বিষচন্দ্রিমা পর্ব-০৯

0
2

#বিষচন্দ্রিমা
#পর্ব৯
#তামান্না_আনজুম_মায়া
ভার্সিটিতে এসেই তন্ময়ের সাথে বেশ
চ টেছে ফারাবী,তন্ময় তো ঠোঁট চেপে হেসেই চলেছে বন্ধুর অবস্থা দেখে,তন্ময় নিশ্চিত ফারাবী তরীর প্রেমে ভালো ভাবেই পড়েছে কিন্তু স্বীকার করবে না এই না ছেলে।
ফারাবী চেঁচিয়ে বললো
,,তোর সাথে আমার কি কথা ছিলো তন্ময়?তুই তরীকে সব কিছু বলিস নাই কেনো?ও তো এখনো আমাকে খারা পই ভাববে।

,,খারা প ভাবলে তোর কি? তুই কি তরীকে ভালোবাসিস নাকি?ভালোবাসার মানুষের কাছে তো মানুষ তার ভালো রূপ দেখাতে চায়!

ফারাবী থতমত খেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
,,আমি ভালোবাসতে যাবো কেনো?শুধু ওই পা গল মেয়ে আমাকে কথায় কথায় ওই দিনের ঘটনা নিয়ে কথা শুনায় শুধু ওটা থেকে বাঁচতে তোর কাছে হেল্প চাইলাম,আর তুই কিনা,,

,,সত্যি! তুই তরীর প্রেমে পড়ছ নাই?

,,না!

তন্ময় কিছুটা এদিক সেদিক দেখে বললো
,,ফারাবী এখনই তরীকে দেখলাম সেকেন্ড ইয়ারের মৃন্ময়ের সাথে হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে,হেসে হেসে কথা বলতেছে দুজন!

ফারাবী অবিশ্বাস্য সুরে বলে
,,কি!ওর এতো বড় সাহস, আজকে তো এই মেয়েকে আমি মে রেই ফেলবো।

ফারাবী ছুট লাগালো সেদিকে তা দেখে তন্ময় হু হা করে হেসে উঠলো,ফারাবী এতোক্ষণে বন্ধুর ছলচাতুরী ধরতে পেরেছে,এসেই লাগিয়ে দিয়েছে এক ঘু ষি।
তন্ময় হাসতে হাসতে বললো
,,শা লা তুই তো ডুবে ডুবে জল খাস দেখছি,তরী কে তো তুই নিজে বাসায় রেখে আসলি,আর এর মধ্যেই ভুলে গেলি।

,,মজা নিচ্ছিস তো নে,সময় আমার ও আসবে।

,,আচ্ছা যা সময় করে তরীকে আমি সব বলে দিবো।

,,,,,,,,,,,
তরী বাসায় এসেই দেখে আয়রা আজ কলেজ যায়নি,কিছুটা খুশিও হয়,মেয়েটার সাথে তার ভীষণ রকমের ভাব হয়েছে কয়েকদিনে।বাড়ির বাকি সদস্য গুলোর সাথে তার সম্পর্ক ও গভীর কেউ বলতেই পারবে না এরা মাত্র কয়েক দিনের পরিচিত।

তরী তো বাসায় গিয়েই সায়বা শেখের কাছে ফারাবীর নামে বিচার ঠুকেছে।কড়াকড়ি ভাবে বলে দিয়েছে তোমার ওই আব’র্জনা মার্কা ছেলের বাসায় আমাকে আর পাঠাবা না,কি ময়লার স্তুপ বানিয়ে রেখেছে সব কিছুতে।আবার আমাকে বললো কেনো এসেছো চলে যাও,আজ তুমি এর বিচার করবে বলে দিলাম।সায়েবা শেখ হাসতে হাসতে শেষ ছেলে মেয়ে দুটো শুধু হাতে পায়েই বড় হয়েছে,এখনো বাচ্চামি করছে,কয়েকদিন পর এরা নিজেরা বাবা মা হয়ে যাবে।

তরী নিজেদের রুমে এসে আগে ফ্রেশ হয়,পরে যায় সানায়ার সাথে দেখা করতে বাচ্চাটাকে একদিন না দেখেই যেনো ওর মনে হচ্ছে কতোদিন দেখা হয় না।আজ সবাইকে বাড়িতে দেখে তরী আয়রাকে জিজ্ঞেস করলো
,,এই আয়রা আজ সবাই বাসায় কেনো?কোনো বিশেষ দরকার আছে নাকি?

,,হ্যাঁ ভাবি তোমাকে তো বলাই হয়নি।আমার বড় মামার ছেলের বিয়েতে যাওয়া হবে তিন দিন পর আজকে সবাই মিলে শপিং এ যাবে তাই।

আয়রা উল্লাসিত কন্ঠে বলে
,,ভাবি আমি আর তুমি কিন্তু ম্যাচিং করে শাড়ি কিনবো।

তরীও হেসে সম্মতি জানায়।

দুপুরে খাওয়া শেষে বাড়ির সবাই বের হয়, তিনটে গাড়িতে একে একে সবাই উঠে পড়ে।তরী আয়রার পাশে বসার জন্য গাড়ির দরজায় হাত রাখতেই কোথা থেকে উড়ে এসে ওর হাত টেনে ধরে ফারাবী।

তরী চমকে উঠে,ফারাবী সবার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে
,,তোমরা যাও, ও আমার সাথে যাবে বলেছে,তাই তো ক্লাস ফেলে দৌড়ে এসেছি!

তরী তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলে
,,কতো বড় মিথ্যুক,আমি কখন বলেছি আপনার সাথে যাবো।আমার কোনো কালের শখ নেই আপনার ওই খেঁট খেটে মার্কা বাইকে উঠার!

ফারাবী নিজের বাইকের অপমান হওয়াটা মেনে নিলো না
,,এই মেয়ে তোমার মতো দুই তিনটা মেয়ের কিডনি বিক্রি করলে ও তো আমার বাইকের দাম আসবে না,আর তুমি খেঁট খেটে বলো।

তরী মুখ কুঁচকায়,ভেংচি কেটে বলে
,,আপনার ডায়মন্ড না না কুহিনূর মার্কা বাইকে তাহলে একাই যান, আমি যাবো গাড়িতে।
তরী কথাটা বলে পিছনে তাকাতেই দেখে গাড়ি ওকে রেখেই চলে গেছে।ফারাবী পকেটে হাত ভাজ করে ঠোঁট চেপে হাসছে।

তরী রাগ দেখিয়ে বলে
,,যাবো না আমি আপনার সাথে।
তরীর বাড়ির ভিতর ঢুকতে নিলেই ফারাবী হাত টেনে বলে
,,এতো রাগ করতে নেই মিসেস!

ফারাবীর মুখে মিসেস ডাকটা সত্যি অসাধারণ, তরী হাত ঝেড়ে বলে
,,ঠিক আছে এতো করে যখন বলছেন যাবো।

ফারাবী নিঃশব্দে হাসলো,ভাঙ্গবে কিন্তু মচকাবে না মহিলা।

তরী উঠে বসতেই ফারাবী আচমকা ব্রেক কষে যার ধরুন তরী গিয়ে পড়ে ফারাবীর উপর।

,,কি সমস্যা আপনার মনে হচ্ছে বাইক না প্লেন চালাচ্ছেন।যত্তসব!

,,ধরে বসেন না হয় পড়ে হাত পা অ ক্কা পাবে মেডাম।

সবার আগে ফারাবী আর তরী শপিং মলে পৌঁছালো,পরে আসলো বাড়ির সবাই,তরী কে দাঁড় করিয়ে ফারাবী একাই চলে গেছে ভিতরে।তাকে আবার পার্টি অফিস যেতে হবে, বিয়েতে যাওয়ার আগে কাজ কিছুটা গুছিয়ে নিতে হবে।

আয়রা এসে নেমেই তরীর কাছে দৌড়ে আসলো।সবাই মিলে শপিং করছে আর নিজেদের মধ্যে গল্প করছে,ছেলেদের পোশাক তারা নিজেরা কিনবে আর মেয়েদের টা মেয়েরা।যে যার মতো করছে সায়েবা শেখ তরী কে বার বার বলছে
,,পছন্দ কর তরী।
তরীর এসবে মোটেও ইন্টারেস্ট নেই, আগেও সে কেনাকাটা করতে কম আসতো একটা উটকো ঝামে লা মনে হয়।না হয় কোনো ফ্রেন্ড কে ধরে নিয়ে আসতো সাথে।
তরী বলে দিয়েছে

,,মা আয়রার জন্য যা নিবে একই রকম দেখতে আমার জন্য ও নিয়ে নাও।আমার ওতো পছন্দ নেই।তোমার পছন্দ আমার থেকে হাজার গুন ভালো, তোমার পছন্দে আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি বুঝলে।

তরীর কথায় সায়েবা তৃপ্তির হাসি দিলেন,মেয়েটার মন সত্যি ভীষণ ভালো।কপাল করে এরকম মেয়ের মতো ছেলের বউ পাওয়া যায়।

ফারাবী তড়িঘড়ি করে দোকানে ঢুকলো,এসেই তরীর চুলে একটা টান মারলো।
তরীর মেজা জ বিগড়ে গেলো,অস হ্যকর একটা ছেলে।

তরী রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
,,শপিং মলে মানুষ আছে দেখে কিছু বললাম না,বাসায় যাই একবার আপনার চুল গুলো আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো।

ফারাবী ভাব নিয়ে চুল ঠিক করতে লাগলো তা দেখে তরী আরো এক ঝুঁকে গিয়ে বললো

,,আপনি এতোটাও সুন্দর না বুঝলেন, ভাব কম মারেন!

তরী অনেকটাই হাতের নাগালে হওয়ায় ফারাবী ও সুযোগে টুপ করে ওর গালে একটা চুমু বসিয়ে দেয়।তরী তো বিষ্ময়ে হা হয়ে গেছে।
তরী কে বেক্ক ল বানিয়ে ফারাবী ভদ্র ছেলের মতো সায়েবা শেখ কে বললো
,,মা আমি এখন চলে যাবো,কাজ আছে।

সায়েবা শেখ প্রচুর বিরক্ত ছেলে আর স্বামীর প্রতি, রাজনীতিতে কি এমন কাজ আছে এদের সারাদিন পারে তো পার্টি অফিসে বসে থাকতে আর ভাষণ দিতে, এমন ভং ধরে যেনো রাজ্যের সব কাজ এরা একা করে।

,,শপিং করেছিস তুই?

ফারাবী গর্বের সহিত বলে
,,হ্যাঁ শেষ তোমাদের মতো কি দুই চার দিন লাগাবো কয়েকটা কাপড় কিনতে।

সায়েবা শেখ রেগে বললো
,,এই তুই যা তো।
ফারাবী যাওয়ার সময় তরীর কানে ফিসফিস করে বল
,,গুড বায় মিসেস।
তরী আশেপাশে একবার তাকায় শিখা,আয়রা,তোষা এদিকেই তাকিয়ে আছে শিখা তো মিটমিট করে হাসছে।

তরী লজ্জায় শেষ,নিশ্চিত একটু আগের কাহিনি ও এরা দেখেছে,তিড়বিড় করে লজ্জারা হানা দিয়েছে তরীর মুখ জুড়ে,ফর্সা গাল পুরো টমেটো হয়ে গেছে।

ফারাবী পিঠে এক কি ল বসায় তরী মিনমিন করে বলে
,, নির্লজ্জ পুরুষ!

ফারাবী চলে যেতেই তরী কে লজ্জায় ফেলতে হাজির আয়রা আর শিখা।তরীর তো এবার লজ্জায় যায় যায় অবস্থা, এর মধ্যে তাদের ছোট চাচী রোকসানা এসে বলে
,,এই দুইজন মিলে মেয়েটাকে এভাবে জ্বা লাচ্ছিস কেনো যা বলছি।
তরী রোকসানাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে বলে
,,তুমি অনেক সুইট ছোটো মা।

আয়রা আর শিখার দিকে তাকিয়ে বলে তোমাদের সাথে আমার আর কথা নাই।
ওর কথা শুনে দুজনেই সমান তালে হেসে উঠে।

———-
,,তোমার মাইয়ার জামাইরে তো দেখলাম বউয়ের জন্য সেই দরদ।যা বুঝলাম ভালোবাসার বিয়া!প্রেম পিরিত করতো মনে হয়।

জ্যাক পাটোয়ারী খ্যাক করে হেসে বললেন
,,এসব প্রেম পিরিত বেশি দিন টিকবো না,জানোই তো মাইয়া মানুষ এমন একটা বিষ যা পুরুষেরে একবারে নিঃশেষ কইরা দেয়।
এইবার ওই মা** প্রতি ওট্টু দরদ হইতাছে আমার, পোলা জন্ম না দিয়া মাইয়া জন্ম দেওয়ায়।
এখন এই মেয়েই আমার সব পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দিবো মাঝখান থেকে ওর প্রেমে জ্বই লা পুই ড়া মর বো ফারাবী!মাইয়াটা রূপও পাইছে পুরা ওর মায়ের মতো।মাথা ন’ষ্ট করা।
আর পোলার শোকে শেষ হইবো শেখ পরিবারের মানুষের সুখ।

নাজির হেসে বললো
,,শুভ আসছে।

জ্যাক পিছনর ঘুরেই বললো
,,তা শুভ মিয়া বিশ্বাস ঘাতক হইতে মন চাইলো কেন?

শুভ নামক ছেলেটি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো,কঠিন কন্ঠে হিসহিসিয়ে বললো

,,ক্ষমতা আর লোভ মানুষকে দিয়ে সব করায় মিস্টার জ্যাক!
আমি এতোবছর ধরে কাজ করছি,এতো কষ্ট করেছি কিন্তু সবাই বাহবা দিলো ফারাবী কে, চোখ বন্ধ করে সভাপতি বানিয়ে দিয়েছে ওই পুচকে ছেলেটাকে তার থেকে বয়সে বড় আমি,অভিজ্ঞতা ও কম নয়,তার পরও কিছুই পেলাম না আমি।আমিও ওকে কিচ্ছু পেতে দিবো না সব কেড়ে নিবো ওর থেকে সব!
রাগে ফোঁসতে থাকে শুভ তা দেখে জ্যাক হাসেন।

,,তুমিই পারবে, হিং সার চেয়ে বড় শক্তি আর কি হতে পারে।যাও কাজে লেগে পড়ো।
——
বিয়েতে যাওয়ার জন্য আজ সবাই তৈরি,একটা গাড়িতে যাবে তরী,ফারাবী আয়রা,তোষা,পুষ্প,প্রেমা,অয়ন আর তামিম কে জোর করার পরও বলেছে তাদের নাকি কাজ আছে আর একসাথে সবাই পার্টি অফিস ছেড়ে চলে গেলেও তো হবে না,তবে তন্ময় কে ছাড়েনি ফারাবী এক প্রকার বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে সাথে।

গাড়িতে নিয়মমাফিক তরী আর ফারাবী লেগে গেছে,তন্ময় গাড়ি চালাচ্ছে আর একটু পর পর তরীর পক্ষ নিচ্ছে।
তোষার এসব একদম স হ্য হয়নি মনে মনে হলেও ফারাবী কে পছন্দ করতো সে,যেদিন ফারাবী বউ নিয়ে এসেছিলো সেদিন থেকেই তরী কে দেখে একদম মেনে নিতে পারেনি তোষা।তরীর সাথে মিশেও না আগ বাড়িয়ে কথাও বলে না, গম্ভীর টাইপের মেয়ে তোষা।তবুও কিছু বলার মতো মুখ নেই তার,এক পাক্ষিক সব কিছুই কুয়াশার মতো,ধোঁয়াসা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।

আয়রার মামা বাড়ির গেইটে এসে গাড়ি থামলো,তাদের অপেক্ষাতেই যেনো সবাই ছিলো।
সবার আগে এগিয়ে আসলেন ফারাবীর নানা সুরুজ তালুকদার, এই বুড়ো বয়সে এসেও মানুষ টি একদম ফিট।সুরুজ এগিয়ে এসেই বললো

,,এই ফারাবী আগে বল আমার নাত বউ,কোথায়?
সুরুজের কথা শুনে সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকালো ফারাবীর দিকে
চলবে?