#ভালোবাসা_একটা_বাজি(১৪)
-” মামা আরাফা তো দুইদিন ধরে ভার্সিটি তে আসছে না। ফেসবুক আইডি ও ডিএকক্টিভ করা। আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।
আরিয়ানের অস্থিরতা দেখে রাইয়ান হেসে বলে-
-” কি গো ভাগিনা! তুমি আবার লাইলির প্রেমে মজনু হয়ে যাচ্ছ নাকি? বাহ্ প্রেমে পড়লে তবে!
আরিয়ান চোখ মুখ কুঁচকে বলে-
-” চুপ যা তো সারাদিন প্রেম প্রেম করিস খালি। এই প্রেম ছাড়া অন্য খবর থাকলে বল।
সুহাস হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে বলে-
-” আছে তো আছে সুন্দর খবর আছে। বাজি হেরে যাবি সেই খবর।
শিহাব বত্রিশ পাটি বের করে বলে-
-” আরিয়ান তুই স্বীকার করতে চাস আর না চাস, তুই আরাফার প্রেমে পড়ে গেছিস, অথবা যাচ্ছিস। ভালোবাসা কখনোই কাছে থাকতে বোঝা যায়না। দেখ দুইদিন ভার্সিটি তে আসেনি আর তুই চিন্তায় শেষ।
সুহাস সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে-
-” গাইস গেটের দিকে তাকা।
আরিয়ান চোখ ঘুরিয়ে গেটের দিকে তাকায়। দৃষ্টি থমকে গেল, আরাফা ব্ল্যাক জিন্স, ব্ল্যাক টপস্ পড়েছে। টপস টা হাঁটু পর্যন্ত। চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে। কোমড় পর্যন্ত কালো চুল, চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস, ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক। এ যেনো অন্য রকম কেউ। আরিয়ান পুরাই হা করে তাকিয়ে আছে। আরাফার এই লুক তার অজানা ছিলো। আরাফা আর চোখে দেখে আরিয়ান তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। মুচকি হেসে মনে মনে বলে-
-” সময় এবার আমার আরিয়ান তাজওয়ার। বাজিটা না হয় আমিই ধরলাম।
আরাফা আরিয়ান কে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। সুহাস আরিয়ান কে ধাক্কা দিয়ে বলে-
-” কি রে মামা মুখে তো মশা ঢুকবো। চোখ দিয়াই গিলে খাইতাছোস। সবুর কর রে, বাসর ঘরের জন্য কিছু রেখে দে।
আরিয়ান সুহাসের পিঠে ধাম করে এক কিল দিয়ে বলে-
-” অশ্লিল কথাবার্তা বাদ দে।
আরিয়ান ক্যান্টিনে যায়। গিয়ে দেখে আরাফা, অনিক, অর্পিতা, আনিকা, হিয়া, ইমা আরো অনেকে বসে বসে গল্প করছে। আরাফা আর অনিক এক জায়গায় বসেছে। কিছুক্ষণ পর পর দুজনেই হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। আরিয়ানের রাগে গা জ্বলছে। কি এমন আছে অনিকের যাতে অনিকের প্রতি এতো ইন্টারেস্ট? আমাকে সারাদিন প্লে বয় বলে, অনিক তো আরো খারা’প তার পরেও ওর গাঁ ঘেঁষে থাকে। একসাথে বাইকে বসে ন্যাকামি করে। মন চাইছে দাঁতে কয়রা ঘসে দেই। এতো হাসির কি আছে। আনিকা হঠাৎ আরিয়ান কে দেখে সেখান থেকে উঠে চলে যায়। আরিয়ান আরেকবার আরাফার দিকে তাকিয়ে গটগট করে চলে যায়। সুহাস আরিয়ানের রাগী মুখ দেখে বলে-
-” কি হয়েছে রে? এভাবে রেগে আছিস কেন?
আরিয়ান আরো রেগে গিয়ে বলে-
-” তো কি করবো? নেচে নেচে হাহা হিহি করবো?
শিহাব জিজ্ঞেস করে-
-” কি রে এতো হাইপার কেন হচ্ছিস? বল কি হয়েছে।
আরিয়ান সিরিয়ার মুড নিয়ে বলে-
-” আমার মধ্যে কি নেই? যা ওই অনিকের মাঝে আছে। ও কেন সবসময় আমার পেছনে পড়ে থাকে? আমি কি করেছি ওর সাথে? আর ওই আরাফা মেয়েটাও অনিকের গায়ে গলে গলে পড়ছে। এতো কথা কিসের ওর সাথে। ওর মাঝে পেয়েছে কি? আমি না হয় অনেকগুলো রিলেশন করেছি তাই আমাকে পছন্দ নয়। কিন্তু অনিক তো আরো বাজে ওর সাথে এতো ঘেঁষাঘেঁষি কিসের? সেদিন ও আমার সাথে কতো কথা বলল। আর আজ আরেকজনের সাথে। সত্যিই মেয়েরা এমনই, নতুন পেলে পুরোনোকে ভালো লাগেনা।
সুহাস তখন গলা উঁচিয়ে বলে –
-” তোর এই ভ্রান্ত ধারণা যতদিন না পাল্টাবি কোন মেয়েই তোর সাথে থাকবেনা। শুধু শুধু দুইজন মেয়ের সাথে পৃথিবীর সব মেয়েদের মিলাস কেন? আরে মায়েরা যদি লোভীই হতো তাহলে আর দশমাস দশদিন কষ্ট করে আমাদের দুনিয়ার আলো দেখাতো না। আর প্রতি প্রেমিকাই যদি স্বার্থপর হতো তাহলে পৃথিবীতে এতো অমর প্রেমের কাহিনী থাকতো না। ভেবেছিলাম তুই বদলাবি, কিন্তু তুই সারাজীবন একটা ভূল ধারনা নিয়েই পড়ে থাকবি। এতো একগুঁয়েমি করোছ কেন। সব মানুষ এক নয়। আর সারাজীবন সব কিছু একই রকম থাকতে নেই। নিজেকে পাল্টা সময় আছে।
সুহাস রাগে শিহাব কে টেনে নিয়ে চলে যায়। আরিয়ান করুন চোখে ওদের যাওয়ার দিকে তাকায়। রাইইয়ান এসে আরিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে-
-” কি রে আরাফা অন্যের সাথে যা ইচ্ছে করুক তাতে তোর কি আসে যায়?
আরিয়ান আমতা আমতা করে বলে-
-” নাহ নাহ আমার কি আসে যাবে? কিছুই না।
রাইয়ান ঠান্ডা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-
-” ভালোবাসিস আরাফাকে? নাহলে ওর কাজে তোর এত রাগ হচ্ছে কেন?
আরিয়ান রাইয়ানের প্রশ্নে থম মে’রে যায়। রাইয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলে –
-” একটা কথা বলি শোন। আগে নিজেকে চিনতে শেখ। নিজের অনুভূতি বুঝতে শেখ। কাউকে ধরে না রাখলে সে কিন্তু তোর থাকবেনা। আর অনুভূতি থেকে বেশিদিন পালিয়ে বেড়ানো যায়না। নিজের মনে অনুভূতি থাকলে সেগুলো প্রকাশ কর। সবসময় ইগোর জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষ দের দুরে ঠেলে দিস না। দুরত্ব কিন্তু খুবই খারাপ। আর ভালোবাসার মানুষ টা যতদিন না হারায় অতদিন কেউই ভালোবাসা টা উপলদ্ধি করতে পারেনা। ভেবে দেখ নিজেকে পরিবর্তন কর, জীবন এখনো পড়ে আছে।
রাইয়ান নিজেও চলে যায়। আরিয়ান কতক্ষন রাইয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরে আরাফা আর অর্পিতা একসাথে আরিয়ানের সামনে দিয়ে চলে যায়। আরাফা এমন ভান করে যেন তার আশেপাশে কেউ নেই। আরিয়ানের এবার অনেক রাগ লাগে। কিছু আরাফা তার আগেই অনিকের বাইকে চলে যায়।
।
বিকেলে আরিয়ান গিয়ে কলিংবেল বাজায়। শায়লা রহমান এসে দরজা খুলে দেয়। আরিয়ান কিছু না বলে উপরে তার পুরোনো সেই রুমটায় যায়। রুমে ঢুকে দরজা লক করে দেয়। রুমের চারদিকে দেয়ালে কতশত স্মৃতি। ফ্যামিলি ফটোটার দিকে এক ধ্যানে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। তারপর জোড়ে হেঁসে বলে-
-” ছলনাময়ী নারী সাদিয়া। ছলনাময়ী ইভা। সব সব সব ছলনাময়ী। কেউ কথা রাখেনি। কেউ সারাজীবন পাশে থাকলো না। সবাই ছেড়ে গেল। কেউ ভালোবাসে নি।
শায়লা রহমান শরবত হাতে নিয়ে এসে আরিয়ানের দরজায় টোকা দেয়। আরিয়ান ভেতর থেকে বলে-
-” কে?
শায়লা রহমান চিন্তিত গলায় বলে-
-” আরিয়ান দরজা খোল। শরবর খা শরীরটা ভালো লাগবে।
আরিয়ান ক্লান্ত গলায় বলে-
-” আমি কিছু খাব না মা। তুমি চলে যাও। আমাকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দাও। আমি এ বাসায় থাকতে আসিনি। কিছুক্ষণ পরেই চলে যাব।
শায়লা রহমান কিছুক্ষন থম মে’রে দাড়িয়ে থাকে। তারপর নিচের দিকে নেমে যায়। ছেলেটার হঠাৎ হলো কি? আরিয়ান আজ বহুবছর পর কাঁদছে। কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছে। কখনোই নিজেকে নিজে বুঝতে পারলাম না আমি। কেন এমন হচ্ছে? আমার জীবনটা তো সুন্দর হতে পারতো। ছোটবেলায় কেন আমায় সঙ্গে করে নিয়ে গেল না বাবা-মা। তাহলে তো সাদিয়া নামক বিষধর সাপের সাথে পরিচয় হতো না। মায়ের মতো ভালোবেসেছি সে কি একবারও আমাদের কথা ভাবেনি। কই আছে কে জানে? আর আর ইভা ও কিভাবে পারলো আমায় ছেড়ে যেতে? অনিক অনিক অনিক করেছে সব। ও আমার ইভাকে কেড়ে নিয়েছে। ওকে আমি ছাড়বো না। জীবনের হিসাব মেলাতে মেলাতে আরিয়ান মেঝের উপরেই ঘুমিয়ে পড়ে।
।
রাত দশটা বাজে। শায়লা রহমান একবার আরিয়ান কে খেতে ডেকে গেছে কিন্তু কোন সারা শব্দ পায়নি। আরিয়ান নিভু নিভু চোখে তাকায়। চারপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারে নিজের সেই ছোটবেলার রুমে আছে। মেঝে থেকে উঠে বসে। মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে বড্ড ইচ্ছে করছে। আরিয়ান দরজা খুলে দৌড়ে সিঁড়ি থেকে নামে। পেছন থেকে মিহি ডাকে –
-” ভাইয়া এই রাতে কই যাচ্ছিস? খেয়ে তো যা।
আরিয়ান কারো কথা না শুনে চলে যায়। বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট করে। তার প্রশ্নের উত্তর গুলো চাই চাই চাই।
#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)
#ভালোবাসা_একটা_বাজি(১৫)
বেলকনিতে কিছু ধুপ করে পড়ার শব্দ হলো। আরাফার ঘুম আসছিলো না। হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে উঠে বসে। দরজাটা লাগানো হয়নি। হাতরে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালায়। ফ্ল্যাশ সামনে মারতেই আরিয়ান কে দেখে ভুত দেখার মত চমকে ওঠে। হাত থেকে ফ্ল্যাশ পড়ে যায়। আচ্ছা আমি কি আরিয়ান কে নিয়ে চিন্তা করতে করতে কি এখন হ্যালুসিনেশন হচ্ছে নাকি। আরাফা আবারো মোবাইল উঠিয়ে ফ্ল্যাশ সামনে ধরে। আরিয়ান পকেটে দু হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। আরাফা এবার চিৎকার করতে নিলেই আরিয়ান এসে তাড়াতাড়ি মুখ চেপে ধরে। মোবাইল টা হাত থেকে পড়ে গেছে। আরিয়ানের নিঃশ্বাস ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে। আরাফার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আরিয়ানের হাতে চিমটি বসিয়ে দেয় আরাফা। আরিয়ান মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেয় গিয়ে। আরাফা রেগে বলে-
-” আপনার কি কোন সেন্স নেই? কোন সাহসে এসেছেন আমার রুমে। এত রাতে একটা মেয়ের রুমে আসতে বিবেকে বাধে নি?
আরিয়ান ইনোসেন্ট ফেস করে বলে-
-” কেন আমি কি খারাপ কিছু করতে এসেছি যে বিবেকে বাঁধবে? আর তুমি চিল্লাচ্ছো কেন? কেউ শুনলে তোমারই সমস্যা।
আরিয়ান আয়েশ করে সোফায় বসে। আরাফা চিল্লিয়ে বলে-
-“ না কেউ শুনবে না। আমার রুম সাউন্ডপ্রুফ। আপনি চলে যান এখান থেকে।
-” না যাবোনা।
আরাফা রাগী দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকায়। আরিয়ান দুষ্টু হেসে চোখ টিপে বলে-
-” বাই দা ওয়ে ইউ আর লুকিং সো হট।
আরাফা চোখ বড় বড় করে নিজের দিকে তাকায়। কালো টিশার্ট আর প্লাজু পড়ে আছে সে। দ্রুত বিছানার পাশে থেকে ওড়না এনে পড়ে। রাগে গজগজ করতে করতে বলে –
-” অসভ্য লোক আপনি। কি চাই এখানে?
আরিয়ান শান্ত চোখে আরাফার দিকে তাকিয়ে বলে-
-” উত্তর চাই!
আরাফা ভ্রু কুঁচকে বলে-
-” মানে? কিসের উত্তর?
-” আমাকে আজকে ইগনোর করলে কেন? আমার সাথে একটা কথাও বললেনা কেন? অনিকের সাথে এত কিসের কথা? আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার কারনগুলো বলো। আমাকে আপনি আপনি করে বলছো কেন? কুইক, উত্তর দিলেই চলে যাব।
আরাফা হাসি দিয়ে বলে-
-” আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। আর না আপনার সাথে আমার এমন কোন ডিল হয়েছে যে, আমি আপনার সাথে প্রতিদিন কথা বলবো। অনিকের সাথে কথা বলতে পারবোনা।
আরিয়ান শান্ত গলায় বলে-
-” ভালোয় ভালোয় বলছি আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। এইসব উত্তর দিতে বাধ্য নই কথা শুনতে এই রাতে আসিনি।
-” পারবোনা উত্তর দিতে, আমি আপনার হাতের পুতুল নই যে, যেভাবে ইচ্ছা সেইভাবে নাচাবেন।
-” তুমি পুতুল হলে তো আমি সাজিয়ে রাখতাম। কিন্তু তুমি একটা তর’তাজা মানুষ তাই প্রশ্নের উত্তর চাইছি। নাইলে তোমাকে কি করবো আমি নিজেও জানিনা।
আরাফা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে-
-” আপনি আমার কি হন? যে আপনার সাথে কথা বলতেই হবে। আমার যাকে ভালো লাগবে তার সাথে কথা বলবো আর যাকে ভালো লাগবে তাকে ইগনোর করবো। আপনার কি?
আরিয়ান রেগে বলে-
-” যাকে ভালো লাগবে তার সাথে থেকো সমস্যা নেই। আমি না করিনি তবে অনিকের কাছে যাবেনা। ও ভালো ছেলে নয়। ও মেয়েদের ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ও আমার থেকে আমার প্রথম ভালোবাসা অরিন কে কেড়ে নিয়েছিলো। অরিন কে যখন ছুঁড়ে ফেলে দিল, মেয়েটা সুইসাইড করেছে শেষমেষ। আমি চাইনা ওর মতো তোমার পরিণতি হোক।
আরাফা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে-
-” মানলাম ও খারাপ ওর কাছে যাব না। আপনি কি তাহলে?
আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে-
-” আমি আবার কি? আমি কি করলাম?
-” আপনি বাজি ধরে যে আমাকে পটাতে চেয়েছেন তার বেলা? একটা মেয়ের আবেগ অনুভূতি নিয়ে খেলতে বিবেকে বাধে নি? আপনার কেন বিবেকে বাঁধবে? আপনি তো এমনই! কারো আবেগ অনুভূতির কোন দাম কি আপনার কাছে আছে? নেই। আপনি তো এমন করেই লাইফে ইনজয় করেন। আপনার কাছে তো ভালোবাসা একটা বাজি মাত্র। যেখানে আপনি কখনোই হারবেন না। আপনি জিতে গেছেন আপনি জিতে গেছেন। আমাকে ভেঙে দিয়ে আসলেই জিতে গেছেন। কিন্তু আমি গুঁড়িয়ে যাইনি। ভেঙে যাওয়া জায়গা ব্যান্ডেজ করে জোড়া লাগানো যায়। আমি আবার নতুন উদ্যমে উঠে দাড়াবো। কখনোই কারো কাছে নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করা আমার স্বভাবে নেই। চলে গেলে খুশি হবো।
আরিয়ান আরাফার দিকে পাথরের মতো তাকিয়ে আছে। কানে বাজছে একটা কথাই ” আপনি জিতে গেছেন, আমাকে ভেঙে দিয়ে আপনি আসলেই জিতে গেছেন”। আরাফা কি তাকে ভালোবাসে? এতো খুশি লাগছে কেন। আরিয়ান কিছু না বলে বেলকনি থেকে নেমে চলে যায়। খুব খুশি লাগছে তার। আরাফা কতক্ষন তাকিয়ে থাকে আরিয়ানের যাওয়ার দিকে। তারপর লাইট অফ করে সুয়ে পড়ে কোন এক নতুন ভোরের আশায়। আরিয়ান নিজের বাসায় গিয়ে গিটার নিয়ে বসে। অনেকক্ষন উল্টাপাল্টা সুর প্লে করে। তারপর কতক্ষন সুয়ে থাকে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে টের পায়নি।
।
সকালে ভার্সিটি তে গিয়ে আরিয়ান দেখে সুহাস, শিহাব আর রাইয়ান বসে আছে। আরিয়ান তাদের কাছে গিয়ে বলে-
-” দোস্ত তোরা কি ব্যাংক একাউন্ট চেক করেছিস?
সুহাস প্রশ্ন করে-
-” কেন? ব্যাংক একাউন্ট চেক করবো কেন? তুই কি অনুদান দেয়া শুরু করছোস নাকি?
আরিয়ান বিরক্ততে “চ” শব্দ করে বলে-
-” শালা আজীবন গাধাই রয়ে গেলি। তোদের বাজি জেতার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি!
শিহাব চেঁচিয়ে বলে-
-” কি কইলি মামাআআ!
আরিয়ান হেসে বলে-
-” হ্যা আমি বাজিটা হেরে গেলাম। শেষ বাজি টাই হেরেছি।
সুহাস আর শিহাব হা করে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। রাইয়ান এসে আরিয়ান কে বলে-
-” কি রে কাহিনী কি?
আরিয়ান হেসে বলে –
-” আরাফা আমাকে ভালোবাসে।
রাইয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে-
-” তাহলে তো তুই বাজিটা জিতে গেছিস। টাকা আমাদের কেন দিলি?
আরিয়ান আবারো হেসে বলে-
-” I love her also! কালকে ও আমাকে ইগনোর করার পর সারাটা দিন বাজে কেটেছে। রাতে ওর বাসায় গিয়ে ওর মুখে ভালোবাসার কথা শোনার পর আমার কি যে খুশি লাগছিল বলে বোঝাতে পারবোনা। আর টাকাটা ভেবে নে তোদের ট্রিট!
রাইয়ান হেসে বলে-
-” প্রেমে পড়লি তবে!
আরিয়ান হেসে মাথা নাড়ে। সুহাস আর শিহাব এসে আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে। আরিয়ান ওদের কে সরিয়ে বলে-
-” ছিহ ছিহ সর গায়ে পড়বিনা আমার। মেয়েদের মতো গায়ে পড়া স্বভাব কেন?
রাইয়ান পাশ থেকে বলে-
-” হেই আরিয়ান তোমার আরাফা কামিং।
আরিয়ান তাকিয়ে বলে-
-” ব্ল্যাক ডায়মন্ড!
আজকেও পুরো ব্ল্যাক ড্রেসে অনেক সুন্দর লাগছে আরাফা কে। আরিয়ান নিজেও পা থেকে মাথা পর্যন্ত ব্ল্যাক পড়েছে। আরিয়ান আরাফার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আরাফা আরিয়ান কে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে আরিয়ান আবারো সামনে যায়। আরাফা রেগে বলে-
-” কি হলো পথ ছাড়ুন!
-” ছাড়বো না।
অর্পিতা আরিয়ান আর আরাফা কে দেখে তাদের কাছে এসে বলে-
-” আরাফা কি হয়েছে তোর?
আরিয়ান ইনোসেন্ট ফেস করে বলে –
-” তোমার বান্ধবীর কোন সমস্যা নয়। আমার সমস্যা হয়েছে?
অর্পিতা উৎসুক দৃষ্টিতে বলে-
-” কি সমস্যা আরিয়ান?
আরিয়ান আরাফার দিকে তাকিয়ে বলে-
-” তোমার বান্ধবী আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না। আমি কি দেখতে খারাপ?
অর্পিতার মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো। একবার আরাফা আরেকবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল-
-” আরিয়ান সিরিয়াসলি তুমি আরাফা কে পছন্দ করো?
আরিয়ান হেসে বলে-
-” কোন সন্দেহ আছে?
আরাফা চেঁচিয়ে বলে-
-” এখানে কি কমেডি ড্রামা শুরু করেছো?
আরিয়ান ইনোসেন্ট ফেস করে বলে-
-” নাহ গো সব ড্রামা তুমিই করছো। আমার সাথে ঘুরতে গেলে কি এতো ড্রামা হতো।
-” যাবো না আপনার সাথে কোথাও।
-” ওকে তাহলে আমি আমার ওয়ে অনুসরণ করি।
আরিয়ান আরাফার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। আরাফা রেগে বলছে-
-” ছাড়ুন বলছি। প্লিজ এইসব আমার ভালো লাগেনা।
-” বেশি কথা বললে কোলে তুলে নেবো। এতদিন একটিং দেখেছো। এখন আসল কাহিনী দেখবা।
#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ (লেখিকা)