#বুঝে_নাও_ভালোবাসি।
#ফাহমিদা_তানিশা
পর্ব ১৫
বাসার সামনে এসে নির্ঝর গাড়ি থামালো। ধীর পায়ে বাসার উদ্দেশ্যে গেলো সে। বাসায় ঢুকতেই দেখলো আরওয়ার বাবা-মা,মারওয়া এসেছে। নির্ঝর শান্ত কন্ঠে আরওয়ার বাবাকে সালাম দিলো।তার সাথে একটু কথা বলে সে রুমের উদ্দেশ্যে গেলো।
নির্ঝর রুমে যেতেই আরওয়া প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো:আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?
_থানায়।
_মিতা আপুকে ছেড়েছেন?
_ওকে কি ছেড়ে দেওয়ার জন্য গ্রেফতার করেছে?মামলা করেছি মানে মামলা চলবে। আদালতে মামলার রায় যা দিবে তাই হবে।আমি আর কিছুতে নেই।
_মামি রাগ করবে না আপনার উপর?
_তোমার মামি রাগ করলে আমার আর কিছুই করার নেই।তিনি রাগ না করার জন্য কতো কি করেছি জীবনে।আর পারবো না। এবার উনি উনার মতো ভেবে সিদ্ধান্ত নিবে।আমার কিছুই করার নেই।
_এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। হয়তো একটা ভুল করেছে।
_এটাকে ভুল বলে না।ধরো, একজন মানুষ অজান্তে কোনো কাজ করলো যেটার ফলে অন্য মানুষের ক্ষতি হলো,বা খেয়াল না থাকায় কোনো কাজ উল্টাপাল্টা করে ফেললো তখন তাকে ভুল বলা যায়।আর সে তার ভুলটা স্বীকার করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায়। কিন্তু জেনেশুনে কারো ক্ষতি করে ধরা খাওয়ার পর যদি ভুল হয়েছে বলে ক্ষমা চাই তাকে কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে,মিতা এখনো তার অপরাধ নিয়ে অনুতপ্ত নয়। তাকে ক্ষমা করার প্রশ্নই আসছে না এখানে।
আরওয়া খুব মনোযোগ সহকারে নির্ঝরের কথাগুলো শুনছে। আসলেই নির্ঝরের প্রতিটা কথা যৌক্তিক।আরওয়ার দায়িত্ব ছিল নির্ঝরকে একবার বোঝানো আর সে তার দায়িত্বটা পালন করেছে। নির্ঝর মানলো কি মানলো না তাতে তার কিছু করার নেই।
আরওয়া চুপ করে বসে আছে এখন। পায়ের ব্যথাটা এখনো কমেনি।তাই এখনো হাঁটাচলা করতে পারছে না সে। নির্ঝর শান্ত কন্ঠে বললো: এখন তো তুমি করে বলতে পারো।
_সম্ভব নয়।
_কেনো সম্ভব নয়?
_আপনি নিশ্চয় জানেন।
_অতীত ভুলে যাও।
_অতীত ভুলে গেলে আপনাকেও ভুলে যেতে হবে।
_এমনেও তো আমাকে ভুলে গেছো। নতুন করে ভুললে কি হবে আর।
_আমি আপনার মতো নয়।
_তুমি আমার মতো নয় বলেই আপনি করে বলছো।আমার মতো হলে তুমি করে বলতে।
_আমি আপনার কোনো ক্ষতি করিনি তাই আমাকে মেনে নিতে আপনার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু আপনাকে মেনে নিতে আমার অসুবিধা হচ্ছে।
_আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?
_আপনি সেটা ভালোই জানেন। নতুন করে প্রশ্ন করে জানতে চাওয়ার প্রয়োজন নেই।
_আমাকে মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে?
_হ্যাঁ
_তাহলে বিয়ে করলে কেনো?
_আর কোনো উপায় ছিল না তাই বিয়েটা করতে হয়েছে।তা না হলে আপনার মতো মানুষকে কোনো মেয়ে নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করবে না।
নির্ঝর সামান্য হাসলো। তারপর বললো:মিতা আমাকে পাওয়ার জন্য তোমাকে খুন করতেও দুবার ভাবেনি। তুমি বলছো আমাকে কোনো মেয়ে স্ব-ইচ্ছায় বিয়ে করবে না।
_মিতা আপু আপনার ভেতরের রুপটা জানেন না।তাই পাগলামি করছে।আমি তো জেনেশুনে পাগলামি করতে পারি না।
_আমার ভেতরটা কেউ বুঝে না। তুমি এতো বোকাসোকা হয়ে আমাকে বুঝবে কি করে?
_আমার চেয়ে কেউ আপনাকে বেশি বুঝবে না।
নির্ঝর কোনো জবাব দিলো না। চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো সে।আরওয়া তা দেখে বললো:আপনি ঘুমিয়ে পড়ছেন?
_হ্যাঁ।আর কি করবো?বিয়ে করেছি তাই অফিসে ছুটি পেয়েছি। কিন্তু বউয়ের সাথে কথা বলতে গেলেই বউ দূর দূর করছে।তো ঘুমানো ছাড়া কি আর কোনো উপায় আছে?
_রাতে খাবেন না?
_না।
_আপনার শরীর খারাপ হবে তখন।
_যাকে মেনে নিতে পারোনি তাকে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না তোমার।
_ভাবতে হবে বলেই বলছি। আপনার কিছু হলে সবাই তখন আমার পেছনে পড়বে।
আরওয়ার কথা শুনে নির্ঝর বিছানা থেকে উঠে বসলো। গম্ভীর গলায় বললো: তুমি মানুষের ভয়ে আমাকে নিয়ে ভাবছো?মন থেকে ভাবনাটা আসছে না?
_আপনার জন্য কেনো মন থেকে ভাবনা আসবে?আপনি আমার কে হোন?
_তুমি এতোটা নির্দয়?
_আপনিই তো বলেছেন ভালো মানুষের সাথে ভালো আচরণ আর খারাপ মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করতে হয়।আমি সেটাই ফলো করছি।
_আমি খারাপ মানুষ?
_আপনার কি তাতে সন্দেহ আছে?আমার কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই।আমি স্ব-জ্ঞানে, ঠান্ডা মাথায় বলছি আপনি খারাপ মানুষ।
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে আরওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো সে বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে তাই কি বলবে বুঝতে পারছে না।আরওয়া খুব শান্তশিষ্ট একজন মেয়ে।তার মুখ থেকে এমন কথা শুনতে হবে তা নির্ঝর কখনো ভাবেনি।আবারো বিছানায় শুয়ে পড়লো সে। এবার সত্যি সত্যি রাগ লাগছে তার। ইচ্ছে করছে কষিয়ে একটা চড় দিয়ে বলতে,”এই দেখ আমি খুব খারাপ মানুষ।” কিন্তু মন বলছে অন্য কথা। নির্ঝর শুয়ে পড়তেই কেউ দরজায় নক করলো।বাধ্য হয়ে আবার শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো নির্ঝর।ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো তার ভাবি নিশু দাঁড়িয়ে আছে।তাকে দেখতেই বললো: তোমাকে নিচে ডাকছে।মিতার মা_বাবা এসেছেন।
নির্ঝর আরওয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে নিচে গেলো।নিচে সবাই গোল মিটিং করছে এমন অবস্থা। নির্ঝরের বাবা-মা,আরওয়ার বাবা-মা,মিতার বাবা-মা আর নির্ঝরের দাদাও আছেন।সবাই হয়তো মিলেমিশে সিদ্ধান্ত নিবে বলেই তাকে ডেকেছে। নির্ঝর গিয়ে তার দাদার পাশে বসলো। তাকে দেখতেই মিতার মা বললো:শোন,তোর এখনো বয়স কতো? দুনিয়ার অনেক কিছু তুই বুঝিস না।তাই বলছি মিতার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করবি।
নির্ঝর একটু মুচকি হাসলো। তারপর বললো:আমি আপনার পোষা কুকুর নয় যে বললেন আর আমি বুঝে নিলাম।আর আমি ছোট হলেও আমার সিদ্ধান্ত আমিই নিবো।আপনি বা আমার ফ্যামিলির কেউ আমার পার্সোনাল বিষয়ে কথা বলতে পারবে না বা আমার সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবে না।
মিতার মা চিল্লিয়ে বললেন:দেখলি রুমানা,তোর ছেলে কতো বড় বেয়াদব হয়েছে। ছেলেকে একটুও কি শিক্ষা দিতে পারলি না ?
মিতার মায়ের কথায় নির্ঝর আরো জোরে চিল্লিয়ে বললো: আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার মায়ের সাথে এই ভাষায় কথা বলবেন না। আপনি নিজেই তো আপনার মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারেননি। আপনি যদি প্রপার শিক্ষাটা দিতেন তাহলে আপনার এখানে আসতে হতো না আর এই দিনটাও হতো না।
নির্ঝরের বাবা আশরাফ চৌধুরী ছেলেকে থামিয়ে দিলেন।। তারপর বললেন: নির্ঝর তুমি থামো,আমরা বড়রা কথা বলে সিদ্ধান্ত নিই। তুমি আমাদের কথা শোনো।
আশরাফ চৌধুরীর সাথে আকরামুল হক তাল মিলিয়ে একই কথা বললেন।
নির্ঝর কিছু বলতে যাবে তার আগে নির্ঝরের দাদা বললেন:আরওয়া নির্ঝরের স্ত্রী আর মামলাটা নির্ঝর করেছে। তাহলে সে তার মতো করে সিদ্ধান্ত নিবে।এতে আমরা তো তাকে জোর জবরদস্তি করতে পারি না।
আশরাফ চৌধুরী বাবাকে থামিয়ে দিলেন। বললেন:বাবা, নির্ঝর আগে আমাদের কথাগুলো শুনুক। তারপর সে বলবে সে কি করবে।
নির্ঝর শান্ত কন্ঠে বললো: আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। আমার যা বোঝার তা আমি থানায় গিয়ে বুঝে এসেছি।
মিসেস রুমানা বললেন: মানে? তুমি কি বলতে চাও?
_আমি সন্ধ্যায় থানায় গিয়েছিলাম মিতার সাথে কথা বলতে। আমার সাথে মনিরও ছিলো। কিন্তু মিতা আমাকে দেখে উল্টো আমাকে শাসিয়ে দিলো। তার মাঝে এখনো বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই। একবারও সে ভুল করেছে এটা মেনে নিলো না।উল্টো বলে তার বাবার টাকার জোরে সে বের হবে জেলখানা থেকে। আমার সাথে তার কোনো কথা নেই।
মিসেস রুমানা বললেন:এসব মিতা বলেছে?
নির্ঝর হেসে বললো:হ্যাঁ মিতা বলেছে। আমিও আমার মতো করে সিদ্ধান্ত নিবো এখন।আমি এসবের কিছুই জানি না এখন থেকে। মিতার শাস্তি আদালত ঠিক করবে। আমার সাথে মিতার বিষয়ে কেউ কথা বলতে আসবেন না।যদি মিতা তার ভুল বুঝতে পারতো তাহলে আমি ভেবে দেখতাম কিন্তু এখন সম্ভব নয়।
নির্ঝর কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়ালো।তার গন্তব্য রুমের দিকে। পেছন থেকে মিতার বাবা বললেন, নির্ঝর আমি তোমাকে দেখে নিবো। তুমি খুব বেশি ভুল করছো। আমার মেয়ের প্রতি অন্যায় করেছো তা আমি সুদে-আসলে নিবো।
নির্ঝর হেসে বললো: আগে মেয়েকে নিয়ে ভাবুন তারপর আমাকে নিয়ে ভাবতে আসবেন।
চলবে…