ভালোবাসা একটা বাজি পর্ব-০১

0
820

গল্পের নাম: #ভালোবাসা_একটা_বাজি
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)
#সূচনাপর্ব

পুরো ক্লাব ডিজে মিউজিকের শব্দে ভরপুর। মিউজিক প্লে করছেন ফেমাস ডিজে মিউজিশিয়ান আরিয়ান তাজওয়ার। শো শেষে করতালির শব্দে মুখরিত হয় চারপাশ। আরিয়ান সবাইকে বিদায় জানিয়ে স্টেজ থেকে নেমে পড়ে। ভার্সিটি যাবে। তিনি এখনো একজন স্টুডেন্ট, অথচ মিউজিক এর সাথেও জড়িয়ে পড়েছে ওতপ্রোতভাবে। ভার্সিটিতে গাড়ি পৌঁছালেই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় আরিয়ান আর তার গ্যাংয়ের তিনজন শিহাব, রাইয়ান আর সুহাস। আরিয়া গাড়ি থেকে নামতেই দৌড়ে ছুটে আসে আনিকা। আরিয়া আনিকাকে দেখে বেশ বিরক্ত হয়ে বলে-

-” আই নিড ব্রেকাপ। চলে যাও সামনে থেকে রিলেশন টা এখানেই শেষ। একটা কথাও বলবেনা আউট।

-” আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার সাথে কেন এমন করছো? আমার ভূলটা কি?

-” এই মেয়ে বাংলা বোঝনা? আউট! সামনে থেকে সরো।

আরিয়ান কথাটা বলেই দাম্ভিকতা নিয়ে, আনিকাকে পাশ কাটিয়ে হাঁটা দেয় সামনের দিকে। বাকি তিনজন ও তাঁর পিছু নেয়। পিছনে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনিকা। কত কষ্টের পর আরিয়ানের সাথে রিলেশন এ গিয়েছিলো। আজ সব শেষ হয়ে গেল। আরিয়ান এমনটা যে প্রথম করেছে তা নয়। সে এই নিয়ে সে ৭৪ জনের সাথে ব্রেকাপ করেছে। তার মতে ভালোবাসা বলতে কিছু হয়না। সে ফ্রেন্ডদের সাথে বাজি ধরে ধরে মেয়েদের পটিয়ে কয়েকদিন রিলেশন করেই ব্রেকাপ করে দেয়। এটা তার স্বভাবে রূপ নিয়েছে। ভার্সিটির কিছু মেয়ে আড়চোখে, কেউ বা সরাসরিই হাঁ করে তাকিয়ে আছে আরিয়ানদের গ্যাংয়ের দিকে। আরিয়ানের গ্যাংয়ের সবাই খুবই সুন্দর। তাই সব মেয়েদের অল-টাইম ক্রাশ তাঁরা। আরিয়ান আর তার বন্ধুরা মিলে গিয়ে বসে ক্যান্টিনে। তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করছে। হঠাৎই রাইয়ান বলে-

-” আরিয়ান দেখ কি কিউট একটা মেয়ে। পারলে ওকে পটিয়ে দেখা।

আরিয়ান মাথা পেছনে ঘুরিয়ে দেখে ফুল ভার্সিটির ইউনিফর্ম পরিহিত একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা ফর্সা তবে ড্রেসের সাদা রংটাও তাঁর গায়ে মানিয়েছে বেশ। আরিয়ান ঘুরে রাইয়ানের দিকে তাকায়। মুখে তার দুষ্ট হাঁসি। শিহাব বলে-

-” দোস্ত ওই মেয়েকে পটাতে পারলে তোকে আমরা তিনজন মিলে দুই লাখ দিব। আর না পারলে তুই আমাদের দিবি।

আরিয়ান বা তার বন্ধুদের কাছে টাকা কোন ব্যাপারই না। সবাই বাবার টাকা উড়ায় আর নিজেরা যা ইনকাম করে তা তো মসজিদে, এতিমখানা তে দিয়ে দেয়। বাজি ধরে এই টাকাও একসাথে উড়ায়। নামেই বাজি ধরা। আর কিছু মেয়ের জীবন নষ্ট করা। আরিয়ানের মধ্যে বিশেষ কিছু আছে, যা কোন মেয়েকেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করে ফেলে। আরিয়ান তখন হেসে বলে-

-” দেখ এসব আমার পক্ষে কোন ব্যাপারই না। তবে এই কিউট মেয়েটার মন ভাঙতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু তোরা যখন বলছিস, তাহলে আমি ওকে পটিয়ে ফেলবো। নো প্রব্লেম।

আরিয়ান বাঁকা হাসি দেয়। তখন মেয়েটা তাদের থেকে একটু দূরে বসে। তার সাথে আরিয়ানের সদ্য ব্রেকাপ হওয়া এক্স ও আছে। আনিকা বিমর্ষ চিত্তে আরিয়ানের দিকে তাকায়। আরিয়ান চোখ ঘুরিয়ে নেয়। আনিকা মেয়েটাকে বলে-

-” আরাফা তুমি বসো এখান আমার ভালো লাগছেনা।

-” আরে যাই যাই করছো কেন? আজব তোহ!

-” নাহ আসলে আমার মাথাব্যথা করছে।

-” ওহ আচ্ছা, তাহলে যাও।

আনিকা বাহানা দিয়ে সরে আসে। সেও আগে বহু প্রেম করেছে। কিন্তু এই প্রথম কেউ তাকে ছ্যাকা দিলো এটা সে মানতে পারছেনা। তার আরো ইচ্ছে ছিলো আরিয়ানকে ছ্যাকা দিয়ে সবাইকে বলবে- দেখো তোমাদের ক্রাশকে আমি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু হায় কপাল কে জানতো আরিয়ান তার সাথে এমন করবে। আরাফা বসে বসে অন্য মেয়েগুলোর সঙ্গে কথা বলছে। তাদের কথার মেইন টপিকস কে কার উপর ক্রাশ খেয়েছে আর কার কার বয়ফ্রেন্ড আছে। অর্পিতা তাদের মধ্য থেকে আরাফাকে বলে-

-” বহুদিন ধরে ডিজে দলের একটা ছেলের উপর ক্রাশ খেয়ে আসছি। প্রথমে দলের সবার উপরে ক্রাশ খেলেও, এখন একটাকে পারমানেন্ট ক্রাশ বানিয়ে নিয়েছি।

আরাফা বিষ্ময় নিয়ে বলে-

-” ও মাই গড! একসাথে চারজনের উপর ক্রাশ খেয়েছো? হাউ পসিবল?

তখন সবাই বলে-

-” ও একা নয় ভার্সিটির ৯৮% মেয়েই ওই দলের উপর ক্রাশ।

আরাফা বলে-

-” বাকি ২% তাহলে ক্রাশ না খেয়ে বসে আছে কেন?

অর্পিতা বলে-

-” আরে ওরা বিবাহিত। তাও কিছু কিছু মেয়ে জামাই থাকতেও ওদের উপর ক্রাশ খায়।

অর্পিতার কথায় হাসির রোল পড়ে যায়। আরাফা বহু কষ্টে হাসি চেপে বলে-

-” আচ্ছা আমায় একটু ঐ ক্রাশের দলকে দেখাও। আমিও একটু ক্রাশ খাই। সকালে কিছুই খেয়ে আসিনি।

অর্পিতা হাসতে হাসতে আরিয়াদের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে-

-” ঐ সেই ক্রাশের দল। তবে ব্লু শার্ট পড়া সুহাস ছেলেটা আমার পারমানেন্ট ক্রাশ। আর কালো শার্ট পড়া সবচেয়ে কিউট ছেলেটা ওদের লিডার আরিয়ন। আর একজন রাইয়ান আরেকটা শিহাব।

অর্পিতা খুব ভালোভাবে সবাইকে দেখিয়ে দেয়। নাম ও বলে দেয়। আরাফা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হতাশ হয়-

-” এগুলো তোমাদের ক্রাশ না কি ছাই পাশ। এদের চেয়ে আমার ড্রাইভার ও হ্যান্ডসাম। সবগুলো ফর্সা কতখানি। আই এম সিওর ওরা সবকটা প্লে বয়।

ইমা চোখ গোল গোল করে বলে-

-” কি যা তা বলছিস? আমাদের ক্রাশরা কোন মেয়েকে পাত্তাই দেয়না। তাদের এটিটিউড দেখলেই ফিদা হয়ে যাই। এমন একটা ছেলে আসলে আমি সব ভূলে বাসর ঘরে ঢুকে যেতাম।

আবারো সবাই হাসাহাসি করে। আরিয়ান বেশ বিরক্ত হয়ে মেয়েগুলোর দিকে তাকায়। এত হাসির কি আছে একটু পর পরই হাহাহিহি করে হাসাহাসি করছে। আরাফার সাথে তখন চোখাচোখি হয় আরিয়ানের। আরিয়ান সুযোগ বুঝে আরাফাকে চোখ টিপ মে”ড়ে দেয়। তারপর হেসে সেখান থেকে উঠে যায়। আরাফা হাসি থামিয়ে চোখ গোল গোল করে আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্পিতা ধাক্কা দিয়ে বলে-

-” এই এই তুই অন্তত বাদ যা। তুই আমার ক্রাশদের এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাস না প্লিজ!

আরাফা বেশ বিরক্ত হয় অর্পিতার কথায়। চোখ পাকিয়ে অর্পিতার দিকে তাকায় সে। অর্পিতা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে-

-” হেহেহে আমি মজা করছিলাম।

-” তুই কি ওদের গায়ে সিল লাগিয়ে দিয়েছিস? যে অন্য কেউ ক্রাশ খেতে পারবেনা। আর ঐ প্লে বয় গুলাকে দেখে আমি আরাফা ক্রাশ খাই না। ওসব ছাই পাশ তোরা খা। ইটস্ মি তাহিয়্যাত আরাফা।

আরাফাও এবার আড্ডা ছেড়ে উঠে যায়। তার ড্রাইভার এসে গেছে তাকে নিতে। আরাফা তার ড্রাইভারের সাথে কথা বলতে বলতে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। আরিয়ানরা বাহিরেই ছিলো। আরাফাকে এভাবে হেসে হেসে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে সুহাস বলে-

-” এই এই তোরা দেখ এবার সবাই। আমি আইডিয়া করেছিলাম এই মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে। এতো কিউট মেয়ে বয়ফ্রেন্ড ও হ্যান্ডসাম আছে। আহারে আরিয়ান বেচারা তোর দুই লাখ জলে গেলো। বাজি ধরার আগেই হেরে গেলি। তোকে কতবার না করেছি ওদের দুজনের সাথে বাজি ধরে মেয়েদের জীবন নষ্ট করিস না। এবার দেখ ভালোবাসা কি একটা বাজি?

আরিয়ান তখন শান্ত ভাবে আরাফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়-

-” হুম ভালোবাসা একটা বাজি। তোর কোন সমস্যা। শোন আমি মেয়েদের কখনোই ভালোবাসতে পারবোনা। নারী জাতির ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে। ভালোবাসার মূল খুঁটি হলো বিশ্বাস। তাই ভালোবাসা আমার কাছে একটা খেলা বা বাজি।

আরিয়ানের কথায় হতাশ হয় সুহাস। তার বাকি বন্ধুরা ফাজিল কথা বলেছিলো, যাতে আরিয়ান কোন এক মেয়ের প্রেমে তো পড়ুক। কিন্তু আরিয়ানের নাকি কারো প্রতি ফিলিংসই আসেনা‌। আরিয়ান নিজের গাড়িতে উঠে সবাইকে বায় বলে চলে যায়। সুহাস এবার শিহাব আর রাইয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে-

-” দেখ ওর ফিলিংস টা মেইবি মরে গেছে। আসলে এটা হওয়ারি। সবচেয়ে বিশ্বস্ত নারীর থেকে ধোঁকা পেলে সবারই বিশ্বাস ভেঙে যায়। আরিয়ান হয়তো একটু বেশিই জেদি। তাই ও যতক্ষন না চাইবে কাউকে ভালোবাসতে ততক্ষন তোরা হাজারো বাজি ধরে ওকে কারো প্রেমে ফেলতে পারবিনা‌। তাই এইসব বন্ধ কর প্লিজ। আর কাল নতুন এলবাম লঞ্চ হবে সেটায় ফোকাস কর। বায় আমি যাই।

সুহাস ও এবার নিজের গন্তব্যে চলে যায়। শিহাব আর রাইয়ান একে অপরের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আরিয়ান কি কখনো কাউকে ভালোবাসবে না। নাকি ভালোবাসাকে সে বাজি হিসেবেই উপভোগ করবে?

পরেরদিন নতুন এলবাম লঞ্চ করার জন্য আরিয়ানসহ তার বাকি বন্ধুরা উপস্থিত হয় একটা পার্টিতে। কিন্তু তাদের কাজের প্রডিউসার ব্যস্ততার কারনে তাঁর মেয়েকে পাঠিয়ে দেয় কাজের তদারকি করতে। প্রডিউসারের মেয়েকে দেখে আরিয়ান সহ তার বাকি বন্ধুরা সবাই যেনো বৈদ্যুতিক শক খায়। মেয়েটিও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।

#চলবে