতে কল করে কাজলের কানে দিল। কাজল ড্রাইভারের সাথে কথা বলে জানল আর দুই মিনিটের মতো লাগবে। রুহানী ও কাজল শুনতে পেল ছেলেগুলোর হাসি-তামাশা। দুইটা মিনিট কোনোরকমে পেরিয়ে গেলেই বাঁচে।

একটু পরেই ড্রাইভার এসে হাজির হলে রুহানীরা দ্রুত গাড়িতে উঠে পরে। গাড়িতে উঠে কাজল ভীত কণ্ঠে বলে,

“ওরা কিন্তু পিছু ছাড়বে না রুহি! আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র আপুর পেছনে হাত ধুঁয়ে পরেছিল। অনেক জ্বা*লিয়েছে। আমি তো এই কলেজ থেকেই এইচএসসি দিয়েছি তাই দেখেছি। তারপর ওদেরকে কয়েক মাসের জন্য সাসপেন্ড করেছিল। এখন তোর পেছনে পরেছে। সময় থাকতে আংকেলকে বলিস। তাহলে উনি অথারিটির সাথে কথা বলে রাখবে।”

রুহানী মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দিল। তারপর কাজলকে কাজলের বাড়ির রাস্তায় ছেড়ে রুহানী গাড়িতে করে চলে গেল।

_______

ফ্লাইটের আগে আরহান প্লেনের কাছে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে সাফাকে দেখে বেশ খুশি হলো। সে জিজ্ঞাসা করল,
“কী-রে? এতোদিন কোথায় ছিলি? ফোন করেছিলাম পাইনি। ওরা কেউই তোকে ফোনে পায়নি বলল। কী হয়েছিল?”

সাফা কয়েক সেকেন্ড পলক না ফেলে আরহানের দিকে চেয়ে রইল। আরহান ওর চোখের সামনে হাত নাড়ালে সাফার মুখাবয়বে কোনো পরিবর্তন লক্ষণীয় হলো না। কেমন ভাবলেশহীন মনোভাব তার।
আরহান আবার শুধায়,
“ঠিক আছিস তুই?”

“তা জেনে তুই কী করবি? আমার ফোন নট রিচেবল ছিল বলে কি একবারও আমার বাসায় গিয়ে খোঁজ নিয়েছিলি? নিসনি তো। রাইদা, তন্নি, রাফাত তো গিয়েছিল। আমি না থাকলেও মা ছিল। মা বলেছে।”

সাফার বলার পর আরহান বলে,
“ওরা তো গিয়েছে। তা শুনেছি। ওরা গিয়ে তোকে পায়নি। তোর অনুপুস্থিতিতে ওরা যাওয়া আর আমার যাওয়া তো একই কথা। তাই না?”

“হু।”

সাফা ছোটো করে জবাব দিয়ে চুপ করে গেল। আরহান তাকে ফ্রেন্ডের বাহিরে একটা শব্দও বেশি ভাবে না তা তার ধারনাতে চলে এসেছে। নিকষ কালো অম্বরে নিজের বিষাদময় নিঃশ্বাস ত্যগ করে মৌন রইল। যথাসময়ে দুজনে একই প্লেনে উঠার পর আরহান লক্ষ্য করল সাফা কেমন চুপচাপ হয়ে আছে। আরহান ভাবল, হয়তো রাগ করে আছে। তাই সাফাকে ডেকে বলল,
“দেখ, বাদ দে সেসব। আমার কাজ ছিল তাই যেতে পারিনি। এখন মন খারাপ করে থাকিস না।”
“হুম।”

ফ্লাইটের সময় হয়ে গেলে সকল ঘোষনা শেষে ওরা লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা করে।
…………

এগারো ঘণ্টা পর লন্ডন পৌঁছেছে আরহানরা। সবসময়ের মতো রেস্ট করতে হোটেলে নিজের রুমের চাবি নিয়ে রেস্ট করতে চলে গেছে আরহান। পেছন পেছন সাফা নিজের রুমের চাবি হাতে ধীরে ধীরে হাঁটছে। আরহান চোখের আড়াল হতেই সেও নিজের রুমে ঢুকে পরে।

পরেরদিন সকালে আরহানের বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙলো। উঠেই ফোনে সময় দেখে সাফার কোনো কল বা মেসেজ না দেখে বেশ অবাক হয়েছে। সাফার তো স্বভাব এটা। আরহান ভাবনা-চিন্তা রেখে ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে রুম লক করে বাইরে বেরোলো। হোটেল রিসিপশন থেকে জানতে পারল যে সাফা অনেক আগেই বেরিয়েছে। হঠাৎ সাফার ব্যাবহার আরহানের কাছে বেশ একটা সুবিধার লাগছে না। সেও সাফাকে খুঁজতে বের হলো।

_______

বিকেলে রুহানী টেরেসে বসে প্র্যাকটিকেল খাতায় চিত্র আঁকছে। আর অদূরে বনি খেলছে। জাহানারা শেখ পাকোড়ার প্লেট হাতে রুহানীর পাশে এসে বসল। তিনি বললেন,
“নিজে আজমল ভাই এসেছেন।”

রুহানী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইলে জাহানারা শেখ জবাব দেন,
“ওই কিছু কাজে। কথায় কথায় বললেন, তার ছেলে নাকি মাস্টার্সে ভর্তি হবে। পাইলটের জব ছেড়ে দিবে।”

রুহানী ইশারায় কারণ জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসে,
“বলেছে বাড়িতে তারা দুইজন থাকে। আর কতো ছেলে দেশ-বিদেশে ঘুরে বোরাবে? ছেলের বিয়ের কথাও ভাবছেন।”

রুহানী শেষোক্ত কথায় কিছু সময় নীরব চেয়ে থেকে আবারও নিজের কাজে মন দেয়। জাহানারা শেখ ওকে পাকোড়া খেতে বলে চলে যান।

____

আরহান সেই কাঙ্খিত জায়গাতেই সাফাকে পেয়ে গেল। লন্ডন টাওয়ারের পাশে টেমস নদীর তীরে বসে আছে সে। আরহান গিয়ে ওর পাশে বসে তাতেও সাফার কোনো হেলদোল নেই। কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আরহান নিজ থেকেই জিজ্ঞাসা করল,

“কী হয়েছে তোর? আজকে আমাকে না ডেকে একা একা বেরিয়েছিস?”

সাফা এবার আরহানের দিকে ঘুরে বসল। অতঃপর আরহানের হাত দুটো ধরলো। আরহান একবার সাফার দিকে তাকায় তো একবার ধরে থাকা হাতের দিকে। সাফা কিছুটা সময় মৌন থেকে তারপর হুট করে বলে ওঠে,

“আই লাভ ইউ আরহান!”

সাফার কথা শুনে আরহান যেন আকাশ থেকে পরল! চট করে সাফার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। কন্ঠে একরাশ বিস্ময় নিয়ে শুধালো,

“মানে!”

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।