ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0
1397

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৪২)
‘ এখানে কয়েক লাখ টাকা আছে। এটা নাও আর এ শহর ছাড়ো। টাকাটা আমি দিচ্ছি না। ভাইয়া দিচ্ছে। ‘
‘ বিশ্বাস করিনা। তামিম কখনোই আমাকে টাকার উপর মাপে না। ‘
‘ কিন্তু তুমি মাপো। এতোকাল যাবৎ তোমার চাওয়া অনুযায়ী সব হয়েছে আজ হচ্ছেনা। এবার থেকে হবেও না। তোমাকে হেল্প না করতে পারার জন্য আমি সরি। ‘
‘ তানভীর আমিতো তো তোমার খারাপ চায়নি। মানছি একটা সময় খারাপ কিছু করেছি বাট তোমাকে হেল্প করার ছুতো পেলে বসে থাকিনি। রাজনৈতিক স্বার্থে তুমি যেখানে যেখানে শো করতে বলেছো সেখানেই গিয়েছি। ঐ টাকা না হলে কি আমার চলতো না? তোমার বউটাও কত কষ্ট পাচ্ছিলো ‘
‘ সেজন্য আমার বউটার মাথাটা বিগড়ে দিলে। ‘
মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তেড়ে যায় ফ্লোরার সামনে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করে। বাহিরের দিকে তাকিয়ে ফুস করে শ্বাস ছাড়ে। শান্ত গলায় বলে,
‘ তুমি কি করতে চাইছিলে তা তুমিই জানো। ধরে নিলাম তুমি আমার বউকে হেল্প করতে চেয়েছিলে কিন্তু সেটা নিজের স্বার্থে। আমার বউ যখন আমার জন্য পাগল তখন তুমি ওর মাথাটাই বিগড়ে দিলে যাতে ও তোমাকে ভালো মনে করে আর খান বাড়িতে প্রবেশের দ্বার সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। জানোই আমি আমার বউয়ের প্রতি কতটা দুর্বল। এই সুযোগে গুটিও সুন্দর ভাবে চেলেছো। ভালো সাজতে সাজতে যখন মনের মধ্যে হিংস্রতা উঁকি দিতো তখন ঠিকই কথায় কথায় কষ্ট দিতে। কষ্ট পেয়েও আমার বউটা চুপ থাকতো আমার জন্য। আমার অবুঝ বউটাও বুঝে গিয়েছিলো আমাকে রাগালে আমি নিশ্চয়ই কন্ট্রোল হারাবো। ‘
‘ সোজা আঙুলে তো তোমাদের ঘি ওঠে না। ‘
‘ তাই তুমি ঐ ছেলেটার দিকে আমার বউকে এগিয়ে দিবে? তুমি হয়তো ভাবছো তুমি আমার উপকার করেছো কিন্তু তুমি আমার অপকার টাই বেশি করেছো।
লাব্বুর কষ্ট লাঘব করতে গিয়ে আরো কষ্ট দিয়ে ফেলেছো। তুমি জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো ও কতোটা কষ্টে আছে। যে আমি আমার বউকে হারানোর ভয়ে থাকি সর্বদা সেই অনিশ্চয়তা আমার বউয়ের ছোট্ট বুকে ভয়ের সৃষ্টি করেছে। আমি ওকে যতই বলি ভালোবাসি ওর চোখে অবিশ্বাস দেখতে পাই। ওর ব্রেইন এটা বিশ্বাস করে নিয়েছে আমি তাকে চাইনা কিন্তু ও আমাকে নিজের জোরে ধরে রেখেছে এবং সারাজীবন রাখবে। কতটা হেল্পলেস লাগে জানো ? ওর কষ্ট যেনো না বাড়ে সেজন্য দূরে দূরে থাকতাম। ওর মনে সুপ্ত অনুভূতি কাজ করতো কিন্তু এতোটাও উগ্ৰ ভাবে না যতটা তোমার সান্নিধ্য গিয়ে হয়েছে। কতটা কষ্ট করে ধৈর্য্য ধরে ওকে এচিভ করতে পেরেছি সেটা একমাত্র আমি জানি। আমাদের জীবনটা সুন্দর ভাবে শুরু হতে পারতো। দুটো বছর সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে আমরা জীবনে শুরু করতে পারতাম। আমরা এক হবার পর কখনোই আলাদা হতাম না। তোমার জন্য সবটা নষ্ট হয়ে গেলো। বিশৃঙ্খল জীবন আমার পছন্দ না। তোমার জন্য আমি বিশৃঙ্খলা পূর্ণ জীবন যাপন করছি। তুমি থাকলে আমার বউ আবার কষ্ট পেতে পারে। সো চলে যাও। ‘
‘ আমি সব ছেড়ে ছুড়েই এসেছি তানভীর। সংসার করবার জন্য। একটু দয়া করো। তোমাদের ডিস্টার্ব করবোনা। কোন ব্যপারে আমাকে পাবেও না। প্রয়োজনে দাসী হয়ে থাকবো। ‘
‘ ছাড়া গরু গোয়াল ঘরে বসে থাকে না। ‘
‘ তানভীর কি বলে? আমার তানভীরের সাথে কথা আছে।’
‘ ব্লক লিস্টে আছো। আর শোনো। আমার বউয়ের আশে পাশে আসবেনা। আমিই আসতে দিবো না। এতো দিন আমি চেয়েছি জন্য ই তুমি আসতে পেরেছিলে। ভেবেছিলাম আমার প্রতি তুমি সামান্য তম গ্ৰেটফুল। কিন্তু না। তুমি তোমার রং দেখিয়ে দিলে। এটা আর সম্ভব না। ‘
‘ টাকা গুলো নিয়ে যাও তানভীর। আমি চাইনা। ‘
‘ শুনলাম মিডিয়ার কাজ ছেড়ে দিয়েছো। রেখে দাও লাগবে। এরকম দানের টাকা খান বাড়ি থেকে প্রতিবছরই যায়। ‘

তানভীর রাত বাড়ালো না।‌ দশটার দিকেই এসে রুমে ঢুকলো। লাবিবা হুট করেই তানভীর কে দেখে চমকে গেলো। আসার কথা তো ছিলো না। এই ছেলেকে তো বলে বলেও আনা যায়না। যার যা স্বভাব তাই। এসেই ওয়াশরুমে ঢুকলো। বেরোলো উদোম গায়ে। এখন নিশ্চয় বিছানায় গা এলিয়ে দিবে। লাবিবা একটু লজ্জা পেলো। প্রচন্ড সাহসী মেয়েটা শার্টলেস তানভীর কে দেখেলেই লজ্জা পায়। অনান্য বিষয়ে লজ্জাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে পারলেও তানভীরের কাছে এলে অদ্ভুত ভাবে তাকে লজ্জা ঘিরে ধরে। কিছুতেই ইগনোর করতে পারে না। লজ্জারা যেনো ঘুমিয়ে থাকে। তানভীরের আগমনে জেগে উঠে তাদের যাপন শুরু করে ‌। লাবিবা মনে মনে দোয়া করে,’ আল্লাহ আমার লজ্জা কমিয়ে দাও সারাজীবন ধরে নয়তো ভালোবাসার দাবী উনার সামনে পেশ করতে পারবোনা।’
তানভীর রুমের বাইরে চলে গেলো। ফিরে এলো মিনিট দুয়েকের মধ্যেই। রুমজোড়াও চোখ বুলিয়ে নিলো। লাবিবা বুঝলো তাকেই খুঁজছে। মুখ টিপে হাসলো। বেলকনির পার্দার আড়াল ছেড়ে গিয়ে গ্ৰিল ধরে দাঁড়ালো। আকাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তারকারাজির দেখাও নেই। ঠান্ডা হাওয়া বইছে। মনে হয় রাতে বৃষ্টি হবে। এরকম ওয়েদার বেশ ভালো লাগে। ঠান্ডা বাতাসে লাবিবার গলার উড়না ওড়ছে । লাবিবা ধরলো না। উড়তে থাক। আজ তার মন ও উড়ু উড়ু করছে। কেমন যেনো সুখ সুখ অনুভব করছে। সেই সুখের নাম তানভীর খান। তার অগ্ৰাহ্য যেমন বিশ্বাদের সৃষ্টি করে তেমনি তার একটু এট্যানশন সুখের সৃষ্টি করে। উড়নাটা এই তো উড়ে যাবে যাবে। কেমন ঢেউ খেলছে। এই ঢেউ খেলা দেখতে লাবিবার সুখ লাগছে। ওমনি ওড়নাটা মুষ্টিবদ্ধ হলো। লাবিবা পেছনে তানভীরের উপস্থিতি বুঝে ঘুরে দাঁড়ালো। ওড়না শোভা পাচ্ছে তানভীরের গলায়। বলিষ্ঠ দেহে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে কোমড়ে হাত রেখে অভিনব কায়দায় দাঁড়িয়ে আছে। লাবিবা যেনো মৃদু কেঁপে উঠলো। এতো কেনো নজর বেহায়া হয় এই মানুষটা সামনে থাকলে? তানভীরের হাত নিজে কোমড় থেকে নেমে লাবিবার কোমড় পেঁচিয়ে কাছে টেনে নিলো। ‘ কখন থেকে খুঁজছি?’ বলতে বলতেই নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। লাবিবা হাত বাড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো। গালে টুপ করে চুমু দিয়ে জানালো,
‘ আমি আশা করিনি আপনি আসবেন। ‘
‘ আমিও আশা করিনি আমার বউটা আমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলবে। ‘
‘ হুম। ‘
‘ খান সাহেব, এখানে থাকলে কি হয়?’
‘ শ্বশুড়ের বাসায় কেনো থাকবো?’
‘ শ্বশ্বুড়ের বাসা কি আপনার বাসা না? ‘
‘ না। তবে শহরে যে বাসাটার কাজ শুরু হয়েছে সেটা শ্বশুড়ের বাসা হলেও আমার বাসা। ‘
‘ কিভাবে?’

তানভীর লাবিবাকে ছেড়ে দেয়। বেলকনি থেকে রুমে যেতে যেতে বলে,
‘ তোমাকে বলা যাবে না। তুমি সিক্রেট ফাঁস করে দিবে।’
লাবিবাও পিছু পিছু আসে।
‘ বলুন না? আমি বলবো না। ‘
‘ উঁহু। বাপ সোহাগী মেয়েকে একদমি বলা যাবেনা। ‘
‘ বলবো নাতো। শুনার পর থেকে স্বামী সোহাগী হয়ে যাবো। প্রমিজ । ‘
‘ ঐ বাড়িটার টাকা আমি ইনভেস্ট‌ করছি। ‘
‘ আব্বু রাজি হবেনা। ‘
‘ জানবেনা। ‘
‘ কিন্তু কেনো দিচ্ছেন?’
‘ আমার শ্বশুড় আমাকে অনেক বড় একটা গিফট দিয়েছে। আমার মনে হলো তাকেও কিছু গিফট করা উচিত। যদিও এই গিফট তোমার আব্বুর দেওয়া গিফটের কাছে কিছুই না। দুটোকে এক পাল্লায় মাপা যায়না। ‘
‘ সেই গিফট টা কি আমি?’
‘ উহু। আমার বউ। যাকে আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি জন্য আজ আমি পেয়েছি। যারা আমার বউকে এতো যত্ন করে ভালোবাসা দিয়ে আমার জন্য তৈরী করেছে। বিশ্বাস রেখে আমার হাতে তাদের আদরের টুকরো কে তুলে দিয়েছে। আমি তাদের এই ঋণ হয়তো কোনদিন শোধ করতে পারবো না। কিন্তু তাঁদের এবং তাদের মেয়ের যেনো কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকটা দেখতে পারবো। ‘
তানভীরের কথা শুনে লাবিবার চোখে জল চলে এলো। ইসমাইলের সাথে তানভীরের কথা কাটাকাটি হয় লাবিবা জানে কিন্তু তানভীর এতো গভীর ভাবে চিন্তা করে দায়িত্ব তুলে নিতে পারে এটা সম্পূর্ণ অজানা। লাবিবার মনে পড়লো তার বাবা এতো কেনো বাছবিচার করে তার মেয়ের জন্য পাত্র নির্বাচনে! লাবিবার অগোচরে যে প্রচুর সমন্ধ আসতো এটা লাবিবা জানে। বাবা হয়তো জামাই চায়নি চেয়েছিলো ছেলে যে তার মেয়ের দায়িত্বের পাশাপাশি তাদের ছেলের অভাব টাও পূরণ করবে।

তানভীর মুচকি হেসে লাবিবার চোখের জল আঙুলে মুছে নিলো। লাবিবা কাতর কন্ঠে বললো,
‘ আপনি প্রতিদিন আসবেন খান সাহেব। না পারলে প্রায় ই আসবেন। আমি প্রতিদিন আপনাকে দেখে ঘুমোতে চাই। ঘুম ভাঙার পরেও আপনাকে দেখতে চাই। আমার দিন ফুরোবে মাস ফুরোবে বছর ফুরোবে তবুও আপনাকে দেখার রেশ যেনো না ফুরোয়। ‘
‘ আমাকে এতো ভালোবাসার কারণ কি লাবিবা? এমন তো নয় তুমি আমাকে আগে থেকেই ভালোবাসো । আমার সৌন্দর্য বিত্তের দিকে তুমি মুগ্ধ হও এটা আমি বেশ ভালোই জানি। নাকি শুধু স্বামী বলেই এতো কিছু?আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো তাহলে তাঁকেই ভালোবাসাতে।’
‘ বললাম না আল্লাহর জন্য আপনাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আপনি আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ পুরুষ। আমার স্বামী। আমার অর্ধাংশ। তিন কবুল উচ্চারণ করে নিজেকে আপনার নামে করে দিয়েছি। আল্লাহর জন্য আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু টান টা আগে থেকেই ছিলো। আপনার সাথে আলাপ হবার পর থেকেই ভীষন আপন মনে হতো। মনে হতো মনে হতো ভরসার ছায়া আমার আব্বুর মতো। সেজন্য ই বার বার আপনার কাছে ছুটে গিয়েছি। আপনার অবহেলা আমাকে বড্ড পোড়ায়। কষ্ট দেয়। আমি কেমন যেনো নিস্তেজ হয়ে যাই। শক্তি পাইনা। ‘
‘ তুমি প্রচন্ড সাহসী লাবিবা। মেয়ে হয়েও মনে যাই থাকুক কোনো দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই বলে দিতে পারো। অকপটে এভাবে সত্য বলতে অনেকেই পারেনা। ভালোবাসার মতো সেন্সিটিভ বিষয়ে তো আরো পারেনা। আমিও পারিনা বিশ্বাস করো। ‘
‘ কোথায় লেখা আছে সবসময় ছেলেরা ভালোবাসি ভালোবাসি গলা শুকাবে আর মেয়েরা চুপ করে থাকবে। আমি মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারি এটাই কি আমার দোষ?
‘ না না এটা মোটেই দোষের কিছু নয়। এটা তোমার সাহসের পরিচয়। কিন্তু এই সাহসটা একটু পরেই উধাও হয়ে যাবে। গলা উঁচিয়ে ভালোবাসা জাহির করা মেয়েটা লজ্জায় বুকে মুখ গুঁজে পড়ে থাকবে। তখন এই মেয়েটার লজ্জাবর্ণ মুখটাই আমার তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়। অদ্ভুত সৌন্দর্য ছড়ায়। যে সৌন্দর্য দেখার জন্য আমি তার কাছে ছুটে আসি। দেখতে চাও তুমি?’
লবিবা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কি সুন্দর করে প্রস্তাব পেশ করেন উনি। যেনো যেনো তেনো ব্যপার। কিন্তু লাবিবার কাছে মোটেই যেনো তেনো ব্যপার নয়। বড্ড লজ্জাজনক ব্যাপার। এখন ধীরে ধীরে লজ্জা বাড়বে। পৃথিবীর সমস্ত লজ্জা তাকে চেপে ধরবে। স্বামীর বুকে লজ্জায় লেপ্টে পড়ে থাকবে সে। তানভীর লাবিবার লজ্জাটা ফিল করে হো হো করে হেঁসে উঠে। কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় একদম বুকের সাথে চেপে ধরে। লাবিবাও তানভীরের পিঠ দুহাতে জড়িয়ে ধরে। লাবিবার কপালে চুমু এঁকে তানভীর প্রশ্ন করে,
‘ আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে?’
‘ পারবো। ‘
‘ সত্যি? ‘
‘ সত্যি পারবো। তবে অনেক কষ্ট হবে। আমি যদি বলি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না তাহলে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ছাড়াই আমাকে বাঁচাবে। দুনিয়াতে সবাই সবার নির্দিষ্ট আয়ু নিয়ে এসেছে। কেউ কারো জন্য মরে না। আমি আপনাকে ছাড়তে চাইনা।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। ‘
‘ যাবোনা। ‘
‘ ডিনার করেছেন আপনি?’
‘ করবো এখন সারা রাত ধরে। ‘

চলবে ___

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৪৩)
ইসমাইলের বাসায় ফিরোজ খানের আগমন। ড্রয়িংরুমে দুজনে আলোচনায় মশগুল। সাবিনা বেয়াই কে আপ্যায়নে রিতীমত দৌড়াচ্ছে। ও
জা কে ডেকে এনে সমস্ত নাস্তা আয়োজন শেষ করেই ড্রইংরুমে বিশেষ আলোচনায় যোগ দান করে। লাবিবাও সিরিয়াস মুডে আলোচনায় বসে।
‘ অনেক খুঁজে তামিমের জন্য একটা মেয়ে পেয়েছি। আমার বেশ ভালো লেগেছে দেখে। বেশি দূরে না। মেয়ের বয়স কম কিন্তু রুপবতী। সংসারী হবে দেখেই বোঝা যায়। আমি দেখেছি। এখন আপনারা সবাই গিয়ে দেখে বুঝে আসুন।’
‘ আপনি যেহেতু পছন্দ করেছেন সেক্ষেত্রে আমাদের পছন্দ হবেই।’
‘ না তারপরেও একটা ব্যপার আছেনা? আপনাদের ও একটা বোঝার ব্যপার আছে। বাড়ির বড় বউ আনছি সবার পছন্দের হওয়া চাই। ‘
‘ তামিম বাবা কি বলে?’
‘ ও তো এখনো পজিটিভ ই আছে। বোঝদার ছেলে আমার যদি অবুঝ পনা করে তাহলে আপনার আমার কারো কিছু করার নেই। ‘
‘ সেটাও ঠিক। ‘
‘ মেয়ে যদি পছন্দ করে তামিম তাহলে আংটি পড়িয়ে আসবেন। যেনো কোনো দুমনার সুযোগ না পায়। ‘
‘ আপনার তাহলে চিটাগাং যেতেই হচ্ছে?’
‘ হুম বেয়াই ‌। আপনি আছেন তো। নিশ্চিন্ত থাকবো। ‘
ফিরোজ খান সাবিনাকে বলে, ‘ তো শুক্রবার বাদ জুম্মা সবাই গিয়ে মেয়ে দেখে আসেন। আমি তাহলে উঠি। ‘
‘ উঠি কি ভাইজান! না খেয়ে যেতে দিচ্ছি না। ‘
লাবিবা জিজ্ঞেস করলো, ‘ পাপা আমিও কি যাবো?’
‘ তুমি না গেলে কি চলবে মা? হা হা হা। ‘

লাবিবার খুশি দেখে কে ! কি পড়ে যাবে কিভাবে সাজবে ভেবে ভেবেই শেষ। আলমারি খুলে জামাকাপড়ে বিছানা একাকার করে ফেলেছে। মায়ের শাড়ি গুলোও গিয়ে ঘাটিয়ে আসছে। পছন্দ ও করেছে কয়েকটা । কিন্তু তার ব্লাউজ নেই। ঝটপট তানভীর কে কল করে।
‘ আসসালামুয়ালাইকুম। ‘
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম। ‘
‘ শুনুন না। ‘
‘ বলো। ‘
‘ আমি ও যাচ্ছি মেয়ে দেখতে। ‘
‘ হুম। ‘
‘ আমি তো ছোট বউ। কি পরে যাবো?’
‘ যা পরো। ‘
‘ ইসস বুঝতেছেন না ব্যপারটা। আমিতো ছোট বউ তাইনা? একটা স্পেশাল ব্যপার আছে না?’
‘ মেয়ে দেখাতে আবার কিসের স্পেশাল ব্যপার?’
‘ এটাতো শুধু মেয়ে দেখা না। ঘরোয়া এংগেঈজ মেন্ট ও। খান বাড়ির ছোট বউ যদি শাড়ি গহনা মুড়ে না যায় ব্যাপারটা কেমন বিচ্ছিরি হয়না?’
‘ তুমি কি করে শিউর যে এংগেইজ হবে?’
‘ আপনি বুঝবেন না। ‘
‘ স্যার কে? আমি নাকি তুমি?’
‘ স্যাররা পড়াশোনা ছাড়া কিছু বুঝে না। এটা পড়াশোনার বাইরের টপিক। আমি বুঝবো।আপনি বুঝবেন না। ‘
‘ শাড়ি? তুমি? মাঝ রাস্তায় মানুষকে আমার বউয়ের খোলা শাড়ি দেখানোর কোনো ইচ্ছে নেই। গাউন অর্ডার করো। আমি পেমেন্ট করে দিচ্ছি। ‘
‘ ইমপসিবল। কিছুতেই মান সম্মান ঢুবাতে পারবো না আমি। ‘
‘ তুমি পারো শাড়ি সামলাতে? এক কাজ করো বাসায় এখন থেকে শাড়ি পড়া শুরু করো। ইউজ টু হয়ে গেলে তারপর পারমিশন দিচ্ছি। ‘
‘ আপনি তো থাকবেন ই সাথে। ‘
‘ আমি? ‘
‘ এমন করার কি আছে? মনে হচ্ছে শাড়ি কিনে চেয়েছি! আমার অনেক শাড়ি আছে। কিন্তু দুটো কালার ছাড়া ব্লাউজ নেই। তবে অনেক গুলো স্লিভলেস গেঞ্জি আছে। আপনি চাইলে পড়তে পারি। পড়বো? ‘
‘ হুমকি দিচ্ছো?’
‘ মোটেই না। আপনি সেদিন দেখেছেন তো। সুন্দর লাগে না। ‘
‘ উহুম উহুম। বদ বুদ্ধি মাথায় ঘুরে। কি চাও বলো?’
‘ ব্লাউজ কিনতে যাবো। আপনার সাথে। ‘
‘ অনলাইনে অর্ডার করো। ‘
‘ হবেনা। ইটস্ আর্জেন্ট। পরশুই তো শুক্রবার। ‘
‘ বিকালে গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। ‘
‘ গাড়ির সাথে আমার জামাইটাকেও পাঠায়েন। ‘
তানভীর নিঃশব্দে হাসে।
‘ আচ্ছা! কোনটা লাগবে মেডাম? আপনার জামাই নাকি জামাইয়ের গাড়ি?’
‘ জামাই যার জামাইয়ের গাড়িও তার। ‘

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই লাবিবাকে নিয়ে রওনা হয় শহরের দিকে। লাবিবা সন্ধ্যা বেলার মুগ্ধকর প্রকৃতি দেখছে একমনে। মাঝে মাঝে জানালার বাইরেও হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। যে কোনো সময় অন্য গাড়ি এসে হাতে লাগিয়ে দিতে পারে। সেজন্য বিশ্বরোডের একপাশ ধরে গাড়ি চালাচ্ছে। একটু পর পর আড়চোখে তাকিয়ে লাবিবাকে দেখছে। এইযে গাড়ির আলোতে আর বাহিরের অন্ধকারে কি মায়াবী লাগছে লাবিবাকে! মাঝে মাঝে তানভীরের মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত মায়া যেনো তার বউটার উপরেই আল্লাহ তায়ালা ঢেলে দিয়েছে। লাবিবা একেবারে কোণায় চলে গেলে তানভীর কনুই ধরে সিটের মাঝ বরাবর টেনে আনে। লাবিবা বুঝতে পেরে বলে, ‘ সরি। ‘
তানভীর মাথা ঝুঁকিয়ে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দেয়। লাবিবা আর বাহিরে তাকায় না। তানভীরকেই দেখতে থাকে।
‘ আপনাকে দাড়িতেই সুন্দর লাগে। ‘
লাবিবার আচমকা এমন কমেন্টসে তানভীর অবাক হয়না। এরকম কিছুই বলতে পারে সে জানতো। কিছুক্ষণ ধরেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এটাই মেলানোর চেষ্টা করে গেছে।
‘ আপনি আর ক্লিন সেভ করবেন না। ‘
‘ দাঁড়ি রাখলে আমার বউয়ের কষ্ট হয়। স্কিনে দাগ পড়ে যায়। ‘
‘ পড়ুক। আরো দু একটা দাগ পড়লে কিচ্ছু হবেনা। কষ্ট সহ্য করা যাবে। কিন্তু আমার ভালো লাগতে হবে। ‘
‘ আমার কাছে তো ভালোই লাগছে। খারাপ না। ‘
তানভীর মিরর গ্লাসে গালে হাত দিয়ে দেখে। লাবিবা বাহিরের একটা বাড়ির দিকে আঙুল তাক করে বলে,
‘ হ্যা। ঐ টিনের চালের মতো। ‘

শাপলা মলে গিয়ে ব্লাউজ চুজ করছে লাবিবা। এক দোকানে পছন্দ হয়না অন্য দোকানে যায়। আবার অন্য ফ্লোরে। সবগুলো ব্লাউজ গলা বড়। অনেকগুলো আবার নেটের স্লীভ। কোনটার কাপড় ফেসে যাবে। মোটামুটি কোনটাই কমফরটেবল না। লাবিবা পড়লো বিপাকে। দোকানদারকে ছোট গলার ব্লাউজ বার বার বললেও বের করে দিচ্ছে বড় গলার ব্লাউজ। চারটা ফ্লোর খুঁজে হাঁপিয়ে গেছে লাবিবা। মেজাজ ও চটে গেছে দারুন। তানভীর লাবিবার সাথে আসেনা। একজায়গায় বসে লাবিবাকে বলে চুজ করতে। মেয়ে লোকের শপিং সম্পর্কে তার বেশ ধারণা আছে। ফ্যামিলির কাউকে যখন নিয়ে আসে তখন সে এমনি করেই বসে থাকে আর তার মম খালামনি কাজিনরা ঘুরে ঘুরে শপিং করে। কিন্তু তাঁদের সাথে বউকে মেলানো যাবেনা। তাই প্রত্যেকটা ফ্লোরে সে যাচ্ছে লাবিবার সাথে। তানভীর খানকে কে না চেনে? এমপির ছেলে কলেজের প্রিন্সিপাল। সেই সূত্রে দেখা যায় ছোট বড় সবাই তার পরিচিত। কেউ কেউ মানে কাছের জন। সে হিসেবে দলের এক বড়ভাইয়ের প্লাজা হওয়াতে বেশ খাতির পাচ্ছে। তানভীর আসছেনা দেখে লাবিবার আরো মেজাজ চঠেছে। কয়েকবার ডাকলো আসলো না। জবাব দিলো নিজের ইচ্ছায় নাও। এই প্রথম হাজব্যান্ড এর সাথে শপিং এ এসেছে কই তিনি নিজেই চুজ করে কিনে দিবে তা না বসে আছে একজায়গায়। লাবিবা দোকানদারের উপর চেঁচিয়ে উঠে,
‘ এই আপনি কি কানে শুনেন না? কতবার বলছি ছোট গলার ব্লাউজ দিন। ছোট গলার ব্লাউজ শপে রাখতে পারেন না? ইন্ডিয়া ভাবেন বাংলাদেশ কে? কলকাতা? সবাই বড় গলার ব্লাউজ বাধ্য হয়ে কিনবে তাইনা? ‘
দোকানদার মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়, ‘ফ্যাক্টরি এসব ই সাপ্লাই করে মেম। প্লিজ আপনি চেচাবেন না। ‘
‘ আমি মোটেই চেচাচ্ছি না। আপনি আমাকে ছোট গলার ব্লাউজ এনে দিন নয়তো আমার হাতে ব্লাউজগুলো দেখেছেন তো? এগুলোর গলা আরো বড়ো করে দিবো। ‘
‘ আরে না না মেডাম। প্লিজ এমন করবেন না। ‘
দোকানদার ব্লাউজ গুলো লাবিবার হাত থেকে নিতে যায় লাবিবা সাথে সাথে পিছিয়ে যায়। ছুঁতেও দেয়না। পাশের দোকান থেকে একেকজন এসে বলছে,
‘ কি হয়েছে? ম্যাম?কোনো সমস্যা? ‘
আওয়াজ টা তানভীরের কানেও আসে। ততোক্ষনে প্লাজার মালিক ও সিসি ফুটেজে দেখে এখানেই চলে এসেছে। তানভীরের সাথেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে দুজন। লাবিবা তাকিয়ে অবাক। চেচালো শুধু একজনকে আনার জন্য এলো তিনজন। তার উপর আবার সেই রকম তিনজনেই হ্যান্ডসাম। চোখ তো পড়েই। মনে মনে ‘ আসতাগফিরুল্লাহ ‘ বলেই তানভীরের দিকে তাকালো। তানভীর ব্যপারটা বোঝার চেষ্টা করছে কি হয়েছে এখানে? একটা লোক বললো,
‘ এনি প্রবলেম ম্যাম ? আপনি চেঁচামেচি করছেন কেনো? ‘
‘ মোটেই চেঁচামেচি করছিনা। আমার জামাইকে ডাকছিলাম। আপনি যান। ‘
লোকটা তানভীরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো,
‘ কি অবস্থা! কখন থেকে দেখছি চেঁচামেচি করছে। আমি সেকেন্ড ফ্লোর থেকে ফোর্থ ফ্লোরে চলে এলাম। এরকম কাস্টমার থাকলে তো মলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শপিং করতে এসেছো তানভীর? নিজের শপিং রেখে খামখা এখানে টাইম ওয়েস্ট করোনা। ‘
লাবিবার মাথা তো আরো গরম। নেহাত জামাইটার ঘাড়ের রগ ত্যাড়া তার উপর আরো ত্যাড়ামি শিখাচ্ছে। লাবিবা তানভীরের উপর ই চেঁচিয়ে বললো,
‘ একটা ব্লাউজ ও পাচ্ছিনা। যেগুলো পাচ্ছি মন মতো হচ্ছেনা। আর বলে কিনা আমি পরিবেশ নষ্ট করছি? এতো বড় মল দিয়ে কি হলো যদি কাস্টমাররা প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট ই খুঁজে না পায়?’
প্লাজা মালিক তানভীরের দিকে তাকালো। আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ তানভীর?’
তানভীর গলা খাঁকারি দিলো। পর পর মাথা দোলালো। নরম সুরে বললো, ‘ যা নেই তা নিয়ে চেচালে তো হয়না। যা আছে তাতেই বেছে নিলেই তো হয়। ‘
লাবিবা এবার ভয়ঙ্কর একটা কাজ করলো। দোকানের সব থেকে ছোট, ট্রান্সটারেন্ট যে ডিজাইনার ব্লাউজ গুলো ছিলো সেগুলোই বাছতে লাগলো। তানভীরের চোখ উপরে! সে জানতো ও না ব্লাউজ গুলো এমন। যদি জানতো কথাটা ভেবেই বলতো। পছন্দ সই নিয়ে ছুটলো নিচের ফ্লোরে। যেগুলো রেখে এসেছে সেগুলোও নিবে। তানভীর যখন নিতেই বললো ছাড়বে কেনো? সব নিবে। পড়বেও মানুষের সামনে। যা পাপ হবার সব তানভীরের হবে। তার কি এসে যায়? দোকানের মালিক এদিক ওদিক মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো।‌ ‘ আরে ভাই কার বউ এটা? কিভাবে সামলায়?’
তানভীর মনে মনে উত্তর করলো, ‘ বড়ভাই আমারই বউ এটা। রাতে কোনভাবে সামলাতে পারলেও দিনে মাঝে মাঝে সামলাতে পারিনা। ‘

প্রত্যেকটা দোকান লাবিবা আরেকবার করে রাউন্ড দিচ্ছে। এবার আর তানভীর বসে থাকছে না। লাবিবাকে থামাচ্ছেও না। ভদ্রলোকের মতো বউয়ের পিছু পিছু ঘুরছে। লাবিবা জর্জেটের কিছু শাড়িও নিলো ব্লাউজ গুলোর সাথে পড়তে হবেনা? তানভীরের মাথা ঘুরতে শুরু করলো। এমনিতেই বউ ছাড়া নিজের বাড়িতে ঘুমোতে পারেনা তার উপর বউ নাকের ডগা দিয়ে মাথা নষ্ট করে দেওয়ার সরল চক্রান্ত করে চলেছে রাগ দেখিয়ে পাবলিক প্লেসে তানভীর কিছু বলতেও পারছে না। এই বউকে সামলানোর তার অনেক বাকি আছে। এখনো বোধহয় পেটের বুদ্ধিগুলোর সাথে পরিচিত হয়ে উঠতে পারলো না।

তানভীর লাবিবাকে নিজে থেকেই তিনটি শাড়ি কিনে দিলো। টেইলার্সে নিয়ে গিয়ে একঘন্টার মধ্যে ব্লাউজও বানিয়ে দিতে বললো। লাবিবার আর কি? আড়ালে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বাড়ি দিকে ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বাজলো। গাড়িতে লাবিবা তানভীরের ফোন নিয়ে পড়লো। একমনে গেমস খেলতে লাগলো।‌ খেলতে খেলতেই গেমস থেকে বেরিয়ে ফেসবুকে ক্রল করতে লাগলো। তানভীর কে বললো,
‘ আমার তিনটি শাড়ি থেকে একটা শাড়ি নতুন জা কে গিফট করবো। ‘
‘ কাকে?’
‘ নতুন জা। মানে তামিম ভাইয়ার সাথে যে আপুটার বিয়ে হবে। ‘
‘ ওহ। আচ্ছা। ‘
‘ আপনি দেখেছেন নতুন জা কে?’
‘ না। একবারেই দেখবো। ‘
‘ নতুন জা কিন্তু আপনার বউয়ের থেকে অনেক সুন্দর।স্লিম। ফুটফুটে। আমার মতো শ্যামা না। ‘
‘ দেখেছো?’
‘ পাপা বললো তো। ‘
‘ আমার স্লিম ফুটফুটে ভালো লাগে না। ‘
‘ কি ভালো লাগে?’
‘ আমার বউকে ভালো লাগে আর কাউকে না। আমার বউ আমার অনেক দিনের সাধনা। ‘
লাবিবা মুচকি হাসলো। উত্তর করলো না। ফোনেই ঢুবে রইলো। গ্যালারিতে তানভীর আর তার শত শত ছবি। তানভীর ই তুলেছে কখনো তার অজান্তে কখনো সরাসরি। হটাৎ একটা ছবিতে চোখ আটকে যায়। তানভীর আর তার নয় এটা তাদের বিয়ের আগের ছবি। যে ছবিগুলো দিয়েই লাবিবা ফাহাদের সাথে তার বিয়ে ভেঙেছে। এই ছবি তো ডিলিট করে দেওয়া হয়েছিলো সাথে সাথে। তানভীরের ফোনে কি করে এলো? তানভীর এটা দেখেও লাবিবাকে বিয়ে করলো।‌ এর জন্যই কি তানভীর লাবিবার থেকে দূরে দূরে থাকতো? লাবিবার মনে ভয়ের উঁকি দিলো। ঢুক গিলে ফোন হাতে তানভীরের দিকে তাকালো। তানভীর ড্রাইভিং করতে করতে লাবিবার হাতে কোলের উপরে রাখা স্কিনে তাকালো। সাথে সাথে লাবিবার ভয়ার্ত মুখটায় দৃষ্টি বুলালো। এক থাবা দিয়ে ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে নিলো। লাবিবা বলে উঠলো,
‘ এই ছবি আপনার ফোনে কি করে এলো? বিশ্বাস করুন ওটা আমি হলেও ছবিটা সত্য না। আমি নিষ্পাপ। আমি পবিত্র। ‘

চলবে ___

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৪৪)
লাবিবার সামনে অপরাধী হয়ে বসে থাকার কথা নাকিব এবং উর্মিলার। কিন্তু তাদের মধ্যে অপরাধীর কোনো ভাব নেই। দুজনেই লাবিবার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। নাকিব লাবিবাকে একটু মানানোর চেষ্টা করলো। আদুরে গলায় ডাকলো,
‘ দোস্ত!’
‘ চুপ। ‘
‘ আমার গুলুমুলু দোস্ত। তুই ভালো। ‘
‘ সেট আপ। ‘
ধমক খেয়ে নাকিব চুপ করে গেলো। উর্মিলা লাবিবার হাত ধরে টানলো।
‘ দোস্ত শোননা রাগ করছিস কেনো? আমরা আমরাই তো। ‘
‘ তোরা বন্ধু নামের কলঙ্ক। ছাড় আমার হাত বলছি। সাহস তো বহুদূর তোর। দুলাভাইয়ের কলিজা নিয়ে ঘুরতে শুরু করেছিস! হারামীর দল। ‘
‘ তোর জন্য ই তো সব। ‘
‘ তাই বলে এতো বড়ো ধোকা দিবি? আমার বন্ধু হয়ে আমার অগোচরে স্যারের সাথে হাত মেলাবি? কি করে পারলিরে তোরা এমন করতে?’
‘ যা করেছি তোর ভালোর জন্যই করেছি। সে সময় এছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। আমরা কি আর জানতাম তলে তলে এতো দূর? সাহায্যের নাম করে বিয়ে করার পরিকল্পনা?’
‘ যখন জানলি তখনও কি আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?’
‘ দেখ বোইন। ছেলেদের হৃদয় হয় খুব সফট আর সাদামাটা। তোদের মতো মেকাপ নিয়ে ঘুরে না। প্রিন্সিপাল তোকে দেখেই ক্রাস খেয়ে ফেলছে। তোকে ছাড়া রাতে ঘুমাতে পারতো না। ছটফট করতো। টেনশনে চুল উঠে যাচ্ছিলো। গম্ভীর মানুষ টা হাসতে জানলেও তোকে দেখার পর থেকে হাসি ভুলে গেলো। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও ভুলে গেলো। তোর পিছু লাগলো। তুই বল স্যার তোর আশেপাশে ঘুর ঘুর করতো না?’
‘ কবে?’
‘ আরে বইন মনে কর মনে কর। তুই বুঝতে পারতিস না? তুই নাকি স্যারকে ফিল করতে পারিস?’
‘ হ্যা। তো?’
‘ তো মানে? স্যার তোকে ফলো করতো। এতো কিছু দেখে আমরা কি একটা প্রেমিক কে কষ্ট পেতে দিতে পারি? স্যারের বুদ্ধিতে কাজ করে বুঝতে পারি যখন এই প্ল্যান টা করা ছিলো তখন আমি বা আমরা কেউ পারিনি স্যারের পথে কাটা দিতে। এক প্রেমিককে সফল করার চেষ্টা করেছি। এখন বল আমরা কি কোনো দোষ করেছি? তোকে বললে যদি রেগে যাস তাই বলিনি। এইযে এখন জেনেছিস দেখ তুই রেগে গেছিস। ‘
লাবিবা চুপ করে থাকলো। গভীর চিন্তা করলো। ভাবলো আর ভাবলো। তাও কনফিউশন নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ আসলেই?’
‘ এখনো কনফিউশনে আছিস?’
‘ না । আসলেই স্যার আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু তোরা ভালোবাসিস না। তোরা স্যারকে ভালোবাসিস। আমার কষ্টটা তোদের চোখে পড়েনা। স্যারের কষ্ট তোদের সহ্য হয়না। ‘
উর্মিলা চোখ বড় বড় করে ফেললো।
‘ দিব্যি তো আছিস। তোর আবার কিসের কষ্ট? বাসর করিস নি এখনো?’
দাঁত চিবিয়ে ভয়ানক চাহনি দেয় লাবিবা। গট গট করে বন্ধুদের রেখে চলে যায়। এই হলো বন্ধুমহল। বাসর ছাড়া এদের মাথায় আর কিচ্ছু নেই। আবেগপ্রবণ কোনো কম বয়সী যুবককে বিয়ে করেনি। করেছে এক তাগড়া পুরুষ কে। এক চুল ছাড় দেয়াতে তিনি নাই।

বাদ জুম্মা ইসমাইল, সাবিনা লাবিবা রেডি হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। তামিমরা এখান থেকেই পিক করবেন তাঁদের কে। লাবিবা ঠিক ঠাক হাঁটতে পারছেনা হাই হিল পড়ে। কিন্তু খুলেও রাখছেনা। ইচ্ছেও নেই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে আজ তার রিসিপসন। আকাশী রঙের কাঞ্জি শাড়ীতে এই পর্যন্ত শ্বশুড়বাড়ি থেকে পাওয়া সব গহনা পড়ে ভারী মেকাপ করেছে। তার দিক থেকে চোখ ই সরানো যাচ্ছে না। ভাবীর কাছ থেকে সাজার পর থেকে কতবার যে ভাবী কাকী সাবিনা এসে কানের পাশে কাজল লাগিয়ে গিয়েছে হিসাব ছাড়া। রোদে দাঁড়িয়ে থাকতেও লাবিবার বিরক্ত লাগছে না। কন্ফিডেন্সে ভরপুর। আজ তাকে খান বাড়ির ছোট বউ মনে হচ্ছে। পাত্রীকে তাক লাগিয়ে দিবে। সবার আগে লাগাবে তানভীরকে। তার জন্য ই অপেক্ষা। ইসমাইল সাবিনার জন্য আলাদা গাড়ি এসেছে। তারা উঠে বসেছে। লাবিবা যাবে তানভীরের গাড়িতে। লাবিবা গাড়ির দরজার সামনে দাড়াতেই তানভীর ভ্রু কুঁচকে ফেলে। গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করে,
‘ কিছু বলবেন?’
‘ ডোর খুলুন। আমি উঠবো। ‘
‘ সরি আপনাকে চিনতে পারছিনা। ‘
‘ আমি লাব্বু। খান সাহেব আপনার বউ। ‘
‘ সরি। আপনি মেকাপ সুন্দরী । আমার বউ মোটেই মেকাপ সুন্দরী নয়। আপনি প্লিজ আমার বউকে নিয়ে আসুন। ‘
‘ আরে? মানে কি? ‘
‘ মানে আমার তাড়া আছে। আমার বউকে নিয়ে আসুন।’
‘ আপনার গাড়িতে নিবেন না?’
‘ বউকে নিবো। ‘
লাবিবা ভেবেছিলো কি আর হলোটা কি? কই বলবে বউ তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে কাছে এসে বসো। তা নয় গাড়িতেই তুলতে চাইছে না। সে সামনের দিকে ছুট দিলো। ইসমাইলদের গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে। একটু সামনেই। ডাকলো,
‘ আব্বু আমাকে নিয়ে যাও। দাঁড়াও। ‘
তানভীর গাড়ি থেকে নেমে লাবিবার পিছু দৌড় দিলো। ধরেও ফেললো। কোমড় জড়িয়ে ধরে গতিরোধ করলো। বুকের উপর জড়িয়ে ধরে করুন গলায় বলল,
‘ আল্লাহর দোহায় লাগে বউ তোমার এই শাড়ি পড়া রুপ আমি কাউকে দেখতে দিবো না । ‘
‘ কেনো? ঠিক ঠাক পিন আপ করেছি। আমার তো প্রব্লেম হচ্ছেনা। ‘
‘ চেঞ্জ করে আসো। নয়তো তোমাকে নিবো না। ‘
‘ কেনো? আমাকে সুন্দর লাগছে না?মনে হচ্ছে না আমি আপনার বউ?’
‘ তুমি সুন্দর হলেও। আমার বউ না হলেও আমার বউ।’
‘ আমি এতো সুন্দর করে সেজেছি।‌চেঞ্জ করবো না। ‘
‘ তাহলে আমরাও যাচ্ছি না। ‘

মেয়ের বাবা কোন ঢাকঢুক রাখলেন না। সত্যটা সরাসরি বলে দিলেন , ‘ আমার মেয়ের বয়স এই পঁচিশে পড়লো। বয়স আঠারো হতেই বিয়ে দিয়েছিলাম। মেয়েটাকে ওরা মেরে ফেলছিলো। একটু সুখের মুখ দেখতে পায়নি। এতোবছর পর জানতে পারলো তার স্বামীর আরেক সম্পর্কের কথা। মাস দশেক আগে মেয়েটা আমার অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি এলো। তারপর আর ছেড়ে দিই নি। মাস ছয়েক হলো ডিভোর্স হয়েছে। মেয়ে আমার দেখলেই বুঝতে পারবেন। বড়ো লক্ষী। রোজীর মা রোজীকে নিয়ে আসো। ‘
রোজীকে দেখে সকলের ই বড্ড পছন্দ হয়। তামিম কে জিজ্ঞেস করলে তামিম কিছুক্ষন চুপচাপ রোজীর দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটার শরীরে স্বাস্থ্য বলতে নেই। শুকিয়ে কাঠ। ফুটফুটে প্রায় গোল চেহারা। একবার তাকালে দ্বিতীয়বার তাকাতে যে কেউ বাধ্য হবে। রোজীর গায়ে নীল রঙের আনারকলি। কানে সোনার দুল। ফুটফুটে মুখে কোনো অকৃত্রিমতার ছোয়া নেই। চেহারায় কোনো ভাবালেশ নেই। যেনো এমনি বসে আছে। পরিচিত মানুষের সামনেই। ইউজ টু হয়ে গেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তামিম কিছুক্ষন রোজীকে পরখ করে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। বিসমিল্লাহ বলে সোহানা তামিমের হাত থেকে রোজীর হাতে আংটি পড়াতে বললো। আংটি হাতে পড়ে রোজী চুপচাপ বসে রইলো। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো। মেহমান রা চলেও গেলো। রোজী গেইটের আড়ালে এসে অবাক চোখে দেখতে লাগলো। কি অদ্ভুত! অনান্য পাত্ররা সবাই রোজীর সাথে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য উঠেপড়ে লাগে। এই লোক সামান্য প্রয়োজন বোধ টুকুও করলোনা।

লাবিবার রাগ পড়েনি। বরং আরো আরো রাগ বেড়েছে। সমস্ত রাগ তানভীরকে ঘিরে। রাগে রাগে লাবিবা মন মতো সেজেছে। টকটকা লাল লিপিষ্টিক দিয়েছে। গালে পাউডার মেখে ধবধবে সাদা করে ফেলেছে। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি। গোলাপী ব্লাসন ও লাগিয়েছে। আর বেশি সাজা যাবেনা। কলেজে এতো বেশী সাজলে ঐ কাতারের মেয়ের সাথে তুলনা দিবে যারা ছেলেদের মাথা ঘুরাতে আসে। তাহলে লাবিবা কোন কাতারে পড়ে? সেও তো মাথা ঘুরাতে যাচ্ছে। যেমন তেমন ছেলের না। স্বয়ং তানভীর খানের।

কলেজে পা রাখতেই উর্মিলা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
‘ দোস্ত_ কনগ্ৰাচুলেশনস। ‘
‘ কেনো?’
‘ শুনলাম পাগলের ডাক্তারের বিয়ে ঠিক হয়েছে?’
‘ তো তাকে গিয়ে কনগ্ৰাচুলেট করনা। ‘
‘ এই বুইড়া বেটা এতো দিনে বিয়ে করে! কি লজ্জার কি লজ্জার! ‘
‘ দ্বিতীয়বার। ‘
‘ কি বলিস? এই ডাক্তারের তো আসলেই রাজ কপাল। রাজ প্রাসাদে জম্ম। এতো এতো প্রতিপত্তি। তার উপর ডাক্তার। দু দুটো বউ! মানুষ তো একটা বউই পায় না। এই বেটা দু দুটো ফুলের মধু পান করবে । আগের পিস কই রে? মারা গেছে?’
‘ না। আছে। ‘
‘ ডিভোর্স! কই রে?’
‘ ফ্লোরা আছে না? মডেল। ‘
‘ তোর আইডল। ‘
‘ উনি আমার এক্স জা। ‘
‘ রিয়েলি? আর দ্বিতীয় জা?’
‘ রোজি আপু।’
‘ তুই ঘটিয়েছিস ঘটনাটা তাই না? কিন্তু উনি তো ম্যারিড। ‘
‘ ডিভোর্স হয়ে গেছে। ‘
‘ সাবাশ! আপুটা বেঁচে গেছে। ‘
‘ তামিম ভাই অনেক ভালো জানিস? উনি আপুকে অনেক হ্যাপি করবেন। আপু যে ইনোসেন্ট! তামিম ভাই আপুর দিকে তাকাবেন ই। ‘

অনেকেই তাকাচ্ছে লাবিবার দিকে। সাদামাটা মেয়েটাকে ভীষন সুন্দর লাগছে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নজর দিচ্ছে। মাস্টার্সের আপুরা তো হেঁটে যেতেই গাল টেনে দিচ্ছে ‌। লাবিবা নিরুপায় হয়ে দুহাতে গাল চেপে রেখেছে। সেটা দেখে সিনিয়র আপুরা হেসেই দিচ্ছে। তাতে কি? গাল টানা যাবে না। এই গাল লাবিবার না। অন্যের সম্পদে হস্তক্ষেপ মালিক পক্ষ মেনে নিবে? কখনোই না। ক্লাস চলাকালীন সময়ে তানভীর সহ আরো কয়েকজন স্যারের ক্লাস প্রবেশ হলো। নতুন দের বরণ করে নেবার জন্য স্টুডেন্টস দের বলা হলো। নবীন বরণের সাথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যোগ হবে। সিনিয়র হিসেবে সবটুকু দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিতে বলা হলো। পুরোটা ভাষন দিলেন ভাইস প্রিন্সিপাল। তানভীর ভাষন দিতে গিয়েও ভাইস প্রিন্সিপাল কে ইশারা করেছেন। নজর তানভীরের লাবিবার উপর। লাবিবাও সারা বছর ব্যাকবেঞ্চার হলেও আজ ফার্স্ট বেঞ্চে বসেছে। যেনো দরজা দিয়ে যে প্রবেশ করবে তাকেই প্রথমে নজরে পড়ে। সেই চার পাঁচ মিনিট সময় তানভীর লাবিবার দিকেই তাকিয়ে রইলো। আর লাবিবা তানভীরের দিকে। চোখে চোখ মিলন হলো। তানভীর এতোক্ষণ ধরে যা আবিষ্কার করলো তা হলো লাবিবার রাগ পড়েনি। বউ তার এখনো রেগে আছে। একটু আদর না দিলে বউয়ের রাগ পড়বেনা। বেরিয়ে যাবার সময় চোখে ইশারা করলো,
‘ ক্লাস শেষে বাহিরে আসো। ‘ লাবিবা মুখে ভেংচি কাটলো। কিন্তু অমান্য করলো না। স্যার বেরিয়ে যেতে যেতেই সিঁড়ির দিকে তানভীরকে দেখতে পেলো। লাবিবা কাছাকাছি যেতেই তানভীর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো। পিছু পিছু লাবিবাও উঠতে লাগলো। ফাঁকা সিঁড়ি পেয়েই তানভীর সোজা লাবিবার হাত টেনে ধরে দেয়ালে চেপে ধরলো। কপালে ঠোঁট চেপে ধরে ই ধমকালো ‘ এতো জেদ কেনো তোমার? গালে কেনো রং মেখেছো?’
‘ আরো মাখবো। ‘
‘ মাখো। ঠোঁট রাঙাবে না। বড্ড চোখে লাগে। ‘
‘ সেজেছি সুন্দর লাগছে না? জানেন কতগুলো ছেলে আজ তাকিয়েছে? আপনি আজ আমার মন ভাঙতে পারলেন না। ‘
‘ আমি তোমার মন ভাঙি?’
”জানেন না মেয়েদের সাজ নষ্ট করলে মন ভেঙে যায়?’
‘ তাহলে তোমার মন আমি প্রতিদিন ভাঙতে চাই। তোমার সাজ শুধু আমি দেখবো আর কেউ না। আমার জিনিসে বদনজর না লাগুক। ‘
‘ আপনার নজর থেকেই তো আড়াল হতে পারছিনা। কেমন শয়তানি করে আমাকে বিয়ে করলেন আপনি। ‘
‘ খারাপ কিছু করেছি? ‘
‘ অবশ্য ই। আমার ফ্রেন্ড দেরকে নিয়ে ঝড়যন্ত্র করেছেন আপনি। ‘
‘ কি করবো বলো? তোমার অসহায়ত্ব দেখে আমার তোমাকে খুব হেল্প করতে ইচ্ছে করলো। তোমার বোকা মাথায় ঝামেলা ব্যতিত আর কিছু আসবে না বুঝতে পেরে সাহায্য টা করেই ফেললাম। প্রমিজ করেছিলাম তো গিফট দিবো। নিজেকেই দিয়ে দিলাম।’
‘ ভোগান্তি লাগবেনা। ‘
‘ গিফট দিলাম তোমার ভোগান্তি মনে হচ্ছে? জান তুমি কি আমার কাছে হ্যাপি না?’
‘ কেনো বিয়ে করলেন আমায়?’
‘ এই লাল ঠোঁট জোড়ার দাবীদার হতে চেয়েছিলাম তাই। একটু খাই?’
‘ না। আমার লিপস্টিক_ উমমম ‘
ম্যাট ছাড়া লিপস্টিক দিলে যা হয়। তানভীর একেবারে ঘেঁটে দিয়ে তবেই ছাড়লো। তার ঠোঁটে ও লেগে রয়েছে কিছুটা। লাবিবার থুতনি অব্দি লিপস্টিক লেগে গেলো। দীর্ঘ এক সময় অতিবাহিত হবার পর দুজনেই কপালে কপালে ঠেকিয়ে হাঁপাতে লাগলো। লাবিবা চোখ বন্ধ রেখেই বললো,
‘ কি করলেন এটা? ছড়িয়ে গেলো তো।’
‘ আমার তো সব কিছু ছড়িয়ে ফেলতে মন চাইছে বউ।’
‘ ছাড়ুন।‌কেউ দেখে নিবে। ‘
‘ তুমি জানো এই কলেজে আনাচে কানাচে কতো কতো প্রেমিক প্রেমিকা আমাদের মতো টাইম স্পেন্ড করে? ‘
‘ তাঁরা আর আমরা কি এক হলাম?’
তানভীর লাবিবাকে ঘুরিয়ে দেয়। দেয়ালের দিকে তাকাতেই তানভীর পকেট থেকে মার্কার বের করে লাবিবার হাতে ধরিয়ে দেয়। মুচকি হেসে হাতের উপর হাত রেখে দেয়ালে বড় বড় অক্ষরে লিখে
‘ এই কলেজের প্রত্যেকটি দেয়ালে দেয়ালে লিপিবদ্ধ হোক তোমার আমার প্রেম গাঁথা। ‘

চলবে __