বিরোধীদলীয় প্রেম
পর্ব – ১৬
আফরোজা আক্তার
[দয়া করে কেউ কপি করবেন না]
ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে একা ভীষণ ভয় করছে মাহার। এর আগে কখনো সে এত অন্ধকারে থাকেনি। বার কয়েক ডেকেছিল ফিরোজকে। কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দেয়নি। এত বড় ষড়যন্ত্রের শিকার সে হবে আগে ভাবেনি। একা একা কাঁদছে আর কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই করনীয় নেই তার। চোখের সামনে ফিরোজের কুৎসিত চেহারা আর তার হাতে থাকা ধারালো ছুরিটা ভাসছে। ফিরোজ যে তার ভার্সিটির সিনিয়র আর সে যে সা’দের প্রতিদ্বন্দ্বি এটা সে জানত না। কখনো সেভাবে ফিরোজকে দেখেনি ক্যাম্পাসে। সা’দের প্রতি ঘৃণাই তার সর্বনাশের কারণ। ওই বাড়ির কী অবস্থা, নিজের বাবার বাড়ির কী অবস্থা, বিশেষ করে সা’দের কী অবস্থা? সা’দ কি জানতে পেরেছে যে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। এসব ভাবতেই আরও কান্না করছে মাহা।
দরজা খোলার শব্দে কান্না থামায় মাহা। চোখ মুছে উঠে বসে সে। গোলাকৃতির সেই আলোটা আবারও চোখের সামনে পড়ে। আলোটা চোখের সামনে পড়তেই দুই হাতে মুখ ঢাকে মাহা। ঘরে ঢুকেই ফিরোজ হাসে। শয়তানি হাসি মিশ্রিত কন্ঠে বলে, ‘সুইটহার্ট, কান্নাকাটি করে কোনো লাভ হবে না। তুমি যাকে ভেবে কাঁদছো সে তোমাকে খুঁজে বের করার আগেই তোমাকে তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। যখন তার কাছে পৌঁছবে তখন তুমি আর তুমি থাকবে না। তুমি লাশ হয়ে যাবে।’
ফিরোজের কথা শুনে মাহার কান্না আরও থেমে যায়। চোখে তখন পানির সঙ্গে আগুন জ্বলে। দাঁত মুখ খিচে ফিরোজের দিকে তাকায় সে। এরপর একদলা থুতু ফিরোজের দিকে নিক্ষেপ করে বলে, ‘দোয়া কর যাতে তুই আমার লাশটা ঠিকঠাক মতো সা’দের কাছে পাঠাতে পারিস। আর তার আগে যদি সা’দ আমাকে খুঁজে বের করে তাহলে মনে করবি তোর দিন শেষ।’
মাহার থুতু ফিরোজের মুখ বরাবর পড়ে। হাত দিয়ে সেই থুতু মুছে মাহাকে দ্বিতীয়বারের মতো আবারও চড় মারে। তবে এবারের চড়ের গতি বেশ জোরেই ছিল। মাহার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হয়। মাহা রাগে দুঃখে চিৎকার করে দেয়, আর তখনই ফিরোজ মাহার গলায় চাপ দিয়ে ধরে। এত মা’র মাহা আগে কখনো খেয়েছে বলে মনে হয় না তার। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল মাহার। ফিরোজ এবার চেঁচিয়ে বলে, ‘এবার চিৎকার কর। গলা বেশি বড় হয়ে গেছে না। কর এবার চিৎকার। মা**** ডাক তোর জামাইকে। একদম মেরে ফেলব। নিজের জামাইকে যখন দেখতে পারিস না তখন সে মরল কি বাঁচল তাতে তোর কী আসে যায়। তোকে মেরেই ওকে আমি শিক্ষা দিব। আমার সঙ্গে যখন মেলামেশা করেছিলি তখন একবারের জন্যেও ভাবিসনি যে আমি এতটাও ভদ্র না যে তোর মতো দুই নাম্বার জিনিসে কেন এত আগ্রহ দেখাচ্ছি। ফিরোজ শাহ কখনো অন্যের জুঠা আপন করে না। তবে হ্যাঁ, চাইলে একেকবার সেই জুঠার টেস্ট নিতেই পারে। নিজের স্বামীর প্রতি ঘেন্নার জন্যই আরেকজনের সঙ্গে জড়িয়েছিস। আবার এখন আমাকে হুমকি দেস। খুন করে ফেলব তোকে।’
মাহা তার দুটো হাত আর দুটো পা ছড়াচ্ছিল। চোখ দুটো তার বের হয়ে যাচ্ছিল। নাক দিয়ে টপ টপ করে রক্ত পড়া শুরু হয়ে গেছে। ঠোঁটের কোন বেয়ে রক্ত পড়ছে। চোখের সামনে সব অন্ধকার। নিঃশ্বাস ফালানোর মতো কোনো সুযোগ নেই। শেষবারের মতো সা’দের নামটা মনে মনে স্মরণ করে মাহা। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। মাহা বুঝে গেছে তার আর বাঁচার আশা নেই।
★★
ঠিক তখনই একটা হাত পেছন থেকে ফিরোজের গলা পেঁচিয়ে ধরে। সেই ধরাটা এতটাই জোরে ছিল যে ফিরোজ মুহূর্তেই কাবু হয়ে যায়। পেছনে তাকিয়ে সেই হাতটার মালিককে দেখার ক্ষমতা হয়নি ফিরোজের। নিজের গলায় অসহ্য ব্যথা অনুভব করতে থাকে ফিরোজ। ব্যথা সহ্য করতে না পেরে মাহার গলা থেকে হাত সরিয়ে নিজের গলায় থাকা হাতটা সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গলা ছাড়ার পর মাহা সেখানেই বসে পড়ে। দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে কাশতে শুরু করে।
ওদিকে ফিরোজের অবস্থাও খারাপ। সে পেছনে হাত দিয়ে সেই মানুষটাকে ধরার চেষ্টা করছে। ধরতে না পেরে সে ছটফট করতে থাকে। তার কানের কাছে একটা মুখ এসে বলে, ‘তোর কাছ অবধি আসতে আমার একটু দেরি হয়ে গেছে ফিরোজ। আর তুই এই সুযোগে বেশ ভালো খেলা খেলেছিস। তুই কোথায় হাত দিয়েছিস ফিরোজ? তুই সা’দ আশরাফের কলিজার মধ্যে হাত দিয়েছিস। এরজন্য আমি তোকে কোথায় পাঠাব সেটাই ভাবছি।’
ফিরোজ কন্ঠস্বরটা চিনতে পারে। কিন্তু সে অবাক হচ্ছে এটা ভেবে যে এখানে সা’দ কীভাবে আসল। এখানে তো কারো আসার কথা ছিল না। হঠাৎই গলা হালকা হয় তার
সে নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। এক হাঁটু গেড়ে বসে পড়লে পেছন থেকে হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক মা’র শুরু করে সা’দ। পাশে আশিক আর শুভ্র দাঁড়িয়ে।
মাহা একটু পানির জন্য হাপিত্যেশ করতে থাকে। সে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। সা’দ দিকবিক ভুলে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে ফিরোজকে। চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘মা’র এবার ওকে। মা’র। এক বাপের জন্মের হয়ে থাকলে উঠ। উঠে দাঁড়া। আর ওকে মেরে দেখা। ঘরের লাইট জ্বালায় শুভ্র। লাইট জ্বলতেই মাহার ক্লান্ত চোখ জোড়া বন্ধ হয়। সা’দকে পাগলের মতো মারতে দেখে আশিক সা’দকে আঁটকায়। সে সা’দকে থামিয়ে বলে, ‘ভাই, মরে যাবে। ও মরে গেলে আমাদেরই বিপদ। আমরা দেখছি ওকে। আপনি ভাবীকে দেখেন।’
মাহার কথা শুনে এতক্ষণে হুশ ফেরে সা’দের। মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে মাহাকে। মাহার ঠোঁট আর নাকের রক্ত দেখে অস্থির হয়ে ওঠে সে। দৌড়ে মাহাকে জড়িয়ে ধরে। ঝাপসা চোখে সা’দকে দেখে কলিজায় পানি আসে মাহার। নিজের গালে সা’দের হাতের স্পর্শ পায়। সা’দের বলা কথাগুলো কানে লাগছে তার। সা’দ বলছে, ‘মাহা, শুনতে পাচ্ছো আমার কথা। মাহা, চোখ খোল। মাহা। মাহা। এই মাহা।’
মাহার গালে চারটা আঙ্গুলের ছাপ বেশ গাঢ় হয়ে আছে। সা’দ সেই আঘাতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তার চোখে পানি জমেছে। তার আসতে সত্যিই দেরি হয়ে গেছে। সে যদি আরও তাড়াতাড়ি আসত তাহলে মাহার এতটা খারাপ অবস্থা হতো না। মাহার নাকের নিচে জমাট বেঁধে থাকা রক্ত নিজ হাতে মুছে দেয় সে। মাহার ঠোঁট নড়তে দেখে সা’দ কান পাতল। মাহা তখন বলছিল, ‘একটু পানি খাব সা’দ।’
সা’দ পানি চাওয়ার আগেই শুভ্র কোথা থেকে একটা পানির বোতল নিয়ে আসে। বোতলের মুখ খুলে সা’দের সামনে ধরে। মাহার মুখে বোতল ধরে সা’দ। মাহা পানি তো মুখে নেয় কিন্তু সবটা পানি মুখ থেকে গড়িয়ে পড়ে। মাহার চোখ বন্ধ হয়। মাহাকে বেশ কয়েকবার ডাকে সা’দ। কিন্তু জ্ঞানহীন অবস্থায় মাহা সা’দের ডাকে সাড়া দেবে কীভাবে? মাহাকে এই অবস্থায় রেখেই সা’দ উঠে ফিরোজের গলা আবারও চেপে ধরে। সা’দকে হিংস্র পশুর মতো লাগছিল। আশিক আর শুভ্র এই প্রথম সা’দের চোখ থেকে পানি গড়াতে দেখছে। সা’দ তখন ফিরোজের গলা চেপে ধরে বলছে, ‘কু*ত্তা*র বা*চ্চা, তোরে আমি মেরেই ফেলব। তুই কার গায়ে হাত তুলছস।’
সা’দকে এমন হিংস্র হতে দেখে শুভ্র তাকে জোর করে ছাড়ায়। বলে, ‘ভাই, ওরে আমাদের হাতে ছাড়েন। আপনি ভাবীকে নিয়ে হাসপাতালে যান। বেশি দেরি হবার আগে হাসপাতালে যাওয়া খুব দরকার। এরই ফাঁকে আশিক কাকে যেন ফোন করে। ফিরোজের বুকে পা রেখে আশিককে বলতে শোনা যায়, ‘ওই হা*রা*মির বা*চ্চারে ছাড়বি না। ওরে তো আমি টুকরা টুকরা কইরা লবন মরিচ মাখামু।’
★★
মাহাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস যেন ঠিকভাবে চলাচল করতে পারে সেজন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাহার এই অবস্থায় সা’দ বিধ্বস্ত। কেবিনের বাইরে একপাশে সারিবদ্ধভাবে থাকা চেয়ারগুলোর একটা চেয়ারে বসে আছে সে। প্রথমেই ফোন করে নিজের বাড়িতে। নওমির ফোনেই ফোন করে সে।
নওমি ফোন ধরতেই সা’দ ধরা কন্ঠে বলে, ‘হ্যালো চড়ুই, ফিরোজ আমার মাহাকে শেষ করে ফেলছে রে।’
নওমির হাতে তখন নাস্তার প্লেট। কথাটা শোনার পর হাত থেকে পায়েস সমেত প্লেটটা পড়ে যায়। এটা দেখে রাহেলা বেগম। তিনি দৌড়ে আসেন নওমির কাছে। নওমি তখন কাঁপছে। তার চোখে পানি জমাট বেঁধেছে। রাহেলা বেগম বুঝতে পারলেন এই মুহুর্তে নওমিকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও উত্তর মিলবে না। তিনি নওমির কান থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের কানে রেখে বললেন, ‘হ্যালো, কে? সায়েম?’
মায়ের কন্ঠস্বর শুনে সা’দ ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। এদিকে ফোনের ওপাশে সা’দকে কান্না শুনে রাহেলা বেগমও ভীমড়ি খান। কম্পিত কণ্ঠে তিনিও জিজ্ঞেস করে, ‘কী হইছে রে সা’দ? এই সা’দ, তুই এইভাবে কান্না করছিস কেন? কী বলছিস তুই নওমিকে? কিরে, কথা বল? মাহা কোথায়? তুই ঠিক আছিস?’
মায়ের এতগুলো প্রশ্নের উত্তরে সা’দ কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে, ‘আমার মাহা এখন হাসপাতালের বেডে মা। ওকে মনে হয় আমি আর ফিরে পাবো না। ফিরোজ আমার মাহাকে শেষ করে ফেলছে মা।’
রাহেলা বেগমের শরীরের প্রতিটা লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল। ছেলে এইসব কী বলে? ফোন রেখে আগে নওমিকে স্বাভাবিক করেন। তারপর নাতি নাতনিদের বাসায় রেখে ছেলের বউকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেন। পথেই সা’দের বাবা আর সায়েমকে খবর দেন।
★★
কেবিনের সামনে মাহার মা বাবা দাঁড়িয়ে। সা’দ তাদের ফোন দেওয়া মাত্রই তারা এক কাপড়ে হাসপাতালে এসে হাজির হোন। আমিনা বেগম মেয়েকে এমন অচেতন অবস্থায় দেখে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। তার আহাজারিতে হাসপাতালের ওই অংশটা ভারী হয়ে ওঠে। থম মেরে বসে থাকা সা’দ তখনও মাহার অচেতন মুখটা কল্পনা করায় ব্যস্ত।
সা’দের পরিবারের লোকজন একের পর এক হাসপাতালে আসতে থাকে। রাহেলা বেগম মাহাকে এইভাবে শুয়ে থাকতে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। নওমি, সায়েমেরও একই অবস্থা। জাফর সাহেব মাহার বাবার কাঁধে হাত রাখেন। সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনিও জানেন, চোখের সামনে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে কোনো বাবা-ই ঠিক থাকতে পারেন না।
সায়েম সা’দের পাশে বসে। ভাইকে বোঝানোর এসে নিজেই কনফিউজড। নিজের কাঁধে কারো হাত পড়ায় সম্বিত ফিরে আসে সা’দের। সায়েমকে দেখে সে উত্তেজিত হয়ে যায়। উত্তেজিত হয়ে সবার সামনে বলে, ‘ভাইয়া, মাহার কিছু হলে আমি ফিরোজকে ছাড়ব না। ওরে আমি জিন্দা মাটিতে পুঁতে ফেলব ভাইয়া।’
সায়েম আশেপাশে তাকায়। সবাই তখন সা’দের দিকে তাকিয়ে আছে। জাফর সাহেবও ভ্রু কুঁচকে তাকান। ফিরোজ কে কিংবা তার সাথে সা’দের কী সম্পর্ক এসবের কিছুই জাফর সাহেব জানেন না। এমনি সা’দের পলিটিক্স নিয়েও তেমন কিছু জানেন না তিনি। এখন যদি শোনে সা’দের সঙ্গে ঝামেলার জের ধরেই ফিরোজ মাহার ক্ষতি করতে চেয়েছে তাহলে তিনি সবার আগে ছেলেকেই দোষারোপ করবেন। রাহেলা বেগম সবটা বুঝতে পেরে সায়েমকে চোখের ইশারা করেন যাতে সে সা’দকে থামায়। কিন্তু সা’দ তো থামার না। সে এক নাগারে বলেই যাচ্ছে ‘আমি ফিরোজকে শেষ করে ফেলব রে ভাইয়া। আমি ওরে শেষ করে ফেলব।’
জাফর সাহেব এগিয়ে এসে সায়েমকে বলে, ‘ও কার কথা বলছে সায়েম। ফিরোজ কে? ফিরোজের সঙ্গে মাহার কী সম্পর্ক? কিছুই তো বুঝতে পারছি না আমি।’
★★
রাত দশটা নাগাদ মাহার যখন জ্ঞান ফেরে তখন ডিউটি ডাক্তার মাহাকে আউট অফ ডেঞ্জার ডিক্লেয়ার করে। এই কয়েক ঘন্টা সবার জন্য কয়েক যুগের মতো ছিল। প্রায় একশোবার হবে চেয়ার ছেড়ে কেবিনে উঁকি দিয়েছে সা’দ। মাহার জ্ঞান ফিরেছে কি-না দেখার জন্য। আমিনা বেগম আর মোশাররফ সাহেব থাকতে চেয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু সা’দ কাউকে থাকতে দেয়নি। আজ রাতটা সে একা মাহার কাছে থাকবে বলে ঠিক করে। সা’দের সিদ্ধান্ত কেউই পাল্টাতে পারেনি। সবাই চলে যায়। রাত বারোটা নাগাদ কেবিনে যাওয়ার পারমিশন মেলে সা’দের।
ডাক্তার জানিয়েছে গলায় চাপ পড়ার কারণে মাহার ভোকাল কর্ড খানিক ড্যামেজ হয়েছে। কিছুদিন কথা বলতে কষ্ট হবে। যতবারই পানি খাবে গরম পানি খেতে হবে। আর লিকুইড জাতীয় খাবারই দেওয়া হবে কিছুদিন।
সা’দ নিঃশব্দে মাহার বেডের পাশে বসে। ডান হাতে ব্যান্ডেজ। বাম হাতে ক্যানোলা। স্যালাইন চলছে। ভেতরে ঢোকার আগে নার্স বলেছিল শব্দ না করতে। পেশেন্ট ঘুমোচ্ছে। সা’দ কোনো কথা বলেনি। চুপচাপ বসে আছে মাহার পাশে। মাহার ক্যানোলা পড়ানো হাতটা আলতোভাবে স্পর্শ করে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘কী করে পারলে মাহা, কী করে পারলে! আমাকে ঘৃণা করো বলে যে কারো সঙ্গে মিশবে তুমি! একবারের জন্যেও কি আমায় মনে পড়ল না তোমার? আমি কি এতই খারাপ? আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো, তবে আমার কী হতো মাহা। মিছেমিছি হলেও একটাবার ভালোবেসে দেখতে, তোমার চারপাশটা আমি স্বর্গ করে দিতাম। অথচ আমায় তুমি নরকযন্ত্রণা দিলে।’
অবিরাম বারিধারা আজ সা’দের চোখে। মাহার হাতটা দুইহাতে ধরে কপালে ঠেকায়। কাঁদতে কাঁদতে মুখে লালা চলে আসে সা’দের। শেষ কবে এইভাবে কেঁদেছিল মনে নেই তার। মাহার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকায় একবার। গালের আঘাতটা জ্বলজ্বল করছে। এই আঘাতটা সা’দের ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত করছে। তার ভেতরের রক্তক্ষরণ সে কাকে দেখাবে?
মাহার হাতটা আগের মতোই কপালে ঠেকিয়ে সা’দ বলে, ‘আমার প্রতি তোমার এই ঘৃণা আমার গলার ফাঁস হয়ে গেল মাহা। এই তীব্র ঘৃণা এখন আমার গলার ফাঁস।’
সা’দ তখন মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কাঁদছে। সেই একই সময় মাহার বন্ধ চোখের কোণ বেয়েও এক ফোঁটা পানি গড়ায়।
চলমান………………………