বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব-২৫+২৬

0
222

#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৫
#লেখিকা #শারমিন_আক্তার_বর্ষা
কপালের র’ক্ত ফোঁটা গুলো শুকিয়ে লালচে দাগ হয়ে গেছে। শরীরে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। পিটপিট করে নেত্রযুগল স্থির করে রুহানি। জানালা একপাট খোলা। গাছের লতাপাতার ফাঁক দিয়ে এক রক্তিম সূর্যের কিরণ দেখা মিলছে। চোখ মেলে রাখতে পারছে না রুহানি। ভ্রু যুগল উঁচু করে জোরপূর্বক চোখ মেলে রাখার চেষ্টা করছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা একটা পরিত্যক্ত বাড়ি। আর বাহিরে শুধু গাছপালা। যেমন মুভিতে দেখা মিলে, নায়িকাকে তুলে জঙ্গলের একটা ঘরে এনে রাখে তেমন হচ্ছে। রুহানি ধরে নেয়, এটা কোনো জঙ্গলের মাঝে একটা বাসা৷ ঘরের মধ্যে কিছু নেই। শুধু চার দেয়াল। রুহানির থেকে কিছুটা দূরে শুধু একটা চেয়ার রাখা।

ফ্লোরে রক্তগুলো শুঁকিয়ে গেছে। একমনে ভাবছে, তাকে কেনো এখানে তুলে আনা হলো? আর কেনো তার ওপর এত অত্যাচার করা হচ্ছে? ভেবে পাচ্ছে না। ভাবনার মধ্যে ফোঁড়ন কাটে। একজন লোক দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করল। শরীর দূর্বল, পেটে কিছু পরেনি। বৃথা চেষ্টা করল রুহানি। তবুও চোখ মেলে রাখতে পারল না। ভালোই হয়েছে তাছাড়া এতটা যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা ওর হয়তো ছিল না।
____________
‘রাজেশ রুহানি কে নিয়ে কোথায় রাখতে পারে? এমন কোনো জায়গা নেই। যেখানে আমরা খোঁজ করিনি। কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না এ.স। বুঝতে পারছি না রুহানি কে নিয়ে সে কোথাও গেছে?’

হাতের মধ্যে কফি মগ, চোয়াল শক্ত করে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ। তীক্ষ্ণ চোখে জানালার বাহিরে গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে রাগী চোখে তাজ এর দিকে পিছু ঘুরে তাকাল। তাজ ওরা আরিশের চোখে-মুখে রাগ দেখে চোখ নামিয়ে নেয়।

শব্দ করে হেঁটে তাজ ও প্রবীরের সামনে দাঁড়ায়৷ টেবিলের ওপর রাজেশ সরকারের সকল প্রোপার্টির হিসাব নিকাশ করছে। হাতে একটা কলম নিয়ে কাগজের ওপরে একটা বাড়ির ওপর মার্ক করে। শক্ত ও গম্ভীর গলায় বলল, ‘সব জায়গা দেখা হলেও এখনও একটা জায়গা বাকি আছে। রাজেশ সরকারের ফার্মহাউস।’

ইন্সপেক্টর নিহান এগিয়ে আসেন। মার্ক করা বাড়ির ওপরে একনজর দেখে আরিশের দিকে তাকায়। কিছু জিজ্ঞেস করবে এমন সময় আরিশ আরও বলল, ‘দুই ঘন্টা ধরে আসিফ ও হাউসের ওপর নজর রাখছে। ও আমাকে কিছুক্ষণ আগে জানিয়েছে, রাজেশ ফার্মহাউসে থেকে একাই বেরিয়ে গেছে। এবং হাউসের চারপাশে অনেক গার্ড হাউস প্রোটেকশনে আছে। আমি চিন্তিত রুহানি কে রাজেশ ওর ফার্মহাউসে রাখছে।’

ওয়াসিফ এ.স কাঁধে হাত রাখে। বলল, ‘তুই এখনও বলবি? তুই মেয়ে টাকে ভালো বাসিস না?’

প্রতিত্ত্যরে মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের করেনি আরিশ। নিশ্চুপ রয়ে যায়। বুক চিঁড়ে বেরিয়ে আসে ভারী শ্বাস। একজন গুপ্তচর খবর দিয়েছে, রাজেশ তার শহরের এক ফ্ল্যাটে উঠেছে। রাজেশ কখন কোথায় যাচ্ছে সে খবর এ.স কে পাই পাই জানানো হচ্ছে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। কেউ এখনও রুহানির খবর পায়নি। রুমের মধ্যে একেক জন একেক রকম করে বসে আছে। শ্যামা, নাজিন, লাবণ্য, রাইসা ও আয়রা অনেকক্ষণ কান্না করেছে। সকলের চোখের নিচে কালচে দাগ হয়ে গেছে। বিছানার এককোণে বসে নাক টানছে শ্যামা। রুহানির হারানোর সংবাদ এখনও ইয়ানা কে জানানো হয়নি। জড়ানো কণ্ঠে বলল, ‘রুহির কিছু হলে আমি আন্টিকে কি জবাব দিবো? আন্টি যখন জানতে চাইবেন, উনার মেয়ে কোথায়? তখন আমি কি বলবো?’

আদনান ও সাইফ ভারী গলায় বলল, ‘তোরা কান্নাকাটি বন্ধ কর। আমাদের রুহি একদম ঠিক আছে। দেখিস চলে আসবে৷ হয়তো এদিক ওদিক কোথাও গেছে। আর ওর ফোনের ব্যাটারি ডাউন হয়েগেছে।’

আরিফ ও নিশান সোফার ওপর থেকে ওঠে দাঁড়ালো। একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, ‘তোদের মতো আমি ঘরের মধ্যে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারবো না। আমরা দু’জন যাচ্ছি রুহিকে খুঁজতে। পুলিশের ওপর আমি ভরসা করতে পারছি না। আমাদের বন্ধু বিপদে আছে। আমরা হেলাফেলা করতে পারবো না।’

বলে ব্যস্ত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। পিছু পিছু সাইফ ও আদনান হনহনিয়ে বের হল। বাড়ির সামনে চারজন দাঁড়িয়ে গবেষণা করছে। কে কোন দিক যাবে?

রুমের মধ্যে বসে কান্না কাটি করে লাভ নাই। শ্যামা ওদের সাথে নিয়ে বের হয়ে যায়। ওরাও বসে থাকতে পারছে না। নিজেদের খুঁজতে হবে।
__________
গোটা ১দিন ৫ঘন্টা সময় ধরে রুহানির ফোন বন্ধ। লাগাতার কল দিয়েছে ইয়ানা। কিছুক্ষণ পরপর কল দিচ্ছে তবুও ফোন বন্ধ। রুহানির নাম্বার ছাড়া ওর কোনো বন্ধুর বাংলাদেশ নাম্বার ইয়ানার কাছে নেই। হঠাৎ মেয়ের ফোন বন্ধ হওয়ায় চিন্তা সে। লাস্ট রুহানির সাথে কথা হয়েছিল তখন, যখন রুহানি এয়ারপোর্ট পৌঁছে ছিল। তার পর এতক্ষণে রুহানির ওর মা’র সাথে কানাডা থাকার কথা। মেয়ে আসছে শুনে এক ঘন্টা আগে কানাডার এয়ারপোর্টে ইয়ানা অপেক্ষা করছিল। কিন্তু রুহানি আসেনি আর না ওর বন্ধু রা আসছে। তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে আসে। মনের মধ্যে ধুকধুক করছে। অজানা এক ভয়ের আশংকায় চোখ বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরে।
_________
অস্বস্তি হচ্ছে, গলার টাই ঢিলে করে দিলেন। তবুও অস্বস্তি কমছে না। গলা থেকে টাই খুলে টেবিলের ওপর রাখে। ঘন্টা খানেক সময় ধরে অফিসে আসছে ইয়াসির। অফিসে না এসেও অফিসের সব খবর উনি রাখেন। কিছুক্ষণ আগে অফিসের পিএম কল দিয়ে উনাকে জানায়। এ.স আজ একবারও অফিসে আসেনি। আর তাকে কলেও পাওয়া যাচ্ছে না।

খবরটি শুনে অফিসে চলে আসে ইয়াসির। নিজেও বার কয়েক আরিশ কে কল দেন। কিন্তু আরিশ কল রিং হলেও রিসিভ করে না।

বেশ গম্ভীর হয়ে সোফার ওপরে বসে পরেন। আরিশের মিটিং রুমটা হচ্ছে অনেক বড়। রুমের পাশে ছোট ছাঁদ রয়েছে। হঠাৎ করে ইয়াসিরের অস্বস্তি অনুভব হতে লাগল। গলা শুকিয়ে আসছে। বুকের মধ্যে বার বার মোচড় দিচ্ছে। ভয় লাগছে, কিসের জন্য ভয় পাচ্ছেন উনি। অস্বস্তি কমানোর জন্য টেবিলের ওপর থেকে এক গ্লাস পানি পান করেন। তবুও কিছু হয় না। টাই খুলে টেবিলের ওপর রাখেন। হেঁটে ছাঁদে চলে আসেন। কিছুটা অস্বস্তি কমছে এই আশংকায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ইয়াসির কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে৷ বার বার বুকের মধ্যে অজানা ভয় বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে খুব আপন কাউকে হারাতে চলেছে। বা হারিয়ে ফেলেছে।
___________

রাজেশ সরকার নিজ ফ্ল্যাট থেকে বের হচ্ছে। কানে ফোন, কারো সাথে কথা বলছে। দুই জোড়া চোখ আড়াল থেকে উনার ওপর নজর রাখছেন। গাড়িতে ওঠে বসেন। গাড়ির ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেন। নির্জন রাস্তা দিয়ে গাড়িটি চলছে, ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোন স্ক্রোল করছে রাজেশ।

রাজেশের গাড়ির থেকে অনেকটা দূরে সাত আটটা গাড়ি ওর গাড়িটা কে ফলো করছে। সেদিকে রাজেশ বা ওর ড্রাইভারের খেয়াল নেই। কিছুক্ষণ পর, বাগান বাড়ির সামনে আসে গাড়ি থেকে নেমে পরে। রাজেশ কে দেখে একজন পিস্তল হাতে লোক এগিয়ে আসে। রাজেশ তার সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে চলে যান। বাড়ির অন্য দিকে খোলা মেলা আকাশের নিচে বসে পা ঝুলিয়ে বসে কথা বলছে রাজেশ। এমন সময় একজন লোক সাহস করে সবার মাঝখান থেকে সরে যায়। তারাতাড়ি পা চালিয়ে হেঁটে যেতে লাগে রুহানি যে রুমে বন্ধি সে রুমটায়।

দরজা খুলার শব্দ শুনে পিটপিট করে তাকায় রুহানি। মুখের ওপরের কাপড়টা আর নাই। হয়তো কেউ খুলে দিয়েছে। রুহানি লোকটাকে দেখে অস্ফুটস্বরে বলল, ‘পানি… পানি।’

লোকটা লোভনীয় ভাবে মুখ দিয়ে জিব বের করে। জিবের লালা দিয়ে ঠোঁট মুছে রুহানির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মূহুর্তে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলল রুহানি। রুহানির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে লোকটা। বাজে মনোভাব পোষণ করে, একহাত রুহানির গায়ের ওড়নার ওপর রাখে। ওড়না ধরে টান মারল। রুহানি চট করে চোখ মেলে তাকাল। বড়বড় চোখ করে সামনে লোকটার দিকে তাকাই। লোকটা রুহানির গাল স্পর্শ করে বিশ্রী হাসি দেয়। জেনো বহু যুগ পর, এক বিশাল মাছ ধরেছে সে।

চলবে… ইন শা আল্লাহ!

#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৬
#লেখিকা #শারমিন_আক্তার_বর্ষা
দরজা খোলার শব্দে আঁতকে উঠল লোকটি। ভুলক্রমে বস এসে যদি দেখে ফেলে সে মেয়েটির সাথে কি করতে চাচ্ছে তাহলে, তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। বসের ভয়ে নিজেকে বারবার দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। একজন পুরুষের তার বিপরীত লিঙ্গের ওপর আকর্ষণ অনুভব করবে এটা স্বাভাবিক। শুঁকনো ঢোক গিলে রুহানির ওপর থেকে হাতটি সরিয়ে আনলো। শরীর কাঁপছে। আস্তে ধীরে ঘাড় কাত করে দরজার দিকে তাকাল। দরজার ওপরে হাত রেখে রাগান্বিত চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। রুহানির পাশে বসে থাকা লোকটি কে দেখতে মোটেও চিনতে ভুল হচ্ছে না আরিশের৷ কেননা সে, ভিডিও তে দেখেছিল লোকটাকে।

ঘোলাটে দৃষ্টি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না। বার কয়েক চোখের পলক ফেলল। মুখ দিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। লোকটার অভয়ব রুহানির কাছে আরিশের মতো লাগছে। আরিশের মতো লম্বা, চুলগুলো বড় বড় ও আরিশ যে ধরণের পোশাক পরে সেই রকম পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছে। অস্ফুটে আওয়াজে বলল, ‘এ.স।’

লোকটা লাফিয়ে ওঠে দাঁড়াল। আরিশের সামনে এসে আঙুল তুলে বলল, ‘কে রে তুই? এখানে আসার সাহস কোথায় পেলি? যা বলছি এখান থেকে নয়তো…’

আরও কিছু বলার আগে আরিশ লোকটার শাহাদাত আঙুল টা শক্ত করে ধরে মোচড় দিয়ে দেয়। হয়তো ভেঙে ফেলছে। লোকটা ব্যথায় চিৎকার দিবে সে সময় আরিশ লোকটাকে টেনে বুকের সাথে চেপে মুখটি বন্ধ করে ধরে। লোকটি আওয়াজ করতে পারছে না ছটফট করছে। তীক্ষ্ণ চোখে ফ্লোরে পরে থাকা রুহানির দিকে একবার তাকাল আরিশ। মেয়েটা একবার চোখ বন্ধ করছে আর একবার চোখ মেলে তাকাচ্ছে। রুহানির করুণ অবস্থা দেখে আরিশের রাগ আরও বেড়ে গেলো। লোকটাকে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করায়। সজোড়ে লোকটার তলপেটে লা’ণ্থি মারল। লোকটা তলপেটে হাত দিয়ে কয়েক কদম দূরে সরে যায়। আরিশ এত জোর লা’ণ্থি মারছে যে লোকটার মুখ দিয়ে টূ শব্দ টাও বের হচ্ছে না। লোকটার সামনে এসে দাঁড়ালো।

চুলের মুঠি ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে শক্ত ও রাগী গলায় বলল, ‘তোর এত বড় সাহস তুই আমার কলিজার গায়ে হাত দেওয়ার দুঃসাহস করিস। তোর আজ এমন অবস্থা করবো, মানুষ তোকে দেখেও ভয়তে আঁতকে উঠবে।’

রুহানির চোখ বন্ধ থাকলেও কান খাড়া। সে কানে আরিশের বলা সব কথাই শুনছে৷ প্রচুর বাজে ভাবে মে’রে লোকটাকে আহত করল আরিশ। লোকটা ফ্লোরে পরে আছে৷ দু-হাত জোর করে ইশারায় আরিশের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে একটা ব্লেড দেখতে পেলো। হেঁটে ব্লেড টা হাতে নিয়ে, লোকটার বুকের ওপর হাঁটু ভোড় দিয়ে বসে। লোকটার মুখ দিয়ে র’ক্ত বের হচ্ছে। র’ক্তা’ক্ত শরীর কে আরও র’ক্তা’ক্ত করতে ব্লেড দিয়ে হাত কাটলো। ভিডিও তে যেমন রুহানির মুখ বাঁধা ছিল, ঠিক তেমনই লোকটার মুখ শক্ত করে বেঁধে দিছে আরিশ। দু’টি চোখ দিয়ে পানি পরছে, এত যন্ত্রণা হচ্ছে বলে বোঝানো সম্ভব না।

হাত ও বুকের ওপর ব্লেড দিয়ে কাটলো। লোকটা সর্বোচ্চ শক্তি তে চিৎকার দিচ্ছে কিন্তু মুখের বাহিরে উহহহ, উহহ শব্দ ছাড়া কিছুই আসছে না। র’ক্তা’ক্ত ব্লেডটি দুই আঙুলের মাঝে রেখে কয়েকবার চর্কির মতো ঘুরালো৷ পরক্ষণে লোকটার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে কর্কশকণ্ঠে বলল, ‘এই চোখ দিয়ে তুই আমার প্রাণভোমরার ওপরে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিস তোর এই চোখ আমি নষ্ট করে ফেলবো।’

বলে ব্লেড দিয়ে লোকটার দু’টি চোখের ওপর টান মারল। দু’টি চোখ দিয়ে গলগলিয়ে র’ক্ত বের হচ্ছে। শরীর কাঁপুনি দিয়ে মা’রা যায় সে। এখনও আরিশের রাগ বিন্দুমাত্র কমেনি, ব্লেড দিয়ে লোকটার বুকের ওপর আরও কয়েকটা জায়গা কে-টে ফেলল। চট করে দাঁড়াল। বা-হাত দিয়ে সামনে পরে থাকা চুলগুলো পিছনে ফেলল। রাগে লোকটার নিথর দেহের ওপর পা দিয়ে কতগুলো লাণ্থি মারল।

রুহানির দিকে তাকাল এগিয়ে গেলো ওর দিকে। শরীরে বিন্দু মাত্র শক্তি নেই মেয়েটার। একটু নড়তেও পারছে না। হাঁটু ভাজ করে রুহানির সামনে বসে। র’ক্তমাখা চুলগুলো হাত দিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দেয়। হাত দিয়ে বুঝতে পারে রুহানির সেন্স নেই। ও জ্ঞান হারিয়েছে। রুহানির মাথার কাছে বসে আরিশ। তার মাথা কোলে নেয়। রুহানির ক্ষত বিক্ষত শরীরের দিকে তাকাল। মাত্রাতিরিক্ত রাগে শরীরের র’ক্ত টগবগিয়ে উঠছে। ইচ্ছে করছে এই দুইহাত দিয়ে রাজেশ কে গিয়ে খু-ন করতে। রুহানির মুখশ্রীর ওপর হাত বুলিয়ে নির্মূল কণ্ঠে বলল,

‘আমি নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করবো? আমার জন্য আজ তোমার এই অবস্থা আমি ওদের একটা কেও ছাড়বো না।’

রুহানিকে পাঁজাকোলে তুলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রাজেশের গাড়ি ফলো করে আসছিল। এমন সময় ইন্সপেক্টর নিহানের গাড়ি থেকে শুরু করে সবার গাড়ির টায়ার পাম্চার হয়ে যায়। এটা রাজেশের কোনো চক্রান্ত কেননা ওর গাড়ি গেলো কিছুই হয়নি কিন্তু ওদের গাড়ি সবগুলো একসাথে টায়ার পাম্চার। বিষয়টা মোটেও সুবিধার লাগেনি আরিশের কাছে। সে ধ্রুত দৌঁড়ে রাজেশের গাড়ি ফলো করে। দৌঁড়ে আসায় অনেকটা দেরিতে পৌঁছেছে। তবে আল্লাহ রহমত সঠিক সময়ে আসছে। আর একটু দেরি হলে কি যে হতো। গাড়ির এই ভাঙলো সম্পর্কে হাতে গোনা কয়েক জন জানে। আর জানলেও কেউ চিনে না। কোথায় অবস্থিত। ইন্সপেক্টর কে লোকেশন পাঠিয়ে দেয় আরিশ মেসেজে। এবং ওরাও টায়ার চেঞ্জ করে লোকেশন অনুযায়ী আসছে।

একটা নারিকেল গাছের আড়ালে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে রয় আরিশ। তখন দেখে, একজন লোক সকলের আড়ালে ভাঙলোর সিঁড়ির দিকে যাচ্ছে। এবং সে বারবার আশেপাশে দেখছে, কেউ তাকে দেখছে কি না। সেটা লক্ষ্য করছে। আরিশ লোকটাকে ফলো করে ওপরে আসে। দ্বিতীয় তলায় এসে হারিয়ে ফেলে লোকটা কোন দিকে গেছে ও কোন রুমে গেছে। কিছুদূর আসতে দেখে একটা রুমের দরজা হাল্কা ফাঁক করা। তারপর সে দ্রুত দরজার সামনে এসে দরজা খোলে ফেলে এবং রুহানিকে পায় সাথে সে লোকটাকে।
__________
আরিশ কে দেখে ফেলে রাজেশ। চেয়ারে লা’ণ্থি মেরে ওঠে দাঁড়াল। পাশে একজনের কান বরাবর চড় মারল। রাগী গলায় ধমক দিয়ে বলল, ‘এ.স এখানে এসে চলে যাচ্ছে তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার কথা গিলছিস। যা গিয়ে ওরে আঁটকা।’

রাজের অনুমতি পেয়ে সবাই দৌঁড়ে গেলো আরিশের দিকে। এই সময়ে কারো হাতে পি-স্তল নেই। তাদের মাথায় কখনো আসেনি আরিশ এখানে পৌঁছে যাবে। একটা রুমের মধ্যে সকলের পিস্তল একসাথে রাখা আছে। আরিশ এর সামনে এসে সবাই দাঁড়াল। রাগী চোখে সকলের দিকে তাকাই আরিশ। রুহানি কে একপাশে ঘাসের ওপর শুইয়ে দেয়। একাই লড়তে লাগল সবার সাথে। রাজেশ এগিয়ে আসে আরিশের দিকে। কতদিন পর, তার শিকার কে একা পেয়েছে। এবার সে তার প্রতিজ্ঞা পূরণ করবে।

আরিশের সামনে আসতে আরিশ সকলকে ছেড়ে রাজেশ কে ধরলো। অন্য দিকে কয়েকজন একসাথে এসে আরিশের পিঠে মারছে। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই আরিশ রাজেশের নাক বরাবর ঘুষি মারল। নাক দিয়ে র-ক্ত বের হচ্ছে।

হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামল ভাঙলোর সামনে। একে একে তাজ, প্রবীর, আমান ও ওয়াসিফ নেমে দৌঁড়ে আরিশের দিকে আসল। চারজন মিলে সবাইকে মারছে। রাজেশকে মেরে আহত করে ফেলল আরিশ। কিছুক্ষণ পর এখানে এসে পৌঁছালো ইন্সপেক্টর নিহান ও আদ্রিক। এবং তাদের পুলিশ অফিসার্স। নিহানের অনুমতি পেয়ে অফিসার রা সবাইকে এ্যরেস্ট করল। রাজেশ কে নিহান কর্ণ ও আদ্রিক আহির মির্জা দুই পাশ দিয়ে শক্ত করে ধরল।

অফিসার গণ রাজেশের লোকগুলোকে নিয়ে যাচ্ছে, আরিশ এগিয়ে গেলো। তাদের মধ্যে হতে দুজন কে নিয়ে আসে। তাজ, প্রবীর ভ্রু কুঁচকে আরিশের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে। আমান ও ওয়াসিফ পুলিশের সাথে গেছে।

কপাল চুলকে আরিশ দু’জনের উদ্দেশ্য বলল, ‘এই হাত দিয়ে তোরা ওরে আঘাত করছিস তাই না। হুংকার দিয়ে বলে, তোদের এই হাত আমি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিবো।’

চোখ জোড়া বড়সড় করে তাজের দিকে তাকাল। আরিশের চোখ দেখে তাজ মাথা দুলিয়ে অন্য দিকে চলে যায়। দু’টো মোটাতাজা দুইটা লাকড়ি দিয়ে আসে। একটা পাস করে প্রবীরের হাতে, তারপর দুজন ইচ্ছে মতো লোক দুটোর হাতে মারছে।

রাজেশ নড়েচড়ে উঠছে। রাগী গলায় বলল, ‘তোমাদের সামনে ও একটা ক্রিমিনাল হয়ে মানুষ দু’জনকে মারছে আর তোমরা কিছু বলছো না। আমি তোমাদের নামে কমপ্লেন করবো।’

আদ্রিক হেয়ালি করে বলল, ‘আগে নিজে তো বাঁচো।’

রাজেশ তেজ দেখিয়ে বলল, ‘তোমরা আমার কিচ্ছু করতে পারবে না। তোমরা হয়তো জানো না, দেশের বড়বড় লোয়ার আমার পকেটে আছে। এক ঘন্টার মধ্যে আমার জামিন করিয়ে ফেলবে।’

আরিশ ভারী শ্বাস ফেলে রুহানির দিকে এগিয়ে গেলো। তাকে পূণরায় পাঁজা কোলে তুলে নেয়। রাজেশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘তোর সাথে আমার শত্রুতার সূত্রপাত কোথায়? আমার যতদূর মনে পরে, তোর কোনো কাজে আমি বিগড়া দেইনি। তবে?’

রাজেশ দাঁত কটমট করে বলল, ‘ভার্সিটির দিনে, একটা মেয়ে তোকে ভালোবাসতো আর তুই তাকে রিজেক্ট করে দিয়েছিলি মনে আছে আরিশ শাহ? আমি ওই মেয়েটার ভাই।’

রাজেশের কথা শুনে মারতে মারতে থেমে গেল তাজ ও প্রবীর। সবে পাশে এসে দাঁড়ালো ওয়াসিফ ও আমান। সকলে ভ্রু কিঞ্চিত উঁচু করে তাকাই আছে রাজেশের দিকে। আরিশের ঠিক মনে পরছে না সে অনেক মেয়েকে রিজেক্ট করছে এখন রাজেশ কার কথা বলছে?

প্রবীর এগিয়ে আসল, অস্ফুটস্বরে বলল, ‘নাজিহা?’

প্রবীরের কথাশুনে সকলের দৃষ্টি তার ওপরে গিয়ে পরল। রাজেশ উপর নিচ মাথা দুলিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ!’

‘আরিশ রাজিহা কে রিজেক্ট করছে বলে,তুমি ওর সাথে শত্রুতা করেছো?’

প্রবীরের কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে রাজেশ। চিৎকার দিয়ে বলে, ‘এই আরিশ শাহর জন্য আমার বোন আত্ম-হত্যা করেছে। এই আরিশ শাহ ওইদিন আমার বোনকে রিজেক্ট করছে বলছে ‘ও’ সেদিনই নিজের জীবন দিয়ে দিছে। আমি রাজেশ সরকার আরিশ শাহ কে বাঁচতে দেবো না।’

নাজিহা আত্মহত্যা করেছে। এই খবরটা আজ জানতে পারল ওরা। আরিশ সটানভাবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রবীর ভারী নিঃশ্বাস ফেলল। তাজ রাগী গলায় বলে, ‘এতে আরিশের দোষ কোথায়? ‘ও’ গিয়ে তোর বোনের গলা টিপে হ’ত্যা করেনি। কাউকে ভালো না বাসলে তাকে ডিরেক্ট বলে দিবে না, যে তাকে ভালোবাসে না। এখন কেউ যদি এই সত্যি টা মানতে না পারে তাহলে সেটা তার ব্যাপার। অন্য কাউকে কেউ কেন তার মৃত্যুর দায়বদ্ধতায় বাঁধবে?’

তাজের কথায় আরও রেগে গেলো রাজেশ। হুংকার দিয়ে বলল, ‘আমি বের হবো। আমার মৃ’ত্যুর আগে আরিশ শাহর নাম পৃথিবী থেকে মিটিয়ে দিবো।’
___________
একজন শিল্পপতি ও বিজনেস ম্যানকে প্রমাণ ছাড়া গ্রেফতার করা তো যায় না৷ রাজেশ সরকার কে গ্রেফতার করায় অনেক সাংবাদিক থানার সামনে এসে ভিড় করেছে। অন্য দিকে ডিআইজি দিদার ও এসে উপস্থিত। সবাইকে সাথে নিয়ে প্রেসের সামনে এসে দাঁড়ালো নিহান ও আদ্রিক। হাতে রয়েছে রাজেশের বিরুদ্ধে হাজারও প্রমাণ৷ এতবছর ধরে সে যা যা করেছে সব কিছুর প্রমাণ। সকল নিউজ চ্যানেলে একই নিউজ দেখানো হচ্ছে। হাতে হ্যান্ডকাফ লাগানো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজেশের বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ নিহানের হাতে তুলে দিয়েছে আরিশ শাহ।

এর আগে যে কটি খু/ন হয়েছে সব রাজেশ সরকার করিয়েছেন। দু’জনকে মে’রে পুকুরে ফেলে দেওয়া। রাস্তার পাশে লা’শ পাওয়া। এর আগে পরে কয়েক গুলো ক্রাইম করেছে উনি সব কিছুর প্রমাণ নিহান ও আদ্রিকের হাতে৷ ওদের দু’জন কে দেখে গর্বে বুক ফুলালো ডিআইজি। নিহান ও আদ্রিকের কাঁধে হাত রেখে স্মিত হেসে বলল, ‘আসল আসামিকে গ্রেফতার করতে তোমরা পেরেছো।’

নিহান ও আদ্রিক মুচকি হেসে বলল, ‘স্যার। সবই আপনার আরিশ শাহ র কামাল।’
___________
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে রুহানি। ডাক্তার চিকিৎসা দিচ্ছে রুহানিকে। বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ ও ওর বন্ধুরা। আমান এক সুযোগে নাজিনকে কল দিয়ে রুহানি কে পাওয়ার খবর দেয়। সকলে বাড়ি থেকে বের হয় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

আরিশের ঠিক পিছনে দাঁড়ালো ওয়াসিফ কর্কশকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘তুই সত্যি সত্যি রুহানিকে ভালোবাসিস তাহলে কেন বলিস ও’ তোর দাবার গুটি।’

একই প্রশ্ন পর পর, তাজ, আমান ও প্রবীর করল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওদের দিকে তাকাল আরিশ। এক আঙুল দিয়ে কপাল চুলকালো৷ পরক্ষণে বলল, ‘আমি রুহানি কে ভালোবাসি। এটা যেমন সত্য তেমন আরও একটা সত্য রয়েছে। আর সেইটা হচ্ছে…! ‘

চলবে… ইন শা আল্লাহ!