ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-৭৩+৭৪

0
2117

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৩

★ আদিত্যরা নূরকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। ডক্টর নূরের চেকআপ করে কিছু টেস্ট করিয়েছে। নূর এখনো বেহুশই আছে। সবকিছু দেখে ডক্টর বললো।
….ওনার মাথায় ভারি কোনো জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। যারজন্য উনি ওনার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

আদিত্য ভীতু গলায় বললো।
…নূর কি কখনো ঠিক হবে না ডক্টর?

….এ ব্যাপারে সিওর কিছু বলা যাচ্ছে না। ওনার স্মৃতিশক্তি তাড়াতাড়িও আসতে পারে আবার দেড়িও হতে পারে। আবার কখনো নাও আসতে পারে। কিছু বলা যায় না। তবে আপনারা ওনাকে জোর করে কিছু মনে করানোর চেষ্টা করবেন না।এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। পেসেন্টের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।

….না না এমন কোনো কাজই করবো না যাতে ওর ক্ষতি হয়। ওকে আমি ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক। আর কিছুর দরকার নেই আমার।

….ঠিক আছে তবে আপনারা ভালোবাসা আর হাসি আনন্দের মাধ্যমে ওনাকে ধীরে ধীরে অল্প করে ওনাকে আগের কথা মনে করানোর চেষ্টা করতে পারেন। আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি , এগুলো নিয়মিত দিবেন ওনাকে। আমি আপাতত একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি। তিন চার ঘন্টা পর ওনার জ্ঞান ফিরে আসবে। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।

আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে উঠে গেল। তারপর নূরকে কোলে নিয়ে বাইরে বের হলো। বাইরে এসে আদিত্য নূরকে কোলে নিয়েই গাড়িতে বসলো। তাসির ড্রাইভিং করছে আর আবির ওর পাশের সিটে বসলো। আদিত্য নূরের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে নূরের গালে হাত বোলাতে লাগলো। আশেপাশের কোনো হুঁশ নেই ওর। ওতো ওর প্রাণপাখীকে দেখায় ব্যস্ত। পাঁচ মাস ধরে চোখ দুটো অধীর হয়ে ছিল নূরকে দেখার জন্য। আজ নূরকে দেখে দেখে ও ওর চোখের তৃঞ্চা মেটাতে চায়।কতো সাধনার পরে ও ওর প্রাণপাখীকে ফিরে পেয়েছে। আদিত্য নূরের কপালে চুমু খেয়ে নূরকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল। আহ্ কতো শান্তি লাগছে ওর। মনে হচ্ছে খরা চৌচির মাটিতে অঝোর বৃষ্টির বর্ষন হচ্ছে। নূরকে জড়িয়ে ধরে অশ্রু চোখে মুচকি হাসলো।

আবির আর তাসির আদিত্যকে এভাবে দেখে ওরাও অশ্রু চোখে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির হাসি দিল।

একঘন্টা পর ওরা সাভারের বাড়িতে এসে পৌঁছাল। গাড়ি থামলে আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে বাসার ভেতর ঢুকলো। সবাই ড্রয়িং রুমেই বসে ছিল ওদের আসার অপেক্ষায়। আবির ওদের আগেই ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছিল। আদিত্যর কোলে নূরকে দেখে সবাই ওর কাছে দৌড়ে এলো নূরকে দেখার জন্য। নূরকে দেখে সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছে।

আদিত্য সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
….নূরের এখন রেস্টের দরকার। তোমরা সবাই ওর সাথে পরে দেখা করো।

আদিত্যের বাবা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস, তুই ওকে রুমে নিয়ে যা।

আদিত্য নূরকে নিয়ে ওর রুমে গিয়ে বেডের ওপর শুইয়ে দিল। নূরের পাশে বসে কতক্ষণ নূরের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ আদিত্য উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে কাপড়চোপড় বের করে ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। আজ কতোদিন হয়ে গেল নিজের দাড়ি মুছ কাটেনা ও। পুরো জংলী দেখা যাচ্ছে ওকে। তাই আজ ভালো করে ফ্রেশ হবে ও। যাতে নূরের কাছে সেই আগের মতো হ্যান্ডসাম লাগে ওকে।

আবির আজ হাসিমুখে রুমে ঢুকলো। তানি বেডে বসে ছিল , আবির যেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….কি।করছে আমার কিউটিপাই টা? শরীর কেমন এখন?

আবিরকে এতো খুশী দেখে তানিরও অনেক ভালো লাগছে। আজ কতোদিন পর আবিরকে আগের মতো হাসিখুশি দেখছে। ও জানে এসব নূরকে ফিরে পাওয়ার জন্য হয়েছে। মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাল তানি। সবকিছু ঠিক করে দেওয়ার জন্য। আবির এবার তানির পেটে হাত বুলিয়ে বললো।
….আর আমার বেবিটা কেমন আছে?

তানি বলে উঠলো।
….বেবি না বলো বাবা। আমার ছেলে হবে। যে বড়ো হয়ে নূরের মেয়েকে বিয়ে করবে।

…..ওকে ওকে, তো বাবা জানো আজকে আমরা কাকে পেয়েছি? তোমার হবু শাশুড়ীকে পেয়েছি। তুমি খুশিতো? তোমার শাশুড়ী চলে এসেছে, এখন কিছুদিন পর তোমার বউও চলে আসবে।

আবিরের কথায় দুজনেই হেসে দিল। কিছুক্ষণ পর তানি বলে উঠলো।
….আচ্ছা নূরের এই অবস্থা কি করে হলো?আর কেইবা করলো এসব?

আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
….এটাতো একমাত্র নূর ভাবির স্মৃতি ফিরে আসার পরেই জানা যাবে। তার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

তানি মুচকি হেসে বললো।
….চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
——

নূর পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। জায়গা টা চিনতে পারছে না ও। হঠাৎ নিজেকে অপরিচিত জায়গায় দেখে নূর ঘাবড়ে গেল। এক ঝটকায় উঠে বসে ভীতু ভাবে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। নতুন জায়গা দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কাপতে লাগলো। এটা কোন জায়গা? আমি এখানে কিভাবে এলাম?

তখনই আদিত্য ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো। নূরকে এভাবে দেখে আদিত্য ঘাবড়ে যেয়ে দ্রুত নূরের কাছে আসতে নিলেই, নূর আরও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বেডের কোনায় লেগে গেল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলো।
….আ আমার কাছে আসবেন না। কে আ আপনি?

আদিত্য বুঝতে পারছে নূর নতুন জায়গা দেখে ঘাবড়ে গেছে। তাই নূরকে শান্ত করার জন্য কিছুটা দূর থেকেই দুই হাত স্যারেন্ডার করার মতো উঁচু করে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে বললো।
….ওঁকে ওঁকে রিল্যাক্স, কাম ডাউন। আমি আসছি না তোমার কাছে। দেখ আমি আদিত্য, তোমার আদিত্য তোমার হাসব্যান্ড। আর তুমি নূর, আমার নূর আমার প্রাণপাখী আমার ওয়াইফ। আর এটা আমাদের বাড়ি, তোমার বাড়ি। পেছনে তাকিয়ে দেখ।

আদিত্যের কথায় নূর একটু শান্ত হলো। আদিত্যের কথামতো পেছনে তাকিয়ে দেখলো দেয়ালে নূর আর আদিত্যের বড়ো একটা ছবি টানানো। নূর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ছবিটার দিকে। এই লোকটা কি সত্যি ওর স্বামী? নূর এবার বাচ্চাদের মতো শান্ত চোখে আদিত্যের দিকে তাকালো। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..এখন ভয় কমেছে নূর?

নূর আস্তে করে বলে উঠলো।
…..নূর? আমি নূর?

….হ্যাঁ তুমি নূর। মিসেস নূর সাদমান শাহরিয়ার।

নূর কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করতে লাগলো। উনার কথা অনুযায়ী আমার নাম নূর। আর উনি আমার স্বামী। কিন্তু আমার কিছু মনে নেই কেন?
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
….এখন বসতে পারি তোমার পাশে?

নূর কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে আস্তে করে হালকা ঘাড় কাত করে অনুমতি দিল। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের সামনে যেয়ে বসে বললো।
….দেখ তুমি ভয় পেয়না। এই বাড়ি এই বাড়ির লোকেরা সবাই তোমার আপনজন। আমি জানি তোমার কিছু মনে নেই। তাই তোমার এসব কিছুতে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে। তোমার যতো সময় লাগে তুমি নেও। আমার কোনো জলদি নেই। আমার বিশ্বাস ধীরে ধীরে সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে। তুমি আবারও সেই আগের নূর হয়ে যাবে। ঠিক আছে?

নূর শুধু চুপচাপ আদিত্যের কথা শুনে গেল। নিজে কিছুই বললো না। আদিত্য আবার বলে উঠলো।
….তুমি এবার একটু ফ্রেশ হয়ে এসো, ভালো লাগবে। কাবার্ডে তোমার সব কাপড়চোপড় রাখা আছে। ওখান থেকে যেটা ভালো লাগে ওটা নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।

নূর আস্তে করে মাথা ঝাকিয়ে উঠে গিয়ে কাবার্ড খুলে একটা থ্রি পিচ নিয়ে ওয়াশরুমে গেল।

বিশ মিনিট পর নূর শাওয়ার নিয়ে বের হলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকাতেই ওর চোখ আটকে গেল। সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হওয়ায় নূরকে একদম স্নিগ্ধ লাগছে। ভেজা চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে। আজ কতদিন পর নূরকে এভাবে দেখছে। আগে হলে আদিত্য এখুনি যেয়ে ওর দুষ্টুমি শুরু করে দিত। তবে আজ সেটা করতে পারছে না। কিন্তু এটা নিয়ে আদিত্যের কোনো আপসোস নেই। ও যে ওর প্রাণপাখীকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে এটাই ওর কাছে অনেক। আল্লাহ সহায় থাকলে বাকি সবও সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে। এসব ভেবে আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….তুমি তো চুল ভালো করে মোছই নি। ঠান্ডা লেগে যাবে তো। তুমি কিছু মনে না করলে আমি মুছে দেই?

নূর কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আদিত্য মুচকি হেসে তোয়ালে দিয়ে নূরের চুল মুছে দিল। তারপর চিরুনি দিয়ে সুন্দর করে চুলগুলো আঁচড়ে দিল। নূর মাথা নিচু করে চোরা চোখে বারবার আদিত্যকে দেখছে। লোকটার প্রতি কেমন যেন একটা অদ্ভুত টান অনুভব করছে ও। মনে হচ্ছে হৃদয়ের খুব
কাছের কেও।

চুল আঁচড়ান শেষে আদিত্য নূরকে বেডের ওপর বসিয়ে বললো।
…..তুমি একটু বসো এখানে আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

হঠাৎ দরজার কাছে কিছু ফুসুরফাসুর আওয়াজ শুনতে পেল। আদিত্য বুঝতে পারছে বাইরে কি হচ্ছে। তাই মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….ভেতরে আসো সবাই। আর বাইরে দাঁড়িয়ে আর অধৈর্য হতে হবে না।

বলার সাথে সাথে সবগুলো হুরমুর করে ভেতরে ঢুকলো। নূরের সাথে দেখা করার জন্য সবাই কখন থেকে অধৈর্য্য হয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। নূরের খবর শুনে ওর বাবা আর ভাইও চলে এসেছে দেখা করতে।

একসাথে এতো মানুষকে দেখে নূর ঘাবড়ে গেল। ও জড়োসড়ো হয়ে আদিত্যের পেছনে লুকিয়ে আদিত্যের হাতা খামচে ধরলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
…..ভয় নেই নূর এরা সবাই তোমার পরিবার। তোমাকে এতদিন পর পেয়েছে তাই দেখা করতে এসেছে।

আদিত্যের কথায় নূর একটু স্বাভাবিক হলো। তবে আদিত্যের হাতা ছাড়ল না। আদিত্যের হাতা ধরেই বসে রইলো। ওরা সবাই এক এক করে নূরের কাছে এসে কথা বলতে লাগলো। নূর শুধু চুপ করে ওদের কথা শুনলো।প্রথমে ওর বাবা এসে নূরের মাথায়া হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদাকাটি করলো। তারপর আদিত্যের বাবা, দেখা করলো। তারপর আদিত্যের চাচা, আদিত্যের চাচী এসে বললো।
….ডাটার ইন লাউ, হোয়ার গোইং হয়েছিলে তুমি? জানো তোমার স্টেশনে স্টেশনে (টেনশনে) আমাদের সবার স্লিপার (ঘুম) হারিয়ে গিয়েছিল জানো?

চাচীর কথা নূর কিছুই বুঝতে পারছে না। ও বোকার মতো তাকিয়ে রইল। সানা বলে উঠলো।
….তোমার ইংলিশ শুনে ভাবি আবারও হারিয়ে যাবে।

সানার কথায় সবাই হেসে দিল। এবার তানি এসে বসলো নূরের কাছে। ছলছল চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….তুই জানিস তোর মেয়ের জামাই আসতে যাচ্ছে।

তানির কথা বুঝতে না পেরে নূর ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
তানি নূরের হাতটা নিজের পেটের ওপর রেখে বললো।
….এইযে এখানে তোর মেয়ের জামাই আসছে। তোর কিন্তু এখন থেকেই আমার সেবা করতে হবে বুঝলি? তাহলেই ভবিষ্যৎে তোর মেয়ে সুখে থাকবে বুখেছিস?

তানির কথায় নূর জোরপূর্বক একটা হাসি দিল। সবার দেখা করা শেষে আদিত্যের বাবা বলে উঠলো।
….আচ্ছা আচ্ছা এখন সবাই চলো রাত অনেক হয়েছে ওদের আরাম করতে দাও। বাকি কথা কাল বলো।

সবাই মাথা ঝাকিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।আদিত্য সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
….আচ্ছা শোন আমাদের জন্য খাবার উপরে পাঠিয়ে দিস।

…..ঠিক আছে ভাইয়া।

একটু পরে কাজের লোক এসে আদিত্যদের রুমে খাবার দিয়ে গেল। আদিত্য প্লেটে খাবার বেড়ে নূরের সামনে বসে বললো।
….তুমি কিছু মনে না করলে আমি খাইয়ে দেই তোমাকে?

নূর কিছুক্ষণ কাচুমাচু করে এদিক ওদিক তাকালো। তারপর আস্তে করে ঘাড় কিঞ্চিৎ কাত করে হ্যাঁ বুঝালো। এইটুকুতেই আদিত্য অনেক খুশি হয়ে গেল। এতোদিন পর ও ওর প্রাণপাখীকে নিজের হাতে খাওয়াতে পারবে। আদিত্য হাসি মুখে নূরকে খাইয়ে দিতে লাগলো। নূর খাচ্ছে আর আরচোখে আদিত্যকে দেখছে। কয়েক লোকমা খাওয়ার পর নূর আস্তে করে বললো।
….আ আপনি খাবেন না?

নূরের কথায় আদিত্য মায়া ভরা চোখে নূরের দিকে তাকালো। একটা ঢোক গিলে মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ খাবোতো।
কথাটা বলে আদিত্য নিজের মুখেও এক লোকমা খাবার নিল। খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে থালাবাসন গুছিয়ে নিচে রেখে আসলো।

আদিত্য রুমে এসে দেখলো নূর বেডের বসে কেমন যেন কাচুমাচু করছে। আদিত্য ব্যাপার টা বুঝতে পেরে নূরের সামনে বসে মুচকি হেসে বলে উঠলো।
…. দেখ ঘাবড়ানোর দরকার নেই। আমি জানি তোমার এইমুহূর্তে আমার সাথে স্বাভাবিক হাসব্যান্ড ওয়াইফের মতো থাকার মন মানসিকতা তৈরি হয়নি। তাই আমি তোমাকে কোনো বিষয়ে জোর করবো না। তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই হবে। শুধু তোমার কাছে একটা অনুরোধ। প্লিজ আমাকে এই রুমেই থাকতে দেও। আমার ওপর ভরসা রাখ।আমি বেডে শুবনা, আমি ওখানে ডিভানে শুয়ে থাকবো, তবুও আমাকে এই রুমে একটু থাকতে দেও। যাতে রাতে অন্তত তোমার মুখটা দেখতে পারি। নাহলে যে আমি শান্তি পাবোনা। প্লিজ?

নূর আবারও হালকা ঘাড় কাত করে বুঝাল ঠিক আছে। আদিত্য খুশী হয়ে বললো।
….ঠিক আছে তাহলে তুমি বেডে শুয়ে পড়ো।

নূর মাথা ঝাকিয়ে কাত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আদিত্য নূরের ওপর চাদর টেনে দিয়ে নিজে যেয়ে ডিভানে শুয়ে পড়লো। ডিভানে শুয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ কতদিন পর ওর শান্তির ঘুম হবে কারণ ওর প্রাণপাখী ফিরে এসেছে ওর কাছে।

আধাঘন্টা পর নূর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। আদিত্যের এখনো ঘুম নেই চোখে, ওতো ওর প্রাণপাখীকে দেখতে ব্যাস্ত। যত দেখছে মনই যেন ভরছে না।ওর খুব ইচ্ছে করছে নূরকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে। কতদিন হলো ও ওর প্রাণপাখীকে বুকে জড়িয়ে ঘুমায় না। কথাটা ভেবে আদিত্য নূর ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পেরে আস্তে করে উঠে নূরের কাছে গেল। নূরের কাছে এসে বেডের পাশে নূরের মুখোমুখি হয়ে ফ্লোরে বসলো। আলতো করে নূরের গালে হাত বুলিয়ে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো। তারপর নূরের হাত ধরে হাতের পিঠে চুমু খেয়ে নিজের গালের সাথে লাগিয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আদিত্য মনে মনে বললো।
….প্রাণপাখী তোমার সাথে এসব যে করেছে তাকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না। কিছুতেই না। একবার শুধু তোমার সব মনে পড়ে যাক তারপর ওই কালপ্রিট কে আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবো না। আমি তাকে এমন ভয়াবহ শাস্তি দেব যে সে নিজেই আমার পা ধরে তার মৃত্যু কামনা করবে। আই প্রমিজ ইউ প্রানপাখী।

এসব ভাবতে ভাবতে আদিত্য নূরের হাত ধরে বেডের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।

ঘন্টাখানিক পর নূর হঠাৎ অন্য দিকে ঘুরতে নিলে ওর হাতে টান পড়লো। নূর চোখ খুলে দেখলো আদিত্য ওর হাত ধরে ঘুমিয়ে আছে। নূর অবাক হয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো। কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলোনা নূর। আদিত্যের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর খুব মায়া হলো। লোকটা যে ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেটা কিছুটা হলেও ও বুঝতে পেরেছে। নূরও তাই কিছু না বলে আদিত্যর হাত ধরেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো।

এভাবে দেখতে দেখতে দুই দিন কেটে গেল। আদিত্য প্রতিরাতেই নূরের হাত ধরে ঘুমায়। এই দুই দিনে নূরের তেমন কোনো উন্নতি দেখা যায় নি। শুধু আগের থেকে একটু ভয়টা কমেছে। কিন্তু নূর এখনো তেমন কথা বলে না। সবসময় মনমরা হয়ে চুপচাপ নিজের রুমে বা বেলকনিতে বসে থাকে। সবার সাথে তেমন কোনো কথা বলেনা। নূরকে এভাবে দেখে আদিত্যের খুব খারাপ লাগে। আদিত্য চায় নূর আগের মতো আবার হাসিখুশি প্রানচঞ্চল হয়ে উঠুক। নূরকে স্বাভাবিক করার জন্য নূরের বেশি করে কথা বলাটা জরুরি। কথাটা ভেবে আদিত্য মনে মনে একটা প্ল্যান করলো। ও জানে কিভাবে নূরকে সবার সাথে ফ্রী করা যায়।

বিকাল ৪টা
দুপুরের খাবার খেয়ে নূর একটু ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ নিচ থেকে মানুষের হইচইয়ের শব্দে নূরের ঘুম হালকা হয়ে এলো। নূর আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে উঠে বসলো। নিচ থেকে অনেক জোরে জোরে কথা আর হাসাহাসির শব্দ আসছে। নূর মনে কৌতূহল জাগলো। বিষয়টা দেখার জন্য নূর বেড থেকে নেমে ধীরে ধীরে রুমের বাইরে বেরিয়ে এলো। করিডরে এসে উপর থেকে নিচে উঁকি দিয়ে দেখলো। নিচে আদিত্য,আবির,তাসির সায়েম, তানি,সানা আর নিশি মিলে কি যেন করছে আর খুব হাসাহাসি করছে। নূরের ইচ্ছে হলো বিসয়টা দেখার। নূর ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে নিচের দিকে আসলো।

আদিত্য আরচোখে তাকিয়ে নূরকে আসতে দেখে সবার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো।
….শোন আমাদের প্ল্যান কাজ করছে। নূর এদিকে আসছে, সবাই ওর সামনে একদম আগের মতো স্বাভাবিক বিহেব করবি।

সবাই মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল

চলবে…….

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৪

★ নূর নিচে আসতেই আবির মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….আরে আরে ভাবি আসো আসো এখানে বসো।

তানি বলে উঠলো।
…আরে ভাবি না বলো BB

আবির ভ্রু কুঁচকে বললো।
….BB?

….হ্যাঁ BB। ভাবি প্লাস বিয়াইন সাব। এখন থেকেই অভ্যাস করে নেও বলার।

আবির মুচকি হেসে বললো।
….ওকে ওকে তো BB এখানে এসে আমাদের শোতে অংশগ্রহণ করুন।

নূর আস্তে করে বললো।
….শো?

….হ্যাঁ শো। আজ আমরা কে হবে রোডপতি খেলছি। আসো তুমিও বসে শো এনজয় করো।

নূর মুচকি হেসে আদিত্যের পাশে গিয়ে বসলো। আবির হাসি মুখে বলে উঠলো।
….সো সাহেবান, মেহেরবান কাদারদান,খিলিপান,মিঠাপান,পানদান,থুকদান, মরা গরু টেনে আন। আপনাদের সবাইকে আমাদের শোতে আমন্ত্রণ। আর যে আমাদের শো দেখতে চায় না সে পঁচা নালায় ডুবে যান। তো লেটস প্লে কে হবে রোডপতি।

একটা গোল টেবিলের দুই পাশে দুইটা চেয়ার রাখা হয়েছে। টেবিলের ওপর দুইপাশে দুইটা ফেক কম্পিউটার স্ক্রিন লাগিয়ে রেখেছে। আবির একপাশের চেয়ারে বসে বলে উঠলো।
….তো আমাদের প্রথম প্লেয়ার হলেন। দ্যা ওয়ান এন্ড অনলি আমাদের আদিত্য আর নূর ভাবির একমাত্র মেয়ের হবু শাশুড়ী, বর্তমানে যার পেটে আমার ছেলে এবং ভাইয়ের জামাই। তো ওয়েলকাম মিসেস শাশুড়ী। আপনাকে হট সিটে স্বাগতম।

সবাই একসাথে তালি বাজিয়ে উঠলো।
তানি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সেলিব্রিটিদের মতো সবার দিকে হাত নাড়িয়ে বললো।
….থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ বাচ বাচ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
তানি যেয়ে চেয়ারে বসে বলে উঠলো।
….এ্যাংকার জি আপনি তো বললেন এটা নাকি হট সিট। কিন্তু এটাতো একদম ঠান্ডা, মোটেও হট না?

আবির বলে উঠলো।
…চিন্তা করবেন না, আমরা সিটের নিচে চুলা জালিয়ে দেব। তাহলেই দেখবেন একদম হট হয়ে যাবে।

তানি এটিটিউডের হাসি দিয়ে বললো।
…ওও ধন্যবাদ ধন্যবাদ, ইউ আর সো কাইন্ড।

…মেনশান নট ম্যাম। তো খেলা শুরু করা যাক?

…জ্বি জ্বি অবশ্যই

এসব দেখে ধীরে ধীরে নূরের ভালো লাগছে। ওদের কাজকর্ম এনজয় করছে ও।

আবির বলে উঠলো।
….খেলা শুরু করার আগে। আপনাকে নিয়মটা বুঝিয়ে দেই। আপনাকে একটা করে প্রশ করা হবে। প্রতিটি প্রশ্নের চারটি করে অপশন থাকবে। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো আপনি পাবেন মোটা অংকের ধনরাশি। যা দিয়ে আপনার পরবর্তী সাত প্রজন্ম বসে বসে খেতে পারবে। আপনার সহযোগিতার জন্য চারটি পাইপ লাইন (লাইফ লাইন) দেওয়া আছে একটা অডিয়েন্স পোল, ফোনো ফ্রেন্ড, টি টোয়েন্টি (ফিফটি ফিফটি) এবং এক্সপার্ট এডভাইজ।

আবিরের পেছনে দুটো চেয়ারে নিশি আর সায়েম এক্সপার্ট সেজে বসে আছে। নিশি মাথার ওপর বড় একটা খোপা করে ভাব নিয়ে বসে আছে। আর সায়েম বিশাল বড় সাইজের চশমা পরে বসে আছে। আবির হাত দিয়ে ইশারা করে ওদের দেখিয়ে বললো।
….আমাদের সাথে আজকে এক্সপার্টের ভূমিকায় আছে দা মোস্ট, দাআআ মোস্ট অচেনা অজানা আর একদমই ফালতু এবং ভাংঙ্গার দুজন লোক। যাদের নামটাও আমি বলতে চাই না আপনারা নিজেরাই দেখে নিন।

সায়েম আর নিশি ভাব নিয়ে ধন্যবাদ বললো। যেন ওদের মাত্রই ওদের কতো প্রশংসা করা হয়েছে।

নূরের এসব দেখে অনেক মজা লাগছে। নূরকে এনজয় করতে দেখে আদিত্যেরও অনেক ভালো লাগছে।

আবির বলে উঠলো।
…..তাহলে শুরু করা যাক? তো এই হলো আপনার প্রথম প্রশ্ন কানা দশ পয়সার জন্য, আপনার কম্পিউটার স্ক্রিনে। প্রশ্ন হলো।
একটা গান আছে “ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না” তো প্রশ্ন হলো টুনি কেন কথা শোনে না?
অপশন ১. টুনির কানে ময়লা জমেছে তাই ও শুনতে পাচ্ছে না।
অপশন ২.টুনির কানে পঁচন ধরেছে তাই ও শুনতে পাচ্ছে না।
অপশন ৩.টুনি কানে হেডফোন লাগিয়ে রেখেছে তাই ও শুনতে পাচ্ছে না।
অপশন ৪. টুনির কানপুরে হরতাল চলছে তাই ও শুনতে পাচ্ছে না।

তানি গভীর চিন্তা ভাবনা করছে যেন বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছে ওকে। আবির বলে উঠলো।
…..আপনি চাইলে এক্সপার্ট এডভাইজ নিতে পারেন। তো এক্সপার্টরা আপনারা কিছু বলতে চান এ ব্যাপারে?

নিশি বিজ্ঞ জ্ঞানী বিদদের মতো বলে উঠলো।
…..হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। আমার মনে হয় টুনি,,,

নিশিকে মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে সায়েম বলে উঠলো।
….আরে আপনার মনের কথা আপনার কাছেই রাখুন। এটা অনেক ডিফিকাল্ট প্রশ্ন, আপনি এসবের কি জানেন? আমাকে বলতে দিন। আম…আমার হিসেবে টুনি,,

এবার নিশি সায়েম কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো।
….এক্সকিউজ মি মিঃ, হাউ ডেয়াট ইউ? আপনি কি বলতে চান হ্যাঁ? আর ইউ ট্রাইং টু সে দ্যাট আই এ্যাম এ ফুল?

সায়েম তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো।
…এতে বলার কি আছে? আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আপনি আপনার মাথার ওপর যে মাটির পাতিল বানিয়ে রেখেছেন সেটা আগে সামলান। নাহলে আপনি এটার নিচেই চাপা পড়ে মরে যাবেন। আপনি এককাজ করুন আপনার এই খোপায় প্রতিদিন পানি ঢালুন দেখবেন একদিন আপনার খোঁপা বাচ্চা দিয়ে দিবে।হা হা হা

নিশি দাত কিড়মিড় করে সায়েমের দিকে আঙুল তুলে বলে উঠলো।
….দেখুন মিষ্টার আপনি কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন। আপনি নিজের চেহারা দেখেছেন। মুখের ওপর চশমা পড়েছেন নাকি চশমার ওপর মুখ লাগিয়েছেন তাই বোঝা যাচ্ছে না। আইছে আমার ওপর কমেন্ট করতে। আরে আপনাকে দেখে তো উগাণ্ডার গরিলাও নিজেকে হ্যান্ডসাম ভাববে।

….আর আপনার চেহারা দেখে বান্দরনি রাও নিজেদের বিশ্ব সুন্দরী ভাববে।

….দেখুন আপনি কিন্তু লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছেন? আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছেন? পোকা ধরা পঁচা বেগুনের মতো মুখ আপনার।

…..আমার চেহারা তাও দেখা যায়। আপনার মুখ দেখে তো আমার বমি এসে যাচ্ছে। আপনার মুখ তো ব্যান্ড হওয়া উচিত। এই মুখ নিয়ে কখনো বাইরে বের হবেন না।বাচ্চারা ভয় পেয়ে যাবে।

….আরে আপনার মুখ দেখে তো থু দিতে ইচ্ছে করছে। আত্থু।

….আপনি থু তো আমি ডাবল থু থু।

…আপনি থু

….আপনি থু

নিশি আঙুল তুলে রেগে আবারও কিছু বলতে যাবে তখনই হঠাৎ নূর খিলখিল করে হেসে উঠলো। দুই হাতে তালি বাজিয়ে বাজিয়ে হাসতে লাগলো। নূরকে হাসতে দেখে সবাই ওর দিকে তাকালো। সবাই মনে মনে অনেক খুশী, শেষমেশ ওদের প্ল্যান কাজ করেছে। নূরকে এভাবে মন খুলে হাসতে দেখে আদিত্যের মন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এই হাসির জন্যই তো এতকিছু করেছি। আদিত্য মুচকি হেসে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। এই হাসির জন্য ও সবকিছু করতে পারে।

একটু পরে আবির তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
…..তাহলে বলুন আপনার সঠিক উত্তর কোনটি?

তানি একটু চিন্তা করে বললো।
….উমম আমার মনে হয় অপশন ৪. টুনির কানপুরে হরতাল চলছে তাই ও শুনতে পাচ্ছে না।

….আর ইউ শিওর? লক করে দেয়?

….জ্বি লক করে দিন।

….তো অপশন ৪ লক করা হোক।

আবির সিরিয়াস মুড নিয়ে বললো।
….আপনার উত্তর ,,,

তানি টেনশনে নখ কামড়িয়ে বললো।
….আরে ভাই তাড়াতাড়ি বলুন না৷ টেনশনে আমার বাচ্চা বাইরে না চলে আসে।

আবির হঠাৎ হাসিমুখ করে বললো।
….আপনার উত্তর সঠিক হয়েছে। আপনি জিতে গেছেন দশ পয়সার কানা কয়েন। তালিয়া,,

সবাই তালি বাজাল।
তানি খুশিতে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….ইয়েএএএএএ আমি জিতে গেছি, জিতে গেছি আমি।

আবির একটা দশ পয়সার কানা কয়েন তানির হাতে দিয়ে বললো।
….এই নিন আপনার জিতে যাওয়া এমাউন্ট। এই খুশির মুহূর্তে আপনার অনূভুতি টা জানান আমাদের।

তানি খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।
….জ্বি জ্বি অবশ্যই। আসলে কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে আমার। ইতনি খুশি,ইতনি খুশি, ইতনি খুশি মুঝে আজতাক নেহি মিলি🤧। আমি আমার এই প্রাপ্তির জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার মা বাবা,দাদা দাদী, পর দাদা দাদী, চাচ চাচী,ফুফু ফুফা,খালা খালু,নানা নানী, আমার প্রতিবেশী, আমার বাসার কাজের লোক মিনুু আরও,,

আবির তানির রেলগাড়ী থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো।
….বাচ বাচ ম্যাম, আমরা আপনার মনোভাব বুঝতে পেরেছি। আপনি এখন আপনার সিটে যেয়ে বসুন।

…জ্বি জ্বি ধন্যবাদ।
কথাটা বলে তানি যেয়ে সোফায় বসলো।

নূর এসব দেখে অনেক মজা পাচ্ছে। আর হাসছেও অনেক। আর নূরকে দেখে আদিত্যের মন ভরে যাচ্ছে।
আবির এবার বলে উঠলো।
…..তো আমরা এবার ডেকে নেব আমাদের নেক্সট প্লেয়ার। এবং আমাদের নেক্সট প্লেয়ার হলো মিস সানা।

সানাও উঠে দাঁড়িয়ে সেলিব্রিটিদের মতো হাত নাড়িয়ে হেলেদুলে যেয়ে হটসিটে বসলো।

আবির বলে উঠলো।
…..তো মিস সানা আপনার প্রথম প্রশ্ন হলো পচিশ পয়সার জন্য। আপনার প্রশ্ন হলো, বিয়ের পরে আপনি আপনার স্বামীকে কোন কাজটা প্রথমে করাতে চাইবেন?
অপশন ১.তাকে দিয়ে ঘর মোছাবেন।
অপশন ২.তাকে দিয়ে কাপড় কাচাবেন।
অপশন ৩.তাকে দিয়ে থালাবাসন মাজাবেন।
অপশন ৪.তাকে দিয়ে আপনার পা টিপাবেন।

আবিরের অপশন গুলো শুনে বেচারা তাসিরের গলা শুকিয়ে আসছে। কি বলছে এসব আবিরের বাচ্চা?

সানা গালে হাত দিয়ে গভীর চিন্তা করে বললো।
…….হুমমম, এটাতো অনেক কঠিন প্রশ্ন। আমারতো সবগুলো অপশনই পছন্দ। আমিতো এসবগুলোই করাতে চাই।

সানার কথা শুনে তাসির বেচারার এবার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। ওর চোখের সামনে ওর ভবিষ্যৎ ভেসে উঠলো।যেখানে ও এসব কাজ করছে, আর সানা বসে বসে ওর ওপর হুকুম চালাচ্ছে।
তাসিরের এমন করুন অবস্থা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে।

আবির বলে উঠলো।
……যাইহোক আপনাকে একটা অপশন তো বলতেই হবে।

সানা কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠলো।
….উমম ঠিক আছে অপশন ৪ লক করে দেন।

….ওকে, আর আপনার উত্তর সঠিক হয়েছে। আপনি পাচ্ছেন এই পচিস পয়সার কানা কয়েন।

সানা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।
…..ধন্যবাদ ধন্যবাদ, এতো টাকা আমি কোথায় রাখবো? ইনকাম ট্যাক্স ওলারা আবার ব্লাক মানি রাখার অভিযোগে আমার বাসায় রেইড না দিয়ে দেয়,?

আবির বলে উঠলো।
…..ঠিক আছে এখন আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন আসছে কানা পঞ্চাশ পয়সার জন্য। একটা গান আছে”চুমকি চলেছে একা পথে “। তো প্রশ্ন হলো, চুমকি একা কোথায় যাচ্ছে?
অপশন ১. চুমকির অনেক জোরে বাথরুম এসেছে তাই ও তাড়াতাড়ি বাথরুমে যাচ্ছে।
অপশন ২.চুমকি রিলিফের চাল নেওয়ার লাইনে দাড়ানোর জন্য তাড়াতাড়ি যাচ্ছে।
অপশন ৩. চুমকির জুতা ছিড়ে গেছে তাই ও তাড়াতাড়ি সবার আড়ালে যেতে চাচ্ছে।
অপশন ৪. চুমকি করোনার টিকা দিতে যাচ্ছে।

সানা গভীর চিন্তা করে বললো।
……হুমমম এটাতো আরো কঠিন মনে হচ্ছে। বুঝতে পারছি না কিছু।

…..আপনার কাছে পাইপ লাইন আছে। আপনি চাইলে সেখান থেকে সাহায্য নিতে পারেন। আপনি অডিয়েন্স পোল ব্যবহার করতে পারেন।

….ঠিক আছে আমি অডিয়েন্স পোল ব্যবহার করতে চাই।

….ঠিক আছে অডিয়েন্স পোল আনা হোক।

একটু পরে সায়েম আর তাসির মিলে একটা পোল ডান্সের পোল এনে মাঝখানে রাখল। আবির সেটা দেখিয়ে সানাকে বললো।
…..আপনাকে পোলের সাথে পোল ডান্স করতে হবে। আপনার ডান্স দেখে অডিয়েন্স ইমপ্রেস হলে তারা আপনাকে হেল্প করবে।

সানা মাথা ঝাকিয়ে উঠে গিয়ে পোল ধরে ঘুরে ঘুরে পোল ডান্স করতে লাগলো।
♬ ♬ মে লাভলী হো গায় ইয়ার
♬ ♬ নাম তেরা পাড়কে নাম তেরা পাড়কে
♬ ♬ মে লাভলী হো গায় ইয়ার
♬ ♬ নাম তেরা পাড়কে নাম তেরা পাড়কে

সানার ডান্স দেখে সবাই তালি বাজাল। তারপর সবাই মিলে অপশন ১. বলতে বললো। সানা সবার কথামতো অপশন ১.ই সিলেক্ট করলো।এবং উত্তর ঠিক হলো। সানার খেলা শেষে এবার আবির বলে উঠলো।
…..এখন আমাদের সাথে খেলবে আমাদের নূর ভাবিইই। সবাই তালি বাজিয়ে তাকে স্বাগতম করো।

নূর চমকে উঠে বললো।
……আ আমি?

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল।
…..হ্যাঁ তুমি, যাবে ওখানে? দেখবে অনেক মজা লাগবে।

নূর কিছুক্ষণ ভেবে মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো। তারপর আস্তে করে উঠে গিয়ে হট সিটে বসলো।

আবির বলে উঠলো।
…..তো ভাবি তোমার প্রথম প্রশ্ন ১টাকার জন্য হলো, ছোট হাতের এবিসিডি বড়ো হাতের এবিসিডির থেকে কতো ছোট?
অপশন ১.১ বছরের ছোট।
অপশন ২. ২বছরের ছোট।
অপশন ৩. ৩বছরের ছোট।
অপশন ৪. ৭মাসের ছোট।

আবিরের প্রশ্ন শুনে নূর ফিক করে হেসে দিল। তারপর একটু সবার মতো গভীর ভাব ধরে বললো।
……উমমম আমার মনে হয় অপশন ১. ১বছরের ছোট।

আবির হাতে তালি দিয়ে বললো।
….আরে বাহ্ বাহ্, ভাবিজী কামাল হো গেয়া, ধোতি ফাড় কে রুমাল হো গেয়া। আপনিতো জিতে গেছেন। এবং আপনি আজকে সবচেয়ে বেশি ধনরাশি জিতেছেন। পুরো এক টাকা।

নূর খুশী হয়ে লাফিয়ে উঠে বাচ্চাদের মতো হাতে তালি দিয়ে বললো।
…..সত্যিই? ইয়েএএএ

নূরকে এভাবে খুশী হতে দেখে আদিত্যের মনটা শান্তি পাচ্ছে। ওর চেষ্টা সফল হয়েছে। নূর সবার সাথে ফ্রী হওয়া শুরু করেছে।

আবির আবার বলে উঠলো।
…..তো এবার ১টাকা পচিস পয়সার জন্য আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, ফলের রাজা আম শুধু গরমের সময়ই কেন আসে? শীতের সময় কেন আসে না?
অপশন ১. আমের শীতের কাপড় নেই তাই শাীতে আসে না।
অপশন ২. শীতে আমের সর্দি লেগে যায় তাই ও শীতে আসে না।
অপশন ৩. শীতে আমের স্কিন খারাপ হয়ে যায় তাই ও শীতে আসে না।
অপশন ৪. আমের ইচ্ছা ও যখন খুশী তখন আসবে, এতে আমার বাপের কি?

নূর একটু ভেবে বললো।
….উমমম অপশন ৪.।

আবির আবারও তালি বাজিয়ে বলে উঠলো।
….ওয়াও ভাবিজী আপনি আবারও জিতে গেছেন।

নূর আবারও খুশি হয়ে গেল। এভাবে আরোও কিছুক্ষণ খেলা চলতে থাকলো। নূর ধীরে ধীরে সবার সাথে মিশে আনন্দ করতে লাগলো। আদিত্যের অনেক ভালো লাগছে এসব দেখে। সবাই একসাথে আনন্দ ফুর্তি করছে।

হঠাৎ নূরের কেমন যেন লাগতে শুরু করলো। ওর মনে হলো এমন কিছু ও আগেও অনেক করেছে। ওর চোখের সামনে কেমন আবছা আবছা স্মৃতি ভাসতে লাগলো। তবে ঠিক করে কিছু দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ নূরের মাথা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। নূর দুই হাতে নিজের মাথা চেপে ধরলো।

আদিত্য এটা দেখে প্রচুর ভয় পেয়ে গেল। দৌড়ে এসে নূরকে ধরে বললো।
….কি হয়েছে প্রাণপাখী? শরীর খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করছে?

নূর আস্তে করে বললো।
…হ্যাঁ অ অনেক মাথা ব্যাথা করছে।

তাসির বলে উঠলো।
….আদি নূরকে রুমে নিয়ে যা। ওর এখন আরামের দরকার।

আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে নূরকে কোলে নিয়ে রুমে চলে এলো। নূরকে বেডে শুইয়ে দিয়ে বললো।
….প্রাণপাখি তুমি শুয়ে থাক। আমি তোমার মাথা টিপে দিচ্ছি, তোমার ভালো লাগবে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের মাথার কাছে বসে মাথা টিপে দিতে লাগলো। ধীরে ধীরে নূরের মাথা ব্যাথা কমে এলো।

রাত ১০টা
আদিত্য নূরকে ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দিল। নূরের গায়ের ওপর চাদর টেনে চলে যেতে নিলেই নূর হঠাৎ আদিত্যের হাত টেনে ধরলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি হয়েছে কিছু বলবে?

নূর মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো।
….আপনি চাইলে এখানে বেডে শুতে পারেন। ডিভানে যেয়ে শুতে হবে না।

নূরের কথা শুনে আদিত্য খুশিতে রিয়্যাকশন দেওয়া ভুলে গেল। ও সত্যিই শুনছে তো? নূর ওকে ওর পাশে শুতে বলছে? আদিত্য বলে উঠলো।
…আ আর ইউ শিওর? তোমার সমস্যা হবে নাতো?

নূর আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে বুঝাল না কোনো সমস্যা হবে না। আদিত্য মাথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে একটু হাসলো। তারপর আবার নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে।

আদিত্য এসে নূরের পাশে কাত হয়ে মাঝখানে ফাঁক রেখে নূরের মুখোমুখি হয়ে শুলো। আজ কতদিন পর নূরের পাশে ঘুমাবে ও। ভাবতেই খুশী লাগছে আদিত্যর। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আদিত্যের তাকানো দেখে নূর লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করলো।

আধাঘন্টা পর হঠাৎ নূরের নাকে একটা মোহনীয় ঘ্রাণ এসে লাগছে। ঘ্রাণটা কোথা থেকে আসছে জানার জন্য নূর এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে নাক টানতে লাগলো। হঠাৎ নূরের মনে হলো ঘ্রাণটা আদিত্যের কাছ থেকেই আসছে। নূর আস্তে করে মাথাটা আদিত্যের কাছে এনে নাক টানলো। নূর বুঝতে পারলো ঘ্রাণটা আদিত্যের কাছ থেকেই আসছে। ঘ্রাণটা অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে নূরের কাছে। একদম মন মাতানো নেশালো গন্ধ। নূরের নেশা ধরে যাচ্ছে কেমন ঘোর লেগে আসছে ওর। নূর আদিত্যের আরও কাছে এসে আদিত্যের বুকে নাক ঠেকিয়ে আদিত্যের শরীরের ঘ্রাণট টেনে নিতে লাগলো। ঘ্রাণটা নূরকে ভেতর থেকে কেমন যেন নাড়িয়ে দিচ্ছে। নূর ঘোরের মাঝেই আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যকে জড়িয়ে ধরেই একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।

আদিত্য এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছিল। ওতো প্রথম থেকে জেগেই ছিল। ঘুমানোর ভান করছিল। যাতে নূর ওর কাছ থেকে সরে না যায়। নূর ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পেরে আদিত্যও এবার দুই হাতে নূরকে বুকের জড়িয়ে ধরলো। আজ কতদিন পর নূরকে বুকে নিয়ে ঘুমাতে পারছে। খুশীতে আদিত্যের চোখে পানি চলে এলো। আদিত্য আলতো নূরের মাথায় চুমু খেয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরে পাঁচ মাস পর আজ প্রশান্তির ঘুম দিল।

চলবে………