বিষচন্দ্রিমা পর্ব-০৩

0
2

#বিষচন্দ্রিমা
#পর্ব৩
#তামান্না_আনজুম_মায়া
~
তরী নিজের এতো কাছে ফারাবী কে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো, এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।ফারাবী নেমে গিয়ে তরীর সামনে দাঁড়ালো।তরী মুখ ঘুরিয়ে নিলো,ফারাবী এবার রাগে কটমট করতে করতে বললো

,,এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার?
তরী ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিলো

,,আমার কোনো সমস্যা নেই,সব সমস্যা হচ্ছে আপনার একার,দোষ চাপাচ্ছেন অন্যের ঘাড়ে।

,,পুরো রাস্তা আমার কাঁধে ঘুমিয়ে এসেছো,এখন এমন ভাব করছো আমাকে চিনোই না!আমার কাঁধের বারোটা বেজে গেছে, একটা আস্ত হাতি।

তরী তেড়ে গিয়ে বললো

,,কি বললেন আপনি?আমি হাতি,আপনার সাহস তো কম না আমি হাতি হলে আপনি একটা এনা*গন্ডা!আমি কি আপনাকে বলেছিলাম নাকি আমাকে নিজের কাঁধের উপর চড়ান।না জানি ঘুমের সুযোগ নিয়ে কি কি করেছেন।আপনাকে একদম বিশ্বাস করি না আমি।

ফারাবী বোকার মতো চেয়ে আছে, মেয়েটা বলে কি পুরো মাথায় কি শুধু এসব চিন্তা নিয়েই ঘুরে নাকি।আশ্চর্য মেয়ে মানুষ।

ফারাবী দেখলো তার বাবা মায়ের গাড়ি এসে থেমেছে তাই আপাতত আর কোনো তর্কে জড়াতে চায় না সে, তার উপর এই মেয়ে একদিনেই তার বাবা মাকে হাত করে নিয়েছে।সবাই মিলে শুধু ওকেই কথা শুনিয়ে দিবে। বিয়ে করে একদম ফেঁসে গেছে!

বাড়ির ভিতর ঢুকে যে কি হবে তা নিয়ে এখন থেকেই চিন্তায় আছে তরী, যা বুঝা যাচ্ছে তার দাদী শাশুড়ী কড়া মানুষ না জানি কোন শা স্তি দিয়ে দেন প্রথম দিনই।সে এদিকে চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে আর পাশের জনের যেনো কোনো খেয়ালই নেই, তরী মনে মনে বললো যা একদম মোবাইলটার ভিতর ঢুকে গেলেই তো পারিস।
তরীর কথা টা যেনো শুনে ফেললো ফারাবী সে মোবাইল থেকে চোখ উঠিয়ে তীক্ষ ভাবে তাকালো তার দিকে,ফারাবী কে তাকাতে দেখে তরী এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
জয়নাল আর সায়েবা আগে আগে ঘরে প্রবেশ করলেন,জয়নাল প্রফুল্ল সুরে নিজের মাকে বললো মা এদিকে আসো দেখে যাও আমাদের ফারাবী সাথে করে কাকে নিয়ে এসেছে।
জয়নাল শেখের কথায়,বাড়ির প্রতিটি সদস্য চোখ ফেললো সদর দরজার দিকে,সেখানে ফারাবী কে ছাড়া কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।তরী ফারাবীর পেছন লুকিয়ে বসে আছে, যেনো কোনো চোর চুরি করে ধরা পড়েছে।

ছেলের কথায় চশমা ঠেলে এগিয়ে আসলেন বাড়ির কর্তী জাহেরা শেখ।নাতির দিক পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন তিনি।ফারাবীর মাঝে কোনো ভাবন্তর নেই সে স্বাভাবিক ভাবেই পকেটে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে।

জাহেরা শেখ কে উপেক্ষা করে পেছন থেকে ছুটে আসলো এক চঞ্চল কিশোরী,ফারাবীর পেছন থেকে দেখা যাচ্ছে তরীর শাড়ির আঁচল। আয়রা গিয়ে একটানে বের করে সামনে নিয়ে আসলো তরীকে।তরী এবার ভীষণ ভয় পেলো ভয়ে এক হাতে ফারাবীর শার্টের এক অংশ খামচে ধরলো, ভীতু চোখে তাকালো একবার।সদর দরজায় সবাই দাড়িয়ে আছে সবার চোখেই একই প্রশ্ন কে এই মেয়েটি?

জাহেরা শেখ কন্ঠে কাঠিন্যতা বজায় রেখে বললেন

,,এই মেয়ে কে দাদু ভাই?

ফারাবী যেনো প্রশ্নের জন্যই অপেক্ষা করছিলো,সে অকপটে জবাব দিলো

,,আমার বিয়ে করা বউ!

তার চাচারা এখন কেউই বাড়িতে নেই,তার মেজো চাচী ছোট চাচী,চাচাতো বোনেরা সাথে একমাত্র চাচাতো বড় ভাই,তার বউ। অবাকের রেশ কাটিয়ে সবাই একসাথে কি বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।কেউ যেনো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।মোটামুটি সবাই স্বপ্নার কথা জানে, স্বপ্না কে ছেড়ে অন্য আরেক মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে কারোরই যেনো হজম হলো না বিষয়টা।

জাহেরা বেগম ধ মক দিয়ে সবাইকে থামিয়ে দিলেন, তিনি এগিয়ে দাড়ালেন তরীর সামনে তরী তো রীতিমতো কাঁপছে। তার থুতনি তে হাত রাখলেন জাহেরা,মুখটা উচু করে ধরলেন তিনি, কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বললেন,মেয়েটা টা কার পছন্দ রবী?তোর নাকি তোর বাবা মায়ের?
পেছন থেকে জয়নাল চোরা চোখে একবার স্ত্রীর দিকে তাকালেন তিনিও তাকিয়ে স্বামীর পাণে দুজনের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে চিন্তা রেখা।তবে কি মেয়ে পছন্দ হয়নি উনার।
ফারাবী ঝটপট জবাব দিলো

,,আমার পছন্দ দিদুন!আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি তাই বিয়ে করে ফেলেছি,তোমাকে না জানিয়ে করার জন্য দুঃখীত দিদুন।

জাহেরা শেখের মুখে হাসি দেখা গেলো,তিনি হাসিমুখে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন।

,,মাশাআল্লাহ!আমার দাদু ভাইয়ের পছন্দ আছে বলতে হবে।চাঁদের টুকরা নাত বউ আমার।তোর মা বাপের পছন্দতে আমার একটুও ভরসা নেই তুই তো জানিসই।তোর পছন্দ যে একদম আমার মতো তা আজ আবারও প্রমাণ হলো।

জয়নাল হকের বুক থেকে পাথর টা যেনো সরলো এবার ছেলের দিকে তাকালো একবার,ফারাবী রাগে দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে।এমন একটা বাপ পেয়েছে কপাল করে যার জন্য এখন এই মেয়েটাকে ভালোবাসে এরকম একটা ডাহা মিথ্যা কথা বলতে হলো।
ফারাবী চলে যাওয়ার জন্য হাঁটা দিবে ঠিক তখনই,তরী নিচু হয়ে গেলো সাথে এক পা এগিয়ে দিলো সামনে, যার ফলে ধাক্কা খেয়ে ফারাবীও নিচু হয়ে গেছে দুজনের হাত ঠেকেছে জাহেরা শেখের পায়ে,তরী দাঁত কেলিয়ে হাসলো ফারাবী রাগে পারলে এখনই তরীর মাথা ফাটিয়ে দেয়।তরী ইশারা করলো সালাম করার জন্য। দুজনই হাত রাখলো পায়ে, জাহেরা শেখ খুশিতে দুজনের মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন, উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন।

ফারাবী চলে গেলো নিজের রুমে,এখানে আর এক মুহুর্ত থাকা যাবে না।
জাহেরা শেখ চলে গেলেন নিজের ঘরে বয়স হয়েছে অসুস্থই থাকেন বেশির ভাগ সময়।এদিকে পুরো উৎসুক জনতা হাম লে পড়লো তরীর উপর।আয়রা এসে পাশে বসে বললো

,,ভাবি!ওফ তোমাকে দেখে যে কতো খুশি হয়েছি কি বলবো।ভাইয়া যে ওই স্বপ্না কে ছেড়ে।তোমাকে বিয়ে করেছে তাতেই আমার দিলের ভিতর ধিন তানা গানে নাচানাচি শুরু হয়ে গেছে।

তরী শুধু দেখে যাচ্ছে সবাইকে।কাউকেই চিনে না সে, না আগে নাম শুনেছে সব গুলো অপরিচিত মুখ,একটু পর ঘুমু ঘুমু চোখে একটা বাচ্চা এগিয়ে আসলো সবাইকে ঠেলে।এসে মায়াবী কন্ঠে বললো

,,তুমি কে গো নতুন মানুষ?

বাচ্চাটির বয়স বড়জোড় চার থেকে পাঁচ হবে।তরী অপকল চেয়ে রইলো তার দিকে, বাচ্চাটি ওর হাত ধরে বললো
,,তুমি অনেক মিষ্টি দেখতে,মাম্মাম বলেছে আমি দেখতে বেশি মিষ্টি কিন্তু আমার মনে হয় আমার থেকেও বেশি মিষ্টি তুমি।
সানায়ার কথায় সবাই হেসে দিলো।আয়রা ওকে টেনে নিয়ে বললো এটা কে জানো সানায়া বেবি?

,,কে এটা মামনী?

,,তোমার একমাত্র চাচ্চুর একমাত্র ওয়াইফি।তোমার নতুন মাম্মাম।

সানায়া অবিশ্বাস্য ভাবে তাকালো তরীর দিকে, এক লাফে তরীর গলা জড়িয়ে গালে টুপ করে চুমু খেয়ে বললো।তুমি আমার ছোট মাম্মাম!ইয়ে কি মজা মজা, তরী নিজেও এই বাচ্চাটিকে পেয়ে খুশি হলো।তরী সানায়াকে জড়িয়ে ধরে বললো
,,হ্যাঁ মামনী আমি তোমার ছোট মাম্মাম।

তরীর কোলেই বসে আছে সানায়া বাচ্চাটা যাওয়ার নামই নিচ্ছে না, সে একদম সবাই কে বলে দিয়েছে এখন থেকে সে তার ছোট মাম্মামের সাথেই সব সময় থাকবে অন্য কাউকে সে চিনে না।
তাদের কথার মাঝেই সেখানে আসলো সায়েবা শেখ।তিনি এসে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো।

আয়রা নিজ থেকেই বললো, এই যে ভাবি এদিকে দেখো
আমি তোমার একমাত্র আপন ননদ বুঝলে।
ফারাবীর ছোট চাচার দুই মেয়ে পুষ্প আর প্রিমা এরা জমজ তরী তাকিয়ে ছিলো কিছু সময় কোনো অমিল খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিলো না।ফারাবীর মেজো চাচার বড় ছেলে রুবেল শেখ তার বউ শিখা,তাদের মেয়ে সানায়া।রুবেলের বোন তোষা।সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষ হলে আয়রা বললো,ভাবি চলো তোমায় ভাইয়ার রুমে দিয়ে আসি।সানায়া বললো সেও সাথে যাবে।শিখা ইতস্তত করলো মেয়েটা বিরক্ত হচ্ছে না তো আবার।তার মেয়েটাও হয়েছে একটা আসার পর থেকে কোল থেকেই নামেনি।তরী হয়তো শিখার মনের কথা বুঝলো।

সে হাসি মুখে বললো,আমার তো সানায়া মামনীকে ভীষণ রকম পছন্দ হয়েছে।তো সে এখন থেকে আমার সাথেই থাকবে,শিখার দিকে তাকিয়ে বললো ভাবি আপনার কোনো অসুবিধে নেই তো আপনার জানটুস কে আমি হাত করে নিচ্ছি কিন্তু।
তরীর কথায় সবাই হেসে উঠলো।
তরী আবার বলল
,, চলো তো আয়রা আমাকে আর সানায়া কে একটু পথ দেখিয়ে দাও।

শিখা হাসলো সাথে সবাই,তরী যে খুবই ভালো মনের একটা মেয়ে তা কিছু সময়েই সকলে বুঝে গেছে।বড়রা সবাই ছুটলো রান্না ঘরে, রাতের খাবারের আয়োজন এখনো করা হয়নি।
—————
“স্যার একটা খুবই বড় খবর আছে”
নিজের বিশ্বস্ত লোকের কথায় নড়েচড়ে বসলেন মধ্য বয়স্ক লোকটি।

,,আপনার ঘোর শ*ত্রুর ছেলে বিয়ে করে আজ বাড়িতে বউ নিয়ে এসেছে।শা*লা হারা*মির পেটে পেটে এতো।বুদ্ধি ঠিক কায়দা করে নিজের ছেলের বিয়েটা গোপনে সেরে ফেলেছে।ওই স্বপ্না টাকে দিয়েও তো কোনো কাজের কাজ হলো না।শেখ ইসরাক ফারাবীর কাছে ঠিক ধরা পড়ে গেছে!

,,কি ভাবে হলো এমনটা,ফারাবী জানলো কি করে স্বপ্না ওর সাথে অভিনয় করছে?

,,ওই মা** একটা ন*ষ্টা, একজন দিয়া তো হয় না।কাজের কাজ তো কিছু করলো না,ওইখানে গিয়াও আরেক থালায় মুখ দিছে।

,,তাতে কি ফারাবী কে মানাতে পারলো না ও,ফারাবী তো ওর প্রতি পুরোপুরি দুর্বল ছিলো।ছলে বলে ওই বাড়িতে একবার ঢুকতে পারলো না।এরে শেষ করে দে আবর্জনা যত বেশি থাকবে ততো ঝা*মেলা বাড়বে।

,,ওরে এখন শেষ করতে গেলে সমস্যা হইয়া যাইবো স্যার সময় সুযোগ বুঝে টপকে দিবো।

,,ওই মেয়েটার ব্যাপারে সব ডিটেইলস চাই আমার!ফারাবী কে কোনো মতেই পরবর্তী এমপি হিসেবে দেখতে চাই না আমি।সভাপতি থেকেই আমার কাজে প্রতিনিয়ত বাঁধা দিয়ে চলেছে পুচকে টা।এর বাপের জন্য এখনও বেঁচে আছে না হয় কবেই,,,
বলে খুবই বি*শ্রি ভাবে হাসলো লোকটি,বিক*ট শব্দে কেঁপে উঠলো রুমের প্রতিটি কোনা।

সে আবার ও চিৎকার করে বললো আমার স্বার্থের জন্য আমি সব কিছু করতে পারি সব কিছু।তোকেও রাস্তা থেকে সরিয়ে দিবো ফারাবী সাথে তোর ওই বাপ চাচাকেও!
******
সানায়ার সাথে কথা বলতে বলতে রুমে গেলো তরী।ফারাবী খাটে বসে কার সাথে যেনো খুবই রেগে কথা বলে যাচ্ছে।
সানায়া তরীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো
,,ছোট মাম্মাম দেখেছো চাচ্চু রেগে বো*ম হয়ে আছে,এই সময় কেউ ভয়ে তো চাচ্চুর কাছে যায়ই না।
তরী সিরিয়াস হওয়ার ভাব করে বলে

,,ওমা তাই নাকি।তোমার চাচ্চু কি সবাই কে তখন বকা দিয়ে দেয়?
সানায়া উপর নিচ মাথা নাড়ে
তরী হেসে বলে
,,আজ চলো মাম্মামের সাথে, দেখবে কিচ্ছু হবে না বেশি ভাব নিলে তোমার চাচ্চুর চুল ধরে টেনে দিবো।
তরী মনে মনে বলে ব্যাটা তো আস্ত খাটাশ বাড়ির সব মানুষ কে ভয় দেখিয়ে রাখে।

সানায়া কে বসিয়ে রেখে তরী ওয়াশরুমে গেলো,এটা ভেবেই ওর শান্তি লাগছে শাশুড়ী পেয়েছে একদম মনের মতো,এখানেও তার প্রয়োজনীয় সব কিছু আছে, একটুও অসুবিধে হয় নি।তার উপর পরিবারের সব গুলো মানুষ অনেক ভালো, এরকম একটা পরিবারের আশাই তো সব সময় করতো।ছোট থেকেই হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছে তার দাদু ছাড়া তেমন কেউই তার খোঁজ রাখতো না।তাই পরিবার আসলে কি সে সম্পর্কে তোমন কোনো অভিজ্ঞতাই অর্জন হয়নি এখন পর্যন্ত।

তরী বের হয়ে দেখে ফারাবীর কাঁধে উঠে বসে আছে সানায়া। তরী কে দেখে সে বলে উঠলো
,,চাচ্চু তাড়াতাড়ি নামিয়ে দাও তো মাম্মাম চলে এসেছে আমি তার সাথে খেলবো।

ফারাবী বললো
,,কেনো মা আমাকে বুঝি এখন ভালো লাগে না তোমার?নতুন কে না কে এলো তার জন্য তুমি আমাকে ভুলে গেছো?
তরী চুল মুছতে মুছতে বললো
,,কিছু মানুষ যে এতো জেলাস হতে পারে আগে জানতাম না।হুঁহ্ কতো কিছু যে দেখতে হবে জীবনে!

সানায়া দুজনের মুখের দিক তাকাচ্ছে বার বার ফারাবী তরী দুজন দুজনের বিপরীতে মুখ করে বসে।সানায়া দুজনকে ডেকে নিজের দিকে ঘুরালো।
ফারাবীর ঠিক কাছে গিয়ে বসলো পরে তরী কে বললো আচ্ছা তুমি তো আমাকে মামনী বলো তার মানে তুমি আমাকে ভালোবাসো এখন তাহলে একটা পাপ্পি দিয়ে দাও আমাকে।

তরী হেসে বললো একটা কেনো মামনী তোমাকে তো অনেক গুলা পাপ্পি দিবো দাড়াও এখনি দিচ্ছি।
তরী ঝুঁকে পড়লো সানায়ার দিকে ঠিক তখন সানায়া মাঝ থেকে সরে পড়লো তরী তাল সামলাতে না পেরে গিয়ে পড়লো ফারাবীর উপর ফলশ্রুতিতে তার ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো ফারাবীর গাল।আকষ্মিক ঘটনায় দুজনেই হা হয়ে গেছে।তরী ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেছে।পেছন থেকে সানায়া তালি বাজাতে বাজাতে বললো

,,ইয়ে তোমাদের ঝগ ড়া মিটে গেলো,মাম্মাম বলেছে পাপ্পি দিলে আবারও বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

তরী এক ছুটে রুম থেকে বের হয়ে গেলো, এমন একটা পরিস্থিতির স্বীকার হবে জানলে রুমেই আসতো না।

তরীকে লজ্জা পেতে দেখে ফারাবীর মনে হলো সে আশ্চর্য কিছু দেখে ফেলেছে।বিরবির করে বললো

,,এই মেয়ে আবার লজ্জাও পায় নাকি!

——–
খাবার টেবিলে ফারাবীর বাবা তার বাকি দুই ভাই জামশেদ ও আফসার শেখের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন তরীকে।সবাই এক সাথে খাবার খাচ্ছে তরী কে বসানো হয়েছে ফারাবীর পাশে, সে সময়ের ঘটনা সাথে এখন এতোগুলা মানুষ দেখে খুবই অস্ব স্তি হচ্ছে তার তাও না খেয়ে উঠতে পারছে না,অভদ্রতা করার ইচ্ছে নেই তার।

নিরবতা ভেঙ্গে জাহেরা শেখ বলে উঠলেন

,,তা নাত বউ এবার কিসে পড়াশোনা করছো?

,,অনার্স ভর্তি হবো দিদুন।

,,তা ভালো, আমি কিন্তু পড়াশোনা নিয়ে খুবই সচেতন বাড়ির বউ হোক বা মেয়ে সবাইকেই উচ্চ শিক্ষিত হতে হবে।পড়াশোনায় কোনো ফাঁকি বাজি চলবে না।

তরী মাথা নাড়লো শুধু,তবে মহিলার চিন্তা ধারা তার ভীষণ ভালো লাগলো।

জাহেরা শেখ জয়নাল শেখের দিক তাকিয়ে বললেন

,,জয়নাল তুমি তরীকে ফারাবীর ভার্সিটিতেই ভর্তি করিয়ে দেও এ,,
জাহেরা শেখের কথা শেষ না হতেই দুজনে একত্রে “না” বলে চেঁচিয়ে উঠলো।

ভ্রু কুচকে তাকালো তিনি তা দেখে দুজনই ঘাবড়ে গেলো,ফারাবী আমতা আমতা করে বললো

,,না মানে দিদুন এক সাথের কি দরকার আঙ্গিনা কে তো অন্য কোথাও ভর্তি করাতে পারো।

কথার মাঝেই আয়রা বলে উঠলো আঙ্গিনা কে ভাইয়া?

ফারাবী চোখ পাকিয়ে তাকালো বোনের দিকে এই মেয়ে সব জায়গায় বা হাত ঢুকাতে ওস্তাদ।

জাহেরা শেখ গম্ভীর কন্ঠে কিছু একটা চিন্তা করে বললেন

,,আমার কথাই শেষ কথা,তুমি তরীকে সাথে করে নিয়ে যাবে আবার নিয়ে আসবে,তোমার সাথে থাকলে সেইফ থাকবে।রাজনীতি করে তো আর কম শত্রু বানাওনি।বিয়ে করেছো কিছু বলিনি, বউয়ের দায়িত্ব এখন সব তোমার তার খেয়াল ও তোমাকেই রাখতে হবে।একসাথে ভার্সিটি গেলে তোমাদের মধ্যের সম্পর্ক আরো ভালো হবে দুজন একসাথে সময় ও কাটাতে পারবে বেশি।আগামীকাল তরীকে নিয়ে যাবে ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে।

দুজনই মাথা নাড়লো কিন্তু কেউই চায় না মুখোমুখি হতে।
দুজন চায় দূরে যেতে, তবুও কোথা থেকে একটা না একটা অদৃশ্য শক্তি এসে দুজনকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে পুরো ধমে।
তরী মনে মনে বললো এই আপ*দ টাকে এখন ভার্সিটিতেও সহ্য করতে হবে।এর থেকে ভালো ও পড়াশোনা না করে ঘরে বসে থাকুক।

ফারাবী জ্ব লন্ত দৃষ্টি ফেললো নিজের বাবার দিকে,জয়নাল ছেলের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসলো।ফারাবী রাগে বিরবির করতে করতে বললো

,,আমার সাথে ভার্সিটি যাবে না তুমি, একবার শুধু যাও বুঝাবো মজা কতো মরিচে কতো ঝাল।এই শেখ ইসরাক ফারাবীর মনে কোনো মেয়েই আর আসতে পারবে না। কখনো না!
চলবে…..