বেসামাল প্রেম পর্ব-২৬+২৭

0
311

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২৬
ভোরবেলা মাহেরকে ডেকে তুলল সূচনা। চোখ দু’টো খুললেও ওঠে বসল না মাহের। তাই সে নম্র সুরে বলল,
-” আজ আপনার ফার্স্ট ক্লাস আছে না? ”

মাথা নাড়াল মাহের। ধীরেসুস্থে ওঠে বসে চিন্তান্বিত কণ্ঠে বলল,
-” সূচনা কয়েকমাস পরই হৈমীর এইচএসসি। আপনি রুদ্রর সাথে কথা বলে ওর বইপত্রগুলো পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। ”

ইস! বড্ড মায়া হলো সূচনার। মানুষটা বোনকে নিয়ে কতটা দুঃশ্চিতায় ভুগছে। ঘুম ভাঙতেই বোনকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা। সে ভরসা দিল বলল,
-” আপনি চিন্তা করবেন না আমি ভাইয়াকে ফোন দিব আজ। সব খবর নিয়ে, কথা বলে আপনাকে জানাব। এবার ওঠুন আমি কফি বানাই গিয়ে। ”

রান্নাঘরে যেতেই দেখল হামিদা সবজি কাটছে। সূচনা অবাক হয়ে বলল,
-” একি মা আপনি ওঠেছেন কেন? আপনার শরীর খারাপ রেস্ট করুন আমি সব করে নিব। ”

হামিদা নিজের মতোই সবজি কাটতে লাগল। সূচনার কণ্ঠ তার কর্ণকুহরে পৌঁছেছে কিনা বোঝা গেল না। সূচনা কয়েক পল সময় চুপচাপ শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে রইল। দুরুদুরু বুকে চাপা নিশ্বাস ফেলে মাহেরের জন্য কফি বানিয়ে বলল,
-” উনাকে কফি দিয়ে আসছি আমি। ”

মাহেরকে কফি দিয়ে সূচনা এলো রান্নাঘরে। হামিদা সবজি কেটে ধুয়ে এক বাটি মাছের টুকরায় লবণ ছিটাল। সূচনা পাশে দাঁড়িয়ে নরম সুরে বলল,
-” মা আপনাকে চা করে দিই? আপনি খান রান্নাটা আমি করে ফেলি। ”

বিয়ের পর থেকে বেশিরভাগ সূচনাই রান্না করে। যেহেতু আজ ভার্সিটিতে তার ক্লাস নেই সেহেতু তারই করার কথা। কিন্তু হামিদা তার সাথে না কথা বলল আর না কোনো কাজে হাত লাগাতে দিল। সূচনা তবুও সরলো না, শাশুড়ির পাশে দাঁড়িয়েই ওটা, সেটা এগিয়ে দিতে লাগল। এক পর্যায় বিরক্ত হয়ে হামিদা বলল,
-” তোমার উপস্থিতিতে আমি খুশি নই বুঝতে পারছ না? ”

আর কিছু বলতে হলো না। চোখদুটো টলমল হয়ে বুক ভার হয়ে গেল সূচনার। ধীরেধীরে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো সে। চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। ওড়নার কোণা দিয়ে সে অশ্রু মুছে মাথা নিচু করে রুমে গেল সে। মাহের তখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুছতে ব্যস্ত। সদ্যই গোসল সেরে এসেছে সে। সূচনার এ সময় রান্নাঘরে ভীষণ রকম ব্যস্ত থাকার কথা। তাই তার উপস্থিতি দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাল মাহের। বলল,
-” ফিরে এলেন যে? ”

সূচনা জোরপূর্বক হাসি টেনে অযথা বিছানা ঠিক করতে করতে বলল,
-” মা রান্না করছে। ”

তোয়ালে রেখে সেন্ডো গেঞ্জি পড়ল মাহের। সূচনার দিকে সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে এগিয়ে এলো। বলল,
-” মায়ের শরীর খারাপ সূচনা, আপনি তাকে রেস্ট করতে বলুন গিয়ে। ”

মাথা নিচু করে জবাব দিল সূচনা,
-” বলেছিলাম। ”

-” শোনেনি? একে নিয়ে আর পারি না আপনি যান হেল্প করুন। ”

মাহের কাভার্ড থেকে শার্ট বের করতে উদ্যত হয়ে আবার পিছনে তাকাল। নত মাথায় ঠাঁই বসে সূচনা। কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে বলল,
-” আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন না? ”

ভিতরের কান্না গুলো হঠাৎই ওগরে দিল সূচনা। দু’হাতে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে কেঁদে দিল সে। মেয়েটা ভীষণ নরম প্রকৃতির। শান্তশিষ্ট, নরম এবং সুন্দর মনের মানুষ সে। সারাজীবন কাছের সবার থেকে স্পেশাল একটা যত্ন পেয়েছে। যত্নটা বেশি হওয়ার কারণ সে মা হারা মেয়ে। জীবনে কখনো মায়ের ভালোবাসা পায়নি। তাই সবাই একটু বেশি আদর, ভালোবাসা দিয়েছে তাকে। এই শাশুড়ি মা, সে কি শুধু শাশুড়ি নাকি? সে তো তার মা। বিয়ে করে এ বাড়ি আসার পর থেকে এ মায়েরও কম ভালোবাসা পায়নি। এই মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার লোভেই তো সর্বপ্রথম এই বিয়েটায় রাজি হয়েছিল সে। মাহেরের মতো চমৎকার মানুষটার সঙ্গে তো অনেক করে পরিচয় ঘটেছে। আজ হঠাৎ সেই মায়ের অযত্ন মাখা আচরণ পেয়ে হজম করতে কষ্ট হয় না বুঝি? হচ্ছে তো ভীষণ কষ্ট৷ এই কষ্টের কথা কীভাবে বলবে মাহেরকে?

আচমকা সূচনায় কান্নায় হতভম্ব হয়ে গেল মাহের। পাশে বসে আহত চোখে তাকাল সে। বলল,
-” কী হয়েছে সূচনা? আপনি ঠিক আছেন? দেখি এদিকে ঘুরুন, অ্যাই মেয়ে কী হয়েছে বলুন আমায়। ”

দু’হাতে সূচনার কাঁধ ধরে নিজের দিকে ঘুরালো মাহের। সূচনা সহসা কান্না থামিয়ে দিল। মাথা নাড়িয়ে বলল,
-” কিছু হয়নি কিছু হয়নি। ”

দু’হাতে চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল সে। কিন্তু পারল না ক্ষণেই চোখ দুটো লাল হয়ে টলমল। মাহের রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল। দু’হাতের আঁজলে সূচনার কোমল গালদ্বয় চেপে ধরে দৃঢ়স্বরে প্রশ্ন করল,
-” কী হয়েছে? মা কিছু বলেছে? ”

সূচনা সমানে মাথা নাড়িয়ে বলল,
-” না না। ”

-” সত্যি বলবেন নাকি মা’কে গিয়ে জিজ্ঞেস করব কিছু বলেছে কিনা? ”

আঁতকে ওঠল সূচনা। ঘনঘন মাথা নেড়ে বলল,
-” প্লিজ না। ”

মাহের আদুরে ঠোঁটে সূচনার ললাট ছুঁয়ে দিল। বলল,
-” তাহলে আপনার এই কান্নার কারণটা শেয়ার করুন। ”

-” মা মনে হয় আমার ওপর একটু রেগে আছে। ”

মৃদু হাসল মাহের। বলল,
-” তা আছে কিন্তু বিনাদোষে। ”

সূচনা নিশ্চুপ হয়ে মাথা নত করে বসে রইল। মাহের পুনরায় তার গালদুটো আগলে ধরে বলল,
-” কী বলল? ”

-” আমার উপস্থিতি সে সহ্য করতে পারছে না। ”

ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকালো সূচনা। মাহেরের প্রচণ্ড খারাপ লাগল এবার। কোনো মানে হয়? এই মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে কী লাভ? দু’হাতের বুড়ো আঙুলে চোয়াল বেয়ে চলা অশ্রু মুছে মাহের বলল,
-” রাগ করে বলেছে সত্যি সত্যি বলেনি। মেয়ের রাগ ছেলে বউয়ের ওপর দেখাচ্ছে। আপনি এটা নিয়ে কাঁদবেন না প্লিজ। ”

-” যদি আমায় বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে উনি তো আমায় সহ্য করতে পারছেন না। ”

অবাক হয়ে মাহের বলল,
-” আশ্চর্য এটা বলবে কেন? আরে বাবা বউ আপনি আমার। বেশি ভাবছেন সেরকম কিছুই বলবে না। ভয় পাচ্ছেন কেন? ”

শেষ প্রশ্নটা করে হেসে ফেলল মাহের। ওঠে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকে বলল,
-” মাঝে মাঝে আপনি সত্যি বাচ্চা হয়ে যান একদম অবুঝ। ”

অভিমানী মুখে সূচনা ওঠে দাঁড়াল। কাভার্ডের দিকে এগিয়ে গিয়ে কপাট খুলে মাহেরের জন্য শার্ট, কোট বের করে বিছানায় রাখল। মাহের তার কার্যকলাপ দেখে স্থির হয়ে বলল,
-” কী এত ভাবছেন বলুন তো? মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কী যেন গভীর চিন্তা। ”

-” কিছু না। ”

ম্লান মুখে কথাটা বলে তাকে পাশ ফিরাতে চাইল সূচনা৷ কিন্তু মাহের চট করে ধরে ফেলল। দু’হাতে কোমর জড়িয়ে মুখোমুখি হলো ওর। সূচনা থতমত খেয়ে গেল। ঢোক গিলে বলল,
-” আমি ঠিক আছি মাহের। ”

-” একদম ঠিক নেই আপনি। কী ভাবছেন বলুন? ”

মুখ ফস্কে সে বলেই ফেলল,
-” আমার খুব ভয় হচ্ছে আপনাদের হারিয়ে ফেলার।”

-” ভয়টা অযথা। আমরা বিয়ের মতো একটা সম্পর্কে জড়িয়ে আছি আপনি এটা বুঝতে পারছেন না কেন। হঠাৎ এত অবুঝতা কেন? মা একটু রাগ দেখিয়েছে তাই? ”

-” জানি না। ”

-” জানতে হবে না। আসুন একটু আদর করে দিই। মন ভালো হয়ে যাবে। সারাদিন বসে আমাদের হারানোর ভয় না করে এই মুহুর্তটুকু অনুভব করবেন।”

কথাগুলো বলতে বলতেই কোমরে চেপে রাখা হাতদুটো সন্তর্পণে ওপরে উঠালো মাহের। একহাতে সূচনার গাল স্পর্শ করে অপরহাতে ঘাড় চেপে ধরল। নিজের পুরুষালি ওষ্ঠজোড়ায় অত্যন্ত দরদি ভাবে কোমল অধর চুম্বন করল। নিমিষেই শিউরে ওঠল সূচনার সর্বাঙ্গ। চোখ বেয়ে পড়ল দুফোঁটা নোনাপানি। যা দেখে মাহেরের স্পর্শন গাঢ় হলো। অদ্ভুত এক অনুভূতিতে আবিষ্ট হয়ে মাহেরের পৃষ্ঠদেশ খামচে ধরল সূচনা।
____________
হৈমীর হাতে একটি নোটপ্যাড আর কলম দিয়ে গম্ভীর মুখে বসে আছে রুদ্র। বলা হয়েছে নিজের প্রয়োজনীয় যা কিছু আছে সবকিছু লিখতে। একটু পর কেনাকাটা করতে বের হবে সে। সময় দিয়েছিল দশমিনিট। অথচ পঁচিশ মিনিট পেরিয়ে গেছে। তার লেখা শেষ হয়নি। পনেরো মিনিট যখন পার হলো রুদ্র জিজ্ঞেস করেছিল,
-” এত সময় লাগছে কেন? কী এত ভাবছ তাড়াতাড়ি লিখ। ”

হৈমী ভেঙচি কেটে উত্তর দিয়েছে,
-” শুনুন সবকিছুতে তাড়াহুড়ো করবেন না। আমাকে দিয়ে বিয়েটা তাড়াহুড়োয় করেছেন বলে ভেবে বসবেন না আমাকে দিয়ে আপনার জীবনের সবকিছুই তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। ”

চোখ গরম করে চিবিয়ে চিবিয়ে রুদ্র বলল,
-” যতক্ষণ বকবক করছ ততক্ষণে অনেক কিছু লেখা যেত। ”

হৈমী হকচকিয়ে গিয়ে চঞ্চলিত কণ্ঠে বলল,
-” অ্যাই অ্যাই সব সময় মারতে আসবেন এমন ভাব করবেন না। আমি তাড়াহুড়োয় কিছু করতে পারি না। আর দরকারের সময় আমার মাথা কাজ করে না। একটু সময় নিয়ে লিখি। ”

একথা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে রুদ্র বলল,
-” দরকারে মাথা কাজ করবে কেন? অদরকারী সম্পদ তো তুমি। ”

-” কী বললেন আমি কিন্তু শুনেছি। আমি অদরকারী সম্পদ! এত বড়ো অপমান! আপনি জানেন? আমাকে ছাড়া আপনি আব্বু ডাক শুনতে পারবেন না? আমি আপনার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সম্পদ মাথায় রাখবেন। ”

এ পর্যায়ে রুদ্র একটা কঠিন ধমক দিল। ব্যস হড়বড় করে সকল প্রয়োজনীয় জিনিসের নাম পড়ে গেল তার। লিখতেও শুরু করল এক এক করে সবটা।

লেখা শেষে পুরো ফ্ল্যাটে হৈমীকে একা রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে গেল রুদ্র। শুরুতে হৈমী ভয় না পেলেও পরবর্তীতে ভীষণ ভয় পেতে লাগল। তারমধ্য মনে পড়ল রুদ্রর দেয়া সেই শর্তের কথা। রুদ্র তো বাবাই হতে চায় না তাহলে সে কীভাবে প্রয়োজনীয় সম্পদ হবে? রুদ্র বাবা না হলে সে কী করে মা হবে? ছোট্ট বেলা থেকে তার কত শখ মা হবে। সারাজীবন পুতুলদের মা হয়ে, পুতুলকে মেয়ে বানিয়েই কাটিয়ে দিল। এবার তো বিয়ে হয়েছে রক্তে, মাংসে গড়া মানুষদের মা হতেই পারে। রুদ্র যাই বলুক সে পুরুষ মানুষ একবার না একবার ঠিক কাছে আসবে। আর কাছে আসা মানেই তার শর্ত ভাঙা। রুদ্র যদি কাছে এসে তার শর্ত ভাঙে সেও কনসিভ করে রুদ্রর শর্ত ভেঙে দিবে! উফফ দারুণ বুদ্ধি। তাছাড়া টিশার কাছে শুনেছে বিয়ের ক’টা মাস ওর স্বামীও ওকে কাছে টানেনি৷ পরবর্তীতে দিব্যি কাছে টেনে বাচ্চার মা বানিয়ে দিয়েছে। ক’দিন পরই তার কোল আলো করে বাচ্চা আসবে। সকল ভাবনাচিন্তার মাঝেই সে একটি বড়োসড়ো দোয়া করল,
-” হে আল্লাহ টিশার যেন একটা ছেলে হয়। যাতে আমার মেয়েকে ওর ছেলের কাছে বিয়ে দিতে পারি। বেয়াই হয়েছে জামাই, খালাত বোন হবে বেয়ান। ব্যাপারটা খুবই দারুণ। ”
___
সকালে বাইরে থেকে খাবার এনে খাওয়া হয়েছে। দুপুরেও বাইরের খাবার কিনে বাসায় ফিরল রুদ্র। শহরে একজন বিশ্বস্ত কাজের মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন। রুদ্রর একজন কাজের মহিলা বা মেয়ে প্রয়োজন। পেয়েছে কয়েকটা কিন্তু বিশ্বস্ত নয়। যেহেতু বিষয়টাতে হৈমী জড়িয়ে সেহেতু বেশ ভেবেচিন্তেই মেয়ে ঠিক করতে হবে। যা হাবাগোবা বউ তার। একে যে কেউ যে কোনো মুহুর্তে কিনে বেচে দিলেও টের পাবে না৷ তাই নো রিস্ক! পনির, ঝিনুক এক গাড়ি ভর্তি কেনাকাটা করে সব ড্রয়িং রুমে রেখে চলে গেল। রুদ্র ফ্রেশ হয়ে হৈমীকে প্রশ্ন করল,
-” তুমি রান্না পারো? ”

হৈমী ভীষণ উৎসুক হয়ে বলল,
-” ভাত পারি, ডিম ভাজি পারি, আর নুডলস, চা, কফিও পারি। ”

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” এগুলো চার বছরের বাচ্চারাও পারে৷ আমি জিজ্ঞেস করেছি মানুষকে রেঁধে বেড়ে খাওয়ানোর মতো যোগ্যতা তোমার আছে? ”

-” আপনি আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন! ”

বিরক্ত হয়ে রুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো। বলে গেল,
-” গোসল করে নিজের পোশাক গুলো পরে নাও। কার্টুনের বেশ দ্রুত ছাড়ো! ”

আঁতকে ওঠে হৈমী বলল,
-” আপনি আমাকে কার্টুন বললেন! ”
________
বিকেলের দিকে বেডরুমে হৈমীকে আঁটকে রাখা হলো দু’ঘন্টা। দু’ঘন্টা পর তাকে বদ্ধ ঘর থেকে বের হাওয়ার পারমিশন দিল রুদ্র। হৈমী কতক্ষণ চ্যাঁচামেচি করল, বকাঝকা করল রুদ্রকে। পাশাপাশি ফ্ল্যাট জুড়ে ঘুরাঘুরি করল। এক মিনিটও স্থির হয়ে থাকতে পারে না মেয়েটা। রুদ্র রুমে বসে ফোনে জরুরি কথায় ব্যস্ত। হৈমী তার থেকে খুব একটা পাত্তা এ মুহুর্তে পাচ্ছে না। তাই সেও মহাবিরক্ত হলো। রুম ছেড়ে বেরিয়ে পাশের রুমের খোলা দরজার পানে ক্ষণকাল তাকিয়ে রইল। রজনীগন্ধা ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছে সে। কিন্তু ফুল কি করে এলো? কৌতূহলী হয়ে পাশের রুমটায় পা বাড়াল। আর গিয়ে যা দেখল এতে তার শরীর অদ্ভুত ভাবে কেঁপে ওঠল। হায় হায় এত ফুলশোভিত বিছানা! বাসরঘরের মতো! ও আল্লাহ আজ তার বাসররাত হবে নাকি? হায় হায় হৃৎপিণ্ড তো ছটফটিয়ে ওঠল। সহসা বুকের বা পাশে হাত চেপে ধরল হৈমী। অদ্ভুত এক অনুভূতিতে গলা শুঁকিয়ে গেল তার। ঢোক গিলে বিরবির করে বলল,
-” বেয়াইমশায় থুরি বেয়াই ওরফে স্বামীমশায় আমি কিন্তু একটুও ভয় পাচ্ছি না। ”

চলবে…

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২৭
ড্রয়িংরুমে স্তব্ধীভূত হয়ে বসে আছে হৈমী। ক্ষণে ক্ষণে তার হৃৎযন্ত্রটা লাফিয়ে ওঠছে। এক ছুটে পালিয়ে যেতে মন চাচ্ছে দূরে কোথাও। কিন্তু যাবে কোথায়? তার কি আর কোথাও ঠাঁই হবে? একজন গুমরা মুখো রাক্ষসের বউকে কে ঠাঁই দিবে? তার আম্মু তো বলে দিয়েছে সে তার কাছে মৃত! মা’য়ের বলা এ কথা মনে পড়ে এতক্ষণের হওয়া অনুভূতি মিলিয়ে গেল। মুখটা থমথমে হয়ে গেল আচমকা। বুক ভার হয়ে কান্না পেল খুব। রুদ্র ফোন কানে ড্রয়িংরুমে এসে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল হৈমীর দিকে। ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,
-” সূচনার সাথে কথা বলো। ”

সূচনার নাম শুনতেই তড়াক করে ফোনটা নিল সে। কানে দিয়েই একের পর এক প্রশ্ন শুরু করল,
-” ও ভাবি তুমি ফোন দিয়েছ! আম্মু ফোন করতে বলেছে তাই না? আমিত জানি আম্মু আমার ওপর খুব বেশিক্ষণ রেগে থাকতে পারে না। আর ভাইয়া সেও রাতে ঘুমাতে পারেনি তাই না। ইস ভাইয়া যে কী টেনশন করে আমাকে নিয়ে। ও ভাবি তুমি আম্মু আর ভাইয়াকে টেনশন করতে না করে দিও। ও ভাবি তুমি একটু আমার হয়ে সরিও বলে দিও ওদের প্লিজ। ”

-” হৈমী, হৈমী শান্ত হও। আমরা সবাই তোমাকে খুব মিস করছি। তুমি চিন্তা করো না। কেউ তোমার ওপর রেগে নেই। শুধু একটু অভিমান করে আছে এটাও ঠিক হয়ে যাবে। ”

-” তুমি একটু উনাকে বলো আমাকে বাড়ি দিয়ে আসতে। এখানে আমার ভালো লাগছে না, মানুষ নেই, আলো, বাতাস কিছু নেই। উনি যেমন গুমোট এই বাসাটাও গুমোট দম বন্ধ লাগে আমার। ”

-” আচ্ছা আচ্ছা বলব। এবার খুশির খবর শোনো, টিশার ছেলে হয়েছে। মা আর মাহের এখন হসপিটালে। একটু পর মাহের আমাকে নিতে আসবে। টিশা আর বাবুর ছবি তুলে পাঠিয়ে দিব তোমাকে। ”

চোখ বড়ো বড়ো করে লাফিয়ে ওঠল হৈমী। টিশার বাবু হয়েছে! ছেলে বাবু! খুশিতে লাফাতে শুরু করল মেয়েটা। সূচনা বলল,
-” আচ্ছা এবার রাখি তুমি ভালোভাবে থেকো। মন খারাপ করো না এদিকে সব ঠিক আছে। মনে করো তোমরা বিয়ের পর ঢাকা বেড়াতে গিয়েছ কেমন? ”

সূচনা ফোন রেখে দিল। অতিরিক্ত খুশিতে হৈমীর হাত, পা কাঁপছে। রুদ্র ফোন নিতে হাত বাড়ালেও সে ফোন দিল না৷ রুদ্র জোরপূর্বক ফোন নিতে চাইলে যে হাতে ফোন সে হাত পিছনে নিয়ে গেল৷ বাচ্চাদের মতো করে বলল,
-” দিব না৷ বাবুর ছবি দেখব আমি। ”

রুদ্র নিরাশ হয়ে রুমে চলে গেল। কয়েক মিনিট পরই বেজে ওঠল কলিং বেল। হৈমী তখন রুদ্রর ফোন ঘাটতে ব্যস্ত। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে রুদ্র বেরিয়ে এসে হৈমীকে আপাদমস্তক দেখল। পরনে সাদা রঙের ল্যাগেন্সের সাথে হালকা গোলাপি কামিজ। গায়ে ওড়না নেই তবে কটি পরা আছে। ফলশ্রুতিতে
চেস্ট স্ট্রাকচার বোঝা যাচ্ছে না। তবুও গম্ভীর স্বরে সে হৈমীকে আদেশ করল,
-” রুমে গিয়ে ওড়না পরো। ”

হৈমী চমকে তাকাল রুদ্রর দিকে। রুদ্র ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
-” আমার বন্ধু আর তার ওয়াইফ এসেছে। মাথায় ওড়না রাখবে ওদের সামনে। ”

হৈমী বুঝতে পেরে বাধ্য মেয়ের মতো রুমে গেল। রুদ্র তার জন্য এত এত শপিং করেছে সেখানের ওড়নার সংখ্যাই বাইশটা। বাইশটা ওড়না থেকে বেছে বেছে পরিহিত জামার সাথে মিলিয়ে হালকা গোলাপি রঙেরই একটা ওড়না বের করে মাথায় দিল। মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খেল রুদ্রর কোন বন্ধু এসেছে? শুনেছে পনির আর ঝিনুক টাঙ্গাইল রওনা দিয়েছে। তাহলে এই বন্ধু কে? এই প্রশ্নের মাঝে আবার মনে পড়ে গেল পাশের রুমটার কথা! আজ যে তার বাসররাত! পুরো মুখশ্রী ভয়ে থমথম করতে লাগল তার। ডাক পড়ল রুদ্রর,
-” হৈমী বাইরে এসো। ”

ধীরপায়ে রুম থেকে বের হতেই দেখতে পেল পরিচিত মুখ। হ্যাঁ ছেলেটার নাম আবির, রুদ্রর বন্ধু। আবির হাসি হাসি মুখে লম্বা এক সালাম দিল তাকে,
-” আসসালামু আলাইকুম ভাবি। ”

হকচকিয়ে গেল সে। সালাম ফিরিয়ে আবিরের পাশে তাকাতেই অবাক হলো। আবিরের পাশে একটি সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে। মেয়েটির পরনে অনেক সুন্দর একটি শাড়ি, হালকা গহনা, হালকা সাজে দারুণ লাগছে। মেয়েটা হাসি হাসি মুখে বলল,
-” কেমন আছো? আমি আদ্রিতা। ”

রুদ্র বলল,
-” আবিরের বউ। ”

পরিচয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল হৈমী,
-” ভালো আছি, তুমি কেমন আছো? না মানে আপনি কেমন আছেন? ”

রুদ্র ওদেরকে বসতে ইশারা করল। ওরা বসল। আদ্রিতা শান্ত এবং মিষ্টি গলায় বলল,
-” আমাকে তুমি বলতে পারো সমস্যা নেই। ”

খুশিতে আটখানা হয়ে গেল হৈমী। রুদ্র ওকে চাপা স্বরে বলল,
-” কিচেনে ফল কাটা আছে, ফ্রিজে জুস আছে নিয়ে এসো। ”

হৈমী মাথা নাড়িয়ে গেল। রুদ্র ওদের সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল৷ বেশ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও হৈমী এলো না। দেরি হচ্ছে বলে রুদ্র আবিরকে বলল,
-” তোরা কথা বল আমি দেখে আসি। ”

কিচেনে গিয়ে সে দেখল ট্রেতে কয়েকরকম ফল কেটে রাখা। সে ফ্রিজ থেকে জুসের গ্লাসগুলো রাখল। এরপর সেটা হাতে নিতে গিয়ে আবার রেখে দিল। কয়েক পল তাকিয়ে থেকে কি যেন গভীর চিন্তা করল। রুদ্র এসে তাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
-” কী ব্যাপার ইডিয়টের মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? এই সামান্য কাজটুকুও তুমি পারছ না? ”

-” ট্রেটা অনেক ভারী আমি নিতে ভয় পাচ্ছি যদি পড়ে যায়? ”

উদাস গলায় হৈমী কথাটা বলতেই রুদ্র বিরবির করে ওকে বকল। এরপর নিজেই ট্রে হাতে বেরিয়ে গেল৷ পিছন পিছন হৈমীও এলো৷ আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বলল,
-” অনেক ভারী ছিল, আমি আনতে পারছিলাম না। ”

মুচকি হেসে নিচু স্বরে আদ্রিতা আবিরকে বলল,
-” সো সুইট! এই বাচ্চা টাইপ মেয়েটাকে কথায় পেল রুদ্র ভাইয়া। ”

আবির বলল,
-” বন্ধু আমার এতবছর পর এরে দেখেই পিছলা খাইছে। কিছু তো স্পেশালিটি আছেই। ”

-” তা তো আছেই অমিতাভ বচ্চন আর জয়া বচ্চনের মতোন। ”
_________
ভয়াবহ রকমের ছ্যাঁকা খেয়ে হৈমী স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ, বিরস মুখে রুমে বসে আছে। কারণ কিছুক্ষণ পূর্বেই সে জানতে পেরেছে বাসরঘরটা আবির আর আদ্রিতার৷ বিয়ের ক’টাদিন আদ্রিতার মাস জনিত কারণে আবিরের সঙ্গে বাসর হয়নি। যেহেতু তারা একে অপরের পূর্ব পরিচিত। দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল সেহেতু জোরাজোরির ব্যাপারটাও ছিল না। আনুষ্ঠানিক ঝামেলা শেষ হলো, আদ্রিতাও সুস্থ হয়ে ওঠল। চারদিন পর তার আবার ছুটিও শেষ। দূরে কোথাও হানিমুনেও যেতে পারবে না। তাই রুদ্র তাকে অফার করেছিল ঢাকায় বেড়াতে আসার জন্য । বাসর না হয় ঢাকায় রুদ্রর নিরিবিলি ফ্ল্যাটেই হবে। অফারটি পছন্দ হয় আবিরের। তাছাড়া শুনেছে হৈমী রান্নাবান্না কিছু জানে না। একেবারে ইমম্যাচিওর মেয়েটা। আর আদ্রিতা ম্যাচিওর। তার রান্নার হাতও বেশ ভালো। যদি ক’টাদিন তারা এসে থাকে পাশাপাশি হৈমীকেও আদ্রিতা বড়ো বোন হয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে যায় মন্দ হয় না। তাই দুই বন্ধু মিলে প্ল্যান করেই এতসব আয়োজন করে। সব শুনে হৈমীর মনটা ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে গেছে। একদিকে যেমন গোপন ভয় কেটেছে অপরদিকে বড়ো দুঃখও পেয়েছে। কারণ টিশার ছেলে হয়েছে অথচ তার মেয়ের খবর নেই! মনে মনে হাসল হৈমী। আসলে সে যতই দুষ্টুমি করুক রুদ্রর সঙ্গে তার বাসর ব্যাপারটা ভাবলই ভয়ে দু, তিনবার মরে যেতে ইচ্ছে করে। চোখ বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলল সে। মনে মনে কয়েকবার শুকরিয়া জানালো উপরওয়ালাকে। সে রুদ্রকে চায় অবশ্যই চায় কিন্তু একটু রয়েসয়ে। আগে নিজেকে তার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। মানুষটার কঠিন হৃদয়ে একটু মায়া জাগাতে হবে। ভালোবাসা সে তো দু’জনেরই আছে। নেই শুধু মায়া আর বোঝাপড়া।

রুদ্র কাউচে বসে ল্যাপটপে কিছু জরুরি কাজ করছে আর একটু পরপর হৈমীর দিকে তাকাচ্ছে। তার চোখমুখে স্পষ্ট দুষ্টু হাসি খেলা করছে। কারণ হৈমীর মনোভাবনা টের পেয়েছে সে। বাসরঘরটা যে তার ভেবেছিল ঠিক বুঝতে পেরেছে সে। অনেকক্ষণ স্থবির হয়ে বসে থাকার পর রুদ্রর হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকল হৈমী। সূচনা বাবু আর টিশার অনেকগুলো ছবি দিয়েছে। সে ছবিগুলোই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। এমন সময় কারো মৃদু কান্নার শব্দ শুনল! কান খাড়া করতেই বুঝতে পারল পাশের রুম থেকে আসছে শব্দটা। ক্ষণকাল পেরোতেই আবার শব্দটা মিলিয়ে গেল। রুদ্র পরিস্থিতি বুঝে হৈমীর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাল। মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
-” ওদিকে কী? নিজের কাজ করো। ”

হৈমী ভ্রু কুঁচকে তাকাল রুদ্রর দিকে। সে পুনরায় নিজের কাজে মগ্ন হয়েছে। বুঝে অট্যানশন পেতে প্রশ্ন করল,
-” মনে হলো কেউ কাঁদছে। ”

-” ভুল শুনেছ। ”

-” না ভুল শুনিনি ঠিক শুনেছি। ”

ল্যাপটপ অফ করে রুদ্র এগিয়ে এলো বিছানার দিকে। গম্ভীর স্বরে বলল,
-” ওদের ফার্স্ট নাইট আজ আশা করি বাকিটা বোঝাতে হবে না৷ ”

-” ফার্স্ট নাইট হলেই কাঁদতে হবে কেন? এখানে কান্নার কী আছে? ”

ঢং করে প্রশ্নটা করল হৈমী। অথচ সে সবই বুঝতে পারছে৷ বিয়ের পর একটি মেয়ের ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে টিশা তাকে ভালোই জ্ঞান দিয়েছে। তবুও রুদ্রর সঙ্গে মশকরা করল সে। তার মশকরাকে অবুঝতা ভেবে অধৈর্য্য হয়ে গেল রুদ্র। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” এসো কান্নার কারণটা তোমাকে প্র্যাক্টিকেলি বোঝাই? ”

লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়ল হৈমী। ভীত স্বরে বলল,
-” অ্যাই একদম না। আমাদের মধ্যকার শর্তটা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। ”

রুদ্র বিরবির করে কি যেন বলে সটান হয়ে শুয়ে পড়ল। হৈমী এলোমেলো কিছু ঘুরাঘুরি করল। রুদ্র চোখ বুজে। ঘুমিয়ে গেল নাকি? তার তো ঘুম পাচ্ছে না। সময় কাটাতে রুদ্রর ফোনটা নিল স্ক্রিনে রুদ্রর ছবি ভেসে ওঠতেই সে ছবিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে গুনগুন করে গাইল,
-” আমার হৃদয় একটা আয়না, এই আয়নায় তোমার মুখটি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না ”

বদ্ধ চোখ সহসা খুলে থম মেরে তাকিয়ে রইল। বলল,
-” চুপচাপ এসে শুয়ে পড়ো। ”

হৈমী চুপচাপ তার পাশে বসল। বলল,

-” একটা প্রশ্ন করি? ”

ভ্রু কুঁচকে রাশভারি স্বরে রুদ্রর অনুমতি,
-” হুম ”

হৈমী উৎসুক হয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

-” শাবনূর বেশি সুন্দরী নাকি আমি? ”

বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল রুদ্র। কিয়ৎকাল তাকিয়ে রইল হৈমীর মুখ পানে। বিছানা থেকে মাপলার ওঠিয়ে গলায় পেঁচিয়ে
ছোট্ট করে নিশ্বাস ছাড়ল। কোনো প্রকার উত্তর না দিয়েই পাশ কাটিয়ে চলে গেল বেলকনিতে। হৈমী মুখভার করে বসে রইল বিছানায়। বিরবির করে আওড়াল,
-” কী একটা যন্ত্রমানব আমার জামাই হলো! একটুও রসকষ নেই, ভাল্লাগে না ধ্যাৎ। ”

নিমিষেই চোখদুটো টলমল। আকস্মাৎ রুদ্রর আগমন। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দীর্ঘাকৃতির শরীরটা ঝুঁকে এলো তার ওপর। হৈমী ঢোক চিপে বিছানায় দু-হাত ভর করে পিছনদিকে কিঞ্চিৎ হেলে গেল। রুদ্রও হৈমীর দু’পাশে দু-হাত ভর করে যতটা সম্ভব ঝুঁকে রইল। বরাবরের কঠিন দৃষ্টিজোড়ায় অন্যরকম ভাব। কী ভীষণ প্রগাঢ়তা ঐ দু’টি ছোটো ছোটো চোখে। হৈমীর হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। সে স্পন্দনকে আরো বেশি কাঁপিয়ে তুলতে রাশভারি কণ্ঠে মাদকতার সুরে বলল,
-” আমি কাকে বিয়ে করেছি? শাবনূর না হৈমী? ”

চোখ বড়ো বড়ো করে কম্পিত কণ্ঠে হৈমী বলল,
-” হৈমী, হৈমীকে। ”

-” তাহলে কে বেশি সুন্দরী হলো? ”

এ পর্যায়ে হৈমীর হাত, পা শিউরে ওঠল। মাথা ভনভন করছে তার। রুদ্র মুহুর্তেই পরিবেশ অন্যরকম করে দিতে বাঁকা হাসল। গলায় ঝুলিয়ে রাখা দুপাশে দুহাত দিয়ে মাপলার টেনে ধরে বলল,
-” যাকে অর্ধাঙ্গিনী করেছি নিশ্চয়ই সে… ”

বাকিটুকু আর বলল না। নিজ দায়িত্বে বুঝে নেয়ার ইঙ্গিত করে পুনরায় বেলকনিতে চলে গেল। ঘুম তারও আসছে না। অদ্ভুত এক অস্থিরতা শরীরের শিরা-উপশিরা বিষিয়ে তুলছে। শ্বাসরোধ হয়ে আসছে। মস্তিষ্ক ওলটপালট হচ্ছে। অনুভূতিরা হয়ে পড়ছে বড্ড বেসামাল।

চলবে…