ভালোবাসা তারপর পর্ব-১৮+১৯

0
137

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১৮
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

-“ডা. আসবো?”

শব্দ দরজার দিকে তাকায়। ঊষা হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। শব্দ মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দিয়ে আবারো ফাইল দেখতে শুরু করে। ঊষা এসে দাড়ায়। শব্দ আবার তার মুখের দিকে তাকায়। একটা হালকা গোলাপি রঙের সালোয়ার-কামিজ পড়ে আছে। কি মিষ্টি দেখতে লাগছে মেয়েটাকে ঠিক যেনো ছোট্টো একটা পুতুল। শব্দ মাথা নাড়ায় কি সব আজেবাজে ভাবছে। শব্দ ঊষাকে জিজ্ঞেস করলো বসছো না কেন? উষা বোধহয় এই কথাটারই অপেক্ষা করছিলো। বলার সাথে সাথেই টুক করে বসে শব্দের দিকে গাঢ়দৃষ্টিতে তাকালো। ঊষার এভাবে তাকানো দেখে শব্দ থতমত খেয়ে চোখ সরিয়ে আবারো ফাইলে রাখে তারপর জিজ্ঞেস করে,

“হঠাৎ আমার কেবিনে কি? তাও এমন প্রেসেন্ট দেখার সময়?”

শব্দ চোখ ফাইলে রেখেই ঊষাকে প্রশ্নটা করলো। ঊষা এবার বিরক্ত বোধ করলো। এই মনের ডাক্তার কেমন জেরা করছে এর ডাক্তার না হয়ে উকিল হওয়া উচিত ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতে মুখ ভেঙচালো। ঊষা কথার উত্তর দিচ্ছে না দেখে এবার শব্দ চোখ তুলে চাইলো। ঊষা শব্দের দিকেই তাকিয়ে ছিলো শব্দ হঠাৎ এভাবে তাকাতেই বেচারি যায় যায় অবস্থা। তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া না করে তাকিয়েই রইলো। ঊষাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শব্দ বিব্রতবোধ করলো। তবুও আবারো প্রশ্ন করলো,

“কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমায়?”

ঊষা মাথা নাড়ায় তারপর জবাব দেয়,

“আমিই প্রেসেন্ট।”

শব্দ মনে মনে চমকায়। এই মেয়ে কি বলছে। কি হয়েছে এই মেয়ের। সুস্থই তো দেখা যাচ্ছে। তবুও কথা না বাড়িয়ে শব্দ বলে,

“সমস্যা কি?”

বলবো?

বলো?

ঊষা সময় নিয়ে লাজুক হাসে। ওকে এমন হাসতে দেখে শব্দ মনে মনে ভরকায়। পরিচয়ের এত মাসেও ঊষাকে আজকের মতো লাগেনি। আজকে কেমন সদ্য কিশোরীর ন্যায় লাগছে। ঊষা শব্দের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

“আপনি তো হার্টের ডক্টর তাই না?”

কি আজগুবি প্রশ্ন করছে এই মেয়ে।ধমকাতে নিয়েও ধমকায় না। মেয়েটা কেমন আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। শব্দ মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝালো। সে হার্টের ডক্টর-ই। এবার ঊষা সাহস পেলো এমন করে বললো,

“বুঝলেন ডক্টর, আমার হৃৎপিন্ডটা কেমন যেন সময় অসময়ে কেমন ধরাস ধরাস করে। মাঝে মাঝে মনে হয় মরেই যাবো। আর, আর একটা ছেলে।”

এবার ভয় পেলো একটু ঊষা। একটু শব্দের কাছাকাছি এসে বলে, “আগে বলেন ভাইয়াদের বলবেন না? ওরা জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে।” ঊষার মুখভঙ্গি দেখছিলো শব্দ একটা মেয়ে হঠাৎ করেই কেমন বাচ্চামি করছে। এসব ভেবেই মনে মনে হাসে। তারপর মুখে সিরিয়াস ভাব এনে বলে,

“আপনার সমস্যা গুলো বলুন। সমস্যা না জানলে সমধান করবো কি করে। আর উচ্ছ্বাস, উদয়ের কথা আসছে কেনো? এখন আপনি আমার প্রেসেন্ট তাই নির্দ্বিধায় বলুন। আপনার সমস্যা কি?”

ঊষা এবার মিনমিন করে বলে উঠলো,

“সমস্যাই তো আপনি ডক্টর শব্দ।”

তবে শব্দ তা শুনতে পায় না। তাই সে বলে একটু জোরে বলুন। তাই ঊষা একটু নড়েচড়ে বসে মুখটা সিরিয়াস করে বলে,

“আমার মনে হয় আমি আর বেশিদিন ঠিক থাকবো না ডক্টর। আমার মনে হয় আমি আমার মাঝেই নেই। একটা ছেলে। হ্যাঁ একটা ছেলে আমাকে পাগলে করে ফেলেছে ডক্টর। আমি উঠতে বসতে শুধু তাকেই দেখতে পাই আর তার কথা মনে পড়লেই মনটা কেমন ধরাস ধরাস করে উঠে। আমার মনে হয় কি আমি ওই ছেলেকে ভালোবাসি। কিন্তু সমস্যা হলো এটা ওই ছেলেকে বলতে আমার ভয় করছে। সে যদি ভাইয়াদের বলে দেয়।”

এটুকু বলেই ঊষা থামে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে শব্দের দিকে তাকায়। কিন্তু বিপরীত পাশে শব্দ প্রতিক্রিয়াহীন। ঊষা অবাক হয়। শব্দ কিছুক্ষণ ঊষাকে পরক্ষ করে একটা ফাইল নিয়ে কিছু একটা লিখে তারপর ওটা ঊষার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

“বুঝিছে, তবে আপনি যে রোগে আক্রান্ত তা হলো মনোরোগ। বা এগুলো টিনেজার দের বেশি হয়। পড়ালেখায় মন দিন সব ঠিক হয়ে যাবে। এগুলো মন থেকে বের করে ক্যারিয়ারে সময় দিন দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। আর প্রেসক্রিপশনে যে ঔষধ গুলো দিয়েছি সেগুলো সময় মতো খাবেন। এবার আপনি আসুন।”

ঊষা অবাক হয়। এভাবে লোকটা তার অনুভূতির কোনো দাম দিলো না? আচ্ছা এই ছয়মাস? এই ছয় মাসে কি একটুও ঊষাকে বুঝতে পারে নি? নাকি সে তার অনুভূতি বোঝাতে অক্ষম। ঊষার চোখ ফেটে কান্না আসে। তবুও নিজেকে সামলে বাহিরে চলে আসে। ঊষা কেবিন থেকে বের হতেই শব্দ হাফ ছাড়ে। মেয়েটা নিতান্ত্যই বাচ্চা একটা মেয়ে। তাও তাকে নিয়ে পাগলামি করছে। এ না বোঝার মতো কিছু নেই। তবে শব্দ ঊষাকে আশকারা দিতে চায় না। জীবন যেমন চলছে তেমন চলুক। এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে ভাবে তার মতো একটা এতিম, ছন্নছাড়া একটা মানুষের জন্যও কেউ এভাবে পাগলামি করতে পারে। শব্দ তাচ্ছিল্য হাসে।

—–

রোদসীর প্রেগ্ন্যাসির প্রায় সাত মাস হয়ে গেছে। শব্দ ড্রইংরুমে বসে এগুলো ভাবছিলো আর রোদসীকে দেখছিলো। আচাড় খাচ্ছে বসে বসে। মেয়েটা কেমন গুলুমুলু হয়ে গেছে আগের থেকে। পেটটাও আগের থেকে ভালোই ফুলেছে। এই খানের একটা বাবু আছে এইসব ভাবতে ভাবতেই শব্দ হাসি আসলে। সে নিজেই ডক্টর হয়েও এসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা তার মাথায় আসছে না জানি তাবাসসুমের মাথায় সারাদিন কি কি আশে। সে একটু সময় নিয়ে রোদসীকে ডাকে,

তাবাসসুম?

রোদসী মন দিয়ে আচাড় খাচ্ছিলো। শব্দের ডাকে নাক মুখ কুঁচকে শব্দের দিকে তাকায়। এতে শব্দের আরো হাসি পায় তবুও নিজেকে সামলে বলে,

জানিস তোকে একটা কার্টুনের মতো লাগছে। লাইক গুলুমুল হয়েছিস তো তাই দেখ গাল গুলো কেমন ফুলে গেছে। এইসব বলেই শব্দ হেসে উঠে। রোদসী রেগে কিছু বলতে যাবে তখনই শব্দ ফোনটা যান্ত্রিক আওয়াজে বেজে ওঠে। শব্দ হাত দেখিয়ে থামতে বলে রোদসীকে। উচ্ছ্বাস কল দিয়েছে। অসময়ে উচ্ছ্বাসের কল পেয়ে অবাক হয়। রোদসীকে কিছু না বলে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে।

রিসিভ করতেই উচ্ছ্বাসের গম্ভীর কন্ঠ শোনা যায়।

তোর সাথে কিছু কথা আছে। আমি তোর বাসায় আসতে চাচ্ছি। ঠিকানাটা পাঠিয়ে দে।

শব্দকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে মুখের ওপরেই উচ্ছ্বাস কল কেটে দেয়। শব্দের মুখ চিন্তিত দেখায়। হঠাৎ এভাবে উচ্ছ্বাস আসবে এদিকে আজকে তাবাসসুমকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে। আজকেই চেইক-আপের ডেইট। রোদসী শব্দের মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলো কেমন চিন্তিত দেখালো। তাই রোদসী জিজ্ঞেস করে,

কি হয়েছে ভাইয়া? চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো তোমায়? কে কল করেছিলো? কি বললো?

শব্দ রোদসীর মুখের দিকে তাকালো কেমন উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছে। তাই মাথা নাড়িয়ে বলে,

তেমন কিছু না। আমার একটা ফেন্ড কল দিয়েছিলো। ও বাসায় আসতে চাচ্ছে। ও কখনো আমার বাসায় আসেনি তাই না-ও করতে পারি না। এদিকে আজকে তোর চেইক-আপ।

রোদসী এবার চিন্তা মুক্ত হয়। ভেবেছিলো কি না কি হয়েছে। রোদসী হেসে বলে,

আরে সমস্যা নেই তোমার ফ্রেন্ডকে আসতে বলো। আর সাঈফ সাহেবকে কল করে বলো আসতে। সে আমার সাথে গেলেই হয়। সমস্যার সমাধান।

শব্দ এবার হাসলো। এই কথাটা তার মাথা থেকে বেরই হয়ে গিয়েছিলো। তাই শব্দ সাঈফকে কল দিয়ে বলে যাতে রোদসীকে নিয়ে সে একটু হসপিটাল থেকে চেইক আপ করিয়ে আনে। শব্দ আজকে একটু ব্যাস্ত। সাঈফও দ্বিমত পোষণ না করে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসে। রোদসীও রেডি হয়ে কেবলই নিচে নামে। সাঈফ রোদসীকে দেখে স্বচ্ছ হাসে। রোদসীও তা দেখে হাসে। লোকটা ওতোও খারাপ না। শুধু হঠাৎ করেই প্রেগ্ন্যাসির খবর পেয়ে পাগলামি করেছিলো। তার মনে হয় মনেই ছিলো না যে প্রেগ্ন্যাসির সময় ডিভোর্স হয় না। আর যদি রোদসী উচ্ছ্বাসের কাছে ডিভোর্স লেটার পাঠায় উচ্ছ্বাস রোদসীকে বা সাঈফকে কি করবে তা রোদসীর ভাবনার বাহিরে। রোদসী এসব ভাবতে ভাবতে সাঈফ আর শব্দের কাছে এসে দাঁড়ালো। তারা বিদায় নিয়ে বের হতে যাবে তখনই কলিং বেলটা বেজে ওঠে। রোদসী আর সাঈফ প্রশ্নবোধক চাহনী নিয়ে শব্দের দিকে তাকায় আর শব্দ দরজার দিকে এগিয়ে যায়।

চলবে….

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:১৯
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

তারা বিদায় নিয়ে বের হতে যাবে তখনই কলিং বেলটা বেজে ওঠে। রোদসী আর সাঈফ প্রশ্নবোধক চাহনী নিয়ে শব্দের দিকে তাকায় আর শব্দ দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে দেখে একজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। শব্দকে জানায় তাদের কাছে বাচ্চাদের ব্যবহৃত জিনিস অর্ডার করা হয়েছে। শব্দ এবার ড্রইং রুমে রোদসীর দিকে তাকালো। রোদসী হাসলো। শব্দ কিছু না বলে সব জিনিস পত্র বাসায় এনে রাখলো। তারপর সব প্রেমেন্ট বুঝিয়ে রোদসীকে বলে,

“তাহলে বাসায় বসে বসে এগুলো করিস সারাদিন?”

রোদসী বোকা হেসে মাথা নাড়লো। শব্দও হাসলো। তারপর বললো,

“আচ্ছা তারাতরি বের হ। তারাতরি চলে আসিস।”

রোদসী মাথা নাড়িয়ে হেসে বিদায় নিলো। সাঈফ রোদসীর পাশে পাশেই হাটতে লাগলো। ধীরেধীরে হেটে যেয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিলে রোদসী যেয়ে সিটে বসলো। সাঈফ অপর পাশ থেকে বসে। রোদসীর দিকে একবার তাকিয়ে সিট বেল্ট লাগাতে বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

——-

“আসতে এতো দেরি হলো যে?”

“আর বলিস না। ঊষা আসার জন্য জেদ করছিলো। সাথে রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো।”

ঊষা উচ্ছ্বাসের পিছন থেকে উঁকি দেয়। শব্দ মনে মনে অবাক হয়। এই মেয়ে তো অনেক দুষ্টু ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের বন্ধুর বাসায় এসে পড়েছে। তারওপরে যেই ছেলের জন্য পাগলামি করছে তার বাসায়ই। তবুও নিজের সামলে হাসিমুখে বাসায় আসতে বলে। ঊষা ঘরে এসেই আশেপাশে তাকিয়ে বলে,

“আপনার বোন কি এখানে? নাকি শ্বশুরবাড়ি?”

এটুকু বলেই ঊষা উৎসাহ মুখে শব্দের দিকে তাকালো। এদিকে উচ্ছ্বাস ঊষার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। শব্দ হেসে বলে,

“ও বাসায় নেই। আজকে ওর চেইক আপের ডেট। হসপিটালে গেছে। আসতে বোঊহয় দেরি হবে।”

“ওহ। আচ্ছা।”

ঊষার মন খারাপ হয়ে এলো। শব্দের বোন বাসায় থাকলে আজকে তাকে বলে যেত। শব্দকে ঊষা কত ভালোবাসে। কত প্লান করে এসেছিলো। সব প্লান ভেস্তে গেলো। এসব ভেবেই ঊষার মুখে আঁধার নামলো। শব্দ হাফ ছাড়লো যূি আজকে রোদসী বাসায় থাকতো না জানি ঊষা কোন কান্ড ঘটাতো।

——–

“মি. সাঈফ। ওয়াইফের দিকে খেয়াল রাখেন না নাকি?”

সাঈফ বোকার মতো ডক্টরের দিকে তাকায়। আর রোদসীও থতমত খায়। রোদসী কওছু বলতে নিবে তার আগেই ডক্টর আবারো বলতে শুরু করে,

“খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো হচ্ছে না। আর হাঁটাহাটি করছে না। সারাদিন বসে সুয়ে থাকলে তো হবে না। একটু হাটা চলাও করতে হবে। নাহলে বাবুরা নড়চড়া কম করে। আপনিও তো ডক্টর। ওয়াইফের খেয়াল না রেখে শুধু হসপিটাল আর প্রেসেন্ট নিয়ে থাকলে হবে না ঘরের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।”

এবার সাঈফ বলতে শুরু করে,

“সরি টু সে ডক্টর তাবাসসুম আমার ওয়াইফ না। আর তাবাসসুম ড.মুনীব শব্দের বোন। এগুলো তাবাসসুম আর তার ভাইকে বলা উচিত।”

কথা শেষকরে সাঈফ লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসলো। এবার ডক্টরও নিজের ভুল বুঝতে পেরে হেসে বললো,

“আমি আসলে দুঃখিত। প্রেসেন্টের স্বামীর নাম আমি খেয়াল করি নি। যাইহোক হাটা চলা করতে হবে যাতে বাচ্চার জন্য সুবিধা হয়। আর খাওয়া দাওয়া করতে হবে। গর্ভবতী অবস্থায় ঠিক মতো না খেলে বাচ্চার ওজন ঠিক থাকে না আর পুষ্টিহীনতায় ভোগে। আশা করি এগুলো একটু খেয়াল রাখবে।”

“আচ্ছা ডক্টর আমি তাবাসসুমের খেয়াল কারতে বলবো ড.শব্দকে আমি আমি তো আছিই। আসি।”

ওরা ডক্টরের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে সাঈফ রোদসীকে জিজ্ঞেস করে কোথাও যাবে কি। কারণ রোদসী ওতো বের হয় না। রোদসী জানায় আশার সময় একটা পার্ক দেখেছে ওখানে যেয়ে বসবে। তাই সাঈফও দ্বিমত না করে তাকে নিয়ে পার্কে যেয়ে বসে।

যেহেতু তাদের হাসপিটাল থেকে বের হতে বিকেল হয়ে গেছে তাই পার্কে ভালোই মানুষ এসেছে। রোদসী দূরে কিছু বাচ্চাদের দেখছিলো কি সুন্দর খেলছে। আর রোদসী তা মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করছে। সাঈফ দূরের বাচ্চাদের থেকে চোখ সরিয়ে রোদসীর দিকে তাকালো। যতবারই রোদসীকে দেখে সাঈফ মুগ্ধ হয়। তবে এখন তাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে। আবার মাঝে মাঝে তাকে পাওয়ার আশা উঁকি দেয়। সেটা সাঈফ আটকাতে পারে না। মনে হয় আবারো বেহায়া হয়ে শব্দের কাছে রোদসীকে চায় আবার নিজের ভাবনায় হাসে সাঈফ। রোদসী যতই বলুক না কেনো তার স্বামী এমন তেমন। তবুও রোদসী তার স্বামীকে প্রচন্ড ভালোবাসে। সেটা সবাই বোঝে তবে কেউ প্রকাশ করে না। সাঈফ কতক্ষণ তাকিয়ে দেখে রোদসীকে তারপর জিজ্ঞেস করে,

“তুমি বাচ্চা অনেক ভালোবাসো তাই না?”

রোদসী উচ্ছ্বাসিত গলার উত্তর দেয়,
“অনেককক৷”

সাঈফ হাসে। তারপর বলে,

আর বাচ্চার বাবাকে?

রোদসীর হাসি থেমে যায়। দূর থেকে চোখ সরিয়ে সাঈফের দিকে তাকায়। সাঈফ তার প্রশ্নের জবাবের জন্য অপেক্ষা করে রোদসীর মুখের দিকে স্থীরভাবে তাকিয়ে আছে। রোদসী সাঈফের মুখ থেকে চোখ সারিয়ে আকাশের দিকে চোখ রাখে। তারপর বলতে শুরু করে,

“জানেন সাঈফ সাহেব! মেয়ে মানুষ সুন্দর হওয়া থেকে ভাগ্য ভালো হওয়া অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বলি না চকচক করলেই সোন হয় না? ঠিক তাই। মাহাদীর সাথে আমার বিয়েটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়। প্রতিটা মেয়েরই বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন থাকে। এভাবে বউ সাজবে
বিয়ের দিন এটা ওটা করবে। আর ভাবে বিয়ের পর সুন্দর একটা পরিবার পাবে। কিন্তু আমি? হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেলো। তখনও বুঝে উঠতে পারছিলাম না বিয়েটা হওয়ার কারণ কি। তারপর বুঝলাম মাহাদী আমাকে আগে থেকেই ভালোবাসতো। মেনে নিলাম। মাহাদী আমাকে ভালোবাসে সেটা ওর প্রতিটা কাজেই বুঝতাম তবে একটা জিনিস কি যানেক। ভালোবাসা ভালো তবে অতিরিক্ত ভালোবাসা কখনোই ভালো না। ভালোবাসা ঠিক লেবুর মতো বেশি চিপরালে তিতে হয়ে যায়। আমি ওর ভালোবাসাকে যেমন ভালোবাসাতাম তেমন রাগ গুলোকেও মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতাম। তবে সন্দেহ? ওটা কি করবো বলেন? অনেক চেষ্টা করলাম। কিন্তু দিন যত যায় ওর মধ্যে কেমন পরিবর্তন ঘটেতে শুরু করে। বিনা কারণে সন্দেহ করতো। মনে ভয় ঢুকে যায়। তাই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি থেকে পালাই। এই তো পালিয়ে বেড়াচ্ছি। জানিনা কবে ধরা পড়ে যাবো বা কতদিনই এভাবে পালায়ে বাঁচতে পারবো। কিন্তু ও আমাকে ছাড়বে না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত না। সেটা আমি জানি তাই আমি আমার সাথে কারো জীবন জড়াতে চাই। ভাইয়া খুব ভালো মানুষ সাথে আপনিও। আমি চাই আমার জন্য অপেক্ষা না করে আপনি আপনার জীবন শুরু করুন। আর আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকে নয়। যে আপনাকে ভালোবাসে আপনার মতো করে। তাকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করুন।”

এতগুলো কথা বলে রোদসী থামে। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়। এতক্ষণ কথাবলায় হাঁপিয়ে গেছে রোদসী। সাঈফ এতক্ষণ রোদসীর দিকে তাকিয়ে মন দিয়ে কথা শুনছিলো। সাঈফ রোদসীকে হাঁপাতে দেখে পানির ওয়ার বোতল এগিয়ে দেয়। রোদসী তা নিয়ে খায়। তারপর হেসে দেয়। সাঈফ শুধু রোদসী কর্ম কান্ড দেখছে। তারপর মুখ খোলে,

“তোমার কথা মাথায় রাখবো তাবাসসুম। হবে কিনা জানি না তবে চেষ্টা করবো।”

“আচ্ছা এবার বাড়ির দিকে রওনা দেই?”

“হ্যাঁ। চলো।”

——

উচ্ছ্বাসদের বিদায় জানাতেই আবারো বাসার কলিংবেল বেজে ওঠে। শব্দ যেয়ে সদর দরজা খুলতেই রোদসী আর সাঈফকে দেখে। শব্দ হেসে ভিতটে আসতে বলে। সাঈফ রোদসীকে ধরে ধরে এনে সোফায় বসাতেই। রোদসী শরীর ছেড়ে দিয়ে হেলান দিয়ে বসে থাকে। তা দেখে শব্দ হেসে সাঈফকে জিজ্ঞেস করে ডক্টর কি বলেছে। সাঈফ ডক্টরের সব কথা কথা বলাতে। শব্দ এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,

“এটা কিন্তু ঠিক নয় তাবাসসুম। খাচ্ছো না নাকি ঠিক মতো? এমন বাচ্চামি করলে চলে এখন আর তুমি একা নও। সাথে আরো একজন আছে। এখন থেকে ঠিক মতো খাবে। আর সকাল বিকেল মিলি খালাকে নিয়ে বাহিরে একটু হেটে আসবে।”

রোদসী ভদ্রমেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সায় জানায়। তা দেখে শব্দ আর সাঈফ স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তারপর টুকিটাকি কথা বার্তা শেষ করে রাতের ডিনার সবাই এক সাথে করে। কিছুসময় সাঈফ শব্দের সাথে আর রোদসীর সাথে কথা বলে বিদায় নেয়।

—–

বৃষ্টির পরীক্ষা তো শেষ আমার মনে হয় আবিদ আর বৃষ্টির অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে দিলে ভালো হতো। এদিকে বিপাশা আপার অবস্থাও ওতো ভালো যাচ্ছে না। আর রাশেদ ভাইও কিছু বলছে না। আবিদ বেচারা জামাই মানুষ সে কি আর এমন বিয়ে করে শশুরবাড়ি আসতে পারে?

মিসেস মালিহা বেগমের কথা শুনে রাবেয়া বেগম কথাটা মালিহা বেগমের দিকে তাকায়ে বললেন,

“কথাটা মনে করে ভালোই করেছো। রাতে খাবার সময় কথা উঠাবো। এখন তুমি যেয়ে খাবারের ব্যবস্থা করো। আর বিপাশার কি অবস্থা?”

মালিহা বেগম মুখ কালো করে জানায়, “হসপিটাল থেকে আনার পর থেকে তো একই অবস্থা। কারো সাথে কথা বলছে না। রুম থেকে বের হচ্ছে না। নিজের রুমেই থাকে।”

“বুঝলে পাপ বাপকেও ছাড়ে না।”

“মানে?”

“ও কিছু না। তুমি যাও ছোটো বউ।”

মিসেস মালিহা বেগম আর কিছু না বলে রাবেয়া বেগমের রুম থেকে চলে যায়। আর রাবেয়া বেগম ভাবে, “বিপাশা তাদের সংসারটা কিভাবে তচনচ করে এই সংসারেই ঘটি গেড়েছিলো। কি ক্ষতি করে ছিলো ঊর্মিলা? নিজের প্রাণের বান্ধুবীর সাথে এতো বড় ধোঁকা দিলো? আর এখন? কি নির্মম! আসলেই পাপ বাপ কেও ছাড়ে না।”

এসব ভেবেই রাবেয়া বেগাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বুঝে। কিছুক্ষণ পর ঊষা এসে তাকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে যায়। খেতে বসে রাবেয়া বেগম বৃষ্টি আর আবিদের কথাটা উঠালে রাশেদ সাহেব জানায় কালকেই আবিদের আসতে বলে এ ব্যাবারে কথা বলবে। এতে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। সাথে এও বলে রুহির বাবা মাকে আসতে যাতে উদয় আর রুহির আকদটাও করে ফেলতে পারে কারণ রোদসীর জন্য তো আর সব থেমে থাকতে পারে না। এতে কেউ কোনো দ্বিমত করে না।

—–

পরের দিন সন্ধ্যায় আবিদ সহ আবিদের বাবা মা হাজির হয়। সাথে রুহিদের বাসা থেকে শুধু রুহির বাবা আর রেদওয়ানই আসে এবং সব কথা আদান প্রদান শেষ করে ঠিক হয় যেহেতু এখন মাসের শেষ চলছে। আগমী মাসের ১৫ তারিখে আবিদ ও বৃষ্টির অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে দেয়া হবে সাথে রুহি আর উদয়ের আকদও হয়ে যাবে। তাতে রুহির বাবা দ্বিমত পোষন করলেও বাকিদের কথায় আর কিছু না বলে মেনে নয়। আসলেই রোদসীর জন্য আর কত অপেক্ষা করবে? প্রায় বছর তো হয়েই এলো।

চলবে…….

ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনীয়।