ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-৬৩+৬৪

0
2280

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা- Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৩

★ সকাল ৯-৩০
আদিত্য একটু আগেই অফিসে এসেছে। নিজের কেবিনে বসে কিছু ফাইল দেখছে। তখনই কেবিনের দরজায় কেউ নক করলো।আদিত্য ভেতর থেকে আসতে বললো।

দরজা খুলে আবির ভেতরে ঢুকলো। আবিরকে এইসময় এখানে দেখে আদিত্যও অবাক হয়ে গেল। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….কিরে তুই আজকে রাস্তা ভুলে গেছিস নাকি? তাই আড্ডা দেওয়ার বদলে অফিসে চলে এসেছিস?

আবির ভেতরে এসে আদিত্যর সামনের চেয়ারে বসে বললো।
….ভাই তোরা কি ভাবিস বলতো আমাকে?

আদিত্য কিছু বলতে যাবে তার আগে আবির ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
….থাক থাক ওটা আর বলতে হবে না। আমি বলছি শোন। আমি ভুল করে অফিসে আসিনি। ইচ্ছে করেই এসেছি। কারণ আমি আজ থেকে অফিসে বসবো।

আদিত্য ভ্রু কুচকে বললো।
….তুই কি সকাল সকাল মজা করার জন্য আমাকেই পেয়েছিস?

….আরে মজা কেন করবো? আই এ্যাম সিরিয়াস ভাই।

আদিত্য তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
…হ্যাঁ হ্যাঁ তুই সিরিয়াস হলে, আমি শাহরুখ খান।

আবির দুঃখী ভাব ধরে বললো
…তুই এটা বলতে পারলি ভাই? তুই জানিস আমি কেন অফিস জয়েন করতে চাই?

…কেন?

…তোর কথা ভেবে ভাই।

….আমার কথা ভেবে মানে?

…হ্যাঁ ভাই। তুই একা সব বিজনেসের কাজ দেখাশোনা করিস।তোর কতো কষ্ট হয়ে যায় তাইনা? কাজের জন্য ভাবিকেও ঠিকমতো সময় দিতে পারিস না। তাই আমি, তোর এই রেসপন্সেবল ভাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে,তোকে একা একা আর খাটতে দিবে না। এখন থেকে আমিও তোকে কাজে সাহায্য করবো।

আদিত্য তীক্ষ্ণ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
….আমার তেল চর্বি একদমই পছন্দ না। তাই তেল না মেরে আসল কথা কি সেটা বল। আজ হঠাৎ করে তোর এতো সুবুদ্ধি কোত্থেকে উদয় হলো তাই বল?

আবির একটা মেকি হাসি দিয়ে বললো।
….হে হে , কিজে বলিস না ভাই। আমি কেন তোকে তেল মারতে যাবো? আমার কি তেলের কুয়া বের হয়েছে নাকি?

…ঠিক আছে বলতে না চাইলে তোর ইচ্ছে। কিন্তু পরে যদি বলতে চাস তখন কিন্তু আমি শুনবো না।

আবির একটু ঘাবড়ে গেল। ও জানে আদিত্যকে ছাড়া ওর কাজ হবে না। তাই তড়িঘড়ি করে বললো।
….আরে ভাই রাগ করছিস কেন? তুই যখন এতো ইনসিস্ট করছিস, তখন বলেই দিচ্ছি। আসলে হয়েছে কি ভাই। তুই আর নূর ভাবি বিয়ে করে নিলি,সানা আর তাসিরেরও এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেল। এখন এসব দেখে তানিও আমাকে বিয়ের জন্য প্রেসার দিচ্ছে। বলছে ওর নাকি খুব বেশি বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে। আমাকে দশ নম্বর বিপদ সংকেত দিয়ে দিয়েছে। বলেছে তাড়াতাড়ি বাবা মাকে বলে ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব না নিয়ে গেলে, ও অন্য কাউকে ধরে বিয়ে করে নিবে।

আবিরের কথা শুনে আদিত্য হাসতে শুরু করে দিল। আবির দুঃখী ভাব ধরে বললো।
…তুই হাসছিস? এদিকে আমার হালুয়া টাইট হয়ে যাচ্ছে। তানি কি বলে জানিস? বলে ও নাকি তোদের মেয়েকে আমাদের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে বউয়ের শাশুড়ী হয়ে দেমাক দেখাবে। তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করে তোদের আগেই বাচ্চা নিতে বলছে। ভাবা যায় এল্লা?

আদিত্যর হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। আদিত্য কোনরকমে হাসি থামিয়ে বললো।
….একদম ঠিক হয়েছে। তুই যেমন,পেয়েছিসও আরেকটা তেমন। তা এইজন্য বুঝি অফিস জয়েন করার সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে।

….হ্যাঁ ভাই তানির বাবা মাকে ইমপ্রেস তো করতে হবে তাইনা? তবে তানির বাবা মা তো পরে, আগে আমার বাপ মাকে কে বলবে। আমি বললে তো বাবা আমার কান বরাবর একটা লাগাবে। ভাই তুই কথা বলনা, তোর কথা নিশ্চয় শুনবে ওরা।

আদিত্য হাসি মুখে বললো।
…..ওকে ওকে টেনশন নিস না।আমি চাচা চাচির সাথে কথা বলবো। রাতে নূরকে নিয়ে বাসায় এসে এ বিষয়ে কথা বলবোনে।

আবির উঠে এসে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বললো।
…..থ্যাংকস ভাই, ইউ আর দা বেস্ট।

….হয়েছে হয়েছে এখন যা। অফিসে যখন এসেছিস তখন কিছু কাজও কর।

আবির মাথা ঝাকিয়ে বেরিয়ে গেল,নিজের কেবিনে।
—————–

রাত ৮টা
আদিত্য আর নূর একটু আগেই এসেছে। সবাই ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে। আদিত্য ওর চাচা চাচীর দিকে তাকিয়ে বললো।
…..চাচা চাচী আপনাদের সাথে জরুরি কথা আছে।

আদিত্যর চাচা বলে উঠলো।
…হ্যাঁ আদি বলো কি বলবে।

…..আসলে আবিরের ব্যাপারে কথা বলতে চাই। আবির একটা মেয়েকে ভালোবাসে। মেয়েটাকে আপনারা চেনেন। মেয়েটা নূরের বান্ধবী তানি। ওরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। আর এখন বিয়ে করতে চাচ্ছে। আপনাদের কি মতামত এ ব্যাপারে?

আবিরের বাবা বলে উঠলো।
….আমাদের আর কি মতামত আছে। তুমি যদি ঠিক মনে করো তাহলে আমাদেরও কোনো সমস্যা নেই। এই হতচ্ছাড়াকে যে কেউ তাদের মেয়ে দিবে এটাইতো অনেক। বাকিতো ভাইয়া আর তুমি আছ। তোমরাই দেখে নেও।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..তাহলে আপনারা রাজি থাকলে , আমরা কাল পরশুই তানিদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই? কি বলেন?

….ঠিক আছে তুমি যেটা ভালো মনে করো।

একটু পরে বড়রা সবাই উঠে চলে গেল। আর আবির সোফায় উঠে দাঁড়িয়ে নাচতে লাগলো। নাচতে নাচতে বললো।
….ইয়েস,ইয়েস,ইয়েস। আমার বিয়ে হবে বাসর হবে। আয় হায় আমারতো তরই সইছে না,কবে বিয়ে হবে , বাসর হবে। আমার ছোট বেলা থেকে একটাই স্বপ্ন, বড় হয়ে বিয়ে করে বাসর ঘরে বিড়াল মারবো।

আবিরের কান্ড দেখে সবাই হাসতে হাসতে শেষ। তখনই হঠাৎ আবিরের ফোনটা বেজে উঠল। আবির সোফায় বসে ফোনটা বের করে দেখলো তানির ফোন। আবির বুঝতে পেরেছে যে,তানি বাবা মা বিয়ের ব্যাপারে কি মতামত দিল সেটা জানার জন্য ফোন করেছে। আবিরের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো। আবির সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
…..সবাই শোন, তানি ফোন করেছে এখানকার খবর জানার জন্য। তো ওর সাথে একটু মজা নেওয়া যাক কি বলো সবাই?

সানা বললো।
….হ্যাঁ ভাইয়া একটু মজা নেওয়া যাক।

নূর শুধু মুচকি হাসি দিল।
আদিত্য বললো।
….যাই কর কিন্তু পরে যেন কোনো ঝামেলা না হয়।

….আরে কিছুই হবে না। তুই দেখ কি মজা হয়।

কথাটা বলে আবির সিরিয়াস ভাব ধরে ফোনটা রিসিভ করে বললো।
….হ্যাঁ তানি বলো।

……বলো মানে? তুমি বলো ওখানে কি হলো? সব ঠিক আছে? আঙ্কেল আন্টি রাজি হয়েছে বিয়েতে? তাড়াতাড়ি বলো,টেনশনে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুঃখী ভাব ধরে বললো।
…..তানি বেবি আমাদের কপালে মনে হয় মিলন নেই। শুধু বিরহই লেখা আছে।

….মানে?

….মানে বেবি, মা বাবা কেউই বিয়েতে রাজি হয়নি। তারা বলেছে আমি যদি এই বিয়ে করি, তাহলে আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করে দিবে। এখন তুমিই বলো বেবি, মা বাবাকে কষ্ট দিয়ে কিভাবে বিয়ে করবো আমি?

আবিরের কথা শুনে তানি থপ করে বেডের ওপর বসে পড়লো। ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছে না।

আবির মেকি কান্না করে বলে উঠলো।
….তবে তুমি চিন্তা করোনা তানি বেবি। তোমাকে বিয়ে না করলে, আমি কোথায়ও বিয়ে করবো না। দরকার হলে সারাজীবন চিরকুমার থাকবো। তবুও তোমাকে ছাড়া কাওকে বিয়ে করবো না। এ মেরা বাচান হে,অর মেরা বাচান হি হে শাসান। ভালো থেক তানি বেবি। বেঁচে থাকতে হয়তো না মিলতে পারলাম, তবে মরার পরে অবশ্যই আমাদের মিলন হবে।
♬ ♬ হৃদয়ের লেনা দেনা
♬ ♬ এ পারেতে আর হবে না
♬ ♬ তোমার আমার দেখা হবে ওপারে

গানটা গাইতে গাইতে ফোনটা কেটে দিল আবির। তারপর হু হা করে হাসা শুরু করে দিল।

নূর বলে উঠলো।
….এটা কিন্তু ঠিক না আবির ভাইয়া, আমার বেচারি তানি হয়তো বসে বসে কাঁদছে এখন।

আবির মুচকি হেসে বললো।
…..আরে ভাবি চিন্তা করোনা। কষ্টের পরে যখন সুখ আসে, সেটার মজাই আলাদা।
———-
সকাল ৯-৩০
সানা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। অন্যরা সবাই ব্রেকফাস্ট করে যার যার রুমে আরাম করছে। আজ শুক্রবার তাই সবাই বাসায়ই আছে।

হঠাৎ বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। সানা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে দেখলো সামনে তানি দাঁড়িয়ে আছে। তানিকে এখানে দেখে সানা একটু অবাক হয়ে বললো।
…..তানি আপু,তুমি এখন এখানে?

তানি শক্ত গলায় বললো।
….আবির কোথায়?

….ভাইয়া তো,,,

সানার কথা শেষ হওয়ার আগেই তানি সানাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ভেতরে ঠুকলো। ভেতর এসে জোরে জোরে আবিরের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বললো।
……আবির, আবির কোথায় তুমি? বেরিয়ে আস এক্ষুনি।

তানির চিল্লানিতে বাড়ির সবাই হকচকিয়ে উঠলো। সবাই তাড়াতাড়ি করে ড্রয়িং রুমে আসলো। তানিকে এখানে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। সবচেয়ে বেশি আবির। আবিরের মনে মনে কেমন যানি ভয় করছে। মনে হচ্ছে ওর ওপর দিয়ে আজ টর্নেডো বয়ে যেতে চলেছে। আবির একটা ঢোক গিলে তানির কাছে এসে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….তানি বেবি তুমি এখানে কি করছ?

তানি আবিরের কলার চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বললো।
….কি করছি আমি তাইনা, কি করছি? আমার কথা বাদ দাও, তুমি কি করছ সেটা বল? তোমার সাহস কি করে হলো বলার যে, আমাকে বিয়ে করবে না হ্যাঁ?

তানির এমন এ্যাকশনে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। সানা, নূর আর আদিত্য মিটিমিটি হাসছে।

আবির করুন সুরে বললো।
….তানি কি করছ? সবাই দেখছে তো?

…..দেখুক সবাই, সবাইকে দেখতে দেও। এমনিতেও কয়েক মাস পরে সবাই সবকিছু দেখতেই পাবে।

তানির কথার আগামাথা কিছু বুঝতে না পেরে আবির কনফিউজ হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
…..মানে?

….মানে আই এ্যাম প্রেগন্যান্ট।

কথাটা যেন বজ্রপাতের মতো সবার মাথায় পড়লো। সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। বেচারা আবিরতো পুরো তব্দা খেয়ে গেছে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যা শুনলো তাকি ঠিক শুনল? আবির বেকুবের মতো বললো।
…..একমিনিট, আমি মনে হয় কানে ভুল শুনেছি ?তুমি নিশ্চয় প্রেগন্যান্ট বলোনি তাইনা?

তানি বলে উঠলো।
….তুমি ঠিকই শুনেছ আমি প্রেগন্যান্টই বলেছি। হ্যাঁ আমি তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছি।

আবির যেন ২০০০ বোল্টের একটা ঝটকা খেল। বেচারা পুরো স্টাচু হয়ে গেল। কোনো রিয়্যাকশনই দিচ্ছে না।

সানা, আদিত্য আর নূর অনেক কষ্টে নিজেদের হাসি আটকে রেখেছে।
আবিরের মা অবাক হয়ে বললো।
……কিহহ্? হোয়াট টেল তুমি, তুমি হোয়াট টেল? মাই সান ইস প্রেসিডেন্ট ইউ?

আবিরের মায়ের কথা তানি কিছুই বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে ওর মাথার উপর কাক ডাকছে। তানির কনফিউজ চেহারা দেখে সানা তানির কাছে এসে কানের কাছে ঝুকে বললো।
….সি মিনস প্রেগন্যান্ট।

তানি এবার আবিরের মায়ের কাছে এসে দুঃখীয়ারি ভাব ধরে বললো।
….হ্যাঁ আন্টি আই এ্যম প্রেগন্যান্ট। আমি আপনাদের নাতি নাতনির মা হতে চলেছি।

আবিরের মা বললো।
…কিহ, কিন্তু হোয়েন, হাউ?

তানি লাজুক ভাব ধরে বললো।
….কিভাবে হলো এটা এখন কি করে বলি? আমার লজ্জা করে?

আবিরের মা এবার হাসিমুখে বললো।
….না না থাক থাক আর বলতে হবে না। তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন এস এস বসো।
আবিরের মা তানিকে নিয়ে গিয়ে আস্তে করে সোফায় বসিয়ে দিল। তারপর নিজেও তানির পাশে বসে তানির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
….হোয়াট হ্যাপেন ইজ হোয়াট হ্যাপেন। আই তো ভেরি খুশী। আমি আমার নাতী নাতনীর ফেসওয়াশ (ফেস) দেখতে চলেছি। তবে ইউ এখন থেকে ভেরি কেয়ারটেকার (কেয়ারফুল) হয়ে থাকবে। তোমার জন্য এতো ওয়াকিং ওয়াকিং একদম গুড না। আন্ডারওয়্যার (আন্ডারস্ট্যান্ড)?

আবিরের মায়ের ইংলিশ শুনে তানি বেচারির অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। তবুও জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….ধন্যবাদ আন্টি, এখন নিশ্চয় আপনারা এই বিয়েতে অমত করবেন না? নাহলে আমি আর আমার পরিবার কাওকে মুখ দেখাতে পারবোনা।

আবিরের মা ভ্রু কুঁচকে বললো।
…….অমত?অমত হোয়াই থাকবে? আমরাতো টুমোরোই বিয়েতে এ্যাগরি হয়ে গেছি।

আবিরের মায়ের কথায় তানি একটা বড়সড় ধাক্কা খেল। তারমানে আবির কাল আমাকে মিথ্যে বলেছিল। আমি শুধু শুধুই এতো নাটক করলাম? এখন সবসইকে কি বলবো? সবার সামনে ইমব্রেসিং হতে হবে। সব এই আবিরের জন্য।
কথাগুলো ভেবে তানি রাগী চোখে আবিরের দিকে তাকালো।

আবির এতক্ষণও স্টাচু হয়ে ছিল।হঠাৎ দুই কানে হাত রেখে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….নেহিইইইইইইই,,,,নেহি নেহি নেহি। মেতো লুট গাই, বরবাদ হো গায়ি। এইসা নেহি হো সাকতা, কেহ দো কি এ ঝুট হে।
আবির তানির কাছে এসে বললো।
…. এত বড়ো ধোঁকা? বলো কে সে? কে তোমার মাঝে এই পোস্ট আপলোড করেছে? বলো বলো বলো?

বেচারি তানি পরে গেছে এক বিপাকে। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। শুধু অপরাধী মুখ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে আছে।

এদিকে আবিরের কথা শুনে ওর বাবা এসে আবিরের গালে একটা চড় মেরে দিল। তা দেখে সবাই চমকে গেল। আবিরের বাবা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
….বেশরম লজ্জা করেনা তোর?একেতো বিয়ের আগে এসব করে পরিবার মানসম্মান ডুবিয়েছিস। এখন আবার অসভ্যের মতো মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করছিস কে করেছে এসব? লজ্জা করেনা তোর?

আবির বেচারা বেকুব হয়ে গেল। বিনা অপরাধেই ধোলাইখেতে হলো। আবির গালে হাত দিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।
….মা তুমিতো শোন আমার ক,,,,

আবিরের কথা শেষ হওয়ার আগে ওর মা আরেক গালে থাপ্পড় মেরে দিয়ে বললো।
….ঠিকই টক করেছে ইউর বাবা। তোর ডেয়ার হাউ হলো, মেয়েটাকে এভাবে কুশন (কুয়েশ্চন) করার? এমনিতেই মেয়েটা কতো স্টেশনে (টেনশনে) আছে।

আবির এখানে পাত্তা না পেয়ে আদিত্যের কাছে গেল ওকে বললো।
…ভাই তুই তো অন্তত আমার কথা বিশ্বাস কর।

আদিত্য যদিও সব বুঝতে পারছে যে এসব নটাঙ্কি চলছে। তবুও বহমান নদীতে হাত ধোওয়ার মতো আদিত্যও আবিরের গালে হাত ছাফ করে নিল। তারপর বলে উঠলো।
….ছি ছি ছি তোর কাছ থেকে এটা আশা করিনি।

আবির এবার নূরের দিকে আশা ভরা চোখে তাকালো। তবে নূরও ওর আশায় পানি ঢেলে দিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। আবির সানার দিকে তাকালে সানাও ছি ছি করে উঠলো।

আবির কোথাও আশ্রয় না পেয়ে আবার তানির সামনে এসে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে তানিও ওর গালে একটা চড় মেরে দিল। আবির বেচারা তানির দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো সুরে বললো।
…..তুমি আবার কেন মারলে আমাকে? আমি কি তবলা নাকি,যে ফ্রীতে সবাই বাজিয়ে চলেছ? আরে ভাই মারার আগে বলেত দেও আমার দোষটা কোথাই? এখানে তো আমি নিজেই ভুক্তভোগী। এসব ঠিক না বলে দিলাম। এমন অন্যায় জাতি সহ্য করবে না।

তানি রাগ দেখিয়ে বললো।
…তো মারবো নাতো কি করবো? কাল যখন ফোন করেছিলাম, তখন মিথ্যে কেন বলিছিলে যে বাবা মা রাজি হয়নি বিয়েতে? তাহলে তো আর আমাকে এসব নাটক করতে হতো না।

নাটকের কথা শুনে সবাই আবার চমকে গেল। সবাই একসাথে একের পর এক বলে উঠলো।
…কিহহ্?

…কেয়া?

….হোয়াট?

…হ্যাঁঃ?

আবির খুশী হয়ে বললো।
…তারমানে এসব নাটক ছিল।

তানি কাচুমাচু হয়ে বললো।
…হ্যা, কাল যখন তুমি বললে যে, আঙ্কেল আন্টি বিয়েতে রাজি হয়নি। আমি অনেক চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম। তাই আমি ভাবলাম যে, প্রেগন্যান্ট হওয়ার নাটক করলে আঙ্কেল আন্টি নিশ্চয় বিয়েতে রাজি হয়ে যাবেন। তাই এসব করেছি।

তানির কথা শুনে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চায়ি করছে। কিছুক্ষণ পরে সবাই একসাথে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। হাসতে হাসতে সবার গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। তানি বেচারি পারছেনা লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে।

আবির দুঃখী ভাব ধরে ব্যাথিত, অভিমানী সুরে সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….দেখেছ সবাই আমি বলেছিলাম না আমি কিছু করিনি? কিন্তু তোমরা, তোমরা একজনও আমার কথা বিশ্বাস করলে না। আজ তোমরা আমার ছোট্ট কচি মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছ। আজ দেখে নিলাম কে আপন আর কে পর। তোমাদের সাথে কাট্টি, আর খেলমুনা হুহ্।
তারপর ওর মায়ের কাছে এসে বললো।
….মা, তুমিও? তুমিও তোমার লালকে চিন্তে পারলে না? এ দুঃখ আমি কোথায় রাখবো? আমার তো ব্যাংক একাউন্টও নেই যে সেখানে গিয়ে জমা রাখবো।

আদিত্য আবিরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….আবির, কাট দা ক্রাপ।

আবির সাথে সাথে স্বাভাবিক হয়ে বললো।
….ওকে ভাই,এজ ইউ সে।

আবিরের মা মুচকি হেসে তানির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
…. তুমি স্টেশন (টেনশন) নিও না। উই টুমরই তোমাদের হাউসে গোইং। তোমার আর আবিরের বিয়ের পেপসুডেন্ট (প্রপোজাল) নিয়ে।

আবিরের মায়ের কথা সব তানির মাথার উপর দিয়ে বাউন্সার গেছে। তাই ও বুঝতে পারছে না কেমন রিয়্যাকশন দিবে। সানা সেটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো।
….চাচি বলতে চাচ্ছে আমরা কালকে তোমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবো।

তানি লাজুক হেসে মাথা ঝাকালো। একটু পরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তানি চলে গেল।

চলবে……

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৪

★ চার দিন পর সকাল দশটা, আদিত্যরা সবাই ওদের সাভারের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে ওরা সবাই ওদের গ্রামের বাড়ি যাবে। আদিত্যর বাবা আর চাচা মিলে ডিসাইড করেছে যে, আবির আর তানির বিয়ে ওদের গ্রামের বাড়িতে হবে। তাই সবাই আজ রওনা দিবে। তানির পরবারও যাচ্ছে ওদের সাথে। সবাই খুবই এক্সাইটেড হয়ে আছে।

একটু পরে ওদের সামনে দুইটি হাইস এসে দাঁড়াল। প্রথম টিতে সিনিয়র সিটিজেনরা সবাই বসলো। আর দ্বিতীয় টিতে ইয়াং স্টাররা সবাই। ড্রাইভিং সিটে বসলো তাসির, আর ওর পাশের সিটে সানা। পরের সারিতে নিশি আর সায়েম। তারপরের সারিতে তানি আর আবির বসলো। এবং সবার পেছনে বসলো আদিত্য আর নূর।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। সব কাঁপলস রাই যার যার পার্টনারদের সাথে রোমান্টিক মোমেন্ট তৈরী করতে ব্যাস্ত। তাসির গাড়ি চালাচ্ছে, তাই শুধু আই কন্টাক্ট আর হাত ধরা পর্যন্তই চলছে ওর রোমাঞ্চ। নিশি আর সায়েম নানা রকম রোমান্টিক পোজে সেলফি তুলছে। আবির আর তানিও ওদের খুনশুটিতে ব্যাস্ত।

তবে আদিত্য আদিত্যই, যাকে বলে প্রো রোমান্টিক। ওরতো নূর পাশে থাকলে দুনিয়া দারির কোনো হুশই থাকেনা। শুধু নূরের মাঝেই ডুবে থাকে। যেমন এখনো, নূর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। বাতাসে ওর চুলগুলো উড়ছে। আর আদিত্য সেই চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে। আর হাত দিয়ে নূরের শাড়ির ফাঁকে খোলা কোমড়ে স্লাইড করছে। নূর কেঁপে উঠে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো।
…..ক কি করছ? সবাই আছে এখানে, ওরা দেখলে কি ভাববে?

আদিত্য নূরের চুল সরিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো।
….কি ভাববে? যা ভাববে ভাবুক। আমি আমার বউকে আদর করছি অন্য কাউকে না। পেছনে বসেছি তো এইজন্যই, যাতে ইচ্ছেমত আমার বউকে আদর করতে পারি। বিয়ের পরে এটা আমাদের প্রথম ট্রিপ। আই ওয়ান্ট দিস মোমেন্ট ভেরি স্পেশাল উইথ ইউ প্রাণপাখী।

নূর আর কি বলবে, ও জানে আদিত্য ওর কথা শুনবে না। তাই চুপ করে থেকে লজ্জায় লাল হতে লাগলো।

একটু পরে সায়েম বলে উঠলো।
….ব্রোস, জার্নি কেমন যেন বোরিং হয়ে যাচ্ছে। লেটস প্লে মিউজিক,এন্ড হ্যাভ সাম ফান গাইস।

আবির বলে উঠলো।
…আমাদের ভেতর এতবড় শিল্পী থাকতে, মিউজিক প্লেয়ার কেন লাগবে? কাম অন আদি ভাই, একটা ধুমধড়ক্কা, তাড়াকতা,ভাড়াকতা গান শুরু করে দে।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে তবে তোদেরও আমার সাথে গাইতে হবে। রাজি?

সব ছেলেরা একসাথে বলে উঠলো।
….সুপার রাজি।

আদিত্য মুচকি হেসে গাওয়া শুরু করলো।
♬ ♬ আরে টিকা তুলির মোড়ে একটা
♬ অভিসার সিনেমা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে

(সব ছেলেরা একসাথে গেয়ে উঠলো)
♬ আরে টিকা তুলির মোড়ে
♬ একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে

(আদিত্য এক হাত উপরে তুলে গাইলো)
♬ ও……ওরে ভাই
♬ একদিন গেলাম সিনেমা দেখতে
♬ আর রিকশা থেকে নেমে দেখি হলে একটা সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
♬ হঠাৎ দেখি সেই মেয়েটির চোখে আমার চোখ পড়েছে
(সব ছেলেরা একসাথে)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে

(আদিত্য গাইলো)
♬ ও……ওরে ভাই
♬ হাউজফুল কোনো টিকেট নাই ব্লাকে দশ টাকার টিকেট বিশ টাকায় কিনে নিয়ে কোনরকমে ভেতরে ঢুকে বসলাম ।হঠাৎ দেখি পাশের চেয়ারে সেই মেয়েটি আমার পাশেই বসেছে।
(সব ছেলেরা একসাথে হাতে তালি দিতে দিতে গাইলো)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে।
♬ আরে টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে

(আদিত্য)
♬ ও…..ওরে ভাই
♬ সিনেমা শুরু হয়ে গেল। রাজ্জাক সাবানা যখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল, তখন আমার বুকের ভেতর ধুপধাপ শুরু হল। আমি যদি প্রেম করতে পারতাম , তখন দেখি পাশের সিটে বসা মেয়েটি আমাকে চিমটি মেরেছে
(সব ছেলেরা একসাথে সিটে উঠে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ আরে টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ ♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
(আদিত্য)
♬ ও….ওরে ভাই
♬ আমি মেয়েটিকে বললাম তোমার নাম কি। মেয়েটি বলল মালতী বিবি আহা গো মালতী বিবি বলে সেই মেয়েটি এক ফলা হাসি দিয়েছে
(সব ছেলেরা)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
(আদিত্য)
♬ ও…..ওরে ভাই
♬ সিনেমা শেষ হওয়ার পথে, রাজ্জাক ভিলেন ধুপধাপ মারপিট আবার সাবানা দৌড়ে এসে রাজ্জাক কে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি আমার চিরদিনের সাথী” তখন দেখি পাশের সিটে বসা সেই মেয়েটি আমাকে জড়িয়ে ধরেছে
(সব ছেলেরা)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
(আদিত্য)
♬ ও……ওরে ভাই
♬ সিনেমা শেষ হয়ে গেল, বাইরে আসলাম রিক্সা নিলাম। হঠাৎ দেখি সেই মেয়েটি দৌড়ে এসে আমার রিক্সাই চেপে বসেছে
(সব ছেলেরা)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
(আদিত্য)
♬ ও……ওরে ভাই
♬ মেয়েটি বললো আমাকে ডার্লিং খুব ক্ষুধা পেয়েছে। গেলাম মোস্তফা হোটেলে, খুব পোলাও কোর্মা খাইলাম। হঠাৎ দেখি বয় একটা পাঁচশ টাকার বিল এনেছে। বিলটা দেখে তখন আমার মাথা ঘুরেছে
(সব ছেলেরা)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
(আদিত্য)
♬ ও………ওরে ভাই
♬ খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে গেল। মেয়েটি বললো ডার্লিং আজকের মতো চলে যাই বলে চলে গেল। আমি বাড়ি এসে রিক্সা থেকে নেমে, রিক্সা ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি মেয়েটি আমার পকেট মেরে চলে গিয়েছে
(এবার সবাই একসাথে)
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে
♬ আরে টিকা তুলির মোড়ে একটা হল রয়েছে
♬ হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে

এভাবে আনন্দ ফুর্তি করতে করতে ওরা যাত্রা করতে লাগলো। দু-ঘন্টা পরে ওরা যমুনা ব্রিজের ওপর চলে এলো। আদিত্য নূরকে বাইরে দেখিয়ে বললো।
….প্রাণপাখী, দেখ এটা আমাদের যমুনা নদীর ব্রিজ।

আদিত্যের কথায় নূর উৎসাহ নিয়ে বাইরে তাকাল। কতো সুন্দর দৃশ্য, ব্রিজের নিচে বহমান পানি, পানির উপরে নৌকা জাহাজ চলছে। নদীর ভেতরে জায়গায় জায়গায় চড় পরে গেছে। সেই চড়ের ওপর আবার অনেকে ঘর বাড়ি করে রয়েছে। তাদের গরু ছাগল গুলো চড়ে বেড়াচ্ছে। নূর মুগ্ধ হয়ে সবকিছু দেখছে। এইপ্রথম ও ঢাকার বাইরে কোথাও যাচ্ছে। সবকিছু ওর কাছে অনেক ভালো লাগছে।

আর আদিত্য মুগ্ধ হয়ে ওর প্রাণপাখীর মুগ্ধতা দেখছে। মেয়েটা অল্পতেই কতো খুশী হয়ে যায়। ওকে দুনিয়ার আরো সৌন্দর্য দেখালে নাজানি কতো খুশি হবে। কথাটা ভেবে আদিত্য মনে মনে বললো , আমি আমার প্রাণপাখীকে সব সৌন্দর্যই দেখাবো।

এভাবে আরো আধাঘন্টা পরে ওরা সিরাজগঞ্জ জেলায় পৌঁছে, গ্রামের রাস্তায় যেতে লাগলো। গাড়ি গ্রামের চিকন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার দুই ধারে শুধু সবুজের সমারোহ। সবুজ গাছগাছালি ধান খেত, বাতাসে ধানগাছ গুলো ঢেউ খেলাচ্ছে। সবকিছু অসম্ভব সুন্দর লাগছে নূরের কাছে।

একটু পরে ওরা বিশাল বড়ো একটা বাড়ির সামনে এসে থামলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….প্রাণপাখী নাম আমরা এসে গেছি।

নূর মুচকি হেসে আদিত্যের হাত ধরে নামলো। নিচে নেমে দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে তানি আর নূর অবাক হয়ে গেল। ওদের সামনে অনেক পুরানো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে পুরান দিনের সত্যিকারের কোনো রাজপ্রাসাদ। নূর আদিত্যের দিকে হালকা ঝুকে আস্তে করে বললো।
….এটা কি তোমাদের বাড়ি? এটাত অনেক পুরান একটা জমিদার বাড়ি মনে হচ্ছে।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ প্রাণপাখী , এটা আমাদেরই বাড়ি। এটা আমাদের জমিদার বাড়ি।

তানি দুই গালে হাত দিয়ে বিস্ময় ভরা কন্ঠে বললো।
…..ওয়াও, তারমানে তোমরা জমিদার বংশ?

আবির ভাব নিয়ে বললো।
….আবার জিগায়, তানি বেবি তুমি এখনো চিনতেই পারোনি যে তোমার হবুবর কি চিজ। উই আর রয়্যালস বুজেছ।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….এসব জমিদার আমাদের পূর্ব পুরষেরা ছিল। এখন আর এসব নেই। তবে আমাদের এই জমিদার বাড়টা আছে। আমরা মাঝেমধ্যে এখানে আসি বেড়াতে। এটার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক রাখা আছে। আর বাবা মাঝেমধ্যেই এটার সংস্করণ করান।

নূর মুচকি হেসে আস্তে করে বললো।
…..তারমানে তুমি সত্যিকারের রাজকুমার? আমার রাজকুমার।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ বলতে পারো। সো ওয়েলকাম টু মাই কিংডম রাণী সাহেবা।

কথাটা বলেই আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে ভেতরে এগুলো। নূর বেচারি লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আবির তানির দিকে তাকিয়ে দেখলো, তানি কেমন মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আবির ঠোঁট কামড়ে হাসলো তানির অভিমান দেখে। তারপর হঠাৎ আবির তানিকে কোলে তুলে নিয়ে বললো।
….আমিও পারি,আমার রাণিকে কোলে নিতে।

তানি একটা লাজুক হাসি দিল।
আবিরের দেখাদেখি সায়েমও নিশিকে কোলে তুলে নিল। এখন শুধু তাসির আর সানা দাঁড়িয়ে আছে। তাসিরের কোনো এ্যাকশন না দেখে সানা বলে উঠলো।
….কি হলো তোমাকে কি ইনভিটেশন দিতে হবে নাকি আমাকে কোলে নেওয়ার জন্য?

তাসির বলে উঠলো।
….আমিই?

….হ্যাঁ তুমি নাতো কি,ওই পাশের বাড়ির কদর আলী? হায় আমার কপালেই এমন ভোলারাম জুটতে হলো। এখন চেয়ে চেয়ে দেখছ কি? চলো কোলে নেও আমাকে।

তাসির বেচারা আর উপায় না পেয়ে সানাকে কোলে তুলে নিয়ে ভেতরে গেল।
—————-

পরদিন সকাল দশটা, আজকে আবির আর তানির হলুদ এবং মেয়েদীর অনুষ্ঠান। পুরো বাড়ি থেকে শুরু রাস্তা পর্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সাজানো হয়েছে। বাড়ির উঠানেই বড় করে স্টেজ সাজানো হয়েছে। হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য মেহমানরাও আসা শুরু হয়ে গেছে। তানির আত্মীয় স্বজনরাও এসেছে।

একটু পরে আবিরকে নিয়ে এসে স্টেজে বসানো হলো। তারপর নূর আর সানা মিলে তানিকে নিয়ে এলো। তানি সহ সব মেয়েরা কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ী, বাঙালী স্টাইলে পরেছে। সব ছেলেরা তাদের নিজ নিজ প্রিয়তমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আদিত্য সবসময়ের মতো নূরের মায়ায় হারিয়ে গেছে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। আর নূর সেটা দেখে লাজুক হাসছে। আজ ওদের নিজেদের হলুদের কথা মনে পড়ে গেল।

তানিকে নিয়ে এস আবিরের পাশে বসানো হলো। একটু পরে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল।

আদিত্যের বাবা তার চাচাীকে নিয়ে এলো ওখানে। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….সবার প্রথমে হলুদ চাচী আম্মা লাগাবে।

আদিত্য চাচী আম্মার কাছে এগিয়ে এসে বললো।
…আসসালামু আলাইকুম দাদী, কেমন আছ তুমি?

দাদী বলে উঠলো।
…..আমি ভালো আছি, তুই ক্যাবা আছু গ্যাদা? (সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা)

দাদীর কথায় মেয়েরা ফিক করে হেসে দিল। আদিত্য জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….আমিও ভালো আছি দাদি। বাইদা ওয়ে দাদী তোমার আদরের গ্যাদার সাথে দেখা করবে না? ওইযে দেখ কি সুন্দর সেজে গুঁজে বসে আছে তোমার জন্য। যাও যাও দেখা করে আস।

আবির বেচারার এখন ইচ্ছে করছে একছুটে এখান থেকে পলাতে। সালার আদি নিজে বেঁচে গিয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে দিল। এখন এই বুড়ী এসে আমাকে পচাবে।
একটু পরে দাদী গিয়ে আবিরের পাশে বসলো। তারপর আবিরের গাল টেনে দিয়ে বললো।
….ক্যাবা আছুরে গ্যাদা? বাবা কত্তহানি বড় হইয়া গেছু। আবার দেহি বিয়াও হরত্যাছু।

তানি এদিকে অনেক কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছে। আবির বেচারা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….জ্বি জ্বি দাদী,ভালোই আছি। আপনি হলুদ লাগিয়ে যা না। না মানে আপনি এখানে এতো কোলাহলে অসুস্থ হয়ে যাবেন। তাই বলছিলাম আরকি।

….হ হ ঠিকই কছু। আমি আমার এত ভীড়ে ব্যারামে পইরা যামু।
তারপর দাদী হলুদ লাগিয়ে চলে গেল।

দাদী চলে যেতেই তানি হেসে উঠে বললো। ওয়াও গ্যাদা, আই লাইক দা নেম। আলে লে লে গ্যাদা, কি অবস্থা গ্যাদা?

আবির গাল ফুলিয়ে বললো।
….তো এতে এত হাসার কি আছে? এটা এখানকার আঞ্চলিক ভাষা। বড়রা ছোট ছেলে মেয়েদের আদর করে গ্যাদা গেদি বলে ডাকে।

….আমিও তোমাকে এখন থেকে গ্যাদা বলেই ডাকবো। আমার কিউট গ্যাদা।হি হি

তারপর সবাই এসে একে ওদের হলুদ দিতে লাগলো।
———–

আদিত্য একজায়গায় দাঁড়িয়ে সায়েম আর তাসিরের কথা বলছিল। হঠাৎ ওখানে তানির কিছু কাজিন বোনেরা এসে আদিত্যকে ঘিরে ধরলো। আদিত্যর গা ঘেঁষে হেসে হেসে কথা বলতে লাগলো। সায়েম সেটা দেখে তাসিরের দিকে ঝুকে বললো।
….ব্রো আমাদের মনে হয় এখানে কোনো বেল নেই। চল আমরা কেটে পরি।

তাসিরও মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে দুজন ওখান থেকে চলে গেল। এদিকে আদিত্য পরে গেছে মহামুশকিলে। এই মেয়েগুলোর জন্য চরম বিরক্ত বোধ করছে ও। কিন্তু তানির কাজিন দেখে কিছু বলতেও পারছে না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের সাথে জোরপূর্বক হেসে কথা বলতে হচ্ছে। নাহলে আবার তানির খারাপ লাগবে এটা ভেবে।

নূর স্টেজে তানির পাশে বসে কথা বলছিল। হঠাৎ ওর নজর গেল আদিত্যের উপর। আদিত্যকে এভাবে মেয়েদের সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে নূরের মেজাজ প্রচন্ড গরম হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখুনি যেয়ে সবগুলোর চুল ছিড়ে ফেলতে। কতবড় লুচু মেয়ে সবগুলো, লজ্জা শরম যেন হোলসেল এ বেচে এসেছে। অন্যের বরের সাথে কিভাবে গায়ে পড়ে কথা বলছে? আর ওদের কি বলবো আমার টাই বা কম কিসে? দেখতো কত সুন্দর খি খি করে হাসছে? যেন সারাজীবনের হাসির স্টক আজই শেষ করবে। এমনিতেতো আমার দিকে কেউ তাকালেও তার মাথায় রক্ত উঠে যায়। আর নিজে কি সুন্দর অন্য মেয়েদের সাথে হাহা হিহি করছে। যেন আমি এখানে নেই। এসব কথা ভেবে নূরের রাগ আরও বেড়ে যাচ্ছে। নূর রাগের মাথায় হাত দিয়ে নিচে একটা বাড়ি মারলো। তানির হাত ওখানে থাকায় বারিটা তানির হাতে লাগলো। তানি হাতের ব্যাথায় ককিয়ে উঠে বললো।
…..আহহ্ কি করছিস আমাকে কেন মারছিস? কি হয়েছে তোর?

নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো।
….কিছু না সরি।

নূরের নজর বরাবর তানিও সেদিকে তাকালো। এবং তাকিয়েই বুঝলো নূরের রাগের কারণ। তানি দুষ্টু হেসে বললো।
….ওওও তো এই কথা। ম্যাডাম জেলাসি মুডে আছে। না না আদিত্য ভাইয়া কাজটা একদম ঠিক করছে না। নিজের বউ থাকতে অন্য মেয়েদের সাথে এইভাবে হাসাহাসি করাটা একদম ঠিক না। তোর কিছু একটা করা দরকার।

….আ আমি কি করবো?

…কি করবি মানে? জিজু যেমন মেয়েদের সাথে হাসাহাসি করে কথা বলছে, তুইও তেমন হ্যান্ডসাম ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বল।

…আমিই? না না কি বলছিস তুই?

….ঠিক আছে তাহলে এখানেই বসে বসে জিজুর রাসলীলা দেখ। আমার কি , আমি তো তোর ভালোর জন্যই বলছিলাম। জিজু পারলে তুই কেন পারবি না। তুইও দেখিয়ে দে,মেয়েরা কোনো কিছুতে কম না।

নূরও এবার ভাবলো তানি ঠিকই বলেছে। ও পারলে আমি কেন পারবো না? আমিও দেখিয়ে দেব ওকে হুহ্।
কথাটা ভেবে নূর উঠে দাঁড়িয়ে সামনে হেলেদুলে হাটতে লাগলো। তানি সেটা দেখে হাসতে লাগলো। মনে মনে ভাবছে আজকে হেব্বি মজা হবে। যখন জিজু নূরকে অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে দেখবে।

নূর গ্রামের কিছু হ্যান্ডসাম ছেলেদের সামনে দিয়ে হেলেদুলে হাটতে লাগলো। ছেলেগুলো হা হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর মেয়ে ওরা জীবনে কখনো দেখিনি। ওদের মাঝে একজন চেয়ারম্যান এর ছেলে। সেই ছেলেটা নূরের কাছে এগিয়ে এসে বললো।
…..হ্যালো মিস, আপনাকে তো চিনলাম না? আপনি কোন পক্ষের? বর না কনে?

নূরের এই ছেলেটার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছাই নেই। তবুও আদিত্যকে দেখানোর জন্য জোরপূর্বক হেসে বললো।
….আমি দুই পক্ষেরই।

ছেলেটা হাসিমুখে বললো।
….ও আই সি, আপনি বুঝি ঢাকা থেকে এসেছেন? তা নাম কি আপনার?

….জ্বি নূর।

….ওয়াও, অনেক সুন্দর নাম। বাইদা ওয়ে আপনি কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর। আপনার মতো সুন্দর মেয়ে আমি কখনো দেখিনি।

নূর এবার চরম বিরক্ত হচ্ছে ছেলেটার উপর। তবুও জোরপূর্বক হেসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
…..ধন্যবাদ।

এদিকে আদিত্য চরম বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখান যেতে নিলেই ওরা আটকে দিচ্ছে তাই যেতেও পারছে না। এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ ওর নজর গেল নূরের উপর। আর তাকাতেই ওর ভ্রু কুঁচকে এলো। নূরকে একটা ছেলের সাথে এভাবে হেসে কথা বলতে দেখে, আদিত্যের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। চোয়াল শক্ত
হয়ে কপালের রগ ফুলে উঠলো।

আদিত্য আর এক মুহূর্তও ওখানে না দাঁড়িয়ে নূরের কাছে যেতে লাগলো। মেয়েরা এবার আটকাতে নিলে আদিত্য এমন অগ্নি চোখে ওদের দিকে তাকাল যে মেয়েরা ভয়ে ওখান থেকে ছু মন্তর হয়ে গেল।

আদিত্য নূরের কাছে এগিয়ে এসে রাগে কটমট করে নূরের হাত চেপে ধরে ওখান থেকে টেনে নিয়ে গেল। আচমকা এমন হওয়ায় ছেলেটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। কি হলো ও কিছুই বুঝতে পারলো না।

আদিত্য নূরকে রুমে নিয়ে এসে বেডের ওপর ফেলে দিল। রাগে ওর শরীর এখনো কাপছে। আদিত্যের এমন রাগ দেখে নূর একটু ভয় পেয়ে গেল। আদিত্য নূরের উপরে উঠে , নূরের দুই হাত বেডের সাথে চেপে ধরে অগ্নি চোখে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
…..হাউ ডেয়ার ইউ নূর? হাউ ডেয়ার ইউ? কি করছিলে তুমি ওখানে ওই ছেলেটার সাথে হ্যাঁ? যেখানে কেউ তোমার দিকে তাকালেও আমি তার চোখ তুলে নেই। সেখানে তোমার সাহস কি করে হলো, অন্য একটা ছেলের সাথে ওভাবে হেসে হেসে কথা বলার? বলো?

নূর প্রথমে ভয় পেলেও তখনকার কথা মনে পরে ওর হঠাৎ রাগ উঠে গেল। নূর আদিত্যকে নিজের উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিল।তারপর নিজে আদিত্যর পেটের ওপর উঠে বসলো। হঠাৎ নূরের এমন রিয়্যাকশনে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। নূর আদিত্যের পাঞ্জাবির কলার ধরে রাগী কন্ঠে বললো।
…..আচ্ছা? তো তুমি কি করছিলে? তুমি যা খুশি তাই করবে আর আমি করলেই দোষ তাইনা?

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..মানে? আমি আবার কি করলাম?

….আহা হা হা, জনাবের ভাব তো দেখ? যেন কিছুই বোঝে না। তখন ওই মেয়েদের সাথে গা ঘেঁষে হাহা হিহি কল করছিল শুনি? তখন মনে হয়নি যে আমার কেমন লাগবে হ্যাঁ?
নূর আদিত্যর পাঞ্জাবির বোতাম দেখিয়ে বললো।
….আর এসব কি হ্যাঁ? এভাবে পাঞ্জাবির বুক খোলা রেখে সবাইকে নিজের বডি দেখাতে চাও বুঝি? শোন এটা শুধু আমার, আমি ছাড়া আর কেউ দেখবে না এটা বুজেছ?

আদিত্য আসল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ঠোঁট কামড়ে হেসে দিল।তারপর নূরের পিঠে হাত দিয়ে নূরকে নিজের মুখোমুখি এনে বললো।
….তো এইজন্য ম্যাডাম রেগে আছে? মনে হচ্ছে আমার বউটা জেলেস হয়ে গেছে।

নূর বলে উঠলো।
….মনে হওয়ার কি আছে। অফকোর্স আমি জেলাস। আমি ছাড়া তোমার সাথে অন্য কেউ কেন হাসাহাসি করবে কথা বলবে হ্যাঁ?

…..আরে পাগলি আমি কি ইচ্ছে করে ওদের সাথে কথা বলেছি নাকি। ওরা সবাই তানির কাজিন। আমি ওদের সাথে রুড বিহেভ করলে, তানি হয়তো মন খারাপ করতে পারে তাই আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের সাথে কথা বলছিলাম।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিহহ্ ওরা তানির কাজিন? কিন্তু তানিতো আমাকে কিছু বললো না। তারমানে ওই চুন্নিটা আমার সাথে মজা নিয়েছে। আমাকে ভুলভাল বুঝিয়ে তোমাকে দেখানোর জন্য অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে বলেছে। দাঁড়াও আমি এখুনি যেয়ে দেখছি ওঁকে।
কথাটা বলে নূর সরে আসতে নিলে আদিত্য আটকে দেয়। নূরকে ঘুরিয়ে নিচে শুইয়ে আদিত্য নূরের উপর ঝুকে বললো।
…..এখন কোথাও যাওয়া চলবে না প্রাণপাখী। যে কারণেই হোক না কেন, অন্য ছেলের সাথে কথা বলে অন্যায় তো তুমি করেছ। তাই শাস্তি এখন তোমাকে পেতেই হবে। ভয়াবহ শাস্তি।

নূর লাজুক হেসে আদিত্যের বুকে মুখ গুঁজল।

চলবে……