বিষচন্দ্রিমা পর্ব-০৭

0
2

#বিষচন্দ্রিমা
#পর্ব৭
#তামান্না_আনজুম_মায়া

পাল্লা দিয়ে রাতের অন্ধকারে মুখরিত হচ্ছে চারপাশ।পুরো ফ্লাটের সব কিছু পরিষ্কার করে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো তরী।ঘেমে যাচ্ছেতাই অবস্থা হয়ে গেছে,গরম টা যেনো একটু বেশিই লাগছে এখন।মাথার উপরে সিলিং ফ্যান ঘুরছে তাতেও যেনো কাজ হলো না।এসেছে সন্ধ্যায় এখন রাত নয়টা বাজে,এই ছেলে এখনো বাসায় আসছে না কেনো।মনে মনে বিরক্ত হলো তরী।ফ্রেশ যে হবে তার ও উপায় নেই,সাথে করে তো কাপড় নিয়ে আসেনি ভেবেছে সকাল বেলা উঠেই সে এক প্রকার ভাগবে এখান থেকে,আর গিয়ে বলবে ফারাবী তাকে রাখেনি।কিন্তু এই ছেলে যে এতো অপরিষ্কার কে জানতো।

হাত, মুখ ধুয়ে দাঁড়ালো বারান্দায় রাতের আকাশটা কেমন গুমোট হয়ে আছে,শান্ত নিরব পরিবেশ।হঠাৎ আকাশ কাপিয়ে শব্দ হলো,বিদ্যুৎ চমকালো হালকা ঝড়ো হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে ভারী বর্ষণ শুরু হলো।
তরীর মন চাইলো আকাশ কে একবার খুব করে জিজ্ঞেস করতে তোমার ও কি আমার মতো অকারণে মন খা রা প হয়!তুমিও কি জীবনের গতি হারিয়ে দিক ভুলে গেছো?একাকিত্ব কি তোমায় গ্রা স করেছে আষ্টেপৃষ্টে? চোখ বন্ধ করে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দিলো তরী।মন টা কেমন বি ষিয়ে উঠলো,এই অজানা কারনে মন খারা প হওয়াটা বড় অন্যায়!

বৃষ্টির ফোঁটা এসে এলোপাতাড়ি ছুঁয়ে দিচ্ছে তরীর মুখমণ্ডল। ঠান্ডা পানির বিন্দু গুলো যেনো মুহুর্তেই ঠান্ডা করে দিচ্ছে শরীর মন।
তরী আনমনেই গেয়ে উঠলো

“মনটা আমার ভীষণ খারাপ চার দেয়ালে বন্দী”
“ইচ্ছে নেই আর ধরতে নতুন ভালো থাকার সন্ধি”
“তোমাদের রঙ ভীষণ রঙিন ”
“আমার প্রিয় কালো”

তরী চোখের কোনে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে লেপ্টে থাকা অশ্রু কণা মুছে ফেললো খুব সাবধানে।যেনো কারো চোখে পড়া বারণ।কষ্ট গুলো নিতান্তই তার নিজের, একার একান্ত বিষয়। সহানুভূতির নাম করে দয়া দেখিয়ে দেওয়া মানুষ থেকে সে অনেক দূরে থাকতে চায়।

তরী আবার গিয়ে বসলো ড্রয়িং রুমের সোফায়।তখনই দরজা খুলে প্রবেশ করলো ফারাবী ভিজে একাকার অবস্থা। প্রথমেই তরী কে দেখে ফারাবী চমকে উঠলো, আজ এমনিতেই তার মন মেজাজ খা রাপ তার উপর এই মেয়েটা এখানেও চলে এসেছে জ্বা*লানোর জন্য! তার জীবনে কি আর প্রাইভেসি বলতে কিছু নেই।দুই একটা দিন ও কি নিজের মতো শান্তিতে থাকার অধিকার নেই?

তরী খেয়াল করেনি ফারাবী কে,সে সোফায় হেলান দিয়ে পা উঠিয়ে বসে আছে,উদাসীন ভাবে তাকিয়ে আছে কোথায় যেনো।

ফারাবীর কঠিন পুরষালী কন্ঠস্বর শুনে কেঁপে উঠলো তরী

,,এই মেয়ে কার অনুমতি নিয়ে এখানে এসেছো তুমি?তোমাকে আমি এখানে আসার পারমিশন দিয়েছি একবার ও?কেনো শান্তি দিতে চাও না আমাকে?তোমার যন্ত্র ণায় বাসা থেকে চলে এসেছি, সেই তুমি এখানেও এসে হাজির!
এই ফ্লাটের প্রতিটা জিনিস আমার ব্যক্তিগত এসবে হাত লাগানোর সাহস হয় কি করে তোমার?
কোনো বহিরাগতর নিজের লাইফে ইন্টারফেয়ার করা একেবারেই পছন্দ করি না আমি!

তরী কিছুটা ভরকে গেলো,ও তো এতো কিছু ভেবে আসেনি,অপরিষ্কার ছিলো বলেই হাত লাগিয়েছে না হয় কখনো বিনা অনুমতিতে কারো জিনিস ছোঁয়া তো দূর চোখ তুলেও তাকায়নি।সে হয়তো ভেবেছিলো এই জিনিস গুলোতে হাত দেওয়ার নূন্যতম অধিকার তার আছে।এখন মনে হচ্ছে আসলেই সে ভুল ছিলো।ফারাবীই ঠিক, তার উচিত হয়নি কারো অনুমতি বিহীন কিছু করা।

তরীকে চুপচাপ দেখে ফারাবী আবার জিজ্ঞেস করে
,,কেনো এসেছো?

,,ও, না মানে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে,,,,

,,এই একদম নাটক করবে না বলে দিলাম!আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে আমার শান্তি নষ্ট করতে এসেছো,এই তোমরা মেয়েরা এতো এমন কেনো বলোতো?পাত্তা দিচ্ছি না দেখেও গায়ে পড়ে জ্বা লা তে আসো কেনো?

ফারাবীর এবারের অপমান টা তরীর বেশ গায়ে লেগেছে

,,আ’ম সরি ফারাবী!আপনার দিদুন খুব জোর করছিলো তাই এসেছি,না হয় আসতাম না।ভুল করে চলে এসেছি,আর আপনার জিনিস পত্রে বিনা অনুমতিতে হাত লাগানোর জন্য আমি সত্যি লজ্জিত।

ফারাবী চমকালো থমকালো মেয়েটা তাকে এতো সহজে সরি বলে দিলো!সে তো ভেবেছিলো প্রতিদিনের মতো দু চারটা কথা শুনাতে পিছপা হবে না।এ কোন রূপ তরীর?ফারাবী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তরীর উপর তার গায়ের পানিতে ভিজে যাওয়া কার্পেট টার দিকে তার কোনো খেয়াল নেই।

তরী কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে বললো

,,আমি চলে যাচ্ছি,বিরক্ত করার জন্য দুঃখীত!
তরী কথাটা বলে এক মুহুর্তও দাড়ায়নি একবার চিন্তা ও করেনি এতো রাতে বৃষ্টিতে সে কোথায় যাবে।রাস্তাও তো চিনে না কি ভাবে যাবে।শুধু ভেবে নিলো তাকে যেতে হবে।ফারাবীর সাথে এর আগেও ঝ গড়া হয়েছে কথা-কাটা কাটি হয়েছে,একবার ও তরীর মনে হয়নি সে কারো বোঝা! তার নূন্যতম অধিকার নেই অপর ব্যক্তির উপর,তাকে দেখেই অপর মানুষটি এতোটা বিরক্ত হয় যে তার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়!
কথাগুলো ভীষণ রকম পীড়া দায়ক।যে সকল মানুষের কাছে ধন, সম্পদ,পরিবার কিচ্ছু থাকে না তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ বা হাতিয়ার হলো তার আত্নসম্মান। মানুষের বেঁচে থাকার শেষ সম্ভল তার নিজের সম্মান,আজ সেটাও কোথাও যেনো নড়বড়ে হলো, ফারাবীর সত্যি তাকে এতোটা অস হ্যকর মনে হয় তা বুঝতে এতো সময় নিলো কেনো,এতোটাও অবুঝ তো সে নয়।ত র্ক করে, চিৎকার করে কতো দিনই বা টিকে থাকা যায়।নিজেকে শান্ত করার জন্য না হয় উঁচু কন্ঠে কিছু শব্দ বলা যায় গলাবাজি করা যায়।কিন্তু দিন শেষে সেই সব অপমান গুলো যেনো গলায় এসে দলা পেকে যায়।
তরী বেরিয়ে গেছে দরজা ছাড়িয়ে ফারাবী ঘটনার আকষ্মিকতা বুঝে উঠতে পারলো না সাথে সাথে,কিছু সময় অতিক্রম হতেই বুঝলো সে কি করেছে?আর তরী এতো রাতে একা বেরিয়ে গেছে!
ফারাবী দিক বেদিক ভুলে দৌড় লাগালো মেয়েটাকে ওভাবে বলা একদম উচিত হয়নি তার।তরী তো ইচ্ছাকৃত ভাবে তার সাথে কথাই বলতে চায় না।আর সে কিনা মেয়েটাকে কতোকিছু বলে দিয়েছে রাগে নিজের চুল নিজেই খামচে ধরেছে ফারাবী,মেয়েটা এতো জেদী কেনো সকালে ও যেতে পারতো।রাতের বেলা কেনো ছুটতে হবে।

তরী বৃষ্টি ভিজছে আর হেঁটে যাচ্ছে,কোথাও তাকানোর মতো তাড়া যেনো নেই।ফারাবী ততক্ষণে দৌড়ে এসে দাঁড়িয়েছে তরীর সামনে, তরী পাশ কাটাতে চাইলো, ফারাবী এবার সামনে দাড়িয়ে এক হাত চেপে ধরলো

,,বাসায় চলো!

,,বাসায় ই যাচ্ছি, হাত ছাড়ুন।

,,আঙ্গিনা!

তরীকে এলোমেলো করে দিতে একটা ডাকই যেনো যথেষ্ট, কি আছে এই সম্মোধনে!এতোটা মায়া কেনো এই ডাকে তরী শত চেয়েও কেনো উপেক্ষা করতে পারে না।
ফারাবী হিম শীতল কন্ঠস্বর
,,রাগ করে চলে যাচ্ছেন মিসেস!

তরী নিরুত্তর, তা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো ফারাবী।বৃষ্টিরা আপন মনে ছুঁয়ে দিচ্ছে দুজনকে।পানিতে ভিজে তরীর গায়ের জামা লেপ্টে গেছে শরীরের ভাজে।সব অঙ্গ যেনো জানান দিচ্ছে নিজেদের উপস্থিতি।
ফারাবী হুট করে তরী থুতনি চেপে ধরলো মুখটা উঁচু করে ধরে নিজ থেকেই বললো

,,আজ কাজে একটু বেশিই ঝামে লা হয়েছে,মেজাজ টা একটু বেশিই খা’রাপ ছিলো,তাই সে সব রাগ আপনার উপর ভুল করে ঝেরে দিয়েছি।সরি মিসেস!

শিরশিরে অনুভূতি ছড়িয়ে পড়লো তরীর পুরো শরীর জুড়ে,মৃদু কেঁপে উঠলো সে।

,,প্লিজ বাসায় চলো!
না হয় কিন্তু
এবার মুখ খুললো তরী
,,না হলে কি করবেন?
ফারাবী এক টানে তরীকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো,কোমড় পেঁচিয়ে ধরতেই,তরী সরার চেষ্টা করলো,ফারাবী আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।

,,বৃষ্টিকে রোমাঞ্চকর বলে মানা হয় জানো তো,
বৃষ্টিতে যে কখন থেকে ভিজে চলেছো নিজের দিকে খেয়াল করেছো একবার?তুমি তো জানো আমি মোটেও মহান কোনো সাধুপুরুষ না!তার উপর আমরা দুজনই কিন্তু বিবাহিত,তুমি কি চাও রোমান্টিক পরিবেশে আমার সাথে রোমান্স করতে!
তুমি না চাইলেও কিন্তু কোনো একটা অনর্থ করে ফেলবো আমি।এখন ভেবে দেখো এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে তোমার সাথে কি কি হতে পারে।

তরী চোখ বড় বড় করে তাকালো কি সব বলে যাচ্ছে এই ছেলে।
তরী ফারাবী কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো,উল্টো ঘুরে হাঁটা দিলো,বিরবির করে বললো
,,আপনি একটা যা তা।

ফারাবী হাসলো মেয়েটাকে যে এভাবে ভাগে আনা যাবে সে জানতো,হাত ধরতেই এর কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়।অন্য কিছু হওয়ার আগে নিশ্চিত হার্ট অ্যা টাক করবে এই মেয়ে।
———
রুমের এক কোনে দু হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে তরী,একটু পর পর নিজের বাহু ঘঁষছে।শীত লাগা শুরু হয়েছে।
ফারাবী ড্রেস চেঞ্জ করে এসে তরীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলো,ফারাবী আলমারি খুললো চট করে, একটা শাড়ি এগিয়ে দিলো তরীর দিকে।
তরী মুখ উল্টে ফেললো,বদ একটা ছেলে ফ্লাটে কি মেয়ে এনে রাখে নাকি,আনতেও পারে এর বিশ্বাস নেই।মেয়েদের জামাকাপড় এনে রেখেছে।

,,নাও এটা, যাও চেঞ্জ করে এসো।

তরী নিলো না তেজ দেখিয়ে বললো

,,আমি কেনো অন্য মানুষের জিনিস নিবো দরকার পড়লে সারা রাত ভিজে কাপড়েই থাকবো।

ফারাবী কপালে দু আঙুল চালালো,কপাল ঘষে তরীকে বললো।

,,এটা তোমার প্রিয় শাশুড়ী মায়ের!

তরী তাকালো ফারাবীর দিকে, সে ভাবছে মন পড়তে পারে নাকি এই ছেলে।ফারাবীর মুখে হাসি, ছেলেটার শব্দ বিহীন হাসিটা মারাত্মক সুন্দর, তরী কে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে

,,আমি জানি আমি একটু আকটু হ্যান্ডসাম তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবে,ছি!মিসেস তোমাকে তো ভালো মনে করেছিলাম।এই বৃষ্টি ভেজা এক রাতে তুমি একটা একা ছেলেকে পেয়ে সুযোগ নিতে চাইছো!ইট’স নট ফেয়ার।

তরী মুখ কুঁচকে শাড়িটা টেনে নিলো,রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে গেলো মুখে বললো
,,অসভ্য!

ফারাবী টেবিলের সামনে গিয়ে বসলো খাবার দেখে বুঝাই যাচ্ছে বাসা থেকে দিয়ে গেছে,যা একটা বউ পেয়েছে জীবনে আর বউয়ের হাতের রান্না খাওয়া হবে না তার।বজ্জা ত মেয়ে একটা,নাকের ডগায় রাগ নিয়ে ঘুরে!

তরী বেরিয়ে আসলো হালকা লেমন কালারের শাড়িটা পড়ে,ব্লাউজ ফিট হয়নি ঠিক মতো, এটা আশাও করেনি তরী।বেরিয়ে গেলো রুম থেকে,টেবিলের সামনে দাড়িয়ে প্লেট উল্টে খাবার বেড়ে দিলো নিশব্দে।ফারাবীর পাশে দাড়িয়ে কাজ করায় ভিজে চুল গিয়ে বাড়ি খাচ্ছে ফারাবীর টি শার্টের উপর।

তরী খাবার দেওয়া শেষে নিজের চুল ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
,,বিরক্তিকর চুল তোকে নেহাৎ ভালোবাসি না হয় কবেই কেটে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে আসতাম,বেয়াদব চুল কোনো মেনার’স নেই সব সময় বিরক্ত করা তোর স্বভাব!

ফারাবী বোকার মতো তাকিয়ে আছে, এই মেয়ে কে? কোথা থেকে আসলো,আজব আজব কান্ড কারখানা কোনো ভিনগ্রহের প্রাণী ছাড়া কেউ করবে না।নিজের চুল কে শাসাচ্ছে,অবিশ্বাস্য!

তরী রুমে দিকে যায় নি একবার ও সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো, পুরো কাহিনি একবার দেখলো ফারাবী

,,এই না খেয়ে শুয়ে পড়েছো কেনো?পরে তো বাসায় গিয়ে নালিশ করবে আমি তোমাকে খেতে দেয়নি।

,,খাবো না আমি, একদম কথা বলবেন না আপনি আমার সাথে।

,,রুমে গিয়ে ঘুমাও তাহলে।

,,আপনার রুম আপনি ঘুমান।কখন আবার বলে বসবেন তোমার সাথে ঘুমাতে আমার রুচিতে বাঁধছে, আমার বিছানা নোং রা হয়ে যাবে।তোমার সাথে ঘুমাতে পারবো না।তাই এখানে ঘুমাচ্ছি সকালে আপনার সোফাতে এনে পবিত্র জল ছিটিয়ে দিয়েন আমার অস্তিত্ব ও থাকবে না তাহলে আর!

ফারাবী চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো,আসল ফর্মে ফিরে এসেছে মহিলা।ঠিক তখনকার কথা গুলা নিয়ে এখন থেকেই খোঁটা দিবে।মানে কতোবার শুনতে হবে সেটাই ভাবছে ফারাবী কেনো যে এই মেয়েকে কথা শুনাতে গেলো?মন চাইলো নিজের মাথায় দুইটা বারি দিতে।

তরীর সামনে ঝুঁকে যেতেই তরী হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়লো

,,কি সমস্যা হুটহাট কাছে চলে আসেন কেনো?

ফারাবী তরীর গালে হাত রাখলো,শীতল শক্তপোক্ত হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠলো তরী।আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো।এই ছেলেটা কেনো এরকম কর্মকান্ড করে বসে আচমকা!তরী নিজেকে সামলে নিলো দ্রুত
চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো ফারাবী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

,,মন খারাপ কেনো তোমার?

তরী অবাক হলো কিছুটা ফারাবী কি করে বুঝলো?ফারাবী আবার বললো

,,বাবা, মায়ের কথা মনে পড়ছে তোমার?তাদের কে দেখতে যেতে চাও!

তরী নেত্রপল্লব ঝাপটালো কয়েকবার ছোট একটা শ্বাস ছেড়ে বললো

,,আমার বাবা, মা নেই ফারাবী!

ফারাবী ভিতরে অপরাধবোধ টা যেনো জেঁকে বসলো সে জেনে হোক বা না জেনে মেয়েটাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।সে কি করবে চাইবে সব কিছুর ক্ষমা!মেয়েটাকে কি তাকে এতো সহজে মেনে নিতে পারবে।সেদিনের ঘটনা টা যদি না ঘটতো,হয়তো এই মেয়েটি তার জীবনে আসতো না।বাবা কেনো তাকে তরীর সাথে বিয়ে দিয়েছে এখন কারন টা স্পষ্ট!

,,সরি!আমি জানতাম না,না জেনে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।

তরী ফারাবীর দিকে তাকিয়ে চমৎকার হাসলো।ফারাবী মনে কি যেনো একটা হলো কি যেনো সুক্ষ্ম ভাবে গেঁথে গেলো অগোচরে, অদ্ভুত শিহরণে সিক্ত হলো মন।অচেনা অজানা অনুভূতিটির নাম খুঁজত ব্যস্ত ফারাবী।সব কেমন ধোঁয়াসা স্পষ্ট নয় কেনো?ধরা দিয়েও কেনো হারিয়ে যাচ্ছে এই মিষ্টি নিদারুণ অনুভূতি!

,,আমি কিছু মনে করিনি ফারাবী।এটাতো খুবই সিম্পল একটা প্রশ্ন।পনেরো বছর ধরেই তো এই প্রশ্নের সাথে পরিচিত আমি।আগে হাজারটা অভিযোগ থাকলেও এখন নেই।দিব্বি আছি আমি,বলেই আবার হাসলো।

,,চলো খাবে,না হয় কিন্তু আমি মন খারাপ করবো!ফারাবীর এহেন বাচ্চামো সুরে বলা কথায় তরীর হাসি পেলো,এতো বড় ছেলে কিনা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে

,,আমার জন্য আপনার মন খারাপ হবে কেনো ফারাবী? বিশেষ কোনো কারন আছে নাকি?

,,কারন থাকাটা কি সব সময় জরুরি?

,,কি মশাই!প্রেমে পড়ে যাচ্ছেন নাকি আমার?

ফারাবীর সোজাসাপটা স্বীকারোক্তি

,,পড়ে যাওয়াতে তো দোষের কিছু নেই!

,,চোরাবালিতে ডুবে যাওয়ার এতো শখ কেনো ফারাবী?
একবার ডুবলে যে আর ফিরে আসতে পারবেন না, আপনি যে নিঃস্ব হয়ে যাবেন!কেনো নিঃস্ব হতে চান সাদরে?
আমি এক মরুভূমির মরিচীকা, যাকে ছোঁয়ার, দেখার তৃষ্ণায় আপনি মরণ*ব্যাধি পিপাসায় দিগন্ত হারাবেন।
পা*গলের ন্যায় দিক বেদিক ছুটবেন শুধু পাবেন না আমায়।কেনো জেনে শুনে ঝাঁপ দিতে চান?ম*রণ কুন্ডে!

আমিও তো হতে পারি কোনো এক মায়াবীনি!আপনার কি ভয় পাওয়া উচিত না?
চলবে…..