বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব-০৯

0
239

#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ৯
লেখিকা: #শারমিন_আক্তার_বর্ষা

সন্ধ্যে ছয়টার ঘর ছুঁই ছুঁই শহরের এক হাইফাই রেস্টুরেন্টের সামনে রুহানি ও ওর বন্ধু-বান্ধবী’রা দাঁড়িয়ে আছে।

– ‘এ দেশের ছেলে লোকেরা রাস্তা ঘাটে রমণীদের দেখলেই হা করে তাকিয়ে থাকে! ইন্টারেস্টিং।’

মিনিট কয়েক সময় অতিবাহিত হতেই রুহানির কুঁচকানো ভ্রুজোড়া দিগুণ কুঁচকে গেলো।ওর বেশ কিছুক্ষণ ধরে মনে হচ্ছে, ওদের কেউ ফলো করছে। কিন্তু চারপাশে তাকাইলে তেমন কাউকে নজরে পরছে না। জনবহুল রাস্তায় যে যার মতো ছুটে চলেছে। শুধু কিছু সংখ্যক ছেলে মানুষ বাজে নজরে দেখছে। ঠোঁটের কোণে বিশ্রি হাসি দিয়ে চলে যাচ্ছে। দু-হাত মুঠোয় নিয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে রুহানি। নাজিন রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ইংরেজিতে বলল,

– ‘ আজ সারাদিন এই একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম। এখানকার ছেলেরা কেমন জেনো ছোট বড় বয়স্ক সব নারীর ওপরে আড় দৃষ্টিতে তাকায়।’

– ‘ নাজিনের মুখের কথা ছিনিয়ে নিলো আরিফ, ও শক্ত গলায় বলল, আমিও দেখেছি তবে তুই একটা কথা ভুল বললি, সব ছেলেরা নয়। একটা গাছের সব ফল কিন্তু খারাপ হয় না। কিছু ফল খারাপ ও কিছু ফল ভালো হয়। তেমনই সব ছেলেরা খারাপ নয়। আমি এমনও ছেলে দেখলাম যারা মেয়েদের দিকে তাকানো দূর তাদের থেকে যথাযথ দূরত্ব মেইনটেইন করে চলছে। তাই একজন /দু’জনের জন্য সম্পূর্ণ ছেলে জাতিকে খারাপ বদনাম দেওয়া উচিত না।’

কথার ছলে রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে, সকলে টেবিলে বসল। একজন ওয়েটার এসে সামান্য নাস্তার অর্ডার নিয়ে যায়। রেস্টুরেন্টে অপরপাশে ভিআইপি দের জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। দু’জন ক্লায়েন্টের সাথে কাজের আলাপ করছে, A.S! দৃষ্টিজোড়া নির্বিক রেখে ওষ্ঠজোড়া চেপে দু’হাত শক্ত করে হাত আবদ্ধ করে বসে আছে সে। হাত থেকে একটা ফাইল ক্লায়েন্টের দিকে বাড়িয়ে দেয় তাজ। তাজের হাত থেকে ফাইল টা নিয়ে তাতে চোখ বুলিয়ে A.S এর চোখে চোখ রাখে ক্লায়েন্ট। হাত জোড়া পিছনে মুঠি বেঁধে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াসিফ। গম্ভীর কণ্ঠে ক্লায়েন্টদের উদ্দেশ্য বলল,

– ‘ কাগজে লিখা শর্তগুলো তে আপনারা রাজি থাকলে সাইন করবেন তারপর ডিল হবে। নয়তো আমরা আপনাদের সাথে কোনো ডিল করবো না।’

ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে সরু চোখে ক্লায়েন্ট দু’জন একে অপরকে দেখছে। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

– ‘ আমরা এই শর্তগুলো তে রাজি। কিন্তু আমাদের ও একটা শর্ত আছে সেটা যদি A.S পূরণ করবে কথা দেয়, তাহলে আমরা সাইন করবো।’

ক্লায়েন্টের দিকে তাকাই মুচকি হাসলো A.S’ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো তাজ। মাথা ঘুরিয়ে ওয়াসিফের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে ইশারা করল সে। ওয়াসিফ কাঁধ উঁচু করে ডানেবামে মাথা নাড়ালো। এই ডিলের মধ্যে ক্লায়েন্টের কোনো শর্ত থাকবে এমন কথা ছিল না। দাঁত দিয়ে ঠোঁটে কামড় বসিয়ে কি হচ্ছে দেখছে তাজ। ক্লায়েন্ট দের সাথে কথা বলার জন্য খানিকটা সামনের দিকে ঝুঁকল A.S সরু কণ্ঠে তাদের শর্তে সম্মতি দিতে যাবে তখন গ্লাস দিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে দেখল, টেবিলের ওপরে দুইহাত রেখে তবলার মত টেবিলে শব্দ করছে রুহানি। রুহানিকে দেখে স্মিথ হাসলো সে।
তাজ A.S এর কানের কাছে ত্রস্ত কণ্ঠে বলল,

– ‘ A.S প্রবীর কল দিচ্ছে।’
____________
সারাদিন ঘুরাঘুরির পর, রেস্টুরেন্টে গিয়ে ইচ্ছে মত গিলছে নাজিন,আয়রা, রাইসা, লাবন্য অন্যদিকে নিশান, আদনান, সাইফ। বাড়িতে আসার পরপরই এক এক করে সবার পেটে মোচড় দিয়ে ওঠছে। একজন বসা থেকে ওঠে বাথরুমে যায়। তারপর সে বের হতে অন্য জন যাচ্ছে। এরকম করে সকলে সিরিয়াল ধরল। বারান্দায় গ্রিলের ফাঁকে হাত ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ায় রুহানি। ভাবান্তর দৃষ্টি আকাশের দিকে স্থির,কোথায় আছে তার বাবা? ভাবনায় ছেঁদ ঘটে হঠাৎ শ্যামার আগমনে। শব্দ করে হাসতে হাসতে বারান্দায় আসে শ্যামা। কোনো ভাবেই হাসি ধমন করতে পারছে না। অদ্ভুট শব্দ করে হাসছে। ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে তার হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলাম। শ্যামা জোরপূর্বক হাসি দমিয়ে বলল,

– ‘ রুমে চল গিয়ে দেখ একেকটার যুদ্ধ শুরু হয়েছে।’

শ্যামার কথার মাথামুন্ডু কিছু বুঝলাম না। ও আমার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলো। এসে দেখলাম রুমে তিনজন বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ও দরজা খোলার জন্য তারা দিচ্ছে। শ্যামার দিকে নির্বিকার দৃষ্টিতে তাকাই,ও আমার হাত ধরে টেনে অন্য রুমে নিয়ে গেলো। সেখানেও একই অবস্থা দেখে অভিমুখ প্রশ্ন করলাম। শ্যামা ফিক করে হেসে ফেলল বলল,

– ‘ ওপরের বাথরুমেও একই কাহিনি চলছে।’

আমার ভ্রুকুটি কুঁচকে আছে দেখে শ্যামা শালিনকণ্ঠে বলল,

– ‘ বাহিরের খাবার বেশি খেয়ে ফেলছে ওরা। তখন বলেছিলাম কম খেতে কিন্তু শোনেনি আমাদের কথা। এখন দেখ সবগুলোর বদহজম হয়েছে। শুধু তুই, আরিফ আর আমি বেঁচে গেছি। আমি যতই খাই না কেনো, আমার বাবা বদহজম হয় না।’

কথাটি এটিটিউট নিয়ে বলল শ্যামা। মিনিট পরেই তার পেটেও মোচড় দিয়ে উঠল। একহাতে পেট চাপকে ধরে,মুখমণ্ডল খিঁচে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে চেঁচিয়ে বলল,

– ‘ ওই তোরা সর আমি যাবো রেএএ।’

শ্যামা ছুটে গিয়ে ওদের সাথে ভাগ বসালো। ওদের বাথরুম নিয়ে কাড়াকাড়ি, কে আগে যাবে? করতে দেখে আমি ও আরিফ একে অপরের দিকে হাবার মতো তাকাই, শব্দ করে হাসতে শুরু করলাম।
____________
– ‘ A.S কাঁচা কাজ করে না৷ ওর মাথায় নিশ্চয়ই কোনো দুর্দান্ত প্লান রয়েছে। কিছু তো ভিন্ন করবে।’
দুইতলার একটা খালি বাসা। ফার্নিচার আসবাবপত্র কিছুই নেই। শুধু চার দেয়াল। সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে ওপরে যাচ্ছে, রফিক। দুইতলার ওপরে ডানপাশে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল। ঘরের মধ্যে তেমন কিছু নেই,শুধু চতুর্ভুজাকৃতি একটা টেবিল ও হাতে গোনা তিন চারটা চেয়ার। ঘরের পূর্ব দিকে জানালা, তীক্ষ্ণ চোখে জানালার বাহিরে দৃষ্টি স্থির করে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির পিছন দিকে একটা পুকুর, জলে ভাসছে সাদা শাপলা ফুল। শাপলা ফুলের পাতায় এক পা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি বক।মাথা ঘুরিয়ে এদিক সেদিক বারবার দেখছে। লোকটি একহাত শূন্যে ভাসিয়ে বকটাকে দেখিয়ে শক্ত গলায় বলল,

– ‘ ওই বকটা দেখছো? ওই বকটা হচ্ছে A.S এর মতো চতুর। ওকে দেখতে পাওয়া সহজ কিন্তু ধরতে পাওয়া সম্ভবের থেকে জটিল।’

কিছুক্ষণ আগে ছুটে আসা রফিক লোকটার পিছনে দাঁড়ালো। হাঁটুর ওপরে দুইহাত রেখে ঝুঁকে হাঁপাচ্ছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে ধাতস্থ কণ্ঠে বলল,

– ‘ বস! জাহাঙ্গীরের কল আসছিল। ও বলছে কাল রাতে কেউ আমাদের কয়েকজন লোকগুলোকে মে’রে ওদের ডেরার সামনে তাদের লা’শ ফেলে দিয়ে গেছে।’

রফিকের কথা কর্ণকুহরে আসতে বস নামে সম্মোধন কারী লোকটি চট করে পেছনে ঘুরে তাকাই। রফিকের শার্টের কলার চেপে ধরে, ক্ষিপ্ত কণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ল,

– ‘ কি বললি তুই?’

রফিক ঘাবড়ে যায়। সে ভয়ে ঠিক মত দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। হাত পা কাঁপছে। উপস্থিত সকলে জানে বস নামক মানুষ টা ভীষণ রাগী। সে একবার কোনো কারণ বসত রেগে গেলে তাকে শান্ত করা অসম্ভব। রফিক আমতাআমতা করতে লাগে, কিয়দংশ পর,অস্ফুটে আওয়াজে রফিক বলল,

– ‘ বস আমাদের লোক যাদের মা’র’ছে তাদের শরীরে কোনো ক্ষত নেই। জাহাঙ্গীর অনেক খুঁজে কারো শরীরে কিঞ্চিত আঘাতের চিহ্ন পায়নি।ওরা কেউ বুঝতে পারছে না খু’ন গুলো কেমনে করা হয়েছে? ভীষণ রহ’স্য’ময় মৃ’ত্যু, কারো শরীরে বিন্দু মাত্র দস্তা দোস্তির চিহ্নও পায় নাই।’

রফিককে ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলল লোকটি। রাগান্বিত কর্কশকণ্ঠে বলে,
– ‘ সব ডে’টব’ডি গুলো ডঃ আরিফ রেজার ল্যাবে পাঠানোর ব্যবস্থ করো।’ কথাটি বলে,লোকটি জানালার দিকে ঘুরে তাকাল মাত্রাতিরিক্ত রাগে চক্ষু জোড়া লাল র’ক্ত’বর্ণ ধারণ করেছে। জানালার গ্রিল দুইহাতে শক্ত করে ধরে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল,
– ‘ A.S তোর মৃ’ত্যু আমার হাতেই হবে।’

চলবে?