বেসামাল প্রেম পর্ব-১৭+১৮

0
107

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৭
উষ্ণত্ব ওষ্ঠাধর স্পর্শে কাতর হৈমী। রুদ্রর ওষ্ঠ চুম্বন ক্রমান্বয়ে গাঢ়ত্বে পরিণত হতেই তার হাতজোড়া বেসামাল হয়ে খামচে ধরল বলিষ্ঠ পৃষ্ঠদেশ। কয়েক পল পরেই সহসা সরে গেল রুদ্র। হৈমীর হৃৎস্পন্দনের প্রবল বেগে মাথা ঝিমিয়ে ওঠল। এক পলক তাকিয়ে দেখল, চঞ্চলা হৈমীর ব্যগ্র দৃশ্য। গোলগাল ফর্সা মুখটা টমেটোর মতো রক্তিম হয়ে আছে৷ বদ্ধ চোখ বেয়ে নোনা পানির বর্ষণে সিক্ত করে তুলছে গালদুটো। গাল চুইয়ে অশ্রু যখন গলদেশ ছুঁতে লাগল সন্তপর্ণে চোখ বুজে ফেলল রুদ্র। কয়েক পল ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারও তাকাল। শান্ত কণ্ঠে বলল,
-” এই মুহুর্তটুকু পুরো পৃথিবীকে জানাতে পারো। শুধু ঐ একজনকেই নয়। ”

হৈমী একই রূপে বসে৷ রুদ্র আশপাশে তাকিয়ে পুনরায় ঝুঁকে গেল তার দিকে। নরম সুরে বলল,
-” সেবার কেঁদেছ ফাইন, কান্নার মতোই কাজ ছিল। এবার কান্নার রহস্য কী? ”

নিস্তব্ধ হৈমী না জবাব দিল আর না চোখ মেলে তাকাল৷ শুধু তার নিঃশ্বাসের এক অদ্ভুত শব্দে মাথা ঝমঝম করে ওঠল। এক ঢোক গিলে সরে এলো রুদ্র। অপেক্ষায় থাকল হৈমীর চোখ খোলার, স্বাভাবিক হওয়ার। দীর্ঘসময় পর ধীরেধীরে চোখ খুলল হৈমী। মুখ লুকোনোর চেষ্টা করে নত মাথা আরো নত করে ফেলল। সহসা কম্পমান সুরে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন? ”

-” কিস করেছি বলে মনে হচ্ছে ভালোবাসি? ”

উত্তর দিল না হৈমী। সিটে গা এলিয়ে দিল রুদ্র। সন্তর্পণে চোখদুটো বুজে ঊর্ধ্বশ্বাস ছাড়ল৷ অনুরক্ত ভরাট কন্ঠে বলল,
-” তোমার বয়স অল্প। জীবনকে তুমি যেভাবে দেখো আমি সেভাবে দেখি না৷ একটা চুমুর ওপর কখনো ভালোবাসা নির্ভর করে না। দু’জন ছেলে মেয়ে আবেগের তাড়নায় কাছাকাছি আসবে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াবে, শরীরে শরীর মেলাবে। এর মানে এই না তারা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে। আবার দু’জনের মধ্যে মাইল থেকে মাইলের দূরত্ব থাকলেও ভালোবাসা হয়ে যায়। ঠোঁটে ঠোঁট না ছুঁইয়ে, শরীরে শরীর না মিলিয়ে। ”

-” তাহলে কেন আমাকে বার বার কলঙ্কিত করছেন!”

হৈমীর এই একটি বাক্যই যথেষ্ট ছিল রুদ্রর সমস্ত সত্তাকে নাড়িয়ে দেয়ার। হৈমী নত মুখে বসে। একটি বার যদি সে ডানপাশে ফিরে দেখত। তাহলে হয়তো ভয়ে তার হৃদয় কেঁপে ওঠত। কারণ রুদ্রর রক্তিম চোখ, শক্ত চোয়াল, এবং অদৃশ্য এক অস্থিরতা স্বচক্ষে সহ্য করতে পারত না সে। সহসা গাড়ি স্টার্ট হতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠল হৈমী। রুদ্র রোবটের ন্যায় বসে স্টিয়ারিং ধরে আছে। গাড়ি যখন ব্রেক কষলো হৈমী তাকিয়ে দেখল তারা শেখ বাড়ির সামনে। তাই দুরুদুরু বুকে ত্বরিতগতিতে ডোর খুলে নামতে উদ্যত হলো। অমনি তড়াক করে রুদ্র ওর হাত টেনে নামতে বাঁধা দিল। চমকে গিয়ে ফিরে তাকাতেই রুদ্র অগ্নিমূর্তি দেখে ঢোক গিলল বারকয়েক। রুদ্র রাশভারী কণ্ঠে ভয়ানক কয়েকটি বাক্য উচ্চারণ করল,
-” ইউ মাস্ট বি মাই ওয়াইফ মাস্ট বি! ব্যক্তি হিসেবে আমি পুরোপুরি মার্জিত না হলেও আমার চরিত্রে তুমি ছাড়া অন্য কোনো নারী ত্রুটি ধরতে পারবে না। জাস্ট কিপ দিজ ইন মাইন্ড! ”

আলগোছে ধরে রাখা নরম হাতটি ছেড়ে দিল রুদ্র। ঘনঘন চোখের পলক ফেলে ঢোক গিলল হৈমী৷ বাঁকা হেসে রুদ্র পুনরায় বলল,
-” আর রইল তোমার কলঙ্কিত হওয়ার কথা? যদি এটাকে কলঙ্ক ধরে নাও তাহলে তাই। শান্তি একটাই,
পুরো পৃথিবীতে একজন দ্বারাই তুমি কলঙ্কিত হচ্ছো সে আমি৷ ইউর ফিউচার হাজব্যান্ড! ”
_________
তিনদিন পর মাহের ফিরে এলো। প্রথমে নিজ বাড়ি এবং পরে শশুর বাড়ি গেল সে। গিয়ে জানতে পারল, সূচনার দাদিন সহ চাচাত ভাইরা আজ আসবে। তাই সূচনা আজই তার সঙ্গে ফিরতে নারাজ। ওদিকে হামিদা রয়েছেন বোনের মেয়ের কাছে। টিশার শেষ সময় চলছে সামনে মাসেই ডেলিভারির ডেট। তাই এই সময়টুকু সে টিশার কাছেই থাকবেন। বাড়ি ফেরা নিয়ে তাড়া রইল না মাহেরের। তবে শশুর বাড়িতেই বউকে সারপ্রাইজ দিতে হবে এ ঢের বুঝল। অনেকদিন পর ভাইকে কাছে পেয়ে হৈমী রাজ্যের গল্প জুড়ে দিল।

গত দু’দিন রুদ্র ভীষণ ব্যস্ত ছিল৷ গতকাল ভোরে ঢাকা গিয়ে ফিরেছে রাত দু’টোর দিকে। নতুন ব্যবসা শুরু করার আগে কত-শত জটিলতা যে তাকে সামলাতে হচ্ছে। এতদিন কাজ থেকে দূরে ছিল বলে টের পায়নি বাবা, চাচা, চাচাত ভাই রাদিফের পরিশ্রমের গভীরতা। এবার হারে হারে টের পাচ্ছে। মাহের এসেছে শুনেই উপর থেকে নিচে এসেছিল সে। সন্ধ্যা হয়ে এলো। মাহের এসেছে অবধি সূচনার সঙ্গে আলাদা হবার সুযোগ পায়নি। এবার যাও পেত তাও বোধহয় হৈমীর জন্য হলো না। ভেবেই মেজাজ বিগড়ে গেল রুদ্রর। মেয়েটা এত বেশি কথা বলে! শেষে কাজের মেয়েকে দিয়ে কৌশলে হৈমীকে ডেকে রান্নাঘরে নিল। কথার ঝুড়ি ফেলে হৈমীও চলে গেল রান্নাঘরে। হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে রুদ্র মাহেরকে বলল,
-” লম্বা জার্নি করেছেন রুমে গিয়ে রেস্ট করুন। ”

বলেই সূচনার দিকে তাকাল। বলল,
-” দাদিনরা বোধহয় এসে পড়ল। আমি বাইরে যাচ্ছি, ওরা এলে একটা ফোন দিস। ”

সূচনা মাথা কাত করে মাহেরকে নিয়ে উপরে গেল। রুদ্র আশপাশ তাকিয়ে ওঠে দাঁড়াতেই দেখল, হৈমী রান্না ঘর থেকে বের হচ্ছে। রুদ্র তার দিকে দৃঢ় নিক্ষেপ করতেই কোমরের দু’পাশে ঝুলে থাকা ওড়নার কোণা দু’হাতের মুঠোয় চেপে ধরল। ধীরপায়ে আগাতে আগাতে জোরপূর্বক হেসে জিজ্ঞেস করল,
-” ভাইয়া ভাবি কোথায়? উপরে গেছে? ওওও আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাই, আমি যাই। ভাইয়াদের সমুদ্র পাড়ে ছবি তো দেখাই হয়নি। ”

হাঁটার গতি বাড়িয়ে রুদ্রকে পাশ কাটাতে যেতেই রুদ্র ওর হাত টেনে ধরল৷ শক্ত গলায় বলল,
-” পরে দেখবে। ”

ভ্রু কুঁচকে হৈমী বলল,
-” উহ, এত শক্ত করে ধরেছেন কেন? আর পরেই বা দেখব কেন? আমি এক্ষুনি দেখব। ছাড়ুন তো সব সময় খবরদারি করবেন না। বিয়ে করবেন বলেছেন আগে বিয়ে করুন তারপর খবরদারি করবেন এর আগে একদম খবরদারি নয়। আপনাকে আমি অল্পখানি পছন্দ করেছি বলে ধরে নেবেন না মাথায় চড়ে নাচতেও দেব। আর ঐ দি…”

বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে পেছন থেকে হৈমীর মুখ চেপে ধরল রুদ্র। হৈমী চাপা শব্দ করতেই অন্য হাতে পেছন থেকে পেট জড়িয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” সব সময় এত বেশি বকবক সহ্য হয় না বুঝলে? এবার ঠিক ততক্ষণ ঘর বন্দি থাকবে যতক্ষণ না আমি ফিরব। ”

নিজের বিশাল ঘরটায় হৈমীকে রেখে বাইরে থেকে রুম লক করে চলে গেল রুদ্র। যাওয়ার আগে অবশ্য শাসিয়ে গেল,
-” নো চিৎকার, নো চ্যাঁচামেচি সুইটহার্ট। যদি একটু আওয়াজও বাইরে যায় তাহলে আজ বিয়ে বিহীন সারারাত আমার সঙ্গে কাটাতে হবে। যদি বলো কীভাবে তার উত্তর দিতে না পারলেও কাজে দেখিয়ে দিতে পারব৷ আগেই বলেছি, আমি ভীষণ উদ্ধত! ”

রুদ্র চলে যাওয়ার পর হৈমী মুখ বন্ধ করে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করল কিছুক্ষণ৷ এরপর নিজেকে শান্ত করে বলল,
-” এভাবে আঁটকে দেয়ার মানে কী? বললেই তো হতো ওদের একটু সময় দেয়া উচিৎ। আমি কি বেহায়ার মতো তবুও ওদের কাছে যেতাম নাকি আশ্চর্য! ”

কতক্ষণ সময় এভাবে বন্দি থাকতে হবে জানা নেই। তাই কী করবে? কী করে সময় কাটাবে বুঝতে পারল না। পুরো ঘর জুড়ে এলোমেলো দৃষ্টি বুলিয়ে হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি খেলল। পুরো ঘরে যত সব আসবাবপত্র আছে সব ঘেঁটে দেখবে। রুদ্র মানুষটাকে তো বুঝতেই পারে না৷ আজ না হয় তার ঘর এবং ঘরের জিনিসপত্র বোঝার চেষ্টা করবে… নিমিষেই চোখ দু’টো চকচক করে ওঠল। মন হলো উচ্ছ্বসিত। সর্বপ্রথম দুম করে শুয়ে পড়ল রুদ্র বিশাল বিছানাটায়। হাত, পা চারদিকে ছড়িয়ে শুয়ে বড়ো বড়ো করে শ্বাস নিল। একবার চোখ বন্ধ করল তো আরেকবার চোখ মেলে চারদিকে দৃষ্টি ঘোরাল। চট করে ওঠে বসে আবার চট করে বালিশে মুখ গুঁজে নাক টেনে ঘ্রাণ নিল। এখানে কি রুদ্র রুদ্র ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে? খিলখিল করে হেসে ওঠল সে। মুহুর্তেই মুখে হাত চেপে হাসি থামাল। ধীরস্থির হয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। এক এক করে সমস্ত কিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগল। বেডসাইট টেবিল, কাউচ, ছোট্ট বুকশেলফ, বড়ো কাভার্ড এবং দেয়ালগুলোতেও ছুঁয়ে দিল৷ এক পর্যায় দোনোমোনো করে বুকশেলফ থেকে বইগুলোর নাম পড়তে শুরু করল৷ উপরের তাকে বেহিসেবী ডায়ারি। হৈমী এক এক করে সে ডায়েরি গুলো গুনতে শুরু করল৷ ঊনিশে গিয়ে থামল সে। চোখ বড়ো বড়ো করে ওষ্ঠজোড়া ফাঁক করল। বিরবির করে বলল,
-” এত ডায়ারি! এগুলোতে কি লেখা আছে? ”

প্রচণ্ড কৌতূহলদ্দীপক হয়ে একটা ডায়ারি নিয়ে মলাট উলটালো। একি! একটি বর্ণও লেখা নেই। একদম নতুন চকচকে, ঝকঝকে ডায়ারি। কৌতূহল দমিয়ে ডায়ারিটা রেখে দিয়ে আরেকটা নিল। এবারেরও একই দৃশ্য। একে একে সবকটা ডায়ারি দেখে শেষ একটা না দেখেই বিরক্ত হয়ে পিছন ঘুরল। আবার চট করে শেল্ফের দিকে ঘুরে ভাবল,
-” যদি এই শেষটায় কিছু পাই? ”
_____
শাওয়ার নিয়ে বের হতেই সূচনাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখল মাহের৷ মৃদু হেসে এগিয়ে এলো সে। বলল,
-” এতদিন পর দেখা অথচ মুখে হাসি নেই। আপনি কি খুশি হননি? ”

আঁতকে ওঠল সূচনা৷ ঝটপট ওঠে দাঁড়াল। আমতা আমতা করে বলল,
-” ছিঃ ছিঃ খুশি হবো না কেন? ”

-” খুশি হয়েছেন? ”

মাথা ঝুঁকিয়ে প্রশ্নটা করল মাহের৷ সদ্য গোসল করে আসাতে ছোটো ছোটো চুল কপালে লেপ্টে আছে। সে চুল চুইয়ে কয়েক ফোঁটা পানি টোপ করে প্রথমে লম্বাটে নাক এবং পরবর্তীতে চিকন পাতলা ঠোঁটদ্বয়ে স্পর্শ করল। সূচনা সে দৃশ্য দেখে লজ্জা পেয়ে চোখ সরাতে গিয়ে চোখ দিয়ে ফেলল মাহেরের পুরুষালী উন্মুক্ত বক্ষঃস্থলে। এবার পুরোপুরি ফেঁসে গিয়ে দ্রুতপায়ে মাহেরকে পাশ কাটাল। কাভার্ড থেকে টিশার্ট বের করতে করতে বলল,
-” খুশি হবো না কেন অবশ্যই খুশি হয়েছি। ”

বাক্যটির সমাপ্তি দিয়ে যেই পিছন ঘুরেছে তৎক্ষণে মাহেরের লম্বাটে নাকের সঙ্গে তার কপালে ধাক্কা লাগল। কিঞ্চিৎ পিছিয়ে গিয়ে কাভার্ডের সঙ্গে পিঠ লেগে গেল সূচনার। গাঢ় চোখে তাকিয়ে আলতো হাসল মাহের। সূচনার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে ওঠল৷ টিশার্ট এগিয়ে দিয়ে মুখ ছোটো করে বলল,
-” এটা পড়ুন। ”

হাত বাড়িয়ে টিশার্ট নিল মাহের। আশ্চর্য সুন্দর হাসি দিয়ে বলল,
-” কতটুক খুশি আপনি? ”

আমতা আমতা করে সূচনা বলল,
-” অনেক অনেক। ”

উত্তর শুনে দম ছাড়ল মাহের। সুঠাম শরীরটা টান টান করে দাঁড় করিয়ে নিবিড় চোখে তাকাল। নরম সুরে বলল,
-” এ কদিন ভীষণ মিস করেছি আপনাকে। মনে হচ্ছে কতকাল পর প্রিয়তমার দর্শন পেলাম। অদ্ভুত শান্তি লাগছে। আপনারও কি শান্তি লাগছে? ”

সূচনা মাথা নাড়াল। ঠোঁটের কোণায় দুষ্টুমি ভরে হাসল মাহের। বলল,
-” একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরবেন? বড্ড অস্থির লাগছে। ”

শ্বাসরোধ হয়ে এলো সূচনার। অধর কামড়ে ধরে বিচলিত ভঙ্গিতে এক পা আগালো। কিন্তু জড়িয়ে ধরতে পারল না। তার পূর্বেই তার হাত, পা কাঁপতে শুরু করল। গাল দু’টো লাল হয়ে নাকের ডগা ফুলে ওঠল। তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মাহের বলল,
-” আমি সাহায্য করব? ”

চোখ বন্ধ করে সমানে মাথা নাড়াল সূচনা৷ হেসে দিল মাহের একটু শব্দ করে। সে হাসি নিমিষেই বন্ধ করে দু’হাতে সূচনার ঠান্ডা হয়ে আসা নিশ্চল দেহটা টেনে বুকের ভিতর লুকিয়ে ফেলল। প্রথমবারের মতো নিজের বিবাহিত স্ত্রীকে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে নিল বুকের মধ্যখানে। আচমকাই সূচনা দু’হাতে তার পৃষ্ঠদেশ আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে ওঠল।

চলবে…

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৮
মেয়েটা ভীষণ সুন্দরী। চোখ ধাঁধানো সুন্দরী বলতে লোকেদের এমন মেয়েকেই বলতে শুনেছি। ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। নাম, সুমনা। নামটাও ভীষণ সুন্দর। সুন্দর মনের অধিকারীও হতে পারে। তার বিষয়ে খুব একটা জানি না। সত্যি বলতে কখনো জানতে চাইনি। কারণ তার প্রতি আমার ভীষণ রকম রাগ আছে। এমন সুন্দরী মেয়ে হয়ে তার পছন্দ এত জঘন্য হয় কী করে? সবচেয়ে বড়ো কথা সাহস হলো কী করে রুদ্র শেখকে ভালোবাসার আবেদন করার? হ্যাঁ মেয়েটা আজ আমাকে চিঠির মাধ্যমে প্রপোজ করেছে। চিঠির উত্তর পাওয়ার আশায় চাতকিনীর মতো ক্লাসরুমের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়েও ছিল। আমি তাকাইনি একবারের জন্যও তাকাইনি। কারণ আমি ভালোবাসাকে ঘৃণা করি। যে ভালোবাসা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে থাকে, যে ভালোবাসা কিশোর – কিশোরীদের চিত্ত চঞ্চল করে, যুবক, যুবতীদের একে অপরের মধ্যে অদৃশ্য টান সৃষ্টি করে সেই ভালোবাসাকে আমি ঘৃণা করি। আজীবন ঘৃণা করে যেতে চাই, ঘৃণা করে যেতে চাই সেই নারীকে যে নারী আমার হৃদয়ে স্থান পেতে চায়। ঘৃণা করি আমি সুমনাকে।
তারিখ ০৬-০৬-২০১৭.

আবিরের কাছে শুনলাম আমি যখন চলে এলাম, সে আই মিন সুমনা নাকি আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। একবারের জন্যও পলক ফেলেনি। তিনতলার বারান্দা থেকে গেট পরোতে যতক্ষণ সময় আমাকে দেখা যাচ্ছিল ঠিক ততক্ষণই তাকিয়ে ছিল। যখন আমি গেটের বাইরে আড়াল হয়ে গেছি ওড়না মুখে চেপে হুহু করে কেঁদেছে। সে মুহুর্তে তাকে সামলেছে তার গুটিকয়েক বান্ধবী। সুমনা কেন কাঁদল? আমি তাকে রিজেক্ট করেছি তাই? এত সিম্পল একটা বিষয়ে কাঁদার কী আছে? একজন রিজেক্ট করেছে বলে পৃথিবী শুদ্ধ সবাই তাকে রিজেক্ট করবে নাকি? আবিরকে যখন এ প্রশ্ন করেছি ও ভীষণ রেগে গেল। চোখ রাঙিয়ে বলল, আমি একটা হৃদয়হীন। আমার হৃদয়ে সৃষ্টিকর্তা মায়া, ভালোবাসা দেয়নি। আমি স্মিত হেসে জাবাব দিলাম, ” ঠিক বলেছিস। পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটা যখন তার বাবার অবর্তমানে মায়ের ঘরে বড়ো চাচাকে রাত কাটাতে দেখেছে। তখন হয়তো সে তেমন কিছু বুঝতো না। শুধু বুঝতো তার মা চুরি করছে। তার বাবার পাওয়া আদর, ভালোবাসা চুরি করে অন্যকে দিচ্ছে। জানালার ফাঁক দিয়ে বড়োচাচাকে চুমু খেতে দেখেছিল ছোট্ট ছেলেটা। ওটা তো আদর ছিল, তার আদর, তার দু’বছরের ছোট্ট বোনের আদর আর তাদের বাবার আদর। মায়ের সব আদর বড়ো চাচা পেয়ে নিল ইস!
মানুষ যখন ভালোবাসার সঙ্গে বেইমানি করে, ভালোবাসা চুরি করে তখন মানুষ কী আর মানুষ থাকে? ঐ মানুষের শরীরে কী হৃদয় নামক যন্ত্রটা থাকে? থাকলে নিশ্চয়ই এমনটা করতে পারতো না। অমন হৃদয়হীন নারীর সন্তান সে। তাহলে তার তো হৃদয়ই নেই। সেখানে প্রেম, ভালোবাসারা জায়গা কী করে হয় হু?
তারিখঃ ১০-০৬-২০১৭.
আজ কথার ছলে সূচনা বলল, তার ভাবি প্রয়োজন। আর কয়েক বছর মাত্র আমার পড়াশোনা শেষ। দাদিন আর বোন এখন থেকেই পাত্রী খুঁজতে শুরু করবে। এসব শুনে মাথা গরম করে বোনকে ধমক দিয়েছি। দাদিন বলল, কষ্ট পেয়ে ও রাতে খায়নি। লিখা শেষ করেই ওকে খাওয়াতে যাব। পাশাপাশি বোঝাবো তার ভাই কখনো বিয়ে করবে না। তার ভাইয়ের কোন সঙ্গীর প্রয়োজন নেই। যে হৃদয়ে ভালোবাসা নেই সেই হৃদয়ে কোন নারীই টিকে থাকে না। তারা ঠিক অন্যত্র হৃদয় খুঁজে কেটে পড়ে। আমার এমন কথায় একদিন যুক্তিসরূপ আবির বলল,
” ভালোবাসা না থাকলেই তো কেটে পড়ে। ভালোবাসা থাকলে নিশ্চয়ই কেটে পড়বে না। ”

আমি ম্লান হেসে বলেছি ” আমার বাবা আমার জন্মদাত্রীকে এখনো অনেক ভালোবাসে। এজন্য সকলের চাওয়া সত্ত্বেও তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করতে রাজি হয়নি। মুখে হয়তো বোঝায় সে তার প্রাক্তন স্ত্রীকে, তার দু’সন্তানের জন্মদাত্রীকে অনেক ঘৃণা করে। কিন্তু ছেলে হয়ে বাবার চোখের ভাষা, মনের ব্যথা বোঝার ক্ষমতা যে এখন আমার হয়েছে তা তিনি জানেন না। আমার বাবাও তো ভালোবেসেছিল ঐ মহিলাকে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই সবটাকে তুচ্ছ করে দিল! বাবা তো কথা দিয়েছিল উনাকে সহ আমাদের ভাই, বোনকেও ওদেশে নিয়ে যাবে। শুধু কিছুদিন মাত্র অপেক্ষা। উনি অপেক্ষা করতে পারেননি। দুটো সংসার ভেঙে দিয়েছেন। কোন লোভে উনি এমনটা করেছেন তা পূর্বে না বুঝলেও এখন বুঝতে পারি। ছেলে হয়ে ভাবতেই ঘৃণা লাগে ছিঃ। আমি কখনো বিয়ে করব না, কক্ষনো না। ”

এসব শুনে আবির তর্ক করল,
” শুধু তোর মা নয় তোর বড়ো চাচাও সমান দোষী। ”

আমি বললাম,
” সেটা আমি অস্বীকার করি না। তার জন্য আজ বড়ো চাচি একা, নিঃসঙ্গ। বড়ো ভাই, সাদমান পিতৃহারা। নারীতে নারীতে অনেক পার্থক্য থাকে। বড়ো চাচির মতো নারী সবার ভাগ্যে জুটে না। আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না। ”

এরপর আর আবির তর্কে যায়নি।
হে সৃষ্টিকর্তা,
তুমি আমার ভাগ্যে কী লিখেছ জানি না। কিন্তু বিশ্বাস করো, ঘর বাঁধার স্বপ্ন আমি দেখি না। আর না আশা করি কেউ আমাকে ভালোবাসুক। তবুও যদি তুমি চাও। জীবদ্দশায় কারো সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে হয়৷ তাহলে কিন্তু আমার সঙ্গে জড়ানো নারীটা কখনো মাতৃত্বের সাধ পাবে না৷ কারণ, আমি আমার জীবনকে রিস্কে রাখলেও আমার অংশকে রিস্কে রাখতে পারব না। যে দুর্বিষহ যন্ত্রণা আমরা দু’ভাইবোন ভোগ করছি তা যেন আর কেউ না করে। অন্তত আমার আপনজনদের মধ্যে কেউ। সহ্য করা যায় না। এই একটা যন্ত্রণা আমার শিশুকাল ধ্বংস করেছে, আমার কৈশোর, যৌবন সবটা ধ্বংস করে দিয়েছে। সূচনা ভীষণ ইন্ট্রভার্ট। ও প্রকাশ না করলেও বুঝতে পারি৷ প্রতিদিন মনের সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে, সহপাঠীদের সঙ্গে কতটা যুদ্ধ করে চলতে হয় ওকে।

আমি তো সেই দৃশ্য টা আজো ভুলতে পারিনি। সূচনা তখন চৌদ্দ বছরের। আমি ঊনিশে পা দিয়েছি। ওর স্কুল বান্ধবী সীমার সঙ্গে ঝগরা লেগেছিল। ঝগরাতে ওকে হারাতে সীমা নাকি বলেছিল,
” তোর আম্মু তো খারাপ তোর বড়ো চাচাকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে। আমার আম্মু বলেছে তোর সঙ্গে কম মিশতে। মেয়েরা মায়ের স্বভাব পায়। তুইও ক’দিন পর মায়ের স্বভাবে চলে যাবি। তোর নামের পিছনেও চরিত্রহীন ট্যাগ লেগে থাকবে। যেমনটা তোর মায়ের নামের পিছনে রয়েছে! ”

বোন আমার সেদিন বিধ্বস্ত মুখে বাড়ি ফিরল। দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদল। সারাদিন আমাকে মুখ দেখালো না। দরজা ভেঙে যখন রুমে গেলাম ওকে পেলাম সেন্স লেস অবস্থায়। জ্ঞান ফেরার পর আমার বুকে মাথা রেখে যখন, ফুঁপাতে ফুঁপাতে প্রশ্ন করল, ” ভাইয়া ক’দিন পর আমার নামের পিছনেও লোকে চরিত্রহীন ট্যাগ বসাবে? ” তৎক্ষণাৎ আমার কলিজাটা ছিঁড়ে গেল! বুকের গভীরে হাহাকার করে ওঠল, আমাদের কী দোষ? কেন শাস্তি পাচ্ছি আমরা? আমাদের কেন পৃথিবীতে আনা হলো কেন? এই নরক যন্ত্রণা কেন ভুগ করছি আমরা দু’জন? ( রুদ্র )
তারিখঃ ১০-০৭-২০১৭.

ডায়ারির এর পরের কিছু পৃষ্ঠা ফাঁকা। একে একে শেষ দু পৃষ্ঠায় অল্প কিছু লেখা দেখা গেল। লেখাগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে এগুলো সদ্য লেখা। আগের পাতাগুলোর লেখা বেশ ক’বছরের পুরোনো বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু শেষ পাতার লেখাগুলো খুব একটা পুরনো নয়৷ এ ব্যাপারে সিয়র হলো লেখাগুলো পড়ার পর। কারণ সে লেখাগুলো তাকে নিয়েই। অর্থাৎ হৈমীকে নিয়েই।
.
আজ একটি ঘটনা ঘটেছে। স্টুপিড ধরনের একটা মেয়ে আমাকে প্রেমপত্র পাঠিয়েছে। মেয়েটার নাম হৈমন্তিকা হৈমী। বয়স একেবারেই অল্প কিন্তু সাহস অনেক। সুমনার মতো মেয়েকে রিজেক্ট করে শেষে এই অল্পবয়সী, স্টুপিড, বাচাল ধরনের মেয়ের প্রপোজ একসেপ্ট করব? উহুম মোটেই তেমন কিছু হবে না। এ মেয়ে আবার মাহেরের বোন। যার সঙ্গে আমার বোনের বিয়ের কথাবার্তা চলছে…
.
আজ আরো একটি ঘটনা ঘটে গেল! কিন্তু সেটা আমি লিখতে পারব না। হয়তো বলতেও পারব না।
.
তোতাপাখিটাকে চেয়েছিলাম। পেলাম না। কারণ আমি বখাটে। বখাটেদের জীবনে তোতাপাখিদের আসতে মানা।
.
সে কী আমার জেদ হয়ে দাঁড়াল? তাকে পেতেই হবে এমন অনুভূতি কেন হচ্ছে? আমি ভালোবাসতে পারি না। তাকে কী করে ভালোবাসাহীন হৃদয়ে স্থান দেব?
.
বিয়ে করব। বউও বানাবো। শুধু কথা ছাড়া সে কিছুই পারে না। যা বুঝলাম, মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধিও তেমন নেই। শুনেছি ভীষণ ভীতু। ভুতে ভয় পায়, রক্ত ভয় পায়, মানুষের কষ্টকে ভয় পায়, নিজে কষ্ট পেতে ভয় পায়৷ মজার ব্যাপার হলো, রান্না করতেও ভয় পায়। তেল ছিঁটে আসার ভয়। একেবারেই পারফেক্ট। এমন ভয় পাওয়া মেয়ে নিশ্চয়ই মা হতেও ভয় পাবে? জীবদ্দশায় বিয়ে যদি করতেই হয় একেই করি, যদি কখনো ফেলে চলে যেতে চায় মেরেধরে কষ্ট দিয়ে রেখে দিব, আঁটকে দিব। কিন্তু বাচ্চার রিস্ক নিব না। মেরেধরেও যদি না রাখতে পারি তাহলে সমস্যা হয়ে যাবে বিরাট সমস্যা।
____
ডায়ারি তে লেখা একেকটা শব্দ পড়তে পড়তে হাত, পায়ে কম্পন শুরু হয় হৈমীর। পুরো লেখার সমাপ্তি হতেই ডায়ারি বন্ধ করে যথা স্থানে রেখে দিল সে। এরপর গুটিগুটি পায়ে এসে পা তুলে বসল বিছানায়। দু’হাতে মুখ চেপে ডুকরে ওঠল মুহুর্তেই। তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, বুকের ভিতরটা অদ্ভুত এক কষ্টে জর্জরিত হয়ে আছে। ছোটোবেলা থেকেই তার মন বড়ো সরলতায় ঘেরা৷ পাশাপাশি খুবই নরম মনের অধিকারী। কারো কষ্ট দেখলেই মন কেঁদে ওঠে৷ চোখের সামনে কাউকে কাঁদতেও দেখতে পারে না৷ টিভিতে নায়ক, নায়িকার কষ্ট দেখলেও এই মেয়েটা ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদে। আজ সতেরো বছরের কিশোরী সে। তবুও স্বভাব আঁটকে আছে ঠিক সাত বছরে। এ পৃথিবীতে অনেক মানুষ থাকে যারা বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট একটা বয়সে তাদের মন, মানসিকতাকে আঁটকে রাখে। হৈমী সেই মানুষদের তালিকাতেই পড়ে গেছে। ঘনমেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রুদ্রের শৈশব, কৈশোর, যৌবন ধ্বংসের বৃত্তান্ত শুনে তার মন কাঁদছে ভীষণ কাঁদছে। এই কান্না আজ আর থামবে না। একটুর জন্যও বোধহয় থামবে না।

দরজা খোলার শব্দে চমকে ওঠল হৈমী। রুমে ঢুকে চট করে দরজা লক করে দিল রুদ্র। আকস্মাৎ বিছানায় হৈমীকে গুটিশুটি হয়ে বসে কাঁদতে দেখে থমকে গেল। ক্ষীণ স্বরে প্রশ্ন করল,
-” রুমেই তো আঁটকে গেছি এভাবে কাঁদছ কেন? ”

কথাটা বলেই প্রচণ্ড গম্ভীর হয়ে গেল। ধীরপায়ে এসে দাঁড়াল হৈমীর সামনে। বিরক্তি সুরে আবারও জিজ্ঞেস করল,
-” এ আবার কী নাটক? এভাবে কেন কাঁদছ ? ”

কিঞ্চিৎ কান্না থামিয়ে আলগোছে নেমে দাঁড়াল হৈমী। তার ক্রন্দনরত মুখের দিকে তাকিয়ে রুদ্র কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই সে তার বলিষ্ঠ বক্ষপটে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ক্রন্দনরত গলায় ভেঙে ভেঙে বলল,
-” আমি কক্ষনো আপনাকে ছেড়ে যাব না। কক্ষনো ভালোবাসা চুরি করব না। সারাজীবন আপনাকে খুব খুব খুব ভালোবাসবো। আপনার সব দুঃখ মুছে দিব বিশ্বাস করুন।”

রুদ্রর মাথায় যেন বাজ পড়ল। না পারে ছোট্ট দেহখানি ছুঁড়ে ফেলে। নিজেকে কোনক্রমে নিয়ন্ত্রণ করে রোবটের ন্যায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে কাঠখোট্টা স্বরে বলল,
-” কোন সাহসে আমার ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দিয়েছ। এটুকু ম্যানার্স কী তোমার ভাই শেখায়নি? ”

হৈমীর কান্নার বেগ বেড়ে গেল। ভাঙা আওয়াজে বার বার বলতে লাগল,
-” আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করুন। আমি কারো একটু কষ্টও সহ্য করতে পারিনা। সেখানে আপনার এত বেশি কষ্টের কথা পড়ে আমার অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। আমি মনে হয় আপনাকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আমি মনে হয় আপনাকে বেশি ভালো না বেসে থাকতে পারব না। ”

হাত বাড়িয়ে হৈমীকে ধরল না রুদ্র। হৈমীও রুদ্রর কথায় কান দিল না। নিজের মতো করে নিজের অনুভূতি প্রকাশে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তাই রুদ্র ভয়াবহ একটি প্রশ্ন করে বসল,
-” মেয়েরা মায়ের জাত, তুমি পারবে তোমার মাতৃসত্তা ত্যাগ করতে? ”
চলবে..