বৃষ্টি ক্লান্ত শহরে পর্ব-২+৩

0
230

#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০২_০৩

শুভ্রতা লাফাতে লাফাতে যেতেই এক রুমে উঁকি দিয়ে দেখল। একজন বয়েস্ক মহিলা বসে আছে চেয়ারে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে। শুভ্রতা কপাল কুচকে তাকাতেই মহিলাটা বলে উঠলো
-“ভিতরে আসো।”

শুভ্রতা থতমত খেয়ে গেল। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বলল
-“আপনি কে!”

মহিলাটা নিজের চোখের চশমা ঠিক করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-“আমি কাব‍্যের দাদি। তুমি কি নতুন বউ নাকি।”

শুভ্রতা মুখ ফুলিয়ে বলল
-“হুম”

কাব‍্যের দাদি মিসেস আনজুমা বললেন
-“মন খারাপ নাকি রে। আয় আমার কাছে এসে বস।”

শুভ্রতা হাঁটু গেড়ে মেঝেতে বসে পড়লো। আনজুমা বেগম শুভ্রতার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন
-“জানিস তো আমার ও অনেক ছোট বেলায় বিয়ে হয়েছিল। আমার কেমন কেমন জানি লাগত। আর আমার উনি ছিল একদম কা‍ব‍্যের মতো উঁচালম্বা। আর ওর মতো রাগী আর ঘাড়তেড়া ও। উনি প্রথম দিনই আমাকে যে ধমক দিয়েছিলেন।”

শুভ্রতা চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে বলল
-“উনিও জানেন কাল রাতে কি ধমকটাই দিলো আমাকে। আমি তো খুব ভয় পেয়ে পরে সোফায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়েছিলাম। আসলেই খাটাশের খাটাশ উনি।”

আনজুমা বেগম হাসলেন শুভ্রতার কথায়। আনজুমা বেগম বললেন
-“জানিস তোর বাবা মা অনেক ভালো মানুষ। তোর শশুর আর তোর বাবা অনেক ভালো বন্ধু। আনিসুল বিদেশে সিফট হওয়ার পর যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। দেশে ফিরে কাজে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ে। পরে এই তো সাতদিন আগে জমিজমার কাজে পরশু কাব‍্যকেও ডেকে নিয়ে যায়। পরে তো হুট করেই তোকে কাল কাব‍্যের বউ করে নিয়ে আসে। আগেই অবশ‍্য কাব‍্যের সঙ্গে তোর বিয়ের কথা বলেছিল তোর শশুর আর তোর বাবা।”

শুভ্রতা চুপ করে শুনছিল আনজুমার কথা। কাকলিকে আসতে দেশে আনজুমা বেগম বললেন
-“কাকলি যা তো শুভ্রতার সঙ্গে একটু আড্ডা দে তো। মেয়েটা একা একা বিরক্তবোধ করছে।”

কাকলি হেসে বলল
-“আমি তো ওকেই খুঁজতে এসেছিল। চলো শুভ্রতা আমরা যাই।”

আনজুমা বেগম চোখ ছোট ছোট করে বললেন
-“শুভ্রতা আবার কি! ও তোর বয়সে ছোট হতে পারে কিন্তু ও তোর সম্পর্কে তো বড়।”

কাকলি ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল
-“আচ্ছা বাবা ভাবি চলেন যাই তাহলে।”

আনজুমা বেগম হাসলো। শুভ্রতা আর কাকলি চলে গেল কাকলির রুমে।

——————-

আনিসুল চৌধুরী কাব‍্যকে নিজের কেবিনে ডাকলো। কাব‍্য আসতেই আনিসুল চৌধুরী বললেন
-“কাব‍্য তোমার শশুর মারা গেছেন।”

কাব‍্য অবাক হয়ে বলল
-“বাবা উনি এমন হুট করে কেমনে কি?”

আনিসুল চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে ‍বললেন
-“তোমার তা জানতে হবেনা। শুধু এইটুকুই জেনে রাখ মেয়েটাকে এখন থেকে তোমাকেই দেখে রাখতে হবে। মেয়েটার আপন বলতে শুধু তার বাবা ছিল। যাইহোক তুমি কিন্তু ওর সঙ্গে ভালো ব‍্যবহার করবে। মেয়েটা অনেক ছোট। আর তুমি যদি ওর সঙ্গে খারাপ ব‍্যবহার করেছ তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা বলে দিলাম।”

কাব‍্য চুপ করে সব কথা শুনলো। ওর বাবা আবারও বললেন
-“যাইহোক সত্যি যতই কঠিন হোক না কেন মেনে নিতে হবে। আর তোমার সঙ্গে শুভ্রতার মিল সৃষ্টিকর্তার থেকে ঠিক করা। তাই তো দেখ ভাগ‍্যের কি পরিহাস তোমাদের কিভাবে মিলিয়ে দিলো। আমি বিশ্বাস করি তুমি তোমার দায়িত্বের ঠিকমতো যত্ন করবে।”

কাব‍্য ‍বলল
-“আচ্ছা বাবা আমি একটু আসি আমার কাজ আছে।”

আনিসুল চৌধুরী বললেন
-“যাও কিন্তু মনে যেন থাকে শুভ্রতার কথা।”

কাব‍্য চুপচাপ কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। নিজের কেবিনের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে রইলো। কি থেকে কি হয়ে গেল তার জীবনে। আগের থেকে সে প্রেম ভালোবাসা পছন্দ করতো না। কিন্তু দায়িত্ব কর্তব্য ঠিকই পালন করতে জানে সে। ওইদিন যখন কাব‍্য যায় তখন শুভ্রতার বাবা ওর হাত ধরে কান্নাকাটি করে ‍বলেছিলেন
-“বাবা আমার মেয়েটার অনেক বড় বিপদ। তুমিই ওকে বাঁচাতে পারো। তুমি দয়া করে আমার মেয়েটাকে বিয়ে করে নেও। আমি তাহলে তোমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো বাবা।”

কাব‍্য ওনার হাত ধরে বলেছিল
-“আঙ্কেল এমন করে বলবেন না।”

তখনই কাব‍্যের বাবা কাব‍্যকে বলেছিল সে যদি শুভ্রতাকে বিয়ে না করে তাহলে তার মরা মুখ দেখবে। একপ্রকার বাধ‍্য হয়েই বিয়ে করতে হয় শুভ্রতাকে। কিন্তু কি এমন বিপদ হয়েছিল শুভ্রতার। যে এমন করে বিয়ে করতে হলো। এগুলোই ভাবছিল কাব‍্য। কাব‍্যের ভাবনাই ছেদ ঘটলো মুমিনুল হকের ডাক শুনে।

কাব‍্য কাজে মন দেয়।

——————-

পরন্ত বিকেলে শুভ্রতা আর কাকলি গল্প করছিল। কাকলি বলল
-“তুমি কোন ক্লাসে পড়ছো!”

শুভ্রতা ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল
-“আর বলো না একাদশ শ্রেণিতে উঠেছি। পড়াশোনার কথা না বললে হতো না।”

কাকলি হেসে বলল
-“কেন তোমার পড়াশোনা ভালো লাগে না। আর অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমিও এবার একাদশ শ্রেণিতে পড়ছি।”

শুভ্রতা বলল
-“আমার পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না।”

আশা বেগম কাকলির রুমের বারান্দায় এসে বললেন
-“তা কেন ভালো লাগবে। গাছে উঠে বসে থাকতে বললে তো ভালোই লাগ‍বে তার।”

শুভ্রতা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো আশা বেগমের দিকে। আশা বেগম ‍টিটেবিলে চায়ের কাপ আর নুডলস দিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যেতে নিলো। তখন শুভ্রতা ওনার হাত ধরে টেনে বলল
-“শাশুড়ি আপনি খাবে না।”

আশা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“আমাকে নিয়ে তোমার এতো ভাবতে হবেনা।”

শুভ্রতা ভ্রু কুচকে বলল
-“এহ পরে বলবেন আমি শাশুড়ির খেয়াল রাখিনা। হেনতেন আরও কত কিছু। এখন চুপ করে বসেন আমি আপনার চা নিয়ে আসি।”

আশা বেগম কিছু বলতে নিবেন তার আগেই শুভ্রতা দৌড়ে চলে গেল। মুহূর্তের মধ্যেই খাবার নিয়ে চলে এলো। আশা বেগম মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।

শুভ্রতা এক চামচ নুডলস নিয়ে আশা বেগমের মুখ নিজের দিকে নিয়ে খাইয়ে দিলো। আর বলল
-“নেন খান এখন এতো ঢং আমার ভালো লাগে না। আমার ক্ষুধা লেগেছে। একাএকা খান এখন।”

বলেই মুখ ভেংচি কেটে খেতে লাগল শুভ্রতা। আশা বেগম মনে মনে হাসলেন আর ভাবলেন মেয়েটা পারেও বটে। এমন ব‍্যবহার করছে যেন তাদের কতদিন চেনে।

——————–

রাতে কাব‍্য বাসায় ফিরে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। ব‍্যাগ মোবাইল রেখে টাওয়েল নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।

আনিসুল চৌধুরী সোজা নিজের মায়ের রুমে চলে গেল। আনজুমা বেগম আধ শোয়া হয়ে টিভি দেখছিলেন। ছেলের ক্লান্ত মুখ দেখে মুচকি হেসে টিভি বন্ধ করে ছেলেকে কাছে ডাকলেন।

আনিসুল চৌধুরী মুখ ছোট করে বললেন
-“মা তোমাকে তো সব কথাই বলেছিলাম। কাল রাতে শাহিন মারা গেছে।”

আনজুমা বেগম অবাক হয়ে বললেন
-“কিভাবে কি! কি বলছিস তুই!”

আনিসুল চৌধুরী বললেন
-“হুম মা সত্যি বলছি আমি। কাল রাতে এমপির ছেলে শাহিনের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। সেখানেই ও…”

বলতে গিয়ে আনিসুল গলায় কথা আটকে যায়। কারো ফোপানো আওয়াজে দুইজন দরজার দিকে তাকায়। শুভ্রতাকে দেখে দুইজনই চমকে উঠে। আনিসুল চৌধুরী শুভ্রতাকে কিছু বলতে নিবেন তার আগেই শুভ্রতা দৌড়ে চলে যায় কাব‍্যের রুমে। রুমে দরজা লাগিয়ে বেডে উল্টা হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ গুজে হাউমাউ করে কান্না করতে লাগল শুভ্রতা।

আনিসুল চৌধুরী দরজা ধাক্কাতে থাকেন। শুভ্রতাকে নিয়ে সে চিন্তিত হয়ে পড়ে।

কাব‍্য ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে থমকে যায় শুভ্রতাকে এমন হাউমাউ করে কান্না করতে দেখে। কিছুক্ষণ ভেবে বিষয়টি বুঝতে পেরে ওর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“বাবা আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি এইদিকটা দেখে নিচ্ছি।”

আনিসুল চৌধুরী কাব‍্যের কথায় চলে যায় নিজের রুমে।

কাব‍্য ধীর পায়ে এগিয়ে যায় শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা কাধে আলতো করে স্পর্শ করে বলল
-“কান্না করোনা। দেখ কেউ তো আর সারাজীবন বেঁচে থাকে না। নিজেকে শক্ত করো। তোমাকে এমন করে কান্না করতে দেখলে কিন্তু তোমার বাবার কষ্ট লাগবে।”

#চলবে

( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিয়েক্ট-কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।)

#বৃষ্টি_ক্লান্ত_শহরে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৩

কাব‍্যের কথায় শুভ্রতার কান্নার বেগ যেন আরও বেড়ে গেল। কাব‍্য ফুস করে একটা নিশ্বাস নিয়ে দুই হাত ধরে টেনে তুলল শুভ্রতাকে। নিজের দুইহাতের মাঝে শুভ্রতার মুখটা আবদ্ধ করে আলতো করে ওর চোখে নোনা জল মুছিয়ে দিয়ে বলল
-“দেখ শুভ্রতা তুমি যতো ভেঙে পরবে মানুষ তোমাকে আরও ভাঙতে চাইবে। মানুষ তোমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে তোমাকে আঘাত করবে। নিজেকে শক্ত করে শত্রুকে মোকাবেলা করতে পারলেই জীবন সুন্দর। বাস্তবতা অনেক কঠিন শুভ্রতা।”

কাব‍্য শুভ্রতার দুই হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে বলল
-“আমি প্রমিস করছি আমি এখন থেকে তোমার পাশে থাকবো। তুমি আমাকে নিজের ফ্রেন্ড ভাবতে পারো।”

হুট করেই শুভ্রতা কাব‍্যকে জড়িয়ে ধরে ফোপাতে লাগল। কাব‍্য এতে অবাক হয় নি। কাব‍্য আলতো হাতে শুভ্রতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

খানিকক্ষণ পর কাব‍্য ধীর কন্ঠে বলল
-“চলো শুভ্রতা কিছু খেয়ে নেও।”

শুভ্রতা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল
-“না আমার ক্ষুধা নেই। আপনি খেয়ে আসুন।”

কাব‍্য কিছু বলতে নিবে তার আগেই দরজায় টোকা পরলো। আশা বেগমের কন্ঠ শুনে কাব‍্য উঠে গেল দরজা খুলতে।

আশা বেগম খাবার প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। গম্ভীর কন্ঠে কাব‍্যকে বলল
-“যা গিয়ে খেয়ে নে। সবাই তোর অপেক্ষা করছে। আমি ওকে দেখে নিচ্ছি।”

কাব‍্য বাধ‍্য ছেলের মতো চলে গেল। আশা বেগম ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে দেখলো শুভ্রতা থ মেরে বসে আছে বেডের উপর। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনি খাবারটা বেড সাইট টেবিলে রেখে বসলো শুভ্রতার সামনে বরাবর। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন
-“তুমি যদি এখন না খাও তাহলে কিন্তু তোমার বাবা কষ্ট পাবেন। বাধ‍্য মেয়ের মতো খেয়ে নেও কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।”

শুভ্রতা কিছু বলল না চুপ করে বসে রইল। আশা বেগম ভাত মাখিয়ে শুভ্রতার মুখের সামনে ধরলো। শুভ্রতা টলমল চোখে তাকালো আশা বেগমের দিকে। আশা বেগমের গম্ভীর মুখের আড়ালে যে মমতাময়ী মায়ের রূপ আছে তা বুঝতে দেড়ি হলোনা শুভ্রতার।

আশা বেগম জোর করে শুভ্রতার মুখ ধরে খাইয়ে দিলো। শুভ্রতা কিছু বলতে গেলেই আশা বেগমের ধমকানি খেয়ে দমে গেল। খাওয়ানো শেষে আশা বেগম বের হয়ে যেতেই কাব‍্যকে দরজায় দেখে বলল
-“ধমকাধমকি করিস না।”

মায়ের কথা শুনে হাসলো কাব‍্য। কাব‍্যকে হাসতে দেখে আশা বেগম ভ্রু কুচকে বললেন
-“এখানে হাসার কি হলো।”

কাব‍্য ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল
-“নিজে এতক্ষণ যে ধমকাধমকি করলে তাতে কিছু হলো না আবার আমাকে বলছো।”

আশা বেগম মুখ ঘুরিয়ে বলল
-“ওটা আলাদা কথা। আমি ধমকাধমকি না করলে ও খাবারটা খাইতো না। পরে অসুস্থ হলে কি হতো। আমাকেই তো তোর বাবা দেখতে বলতো।”

কথাগুলো বলেই গটগট পায়ে চলে গেলেন আশা বেগম। কাব‍্য মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

কাব‍্য লাইট অফ করতেই শুভ্রতা বেড থেকে উঠে যেতে নিলেই কাব‍্য ওর হাত ধরে আটকিয়ে বলল
-“সোফায় যেতে হবে না তোমার।”

শুভ্রতা গুটিসুটি মেরে বেডের বাম সাইডে শুয়ে পরলো। কাব‍্য ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বেডে ডান সাইডে আধ শোয়া হয়ে শুভ্রতার মাথায় হাত রাখলো।

শুভ্রতা রিনরিনে কন্ঠে বলল
-“আপনি ঘুমান আমার জন‍্য চিন্তা করতে হবেনা। আমি ঠিক আছি।”

কাব‍্য গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“তোমার এত কথা বলতে হবেনা চুপচাপ ঘুমাও।”

শুভ্রতা আর কিছু বলল না। চোখ বন্ধ করে রইলো। কিছুতেই ঘুম আসছে না শুভ্রতার। শুভ্রতা কাব‍্যের দিকে ফিরে দেখলো কাব‍্য সিলিংএর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শুভ্রতা রিনরিনে কন্ঠে বলল
-“আপনি কি জানেন আমাদের হুট করে কেন বিয়ে হলো!”

কাব‍্য ভ্রুকুচকে তাকালো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা সিলিং এর দিকে সোজা হয়ে সেদিকে তাকিয়ে বলল
-“শুনুন তাহলে, আমি যখন কলেজে উঠি তখন থেকেই কাহিনী শুরু। আমাদের এলাকার এমপির ছেলে তীব্র। বড় লোকের অবাধ‍্য সন্তান বলা চলে। সে কলেজের সামনে মেয়েদের টিজ করে বেড়াতো। ছেলেটা খারাপের সেরা বললেই চলে। যতো খারাপ কাজ ছিলো সব কাজই সে করতো। সে যাইহোক ওর দৃষ্টি আমার উপর পড়ে। সে আমাকে খারাপ কথা ও ইঙ্গিত করায় আমি ওকে একটা থাপ্পড় মারি। এটা নিয়ে ও একদম ক্ষেপে উঠে। বাসায় এসে হুমকি দিয়ে যায়। বাবাকে ডেকে আমাকে বিয়ে করার কথা বলে। আমার বাবা জানতেন ও কেন বিয়ে করতে চাইছে। ওর আগেও দুটো বউ ছিল। যাদের বিয়ের পর সে খুন করে। কিন্তু এই কথা সবাই জানে কিন্তু ক্ষমতার কাছে আর কি। সে যাইহোক আমার বাবা যখন ওর প্রস্তাবে রাজি হয় তখন হুমকি দেয় আমাকে তুলে নিয়ে যাবে। পরে আমাদের বাসায় টাকা গহনা সব দেয়। বাবা সবকিছু ফিরিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাবা আমাকে আপনার হাতে তুলে দেয়। উনি বলেন আমাকে না পেয়ে ওরা দমে যাবে। কিন্তু…”

কথাগুলো গলায় যেন দলা পাকিয়ে আসছে শুভ্রতার। কাব‍্য বুঝতে পেরে কাত হয়ে শুভ্রতার দিকে হলো। ধীর কন্ঠে বলে উঠলো
-“আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। তুমি চিন্তা করো না ওর শাস্তি আল্লাহ নিজের হাতে দিবেন। তুমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। দেখবে ওর শাস্তি ও পাবে। ইহকালে না পাক পরকালে তো পাবেই পাবে। আল্লাহর উপর ছেড়ে দেও।”

শুভ্রতা পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কাব‍্য শুভ্রতার মাথার হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। কথাগুলো কাব‍্যকে বলে একটু হালকা লাগছে শুভ্রতা। চোখ বুজে এলো তার। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের রাজ‍্যে তলিয়ে গেল সে।

ড্রিম লাইটের মৃদু আলোতে স্নিগ্ধ লাগছে শুভ্রতাকে। ঘুমন্ত শুভ্রতার মুখে যেন চোখ আটকে গেল কাব‍্যের। কান্নাকাটি করায় চোখ মুখ ফুলে গেছে। তাতে যেন আরও সুন্দর লাগছে। এর আগে উপন‍্যাস গল্পে মেয়েদের ঘুমন্ত চেহারার সৌন্দর্যের বিবরণ দেখেছে আজ নিজের চোখে দেখছে। উজ্জ্বল শ‍্যামবর্ণের মেয়েটাকে যেন এক অসম্ভব মোহনীয় নারী লাগছে। কাব‍্য শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছে টেরও পায়নি সে।

———————————

সকালে মিষ্টি রোদ শুভ্রতার চোখমুখে আছড়ে পরতেই ঘুম ভেঙে গেল ওর। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল সাড়ে নয়টা বাজে। হুড়মুড়িয়ে উঠলো সে। এতক্ষণে কাব‍্যরা চলে গেছে। বেড সাইড টেবিলে একটা চিঠি দেখে ভ্রু কুচকালো শুভ্রতা। শুভ্রতা চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখলো চিঠিতে লেখা
“আজ থেকে না হয় আমাদের সম্পর্কের একটা নাম দেই। বন্ধুত্ব নামক সম্পর্কটা না স্থাপন করি।”

শুভ্রতা মুচকি হাসলো। সে এখন থেকে শক্ত হবে কাব‍্যের কথাগুলো মনে গেঁথে গেছে তার। সে যদি ভেঙে পরে তাহলে তার বাবা ভালো থাকবেন না।

শুভ্রতা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চলে গেল বসার রুমে। আশা বেগম চশমা চোখে এটে খাতা দেখছেন। শুভ্রতা গিয়ে পাশের সোফায় বসে বলল
-“শাশুড়ি কি করছেন!”

আশা বেগম তল চোখে একবার তাকিয়ে বলল
-“খাতা দেখছি পরীক্ষার।”

শুভ্রতা গালে হাত দিয়ে বলল
-“একটু দয়া মায়া করে খাতাগুলো দেখেন শাশুড়ি।”

আশা বেগম ভ্রুকুচকে তাকালো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা বলল
-“মেলা কষ্ট করে ওরা পড়াশোনা করে।”

আশা বেগম বললেন
-“তোমাকে আমি আমার কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবো। যাও রেডি হয়ে আসো।”

শুভ্রতা ঝট করে উঠে বলল
-“না না আমার বিয়ে হয়ে গেছে এখন আবার কেন পড়াশোনা করবো শাশুড়ি। আমার পড়াশোনা ভালো লাগে না। ওটা ছাড়া আর যা বলবেন তাই শুনবো।”

আশা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন
-“তা হবেনা। রেডি হয়ে এসো। তোমাকে পড়াশোনা শেষ করতে হবে। আমি কাব‍্যকেও বলে দিবো ঢাকার কম্পানির দায়িত্ব ম‍্যানেজারকে বুঝিয়ে দিয়ে এখানেই থাকতে। পরে তোমার পড়াশোনা শেষে না হয় তোমাকে নিয়ে যাবে।”

শুভ্রতা কিছু একটা ভেবে আশা বেগমের পাশে গিয়ে বসে বলল
-“না পড়লে কি হয় শাশুড়ি। আমি আপনার সেবা যত্ন করবো। সংসার মন দিয়ে করবোনি। আমাকে ছেড়ে দিন শাশুড়ি।”

আশা বেগম কঠোর কন্ঠে বললেন
-“আমি কিছু মানছিনা। আমাদের বাসায় সবাই উচ্চশিক্ষিত। তোমাকেও পড়তে হবে। আমাদের বাসায় সার্ভেন্ট আছে কাজ করার জন‍্য। তোমাকে এখনি সংসারে মন দিতে হবেনা। যখন সময় হবে তখন আমি নিজেই তোমাকে সব দায়িত্ব দিবো। আর আমার সামনে এতো বাহানা চলবেনা। এখন গিয়ে রেডি হয়ে এসো। ও ভালো কথা টেবিলে খাবার আছে খেয়ে নেও ভালো মেয়ের মতো। দেড়ি হয়ে যাচ্ছে আমার যাও।”

শুভ্রতা আর কিছু বলতে পারলো। বিরবির করতে করতে চলে গেল খাবার টেবিলে।

আশা বেগম হাসলেন শুভ্রতার কাজে। মেয়েটা যে মানিয়ে নিয়েছে নিজেকে এতে শান্তি মিলছে তার।

শুভ্রতা বকবক করতে করতে খাবার টেবিলে বসেছে দেখে কাকলি ভ্রু কুচকে তাকালো শুভ্রতার দিকে। শুভ্রতা কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল
-“আল্লাহ গো কি শাশুড়ি দিলা গো। আমার পড়াশোনা নিয়ে লাগছে গো। আমার কপালটাই খারাপ কই ভাবলাম বিয়ে হয়ে গেছে আর পড়াশোনা করতে হবেনা।”

কাকলি খেতে খেতে বলল
-“এখনো তো আম্মুকে চেনোনি। তোমাকে যখন পড়াতে বসাবে তখন বুঝবে। আমাদের কলেজের সিনিয়র টিচার আম্মু। সবাই জমের মতো ভয় করে।”

শুভ্রতা চোখ বড় বড় করে তাকালো কাকলির দিকে। অবাক কন্ঠে বলল
-“কি বলছো উনি আমাকে পড়াতেও বসাবেন।”

কাকলি বলল
-“হুম এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও তাছাড়া আম্মু আবার বকবে।”

#চলবে