বিয়ে পর্ব-২৭

0
707

#বিয়ে
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২৭

ধ্রুব এসব ঠাট্টা শুনে রেগে যায়। মেয়েটা বাড়িতে পা রাখার আগেই ট্রিপিক্যাল ফালতু কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছে। ও রাগী গলায় বলে ওঠে,
— আপনাদের ঘর আলোকিত হয়েছে তো? তাতেই চলবে। আমার বউ কখন আমার ঘর আলোকিত
করবে সেসব আমিই বুঝবো। আপনাদের ভাবতে
হবে না।
শায়লা ছেলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ, লাগামহীন কথাবার্তা শুনে ধমকে ছেলেকে থামিয়ে দেয়। আর সব মহিলারা ধ্রুব’র সমালোচনা শুরু করে। বিদেশে বড় হয়ে এমন বেয়াদব হয়েছে বলতে থাকে ওকে। এর মধ্যে আদিবার বিয়ে খেতে আসা অনেক আত্মীয়রাও ছিলো। তবে ধ্রুব সেসব কথায় পাত্তা দেয় না। গ্রামের অধিকাংশ মুরুব্বি গোছের মানুষের কাছে উচিৎ কথা মানেই বেয়াদবি কথাবার্তা। অদ্রি আর ফ্লোরা একে-অপরের হাত জড়িয়ে শুধু সকলের বিবাদ দেখতে থাকে।

বাড়ির কর্তা আঁইয়ুব আলী তার ছোট দুই ভাই নিয়ে মসজিদে গিয়েছিলেন নামাজ পড়তে। পড়া শেষ করতেই তার ভৃত্য মতি এসে খবর দেয় নতুন বউ নিয়ে শায়লারা ফুফুরা এসেছেন। খবর পেয়ে দেরি করলেন না তিনি। ছোট ভাইদের নিয়ে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলেন তিনি। মতিকে পাঠালেন বাজারে। বোনের পরিবারকে বহুদিন পর দেখার আনন্দে তিনি বাড়িতে পা রাখতেই দেখলেন আশেপাশের কয়েক বাড়ির প্রতিবেশীরা ভিড় জমিয়েছেন উঠোনে। বউ দেখতে এসেছেন তারা। আঁইয়ুব আলীর কপালে ভাঁজ পড়লো। তিনি হাঁকডাক দিতেই মহিলারা যে যার মতো সরে পড়লো। কখন আবার কাকে ধমকে ওঠেন সেই ভয়ে কেউ আর দাঁড়িয়ে থাকার সাহস পেলো না। ভাইদের দেখে শায়লা প্রায় ছুটেই গেলো। অভিমান, অভিযোগ নিয়ে কথাবার্তায় মেতে ওঠলো। ধ্রুব এগিয়ে গেলো আঁইয়ুব আলীর দিকে। তিনি ভাগ্নেকে দেখে সহাস্যে এগিয়ে এসে বুকে টেনে নিলেন। বললেন,
— এতদিনে আসার সময় হইলো? বিয়ে করে তো ব্যাটা আগের চেয়ে লম্বা হয়ে গেছিস!
ধ্রুব’র বিরক্তি ভাব কাটলো। হেসে ফেললো কথা শুনে। আঁইয়ুব আলী সবসময় এ ধরনের কথাবার্তা বলতেই থাকে। ধ্রুব হেসে বলল,
— কিন্তু তুমি তো আগের মতোই আছো দেখছি। এখনো খ্যাঁকখ্যাঁক করা স্বভাব পাল্টাও নি?
আঁইয়ুব আলী গর্ব করে বললেন,
— নিজেরে পাল্টানো অত সোজা না। যাইহোক, বৌমা কই?
ধ্রুব অদ্রিকে পরিচয় করিয়ে দিলো আঁইয়ুব আলীর সাথে। অদ্রি ভদ্রভাবে সালাম দিলো তাঁকে। তিনি শহুরে বউয়ের আদবকায়দা দেখে খুশি হয়ে মাশাল্লাহ বললেন। এরপর পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা খাম বের করে অদ্রির হাতে দিলেন। ও কিছুই বুঝতে পারলো না, খামটা হাতে নিয়ে ধ্রুব’র দিকে তাকালে ও ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
— আমি দিইনি। যে দিয়েছে তাকেই জিজ্ঞেস করো।
ওর উঁচু স্বরে বলা কথা শুনে অদ্রি বিব্রত হলো। আঁইয়ুব আলী অদ্রিকে হাসতে হাসতে বললেন,
— নতুন বউয়ের মুখ দেইখা কিছু তো দিতে হয় নাকি!
ধ্রুব ফোড়ন কেটে বলল,
— ও বোধহয় খাম নিতে চায় না।
অদ্রির মুখ অপমানে লাল হয়ে ওঠলো। জ্বলন্ত চোখে তাকালো ওর দিকে। এই কথাটা আঁইয়ুব আলীর সামনে বলার কি দরকার? ওকে হ্যানস্তা করার ইচ্ছে। অদ্রি দ্রুত মাথা নেড়ে বলল,
— না না, একদম না।
আঁইয়ুব আলী দুজনের কান্ড দেখে হেসে চলে যান।
ধ্রুব অদ্রির কানে কানে ফিসফিস আওয়াজে বলল,
— সবসময় তো দেওয়ার অভ্যেস, নিতে কেমন লাগে এবার দেখো।
অদ্রি বলল,
— দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। এটা ওনি ভালোবেসে দিয়েছেন।

ধ্রুব চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে। অদ্রির প্রতি রাগ জন্মে, কড়া কিছু বলতে ইচ্ছে হয় কিন্তু বলে না। পুরোনো আমলের দোতলা বাড়ি। সামনে-পেছনে বড় উঠান, এককোণে বাঁশঝাড় উঁকি দিচ্ছে। দক্ষিণ দিকে দোচালা এক টিনের ঘর। দু’দিন পর বাড়িতে বিয়ে। সেজন্য কেমন বিয়ে বাড়ির একটা রেশ লেগে আছে। আঁধার নেমে আসায় এরবেশি আর কিছুই অদ্রির গোচরে এলো না। বরণটরণ শেষে সকলকে সরিয়ে ওদেরকে নিয়ে আসা হলো বাড়ির ড্রইংরুমে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সোফাতে বসে একটু স্বস্তি অনুভব করলো অদ্রি। চারদিকে মৃদু কোলাহল শোনা যাচ্ছে। সকলের হৈ-হল্লার মধ্যেই শরবত, নানা পদের মিষ্টান্ন নিয়ে এলো ঐশী, নাফি, মিহির। ঝি-বুয়ারা এসে সবার লাগেজ, ব্যাগপত্র নিয়ে যায়। বাড়ির মেয়ে-বৌ, বাচ্চারা দারুণ উত্তেজিত। একপর্যায়ে ধ্রুব তার বড় মামানিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,
— নানু কোথায়? দেখতে পাচ্ছি না যে?
বড়বউ বলল,
— আম্মা তো ঘরে, পায়ে ব্যথা। আদিবা তেল মালিশ করছে। নাতবউ দেখার জন্য সেই কখন থেইকা বইসা আছে।
ধ্রুব ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— ওহ! তোমাদের আর কোনো রিচুয়ালস বাকি আছে? আমি একটু টায়ার্ড…
বড়বউ হেসে বললেন,
— না আব্বা, আর কোনো নিয়ম নাই। কিন্তু নতুন বউ নিয়া যখন আসছো তখন বউরে নিয়াই যাও। আমি যাই, রান্নাঘরে অনেক কাজ…
কথাগুলো বলে তিনি বাকিদের নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন। শায়লাও রুখসাত জাহানকে নিয়ে চেনাজানা অনেকের সাথে কথাবার্তা বলছেন। সবাইকে জিজ্ঞেস করছেন তার বৌমা কম মেয়েকে কেমন দেখলো তারা। সবাই মোটামুটি প্রশংসা করছে।
ফ্লোরা, অদ্রি নতুন পরিবেশে চুপচাপ বসে রইলো। এরপর কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ নয় সেটা এখনো তাদের বোধগম্য হয়নি। ধ্রুব খানিকক্ষণ বসে থেকে এবার ওঠে দাঁড়ায়। উদ্দেশ্য দো-তলায় নানুর সাথে দেখা করতে যাবে। অদ্রিকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো ওর সাথে যেতে চায় কি-না? এভাবে সকলের সামনে ইশারা করায় অদ্রি বেশ লজ্জা পেলো। বুঝতে পারলো না কি উত্তর দেবে। এতো মানুষের সামনে দিয়ে এভাবে চলে যাওয়াটা বড্ড বেমানান। অদ্রি চায় না ওকেও কেউ বেয়াদব ভাবুক বা মজা নিক। সেজন্য ও ধ্রুবকে ফিসফিসিয়ে বলল,
— আপনার সাথে যাবো না আমি।
ধ্রুব এক মুহূর্ত ওর দিকে তাকিয়ে থেকে রাগী
গলায় বলল,
— কাউকেই তো চেনো না, আবার এটিটিউড দেখাচ্ছো! এদের পাল্লায় পড়ে অবস্থা তো এখনই নাজেহাল। আর কিছুক্ষণ থাকলে কেমন অবস্থা হয় দেখার আশায় রইলাম।
বলে ধ্রুব গটগটিয়ে হেঁটে ওপরে চলে যেতে উদ্যত হলে ফ্লোরা ব্যস্ত কন্ঠে অদ্রিকে বলল,
— ভেতরে কত মানুষ দেখেছো? এমনিতেই অ্যাম্বারেসড ফিল করছো! এখানে বসে থেকে কোনো লাভ নেই।
অদ্রিও এবার ভেবে দেখলো এখানে বসে থেকে লাভ নেই। তাছাড়া তেমন কাউকে চেনেও না। ও ইতস্তত করে ওঠে দাঁড়ালো। এরপর ধীরপায়ে ধ্রুবর পেছনে হাঁটা ধরলো। হাঁটার শব্দ পেয়ে ধ্রুব পিছু ফিরে তাকায়। ততক্ষণে ওরা সিঁড়ির সামনে পৌঁছে গেছে। ধ্রুব অদ্রির দিকে কুটিল চোখে তাকায় এবার। তাচ্ছিল্য করে বলে,
— আমার পেছনে কি?
অদ্রি ভ্রু কুঁচকে উত্তর দেয়,
— আমি কাউকে চিনি নাকি? সেজন্যই আসছি। আপনার কথা শুনে আসিনি। তাছাড়া আপনার নানুকেও দেখার ভীষণ ইচ্ছে।
ধ্রুব বলল,
— আমার কথা শুনে যখন আসো নি, তখন আমার
পিছু আসবে না। গট ইট?
— নো।
ধ্রুব’র হাতে তার ভাঁজ কর স্যুট। এবার সে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো রেলিঙে। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
— তোমার মনে হচ্ছে না বাড়াবাড়ি করছো?
অদ্রি তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
— আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেন? একটা সাধারণ ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিচ্ছেন।
ধ্রুব দু’চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এরপর বলল,
— তুমি আমার সাথে যেতে চাও। এটা যতক্ষণ না
স্বীকার করবে ততক্ষণ আশেপাশেও ঘেঁষবে না আমার।

ওর দৃঢ় কন্ঠস্বর শুনে অদ্রি থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। ধ্রুবও নড়লো না। ওদের দু’জনকে এভাবে দেখে দূর থেকে নাফি, ঐশীরা হাসাহাসি শুরু করলো। ব্যাপারটা অদ্রি খেয়াল করলো। কিন্তু ধ্রুব ওদের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই ওদের মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। ও চায় না অদ্রি কারোর সামনে বিব্রত হোক, আর এটাও জানে মেয়েটা মুখফুটে কখনোই স্বীকার করবে না যে ওর সাথে যেতে চায়। সেজন্য ও নিজেই অদ্রির হাত ধরে যেতে উদ্যত হলো। অদ্রি কিছুটা অবাক হয়েই বলল,
— আমি তো আপনার কথা শুনি নি, তাহলে…
ধ্রুব ঝাঁঝালো স্বরে বলল,
— বিয়ে করেছি না তোমাকে, সব রেসপনসেবলিটি তো আমার। তোমার কাজ তো শুধু জেদ দেখানো!
অদ্রি এবার অভিমানী সুরেই বলল,
— আপনি সবসময় আমাকে দোষারোপ করেন কেন?
— এছাড়া আর কি করবো, তুমি তো আর গলবে না..
ধ্রুব’র অভিযোগ শুনে অদ্রির একটু হাসি পায়। লোকটা আসলেই অন্যরকম। অদ্রি ওকে কত কথা বলে, এরপরেও সে নিজের কাঁধেই সব নিয়ে নিতে চায়। অদ্রি জানে না ভালোবাসার অনুভূতি কি বা কেমন! তবে এটুকু আন্দাজ করতে পারে অদ্রির প্রতি নিজের কর্তব্যগুলো পালন করা থেকে এক চুল পরিমাণ পিছু হটতে নারাজ লোকটা। ধ্রুব ততক্ষণে তার নানু রোকেয়ার ঘরের সামনে পৌঁছে যায়। ধ্রুব হালকা।
কেশে তারপর দরজায় টোকা দেয়। অনুমতি নেওয়ার জন্য বলে,
— আসবো?
পরক্ষণেই ভেতর থেকে উত্তর আসে,
— এসো।
অনুমতি পেয়ে শক্ত হাতে দরজা ঠেলে, সাদা পর্দা সরিয়ে অদ্রিকে নিয়ে ভেতরে ঢোকে সে। অদ্রির কেমন অস্বস্তি হতে থাকে। ঘরটি বেশ বড় আর খোলামেলা।পুরোনো আমলের সব আসবাবপত্র। তবে আভিজাত্যপূর্ণ। কালো রঙের একটি পালঙ্কে হেলান দিয়ে বসে আছেন ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধা। তার পায়ের কাছে বসে তেল মালিশ করছে আদিবা। বাড়ির বড় নাতনি, কাল বাদে পরশুই তার বিয়ে। ধ্রুব আর অদ্রিকে দেখে সে নিজের মাথায় ঘোমটা টেনে এগিয়ে আসে। কুশল বিনিময় করে, ধ্রুব ওকে অদ্রির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। অদ্রিও হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ওর সাথে পরিচিত হয়। নতুন কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে বৃদ্ধা মহিলাটি একটু অবাক হয়েই চেয়ে থাকেন ওদের দিকে। চোখে সমস্যা থাকায় প্রথমেক ঠিকঠাক চিনতে পারলেন না। কিয়ৎক্ষণ পরেই তিনি সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞেস করেন,
— কে রে? কালাচাঁনের মতো লাগে দেহি!
ধ্রুব’র মুখের হাসি হাসি ভাবটা মুহূর্তেই হারিয়ে যায়। ও গোমড়ামুখে এগিয়ে যায় রোকেয়া বেগমের দিকে। পাশে বসে হাতটি নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে,
— প্লিজ, এই উদ্ভট নামে ডেকো না তো আমায়।
রোকেয়া বেগম হি হি করে হেসে ফেলেন,
— ঠিকই চিনছিলাম। এতোদিনে তোমার সময় হইছে
এই বুড়িরে দেখবার লাগি?
ধ্রুব রুক্ষ স্বরে বলল,
— অফিসে প্রচুর চাপ ছিলো…
রোকেয়া বেগম বললেন,
— হইছে আর অজুহাত দিও না ভাই। আমার নাতবউ কই? কহন থেইকা বইয়া আছি…
অদ্রিকে নিয়ে আসে আদিবা। পালঙ্কের পাশে একটা টুল আছে, অদ্রি সেখানেই বসে পড়ে। সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কেমন আছেন নানু?
রোকেয়া বেগম ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে বললেন,
— তোমারে দেইখা এখন আরো ভাল্লাগতাসে গো বউ। মাশাল্লাহ একটা পরী পাঠাইসে আল্লাহ আমার কালাচাঁনের লাগি!
অদ্রি ফিক করে হেসে ফেললো নাম শুনে। ধ্রুব রক্তিম চোখে তাকালো ওর দিকে। আদিবাও হাসছে। ধ্রুব ধমকে ওকে চুপ করিয়ে দিলো, কিন্তু অদ্রি নিজের হাসি থামাতে ব্যর্থ হলো। ধ্রুব হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলো। এরকম প্রাণখোলা অদ্রিকে সে আজ নতুন দেখছে!

রাতেরবেলা ভূরিভোজন হলো একপ্রকার। ধ্রুব জ্বরের জন্য কোনো পদই মনমতো খেতে পারলো না। তার ওপর ঐশী, মিহিরদের ঠাট্টায় রাগ হচ্ছিলো ওর। অদ্রিও ওদের কথা শুনে হাসছিলো। সারাদিন পর জ্বরটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠলো ধ্রুব’র। চোখদুটো জ্বলতে লাগলো। একপর্যায়ে ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা চালালো। কিন্তু আচমকা তখনি বিদ্যুৎ চলে গেলো। একপর্যায়ে ধ্রুব’র ভীষণ গরম লাগতে শুরু করলো। পরণের শার্ট খুলে
ফেললো। ঔষধ, ব্যাগপত্রের কোনো হদিস পেলো না। ঘরে পানি নেই, এদিকে ধ্রুব’র গলা শুকিয়ে কাঠ। জ্বর ক্রমেই বাড়তে লাগলো। ওভাবেই মাথাযন্ত্রণা নিয়ে
শুয়ে রইলো। বহুক্ষণ পর, কে যেন এসে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ধ্রুব শব্দ শুনে চোখ খুললো। মোমবাতি হাতে ঘরে ঢোকা মানবীটাকে সে চিনতে পারলো। জ্বরের ঘোরেই বলল,
— এসেছো? আমার কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না…
অদ্রি মোমবাতিটা একটা স্ট্যান্ডের ওপর রেখে দরজা ভিড়িয়ে বেরিয়ে গেলো। কয়েক মিনিট পরই আবার ফিরে এলো হাতে কিছু নিয়ে। সন্তপর্ণে ধ্রুব’র কাছে গিয়ে বসলো। কপালে হাত রেখে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করে বলল,
— জ্বর বেড়েছে, ঔষধ এনেছি। নিন…
ধ্রুব মিটিমিটি করে চাইলো। খানিকটা অবাক হয়েই বলল,
— তুমি জানো?
অদ্রি ওর প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
— আপনি দেখি আমার থেকেও বেশি জেদি, কেন বললেন না তখন আপনার অসুখ? এতোটা পথ এই শরীর নিয়ে ড্রাইভ করে এলেন। এখন আন্টি শুনলে কতোটা কষ্ট পাবে বলুন তো?
ধ্রুব ধীর স্বরে বলল,
— মা’কে বলো না, অহেতুক চিন্তা করবে।
অদ্রি এবার ধারালো গলায় বলল,
— উঠুন তো আপনি৷ মাথায় পানি দিতে হবে।জলপট্টিতে দ্রুত কমবে না…
ধ্রুব মোমের আলোয় দেখলো অদ্রিকে। কি স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে! ধ্রুব গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— তোমার লজ্জা লাগছে না আমাকে এভাবে দেখে?
অদ্রি জোরালো কন্ঠে বলল,
— লজ্জা লাগার কি আছে? অসুস্থ মানুষ দেখে লজ্জা পায় নাকি কেউ? উঠুন তো, বাজে বকা বাদ দিয়ে।
ধ্রুব ওঠে বসলো। ওর চোখ জ্বলজ্বল করছে। ভ্রু কুঞ্চন করে অদ্রির গাল ছুঁয়ে বলল,
— তোমাকে এতো চমৎকার লাগছে কেন? তুমি এতদিন আমার সেবা করোনি কেন? তোমার নরম হাতের ছোঁয়ায় আমি সুস্থ হয়ে যেতাম।
অদ্রি শিউরে ওঠলো। হাত সরিয়ে এবার ধমকে
ওঠলো,
— কি আবোলতাবোল কথাবার্তা। জ্বরের ঘোরে পাগল হয়ে গেলেন নাকি?
ধ্রুব ওর কথায় কর্ণপাত করলো না। বিরামহীন কথা চলতেই লাগলো। মোহগ্রস্ত কন্ঠে বলল,
— তোমাকে দেখে আমি সত্যিই এখন দিনদুনিয়া ভুলে যাই। এই সত্যটা স্বীকার করলে মা আমাকে যা বলবে তাই করতে হবে, শর্ত ছিলো। আমি এই চ্যালেঞ্জে কবেই হেরে গেছি অদ্রি। আচ্ছা মা-কি তোমার সাথে আবার আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে? এবার আমি একটুও রেগে থাকবো না প্রমিজ, তুমিও সব ঠিকঠাক করে নেবে। হুম….
অদ্রি ওর হাতে ঔষধ আর পানির গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল,
— আগে ঔষধ খান। পরে এসব বাজে কথার
আলোচনা হবে।
ধ্রুব নাছোড়বান্দা,
— উহু, বাজে কথা নয়। তুমি বসো…
অদ্রি এবার ধমকে ওঠলো,
— আন্টি ঠিকই বলেছিলো। কিন্তু আপনি গ্রামে এসেই
যে পাগল হয়ে যাবেন ভাবিনি…

[অনেক বড় পর্ব ছিলো, পড়ার সুবিধার্থে এতটুকু দিলাম। বাকি অংশ পরবর্তীতে পাবেন ইনশাআল্লাহ। রাহাতের পার্টও আসবে।]

চলবে….