ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-৬৭+৬৮

0
2181

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৭

★ ♬ ♬ নাগিন দিন গিন গিন গিন গিন গিন
♬ ♬ গিন গিন গিন গিন গিন গিন মার গায়
তানি সারা রুমে ঘুরে ঘুরে নাচছে আর গান গাইছে।
বেচারা আবিরের অবস্থা কেরাসিন। কোথায় সে আশায় ছিল কাল বিয়ে করবে, বাসর করবে। তানা এখন এই পাগলকে সামলাতে হচ্ছে। নাজানি আমার বাসরের স্বপ্নের কি হবে?

আবির তানিকে ধরে বললো।
….শোন না তানি বেবি, এমন করেনা প্লিজ? দেখ কাল না আমাদের বিয়ে? তুমি বউ সাজবে আমি বর সাজবো। তারপর আমাদের বিয়ে হবে এন্ড ফাইনালি আমাদের বাসর হবে। তাই এখন লক্ষী মেয়ের মতো শুয়ে পড় প্লিজ।

তানি ঢুলতে ঢুলতে বাচ্চা মেয়েদের মতো ঠোটে আঙ্গুল রেখে বলে উঠলো।
….সত্যিই কাল আমাদের বিয়ে হবে? কিন্তু বিয়ে কেন করে?

আবির বেচারা এখন এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবে? ও ওর মতো বলে উঠলো।
….বিয়ে করে কারণ বিয়ে ছাড়া তো আর বাসর করা যায়না তাইনা?

….তাই? আচ্ছা বাসর কিভাবে করে? আর বাসরে কি করতে হয়?

আবির মনে মনে বলছে, এখন যদি হুঁশে থাকতে তাহলে প্রাক্টিক্যালি বুঝিয়ে দিতাম বাসর কিভাবে করে।
আবিরের ভাবনার মাঝে তানি আবার বলে উঠলো।
….কি হলো বলো,কি করে বাসরে?

আবির জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….বাসর ঘরে বিড়াল মারতে হয়। বাচ্ আর কিছুই না।

তানি চমকে উঠে বললো।
….কিহহ্ তুমি বাসর ঘরে বিড়াল মারবে? এই কথাটা বলতে তোমার লজ্জা করলো না? তোমার কি দয়ামায়া নেই? তুমি ওই কিউট কিউট বিড়াল মারবে, একবারও তোমার হাত কাঁপবে না? তুমি একটা খুনী দারিন্দা। যাও তোমার সাথে বিয়েও করবো না বাসরও করবো না। কাট্টি তোমার সাথে। হুহ্ খুনি একটা।
কথাটা বলে তানি আবিরকে ছেড়ে বেডের ওপর গাল ফুলিয়ে বসে রইল।

তানির এমন রিয়্যাকশন দেখে আবির বেচারার কেঁদে দেওয়ার জোগাড়। ও কি বললো আর তানি কি ভাবলো। আবার নাকি বিয়েও করবে না, বাসরও করবে না। আয় হায় তাহলে আমার কি হবে?
এসব ভেবে আবির তানির কাছে যেয়ে বললো।
…আরে আরে বেবি তুমি ভুল বুজছ। এটাতো একটা কথার কথা। সত্যি সত্যিই কি আর বিড়াল মারবো নাকি। আমিতো বিড়াল দের অনেক ভালবাসি।

তানি এবার খুশী হয়ে বললো।
….সত্যিই? তাহলে ঠিক আছে। এখন বলো বাসর আরও কি কি হয়?

আবির এবার আহ্লাদী হয়ে বললো।
….বাসর ঘরে না স্বামী তার স্ত্রীকে অনেক আদর করে।

….তাই? কিভাবে আদর করে?

আবির পরে গেছে এক বিপাকে।এখন একে কিভাবে বুঝাবে যে আদর কিভাবে করে? আবির তানির কানে কানে কিছু বললো। তানি কথাটা শোনার সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে বললো।
….কিহ্ তুমি আমার সাথে এসব করবে? ছি ছি ছি এতো খারাপ তুমি? তুমি আমার ইজ্জত ছিনিয়ে নিবে? লজ্জা করে না তোমার? আমি এখুনি মা বাবাকে যেয়ে বলবো তুমি কতো খারাপ।
কথাটা বলে তানি জোরে জোরে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো।
….মা বাবা কোথাই তোমরা?বাঁচাও আমাকে। এই বদমাইশটা আমার ইজ্জত ছিনিয়ে নিতে চায়। কে কোথায় আছ বাচাও আমাকে।

আবিরের ইচ্ছে করছে কচু গাছের সাথে গলায় দড়ি দিতে। এইদিনও দেখার ছিল আমার? আবির দৌড়ে গিয়ে তানির মুখ চেপে ধরে আবার বেডের ওপর এনে বসালো। তানি শুধু ছাড়া পাওয়ার জন্য হাত পা ছোটাছুটি করছে। আবির বলে উঠলো।
….চুপ করো মেরি মা। মান ইজ্জতের ফালুদা করে দিবে নাকি? আমি তোমার সাথে কিছুই করবো না। তোমাকে বাসর ঘরে সুন্দর করে ঘুম মাসি পিসি গান গাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেব।হয়েছে এখন?

তানি মাথা ঝাকিয়ে বুঝাল ঠিক আছে। আবির একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তানির মুখ ছেড়ে দিল। তারপর তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….এখন তো খুশী তাইনা?তাহলে এখম গুড গার্লের মতো ঘুমিয়ে পড়? নাহলে কাল তোমাকে বউয়ের সাজে একদম পঁচা লাগবে।

তানি বাচ্চাদের মতো বললো।
…তাই? ঠিক আছে, ঠিক আছে আমি এখুনি ঘুমিয়ে পরছি।
কথাটা বলে তানি ঠাস করে শুয়ে পড়লো।
আবির অসহায় করুন চোখে উপরের দিকে তাকালো।
————–

তাসির সানাকে অনেক কষ্টে টেনেটুনে রুমে নিয়ে এসেছে। এইটুকুতেই বেচারার অবস্থা কাহিল। রুমে এসেও সানা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। তাসিরের মনে হচ্ছে ও কোনো বড়ো বাচ্চাকে সামলাচ্ছে। তাসির সানার হাত ধরে বেডে এনে বসিয়ে দিয়ে বললো।
…সানা অনেক হয়েছে এবার চুপচাপ শুয়ে পড়।

সানা তাসিরের কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে। কেমন দুষ্টু ভঙ্গিতে তাসিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সানার চাহনি তাসিরের কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না। তাসির গলা খাঁকারি দিয়ে শার্টের কলার টেনেটুনে ঠিক করতে লাগলো।
সানা দুষ্টু হেসে তাসিরের গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী কন্ঠে বললো।
…..শোন না, আমারও না ভাবির মতো তোমাকে কিচ্ছি দিতে ইচ্ছে করছে। একটা কিচ্ছি দেই?

সানার কথায় তাসিরের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। গলা শুকিয়ে আসছে বেচারার। তাসির ঢোক গিলে বললো।
….ক কি বলছ এসব? দেখ তোমার এখন হুঁশ নেই। কি বলছ তুমি নিজেও জানোনা। এখন এসব ঠিক না। শুয়ে পড়ো এখন।

সানা একটু রাগ দেখিয়ে বললো।
……কেন? কেন ঠিক না? এই তুমি সবসময় এমন করো কেন বলতো? এক মিনিট, তুমি ওই কাটাপ্পার মতো আবার গে নাতো?

সানার কথা শুনে তাসিরের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম। তাসিরের কাশি উঠে গেল। বেচারা কোনরকমে কাশি থামিয়ে বললো।
….ওয়াট? কি বলছ এসব? পাগল হয়ে গেছ? এমন কিছুই না।

….ঠিক আছে তাহলে প্রুভ করো সেটা।

…মানে?

….মানে আই ওয়ান্ট প্রুফ রাইট নাও। কাম অন প্রুফ ইট, প্রুফ ইট।
কথাটা বলে সানা ঠোঁট চোখা করে তাসিরের দিকে এগুতে লাগলো।

তাসির ভয়ে পেছন দিকে হেলে যেতে লাগলো। বেচারার এখন ইজ্জত বাঁচানো দায় হয়ে গেছে। তাসির সানা ছেড়ে সরে এসে বললো।
…..সানা কি করছ এসব? দেখ তোমার হুঁশ নেই, তুমি শুয়ে পরো আমি যাই।

কথাটা বলে তাসির তড়িঘড়ি বেড়িয়ে যেতে লাগলো। দরজা পর্যন্ত আসতেই সানা দৌড়ে এসে তাসিরের সামনে এসে দরজা আটকে দিল। তারপর আবেদনময়ী ভঙ্গিতে তাসিরের এগিয়ে আসছে, আর তাসির বেচারা ভয়ে ভয়ে পেছাচ্ছে। সানা এগিয়ে আসতে আসতে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ ও শ্যামরে তোমার সনে
♬ ♬ শ্যামরে তোমার সনে
♬ ♬ একেলা পাইয়াছি রে শ্যাম
♬ ♬ এই নিঠুর বনে
♬ ♬ আইজ পাশা খেলবো রে শ্যাম
(তাসির পেছাতে পেছাতে খাটের সাথে ঠেকে বেডের ওপর চিত হয়ে পরে গেল। সানা তাসিরের ওপর শুয়ে পড়লো।তর্জনী আঙুল দিয়ে তাসিরের কপাল থেকে নাকের ওপর দিয়ে নিচ দিকে স্লাইড করে গাইলো)
♬ ♬ একেলা পাইয়াছি হেতা
♬ ♬ পালাইয়া যাবে কোথা
♬ ♬ চৌদিকে ঘিরিয়ারে রাখবো
♬ ♬ সব সখি সনে
♬ ♬ আইজ পাশা খেলবোরে শ্যাম
(তাসির বেচারা নিজের ইজ্জত বাচাতে সানাকে নিজের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে যেতে নিলেই সানা তাসিরের হাত ধরে আটকে দিল। তারপর টি-টেবিলের ওপর থাকা গ্লাস থেকে একটু পানি নিয়ে তাসিরের গায়ে ছিটিয়ে দিয়ে গাইলো)
♬ ♬ আতর গোলাপ চন্দন
♬ ♬ মারো বন্ধের গায়
♬ ♬ ছিটাইয়া দাও ছোঁয়া চন্দন
♬ ♬ ঐ রাঙা চরনে
♬ ♬ আইজ পাশা খেলবোরে শ্যাম
(সানা তাসিরকে সোফায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।তারপর নিজে তাসিরের কোলের উপরে বসে গলা জড়িয়ে ধরে গাইলো)
♬ ♬ দীনহীন আর যাবে কোথায়
♬ ♬ বন্ধের চরন বিহনে
♬ ♬ রাঙ্গা চরন মাথায় নিয়া দীনহীন কান্দে
♬ ♬ আইজ পাশা খেলবো রে শ্যাম

♬ ♬ ও শ্যামরে তোমার সনে
♬ ♬ একেলা পাইয়াছিরে শ্যাম
♬ ♬ এই নিঠুর বনে
♬ ♬ আইজ পাশা খেলবোরে শ্যাম

সানা ঠোঁট চোখা করে তাসিরের দিকে এগুতে লাগলো। তাসির ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল। আজ বুঝি আর নিজের ইজ্জত বাচাতে পারলো না ও। সানা হঠাৎ বেহুশ হয়ে তাসিরের বুকে ঠাস করে পরে গেল। তাসির চোখ খুলে দেখলো সানা ঘুমিয়ে পড়েছে। তাসির যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। আজতো বাল বাল বাচ গায়ি।তাসির সানাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। তারপর তাসির বেড়িয়ে গেল।
———-

নূর কখন থেকে আদিত্যের পেটের ওপর উপর হয়ে শুয়ে থেকে দুই পা উপর দিকে দোলাচ্ছে। আর বাচ্চাদের মতো ফেস করে আদিত্যের ঠোঁট নিয়ে টানাটানি করছে। কখনো ঠোঁট রাবারের মতো দুই দিকে টানছে, আবার কখনো ঠোঁটের দুইদিকে চাপ দিয়ে ঠোঁট চোখা করে ফেলছে। আদিত্য বেচারা চেয়েও কিছু করতে পারছে না। নূর ওকে উঠতেই দিচ্ছে না। নূরের এসব কান্ডে আদিত্য হাসবে না রাগ করবে বুঝতে পারছে না। তবে যাইহোক না কেন নূরকে এভাবে প্রচুর কিউট লাগছে আদিত্যের কাছে।আদিত্য বলে উঠলো।
…..কি করছ প্রাণপাখী? আমার ঠোট দুটো কি রাবার নাকি যে এভাবে টানছ?

নূর বাচ্চাদের মতো করে বললো।
….উহুম রাবার না,তোমার ঠোঁট হলো চকলেট। অনেক মজা, ইচ্ছে করে কামড়ে খেয়ে ফেলি।

নূরের কথা শুনে আদিত্য ঠোঁট কামড়ে হাসলো। যে মেয়েকে অন্য সময় আদর করতে গেলে লজ্জায় কুকরে যায়। সে কিনা এখন এসব বলছে।
আদিত্যকে ঠোঁট কামড়ে হাসতে দেখে নূর বাচ্চাদের মতো রাগ দেখিয়ে বললো।
….এই এই তুমি আমার চকলেট খাচ্ছ কেন? এটা শুধু আমার চকলেট, শুধু আমিই খাব। তুমি একদম খাবে না।
কথাটা বলে নূর আদিত্যর ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে দিল।

আদিত্য একটু ব্যাথা পেলেও কিছু বললো না। এই ব্যাথাতেও যে একরকম সুখ আছে। নূর কিছুক্ষণ পরে আদিত্যের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে জিহবা দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছে নিয়ে বললো।
…..উমমম অনেক ইয়াম্মি চকলেট। 😋

আদিত্য যেন অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে নূরের কান্ডে। আদিত্য এবারে বলে উঠলো।
….আচ্ছা ঠিক আছে চকলেট খাওয়া হয়েছে তো? এখন একটু নাম, আমি তোমার জন্য লেবু পানি নিয়ে আসি। লেবু পানি খেলে তোমার ভালো লাগবে।

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….না না খাবনা, ওটা পঁচা একদম মজা না। আমি তোমাকে খাব,তুমি অনেক মজা,অনেক ইয়াম্মী।
নূর আদিত্যের টিশার্ট দেখিয়ে বললো।
…..এটা কি পরেছ? এটা পচা,আমার একদম পছন্দ হয়নি। এটা তোমার বডিকে ঢেকে রেখেছে। খোল এটা, খোল তাড়াতাড়ি।
নূর আদিত্যের টিশার্ট ধরে টানাটানি করতে লাগলো।

আদিত্য বেচারা না পেরে বললো।
….ওঁকে ওঁকে দাঁড়াও খুলছি।
কথাটা বলে আদিত্য টিশার্ট টা খুলে ফেললো।

নূর হাসি মুখে বললো,
…হুম এখন ঠিক আছে।
নূর নিজের দুই আঙুল দিয়ে আদিত্যের বুকের ওপর হাঁটার মতো করে আঙুল সামনে পেছনে নিতে নিতে দুষ্টু ভঙ্গিতে বললো।
….ইউ নো ওয়াট, ইউ আর সোওওওও হ…..ট। ইচ্ছে করে একদম কামড়ে খেয়ে ফেলি।

নূরের কথায় আদিত্যর চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। বেচারার অবস্থা শোচনীয়। এই প্রথম নূরকে দেখে ওর ভয় লাগছে। নাজানি কি করে বসে? আদিত্যের অবাকের মাত্রা আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়ে নূর বলে উঠলো।
….আচ্ছা শোন না,তুমি যে এতো হট। তাহলে আমরা তোমার ওপর রান্নাও করতে পারবো তাইনা? তাহলে আমাদের গ্যাসও অনেক বেচে যাবে। দারুণ না আইডিয়া টা?দেখেছ তোমার বউ কতো বুদ্ধিমান?

বেচারা আদিত্য কি রিয়্যাকশন দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। ওর বডির ব্যবহার যে এভাবেও করা যায় সেটা কখনো কল্পনাও করেনি ও। আদিত্য নূরকে সরানোর চেষ্টা করে বললো।
…আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যা খুশী তাই করো। এখন ওঠনা প্লিজ। তুমি না গুড গার্ল? প্লিজ ওঠনা বাবু।

নূর আবারও বাচ্চাদের মতো রাগ দেখিয়ে বললো।
…..এই আমাকে বাবু বলছ কেন? আমি কি বাবু নাকি? আমিতো বাবুর মা হবো।
নূর কিছু একটা মনে পরার মতো করে বললো।
….এক মিনিট, ভালো কথা মনে হয়েছে। আমার বাবু হয়না কেন? তুমি আমাকে বাবু দাওনা কেন হ্যাঁ? নাকি তোমার সেই ক্ষমতা নেই? তুমি পারোই না বাবু দিতে?

নূরের কথায় আদিত্যর মাথা ঘুরে ওঠার উপক্রম। কি বলে এই মেয়ে? আমার নাকি বাবু দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আরে আমিতো ওর কথা ভেবেই এখন বাচ্চা কাচ্চা নিচ্ছি না। কারণ ওর বয়স কম আর ওর পরাশুনারও ক্ষতি হবে। এসব ভেবেই এখন বাবু নিচ্ছি না। আর এই মেয়ে কিনা আমার পুরুষত্বের ওপরই প্রশ্ন তুলছে? এখন যদি হুঁশে থাকতো, তাহলে বুঝিয়ে দিতাম যে আমার কি ক্ষমতা আছে। আদিত্যের ভাবনার মাঝেই নূর আবার বলে উঠলো।
….কি হলো কথা বলছ না কেন? দেখ আমার বাবু চাই এক্ষুনি। চাই মানে চাই। তুমি যদি আমাকে বাবু না দাও, তাহলে কিন্তু আমি অন্য কারো কাছে যাবো বাবু নিতে?

নূরের কথা এতক্ষণ কিউট লাগলেও এবারের কথা শুনে আদিত্যর রক্ত মাথায় উঠে গেল। আদিত্য রাগে চোয়াল শক্ত করে বললো।
….শাট আপ ইডিয়ট, কি বলছ এসব মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? আবার যদি মুখে এই কথা এনেছ তো একদম মেরে ফেলবো।

আদিত্যের ধমক শুনে নূর কেঁপে উঠল। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিল। আদিত্যের বুকে হালকা চাপড় মারতে মারতে কান্না করে বলতে লাগলো।
…..এ্যাএএএএএ,,,,পচা তুমি। তুমি আমাকে বকা দিয়েছ।আমাকে ইডিয়ট বলেছ। খুব পঁচা তুমি, পঁচা, পঁচা, পঁচা। তোমার সাথে কাট্টি, আর কথা বলবো না তোমার সাথে। 😭
নূর কাঁদতে কাঁদতে আদিত্যের উপর থেকে সরে গিয়ে বিছানায় উল্টো দিকে হয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলো।

নূরের এমন কান্না দেখে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। ওতো রাগের মাথায় ভুলেই গিয়েছিল যে নূরের এখন হুঁশ নেই। ও কি বলছে ও নিজেও জানে না। নূরকে এভাবে কান্না করতে দেখে আদিত্যের এবার প্রচুর খারাপ লাগছে । আদিত্য নূরের কাঁধে হাত দিয়ে নূরকে ওর দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু নূর অভিমান করে শক্ত হয়ে আছে। একটুও ঘুরছে না। আদিত্য এবার পেছন থেকে নূরের পেট জড়িয়ে ধরে নূরের ঘাড়ে মুখ নিয়ে আদুরে গলায় বললো।
….আই এ্যাম সরি সোনা।প্লিজ রাগ করে না, তুমি এমন কথা বললে তাইতো আমার রাগ উঠে গেল। প্লিজ এদিকে ঘোর।

নূর এখনো শক্ত হয়ে আছে। আর মাথা ঝাঁকাচ্ছে। মানে ও ঘুরবে না। আদিত্য আবারও বললো।
….সরি না কলিজাটা। এমন করে না প্লিজ। আই প্রমিজ আর কখনো বকা দিব না। তুমি যা বলবে তাই করবো,এবার ঘোরনা প্রানপাখী।

নূর ফট করে কান্না বন্ধ করে হাসি মুখে আদিত্যের দিকে ঘুরে বললো।
…সত্যি? আমি যা বলবো তাই করবে?

আদিত্য মুচকি হেসে নূরের গালে হাত বুলিয়ে বললো।
….অফকোর্স প্রানপাখী তুমি যা বলবে তাই হবে।

….ঠিক আছে তাহলে আমাকে বাবু দাও এখুনি।

….আবারও সেই কথা? এটা ছাড়া কি আর কোনো কথা নেই তোমার?

…না না নেই। তুমি এখুনি আমাকে বাবু দিবা ব্যাচ। আর কিছু শুনতে চাই না। বাবু দাও, বাবু দাও, বাবু দাও।

আদিত্য নূরের মুখ বন্ধ করার জন্য নূরের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো। তারপর নূরের ঠোঁটে চুমু খেতে লাগলো। নূরও আদিত্যের সাথে তালে তাল মিলিয়ে চুমু খেতে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ আদিত্য খেয়াল করলো নূর রেসপন্স করা বন্ধ করে দিয়েছে। আদিত্য নূরের ঠোঁট ছেড়ে নূরের দিকে তাকিয়ে দেখলো নূর ঘুমিয়ে পড়েছে। আদিত্য বিড়বিড় করে বললো।
…দিস ইস নট ফেয়ার প্রানপাখী। আমার আরমান জাগিয়ে তুমি ঘুমিয়ে পড়লে?

আদিত্য ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো।
….পাগলি একটা।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের কপালে একটা চুমু খেয়ে নূরকে বুকের মাঝে নিয়ে নিজেও একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।

চলবে…..

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৮

★সকাল ৮টা
সকাল বেলার রোদ জানালা ভেদ করে নূরের চোখে পরতেই ধীরে ধীরে নূরের ঘুম ভেঙে এলো। নূর আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো। মাথাটা কেমন ভার হয়ে আসছে। ব্যাথাও করছে প্রচুর। নূর দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ধীরে ধীরে উঠে বসলো। ও বুঝতে পারছে না, হঠাৎ করে এতো মাথা ব্যাথা করছে কেন ওর?

একটু পরে কেউ ওর সামনে এক গ্লাস লেবু পানি এগিয়ে দিল। নূর মাথা উপরে তুলে দেখলো, এটা আদিত্য। আদিত্য নূরের দিকে লেবু পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….এটা খেয়ে নাও। হ্যাংওভার কমে যাবে।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….হ্যাংওভার মানে? কিসের হ্যাংওভার?

….আগে এটা খেয়ে নেও তারপর বলছি।

নূর আর কিছু না বলে লেবু পানিটা খেয়ে নিল। কিছুক্ষণ পর আদিত্য জিজ্ঞেস করলো।
…এখন ঠিক লাগছে?

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ মাথা ব্যাথা অনেকটা কমেছে। এখন বলতো কিসের কথা বলছিলে তুমি? আর আমার হঠাৎ এতো মাথা ব্যাথায় বা কি করে হলো?

আদিত্য নূরের সামনে বসে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…শুধু বলবো না। দেখাব তোমরা কাল কি কান্ড করেছ?
কথাটা বলে আদিত্য ফোন বের করে কালকের ভিডিও ফুটেজ দেখাতে লাগলো। আদিত্য রুমের গুলোও ফোনে রেকর্ড করেছিল। সেগুলো সবই নূরকে দেখাল।

এসব দেখে নূরের নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না। ও এসব করেছে? কিন্তু কখন? নূর লজ্জা আর ভয়ে আদিত্যের দিকে তাকাতে পারছে না। নাজানি আদিত্য কি ভাবছে ওর ব্যাপারে? ছি ছি নূর তুই এসব কিভাবে করতে পারলি? বাড়ির বড়রা জানলে কি ভাববে তোমরা ব্যাপারে? এসব ভেবে নূরের খুব খারাপ লাগছে।

নূরের এমন চেহারা দেখে আদিত্য ভাবলো একটু মজা নেওয়া যাক ওর সাথে। আদিত্য গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….তো এই ছিল তোমাদের পার্টি? এসব করতে গিয়েছিলে তোমারা? এভাবে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পাগলামি করার জন্য?

নূরের এমনিতেই প্রচুর খারাপ লাগছে। তারওপর আদিত্যের কথায় নূর সহ্য করতে না পেরে কেঁদেই ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো।
….স সত্যি বলছি আ আমি কিছুই জানি না। এসব কিভাবে হলো আমার কোনো ধারণা নেই। স সত্যি বলছি আমি মদ খাইনি। আই এ্যাম সরি।

নূরকে এভাবে কাঁদতে দেখে আদিত্য থতমত খেয়ে গেল। ওতো শুধু মজা করছিল। আর এতো সত্যি সত্যিই কেঁদে ফেললো। আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা আগলে ধরে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নূরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
….হেইইই প্রানপাখি কাঁদছ কেন? আরে পাগলি আমিতো মজা করছিলাম। আরে আমিতো জানি তুমি ইচ্ছে করে এমন কাজ কখনোই করবে না। তোমার সাথে তো দেখছি মজাও করা যায় না। একটুতেই সিরিয়াস হয়ে যাও।

নূর আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….তুমি মজা করেও কখনো আমার সাথে রাগ করবে না। আমি সইতে পারিনা।

আদিত্যও শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু খেল। তারপর দুষ্টু হেসে বললো।
….বাইদা ওয়ে এক হিসেবে কিন্তু ভালোই হয়েছে। তুমি মাতাল না হলে জানতেই পারতাম না যে, তুমি আমাকে নিয়ে এসব ভাব। তুমি যে ভেতরে ভেতরে এতো এগ্রেসিভ, তা জানাই হতোনা।

আদিত্যের কথায় নূর লজ্জা পেয়ে বুকের ওপর আলতো করে একটা কিল মেরে বললো।
….যাহ অসভ্য কোথাকার।

…বারে আমি অসভ্য হয়ে গেলাম? তুমি নিজেই তো এই আমার মতো মাছুম ইনোসেন্ট বাচ্চাকে চকলেট বানিয়ে খেয়ে ফেলছিলে। আর হ্যাঁ কি যেন বলছিলে, আমাকে নাকি খেতে অনেক মজা, অনেক ইয়াম,,,

আদিত্যকে আর বলতে না দিয়ে নূর আদিত্যের মুখ চেপে ধরে বললো।
….ওইসব কথা যদি আবারও বলেছ তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে কথা বলবো না বলে দিলাম?

আদিত্য হেসে দিয়ে বললো।
…..ওকে ওকে ঠিক আছে। যাও এখন ফ্রেশ হয়ে এসো। আজকে যে আবির পাগলের বিয়ে তা মনে আছে?

নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল।
——————–

আবির তাসির আর সায়েমকে সেই কখন থেকে ঠেলছে ঘুম থেকে ওঠার জন্য। ওরা ঘুমে একদম কাঁদা হয়ে গেছে। আবির এবার চিল্লিয়ে ডাকতে লাগলো।
…..এইইই গাধার দল তোরা উঠছিস না কেন? কতো বেলা হয়ে গেছে, আজ যে আমার বিয়ে সে খেয়াল আছে তোদের? মরার মতো এখনো ঘুমাচ্ছিস?

আবিরের চিল্লানিতে বেচারারা আর ঘুমাতে পারলো না। তাসির আর সায়েম ঘুম থেকে উঠে আবিরের দিকে রাগী চোখে তাকাল। যেন এখুনি খেয়ে ফেলবে ওকে। আবির সেটা দেখে বললো।
….কিরে এমনে তাকায় আছোস ক্যান?

তাসির দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
….তুই জানোস না তাইনা? এখুনি তোকে বোজাচ্ছি।
কথাটা বলেই তাসির আর সায়েম দুজনেই আবিরকে বালিশ দিয়ে মারতে শুরু করলো। মারতে মারতে তাসির বলে উঠলো।
….কি করেছিস তুই জানিস না তাইনা?সালা এমনিতেই মেয়েদের কান্ডে রাতে ঘুমাতে পারিনি। তারওপরে তুই সেই রাত ৪টা থেকে শুরু করেছিস। একটু পর পরই আমাদের জাগিয়ে জাগিয়ে জিজ্ঞেস করছিস,কয়টা বাজে? সকাল হয়েছে কি? কখন সকাল হবে? আরে সালা ঘুমাতে দিলে না সকাল হবে।

আবির কোনরকমে ওদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বললো।
….হ্যাঁ তো, আমিতো তোদের ভালোর জন্যই বলছিলাম যাতে তোদের রেডি হতে দেরি না হয়ে যায়। আর আমি সবকিছু সকাল সকাল করতে চাই। রাত হওয়ার আগেই আমি বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে চাই। যাতে বাসর করতে দেরি না হয়ে যায়।

তাসির বিরক্তির সুরে বললো।
….সত্যি বলছি আমি দুনিয়াতে তোর মতো আবুল একটাও দেখিনি। সালা আমার বদদোয়া লাগবে তোর ওপর। তুই কিছুতেই আজকে বাসর করতে পারবি না।

আবির তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
….হশকুনের দোয়ায় কখনো গরু মরে না। বাসরতো আমার হবে তাও ঐতিহাসিক বাসর। হুহ্।
কথাটা বলেই আবির এটিটিউড নিয়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেল।

রাত ৮টা
আবির বর সেজে স্টেজে বসে ছটফট করছে তানির অপেক্ষায়।বারবার ঘরির দিকে তাকাচ্ছে আর দরজার দিকে তাকাচ্ছে কখন তানি আসবে আর তাড়াতাড়ি বিয়ে করে বাসর করতে পারবে। কোথায় ও ভেবেছিল রাত হওয়ার আগেই বিয়ে করে ফেলবে, অথচ এখন রাত আটটা বাজে তবুও বিয়ের খবর নেই। নাজানি মেয়েদের এতো সময় লাগে কিসের জন্য?

আবিরের এমন অবস্থা দেখে বাকি ছেলেরা মিটিমিটি হাসছে।
একটু পরেই নূর আর সানা মিলে তানিকে নিয়ে আসলো। তানিকে দেখে যেন আবির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আর আদিত্য তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। যা ওর সবসময়ের কাজ। নূরকে মিষ্টি কালারের জর্জেট শাড়ীতে যেন কোনো অপ্সরি লাগছে। আদিত্য মুচকি হেসে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে নূরের দিকে। নূরকে সারাজীবন দেখলেও হয়তো ওর চোখের পিপাসা কখনো মিটবে না।

তানিকে এনে আবিরের পাশে বসানো হলো। তানিকে বসিয়ে দিয়ে নূর যেয়ে আদিত্যের পাশে গিয়ে দাড়াল। আদিত্য এখনো নূরের দিকে তাকিয়েই আছে। নূর লাজুক হেসে বললো।
…..কি এতো দেখছ? তুমি কি আমাকে দেখে দেখে বোর হওনা?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….উহুম কখনোই না। আমি তোমাকে যতই দেখি ততই তোমাকে নতুন করে আবিস্কার করি। মনে হয় কোনো যাদু আছে তোমার মাঝে। যা আমাকে তোমার মাঝে আটকে রাখে,কোথাও যেতে দেয় না।

….বাচ বাচ আর কবি হতে হবে না। আজ তোমার ভাইয়ের বিয়ে। সেদিকে একটু কন্সেন্ট্রেট করো।

…..কি করবো জানেমন, তোমাকে ছাড়া যে আমার মাইন্ড অন্য কোথাও যায়না।

এদিকে আবির তানিকে আস্তে করে বললো।
….এত দেরি করলে কেন আসতে? এখানেই এতরাত করলে বাসর কখন করবো আমি?

আবিরের কথায় তানি চোখ গরম করে ওর দিকে তাকালো। সেটা দেখে আবির জোরপূর্বক হেসে বললো।
…..না মানে তোমাকে অনেক মিস করছিলাম তো তাই বললাম আর কি।

একটু পরে কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে আসলো। প্রথমে আবিরের কাছে এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। কাজীর কথা পুরো শেষ হওয়ার আগেই আবির তড়িৎ গতিতে তিনবার কবুল বলে ফেললো। আবিরের কাজে কাজী সাহেব হা হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে রইল। আর বাকি সবাই অনেক কষ্টে নিজেদের হাসি চেপে রেখেছে। তারপর কাজী তানির কাছে এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। তানি সহজে কবুল বলছে না এটা দেখে আবির আরও অধৈর্য হয়ে গেল। অধৈর্য হয়ে বলে উঠলো।
…আরে তাড়াতাড়ি বলে দাওনা?দেরি হয়ে যাচ্ছে তো?

সবাই এবার উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। আবির এবার বুঝতে পারলো ও কি বলে ফেলেছে। তাই নিজেও লজ্জায় পরে গেল। তানিতো পারছে না লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে। কিছুক্ষণ পর তানিও কবুল বলে দিল।
————–

রাত ১১টা
বিয়ের সব কার্যক্রম শেষে সবাই বাড়ির ভেতরে আসলো। তানিকে নিয়ে যাওয়া হলো আবিরের রুমে। আবিরও তানির সাথে যেতে নিলেই আদিত্য ওর হাত ধরে আটকে দিয়ে বললো।
…..কিরে তুই কোথায় যাচ্ছিস লাফাতে লাফাতে?

….কোথায় যাচ্ছি মানে?আমার রুমে যাচ্ছি।

….আরে ইডিয়ট এখুনি না। আরেকটু পরে যেতে হবে।

….দেখ ভাই দিস ইস নট ফেয়ার। এমনিতেই কতো দেরি হয়ে গেছে। আমি বাসর কখন করবো?আরেকটু পরে তো বাসর রাত না বাসর দিন করতে হবে।

আবিরের কথায় সবাই হেসে দিল।
কিছুক্ষণ পর ফাইনালি আবিরের মোস্ট ওয়েটেড বাসর ঘরে যাওয়ার সময় আসলো। আবির অত্যন্ত এক্সাইটেড হয়ে ওর রুমের দিকে যেতে লাগলো। রুমের সামনে আসতেই আবিরের হাসি মুখটা চুপসে গেল।কারণ দরজার সামনে একদল সিকিউরিটি দাঁড়িয়ে আছে। আবির ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কি ব্যাপার তোরা এভাবে দাড়য়ানের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে সর এখান থেকে।

সানা সয়তানি হেসে বললো।
…..আঃ আঃ বাসর ঘরে যেতে ট্যাক্স লাগে ভাইয়া। ভুলে গেছ তুমি? আদিত্য ভাইয়ার সময় কেমন দুই হাতে লুটেপুটে নিয়েছিলে? এখন সেই দুই হাতে আমাদের ভরে ভরে ট্যাক্স দাও।

আবির ভাব নিয়ে বললো।
…..ঠিক আছে ঠিক আছে তোরাও কি মনে রাখবি যে কোন মহান লোকের সাথে পালা পরেছিল।
আবির দুই টাকার কয়েকটি কয়েন বের করে সবাইকে একটা একটা করে দিয়ে বললো।
….যাহ জিলে আপনি জিন্দেগী। 😎

সানা কপট রাগ দেখিয়ে বললো।
…. এসব কি ভাইয়া? আমরা কি ভিখারি নাকি? ভালোই ভালোই পঞ্চাশ হাজার টাকা বের করো,নাহলে কিন্তু আজকে তোমার বাসর হবে না।

….কিহহ্ পঞ্চাশ হাজার? পাগল হয়ে গেছিস? আমি কোথায় পাব এত টাকা?

…..তা আমরা কি জানি? তুমি যদি টাকা না দাও তাহলে তোমাকে এখানে রেখে আমরা সবাই মিলে যেয়ে তানি ভাবির সাথে ঘুমিয়ে থাকবো? এখন তুমিই বলো তুমি কি করবে?

আবির ভয় পেয়ে গিয়ে বললো।
….না না প্লিজ এমন করিসনা। তুই না আমার লক্ষী বোন। তুই চাইলে আমার সব সম্পত্তিও তোর নামে লিখে দেব।তবুও আমার বাসর নষ্ট করিসনা। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।

….আব আয়া না উট পাহাড় কে নিচে। এখন জলদি জলদি টাকা ছাড়।

আবির নিজের ক্রেডিট কার্ড বের করে দিয়ে বললো।
….এই নে মেরি মা। যত টাকা লাগে এখান থেকে নিয়ে নে। এবার আমাকে যেতে দে।

সানা একটা বিজয়ের হাসি দিয়ে বাকি দলবল নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল। আবির বিড়বিড় করে বললো।
….একেই বলে কার্মা। পাপ ছাড়ে না বাপকে।
——-

আদিত্য ব্যালকনিতে সোফায় নূরকে কোলে নিয়ে বসে চন্দ্রবিলাস করছে । আদিত্য নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে নূরের ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছে। আর নূর শুধু লাজুক লাজুক হাসছে।

নূর হঠাৎ বলে উঠলো।
….আজ তানিকে বউয়ের সাজে অনেক সুন্দর লাগছিল তাইনা?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হুম, তবে তোমার থেকে কম। তোমাকে বঁধু বেশে আসমান থেকে নেমে আসা কোনো পরী মনে হচ্ছিল। আমার একটা কথা রাখবে প্রাণপাখী?

….বলোনা?

…..আমাদের প্রতি বিবাহ বার্ষিকিতে তুমি বিয়ের দিনের মতো বউ সাজবে আমার জন্য।

নূর আদিত্যের দিকে ঘুরে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আদিত্যের গালে হাত রেখে বললো।
….অবশ্যই আমার রাজকুমারের জন্য আমি সবই করতে পারি। এটাত অনেক সামান্য ব্যাপার।

আদিত্য তৃপ্তির হাসি দিয়ে নূরের নাকের সাথে নাক ঘষে নেশালো কন্ঠে বললো।
….প্রাণপাখী, ওদের মতো আমরাও আজকে বাসর করি কি বলো?

নূর লাজুক হেসে আদিত্যের বুকে মুখ গুঁজল।

—-

সকল বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে আবির ওর বহুল প্রতীক্ষিত বাসর ঘরে ঢুকলো। এক্সাইটমেন্টে বেচারা পাগলই না হয়ে যায়। আবির ঘরে ঢুকে দেখলো তানি বেডের ওপর লম্বা ঘোমটা নিয়ে বসে আছে। আবির দরজা বন্ধ করে খুশী মনে তানির সামনে যেয়ে বসলো। তারপর লাজুক ভাব ধরে তানির ঘোমটা উঠাতে উঠাতে গাইতে লাগলো।
♬ ♬ সুহাগ রাত হে
♬ ♬ ঘুঙ্গাট উঠা রাহা হু মে

আবির হাসি মুখে তানির ঘোমটা তুলতেই ওর হাসি মুখটা হাওয়া বের হয়ে যাওয়া বেলুনের মতো চুপসে গেল। কারণ তানি ঘোমটার ভেতরে চোখ বুজে ঝিমাচ্ছে। আবির ভ্রু কুঁচকে তানিকে ডাকতে লাগলো।
…তানি? তানি বেবি?

তানির কোনো রেসপন্স না দেখে আবির এবার তানির কাঁধ ঝাকিয়ে একটু জোরে ডাক দিল। তানি হকচকিয়ে উঠে বললো।
….হুম, হ্যাঁ? কি হয়েছে? আরে তুমি এসে গেছ? আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

…তুমি অপেক্ষা কই করছিলে? তুমিতো রীতিমতো ঝিমুচ্ছিলে।

…আরে হ্যাঁ সেটাই তো তোমাকে বলতে চাচ্ছি। আমার না অনেক ঘুম পেয়েছে, কিন্তু মা বলেছে বাসর রাতে নাকি স্বামীকে সালাম করতে হয়। তাই আমি তোমার জন্য বসে ছিলাম। এখন আমি তোমাকে সালাম করে শুয়ে পরবো।
কথাটা বলে তানি উঠে দাঁড়িয়ে আবিরকে সালাম করলো। তারপর আবার বেডে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো।

আবির যেন জীবনের সবচেয়ে বড়ো শক আজই খেল। বেচারা পুরো অটো হয়ে গেছে কোনো রিয়্যাকশনই দিচ্ছে না। ওর এতো আশার বাসর এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে?
কথাটা ভাবতেই আবির দুই কানে হাত দিয়ে একটা গগনবিদারী চিল্লানী দিয়ে উঠলো।
…..নেহিইইইইইইইইইই🙉

আবিরের চিল্লানিতে পুরো বাড়িই যেন কেঁপে উঠল। পুরো বাড়ির মানুষি হকচকিয়ে উঠলো। তাসির মাত্রই বিছানায় শুয়েছিল। আবিরের বাড়ি কাঁপান চিল্লানীতে তাসির গরিয়ে বেড থেকে নিচে পড়ে গেল। তারপর উঠে বসে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বললো।
….সালা আবিরের বাচ্চা, বাসর ঘরে যেয়েও আমাদের শান্তি দিলনা।

আদিত্য মাত্রই নূরকে চুমু দিতে যাচ্ছিল, তখনই আবিরের চিল্লানীতে আদিত্য আর নূর দুজনেই ব্যালেন্স হারিয়ে একজন আরেকজনের কপালের সাথে বাড়ি খেল। আদিত্য নূরের কপালে হাত দিয়ে বললো।
…বেশি লেগেছে?

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….না লাগেনি। কিন্তু এটা কি ছিল?

আবির বলে উঠলো।
….কি আর হবে? দ্যা গ্রেট আবিরের বাসর বলে কথা। পুরো মহল্লা না জানলে কি হয়?
কথাটা বলে দুজনেই হেসে দিল।

এদিকে আবিরের চিল্লানীতে তানিরও ঘুম উড়ে গেল। তানি হকচকিয়ে উঠে বসে বললো।
….এই এই কি করছ তুমি? পাগল হয়ে গেছ নাকি? পুরো বাড়ি ভর্তি মানুষ কি ভাববে সবাই?

আবির করুন সুরে বলে উঠলো।
…ওও সবার চিন্তা আছে তোমার, অথচ আমার চিন্তা নেই?

…মানে?

…তুমি জানোনা, আমি অধীর আগ্রহে এই বাসরের জন্য অপেক্ষা করে আছি? আর আজ যখন সেই মুহূর্ত এসেছে, তুমি কিনা ঘুমিয়ে পরছ? এ কেমন অবিচার? জাতি সইবে না এতো অবিচার।

….তো কি করবো আমি? সারাদিন এতো ধকল গেছে যে আমার এখন টায়ার্ড লাগছে। তাই আমি ঘুমাব।
কথাটা বলে তানি আবারও শুয়ে পড়লো।

আবির তানির পেছনে এসে কাঁধে হাত দিয়ে বললো।
….আরে এইটুকু ব্যাপার? তুমি আগে বলবে না? দেখ আমি এখুনি তোমার টায়ার্ডনেস দূর করে তোমাকে একদম চাঙা করে দিচ্ছি।
কথাটা বলে আবির নিজের দুই আঙুল দিয়ে তানির হাতের উপর দিয়ে হাঁটার মতো করে উপর দিকে নিতে নিতে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ এক হো গায়ে হাম অর তুম
♬ ♬ তো উড় গায়ে নিন্দে রে
♬ ♬ এক হো গায়ে হাম অর তুম
♬ ♬ তো উড় গায়ে নিন্দে রে
♬ ♬ অর খানকি পায়েল মাস্তি মে তো কাঙ্গান
(আবির তানিকে ঘুরিয়ে তানির কাঁধের দুই পাশে হাত রেখে হাতে ভর দিয়ে একটু উচু হয়ে তানির উপর উঠে তানির চোখের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু ভঙ্গিতে গাইলো)
♬ ♬ এ পেহলিবার মিলে
♬ ♬ তুম পে এ দাম নিকলে
♬ ♬ তুম পে এ জাওয়ানি ধীরে ধীরে
♬ ♬ মাদ্ধাম মাসলে রে
(আবির তানির দুই পাশে পা রেখে উঠে দাঁড়িয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ হাম্মা হাম্মা,হাম্মা হাম্মা হাম্মা
♬ ♬ এ হাম্মা হাম্মা হাম্মা হাম্মা হাম্মা
(আবির এবার নিচে নেমে চেহারায় অধৈর্য্যের ছাপ এনে, নানান অঙ্গভঙ্গিতে নেচে নেচে তানিকে বুজাচ্ছে যে ও কতো বেসবর হয়ে আছে ওর জন্য)
♬ ♬ মুঝে ডার ইস বাত কা হে বাস
♬ ♬ কি কাহি না এ রাত নিকাল যায়
♬ ♬ মেরে ইতনি ভি পাস তু আ মাত
♬ ♬ কাহি মেরে হাতো ছে না বাত নিকাল যায়

♬ ♬ বলুঙ্গা সাচ মে জো দে তু ইজাজাত
♬ ♬ সাবার ভি আব কারণে লাগা বাগাবাত
♬ জুলফে হে জালিম অর আখে হে আফাত
♬ ♬ লাগতা হে হোনেওয়ালি হে কায়ামাত

♬ ♬ মাত তারপা এয়সে তু
♬ ♬ না কারনা না ইনসাফি
♬ ♬ জো গালতি কারনে ওয়ালা হু
♬ উসকে লিয়ে পেহলে সেই মাঙতা হু মাফি
(আবির তানির কাছে এসে তানির উপর দিয়ে হাওয়ায় হাত ঘুরিয়ে গাইলো)
♬ ♬ খিলি চাঁদনি জেয়সা এ বাদান
♬ ♬ মান মে সোচা জেয়সা রুপ তেরা
♬ ♬ আয়া নাজার হামকো
(আবিরের দেখাদেখি তানিও এখন এনজয় করছে। তানি মুচকি হেসে নিচে নেমে আবিরের সাথে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ সিতাম খুলি খুলি এ সানাম গরি গরি
♬ ♬ এ বাহে কারতি হে ইউ
♬ ♬ হামে তুমনে যাব গালে লাগায়া তো
♬ ♬ খো হি গায়ে হাম

♬ ♬ হাম্মা হাম্মা হাম্মা হাম্মা হাম্মা
♬ ♬ এ হাম্মা হাম্মা হাম্মা হাম্মা হাম্মা
(দুজন দুজনকে ধরে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ এক হো গায়ে হাম অর তুম
♬ ♬ হাম্মা হাম্মা হাম্মা
♬ ♬ তো উর গায়ে নিন্দে রে
♬ ♬ এএ হাম্মা

আবির তানির হাত ধরে বেডের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে দুজন উড়াধুরা নাচতে লাগলো। নাচতে নাচতে হঠাৎ ব্যালেন্স না রাখতে পেরে দুজন একসাথে বেডের ওপর পড়ে গেল। তানি নিচে পড়ল আর আবির তানির উপরে। দুজন নিচে পড়ে হো হো হাসতে লাগলো।

হাসতে হাসতে ওদের দুজনের চোখ এক হয়ে গেল। ধীরে ধীরে ওদের হাসিটা থেমে এল। দুজনই এক ঘোরের ভেতর চলে গেল। আবির নেশা লাগানো চোখে তানির দিকে তাকিয়ে দুষ্টু ভঙ্গিতে বললো।
….লেটস স্টার্ট দ্যা ফাইনাল গেম বেবি।
কথাটা বলে আবির একটা চোখ মারল।আর তানি লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আবির ডুব দিল তানির ঠোঁটে। ফাইনালি পুরোন হলো ওর কাঙ্খিত বাসর।

চলবে……